অনুভুতির অন্তরালে পর্ব -১১+১২+১৩

#অনুভূতির_অন্তরালে ❤️‍🔥
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১১

পিটপিট করে নয়ন যুগল মেলে তাকাতেই সর্বপ্রথম অরিশ ভাইয়ার মুখ দর্শন করলাম। তিনি মৃদু ঝুঁকে আছেন আমার মুখের দিকে। নয়ন যুগল মেলে তাকানোর দ্বি মুহূর্তে পুনরায় গ্ৰথণ করতে হলো। জলকণা চোখের পাতার উপর পড়তেই খিঁচে বন্ধ করে নিলাম। কিছুক্ষণ পর নয়ন জোড়া মেলে পুনরায় অবলোকন করলে দেখতে পেলাম অরিশ ভাইয়ার আমার থেকে কিছুটা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চমকালাম আমি, ভিশন চমকালাম। তিনি তো আমার থেকে বেশ দূরে অবস্থান করছেন। তাহলে কেন চিত্তানুভব হয়েছিল, তিনি আমার সন্নিকটে বসে ক্রন্দন করছিলেন। হয়তো এটাই আমার দৃষ্টিভ্রম। উঠে বসার প্রয়াস করতেই বাঁধ সাধলেন তিনি। এগিয়ে এলেন আমার অভিমুখে। মস্তক নিজের কোলে নিয়ে নিলেন। হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন..

— “চড়ুই পাখি উঠতে হবে না তোকে? শান্ত হয়ে একটু রেস্ট নে। নড়াচড়া করলে স্যালাইনের ক্যানেল শিরা হাঁরিয়ে ফেলবে।”

হন্তদন্ত হয়ে দৃষ্টিপাত করলাম পাশে। প্রদর্শন হলো স্যালাইন। এতোক্ষণের এইটুকুই মস্তিষ্ক জানান দিলো না। দৃষ্টি সরিয়ে কেবিনের বাকি অংশ গুলো পরীক্ষা করলাম। না আজও ভাইয়া আসে নি। আয়াস গুলো ভেতরে পেঁচিয়ে পুন্ডুলির ন্যায় হলো। অরিশ ভাইয়ার হয়তো আন্দাজ করতে সক্ষম হলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন..

— “মন খারাপ করিস না পিচ্চি। অপূর্ব আসতে পারে নি তাকে কি হয়েছে? তোর জন্য অনেক গিফ্ট পাঠিয়েছে। ঐ দেখ।”

ভাইয়া কখনো আমার আবেদন অপূর্ণ রাখেনি। যখন যেটা অবশ্যক ম্যাজিকের মতো পাঠিয়ে দিতো। কিন্তু ক্লাস ফাইভে উঠার তাকে দেখা হয়নি। আমাদের ছেড়ে বহুদূরে চলে গেছে সে। মাঝে মাঝে শুধু ফোনেই কথপোকথন চলে তার সাথে।
অরিশ ভাইয়া তারুন্য ভাইয়ার কন্টাক্ট নাম্বারে ডায়াল করে, শ্রবণপথে ধরলেন আমার। হাতে নিলাম না ফোন। মুখ ভার করে রইলাম। এবার তিনি স্পিকারে দিয়ে দিলেন। বিপরীত পাশ থেকে ভেসে এলো ভাইয়ার সেই পরিচিত কাতর কন্ঠস্বর..

— “কি হয়েছে খুকি। আমার উপর রাগ করে আছিস? রাগ করিস না পাগলীটা আমার। একদিন ঠিক আমাকে দেখতে পারবি। ”

–” হ্যাঁ একদিন তোমাকে ঠিকই দেখতে পারব, তবে সেই দিনই তোমার সাথে কথা বলবো, তার আগে নয়।”

ললাট তুলনামূলক কুঁচকে অধর বাঁকিয়ে হাসলেন তিনি। তার হাসিতে গাঁ জ্বলে গেল আমার। খপ করে ফোনটা নিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলাম। আর কখনো তার সাথে কথা বলবো না।

