অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে পর্ব ৭+৮

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৭+৮
.
সন্ধের প্রহর কেটে রাত নেমেছে। ফাল্গুনের মৃদু বাতাসে ছেয়ে যাচ্ছে সজীবতা। আর মেহের? সে তো পড়ার নাম নিয়ে আনমনে ব্যস্ত তার কিউট হাজবেন্ট আদ্রাফকে দেখতে। আদ্রাফ বারান্দায় দড়িয়ে মোবাইলে কারও সাথে গুরুত্ব আলাপনে মশগুল।
.
মেহের একদিকে কলম কামড়াচ্ছে আর অন্যদিকে দেখছে আদ্রাফের প্রতিটা কার্যকলাপ। আদ্রাফের কথা বলতে বলতে মেহেরের দিকে যেই না চোখ পড়লো সাথে সাথেই সে যেন ভড়কে যায়।
.
কেননা মেহেরের এমন দৃষ্টিতে ছেলে হোক বা মেয়ে যে কেউই একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। আদ্রাফ ওর কাছে গিয়ে চুটকি বাজানোর সাথে সাথেই মেহেরের যেন জ্ঞান ফিরে। মেহের দেখে আদ্রাফ চোখ দুটো ছোট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহের এবার বসা থেকে উঠে পড়ে।আমতা আমতা করে বলে ওঠে……..
.
—আরে ততুমিতো বারান্দায় ছিলে। এখানে কখন আসলে।
.
চোখ ছোট ছোট করা অবস্থাতেই আদ্রাফ কড়া গলায় বলে ওঠে…..
.
—পারলে তো নিজের চোখ দিয়ে আমায় খেয়ে ফেলছিলে। তো খেয়াল রাখবে কখন যে আমি বারান্দা থেকে রুমে কখন আসলাম?
.
আদ্রাফ কথাটা বলছে আর এগিয়ে যাচ্ছে মেহেরের দিকে।আর মেহেরও সমানতালে পেছাচ্ছে। হঠাৎ আদ‍‍্রাফের এমন করাতে একটু না অনেকটাই অবাক মেহের যে বাকশূণ্য মনে হচ্ছে নিজেকে।
দেয়াল ঘেঁষে মেহেরকে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়াতে দেখে আদ্রাফ ঠোঁট কামড়ে হাসে। আর মেহের তো এতক্ষণ আদ্রাফ কে দেখতে থাকলেও এখন যেন তার চোখদুটো নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রাফ হালকা ঠোঁট নাড়িয়ে মিহি গলায় বলে ওঠে….
.
” হাতের সামনে বই থাকতেও তুমি বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছো তো এখন তো আমি তোমার সামনেই আছি। এখন নাহয় আমার দিকে মনভরে তাকাও।”
.
মেহের আমতা আমতা করে বলে ওঠে…
.
—-কককই? এমন ককিছুই না।
.
হঠাৎ মেহেরের মুখের খুব কাছে আসে সে। মেহেরের তো দম যায়,যায় অবস্থা। এমনিতেও আদ্রাফের ঠোঁট কামড়ানো দেখে মেহেরের শ্বাস যেন বেরিয়ে এসেছে।আবার ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস এর সংস্পর্শে এসে মেহেরের মনে যেন খেলা করছে অদ্ভুত কিছু অনুভূতি।
.
একটু দম নিয়ে মেহের আদ্রাফের মুখের দিকে তাকায়। আদ্রাফ ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে।যার কারনে মেহের আবার নিচে তাকিয়ে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলা শুরু করে। আদ্রাফ মেহেরের এরকম অবস্থা দেখে বলে ওঠে………
.
—কি হলো মেহু?বললাম তো। এখন মনভরে দেখতে পারো।
.
মেহের বারবার চাইছে আদ্রাফ এর থেকে দূরে সরে আসতে কিন্ত আদ্রাফও তো কম কিছু না ; সে তো বারবার ব্যস্ত মেহেরকে অস্বস্তিতে ফেলতে।
.
আদ্রাফের ঠোঁট কামড়ানো দেখে মেহের এবার ওর টিশার্টের কলার ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে সাথে সাথেই ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। আদ্রাফের শরীরে সাথে সাথেই যেন বড়সড় এক বিদ্যুতের প্রবাহ বয়ে গেল। মেহের চোখ খিচে আদ্রাফের ঠোঁটে নিজের স্পর্শ দিয়ে যাচ্ছে আর আদ্রাফ যেন এখন অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছে।
.
