অন্তরালে ভালবাসা পর্ব ২৫+২৬+২৭

#অন্তরালে_ভালবাসা
২৫
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

আরিশা নানুমনির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে,নানুমনি আরিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।অহিন সে দৃশ্য তৃপ্তি ভরে দেখছে।নিঃসন্দেহে এই দৃশ্য পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য গুলোর মাঝে একটি।নানুমনি বলেন,উঠে বসো তো তোমাকে একটা জিনিস দেয়ার আছে।তিনি উঠে আলমারি খুলে একটা সিতাহার এনে আরিশাকে পড়িয়ে দিয়ে বলেন,এটা এই বংশের প্রথম বউয়ের জন্য।প্রথা অনুযায়ী আমি পেয়েছি,এবার তোমার ফালা।তুমি আমার বড় মেয়ের বড় সন্তানের বউ তাই এটার উপর অধিকার শুধু তোমারই।এটা শুধু একটা গহনা নয়,এটা একটা ভালবাসা, এটা হচ্ছে স্বিকৃতী। তাই এটা যত্নে রাখবে।তোমার আর শাহরিয়ারের প্রথম সন্তান এটার অধিকার পাবে। তাই এটা ভালবেসে আগলে রেখো।

সন্তানের কথা শুনতেই অহিনের মুখ অন্ধকারে ডেকে গেলো, অহিন আরিশার সন্তান কখনও পৃথিবীতে আসবে না।এটা তো সম্ভবই না।এটা ভাবতেই অহিনের বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে।পুরনো যন্ত্রনাটা বুকের মাঝে খোচাতে থাকে।জীবনের এই মুহুর্তে এসে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে অহিনের নানুমনিকে কিছু বলতেও পারছে না।তিনি শুনলে কষ্ট পাবেন।
আরিশাও কেনো যেনো এই ভালবাসার দান ফিরিয়ে দিতে পারলো না।তার অবচেতন মন কেনো যেনো নিজেকে অহিনের বউ হিসেবে দাবি করলো। আর গ্রহন করে নিলো নানুমনির দেয়া উপহার।

আরিশা বলে, ‘আমি জানিনা নানু মনি আমি আপনার ভালবাসার মান কতটা রাখতে পারবো তবে হ্যাঁ এটা বলতে পারবো অহিনের সন্তানই পাবে এই ভালবাসার উপহার। অহিন এই কথার অর্থ বুঝলেও নানুমনি বুঝলো না।

_—————————————————————————–

আরিশা অহিন বসে আছে তাদের রুমে,আরিশা খুব যত্নে সিতাহারটায় হাত বুলাচ্ছে,অহিন কিছুক্ষণ আরিশাকে দেখে বলে, তুই নানুমনিকে কথা দিলি কেনো?

আমি কি ভুল কিছু বলেছি?মাই বলেছি তোর সন্তান এই হারের অধিকার পাবে।কিন্তু আমার সন্তান এটাতো বলিনি।
অহিন তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়।আরিশা বলে তোর বিয়ের সময় আমি এটা তোর বউকে দিবো।

—-আমার বউ তোকে আমার পাশে ঘেষতে দিবে না।কারণ মিথ্যে করে হলেও তুই আমার বিয়ে করা বউ ছিলি।তাই তোকে সে কখনও সহ্য করতে পারবে না।

—আরিশা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে, কেনো দিবে না?আশ্চর্য আমি তোর বন্ধু আগে আমার অধিকার তারপর বউয়ের। রাগী রাগী গলায় বলে আরিশা।

—অহিন খুব বুঝতে পারছে আরিশা রেগে গেছে।তাই তাকে রাগানোর জন্য বলে,না আগে বউয়ের অধিকার তারপর বন্ধুর।তোর জন্য তো আমি বউ হারাতে পারি না।লোকে তাইতো বলে,”বন্ধু গেলে বন্ধু পাবি পাগলা,কিন্তু বউ গেলে বউ পাবি না”!

—-আরিশা এবার অগ্নিমূর্তি ধারণ করে অহিনের শার্টের কলার চেপে ধরে বলে,শালা বউ না পেতেই বউয়ের জন্য কি দরদ! আর আমি ভানের জ্বলে ভেসে এসেছি!তুই আসলে বউয়ের আঁচল ধরা হবি।ছিঃ কেমন লুচু লুচু গন্ধ পাচ্ছি,অহিনের শার্টে শুকে বলে আরিশা।

—-অহিন অনেক কষ্টে হাসি চেপে বলে,’কি বলিস এসব আরু! আজব! বউয়ের আঁচল ধরাই তো হবো।অন্য কারো তো না।আর বউকে ভালবাসলে লুচু হয় না।বরং অন্যদের ভাসলে হয়।নিজের গায়ে কিছু একটা শুকার ভান করে অহিন বলে,তুই কিসের গন্ধ পাচ্ছিস বলতো? আমিতো কলিজা পোড়া গন্ধ পাচ্ছি!বলেই হাসে অহিন,”
সেই হাসি যে হাসিতে চোখ হাসে,যে হাসিতে ঠোঁট হাসে!,মায়াবী সেই হাসি!স্নিগ্ধ সেই হাসি”!

—-আরিশা বলে,’আমি তোরে আলাদা ভাবছিলাম। তুইও তেমন! আসলে সব পুরুষ এক!

—আরে আজব তো! কি এমন বললাম আমি যে তুই এমন করতেছিস!মনে হচ্ছে আমি তোর ইজ্জত লুটে নিয়েছি।কি একটা অবস্থা! শুধু নিজের বউকে ভালবাসবো এটাই তো বললাম।তাতেই যা তা করতেছিস!