_______________
হসপিটালে থেকে ফিরেছি অনেকটা দিন পেরিয়ে গেল। গতিশীল সময় পেরিয়ে গেছে আমাদের। দিদা সুস্থ হয়ে উঠেছে। আমি মোটেও অসুস্থ ছিলাম না, তবে ভাইয়া আমার যত্ন নিয়েছে। এখন আমি আর আরশি আগের মতো একসাথে ঘুমাই। মামনি এটা মেনে নিতে না চাইলে অরিশ ভাইয়া বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে তাই বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয়েছে।
গত দুদিন ধরে আগের থেকে মধুর ব্যবহার করছে মামুনি। কেন জানি, সেই ভালোবাসাটা লোক দেখানো মনে হচ্ছে, অন্তর থেকে নয়। আমি মেনে নিয়েছিলাম সেই ভালোবাসাটা। কিন্তু পারলাম আর কই। আজ সন্ধ্যায় একজন ভদ্র মহিলা তার ছেলেকে সাথে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছেন। মামুনি আপ্পায়নে ব্যস্ত হয়ে গেছে। দিদাও যোগ দিয়েছে সাথে। দিদার ভালো ব্যবহারটা কেন জানি সহ্য হলো না আমার।
আচম্বকাই মামুনি আমার হাতে একটা সুতি শাড়ি ধরিয়ে দিলেন। বারবার পড়তে বললেন। প্রথমে বুঝতে না পারলেন পরে পারলাম।
শাড়িটা পড়ে নিচে নামতেই হাতে ধরিয়ে দিলেন শরবতের গ্লাস। শাড়ির অগোছালো কুচিগুলো ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম তাদের দিকে। আমাকে আসতে দেখে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে টেবিলের উপর রাখলেন। আমাকে তার পাশে বসিয়ে দিলেন। কিন্তু অলঙ্কারের মতো পরক করে নিলেন আমাকে। ততক্ষণে মামুনি এসে বসেছে আমাদের সামনে সোফায়।
মামুনির দিকে দৃষ্টিপাত করে ইশারায় মুচকি হাসলেন মহিলা। একটা রিং পড়িয়ে দিলেন আমার অনামিকা আঙ্গুলের ভাঁজে। নজর কেটে বললেন..

— “বাহ্। বেশ মানিয়েছে।”

তার বাক্য ধ্বনি শেষ হওয়ার আগে কন্ঠস্বর শোনা গেল দিদার। বললেন..

— “আপনার ছেলের সাথে তরীকে বেশ মানাবে।”

এতোক্ষণে ছেলেটিকে নজরে এলো আমার। সকলের মুখে উচ্চেপড়া হাঁসি। কিন্তু আমার মুখে নেই। শব্দময় ক্রোন্দন করার মতো অবস্থা হয়েছে আমার। ভাষাগুলো হারিয়ে গেল মুহুর্তেই। কাঁপা কাঁপা অধর জোড়া নাড়িয়ে উচ্চারন করলাম..

— “মামুনি কি বলছো তুমি?”

সবাই দৃষ্টি তখন আমার মাঝে বন্দী‌। তাই আমাকে থামিয়ে মামুনি বলতে অনুবদ্ধ করলেন..
— “আসলে ছোটবেলা থেকে আমাদের কাছে বড় হয়েছে তো। তাই বিয়ে করে আমাদের ছেড়ে যেতে চাইছে না।”

— “আমিও তোমাকে আমার মেয়ে করে নিবো। তোমার মামুনির অভাব বুঝতে দিবো না। তুমি চিন্তা করো নি মা..

মুখ বন্ধ হয়ে গেল আমার। জবাব দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেললাম। নয়ন জোড়া ভিজে উঠলো। মামুনি তাকে সালাম করতেন বললেন। চুপচাপ তার মতো সালাম করলাম। তাদের কথার মাঝেই মামুনি রুমে পাঠিয়ে দিলেন আমায়।
দরজা বন্ধ করে শরীর থেকে শাড়িটা এক টানে খুলে ফেললাম। হাঁটুতে মাথা মুড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম এবার। মামুনি কিভাবে পারলেন আমার সাথে এমনটা করতে। অরিশ ভাইয়া তিনি কি জানেন, মামুনি আমার সাথে এমনটা করেছেন। আরশি আটকাতে পারতো, সে-তো বাড়িতে নেই। আজ বন্ধুদের সাথে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছে।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম। আজ আমি আরেকজনের বাধ্যক্তা হয়ে গেলাম।

____________
নিঝুম রাত্রি। হুতুম পেঁচা ডেকে চলেছে চারদিকে। কাঁদতে কাঁদতে তন্দ্রালগ্ন হয়েছিলাম আমি। মাঝরাতে কারো হিম শীতল স্পর্শ পেয়ে তন্দ্রা ভঙ্গ হলো আমার। অরিশ ভাইয়ার তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আছে আমার সম্মুখে। তাকে কাছে দেখে মৃদু হাসলাম আমি। সংকোচ নিয়ে তার এলোমেলো কেশগুলোতে হাত বুলিয়ে দিলাম। আজ কেমন দুজনের মাঝে অদৃশ্য দেয়ালের উপস্থিতি অনুভব করলাম। কোনো এক অপরিচিত প্রহরে তার এই ভুবন ভোলানো চুলগুলো ছোঁয়ার অধিকার আমার থাকবে না। আমার স্পর্শে নড়েচড়ে উঠলেন তিনি। হাতটা মাথার নিচে নিয়ে নিলেন। অতিশয় কম্পিত হলো আমার সর্বাঙ্গ। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরে হাত ছেড়ে দিলেন। নিজের গালে স্লাইড করলেন। রুদ্ধ কন্ঠে বললেন..

— “তোর হাতে কি লাগিয়েছিস পিচ্চি? গালে একদম ঢুকে গেছে।”

উল্টিয়ে নিজের হাতটা অবলোকন করলাম। অনামিকা আঙ্গুলের গোড়ায় একটা পাথরের রিং। যেটা আমার খেয়াল করাই হয় নি। হাতটা সরিয়ে নিলাম। অরিশ ভাইয়ার প্রশ্নের জবাব না পেয়ে এবার বেশ বিরাগী হলেন তিনি। উঠে বসলেন। অন্ধকারে আবৃত ঘরে তার মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন..

