অনুতাপ পর্ব -৩৩+৩৪

#অনুতাপ
#ত্রয়োত্রিংশ_প্রহর #Yasira_Abisha (#Fatha)

ভোর গুলো খুব সুন্দর হচ্ছে রুহির সাথে, এদিকে হসপিটালের পুরো ট্রুপ চলে গেছে সিলেটে পেছনে রয়ে গেছে ইরাদ আর রুহি। এদিকে ইরাদের ও এতো এতো কাজ পুরো পেন্ডিং পড়ে যাচ্ছে তবে ইরাদই বা কি করবে? রুহিকে ছেড়ে যেতে একবিন্দু ইচ্ছা করে না ইরাদের। আসলে জীবনের অনেকটা সময়ই তো একা কাটিয়ে ফেলেছে ইরাদ এখন নিজের মনের একটা মানুষ পেয়ে আর কোনো প্রকার ইচ্ছে নেই তার থেকে দূরে থাকার। তবে এখন কোনো অপারেশনের চাপ নেই বলে এদিকে সময় কাটাতে পারছে ইরাদ। ইরাদ জানে শহরে ফিরে যাওয়ার পরে কাজের টানা চাপ পড়বে সে সময়টা রুহিকে সময় দেওয়া যাবে না বেশ কিছুদিন আর নিজের মায়াবতী জেনো সে সময় হুলো কষ্ট না পায় সে কারণেই ইরাদ পুষিয়ে দিচ্ছে সবটা একসাথে। ইরাদের চোখ দুটো সারাদিন রুহিকে খোঁজ করে, রুহিকে দেখলে যেনো শান্তি পাই এক প্রকার স্বস্তি এসে মনে ভর করে। এখন আর ইরাদের বিন্দু মাত্র কষ্ট লাগে না। মনে হয় সুখ এসেছে দুনিয়ার সবটুকু। ইরাদের ইচ্ছা গুলো এখন একদম টিনেজারদের মতো হয়ে গেছে। তবে মুখ ফুটে বলতে পারে না। ৩৬-৩৭ বছর বয়সে এসে যদি সে বাচ্চাদের মতো আবদার করে এসব শুনলে রুহি হাসতেও পারে। তাই ইরাদ ভাবছে এসব রুহিকে বলা যাবে না। যেমন আজ সকাল থেকেই ইরাদের ইচ্ছা করছে লাল শাড়িতে নিজের রুহিকে দেখতে এবং তাকে হাটু গেড়ে প্রপোজ করতে তবে সাত সকালে যদি রুহিকে সে এই কথা বলে নির্ঘাত রুহি আর সুধা দাদু মিলে হাসবে ওকে নিয়ে। আর আপাতত নিজেকে হাসির পাত্র বানাতে ইচ্ছা করছে না ইরাদের।