—-আরিশা বলে,’বলে ছিঃ কিসব বলছিস তুই?তুই আস্তো একটা হারামী ছিঃ

—বাহ তুইতো ছিঃ এর দোকান খুলে বসেছিস।প্রতি কথায় ছিঃ ছিঃ। আর তুই যে আমার বুকের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছিস সেটা কে বলবে?হুম?অহিন নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে,চোখে মুখে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে।

—-আরিশা আমতা আমতা করে অহিনকে ছেড়ে দিয়ে বলে,তোকে কেনো আমি ধরতে যাবো আজব!নিজেকে কি ভাবিস তুই?বলেই ঠোঁট বাকায় আরিশা।

—অহিন আরিশার কথা শুনে মিটমিটিয়ে হাসে।আজ আরিশাকে ক্ষেপাতে ভালো লাগছে তার।তাই ভাবলো আর একটু ক্ষেপানো গেলে মন্দ হয় না।তাই বলে,এই শোন আরু আমার বিয়েত পর রোমাঞ্চ কিভাবে করবো একটু শিখিয়ে দিস প্লিজ,আসলে আমি তো অবলা ছেলে তাই এসব কম বুঝি।তোরা মেয়েরা তো এসব বিষয়ে ভালো বুঝিস।তাছাড়া আমার বউ কিসে খুশী হবে তা তো তুই একজন মেয়ে হয়ে ভালো বুঝবি।কারণ তুই একজন মেয়ে।বলেই হাসে অহিন।

—এই শোন আমি তোর বউকে খুশী করার কোন দ্রব্য নই।যে সে দ্বায়িত্ব আমি নিবো।আর কি বলতেছিস।তুই অবলা ছেলে!তোর মত অসম্ভব রকম একটা লুচু আমি দেখিনি!তোকে কেউ বিয়ে করবে না।আমি অভিশাপ দিলাম।তোর কপালে বউ জুটবে না।শালা আস্তো একটা বউ পাগল!

—-অহিন বলে,’ভালবাসার আকাল পড়েছে এই দুনিয়ায়”কোথায় লুকিয়ে আছে আমার বাম পাজরের হাড়”

–আরিশা ঠোঁট উল্টে বলে,বউয়ের শোকে কবি হয়ে যাচ্ছে!

—-আমার বউয়ের জন্য আমি কবি হবো।তোর এতো জ্বলে ক্যান?

—-আরিশা সুন্দর করে হেসে বলে,এই দোস্ত দাড়াই থাক একদম তোর মাথায় কি যেনো একটা।হাত দিস না। আনি দেখতেছি।
অহিন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে,আরিশা বেড সাইড টেবিলটা এনে অহিনের সামনে টেবিলের উপর দাড়িয়ে অহিনের চুল গুলো দুহাতে ইচ্ছে মত টানে।
অহিন অবাকের শেষ পর্যায় চলে যায়!এই মেয়ে আর কত রকম মাইরের স্টাইল জানে মাবুদ!মানে এটা কোন কথা হইলো! নাগাল না পেয়ে লাস্ট পর্যন্ত টেবিলের উপর উঠে মার দিলো! অহিন মনে মনে বলে,এই জন্যই তুই অনন্য আরু,আর এই জন্যই আমি বারবার তোর প্রেমে পড়ি!তোর আদরের প্রকারভেদ নাই বা জানলাম, তোর মার দেয়ার প্রকারভেদ তো জেনে গেলাম।এতেই আমি অতল সমুদ্রে ডুবে গেছিরে আরু!ভালবাসি খুব ভালবাসিরে!

আরিশা ইচ্ছে মত চুল টেনে,দেখলো অহিন হাসছে মিটমিট করে,এতে তার রাগ আরও বেশী হলো। অসহ্য হয়ে বলে,তুই আস্তো একটা গাধা অহিন।
তারপর নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,একটা চুল ও তুলতে পারলাম না মনে মনে ভাবলো।
অহিন যেনো আরিশার মনের কথা বুঝে গেলো। তাই সে ভ্রু নাচিয়ে বলে, কি ভাবছিস একটা চুল ও তুলতে পারলি না।আমি প্রতি মাসে স্পা করি,চুলে জেল দেই, আরে তুই তো আমার,,, থাক বললাম না।তুই পরে আমাকে গালি দিবি!বলেই চোখ মারে আরিশাকে অহিন।

অহিন না বললেও আরিশা বুঝে যায় অহিন কি বলতে চেয়েছে।তাই সে একটা বালিশ নিয়ে অহিনের দিকে ছুড়ে মারে বলে,তুই একটা অসহ্য, অসহ্য আর অসহ্য!

অহিন বালিশটা হাতে ধরে বেডের দিকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে,শার্টের কলার দুহাতে খাড়া করে মুখে শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে বলে,আসলেই দোস্ত।এ কথা বলে বের হয়ে যায় রুম থেকে।

আরিশা রাগে গজগজ করতে থাকে।কিন্তু পর মুহুর্তে আরিশা গভীরভাবে চিন্তা করে বুঝতে পারলো সে কেনো এমন রিয়াক্ট করছে।অহিনের মুখে অন্য কারো কথা শুনে তার কেনো কষ্ট হচ্ছে।অথচ এটাই তো স্বাভাবিক। সে রাফিনকে বিয়ে করার পর অহিন ও নিশ্চয়ই অন্যকাউকে বিয়ে করবে।তাহলে এটা কেনো সে মেনে নিতে পারছে না।অদ্ভুত এক যন্ত্রনার অনুভব করলো সে!কি হচ্ছে এসব তার সাথে!কেনো হচ্ছে!এসব ভাবতে ভাবতে বিরক্ত লাগছে তার।

এর মধ্যে ঘটলো, আরেক বিপত্তি তিন্নি মেয়েটা আরিশার মত করে সেজেছে।আজব!এর আবার কি হলো!

আরিশার সামনে এসে মেয়েটা বলে,শাহরিয়ার ভাইয়া কই?

—-ভাবলো বলবে,ক্যান আমার জামাইরে দিয়া তোমার কাজ কি?কিন্তু মনে মনে ভাবলেও বলতে পারলো না আরিশা।মুখে হাসির ভান করে বলে,আমি দেখিনি তো। খুজে দেখো বাইরে আছে হয়তো!

