অনুতাপ পর্ব -৩১+৩২

#অনুতাপ
#একত্রিংশ_প্রহর #Yasira_Abisha (#Fatha)

রুহির মনের অনেক বড় একটা পাথর কাল রাতেই যেনো সরে গেছে, পাপাকে বলে আরো শান্তি লাগছে। এখন মনে হচ্ছে আর কোনো বাধাই আসবে না জীবনে, এবার ইরাদকে সে নিজের করে পেয়ে যাবে। জীবনে নিজের ভালোবাসার মানুষকে আপন করে পাওয়া অনেক বড় ভাগ্যের ব্যাপার সবার জীবনে এই সৌভাগ্য দেখা দেয় না তবে রুহি রাত থেকে নিজেকে অনেক বেশি ভাগ্যবতী মানছে, কেননা ইরাদ ও তো রুহিকে চায় ভালোবাসে। যেই প্রত্যাশা রুহি করতো সেটা রুহি পেয়ে গেছে ইরাদের রূপে। সবটাই ঠিক এখন দু’টো মানুষকে নিজের মনের কথা জানানো বাকি এক হলো নিজের প্রাণপ্রিয় বান্ধবী দিবা আর অন্যজন হলো নিজের খালাতো বোন মেঘা যাকে নিজের আপন বোনের থেকেও বেশি ভালোবাসে রুহি। দিবাকে মেসেজ দিয়ে সবটা বলে দিলো আর মেঘাকে ফোন করলো, ঠিক তখনি ঘরে ইরাদ এলো,
ইরাদকে দেখে রুহি ফোনের লাইনটা কেটে দিবে ঠিক তখনই মেঘা কল রিসিভ করে ফেলে,
– হ্যালো বাচ্চা
– হ্যালো আপু
ইরাদকে দেখে রুহি ইশারায় বলে ২ মিনিট
ইরাদ ইশারায় সম্মতি জানায়।
– আপু কিছু কথা ছিলো
– হুম বলো,
রুহি খুব খুশি হয়ে বলে
– আপু কিভাবে শুরু করবো বুঝতেসি না
মেঘা অনেক দিন পর নিজের বোনকে এতোটা উৎফুল্ল দেখে বলে
– বলে ফেলো জলদি জলদি কোনো খুশির সংবাদ আছে মনে হচ্ছে
– হুম আপু, আমি যাকে পছন্দ করতাম ফাইনালি হি কনফেসড হি আলসো লাভস মি।
– মানে? ওইযে তিন বছর আগের ছেলেটা?
– হুম আপু ওই ছেলেটাই।
– আল্লাহ এতো বছর পর?
– হুম
– কিভাবে দেখা হলো??
– উনি বাংলাদেশে এসেছেন এবং আমাদের হসপিটালেই উনার ডিউটি পড়ে এবং আমাদের সাথে উনি পাহাড়ে এসেছেন এরপর কাল রাতে উনার মনের কথা আমাকে জানান।
মেঘা খিলখিল করে হাসে বোনের খুশিতে। ফাইনালি তার বোন যাকে ভালোবাসে অন্ততপক্ষে তার হতে পেরেছে এই বা কম কিসের?
-ছেলে তো এখন সিনিয়র ডক্টর তাই না?
– হুম আপু, উনি সিনিয়র ডক্টর, আই মিন প্রফেসর।
-আচ্ছা আচ্ছা। তারপর বলেন আপনার নিউ বয়ফ্রেন্ড কোথায় আছেন এখন?
– আমার পাশেই
– কথা বলবো
ইরাদকে রুহি বলে ইশারায় আপু কথা বলতে চায় কথা বলবেন?
ইরাদ বলে দাও
এমন সময় ঘরের বাইরে থেকে
“ও মা গো”
বলে জোরে চিতকারের আওয়াজ ভেসে আসে রুহিকে ইরাদ হাত দেখিয়ে বলে তুমি থাকো আমি দেখে আসছি।
মেঘাও আওয়াজে রুহিকে জিজ্ঞেস করে
– কি হলো
– জানিনা আপু উনি দেখতে গিয়েছেন
– আচ্ছা তুই ও দেখ কি হলো, পরে কথা বলবোনে আর কোনো প্রয়োজন পড়লে জানাবি। আর হ্যাঁ বাবাকে জানাবো আমি?
– না আমি পাপাকে জানিয়েছি তুমি মাকে ম্যানেজ করো আপু আর পাপা বলেছে বাবার সাথে কথা বলবে।
-ওকে বাচ্চা ইনজয় ইউর টাইম লাভ ইউ
– লাভ ইউ টু আপু।