– ডাক্তার সাহেব শুনছেন,
রুহির কথায় ইরাদের ধ্যান ভেঙে গেলো, আর রুহিকে দেখে যেনো কিছু মুহুর্তের জন্য ইরাদ হা হয়ে তাকিয়ে রইলো,
লাল শাড়িতে রুহি মাত্র গোসল করে এসেছে। ভেজা চুল, চোখ ভর্তি সুরমা দেওয়া, গোলাপী ঠোঁট গুলো টকটক করছে, ফর্সা চেহারাটা ঠান্ডায় খানিকটা লাল হয়ে আছে আর তার সাথে মিষ্টি একটা হাসি মুখে যা ইরাদ দেখে কোনো ভাবে চোখ ফেরাতে পারছেনা।
– কিছু বলবেন না?
– জ্বি আমার মায়াবতী বলুন
-বাসায় ফিরবো কবে? পাপা আপনার ফ্যামিলি আর আপনার সাথে দেখা করতে চায়।
– আপনি যেদিন বলবেন সেদিনই ফিরবো জানেমান। একটু এদিকে আসেন তো।
ইরাদ মুচকি হেসে কথাটা বললো রুহিকে, কিছুদিন ধরে ইরাদের চেহারার উজ্জ্বলতা সজীবতা ও যেনো বেড়ে গেছে। এতো সুন্দর একটা মানুষ রুহির ইচ্ছা করে সারাক্ষণ তাকিয়ে দেখতেই। যেমন এখন ইরাদের এই দুষ্ট মিষ্টি হাসিটা রুহির কলিজা পর্যন্ত গিয়ে লাগছে। রুহি কাছে আসতেই ইরাদ রুহির হাতটা ধরে একটানে নিজের বুকের মধ্যে নিয়ে আসে রুহি লজ্জা পায় অনেক।
– কি করছেন ছাড়েন আমাকে
– কেনো ছাড়বো?
– আমার ভালো লাগে না তাই
– আচ্ছা?
ইরাদ এক ভ্রু কপালে তুলে জিজ্ঞেস করে রুহিকে,
ইরাদের কথায় রুহি হেসে দেয় এবং লজ্জা ও পায়
– উফফ ছাড়েন তো, দাদু ডাকে চলেন
– আপনি আগে বলেন আমাকে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করছে আপনার?
– তা কেনো হবে? হাত নেড়ে রুহি ইরাদকে জিজ্ঞেস করে
– এইযে এভাবে লাল শাড়ি ভেজা চুল আর আপনার মাধুর্য সব কিছু একসাথে মিলে আমাকে বিমোহিত করে দিচ্ছে। আমি একদম শেষ হয়ে যাচ্ছি আপনার প্রেমে। আপনি আমার এমন একটা নেশা যা কাটানোর কোনো কিছু হয়তো আল্লাহ সুবহানা’তালা আর বানায় নি।
– ঢং
বলে রুহি লজ্জায় উঠে আসে ইরাদের বুক থেকে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল গুলো আচরানো শুরু করে চিরুনি দিয়ে। প্রথমে ডান দিক থেকে শুরু করে এরপর বাম দিকে আসে। আয়নায় ইরাদকে দেখে আর ইরাদ এক ঘোরে যেনো রুহিকে দেখছে, আজকে রুহির লজ্জা লাগলেও ভালো লাগছে ও তো এটাই চাইতো ইরাদ ওকে এভাবে দেখবে। ইরাদের চাওয়া পাওয়াতে রুহি থাকবে অন্য কোনো মেয়ে না। আজকে রুহি ধীরে ধীরে নিজের স্বপ্নটা পুরো হতে দেখছে। এখন শুধু বিয়ে হওয়াটা বাকি। শুধু ঢাকা যাওয়ার অপেক্ষা। এই অপেক্ষা শেষ হলেই পাপার সাহায্যে ইরাদকে নিজের করে পাবে রুহি।

.

আজ পুরো দিনটা রুহি আর ইরাদ শুধাদের নিয়ে ঘুরলো সবাই মিলে খুব মজা করলো। রাতে এসে খেয়েদেয়ে সবাই ঘুমিয়ে গেলো কিন্তু ঘুম আসছে না ইরাদের, কাল সকালেই সিলেট যাবে ওরা তাই রুহিও ইরাদকে ঘুমানোর তাড়া দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তবে রুহিকে এতো দিন পুরোটা পর্যবেক্ষণ করে ইরাদ দেখে তার অনেক আচরণই মেঘার সাথে মিলে। যেমন হাত নেড়ে কথা বলা, গোসলের পড়ে মাথার চুল আচরানোর ধরন, চোখ বাকা করে তাকানো আরো অনেক কিছুই। চেহারা ও অনেক খানি মিলে মেঘার সাথে। ইরাদ চায় না মেঘার কথা মাথায় আনতে কিন্তু তবুও রুহির অনেক কিছু ইরাদকে মেঘাকে মনে করিয়েই দেয়। ইরাদ আজকে নিজের মনকে নিজে জিজ্ঞেস করছে
– আমি কি এখনো মেঘাকে কোনোভাবে ভালোবাসি?
– আমি কি মেঘার কথা ভেবে কষ্ট পাই?
– আমি কি মেঘাকে মিস করি?
– আমি কি মেঘার জায়গাটা রুহিকে দিতে পেরেছি?

