#অনুভূতির_অন্তরালে ❤️🔥
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৯
বিকেল গড়িয়ে সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে অনেকটা। এখনও ক্রমাগত ঝগড়া করে চলেছে আরশি আর অপূর্ব নামক ছেলেটি। তাদের ঝগড়ায় অতিষ্ঠে সকলে। অপূর্বের ভয়ে কিছু বলার জোর নেই তাদের। আমি ভ্রু কুঁচকে শুধু তাদের কান্ড দেখে চলেছি। তাদের ঝগড়া যখন বেড়ে চলেছে তখন অপূর্ব নামক ছেলেটির দৃষ্টি নজরে পড়লাম আমি। থেমে গেল তাদের কথপোকথন। তিনি চপল পায়ে এগিয়ে এলেন আমার দিকে। গহীন নয়নে চেয়ে রইলেন আমার মুখদর্পনে। কৌতূহলী কন্ঠে বললেন..
— “তরী, কি হয়েছে তোমার? তোমার মুখে স্পষ্ট ভাঁজ পড়েছে, তুমি কি কিছু খাওনি।”
নিজের ব্যাক্তিগত তথ্য অন্যকারো সাথে শেয়ার না করা উত্তম। মৃদু কন্ঠে বললাম..– “খেয়েছি!”
সাথে সাথে যেখানে এসে উপস্থিত হলো আরশি। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল..– “মিথ্যা কেন বলছিস ঋনি? মা যে তোকে খেতে দেয়নি সেটা কেন বলছিস না।”
অপূর্ব নামক মানুষটির ভাবাবেগ কেমন হলো জানা নেই আমার। আমি রুদ্ধ দৃষ্টিতে আরশির দিকে অবলোকন করলাম। দাঁতে দাঁত চেপে মৃদু শব্দে বললাম..
— “তোর কি কোনো জন্মে বুদ্ধি হবে না। বাড়ির কথা বাইরে কেন বলছিস?”
বোঝার বদলে উল্টো সুরে বলে উঠলো..
— “বাইরে লোক কোথায়? ও তো আমার জানেমান। শোনো জানেমান; মা আগে অনেক ভালো ছিলো। হঠাৎ করে কেমন জানি হয়ে গেল। তরীকে দিয়ে বাড়ির সকল কাজ করায়। ভালো খাবার খেতে দেয়না। তাই আজকে সকালে ভাইয়ার সাথে প্রচুর ঝগড়া হয়েছে। কতোকিছু খেতে বলেছি, কিন্তু খায় নি।”
শেষের শব্দ গুলো মুখ ভার করে বলল আরশি। মুহুর্তেই অপূর্বের চোখ মুখের অবস্থা শোচনীয় হতে দেখা গেল। আরশির কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই হাত চেপে ধরলেন আমার। এগিয়ে গেলেন সামনের দিকে। টেনে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন আমায়। আমাদের পিছু পিছু আরশি এসে গাড়ির সামনে দাঁড়ালো। অপূর্বের চোখের দিকে না তাকিয়ে বলল..
— ক-কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ওকে?
— তোমার যেতে হলে উঠো, নাহলে বাড়িতে যাও। গো..
বাক্য উচ্চারণ করলো না আরশি। গাড়িতে আমার পাশের জায়গাটা বিনা বাঁধায় দখল করে নিল। পেছনে পেছনে এলো কয়েকজন গার্ড। হঠাৎ অপূর্বের এমন অবস্থা দেখে কাঁপতে কাঁপতে বলল..
— স্যার আমরা যেখানে যাচ্ছিলাম..
হাতের উল্টো পিঠ দেখিয়ে থামিয়ে দিল অপূর্ব।
“আমি এখন বাড়িতে যাবো। ইটস্ ফাইনাল। চলো..
তিনি বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করলো।
.
.