— “কি হলো কথা বলছিস না কেন? দেখি কি লাগিয়েছিস।”

হাতটা টেনে নিলেন ভাইয়া। ফোনের ফ্লাস লাইট জ্বালিয়ে নিলেন। আচম্কা আলোয় কুঁচকে এলো ললাট। হাতের বরাবর ধরলেন তিনি। রিং টা খুলে এপিঠ ওপিঠ করে দেখলেন। কৌতূহল দমাতে না পেরে প্রশ্ন ছুঁড়ল..

— “পিচ্চি দেখে তো গোল্ড মনে হচ্ছে। তোর কাছে গোল্ড এলো কিকরে?”

মাথা নিচু করে রইলাম আমি। উত্তর নেই আমার কাছে। কি বলবো তাকে, আমার অবাধে রিং পড়িয়ে গেছে। নিজের কাঙ্খিত উত্তর না পেয়ে বেশ রেগে গেলেন তিনি। চেপে ধরলেন আমার নরম কোমল হাত‌। দাঁতে দাঁত চেপে অদ্ভুত ঘর্ষণ করে বললেন..
— “থাপরিয়ে তোর দাঁত ফেলে দেবো..। তাড়াতাড়ি বল কি হয়েছে। ভালোভাবে কথা বললে তোর গায়ে লাগে না। বল..

শেষের শব্দ টা বেশ দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করলেন তিনি। তার কন্ঠে কম্পিত হলো আমার শিরায় শিরা। ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলাম। আবেশে বাহুডোরে মিশিয়ে নিলেন আমায়। আদুরে গলায় বলল..

— “পিচ্চি; এই পিচ্চি! কাঁদিস না প্লীজ। কিছু জিজ্ঞাসা করার পরে উত্তর না পেলে আমি রেখে যাই। বল কি হয়েছে..

একে একে সব ঘটনা খুলে বললাম ভাইয়াকে। আমার বলা অন্তিম মুহূর্তে পৌঁছালেই উঠে দাঁড়ালেন তিনি। আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন ড্রয়িং রুমে। সর্বশক্তি প্রয়োগ করে চিৎকার করলো লোচনগুলো মুহুর্তের মাঝেরক্তিম হয়ে এলো। তার এই মুখশ্রীর সাথে বেশ অপরিচিত আমি। ধীরে ধীরে নেমে এলো সকলে।

আমার হাতের অনামিকা আঙ্গুল থেকে রিং টা খুলে ছুঁড়ে মারলেন মামুনির পায়ের কাছে। বিনিময়ে দু’পা পিছিয়ে গেলেন তিনি। আমার দিকে হিংস্র চোখে তাকালেন। মাথা নিচু করে রইলাম।
অরিশ ভাইয়া ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে শান্ত গলায় বলল..

— “তারুণ্যের অনুপুস্থিতিতে আমি তরীর গার্ডিয়ান। ওকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাকে জানানো উচিত ছিল।”

ভাইয়ার বাক্যগুলো অস্পষ্ট হওয়ার আগেই মামুনি এগিয়ে এলেন আমার অভিমুখে। আচম্বিতে পরপর চড় বসিয়ে দিলেন গালে।#অনুভূতির_অন্তরালে ❤️‍🔥
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১২

শুনশান নিরিবিলি পথঘাট। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার বিরাজমান।‌ শুনশান নিরিবিলি পথ অতিক্রম করে হাওয়ার বেগে ছুটে চলেছে আরশি। সময় রাত দুইটা পনেরো মিনিট। এই গভীর রাতে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলেছে। নিশ্চয়ই বাড়ির সবাই তার জন্য অনুচিন্তন করছে। একসময় ঘুটঘুটে অন্ধকার অতিক্রম করে মৃদু আলোর দেখা মিললো। আরো কিছুটা পথ অতিক্রম করার পরে দেখা মিললো অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটির। তবে আরশির হৃদমাঝারে বিরাজমান শঙ্কা নিমিষেই হ্রাস পেল। অপূর্ব বসে আছে গাড়ির দরজা খুলে। একপার উপরে অন্যপা মাটি সংলগ্ন করেছে। দাঁতের ভাঁজে টুথপিক। বাম হাতে ব্যান্ডের সিলভার কালারস ওয়াচ। গোছালো কেশসমূহ পেছনে হেলিয়ে দেওয়া। আঙুলের ভাঁজে কালো সানগ্লাস ঘুড়াচ্ছে। অন্ধকারে মুখশ্রী পরিস্ফুট দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আরশির পরিচিত মানবটিকে চিনতে সময় লাগলো না। স্মিত হাঁসলো আরশি। কাঁধে রক্ষিত ব্যাগটা বাম হাতে চেপে ধরে ছুটতে লাগালো।
অপূর্বের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো আরশি। হাঁটুর উপর ভর করে হাঁপালো সে। অপূর্ব ভ্রু কুঁচকালো। চোখজোড়া পরিস্কার করে পুনরায় দৃষ্টি স্থির করলো। না তার দৃষ্টিভ্রম নয়। বিরাগী হতে দেখা গেল তাকে। মুখশ্রী সরিয়ে নিলো অদূরে। সবসময় এই রমনী তাকে বিরক্ত করে। গার্ডরা অপূর্বের ভঙ্গিমা বুঝতে পেরে আরশির দিকে এগিয়ে গেল। আরশির পথ আটকে দাড়িয়ে বলল..