এই কঠিন কথা গুলো এতো বছরে ইরাদ কোনোদিন নিজেকে করে নি। তবে আজকে করছে। এসব ভাবতে ইরাদের কষ্ট হচ্ছে, খুব কষ্ট হচ্ছে সেই অতীতটা ইরাদকে কষ্ট দেয় তবে আজকে সে এগুলো নিজেকে জিজ্ঞেস করবে।
নিজের ভেতরের সবটা ক্ষত সে তুলে ধরবে, কারণ যদি এগুলো সে তুলে না ধরে তবে যে তার রুহি তার মায়াবতী সামনে কষ্ট পেতে পারে। কারণ এক একটা মানুষ এক এক রকম। কিন্তু কিছু আচরণ একজনের আরেকজনের মতো হতেই পারে। তাই বলে তার রুহিকে সে চায় না মেঘার সাথে তুলনা করতে। মেঘা একটু কঠিন স্বভাবের মেয়ে ছিলো আর রুহি একদম মোমের পুতুলের মতো নরম মনের। যদি ইরাদের মনে মেঘা থাকে ইরাদ আরো একটু সময় নিবে দরকার পড়লে সাইক্রাইটিস্ট দেখাবে তারপরে বিয়ে করবে। কারণ এই মেয়েটাকে আর কষ্ট দিতে ইরাদ চায় না। তাই প্রথম থেকে সব কিছু ভেবে দেখছে ইরাদ। অনেক ভাবার পরে ইরাদের মনে এলো।
– নাহ, মেঘাকে আমি ভালোবাসি না আর,
আর আমি মেঘার জন্য কষ্ট পাই না, কষ্ট পাই নিজের জন্য, কেনো আমি তখন ভুলটা করেছিলাম। মেঘাকে ঘিরে আমার কিছুই নেই। হ্যাঁ আরো ৩ বছর আগেও যেনো আমি কিছুটা কষ্ট পেতাম। কিন্তু আমার জীবনে রুহি আসার পরে আর এমন বোধ হয়নি যে আমি মেঘাকে ফিল করে বা কষ্ট পাই তার জন্য। আমার জন্য আসলে আমার দুনিয়া একদিকে আর আমার রুহি একদিকে। রুহিই আমার সব। মেয়েটাকে আমি চাই। আর না কাউকে ভাবতে চাই না আর কারো জায়গা আছে আমার জীবনে।
রুহির ঘুমন্ত অবস্থায় ইরাদ গিয়ে ওর কপালে একটা চুমু একে দিলো।

.

পরদিন সকালে ইরাদ আর রুহি ফিরে এলো সিলেট।
– বাসায় নামিয়ে দিবো মায়াবতী?
– না ডাক্তার সাহেব। আমি বাড়ি যাই আপনি এখন হোটেলে গিয়ে একটা ঘুম দিবেন। রাতে ঘুমান নি আমার কপালে কিস করেছেন ভোরে তাই ইউ নিড স্লিপ আর আমি যাচ্ছি। বিকেলে কিন্তু বাসায় দেখতে চাই আমার ডাক্তার সাহেবকে। আমি এড্রেসটা আপনার ফোনে সেভ করে দিয়েছি নোটবুকে।
– দুষ্ট মেয়ে, আপনি ঘুমান নি রাতে?
– আপনার স্পর্শ পাওয়ার আগ পর্যন্ত ঘুম ছিলাম এরপর ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো।
– আপনিও ঘুমাবেন এখন বাসায় গিয়ে
– ওকে বাই
– বাই

বিকেলে ইরাদ একটা সাদা শার্ট আর ফরমাল প্যান্ট পরে নিলো হাতে ঘড়ি, জেল দিয়ে চুল গুলো সেট করে নিলো। বেশ দেখাচ্ছে ওকে।
আজকে ইরাদ কিছু ফুল কেক আর মিষ্টি নিলো, রুহির বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তো রুহির বাড়ির চলে এলো।