খাবার টেবিলে বসে আছি আমরা তিনজনে। একে একে ইলিশ মাছের খাবারে টেবিল সেজে উঠেছে। অপূর্ব নামক ছেলেটি, বাড়িতে পৌঁছে তিনি সকলকে আধঘন্টা সময় দিয়েছে ইলিশ মাছ রান্না করতে। সর্বপ্রকার রান্না হয়েছে। ইলিশ মাছ বরাবরই আমার প্রিয় খাবার, তিনি জানলেন কিভাবে সেটাই বুঝতে পারলাম না।
সার্ভেন্ট রা সুন্দর করে খাবার সাজিয়ে দিলেন। ইতোহস্ত বোধ নিয়ে দুই লোকমা মুখে দিতেই নিজের দিকে ডাকলেন তিনি। অপূর্বের পাশের চেয়ারটা টেনে দিলেন। বসলাম সেখানে। খাবার মেখে এগিয়ে দিলেন আমার দিকে। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। চেনা নেই জানা নেই, আছে অদৃশ্য আত্মার টান। সেই অদৃশ্য টানে এতোটা আদোও কেউ করে। আচ্ছা এই ছেলেটার জায়গায় যদি আমার নিজের ভাইয়া থাকতো, তাহলে নিশ্চয়ই এমনটা করতো।
মাথা নিচু করে বললাম..– “আমি খেয়ে নিতে পারব ভাইয়া।”
তিনি আমার কথা কর্নপাত করলেন না। হাতটা আরেকটু এগিয়ে দিলেন আমার দিকে। স্মিত হেসে বলল..
— “কথা না বলে মুখ খোল খুকি। সবসময় তো নিজের হাতে খাস, আজকে নাহয় আমি খাইয়ে দিলাম।”
খুকি। কি করছিস খুকি, শুনছিস খুকি, কাঁদছিস খুকি। মন খারাপ খুকি। এই শব্দ গুলো আমাকে অতিশয় পরিচিত একজন কাছের মানুষের কথা স্বরণ করিয়ে দিলো। অস্ফুট স্বরে বললাম..– “খুকি।”
কদাচিৎ ফাক করে গেল ওষ্ঠজোড়া। সেই ফাঁক দিয়ে গলিয়ে দিলো খাবারের লোকমা। এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার ব্যস্ত ভাবনার ছেদ ঘটল আরশি কথায়। মুখ ফুলিয়ে বলল..
— “এদিকে একটা অবুঝ শিশু বসে আছে। ”
অপূর্ব সময় নিলো না, মৃদু হেসে খাবারের লোকমা এগিয়ে দিলো আরশির দিকে। আরশি মুচকি এসে চেয়ার টেনে এগিয়ে এলো অপূর্বের দিকে।
____________
সময়টা শীতকাল। চারদিক কুয়াশাচ্ছন্ন। মাটিগুলো বরফের চাকার মতো হিম শীতল হাওয়া আছে। মেঝেতে সামান্য পাতলা নকশিকাঁথা বিছিয়ে তার উপর শুয়ে আছি। রান্নাঘরের জানালা বেঁধ করে ঠান্ডা হাওয়া ভেতরে প্রবেশ করছে। রীতিমত কাঁপাকাঁপি করছি আমি। ঝড়সড় হয়ে গুটিয়ে আছি ঠান্ডায়। এখন এটাই আমার থাকার জায়গা। মামুনির কড়া নির্দেশ।
কারো চরণ ধ্বনি কানে এলো আমার। নড়েচড়ে উঠলাম আমি। ভয়ে কম্পনের মাত্রা আগের তুলনায় কয়েকশত গুন বেড়ে গেল। তদানীং কোনো উষ্ণ ছোঁয়ায় কেঁপে উঠলাম আমি। পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়েছে আমায়। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অস্পষ্ট স্বরে বললাম..– “ক-কে?”
— তরীরানী, এই নৌকারানী। কার সাহস আছে, আমি ছাড়া অন্য কেউ তোকে স্পর্শ করবে।
ভয় নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। পেছন ফিরে অরিশ ভাইয়ার শরীরের সাথে এক প্রকার লেপ্টে গেলাম। তার উষ্ণ দেহের তাপে নিজের শীতলতা কমানোর চেষ্টা করলাম। আমার কান্ড দেখে বললেন..
,– বেশী শীত করছে?
কাঁপতে কাঁপতে জবাব দিলাম না..– “না।”
দ্বি মুহূর্ত অতিবাহিত হওয়ার আগেই নিজের উপরে তুলে নিলেন আমার। দৃঢ় বাঁধনে বেষ্টিত করে নিয়ে বলল..
— “আমার কাছে মিথ্যা বলতে হবে না। ঘুমিয়ে পর।”
চোখের পাতা বড্ড ক্লান্ত তাই দ্রুত নয়ন গ্ৰথন করে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম।
.
.