— “এই মেয়ে কি চাই এখানে? যাও বলছি এখান থেকে।”

বিনিময়ে মুখ ভেঙালো আরশি। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে অপূর্বের পাশে বসলো। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল..

— “কেমন লোক পোষো তুমি জানেমান? কথায় কথায় এগিয়ে আসে মেয়েদের দিকে। বেহায়া নির্লজ্জ ছেলেরা।”

সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে হতাহত চোখে আরশির মুখপানে চেয়ে রইল। আরশি ভাব নিয়ে অপূর্বের হাত জড়িয়ে ধরলো। কাঁধে মাথা রাখল। ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল..

— “ছাড়ো আমায়, এমন করছ কেন? এতো রাতে, রাস্তায় কি করো তুমি? সেদিন তো ভয়ে মরো মরো অবস্থা হয়েছিলো। শিক্ষা হয়নি।”

— “আমার আবার ভয় কিসের? জানেমন আছে না। সেদিন যদি ওরা জানতো, আমি গ্যা স্টার অপূর্ব আহসানের জান,তাহলে দশবার কান ধরে উঠবস করতো।”

অপূর্বের হাত থেকে সানগ্লাস-টা নিয়ে নিজের কাজল টানা নয়নজোড়া ঢেকে নিল আরশি। আরো লেপ্টে গেল অপূর্বের বাহুতে। অপূর্ব কিছু করতে পারলো না। অবশেষে হাত ছাড়িয়ে নেমে দাঁড়ালো সে। সানগ্লাস টা নিজের হাতে নিয়ে নিলো। ঘুড়াতে ঘুড়াতে নিজের চোখে পড়ে নিলো। শার্টের কলার টেনে ঠিক করে আরশি হাত ধরে টেনে সরিয়ে দিল। ফটাফট গাড়িতে উঠে বসলো অপূর্ব। দ্বি মুহূর্ত অতিবাহিত হওয়ার আগে তার গার্ডরা সবাই গাড়িতে উঠে পড়লো। গাড়ি চলেছে শুরু করলো। গাড়ি যতোই সামনের দিকে এগুচ্ছে আরশির মনের কোণে ততই ভার হয়ে আসছে। একসময় শূন্যতায় অদৃশ্য হয়ে গেল গাড়িটা। ক্রমাগত ভীতি বাড়তে শুরু করলো তার। ব্যাগটা শক্ত করে খামচে ধরে সামনের দিকে পা চালালো সে। কিভাবে পারল অপুর্ব তাকে একা এই মাঝরাতে, মাঝ রাস্তায় ফেলে যেতে। তপ্ত নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো সে।

কিছুদূর পৌঁছাতেই একটা লাল রঙের গাড়ি এসে থামলো তার সামনে। দুইজন ছেলে নামলো গাড়ির ভেতরে থেকে। আরশির মাথা থেকে পা পর্যবেক্ষণ করে বলল..

— “এই সেই মেয়েটা না, যার জন্য রতন আর তার সাঙ্গপাঙ্গদের ধরে নিয়ে গেছে। একে দিয়েই ওদের ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।”

একপ্রকার তেজশক্তি দিয়ে আরশিকে গাড়িতে তোলার প্রচেষ্টা চালালো তারা। অনেক দস্তা দস্তির পরে সক্ষম হলো। কিন্তু ততক্ষণে বেশ সময় বিলম্ব হয়ে গেছে। কালো রঙের গাড়িটা এসে গতিহীন হলো তাদের সামনে। এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল আরশি মুখশ্রী জুড়ে। আরশি তাদের ছাড়িয়ে অপূর্বের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে হাত ধরে আটকে দিল। অপূর্ব নেমে এলো গাড়ি থেকে। পুর্বের ন্যায় পা দুলিয়ে বসে রইল গাড়ির মাঝে। টুথপিক নিয়ে খেলা করতে লাগলো।

অপর পক্ষের গ্যাং স্টার ছুড়ি ঠেকালো আরশির গলায়। নেমে এলো তাকে নিয়ে। অপূর্বকে উদ্দেশ্য করে বলল..

— “তুই আমাদের গ্ৰুপের সবাইকে ছেড়ে দে, নাহলে তোর আদরের বোন কে

কথা শেষ করার আগে ঘাড় বাঁকালো অপূর্ব। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল..

