অনুভুতিরা শীর্ষে পর্ব ৭

#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_৭
.
আজ আপুর গায়ে হলুদ। সকাল থেকেই সবাই ব্যস্ত। একটু পর ঘরোয়া ভাবে প্রথমে হলুদ দিয়ে গোসল করানো হবে। তারপর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানে আবার আপু আর আরফান ভাইয়াকে একসাথে হলুদ দেওয়া হবে। আর মেহেন্দির অনুষ্ঠান ও একসাথে হবে। আমার তো তেমন কোন কাজ নেই। আপুকে সাজিয়ে দিয়ে নিজে একটা হলুদ শাড়ি পড়েছি। মাথায় খোপা করে তাতে বেলিফুল আর গোলাপ কম্বিনেশন করে লাগিয়েছি। আপুর বান্ধুবিরা আমার সবগুলো কাজিনদের নাচ কোরিওগ্রাফ করেছি আমি। আজ সন্ধ্যায় সবার পারফরম্যান্স। ভালোয় ভালোয় নাচতে পারলেই হলো। কিছুক্ষনের মাঝেই আপুর শ্বশুরবাড়ি থেকে ১৫ জনের মতো লোক এলো। সবার হাতেই একটা, দুটো করে ঢালা। আমার এই রং বেরং এর ঢালাগুলো দেখতে বেশ লাগে। একটাতে হলুদ, আরেকটায় শাড়ি, এরকম পর পর কেক, একটা ঘরের মতো কি যেন, আমি ঠিকভাবে চিনিও না। সবচেয়ে অবাক হলাম একটা ঢালা দেখে, কেননা সেটাতে ছিল একগাদা চকলেট, প্রায় ২০ মুট চুড়ি আর একটা নীল সিল্কের শাড়ি। ঢালাটা এতো সুন্দর করে সাজানো ছিল যে কি বলব! আমি দৌড়ে ওই ঢালার দিকে গেলাম। এটার উপরে সুন্দর করে লেখা, “For Subha”। আমি এগুতেই ভাইয়াটা হেসে আমার হাতে ঢালাটা ধরিয়ে দিলো। আমি কিছু জিজ্ঞাসা করবো তার আগেই ভাইয়াটা বেরিয়ে গেল। ওমা! উনি এভাবে বেরিয়ে গেল কেন? এখানে তো সবার খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি যারা সাথে এসেছিল সবাই ভিতরে চলে গেছে। আমিও ভিতরে গিয়ে একজন আপুকে জিজ্ঞাসা করলাম,
–আচ্ছা আপু তোমাদের সাথে যে এই ঢালাটা নিয়ে এসেছে সে চলে গেলো কেন?
আপু চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,
-কই সবাইই তো আছে। আমরা মোট ১৫ জনই আছি এখানে। আর এই ঢালা তো আমরা কেউ আনিনি!
আমি তো অবাক! তাহলে ওই লোকটাকে? কিন্তু এখানে তো আমার নাম লেখা! ঢালাটা রুমে রেখে এসে অনুষ্ঠানে মন দিলাম। আপুকে হলুদ দেওয়ার পর সবার আগে আমাকে হলুদে রাঙিয়ে দিলো আপু! আমি ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। এর মধ্যেই এক আন্টি বলে উঠলো,
-এমা কি সৌভাগ্য! এবার রুবাইয়ার পরই সুবাহর পালা। বিয়ের ফুল মনে হয় ফুটেই গেল, নয়তো এভাবে সবার আগে কনের হলুদ ওর গায়ে লাগতো না!
আমি আপু দুইজনেই অবাক। এ কি ধরনের কথা? আমি হেসে দিয়ে আন্টিকে বললাম,
–তা আন্টি আমার বরটা কোথায় যদি একটু বলতে! সে না হলে আমার বিয়েটা হবে কিভাবে? ইশ যদি এখানে থাকতো আমার গালের হলুদ তার গালে লাগিয়ে দিতাম! কি রোমান্টিক হতো বিষয়টা বলুন তো! ইশ ভাবতেই ফিলিং অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে।
আন্টি পুরো দমে গেলেন। নাক ছিটকে বললেন,
-ছিঃ কি অসভ্য মেয়েরে বাবা!
আমি এবার তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম,
–লও ঠেলা! এখানে অসভ্যতামির কি হলো? আমি যদি না বলতাম আপনি এক্ষুনি বলতেন, বিয়ের পরপরই বাচ্চা নিয়ে নিও, স্বামী কন্ট্রোলে আসবে, শাশুড়ী খুশি হবে, তোমার জীবন ধন্যওওওও হয়ে যাবে! যেখানে বিয়েরই নাম গন্ধ নেই সেখানে বাচ্চাও পয়দা করে দিতেন আপনারা। আমি আপুর বেলায় শুনেছি আপনাদের কথা! তাই আমার বেলায় আর চান্স দিলাম না।