নিদ্রা ভঙ্গ হতেই পর্বপ্রথম অরিশ ভাইয়ার মুখটা দর্শন করলাম। আমাকে পূর্বের ন্যায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ঠান্ডায় নাক টাকছেন। তার বুকে অবস্থান করে নিজেকে কেমন জানি পূর্ণ পূর্ণ অনুভব করছি। তার মাথায় এলোমেলো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিলাম কিছুক্ষণ। গভীর দহনে অধর ছুয়ে দিলাম কেশ বিহীন ললাটে। আচ্ছা মানুষটা এতো কিউট কেন? কেন এতো যত্ন নেয় আমার। এই মানুষটিকে সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবেসে আসছি। কখনো বলা হয়ে উঠেনি তাকে।
নড়ে চড়ে উঠলেন তিনি। কেশে উঠলেন একবার। হালকা হয়ে এলো বাহু বন্ধন। ডেক্সি বের করে চুলোয় দুই কাপ সমপরিমাণ পানি দিয়ে দিলাম। আদা আর প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে দিলাম। পানি গরম হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজ আদায় করে এলাম। পরিমাণ মতো চা পাতা আর চিনি দিয়ে দিলাম।
এককাপে চা ঢেলে আস্তে আস্তে অরিশ ভাইয়াকে ডাক দিলাম। উঠে বসলেন তিনি। হাতে ধরিয়ে দিলাম চায়ের কাপ। ভ্রু কুঁচকালো সে। চুমুক দিলো চায়ের কাপে। অবশিষ্ট অংশ টুকু খেয়ে কাপ এগিয়ে দিলেন। হাঁটু ভাঁজ করে বলল..
— “অসাধারণ হয়েছে। এখন থেকে রোজ সকালে কফি নয়, এককাপ আদা চা করে দিবি। মনে থাকবে..
মৃদু হেঁসে মাথা নেড়ে সম্মতি প্রদান করলাম আমি। সকালের ব্রেকফাস্টের তোরজোর শুরু করে দিলাম। আজ সোমবার। ভার্সিটিতে যেতে হবে। রান্নায় দেরী হলে ভার্সিটিতে যাওয়ার হবে না। রান্নার কাজে হাত লাগাতেই অরিশ ভাইয়া উঠে পড়লেন। ব্যবহৃত বালিশ কাঁথা গুলো ভাঁজ করে রাখলেন। আমার কাজে সাহায্য করলেন তিনি। আমার প্রতি তার দায়িত্ববোধ দেখে শুধু মুচকি হাঁসলাম।
.
.
মৃগী রোগ নামক শুনলেই ভেতরের টনক নড়ে উঠে। ভয়ংকরের চেয়ে ভয়ংকর যাকে বলা হয়। এই রোগটা যখন তখন যেখানে সেখানে উঠতে পারে। রোগটি অবস্থান করা সময়টুকু জ্ঞানহীন, প্রাণহীন মানুষ। এমনকি মানুষকে চির নিদ্রায় তলিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এই রোগটি দানা বেঁধে রয়েছে দিদার শরীরে। বিগত দিনগুলোতে হঠাৎ দিদার শরীরে উপদ্রম হলে তাকে নিয়ে হাহাকার পড়ে যেত। আজ তার ব্যাতিক্রম কিছু হলো না। দিনটা ভালোই ছিল। মামুনি মাজারে গিয়েছিল। শান্তমনে ভার্সিটি থেকে ফিরেছিলাম বাড়িতে। বাড়িতে প্রবেশ করতেই ধোঁয়ায় কাশি হওয়ার উপক্রম। আমি আর আরশি একপ্রকার ছুটে গেলাম রান্নাঘরের দিকে। দিদার একহাত চুলার জ্বলন্ত আগুনের শিখায় রয়েছে। দিদা কিচেনের তাকের উপর মাথা ঠেকিয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। দিদাকে এমন অবস্থায় দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম আমরা। পরিনত হলাম জীবন্ত দানবে। ভেতরের টনক নড়লো এবার। ছুটে গেলাম চুলোর কাছে। চুলো নিভিয়ে দিয়ে বালতি ভর্তি হিম শীতল পানি নিয়ে হাজির হলাম। দিদার হাতটা পানিতে চুবিয়ে রাখলাম কিছুক্ষণ। চোখ মুখে পানি ছেটালাম, ফিরলো না তার জ্ঞান। উপায়হীন হয়ে অরিশ ভাইয়ার নাম্বারে ডায়াল করলাম। প্রথমবারে রিসিভ না হলেও পরে হলো।#অনুভূতির_অন্তরালে ❤️🔥
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:১০