মেঘার সাথে কথা শেষ করে রুহি বাইরে বেড় হিয়ে দেখে ইরাদ আর শুধা চাকমা হাসাহাসি করছে
– কি হয়েছিলো
তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে রুহি জানতে চায়, তখন ইরাদ বলে,
– দাদু দাদাকে ভয় দেখানার জন্য চিতকার করেছিলেন,
রুহি হাসতে হাসতে বলে
– কেনো?
– দাদা নাকি দাদুর কথায় ভয় পায় না তাই উনি ওভাবে করে ভয় দেখায় এখন দাদা ভয়ে গরম পানি দিয়ে গোসল করতে গেসেন। উনাদের রোজকার কাজ নাকি এটা।
রুহি খুব হাসে আর দেখে এই বয়স্ক দম্পতি খুব সুখী তাদের হয়তো বেশি টাকা নেই কিন্তু সুখ আছে। এই সুখটা সব জায়গায় দেখা যায় না। রুহি ভাবছে একদিন ইরাদ আর সেও বুড়ো হবে তখন যেনো এমন সুখই ওদের মাঝেও থাকে। হুট করে শুধা চাকমা রুহিকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে
-তোমাদের বিয়ে কবে হইসে?
রুহি কিছু বলার আগেই ইরাদ বলে,
– ২ বছর ১১ মাস ২৯ দিন আগে ।
রুহি অবাক চোখে ইরাদের দিকে তাকায় ইরাদ যে তারিখের কথা বলছে সে তারিখেই রুহি ইরাদকে নিজের ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলো।
লোকটা ওকে আসলেই ভালোবাসে নয়তো এসব কিছু এভাবে মনে রাখতো না। দুপুরে খাওয়ার পরে রুহি আর ইরাদ ঘরে এসে বসে আছে।

ইরাদ রুহির কাছে গিয়ে ওর হাতটা নিজের হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– তুমি কি আমাকে আসলেই বিয়ে করতে চাও?
রুহি অবাক চোখে ইরাদকে জিজ্ঞেস করে
– হ্যাঁ আমি আপনাকেই বিয়ে করবো ইনশাআল্লাহ এভাবে কেনো জিজ্ঞেস করলেন?
– আমার জীবনে সুখ টিকে না রুহি। আমি ভয় পাই
– এভাবে বইলেন না, আমাদের জীবনে আর কোনো সমস্যা আসবে না। আপনি আমাকে ছেড়ে যাবেন না তো?
– না ইনশাআল্লাহ আমার দিক থেকে আমি পিছনে আর যাবো না অনেক গুলো বছর নষ্ট করেছি আপনাকে দূরে রেখে। আসলে সেদিন আপনি যে শাড়িটা পড়েছিলেন সেরকম একটা শাড়ি আমার প্রাক্তন স্ত্রী কে আমি দিয়েছিলাম। আমি ভাবতে পারিনি আপনি এমন শাড়ি পড়ে আসবেন। কেনো যেনো আমি জিনিসটা নিতে পারছিলাম না কষ্ট হচ্ছিলো খুব।
– আপনি এখনো তাকে ভালোবাসেন?
– একদমই না। কিন্তু একটা সময় অনেক বেশি ভালোবাসতাম তাই তার মতো কিছু আমি সহ্য করতে পারতাম না।
– এখন যদি সে ফিরতে চায়?
– অসম্ভব।
– যদি?
– না করে দিবো আমার জীবনে এখন রুহি ছাড়া আর কেউ নেই।