তিন্নি চলে যায় রুম থেকে।

আরিশার রাগ আরও বেড়ে যায়।ভাবে অহিন তো আগে কখনও এসব বলেনি আজ কেনো বললো, তবে কি এই মেয়ের সাথে তার কিছু চলছে?হুম!আচ্ছা সেটাই হবে।নয়তো এই মেয়ে এতো সেজে গুজে শাহরিয়ার ভাইকে কেনো খুজছে?কুচ তো গরবর হ্যায়!পাত্যা লাগা আরিশা,পাত্যা লাগা!

এর মধ্যে রাহি এসে আরিশাকে টেনে নিয়ে যায়,আরিশা জিজ্ঞেস করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু রাহি কিছু বলে না।চুপচাপ নিয়ে যায়। তার সাথে বাকি কাজিনরাও আছে তিন্নি ছাড়া।

আরিশা দেখলো রাহি বাড়ির বাইরে এসে একটা পেয়ারা বাগানে ডুকলো।আরিশা বলে,এখানে কেনো আনলে রাহি?
রাহি বলে আমি গাছে উঠবো।তুমি আঁচল পাতবে আমি গাছ থেকে পেয়েরা পেড়ে তোমার আঁচলে দিবো।আরিশারও ব্যাপারটা ভালো লাগলো। রাহি গাছে উঠে পেয়েরা পেড়ে আরিশার আঁচলে দিতে লাগলো বাকি কাজিনরা এদিক ওদিক কি যেনো দেখছে। এমন সময় কেউ একজন চোর চোর বলে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসলো।রাহি গাছ থেকে লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে পারলো না।কিন্তু বাকি কাজিনরা সব দৌড় দিলো। অন্যদিকে আরিশা কিছুই বুঝতে পারলো না।বোকার মত আঁচল পেতে দাড়িয়ে রইলো। ঘটনা বুঝার আগেই ওই বয়স্ক লোকটা আরিশার সামনে এসে লাঠি নিয়ে দাড়ালো।

আরিশার চারপাশে বিজ্ঞের মত ঘুরে বলে,এতো সুন্দর দেখতে, ভদ্র দেখতে চোর হয় জানা ছিলো না।কে তুমি বাচা?আমার বাগানে চুরি করতে এসেছো।রাগী স্বরে বলে ভদ্রলোক।

—-আরিশার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে,রাহিরা তাকে এমন বিপদে ফেলবে বুঝতে পারেনি।ছিঃ কি লজ্জার বিষয়। নানুমনি শুনলে কি ভাববে?শেষ পর্যন্ত একটা চোর কি না উনার নাত বউ হলো।ভাবতেই কেমন গা ঘোলাচ্ছে আরিশার।
এমন সময় অহিন আসে সেখানে ফোনে কথা বলতে বলতে,আরিশাকে এখানে দেখে না চেনার ভান করে বলে,আরে নানাভাই কেমন আছেন?

ভদ্রলোক চোখের মোটা ফ্রেমের চশমাটা ঠিক করে অহিনের দিকে তাকিয়ে বলে,আরে সাজেদার ছেলে না! কেমন আছো?কত দিন পরে দেখা?তোমাদের তো দেখাই যায় না।বলেই অহিনকে জড়িয়ে ধরেন ভদ্রলোক। অহিন উনাকে জড়িয়ে ধরে আরিশাকে চোখ মারে, আরিশা হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে থাকে।ওইদিকে উপরে রাহি দোয়া ইউনুস পড়তে পড়তে শেষ! আর জীবনে চুরি করবে না বলে মনে মনে শপথ করে।

তারপর অহিন বলে,কি ব্যাপার নানাভাই কি হচ্ছে এখানে?এই মেয়ে কে?
আরিশা ভাবছিলো অহিন তাকে বাঁচাবে কিন্তু একি! এ তো পল্টি নিয়ে নিলো। এবার রাগে দুঃখে আরিশার কান্না পেয়ে গেলো।

ভদ্রলোক বললেন, আরে বলো না ভাই, এই গ্রামের
মেয়েদের জন্য কিছু করে শান্তি নাই।খালি চুরি করে।তোমার মামাতো বোন গুলো ও এমন। কিন্তু একি গ্রামের বাইরে থেকে এসেও আমার পেয়েরা চুরি করছে ভাবা যায় এগুলা!বলো?

অহিন দার্শনিকের ভঙিতে বলে,না, না,না,একদম মানা যায় না।এই মেয়ের শাস্তি দেয়া উচিত।

ভদ্রলোক কিছু একটা ভেবে বলেন,বুঝলে নানুভাই কি যুগ আসলো! এতো সুন্দর মেয়েও চুরি করে!উচ্ছন্নে গেলো এই জাতি গো,উচ্ছন্নে গেলো!

অহিন ও উনার সাথে সুর মেলালো।কিন্তু ভদ্রলোক আবার বলেন,এই চোর দেখতে এতো মায়াবী হয় জানা ছিলো না নানুভাই!অহিন উনার কথা শুনে হেসে দেয়।

আরিশার খুব রাগ হচ্ছে এই অহিন এতো নাটক কেনো করছে?রাহি উপরে বসে মজা নিচ্ছে।কারণ সে অহিনের কথাগুলো শুনে মজা নিচ্ছে।
এদিকে আরিশার নাজেহাল অবস্থা!

ভদ্রলোক বলে,আচ্ছা নানুভাই একে ছেড়ে দেই কি বলো।মায়া লাগছে এই মেয়েকে।কেমন ভদ্র ভদ্র চেহেরা।আহারে কেনো যে এরা চুরি করে?বড্ড আপসোস করে বললেন তিনি।

অহিনের খুব মজা লাগছে,তার সাথে লাগার ফল কেমন হয় তা হারে হারে বুঝছে মহারানী!