চারপাশে তখন গভীর রাত বিরাজমান। এখনো জ্ঞান ফেরেনি দিদার। প্রাইভেট হাসপাতালে আনা হয়েছে তাকে। আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন সেখানে। ডাক্তারদের দেখা নেই। তবে নার্স পোড়া হাত ব্যান্ডজ করে দিয়েছে। ডাক্তারের অভাবে ইলেকট্রিক শক না দেওয়া যায়নি তাকে। বেশ কিছুক্ষণ পূর্বে জানতে পারলাম হসপিটালে একজন দক্ষ ডাক্তার রয়েছে। তিনি মাত্র একদিন অর্থাৎ সোমবার চেম্বারে বসে। মূলত হসপিটাল টা তার নামে। সার্জন বিষয় দক্ষ হলেও, মোটামুটি সকল বিষয়ে তিনি পারদর্শী। কারণটা সকলের অজানা।
বর্তমানে ছুটছি সেই ডাক্তারের চেম্বারে। বাইরে তার এসিস্ট্যান্ট দাঁড়িয়ে আছে। এই ছেলেটি কি আদোও পৌঁছাতে দিবে ভেতরে। অন্য উপায় অবলম্বন করলাম আমরা। কথার তালে বুলিয়ে রাখলাম এসিস্ট্যান্ট নাম স্বল্প বয়সী ছেলেটিকে। এই ফাঁকে ভেতরে প্রবেশ করলো আরশি। ভেতরে প্রবেশ করেই দরজা বন্ধ করে দিলো। মৃদু শব্দে ফিরে চাইলো সকলে। কুঁচকে এলো আরশি ভ্রু যুগল। তার সাথে প্রচুর বিরক্ত সে, অবাকও। আগে পেছনে কিছু না ভেবেই ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। দরুন পেশেন্টরা তার দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক হওয়ার কারণ, ডাক্তারের আসনে আর কেউ নয় গ্যাং স্টার অপূর্ব নামক ছেলেটি বসে আছে। আড়চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে বলল..
— “তাহলে এই কথাই রইলো মিঃ আহম্মেদ। এবার আসুন।”
তারা গহিন নয়নে আরশির দিকে তাকিয়ে চলে গেলেন। মাথা নিচু করে এককোণে দাঁড়িয়ে ছিল আরশি। অপূর্ব এগিয়ে এলো আরশির দিকে। দুহাত বুকে গুজে বলল..– “কি চাই এখানে?”
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো আরশি। ভরকে গেল অপূর্ব। সরু চোখে তাকিয়ে বলল..
— “কি হয়েছে আরু? কাঁদছো কেন?”
বিনিময়ে অপূর্বের সাথে লেপ্টে গেল সে। কান্নার শব্দ ক্রমশ বেড়ে গেল। অস্বস্তিতে পড়ে গেল সে। প্রথমবার কোনো রমনী সংস্পর্শ। নিজেকে সামলাতে অপূর্ব মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। কোমর জড়িয়ে টেবিলের উপর বসিয়ে দিল তাকে। কাতর কন্ঠে বলল..
“আরু, কি হয়েছে তোমার? বলো আমাকে.
— “দি-দা, ভিলেন সাহেব, দি-দা।”
— “কি হয়েছে দিদার?”
— “চলুন, দেখবেন।”
আরশি কান্নারত অবস্থায় অপূর্বের হাত ধরে বেরিয়ে এলো। এগিয়ে গেল দিদার কেবিনের দিকে। পেছন থেকে নজর কাটলাম আমি। ধীরে ধীরে যাতে ওদের ভেতরের সমস্যাগুলো দূর হয়ে যাক, পূর্ণতা পাক তাদের ভালোবাসা।
_____
অন্ধকার নির্জন রাত। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার বিরাজমান। সেই অন্ধকারের মাঝে হেঁটে চলেছি আমি। ঠান্ডা হওয়া শরীর কাঁপিয়ে দিচ্ছে আমার। তার সাথে যোগ হয়েছে ভয়। হাতে মেডিসিনের প্যাকেট। আমার একহাত জড়িয়ে ধরে আছে আরশি। আমার চেয়ে বেশি ভয়ে কুপোকাত সে। অন্ধকারের আবরন পেরিয়ে দেখা গেল আলোর শিখা। এগিয়ে গেলাম সেদিকে। হসপিটালের রাস্তা ভুলে গেছি আমরা। সামনেই কয়েকটা ছেলেদের দেখা গেল। তারা আড্ডায় মেতেছে। ঠিক করলাম তাদের কাছে হসপিটালের এড্রেস জিজ্ঞাসা করব।
তাদের কাছে পৌঁছে ঠিকানা জানতে চাইলে কিছু বললেন না তারা। বিনিময়ে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলেন। হাইফেন করে বলল..