— “দে, দে! মেরে দে। কেউ হয় না আমার। এই অপূর্ব পিছুটান নিয়ে ঘোরাফেরা পছন্দ করে না।”

আরশির হাত পা কম্পিত হতে লাগলো ক্রমাগত। অপূর্ব কি বলছে এইসব, তার মৃত্যুকে কিছু যায় আসে না। একটুও কি সম্মান প্রাপ্ত নয়। এতোটাই তুচ্ছতাচ্ছিল্য। ফিচেল হাসলো সে। “গ্যাং স্টারদের দয়া মায়া নেই, কিন্তু তারা সম্মান করতে জানে না!” এটা জানতো না সে। ঠোঁট চেপে ঘন পাপড়িযুক্ত নয়ন যুগল গ্ৰথণ করে নিল। আর হয়তো দেখা হবে না প্রিয় জনদের সাথে। তার চিত্ত ধারনার মাঝেই ঘটে গেল অঘটন।

অপূর্ব স্থির রইলো না। জুতোর ফাঁক থেকে ছুরি বের করে ছুঁড়ে মারলো ছেলেটার গলা বরাবর। আঘাত হানলো গলার মাঝ বরাবর। শিরা কেটে রক্ত বেরুতে লাগলো। ছেলেটা শক্তহীন হয়ে পড়ে গেল রাস্তার মাঝে। কাঁটা মুরগির মতো ফিকনি দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল। আরশি অতিশয় শঙ্কায় গুটিয়ে গেল। এমন দৃশ্য দেখে ভেতরটা দুমরে মুচড়ে উঠলো তার। দুহাতে মুখশ্রী আড়াল করে চাপা আর্তনাদ করে উঠলো। আর যাই হোক, একজন মানুষের মৃত্যুর দৃশ্য দেখা সম্ভব নয়।
“,রক্ত, রক্ত। প্লীজ এইসব সরাও। আমি সহ্য করতে পারছি না। প্লীজ।” ধীরে ধীরে নিস্প্রান হয়ে পড়লো আরশি। দেহটা শিতল হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। মস্তিষ্ক অচল হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। ধীরে ধীরে ঢলে পড়লো সে। নেমে এলো রাজ্যের অন্ধকার। হারিয়ে গেল অজানায়।

অপূর্ব ছুটে গেল আরশির সমীপে। পরে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। হাতের মৃদু শব্দে চপল মেরে ডাকল..

— “আরশি, এই আরশি! শুনতে পারছো আমার কথা! এই মেয়ে। কিছু হয়নি তোমার। ধ্যাত কোন ঝামেলায় পড়লাম আমি।”

আরশি চেয়ে দৃষ্টিপাত করলো না। চিন্তায় ললাটে রুদ্র ভাজ পড়লো অপূর্বের। আশেপাশে দৃষ্টি দিতেই বুঝতে পারলো, সকলে তাদের দেখে মুচকি মুচকি শব্দ হীন হাঁসছে। ভ্রু কুঁচকালো অপূর্ব, বলল..– “ওয়াট?”

— “স্যার মেয়েটা গ্যাং স্টারের বউ হতে এসে রক্ত দেখেই জ্ঞান হারিয়েছে। মেয়েটার সাহস আছে বলতে হবে, আবার ভয়ও পায়।”

অপূর্ব গলা ঝেড়ে দিলো এক ধমক। পুনরায় শুনশান হয়ে এলো পথঘাট। মৃদু ঝুঁকে পাজাকোলে তুলে নিলো আরশিকে। গাড়ির ভেতরে উঠে প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দিল। হাই তুলে কাঁচ খুলে বলল..

— “এদের-কে জায়গা মতো পাঠিয়ে দে।”

মুঠোফোন বের করে ডায়াল করলো। রিসিভ হওয়ার আগেই গাড়ির চাকা গতিশীল হয়ে উঠলো। শোনা গেল না তাদের কথপোকথন।
.
.
ঠাস ঠাস চড় বসিয়ে দিলেন আমার গালে। গালে হাত দিয়ে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম নিচের। সাথে সাথে গর্জে উঠলেন ভাইয়া। আমার হাত টেনে পেছনে নিয়ে এলেন। মুড়িয়ে নিলেন নিজের সাথে। চেঁচিয়ে বললেন..

— “মা তুমি আবার শুরু করেছো, তোমার পাগলামি? তোমার কাছে আমি আর তরীকে রাখব না। তুমি যখন তখন ওর ক্ষতি করে দিতেও পিছু পা হবে না।”

গভীর ভাবে কিছুটা ভাবনা আয়ত্ত করলেন মামুনি। অরিশ ভাইয়াকে বললেন..– “ঠিক আছে, আমি ওর বিয়ে দিবো না। তোর যা ইচ্ছা তাই কর।”

অরিশ ভাইয়া প্রত্যুত্তর দিতে চেয়েও পারলেন না। তার আগেই রিংটোন বেজে উঠল তার ফোনে। ফোনটা রিসিভ করে কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। অতঃপর কাউকে কিছু না বলে এক প্রকার ঝড়ের গতিতে চলে গেলেন।‌
ভয় ভীতি ক্রমশ বাড়তে লাগলো আমার। মাথা নিচু করে রইলাম। মামুনি এসে মুখোমুখি দাঁড়ালেন আমার। আঙুল দিয়ে মুখটা স্বল্প উঁচ্চতায় নিয়ে বললেন..