এমন সময় সাজেদা বেগম আসেন,পেছনে থেকে অহিনের কান ধরে বলেন ওরে বাদর ছেলে,ফাজলামি হচ্ছে?ভদ্রলোক কিছু না বুঝে বলেন কি হয়েছে মা?

সাজেদা বেগম সব খুলে বলেন,ভদ্রলোক লজ্জায় মরে যাচ্ছেন। কিসব বলেছেন তিনি নাত বউকে।আরিশা উনাকে সালাম করলো। উনি মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করলেন শত পুত্রের জননী হও!
অহিন একথা শুনে কাশতে লাগলো। আরিশা মনে মনে ভাবলো এটা আশির্বাদ নাকি অভিশাপ! আজব!

রাহি গাছ থেকে নেমে আসলো। ভদ্রলোক আরিশাকে বলেন,আমার নাতি তোমাকে খুব ভালবাসে নাত বউ।তাই এমন দুষ্টুমি করলো। এমন খাটি ভালবাসা পাবেনা কোথাও। আঁচলে বাইন্দা রাইখো।

আরিশা অবাক হয়ে ভাবে,আজব!যে ছেলে আমাকে ফাসিয়ে দিচ্ছিলো সে নাকি আমাকে ভালবাসে!এই ভদ্রলোক বুড়ো হইছেন ঠিক কিন্তু বুদ্ধি বাড়েনি।নয়তো তার শত্রুকে এতো ভালো উনার কাছে মনে হইলো ক্যান?আর আজকে বাড়ি গিয়ে এর প্রতিশোধ তো নিবোই।নাহলে আমার নাম আরিশা না।হু!এসব ভাবতে থাকে আরিশা।
ভদ্রলোক লোক ডেকে অনেক গুলো পেয়েরা পেড়ে আরিশার জন্য বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।আরিশাকে উনার বাড়ি যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানান।

সবাই বাড়ি ফিরে যায়।কিন্তু অহিন আরিশা থেকে একশো গজ দূরে থাকে।কারণ সে জানে আজকে তার উপর, ঘূর্নি ঝড়, সাইক্লোন, নার্গিস,হারিকেন, সব একসাথে আসবে।
তার চেয়ে নিরাপদ স্থানে থাকাই ভালো! তবে আরিশাকে জব্দ করতে পেরে সেই মজা পাইছে অহিন। অন্যদিকে তিন্নি অহিনের খুব কাছে এসে দাড়িয়েছে, অহিন আরিশাকে হারাতে পেরে মনের সুখে গান গাইছে,

আমি করতে যদি পারি তোমার মন চুরি
হবে আমার ভালোবাসার সেঞ্চুরি
আমি করতে যদি পারি তোমার মন চুরি
হবে আমার ভালোবাসার সেঞ্চুরি

তুমি আমার এই জীবনের শত তম টার্গেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
ওয়ান ডে প্রেমের ক্রিকেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
ওয়ান ডে প্রেমের ক্রিকেট

তুমি আমার এই জীবনের দুইশ তম টার্গেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
টেস্ট প্রেমের ক্রিকেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
টেস্ট প্রেমের ক্রিকেট

অহিন জাস্ট মজা করে এই গান গাইছে। অন্যদিকে আরিশা রেগে গেছে সে ভাবছে তিন্নিকে উদ্দেশ্যে করে এই গান গাইছে অহিন।গানের কি ছিরি!

অহিন হাসছে,আরিশা রাগছে!অহিন আরিশার দিকে তাকিয়ে ভাবে আল্লাহ রক্ষা করো এই ভাগিনী থেকে।
#অন্তরালে_ভালবাসা
২৬
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

আরিশা অহিনের দিকে রাগী রাগী চেহারায় তাকিয়ে আছে দেখে অহিন নানুমনির কাছে গিয়ে বসা, যাতে আরিশা তাকে কিছু বলতে না পারে।তিন্নি অহিনের চারপাশে ঘুর ঘুর করছে দেখে আরিশার মেজাজ আরও বিগড়ে গেলো, তখনই নানুমনি ঘোষণা দিলেন।আজকে সন্ধ্যায় গানের আসর বসবে।শাহরিয়ার আর তার বউ শাহলিজা গান গাইবে।প্রতিবার শাহরিয়ার যখন আসতো সে একা গান শুনাতো,কিন্তু এবার দুজনে শোনাবে।তবে আজকে সব গান ডুয়েট হতে হবে।

আর গানে শাহরিয়ার আর শাহলিজার মাঝে যে জিতবে তার জন্য নানুমনি পুরস্কার ঘোষণা করলেন।তবে কি পুরস্কার তা এখন বললেন না।
আরিশার মেজাজ ঠিক নেই তার উপর গান সে কিভাবে গাইবে।মন ভালো থাকলে গান গাইতেও ভালো লাগবে।

কিন্তু অহিন আজকাল যে গান গুলো গাইছে আরিশা তো এগুলো কোনদিন শুনেনি।তাই মনে মনে ভেবে নিলো প্যাতা লাগা আরিশা!পাত্যা লাগা!

আরিশা ফ্রেশ হতে ঘরে চলে গেলো। কিন্তু মনে মনে চাইলো অহিন যাতে এখন ঘরে আসে,আজকে তার একদিন কি আরিশার যা কদিন লাগে!এভাবে তাকে সবার সামনে ছোট করার মজা দেখাবে আরিশা।অহিন এদিকে মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে আজকে আরিশার ঘুম না আসা পর্যন্ত ঘরে যাবে না।কারণ সে জানে আরিশা কতটা ভয়ংকরভাবে এর প্রতিশোধ নিবে।এই মেয়ের মারের স্টাইলের শেষ নেই।মনে হবে আদর করতে আসছে,ওমা পরে দেখা যাবে সেই ভাবে মারছে।দরকার নাই বাজি!এমন দজ্জাল মেয়ের কাছে গিয়ে শহীদ হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই অহিনের।

অহিন কাউকে খুজতেছিলো তাদের ঘর থেকে জামা কাপড় নিয়ে আসতে,কিন্তু কাউকে পাচ্ছে না।সবাই পুকুরে গোসল করতে চলে গেছে।তারপর দেখলো তিন্নি তার পাশে এসে বসেছে।তিন্নিকে বলে,’তিন্নি আমার ঘর থেকে আমার জামা কাপড় এনে দিতে পারবি?