— “মামা আজকে তো যব্বর মাল পাইছি। দুইটারে দিয়ে আমাদের আটজনের হয়ে যাবে। লাল জামা পড়াটা কিন্তু আমার।”
নিজের দিকে তাকাতেই আতংকে উঠলাম আমি। এরা কি বলছে, বুঝতে সক্ষম হলাম। সাহায্য চাইতে এসে এখন কি বিপদে পড়বো। একহাতে আরশি হাত চেপে সর্বশক্তি দিয়ে ছুটলাম। অতিশয় পায়ের শব্দ বুঝতে অসুবিধা হলো না, তারাও আমাদের পিছু পিছু আসছে।
পায়ে ব্যাথা করছে। দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে উঠেছে শরীরটা, তবুও তারা পিছু পিছু ছুটছে তারা। একসময় শক্তি ক্ষয় হয়ে লুটিয়ে পড়লাম রাস্তার মাঝে। আরশি পেছনে ফিরে চাইলো। আমার দিকে এগিয়ে আসতে চাইলে একপ্রকার জোর করে আরশিকে পাঠিয়ে দিলাম। আরশি অদূরে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। যাই হোক নিজের জন্য অন্যকারো ক্ষতি করতে পারি না। তখনও ক্রমাগত আমার দিকে এগিয়ে আসছে তারা। মৃদু ঝুঁকে আমার ওরনা টান দেওয়ার পূর্ব মুহুর্তে লোচন যুগল খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। পরক্ষণেই বিকট শব্দে কেঁপে উঠলাম। কাঁপা কাঁপা আঁখি যুগল মেলে তাকাতেই দেখতে পারলাম লুটিয়ে পড়ে আছে সেই ছেলেটি। ভুতুড়ে ঢোক গিলে পেছনে তাকাতেই আমার ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। তৃপ্তিকর হাঁসির রেখা ফুটে উঠলো মুখে। অরিশ ভাইয়া আর অপূর্ব ভাইয়া হিংস্র মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজ তার এই রুপে ভেতরটা কম্পিত হলো আমার। অরিশ ভাইয়া আমাকে উঠিয়ে দাঁড় করালো। ওরনাটা ভালো ভাবে শরীরে পেঁচিয়ে দিলো। বুকে জড়িয়ে নিল আমাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল..– “কিছু হয়নি ডিঙি-রানী।”
তার শান্তনা শোনার মতো জ্ঞানশক্তি অবশিষ্ট নেই আমার মাঝে। শরীরটা ক্রমাগত হালকাহয়ে আসছে।
শোনার মতো মস্তিষ্ক সচল রইলো না আমার। ভাইয়ার বুকে মাথা ঠেকিয়ে জ্ঞান হারালাম সেখানে। কি হলো জানা নেই আমার।
পরক্ষণেই মুখের আকৃতি পরিবর্তন করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল..– “সাহস কি হয়, আমার জানে হাত দেওয়ার। ওর গায়ে হাত দেওয়ার আগে তোর হাত মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলবো আমি।”
অরিশ ভাইয়া আর কিছু উচ্চারণ করার আগে তার কাঁধে হাত রাখলেন। ইশরার কিছু একটা বুঝাতেই থেমে গেলেন তিনি। এগিয়ে গেল অপূর্ব ভাইয়া। শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল..
— ঈগল গ্যাং এর গ্যাং স্টার অপূর্ব আহসান কে চিনিস?”
— “ঐ সালারে, কে না চিনে!”