ইরাদকে ভেতরে বসতে দিলো কাজের লোকেরা এবং সাথে সাথে রুহিকে আর পাপাকে ডাক দিলো।
ইরাদকে দেখে যেনো সুবহান সাহেব খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেলেন।
– বাবাজি আপনি?
ইরাদ সালাম দিলো উনাকে
– জ্বি আংকেল আসলে…
ইরাদ শেষ করার আগেই পেছন থেকে রুহি হেটে আসতে আসতে বলে,
– পাপা উনি ডক্টর ইরাদ, উনার কথাই তোমাকে বলেছিলাম
– তুই এই ছেলেকে পছন্দ করিস মা?
– হুম পাপা
– আলহামদুলিল্লাহ
ইরাদ আর রুহি অবাক চোখে তাকায় সোবহান সাহেবের দিকে
– বাবা তোমাকে আমার প্রথম দেখায় অনেক ভালো লেগেছিলো আর আমার মেয়ের চয়েজ ও দেখো কতো মিলে আমাদের সাথে।

– আংকেল তবে আপনি কিছু ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমি আমার অতীত নিয়ে কিছু কথা আপনাকে জানাতে চাই। আমি চাই আপনারা সব ভেবেই ডিসিশন নিবেন। কারণ রুহি আপনাদের মেয়ে, আর ওর কথা ভেবে আপনারা যা সিদ্ধান্ত নিবেন আমি তাই মেনে নেবো।

রুহি ভয় পেয়ে যায়। ইরাদ কেনো পুরোনো কথা বলতে চাচ্ছে পাপাকে?
এসব বললে যদি কোনো ঝামেলা হয়? কলিজার সব পানি যেনো রুহির শুকিয়ে যাচ্ছে। সামনে কি হতে যাচ্ছে এখন? রুহির সব স্বপ্ন না নিমিষেই চূড়মাড় হয়ে যায়।
#অনুতাপ
#চতুর্ত্রিংশ #Yasira_Abisha (#Fatha)

পাপাকে ইরাদ বসে নিজের সবটা বললো,
পাপা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলতে শুরু করলেন,
– বাবা আমার মনে হয়না যদি কারো আগে বিয়ে হয়ে থাকে তাহলে সে খারাপ হয়ে যায়।তবে বেশির ভাগ সংসার নষ্ট হয়ে থাকে ছেলেদের দোষে যদিও সব ক্ষেত্রে এক নয়। আর তোমাকে আমি প্রথম থেকেই দেখে বুঝেছি তুমি ভালো একজন ছেলে আমার পরিচিত নাহলে হয়তো আমি আবার ভাবতাম এই বিষয়ে, আর আমাদের মেয়ে যেহেতু তোমাকে পছন্দ করেছে তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। পরিবারের বাকি সবার সাথে আমি এই বিষয়ে কথা বলবো। আমার মনে হয় না এই বিষয়ে কারো দ্বিমত হবে, আর রুহির বাবা আমার ভায়রাকম ভাই বেশি আমার তরফ থেকে তোমাকে পছন্দ করা মানে অন্য দিক দিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।

– রুহির বাবা?
– রুহি আমার ওয়াইফের জমজ বোনের মেয়ে। ও জন্মের সময়ে ওর মা মারা যায়। এরপর থেকে ওকে দেখাশোনা আমি আর আমার ওয়াইফই করতাম। আমি কোনোদিন মনে করিনি আমার এক মেয়ে রুহি আমার জন্য সবসময় আমার ছোট মেয়ে ছিল আর থাকবে।
ইরাদ মুচকি হাসলো।

.