তিন্নি যেনো এতোক্ষন এটার অপেক্ষায় ছিলো, তাড়াহুড়ো করে বলে,কি আনতে হবে ভাইয়া বলো?

অহিন বলে দেয়।কিন্তু তিন্নির হঠাৎ মনে হলো নিশ্চয়ই এদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া হয়েছে,যার জন্য অহিন ঘরে যাচ্ছে না।তাই এই সুযোগটা কাজে লাগাতে ছাড়লো না সে।অহিনের ঘরে গিয়ে আরিশাকে কিছু না বলে অহিনের সুটকেস ঘাটাঘাটি শুরু করে,আরিশা দেখে রীতিমত অবাক,এই মেয়ে তাদের ঘরে এসেছে তাকে কিছু না বলে,তার স্বামীর জিনিসে হাত দিচ্ছে।সাহস তো কম না!
খুব রাগ হলেও আরিশা নিজেকে সামলে বলে,কিছু খুজছো?
—হুম,ভাইয়া জামা কাপড় নিতে বলেছে।বলেই সেই কি হাসি দিলো তিন্নি।

কিন্তু সেই হাসি আরিশার প্রতি অঙ্গে অঙ্গে জ্বালা ধরালো।
আর একটি কথাও না বলে চুপচাপ বেডের উপর বসে পড়লো। মনে মনে ভাবতে লাগলো আজ কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছে,সারাদিন খারাপ গেলো। এবার রাতে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে কে জানে?
তাই কিছুক্ষণ গানে মন দিতে চাইলো। কয়েকটা গান রিহার্সাল করে নিলো। দেখে নিলো সুর,তাল,সব ঠিক আছে কি না!

এদিকে অহিন আজ মায়ের ঘরে গোসল সেরে নিলো। মা বুঝতে পেরে হাসলেন।তার ছেলে যে বউয়ের ভয়ে ঘরে যাচ্ছে না।সেটা সাজেদা বেগম খুব ভালোভাবে বুঝলেন। অহিনের কাধে হাত দিয়ে বললেন, কি ব্যাপার বউকে এতো ভয় পেলে চলবে অহিন সাহেব?উনার মুখে নরম হাসি!

অহিন মাথা চুলকিয়ে বলে ধ্যাৎ কি যে বলো না মা!আমি কাউকে ভয় পাই না।
আমি জানি তুই কাউকে ভয় পাস না।কিন্তু পৃথিবীর সব পুরুষই একজনক্র ভয় পায়,আর সে হচ্ছে তার ঘরের বউ।জীবনে এক পর্যায় এসে প্রত্যেক পুরুষ এটা বুঝতে পারে।

কিসব বলো মা তুমি।আচ্ছা মা তুমি এতো ভালো কেনো? অন্যকোন মা হলে বলতো কেমন পুরুষ হইছিস হুম?বউকে ভয় পাস?গিয়ে বউয়ের দুগালে দুইটা লাগাই দিবি তাহলেই দেখবি বউ কেমন ঠিক হয়ে যায়।আর তুমি ঠিম উল্টো বলছো।মজা করছো!তুমি কি জানো তুমি শুধু বেস্ট মা না!বেস্ট শাশুড়িও!

সাজেদা বেগম বলেন,আমি নিজেও তো বউ ছিলাম। আর আমি সেদিনগুলোর কথা ভুলিনি।আমি মনে মনে সবসময় ভেবে রেখেছি।আমার বউয়ের সাথে আমি কখনও খারাপ ব্যাবহার করবো না।একজন নারী যখন বউ থেকে শাশুড়ি হয়,তখন ভুলে যায় তার শাশুড়ি তার সাথে খারাপ ব্যাবহার করলে তার কাছে কেমন লাগতো। সেও একই কাজ করার শুরু করে,কারণ তারা এই অত্যাচারকে পরম্পরা ভেবে নেয়।ভাবে আমার শাশুড়ি আমার সাথে এমন করছে, আমি কেনো আমার ছেলের বউয়ের সাথে করবো না।ভাবে আমার শাশুড়ি আমাকে খেতে দেয় নি আমিও আমার ছেলের বউকে খেতে দিবো না।আমাদের সময় এতো উন্নত ছিলো না সব,পাটায় মরিচ বেটে খেতে হয়েছে।ধান ভেঙে খাইতে হইছে এদের তো এসব করতে হচ্ছে না।তাই বলে যে একদম পায়ের উপর লা তুলে খাবে তা তো নয়।তাই নিজের ছেলের বউকে নানা ভাব কষ্ট দিতে শুরু করে, কিন্তু তারা ভুলে যায় সেই সময় গুলোতে তাদের কতটা কষ্ট হয়েছিলো শাশুড়ির এসব অত্যাচার মেনে নিতে।তাই কো৷ নারী যদি ভাবে অন্য কেউ আমার সাথে খারাপ আচরণ করলে আমার যতটা খারাপ লাগবে,ঠিক অন্যকারো সাথে এমন করলে তার ও একই খারাপ লাগবে।তাই উচিত এটাই যে অন্যকে কষ্ট না দেয়া।

অহিন মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,তুমি সত্যি বেস্ট মা।তোমার মত এতো সুন্দর চিন্তা যদি বাংলায় প্রতিটি ঘরে ঘরে নারীদের হতো তাহলে সবাই মিলেমিশে থাকতে পারতো। ছেলেদেরও শাখের করাতের মত অবস্থা হতো না।কারণ এই বউ শাশুড়ির যুদ্ধে সবচেয়ে বেশী কষ্ট পেতে হয় পুরুষকে।কারণ মা নাকি বউ কোনদিকে যাবে সে বুঝতে পারে না।তাই তার অবস্থা হয়ে যায় শাখের করাতের মত।

সাজেদা বেগম অহিনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,তুই শুধু সুখি থাক বাবা,আমি এটাই চাই।আমি কখনও তোকে শাখের করাত হতে দিবো না।ব্যস তুই ভালো থাক।অহিন মাকে বলে,তুমি থাকতে আমি খারাপ কি করে থাকতে পারি মা!