সাথে সাথে ঠাস ঠাস শব্দে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিলেন তিনি। ফোনের ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে মুখের সামনে ধরলেন। সবাই একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করলো কিছুক্ষণ। একজন তো ইতিমধ্যে বলেই ফেলেছে, এটাই অপূর্ব আহসান। আমি তারে টিভিতে দেখছি। ভাই এর মনে দয়া মায়া নাই। বাঁচতে চাইলে ভাগ..! না, না। ক্ষমা চা, নাইলে পাতালে থাকলেও তোরে খুঁজে বের করবে।
সাথে সাথে পায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো সকলে। অপূর্ব চুলগুলো পেছনে হেলিয়ে দিল। পা ঝাড়া দিয়ে পেছনে এসে দাঁড়ালো কয়েকপা। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল..
— “তোরা আমার বোনেদের শরীরে হাত দেওয়ার দুর্সাহস দেখিয়েছিস। ইচ্ছে করতে নিজের হাতে মাটিতে পুঁতে ফেলতে কিন্তু পারছি না..
তোদের পরে দেখে নিচ্ছি, ফোট ..
শেষের শব্দ টা গলা ফাটিয়ে বললেই এক ছুটে দৌড়ে পালালো সকলে। একে একে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল সকলে। হাই তুলে এগিয়ে গেল আরশির দিকে। ইতিমধ্যে ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসেছে সে। মাথা নিচু করে একপাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে চোখের অশ্রুটুকু মুছিয়ে দিল। সাথে সাথে অপূর্বকে জড়িয়ে ধরলো আরশি। মনের মাঝে শিতল আবরন ছড়িয়ে গেল অপূর্বের। অন্তরে জানান দিলো, দ্বিতীয় স্পর্শ। ধরলো না অপূর্ব। কৌতূহলী কন্ঠে বলল..
— “তুমি কি কথায় কথায় নাকে কান্না করা আর জড়িয়ে ধরার ডিগ্রি অর্জন করেছো?
চোখ মুখ কদাচিৎ ছোট করে অরিশের সাথে পা মেলালো আরশি।
_______________
— “এখন কি আমি বলে দিবো, কিভাবে ওদের খুঁজে বের করবি ইডিট। তোর সাত পুরুষের ভাগ্য ভালো, আমি তোদের সামনে নেই। যদি থাকতাম..
আমি জানি না, কিভাবে ওদের খুঁজে বের করবি! কিন্তু আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওদেরকে আমার সামনে চাইই চাই।”
রাগে গজগজ করতে করতে হাতের মুঠো ফোনটা ছুঁড়ে ফেললো। টুং টাং ধ্বনিতে করে তার পায়ের কাছে খুলে পড়লো ফোনটা বাকি অংশ গুলো। তার রাগের কাছে ভয় পেয়ে গেল সকলে। এটা দূর্বলতা। লম্বা হুড পড়া একজন লোক এসে তার মুখোমুখি দাঁড়ালো। আমতা আমতা করে বলল..
— “স্যার জহুরা এপার্টমেন্টের মালিক টেক্স দিতে ঝামেলা করছেন? কি করব.
রক্তচক্ষু দিয়ে লোকটির দিকে তাকাতেই পিছিয়ে গেলেন তিনি। মাথা নত করে সকলে তাকালেন। উঁচু গলায় লোকটি বলল..
— কেন? কেন রেখেছি আপনাদের একটু বলবেন আমাকে? সামান্য একটা কাজ ঠিকমতো করতে পারছেন না। আবার কয়েকটা ছেলের খবর আমাকে দিতে পারছেন না।
সবাই মাথা নত করে রইলো। পরক্ষনেই প্রবেশ করলো আরেকজন লোক। বললেন..
— “স্যার আপনার খুকির জ্ঞান ফিরেছে। এই মাত্র খবর পেলাম। দেখবেন না আপনি?
হম উচ্চারণ করে লোকটি কিছুক্ষণ দম নিয়ে নিজেকে শান্ত করলেন। ভেতরের কষ্টগুলো দূর করার চেষ্টা আরকি। অতঃপর একটা কাগজ আর কলম নিয়ে লিখতে বসে গেলেন। তার খুকির পছন্দসই সবকিছু সেই কাগজে লিস্ট করে নিলেন। অনলাইনে সেই সব জিনিস অর্ডার করে তার কাঙ্খিত জায়গায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিলেন। তাকে এখন আবার বেরুতে হবে।
(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)
(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)