এদিকে মেঘার বাবা ঠিক করে রেখেছেন রুহি ফিরে এলেই ছেলের পরিবারের সাথে দেখা করে সবটা খোঁজ খবর নিয়ে নেবে যেনো মেঘার মা ও রুহির বাবাকে সে দেখে তার সম্পর্কে জেনে সবটা ভালোভাবে জানাতে পারে এবং তারা ফিরে এলেই সব ঠিকঠাক থাকলে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারে।
#অনুতাপ
#দ্বাত্রিংশ #Yasira_Abisha (#Fatha)

জীবনটা কতটা সুন্দর হতে পারে যতি পাশে নিজের প্রিয় মানুষটা থাকে, যার কাছে আমিও সমান তালে অতটাই প্রিয় যতটা সে আমার কাছে। আগে এই জিনিসটা কোনোদিন রুহি আর ইরাদ বুঝে নি, কারণ জীবনে আল্লাহ পাক তো তাদের আগে এই রকম কোনো মুহুর্ত উপহার দেয় নি। তবে হ্যাঁ বর্তমানে ঠিকি এমন কিছু তাদের সাথে হচ্ছে আর এটা রুহি আর ইরাদ উপভোগ করছে বেশ। বিকেলে রুহি আর ইরাদ পাহাড় দেখতে বেড় হলো, পাহাড় দেখতে দেখতে তারা বাজারে ঢুকে গেলো সেখানে বেশ কিছু কেনাকাটা করে ফেললো শুধা চাকমাদের জন্য তবে ইরাদ চুপ করে রুহির জন্য খুব সুন্দর একটা শাড়ি নিলো। লাল শাড়ি, দেখতে খুবই চমৎকার দেখে নজর কাড়া লাগছে আর রুহিকে এই শাড়িতে কতটা মানাবে এটা ইরাদ ভেবেই মুচকি হাসছে। কেননা রুহি আসলেই অনেক বেশি রূপবতি। যেতো একটা রূপকথার রাজকন্যা যার মনে আল্লাহ পাক অসীম মায়া দিয়ে এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। বাচ্চাদের মতো চঞ্চল মেয়েটা এই কয়টা বছর মনের কষ্ট নিয়ে নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিলো, একদম ঝিমিয়ে গিয়েছিলো । আর কিছু ঘন্টা ধরে সে আবারো আগের মতো করে হাসতে শুরু করেছে। রুহির খিলখিল হাসির শব্দ যেন ইরাদের মনটা রঙিন করে তুলছে বার বার।আর একটা কথাই মাথায় আসছে
” আমি বারবার হাজার বার তোমাকে চাই”

রুহি হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে আর গুন-গুন করে গাইছে,
“চলতি সময়, থমকে দাঁড়ায়
জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি হায়
তোমার এই হাত ধরতে চায়
ফাগুন হাওয়ায়।

কি মায়ার কোন, সে নেশায়
বারে বার মন ছুঁতে চায়
চেনা মুখ ঘুরপাক খায় চোখের পাতায়।

আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই
আমি বার বার হাজার বার তোমাকে চাই।

তুমি আমি আর নিরবতা,
শুনতে কি পাও এই মনে কথা
ভোর আঁধারেও তোমায় দেখি,
তুমি কবিতা, তুমি কবি।

আজকাল মন ডুবে যায়
অনুভবে তুমি ভাসো তাই
এই আমি না চিনি আমায়,
চেনা আয়নায়।

আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই
আমি বার বার হাজার বার তোমাকে চাই।

চলতি সময়, থমকে দাড়ায়
জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি হায়
তোমার এই হাত ধরতে চায়
ফাগুন হাওয়ায়।

কি মায়ার কোন সে নেশায়
বারে বার মন ছুটতে চায়
চেনা মুখ ঘুরপাক খায়
চোখের পাতায়।

আমি বার বার বহুবার তোমাকে চাই
আমি বার বার হাজার বার তোমাকে চাই।”

মেয়েটা ইরাদকে অতটাই চায় যতটা ইরাদ ওকে চায় আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেভাবে ইরাদ ওকে চায় রুহিও যেনো ওভাবেই ইরাদকে চায়।

সেই তখন থেকেই রুহির চোখে মুখে খুশির ঝলক যখন ইরাদ ওকে কাচের চুড়ি কিনে দিলো। ইরাদের কাছ থেকে
(চলবে..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here