সাজেদা বেগম বলেন,তা বাবা আজ বউয়ের হাতে যে মাইর খাবা সেটা আমি সিওর। বলেই তিনি হাসেন।অহিন বলে,কি যে বলো না মা!

সাজেদা বেগম চলে গেলে অহিন আরিশার আজকের দিনের সব ঘটনা মনে করে নিজে নিজে হাসে।যখন চোর হয়ে ধরা পড়েছিলো চেহেরাটা দেখার মত ছিলো! বাঘিনী একদম হরিণের মত হয়ে ছিলো ভয়ে।ভাবতেই মজা লাগছে অহিনের।আর যখন চুল টানতে আসছিলো অহিন ভাবছে আজ আরিশা হয়তো অন্যকিছু করবে,কিন্তু এটা কি করলো এভাবে কেউ মার দেয়!এসব ভেবেই অহিনের ভালো লাগছে।এতো আমেজিং একটা মেয়েকে ভালো না বেসে কি থাকা যায়।সি ইজ বেস্ট! বেস্ট! বেস্ট!

অহিন ঠিক করে আরও রাগাবে আজকে,তাই সে সময়ের গানটা পুরো রিহার্সাল করে নেয়।কারণ এই গানটা শুনে
আরিশার চেহারা দেখার মত ছিলো।

———————————————————————————-

সবাই মিলে গানের আসরে বসেছে,অহিনের হাতে গিটার তিন্নি কাপ আর চামচ নিয়ে এসেছে কারণ সে গান গাইতে না পারলেও গানের তালে কাপ আর চামচ দিয়ে গানের সাথে সুর তুলতে পারে।

সবাই বসেছে উঠোনের মাঝখানে পাটি বিছিয়ে,হালকা শীতল বাতাস বইছে,চাঁদনী রাত সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ।

গ্রামের অনেক মানুষ এসেছে গান শুনতে।

প্রথম গানের সুর যখন অহিন তুলে আরিশা বুঝে যায় কোন গান,আজ বিকেলে সে এই গানটি রিহার্সাল করেছিলো।অদ্ভুতভাবে অহিন না জানার স্বত্তেও এই গানটাই গাইলো এই ছেলেটা আসলে ম্যাজিক্যাল! কারণ এটা নতুন নয়,সে সবসময় আরিশার না বলা কথা বুঝে যায়।

অহিন গান শুরু করে,

ওওওও……..
যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে
মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে,ফ
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আঁধার
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আঁধার।

আরিশা গায় এবার, এই গানটা বরাবর আরিশার প্রিয় তাই গান গাওয়ার সময় সে গানের ভেতর ঢুকে যায়।তখন তার কিছুই মনে থাকে না।

যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে
মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে,
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আঁধার,
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আঁধার।

অহিনের চেহেরায় গভীরতা চলে এসেছে।দরদ দিয়ে গাইছে সে গান।
একটুপর পর আরিশার দিকে তাকাচ্ছে,চাঁদের নিয়ন আলোয় আরিশাকে স্নিগ্ধ লাগছে!মায়াবী লাগছে খুব!এতে যেনো অহিন গানের আরও সুর খুজে পেলো।

আরিশা চোখ বন্ধ করে মন দিয়ে গান গাইছে।আর কল্পনা করছে সব।

শিশুকালের রূপকথাগুলো
পায়ে পায়ে সব আসে ফিরে
তোমার কথা রূপকথা ঘিরে
—————
ভুলে ভরা যত স্বরলিপি
গানের কোকিল হয়ে উঠে ডেকে
কাছে এলে তুমি দূরে থেকে।

এবার দুজনে একসাথে গায় শেষের অন্তরাটা।

যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে
মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে,
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আঁধার,

বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আঁধার।

বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আঁধার

বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আঁধার।

আরিশা হঠাৎ চোখ খুলে ফেলে কারণ সে রাফিনকে অনুভব করতে চেয়েছে চোখ বন্ধ করে,কিন্তু অদ্ভুতভাবে অহিনকে দেখলো কিন্তু রাফিনকে পেলো না।
মনটা কেমন যেনো করে উঠে।

এমন সময় সবাই আরেকটা গানের অনুরোধ করে তবে সেটা যেনো কালকের গানটা হয়।

অহিন গান শুরু করে,,,

আমি করতে যদি পারি তোমার মন চুরি
হবে আমার ভালোবাসার সেঞ্চুরি,
আমি করতে যদি পারি তোমার মন চুরি
হবে আমার ভালোবাসার সেঞ্চুরি।

তুমি আমার এই জীবনের শত তম টার্গেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
ওয়ান ডে প্রেমের ক্রিকেট,
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
ওয়ান ডে প্রেমের ক্রিকেট।

আরিশা সুর ধরে,,,

আমি করতে যদি পারি তোমার মন চুরি
হবে আমার প্রেমের ডাবল সেঞ্চুরি,
আমি করতে যদি পারি তোমার মন চুরি
হবে আমার প্রেমের ডাবল সেঞ্চুরি।

তুমি আমার এই জীবনের দুইশ তম টার্গেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
টেস্ট প্রেমের ক্রিকেট,
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
টেস্ট প্রেমের ক্রিকেট।

আরিশা এবার অহিনের গানের ফাঁকে নিজে উত্তর দেয়ার জন্য গায়।অহিনের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে গান ধরে,,,,,