— “অরিশকে আমার বিরুদ্ধে না লাগানো অবধি তোর শান্তি নেই, তাই না তরী। নিজের মায়ের সংসার-টা শেষ করে এখন আমার সাজানো গোছানো সংসার টাকে নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছিস।‌
আমাদের কথা বার্তা এখানেই শেষ। অরিশ জানবে তোর আর বিয়ে হবে না। কিন্তু আমরা জানবো, তোর বিয়ে হবে। রিং-টা আমার কাছেই না-হয় রইলো।

রিংটা তুলে নিজের কুড়ে আঙুলে স্থাপন করলেন তিনি। প্রস্থান করলো কক্ষ। ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে এলো। নিভে গেল আলো। অন্ধকারের মাঝে একা হয়ে পড়লাম আমি। কি করা উচিত আমার। আচ্ছা ভাইয়াকে যদি বলি, আমি তার সাথে থাকতে চাই। নিবে না আমায়। ভাবতে ভাবতেই দুহাতে মুখশ্রী আড়াল করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। এখন থেকে নিজেকে সবার থেকে আলাদা একজন হিসেবে তৈরি করে তুলতে হবে। একদম আলাদা একজন মানুষ।
#অনুভূতির_অন্তরালে ❤️‍🔥
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ১৩

পিটপিট করে বেষ্টিত নয়ন যুগল মেলে অবলোকন করলো আরশি। এখনো ঘোর পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়নি তার। ধীরে ধীরে মস্তিষ্ক সচল হতেই হতভম্ব হয়ে উঠলো। অপূর্ব বসে আছে আর সন্নিকটে। মৃদু ঝুঁকে আছে তার মুখশ্রীর অভিমুখে। শঙ্কায় হৃৎকম্প বেড়ে গেল। পিছিয়ে যেতেই নিলেই আঘাতপ্রাপ্ত হলো মস্তিস্ক। একহাতে মাথার অগ্রভাগে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে রেখে বেডের শেষ প্রান্তে গিয়ে ঠেকলো। জিভ দিয়ে অধর ভিজিয়ে বলল..

— “আপনি? আপনি কি করছেন আমার সাথে? বারবার কেন এগিয়ে আসছেন? পিছিয়ে যান..

অপূর্ব মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্ক্যান করলো আরশির। এলোমেলো অগোছালো কেশগুলো বেশ পিড়া দিচ্ছে তাকে। বেগ সংযত করতে ব্যর্থ করছে। ভ্রু নাচিয়ে বলল..– “কি করার বাকি আছে, যে করব?”

সাথে সাথে নিজের দিকে দৃষ্টিপাত করলো আরশি। তার ওরনা নেই দেহে। বেডের দুই প্রান্তে নজর দিয়ে ওরনা টেনে নিল শরীরে। ভালোভাবে পেঁচিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালালো। অপূর্ব বাঁকা হাসলো। হাঁটুতে ভরশক্তি দিয়ে এগিয়ে এলো আরশির সমীপে। আরশির দেহ থেকে ওরনা সরিয়ে নিল। সাথে সাথে ওষ্ঠজোড়া উল্টে দিলো সে। জামা খামচে ধরল। কম্পিত অধর জোড়া নাড়িয়ে বলল..

— “প্লীজ। ছেড়ে দিল আমায়।”

বিনিময়ে মাথাটা এগিয়ে নিয়ে এলো অপূর্ব। আরশির শরীরে পেঁচিয়ে দিলো ওরনাটা। নিজের শার্ট-টা পড়ে নিল। নেমে এলো নিচে। ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। দরজা অতিক্রম করে ফিরে চাইলো। দরজার উপরে হাত স্থাপন করে বলল..