আমার কথা শুনে আন্টিরা ভেংচি কেটে জায়গা থেকে সরে গেল। আপু আমাকে পিছন থেকে ধরে হাসছে। আর বলছে,
-কি দিলিরে সুবু! হাহা! আমার জীবন ধন্যওওও হয়ে গেল।

সেখানে উপস্থিত সবাই হেসে দিল।

.
সাদাদ উদাম গায়ে কফি হাতে টেরেসে চলে গেলো। মাত্র গোসল করে বেরিয়েছে সে। চুলের পানিগুলো তার জানান দিচ্ছে। আরফানেরও গোসল শেষ। সাদাদের রুমে এসে দেখে সে টেরেসে দাঁড়িয়ে আছে। তাই জোরে ডাক দিল,
-সাদ!
সাদাদ পিছনে ঘুরে আরফানকে দেখতে পেয়ে রুমে চলে এলো। হঠাৎ তার ফোনে টোন বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে সিন করতেই তার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। সুবাহর ঢালা হাতে হাস্যজ্বল ছবি। তার পর একটা ভিডিও। সাদাদ কানে ইয়ারফোন গুজে ভিডিও টা সম্পুর্ন দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সাদাদকে হাসতে দেখে আরফানও ভিডিও টা দেখলো আর বলল,
-দেখ! আমার শালিকার অবস্থা! আন্টিদের মুখে ঝামা ঘষে দিছে!

.
সন্ধ্যায় আপুর আর আরফান ভাউয়ার হলুদ আগে হবে তাই সবাই এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে। আর আমি রুমে এখনো সাজতে ব্যস্ত। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আরফান ভাইয়ারা এসে যাবে। আজ ওই কালো লেহেঙ্গা টা পড়েছি। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ওই ঢালাতে কালো রঙের রেশমি চুড়ি ছিল ওইগুলো পড়েছি। ভারী মেকআপ আমার কোনকালেই পছন্দ ছিল না। তাও আজ একটু সেজেছি। আমার সাজের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হয়েছে স্মোকি আইস! আপু করে দিয়েছে। আজ আপুর অনুষ্ঠান তবুও আপু আমায় নিয়ে ব্যস্ত ছিল। বাইরে গিয়ে দেখি সবাই এসে পড়েছে। আমি আপুকে স্টেজে বসা দেখে দৌড় দিলাম লেহেঙ্গা ধরে। এটা আমার বদ অভ্যাস। এক্সাইটেড হলে আশেপাশে তাকানোর সময় পাই না। ধুপ করে সামনে কারো সাথে ধাক্কা খেতেই পিছনে পড়ে যেতে নিলাম। কিন্তু তার আগেই কেউ আমার ডানবাহু ধরে বাঁচালো। উহু উহু করতে করতে সামনে তাকাতেই দেখি সাদাদ ভাই আমার হাত ধরে আছে। এমনভাবে ধরেছে যেন আমার গায়ে স্পর্শ লাগলে ওনার শরীর জ্বলে যাবে। আজাইরা! এক মিনিট উনি এখানে কি করছে। ভ্রু কুঁচকে ওনার দিকে তাকাতেই উনি বাঁকা হেসে বলল,
–দেখে চলাফেরা করো! এক্ষুনি তো পড়তে না ধরলে! বাচ্চাদের মতো দৌড়াচ্ছো কেন?
বাচ্চা বলায় বেশ অপমানিত বোধ করলাম। তাই মুখ ফুলিয়ে বললাম,
–আপনি খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আর আপনি এখানে কিভাবে?
উনি হেসে আমাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলল,
–সেটা তোমার দুলাভাইকেই জিজ্ঞাসা করো!
উনি যেতে গিয়েও পিছনে ফিরে বললেন,
–বাই দ্যা ওয়ে অনেক এট্রেক্টিভ লাগছে তোমাকে! কুল! ফু…..
আমি তো পুরো অবাক! এই লোক বলে কি? এটা আবার কি ধরনের নাউজুবিল্লাহ মার্কা কম্পলিমেন্ট! হঠাৎ করেই মনে পড়লো আমি না ওনাকে ভয় পাই? ভয়টা কি পালিয়ে একদা ভয় পাইতাম হয়ে গেলো নাকি?
,
,
,
চলবে…………..❤️

(সরি ফর লেট। এখন থেকে রাতেই দিব। আপনাদের রেসপন্স আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে! আমি হতাশ!😰)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here