টেস্ট মর্যাদা পাওয়া এতো সহজ নয়
ওয়ান ডে ম্যাচ খেলে এ তার যোগ্য হতে হয়,

আমার বলে কত ব্যাটসম্যান হয়ে গেছে আউট
এই জীবনে দেখছি কত তোমার মতো টাউট,

আমি বলে বলে নিবো যে বাউন্ডারী
হায়রে আমার সাথে চলবে না সেই টাউটারি,
আমি বলে বলে নিবো যে বাউন্ডারী
হায়রে আমার সাথে চলবে না সেই টাউটারি।

স্ট্যাম্প ভেঙ্গে পড়বে তোমার
যৌবনের ও উইকেট,
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
টেস্ট প্রেমের ক্রিকেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
টেস্ট প্রেমের ক্রিকেট

অহিন অবাক হয়ে আরিশার গান শুনে,সে ভেবেছিলো আরিশা এই গানের হদিস পাবে না।তাই উত্তর ও দিতে পারবে না।যেহেতু এটা খুব পুরনো গান।কিন্তু আরিশা যে মারাত্মক মেয়ে এটা ভাবা উচিত ছিলো। আসলে প্রতিপক্ষ যেমনই হোক তাকে দুর্বল ভাবাটা সবচেয়ে বড় বোকামী!এখন আরিশা তার ইজ্জতের তেরোটা বাজাচ্ছে। আল্লাহ সবাই কেমন হাসছে!হারলে চলবে না,অহিন!উত্তর দেয়! উত্তর দেয়!

অহিন গান ধরে,,,

অলরাউন্ডার খেলোয়াড় যে আমায় সবাই মানে
বলিং ব্যাটিং ফিলড্রিং
আমার দক্ষতা সব খানে,

আরিশা হেসে হেসে গায়,,,হাত দেখিয়ে অহিনকে তিরস্কারের সাথে বলে,

তোমার মতো কত দক্ষ দেখেছি জীবনে
শুন্য রানে হইছে আউট আমার ও বলিংয়ে

আমি নো বল পেলে ছক্কা ছাড়া মারিনা
আমি নো বল আর ওয়াইড বল যে করিনা

আমি ওয়াইড বল ও ছক্কা ছাড়া মারিনা
আমি নো বল আর ওয়াইড বল যে করিনা

অহিন এবার আরিশার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে সে হেরে যাচ্ছে তাই, দাত মুখ খিচে গায়,,,,

বলের ধাক্কায় পড়ে যাবে
তোমার হাতের ওই ব্যাট,
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
টেস্ট প্রেমের ক্রিকেট,
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
টেস্ট প্রেমের ক্রিকেট।

আমি করতে যদি পারি তোমার মন চুরি
হবে আমার ভালোবাসার সেঞ্চুরি,
আমি করতে যদি পারি তোমার মন চুরি
হবে আমার ভালোবাসার সেঞ্চুরি।

তুমি আমার এই জীবনের শত তম টার্গেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
ওয়ান ডে প্রেমের ক্রিকেট,
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
ওয়ান ডে প্রেমের ক্রিকেট।

আরিশা মুচকি হেসে গায়,,,

এই জীবনে দেখছি কতো বলিং একশান
ফাকে ফাকে তুলছি আমি তাও শত রান

ব্যাটে বলে এক না হলে রান উঠানো দায়
রান না ফেলে ভাব লাগেনা ক্রিকেটের খেলায়।

অহিন জেতার শেষ চেষ্টা করে গায়,,,

ওরে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হবোই হবো আমি যে
ওরে জয়ের চেয়ে নাই কিছু আর দামী যে

ওরে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হবোই হবো আমি যে
ওরে জয়ের চেয়ে নাই কিছু আর দামী যে

তুমি আমি এস খেলি মিলে মিশে ক্রিকেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
টেস্ট প্রেমের ক্রিকেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
টেস্ট প্রেমের ক্রিকেট

আমি করতে যদি পারি তোমার মন চুরি
হবে আমার ভালোবাসার সেঞ্চুরি
আমি করতে যদি পারি তোমার মন চুরি
হবে আমার ভালোবাসার সেঞ্চুরি

তুমি আমার এই জীবনের শত তম টার্গেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
ওয়ান ডে প্রেমের ক্রিকেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
ওয়ান ডে প্রেমের ক্রিকেট

আরিশা গায়,,,,,তার মুখে বিজয়ের হাসি কারণ উপস্থিত সবাই ভাবী জিতে গেছে, ভাবী জিতে গেছে করে চিল্লাচ্ছে।

আমি করতে যদি পারি তোমার মন চুরি
হবে আমার প্রেমের ডাবল সেঞ্চুরি,
আমি করতে যদি পারি তোমার মন চুরি
হবে আমার প্রেমের ডাবল সেঞ্চুরি।

তুমি আমার এই জীবনের দুইশ তম টার্গেট
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
টেস্ট প্রেমের ক্রিকেট,
তোমায় নিয়ে খেলবো আমি
টেস্ট প্রেমের ক্রিকেট।

গান শেষ করে অহিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে আরিশা বলে,’হে ডিয়ার দোস্ত শেষ পর্যন্ত মমতাজের গান ধরলি আমারে জব্দ করার জন্য!তুই কি ভাবছিস আমি জানতে পারবো না!হেরে গিয়ে কেমন লাগছে বলো? বলেই অহিনকে চোখ মারে আরিশা,,,কালকের অপমানের সঠিক জবাব দিতে পেরে সেই মজা লাগছে তার।

আরিশার পেছনে লাগার ফল এবার অহিন বাবু ভালো করে বুঝবেন।
#অন্তরালে_ভালবাসা
২৭
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

অহিন হেরে গেছে,এতে সবাই খুশী শুধু তিন্নি ছাড়া। সে মনে করে অহিনকে কেউ হারাতেই পারে না।নানুমনি আরিশাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলেন,লক্ষী বউ আমার শাহরিয়ারের।তিনি পুরস্কার হিসেবে ঘোষণা করেন,১০০০টি বই দিবেন তিনি আরিশাকে।আরিশা খুব খুশী হয়।সেদিন সিতাহার দেয়ায় ও এতো খুশী হয়নি আজকে বইয়ের কথা শুনে এতোটা খুশী হয়েছে।কারণ আরিশা বরাবরই বই পড়তে খুব ভালবাসে।
খুশীতে নানুমনিকে জড়িয়ে ধরে। অহিন আরিশার বাচ্চামি দেখে হাসে,সুখের হাসি!প্রাপ্তির হাসি!যে হাসিতে চোখ হাসে!যে হাসিতে ঠোঁট হাসে!ভুবন ভোলানো সেই হাসি!