— “এভাবে চিতল মাছের মতো চিপকিয়ে আছো কেন? তুমি ভুলবশত আমার শার্ট নিজের ওরনা মনে করে শরীরে পেচিয়েছিলে। তাই তোমারটা তোমার দিয়ে এলাম আর আমার টা আমি নিয়ে এলাম।
আচ্ছা তোমার মাথায় কি সবসময় এইসব ঘুরে সারাদিন। তাহলে মনে রেখো, তোমার মতো বাচ্চা একটা মেয়ের প্রতি আমার কোনো ইন্টেশন নেই। এই অপূর্ব আহসানের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়েরা পাগল। আর সেটা কি-না বাচ্চা মেয়ের সাথে..
বাই দা ওয়ে, তোমার ভাইকে ফোন করেছিলাম। একবার এসে দেখে গেছে।”
পুনরায় ওয়াশরুমে পদাচরন করে বিকট ধ্বনিতে দ্বার অবরোধ করে দিলো সে। অপূর্বের কথণ শ্রবণ হতেই লোচন থেকে নিঃসরণহওয়ার উপক্রম আরশির। ওয়াশরুমের বিকট শব্দে নিজের মাথায় চপল মারল। আরশি, তোর দ্বারা কিছু হবে না। গ্যাং স্টারের বউ হবে, গ্যাং স্টারের মতো ধূর্ত হবে। আর তুই কি-না ভিতু। কাম-অন আরশি।
_________________
সূর্যের প্রত্তাপ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সূর্য তখন উপরে অবস্থান করছ। মধ্যাহ্নের কারণে সরাসরি রশ্মি পড়ছে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক অবলোকন করলাম আমি। কোথাও অরিশ ভাইয়ার প্রতিবিম্বও পারছি না। ধ্যাত, অরিশ ভাইয়া না থাকলে তার প্রতিবিম্ব আসবে কোথা থেকে। তদানীং নয়ন যুগল আবৃত হলো কর্মচারী চাচার সমীপে। এদিক ওদিক তাকিয়ে ছুটলাম তার দিকে। তার কাছে জানতে পারলাম, অন্য ডিপার্টমেন্টে ক্লাস চলছে। দৃষ্টি ঘুরিয়ে ঘড়ির কাঁটার দিকে দিলাম। ফুরিয়ে এসেছে সময়। ভাইয়া এলো বলে।
শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে কক্ষ ত্যাগ করলেন তিনি। চোখের চশমা-টা খুলে মুছে নিলেন ফাঁকে। চশমা ছাড়া তার অপরুপ সুন্দর বিড়াল চোখ দুটো ভেসে উঠলো আমার সদর্পনে। এই চোখ দুটোর জন্যই হয়তো হাজারো মেয়ের ক্রাশ। ক্যাম্পাসের মাঝখানে কদাচিৎ হাস হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, এটা হয়তো দৃষ্টিতে এলো তার। আমার দিকে এগিয়ে এলেন তিনি। চেয়ে রইলেন তৃষ্ণার্ত নয়নে। ভাইয়া হিম শীতলতা মেশানো হাতটা ছুঁয়ে দিলেন আমার গালে। আরো একবার শিহরিত হলো আমার সর্বাঙ্গ। কম্পিত হলো শিরায় শিরা। কাঁপা কাঁপা অধর জোড়া নাড়িয়ে বললাম..

— “ক-কি করছো ভাইয়া? সবাই দেখছে।”
নামিয়ে নিলেন হিম শীতল হাত। এগিয়ে গেলেন নিজের রুমের দিকে। আমাকে যেতে বললেন। চুপচাপ তার পিছু নিলাম। কেবিনে নিজের নির্দিষ্ট চেয়ার টা দখলে নিলেন তিনি। ইশারায় সামনের চেয়ারে বসে বললেন। নত মাথায় গিয়ে বসলাম চেয়ারে। ব্যাগের চেইন খুলে খাবারের টিফিন ক্যারিয়ার বের করলাম। সুন্দর করে সাজিয়ে নিলাম। ফিল্টার থেকে গ্লাস ভর্তি করে রাখলাম। নত স্বরে বললাম..

— “আমি জানি, মামুনির উপর রাগ করে কিছু খাইনি তুমি। এমন করো না, মায়েরা যা করে সন্তানের ভালোর জন্যই করে। হয়তো সেখানে তোমার ভালো লুকিয়ে ছিল।”

অধর জোড়া নাড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলেন তিনি, বললেন না। উঠে দাঁড়ালেন। কাবার্ড থেকে একটা মলম বের করে গালে লাগিয়ে দিলেন আমার। কেশের অগ্ৰভাগে হাত রেখে অধর ছুয়ে দিলেন গালে। নিজের ললাটের সাথে আমার ললাট মিশিয়ে বললেন..

— “চাই না, আমার ভালো। যেই ভালোতে আমার ছোট পিচ্চি টার কষ্ট হবে, কাঁদবে, আঘাত পাবে।”

এখনো দুজনের ললাট একত্রিত হয়ে আছে। ঘন কেশের মাঝে তার হাতটা বিরাজমান। আবেশে নয়ন যুগল বন্ধ। না মেলেই বললাম..

— “আমি আঘাত পাই না, কষ্ট পাই না, কাঁদি না। কারণ কাঁদতে নেই আমার!”

আমাকে ছেড়ে দিলেন তিনি। পুনরায় বসে পড়লেন নিজের আসনে। টিস্যু পেপার দিয়ে ঘামগুলো মুছে নিয়ে বললেন..

— “যেই কাজটার জন্য এসেছিস, আপাতত সেটায় কর..! তোর মতো পিচ্চিকে বোঝানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বুঝবি তো নয়ই আবার প্রশ্ন করে মাথা খারাপ করে দিবি। ফাউল পোলাপাইন। দে, খাবার দে..

ফোঁস করে দম বন্ধ নিঃশ্বাস ছাড়লাম আমি‌। কথায় কথায় অপমান করছে আমায়। খাবারের প্লেট এগিয়ে দিলাম। বিনিময়ে দুহাত বুকে গুজে নিলো সে। ওষ্ঠ যুগল কদাচিৎ ফাঁক করে বলল..