বেশ কিছুক্ষণ পরই আদ্রাফের ঠোঁটযুগল থেকে সরে আসে মেহের। দুজনেই এখন সমানতালে হাপাচ্ছে। বাইরে ফাল্গুনী হাওয়ার ঠান্ডা হাওয়ার সাথে ভেসে আসছে বাগানে বড় গাছে থাকা বকুল ফুলের মৃদু সুবাস। মেহেরের এমন স্পর্শে আদ‍্রাফ পরপর দুবারই বিভ্রান্ত হয়েছে। সাথে মেহেরও। সে এখনও দাঁড়িয়ে আছে দেয়াল ঘেষে।
.
আদ্রাফ মিহি কন্ঠে বলে ওঠে……….
.
—কি ছিলো এটা?
.
আদ্রাফের এত স্বতস্ফূর্ত প্রশ্নে মেহের শুধু পারছে না বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যেতে। সে তো মনে মনে ভাবছে যে তারই বা কি দোষ? আদ্রাফের ওই ঠোঁটজোড়া অনেকক্ষণ ধরেই তাকে চুম্বকের মতো টানছিল। আর শেষ পর্যন্ত সে আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
.
আদ্রাফ আর মেহের দুজনেইএখন নিশ্চুপ। এরকম কিছু দুজনের কাছেই সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিলো।নীরবতা কাটিয়ে মেহের আমতা আমতা করে বলে ওঠে…….
.
—তততুমি আমার সামনে আর ঠোঁট কামড়াবে না।
.
—মানে?
.
—তোমাকে বলেছি আমার সামনে ঠোঁট কামড়াবে না মানে ঠোঁট কামড়াবে না ব্যস। নাহলে আবারও এই ভুল হয়ে যাবে।
.
—আমি নাহয় ঠোঁট কামড়ানো অফ করলাম অন্য ছেলেরা যদি এমন করে তাহলে তুমি কি তাদেরকেও কিস করবে?
.
এবার হতভম্ব হয়ে যায় মেহের। আদ্রাফ অদ্ভুদভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মেহের বিরক্তিসুরে বলে ওঠে…….
.
—ধ্যুর। অন্যদের কিস করতে যাবো কেন? অন্য ছেলেরা আর তুমি?তুমি তো………….
.
এতটুকু বলেই সে থেমে গিয়েছে। আর কিছু বলার মতো ভাষা মেহেরের কাছে নেই। আদ্রাফ নিজের কপালের মধ্যে আছড়ে পড়ে সিল্কি চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মেহেরের দিকে।
.
—পড়াশুনা বাদ দিয়ে ভালোই তো বাদরামি করা শিখেছো। আগে ফাঁকিবাজি করেছো অনেক কিন্ত এখন আর না। আগে তুমি মেহের আহমেদ ছিলে বাট এখন তুমি আদ্রাফ এহসানের ওয়াইফ মেহের এহসান।
(মেহেরের কানে ফিসফিসিয়ে)সো পড়াশুনার একটুও যেনো এদিক ওদিক না হয় ! আর আমি যে তোমার কাছে স্পেশাল তা আমি ভালোমতই জানি তাই এটা আর describe করতে হবে না।
.
মেহের এখন পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে আদ্রাফের কথা শুনে। এই ছেলেটা এমন কেন? সবসময় কেমন করে যেন কথার জালে ফাসিয়ে দেয় মেহেরকে।
.
—দুপুরে খাবার খেয়েছিলে?
.
আদ্রাফ জিজ্ঞেস করে মেহেরকে। মেহের পড়েছে বিপাকে। কারন ভার্সিটির সেই ঘটনার পর জেদ করে কিছুই খায়নি সে। একটু সাহস করে সে বলে….
.
—না……..
.
—এখনও কি ছোট বাচ্চা তুমি ? খাবারে উদাসীনতা আমি just অপছন্দ করি। আর এসব ব্যাপারে খামখেয়ালি করলে কি হবে মেহু?
.
মেহের চুপচাপ আদ্রাফের কথা শুনে যাচ্ছে। আদ্রাফ এবার বলে ওঠে…..
.
—এখনি খেতে চলো।
.
—কিন্ত খাওয়ার সময় তো এখনও হয়নি।
.
—এতই যখন সময় মানতে তবে দুপুরের খাবারটাও টাইম টু টাইম খেয়ে ফেলতে। তাহলে পড়ার সময় আমার রূপ গিলতে হতো না😒…..চলো!
.