পরদিন…..
পাপার তরফ থেকে সবটা মেনে নেওয়ায় রুহি যেনো একটা ভরসা পেলো।
পুরো পাচঁটা দিন রুহি আর ইরাদ একসাথে ছিলো, এই কয়েকটা দিনের মধ্যেই যেনো বিগত তিন বছরের দূরত্ব গুলো একদম ঘুচে গেছে। এবার অপেক্ষার প্রহর শেষ করতে চাইছে রুহি। ইরাদকে কিছুদিনের জন্য নিজের করে পেয়ে মন তো আর ভরছে না। সারাটা জীবন ভোরের সূচনা ইরাদের বুকে মাথা রেখেই করতে চায় রুহি। রাতের শেষ জোৎস্নাটাও ইরাদের হাত ধরেই দেখতে চায় রুহি। এরকম হাজারো আশা আছে মনের মাঝে লুকিয়ে সেসকল স্বপ্ন গুলো রুহি বাস্তবায়ন করতে চায়। আর এসব কিছুই বাস্তবতা পেতে পারবে শুধু আপু মা বাবাকে জানানোর পরে। সবাই কবে আসবে আর রুহি সবটা খুলে বলবে এই অপেক্ষা আর যেনো রুহির সহ্য হচ্ছে না। সকালে ফিরে এসে রুহি ঘুমিয়ে ছিলো। এমন সময় সোবহান সাহেব রুহিকে ডেকে তুললেন,
– মামনী
– পাপা কখন ফিরেছো বাসায়?
– এইতো মামনী কিছুক্ষন আগে। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
– কেমন সারপ্রাইজ পাপা?
– তোমার বাবার সাথে আমি সবটা শেয়ার করেছি ইরাদের ব্যাপারে।
-পাপা?
– হুম
– এরপর কি হলো?
– ও বললো আমার ডিসিশনে ওর ভরসা আছে এবং ইরাদের ও তোমার ব্যাপারটা ও মেনে নিয়েছে। কারণ মেঘার বিয়েটাও আমি ওর কথায় দিয়েছিলাম ওর বন্ধুর ছেলের সাথে। আর মেঘা ভালো ও আছে। আমরা আমাদের মেয়েদের জন্য খারাপ চাইবো না কোনোদিন এটা আমরা জানি।
এই বলে সোবহান সাহেব হাসলেন
তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মুখটা গম্ভীর হয়ে এলো
– কি হলো পাপা?
-এখন সমস্যা একটাই?
– তোর মা আর বোন,ওরা ইরাদের ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবে নিবে না আমার মনে হয়।
-এখন কি করবো?
– আজকে রাতে ইরাদকে আসতে বলো আমাদের বাসায়।
– রাতে কেনো পাপা?
– দরকার আছে মা। আগে বলো তুমি।

.

রুহি ইরাদকে ফোন করে,
-আসসালামু আলাইকুম
– ওয়ালাইকুম আসসালাম
– কি করছেন?
– ঢাকা একটা নতুন বাসা কিনেছি এবার আসার পরে, এর সব কাজ শেষ। এখন শুধু এটার ইন্টেরিয়ার ডিজাইন নিয়ে কাজ করাতে হবে তোমাকে কল দিবো ভাবছিলাম। আর তখনই তুমি কল দিলে।
– এটাই তো মনের টান
বলে রুহি খিলখিল করে হাসছে
ইরাদও মুচকি হাসছে রুহির কথায়।
– ম্যাডাম এখন পুরোটা আপনি মন মতো করে ডিজাইন করে নিয়েন আমি পারবো না করতে।
– ওকে স্যার আমিই করবো, এখন শুনুন জরুরি কথা।
– কি কথা?
– আজকে আপনি আমার বাসায় আসছেন ডিনারে।
– কেনো?
– পাপা ইনভাইট করেছেন আর অনেক ভালো একটা নিউজ আছে।
– কি সেটা?
-আমার বাবা আপনার আর আমার বিয়ের ব্যাপারে মেনে নিয়েছেন
– আলহামদুলিল্লাহ
– এখন দেড়ি করবেন না, জলদি বাসায় আসেন।
– এখন তো সন্ধ্যা
– আপনাকে দেখতে ইচ্ছা করছে তাড়াতাড়ি আসেন প্লিজ।
রুহির আহ্লাদী কথা গুলো শুনে ইরাদ হাসে, বাচ্চাদের মতো করে আবদার করছে।
– আসছি ইশার নামাজের পরে আপনি এখন রেস্ট নেন। আমার পাগলীটা।