— “তাড়াতাড়ি খাইয়ে দে, ক্লাসে যেতে হবে।”

— “আমি?”

— “তা-নয় কে? তোর ভূত? তুই তো এখনো মরিস নি, তোর ভূত আসবে কোথা থেকে!”

বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন তিনি। রাগে গিজগিজ করছে আমার সর্বাঙ্গ। এই ছেলেটা ভালোভাবে কথায় বলতে জানে না, মানে জানে না। মুখ ফুলিয়ে খাবার মেখে এগিয়ে দিলাম তার দিকে। মুখে তুললেন না। ফিরিয়ে দিলেন আমার মুখে। হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। মৃদু হাসলেন তিনি। বললেন.. — “আমার লিটেল পিচ্চি-টা আমাকে ছাড়া কিছু খায়নি! তাই তাতে না খাইয়ে দিয়ে, আমি খাই কি করে? ”

আমি নিঃশব্দে চেয়ে রইলাম তার মুখশ্রীর দিকে। তিনি বড্ড বেশি অদ্ভুত। কিভাবে আন্দাজ করতে পারলেন আমি খাইনি? আচ্ছা তার বংশে কি কেউ জ্যোতিষী ছিলেন। ভাইয়া কি তার ভার বহন করছে? ভাবতে ভাবতে একসময় প্রশ্ন ছুঁড়লাম।

— “ভাইয়া; তোমাদের বংশে কেউ জ্যোতিষী ছিলো?”

মুহুর্তেই ভাইয়ার বচন গুলো পাল্টে গেল। তেজ নিয়ে বলল..

— “নিয়মিত বেলা করে, সকালে দুপুরে রাতে; তিন বেলা তোকে চড়ানো উচিত ডাফার। ভালোভাবে কথা বললে মাথায় উঠে যায়।”

_____________
সেন্টার টেবিলের উপর মৃদু শব্দে খাবার রাখতেই ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল আরশি। অপূর্ব তার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। পড়নে তার ছাই রাঙা ট্রাউজার এবং টি শার্ট। ভেজা কেশসমূহ থেকে চুইসে চুইসে জলকণা ঝড়ে পড়ছে। একদম সাদা সহজ সাধারণ মানুষের মতো দেখতে, তবে কোথাও একটা নেশালো ভাব যতনে লুকিয়ে আছে। আরশি হা করে তাকিয়ে রইলো সেই দিকে। ক্রাশ খেল কয়েকদফা। এভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য অস্বস্তি বোধ হচ্ছে অপূর্বের। চোখের সামনে তুরি বাজালো, কিন্তু গহীন ভাবনায় বিভোর আরশির ভাবনার ছেদ ঘটল না। সে গভীর ধ্যানে অপূর্বকে দেখছে। অপূর্ব আরশির গালের নিচের হাতটা সরিয়ে দিল। সাথে সাথে থুতনি গিয়ে ঠেকলো হাঁটুর সাথে। মুখ গম্ভীর করে রইলো সে। অপূর্ব একগাল হাসলো। খাবার-টা আরশির সামনে রেখে বলল..

— “আই নো, আমি দেখতে হ্যান্ডসাম। নাহলে কি এতোগুলো মেয়ের ক্রাশ হতাম। অন্যদের করা বাদ দেই, আমি তো তোমারও ক্রাশ। ক্রাশকে দেখলে মন ভরে, পেট নয়। তাই পেট ভরার জন্য খেতে হবে। নাও স্টার্ট.!”

লজ্জার্থ রক্তিম আভার দেখা মিললো আরশি কাছে। রক্তিম আভা ছড়িয়ে গেল তার মুখশ্রী জুড়ে। ছেলেটার অধর জোড়া লাগামহীন, যদি একটু লাগাম দিয়ে সুন্দর করে মনের ভাব প্রকাশ করতো, তাহলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত?
পোশাক পাল্টে আরশির কোনো হেলেদুলে না দেখে বলল..
— “হাই ফানি, এমন চিতল মাছের মতো চিপকিয়ে আছো কেন? খাবার খেয়ে বিদেয় হয়।”

— “আমাকে দেখে আপনার চিতল মাছ মনে হয়? আপনি জানেন, দিনে কতো গুলো লাভ লেটার পাই, কতো গুলো প্রপোজ পাই..

— আর তুমি তাদের মন ভাঙছো? তুমি তাদের মন ভেঙেছ আর আমি তোমার। ইকুয়াল, ইকুয়াল।
তুমি শুধু চিতল মাছ না পাবদা মাছ।

অতিশয় ক্ষোভে আরশির আচরণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল।
— “দেখুন ভালো হচ্ছে না! আমার নাম আরশি।”

— “আরশি নয়, আয়না, ভাঙা চিরুনি তোমার সাথে ভালো মিলে। মেইড ফর ইচ আদার।”

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)
(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)

(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here