মেহের বুঝে গিয়েছে এই ছেলেটা আস্ত একটা নাছোড়বান্দা। যা বলবে তা করেই ছাড়বে। মেহেরের কাছে এটাই কেমন যেন এক অনুভূতি। কারন আদ্রাফের এসব ছোটখাটো কেয়ারিং অজান্তেই অনেক ভালোলাগছে ওর কাছে।
আদ্রাফের প্রতিটা কাজ যেন মনেপ্রাণে তার মেহুর জন্যই উজাড় করা এমনটাই মনে হয় মেহেরের। হয়তো এভাবেই চলতে থাকবে দুজনের অনুভূতির আদান-প্রদান।
.
.
******
.
ক্লাস শেষ করে মেহের আর নাদিয়া ক্লাস থেকে বের হতেই বাধাঁ হয়ে দাঁড়ায় গতকালকের ওই সিনিয়র ছেলেমেয়েরা। চুইংগাম চাবানো মেয়েটি আজ জিন্স প্যান্ট আর ইয়োলো টপ পড়েছে। একপাশে ফ্রেঞ্চ বেণী ঝুলানো। আর ছোট চুলের মেয়েটি আনমনে হাতে কেটস ক্রেডেল খেলছে। পেছন থেকে একটি ছেলে বলে ওঠে…….
.
—ওই নিশা ! পিচ্ছি দুইটার সাহস আছে বলতে হবে। আমিতো ভাবছিলাম এরা মনে হয় ভয়ে আর ভার্সিটি আসবে না।
.
—এগুলারে যদি এত সহজে ভয় দেখানো যেতো তবে কি আর আমরা জুনিয়রদের ক্লাসে আসতাম রাহাত? I like them specially this blue dress girl…….
.
মেহেরকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে ফ্রেঞ্চ বেণী করা নিশা নামের এই মেয়েটি।রাহাত নামের ছেলেটার পাশে দাড়িয়ে থাকা আরেকজন বলে ওঠে………
.
—ওদের চাহলে নিয়ে যাই রাহাত।
.
—কোথায় যাবো?
.
ক্ষীপ্ত গলায় প্রশ্ন করে মেহের। কেটস ক্রেডেল খেলা করা মেয়েটি বলে ওঠে……….
.
—আমাদের গ্যাং লিডারের কাছে। যার রূপে সবাই মুগ্ধ হলেও টু মাচ ডেন্জেরাস ম্যান। তোমার মতো দশজনকে এই ভার্সিটি থেকে বের করে দিতে পারবে। ভয় পেলে নাকি?
.
মেহের তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে………..
.
—ভয় আর আমি? এত সহজ না আপু। আমিও দেখতে চাই এমন কি ডেন্জেরাস তোমাদের সো কলড গ্যাং লিডার।
.
মেহেরের এত সাহস দেখে প্রতিটা স্টুডেন্টই যেন ধাপে ধাপে অবাক হচ্ছে। যেখানে থার্ড ইয়ার ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্টরাই ওদেরকে ভয় পায় সেখানে মেহের এত কনফিডেন্ট কিভাবে? কেউ তো আবার বলেও দিয়েছে যে……….
.
—এখনও ওদের চিনে না তাই এত সাহস দেখাচ্ছে। একবার ওদের ঝামেলায় পড়ুক……….তারপর বুঝবে আসল মজা।
.
.
ক্যান্টিনের অপরপ্রান্তে বাইক পার্কিং স্পটে নাদিয়াকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মেহের। তার পিছেই রয়েছে ওই ছেলেমেয়েগুলো।পার্কিং সাইটে একজনকে আনমনে সিগারেট খেতে দেখে মেহেরের কেমন যেন গা গুলিয়ে যাচ্ছে। মানুষটা যে কত বড় অসভ্য হতে পারে তারই দৃষ্টান্ত দিচ্ছে পাব্লিক প্লেসে এমন সিগারেট খাওয়া।
.
ওই ছেলেটার পেছন দিকটাই মেহের আর নাদিয়া দেখতে পারছে কারন সে সামনের দিকে ঘুরে বসে আছে। নিশা এবার বলে ওঠে……….
.
—শাওন? ওদেরকে নিয়ে এসেছি।
.
এক অন্যকারনেই মেহেরের মনটা কেমন যেন আনচান করছে। তার মনে হচ্ছে যে হয়তো এই মুহূর্তে তার জীবনের বড় একটা পরিবর্তন আসতে চলেছে। আসলেই কি তাই হবে?
.
.
.
.
~চলবে
.
গতকাল গল্প দিতে পারিনি বলে আজ একসাথে দুটি পর্ব দিলাম।গল্পটির সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট মন্তব্য আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here