রুহির ইচ্ছা করছে লাল শাড়ি পড়তে আজকে। রুহি সুন্দর করে লাল একটা শাড়ি পড়লো, চোখে কাজল দিলো শুধু, আর মাথায় হাত খোপা। বেশ লাগছে ওকে দেখতে।

এদিকে ইরাদ বেড় হবে তখনই ওর ম্যানেজার ওকে কল দিয়ে বললো,
– স্যার আমাদের আজকে মাঝ রাতে আপনার চিটাগং এর ফ্লাইট
– আজকে?
-জ্বি স্যার।
– শিট!
আমার একদম খেয়াল ছিলো না।
– স্যার তাই আপনাকে কল দিলাম
– কয়টায় ফ্লাইট?
– ভোর ৪টায়।
-ওকে।

ইরাদ ভাবলো একবার রুহিকে কল দিয়ে বলবে কিন্তু রুহিকে আর কল দিয়ে বললো না।
কারণ রুহি মন খারাপ করবে ইরাদের যাওয়ার কথা শুনলে তাই ওকে৷ সামনা সামনি গিয়ে ইরাদ রুহিকে বলবে যেনো ও মন খারাপ না করে।

রুহি ঘর থেক বেড় হবে এমন সময় ওর ফোনে মেঘা মেসেজ করে
“রুহি শোন, আমরা এখন বের হচ্ছি,
আজকে সকালের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর থেকে আমরা ব্যাক করবো ইনশাআল্লাহ।”

রুহি তো খুব খুশি হয়ে নিচে পাপাকে খবর দিতে গেলেন।
কিন্তু সোবহান সাহেব খুশি না হয়ে গম্ভীর হয়ে গেলেন।
-পাপা কি হলো?
– তোর মা আর বোন আসা মানেই তো বিপদ
– পাপা তারা ও মানবে
– মানবে কি না জানিনা তবে ছেলেকে খুব পর্যবেক্ষণ করবে এটা জানি।
-এখন বাবা?
– যা করার আজকেই করতে হবে
রুহি খুব ভয় পেয়ে গেলো। কারণ ইরাদের কোনো সমস্যা না থাকলেও একটা অতীত আছে। আর এই অতীত মা ও মেঘা কিভাবে নিবে তা রুহির জানা নেই।

এমন সময় ইরাদ এলো,
– আসসালামু আলাইকুম আংকেল
– ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা বসো।
রুহি ইরাদকে দেখে কিছুই বললো না। ও এখন চিন্তায় আছে বোন আর মা কে নিয়ে। যদি কোনো সমস্যা হয় আর ইরাদ রুহিকে রেখে চলে যায়?
আর এদিকে ইরাদ ভাবছে আজকে যাওয়ার কথা শুনলে রুহি কষ্ট পাবে। ওকে কিভাবে বলা যায়?

কিছুক্ষণ পরে সোবহান সাহেব বললেন,
-বাবা আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তুমি রাজি কি না আমি জানতে চাই।
– জ্বি আংকেল?
– আমি চাচ্ছি আজকেই তোমার আর রুহির বিয়েটা দিয়ে দিতে।
– কেনো আংকেল?
– আজকের দিনটা ভালো
(সোবহান সাহেব আর মেঘা ও তার মায়ের কথাটা ইরাদকে বললো না, যেনো কোনো রকম বাজে প্রভাব না পড়ে এই ব্যাপাটায় ইরাদ ও রুহির সম্পর্কের ওপরে)

-ইরাদ রুহির দিকে তাকালো, রুহির চোখ দুটো যেনো ইরাদকে বলছে
– প্লিজ মানা করবেন না। অনেক তো হলো আর দূরে না থাকি এবার এক হয়ে যাই আমরা?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here