আরিশা খেয়ে এসে নিজের ঘরে বসে অপেক্ষা করে অহিনের জন্য,আজ সারাদিন অহিন আরিশাকে এভোয়েড করে চলেছে।আজ অহিনকে হারাতে পেরে কিছুটা ভালো লাগছে আরিশার।কিন্তু শোধ নেয়া হয়নি পুরোপুরি।তাই আজকে অহিনের অবস্থা যে কি করবে সে নিজেই জানে না।

অহিন বেচেরা দুষ্টুমি করতে গিয়ে ফেসে গেলো। এই মেয়ের সাথে কেনো যে লাগতে গেলো! জানে পারবে না, তাও লাগতে যাওয়া ঠিক হয়নি।এখন নিজের ঘরে পর্যন্ত যেতে পারছে না।ঘরের সামনে দাড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখছে আরিশা ঘুমিয়েছে কি না?ঘুমালে তারপর ঘরে ডুকবে,এদিকে নানুমনি পেছন থেকে কান টেনে ধরে বলেন,কি ব্যাপার নানুভাই?বউ তাড়িয়ে দিয়েছে বুঝি?
অহিন লজ্জার হাসি দিয়ে বলে,না মানে নানুমনি,,,নানুমনি বলেন, হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না।চল আমি তোমাকে ঘরে দিয়ে আসি।এদিকে অহিন বেচেরা পড়লো মহা বিপদে, কিছু বলা যাবে না।নানুমনিকে।তাই এখন বলির পাঠা হয়ে ঘরে যেতে হবে।অহিন আর নানুমনিকে দেখে আরিশা বসা থেকে দাড়ালো। নানুমনি বললেন,বসো দুজন আমার দু’পাশে। বসলো অহিন আরিশা,

—-বুঝলে শাহলিজা আমাদের বিয়ের পর তোমার নানভাইয়ের সাথে একদিন ঝগড়া হয়েছিলো।তার সাথে আমি কোন কথা বলিনি সারাদিন। তিনি আমার চারপাশে ঘুরেছেন সারাদিন, কিন্তু আমি পাত্তা দেইনি।তারপর রাতে আমাকে তো ঘরেই আসতে হলো তখন তিনি আমাকে সেদিন বলে দিয়েছিলেন,যদি কোনদিন আমাদের মাঝে ঝগড়া হয়,কোন বিষয়ে দ্বিমত হয়,তাহলে সেটা যেনো ২৪ঘন্টার বেশী স্থায়ী না হয়।সারাদিন পর যখন সে ঘরে ফিরবে আমি যেনো তার কাছে এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে দাড়াই আর অবশ্যই যেনো তখন আমার মুখে হাসি থাকে।এতে উনি সব ভুলে যাবেন,আর আমিও।সেই থেকে একসাথে ৬৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে এই নিয়ম মেনে চলেছি আমরা। কখনও আমাদের রাগ বাসি হয়নি,মানে রাত পার হয়নি।সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে দুজনে গল্প করতাম, এমন ভাবে কথা বলতাম যেনো আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি।আর এভাবেই আমাদের জীবন অতিবাহিত করেছি।তাই আমিও আজ তোমাদের সে নীতি অবলম্বন করতে বলবো, কারণ এতে তোমরা অন্তত ঠকবে না।এটা আমার আদেশ নয়, উপদেশ! ইচ্ছে হলে মানবে, নইলে না।আরিশা অহিন একসাথে বলে উঠে প অবশ্যই মানবো।

———————–

নানুমনি চলে গেলে অহিন ভয়ে ভয়ে দরজা দিয়ে আসে।অহিন মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ে,কিন্তু আরিশা তো আজ ঝগড়া করবে বলে ঠিক করেই নিয়েছে। তাই সে ইচ্ছা করে অহিনের সামনে গিয়ে হোচট খেয়ে পড়ে,আর রাগী সুরে এটা প্রমাণ করতে চায় যে অহিন তাকে ফেলে দিয়েছে।কিন্তু অহিন তাজ্জব বনে যায়,কারণ সে কিছুই করেনি।আরিশা চেচাতে শুরু করে,চোখ কি হাতে নিয়ে হাটিস?ফেলে দিয়েছিস ক্যান?বেয়েরা ছেলে কোথাকার?

আমি কখন ফেলে দিলাম তোরে!মানে তুই আসলে একটা বিরক্তিকর মানুষ আরু।

আরিশা যেনো এই কথাটার অপেক্ষায় ছিলো, সাথে সাথে চোখে অগ্নিসংযোগ করে অহিনের দিকে তাকিয়ে বলে, সেটাই আমি তো বিরক্তিকর হবো, কারণ এখন কত রঙিলা আছে ডানে বাঁয়ে। তুই যে উচ্চমানের একটা লুচু ছেলে আজ আমি তার প্রমাণ পেলাম।ছিঃআমি শেষ পর্যন্ত একটা লুচুকে বন্ধু বানালাম।সেম অন ইউ শাহলিজা নুর আরিশা,সেম অন ইউ।আপসোসের গলায় বলে।

অহিন বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে যায়,দিনিদিন আরিশা কেমন ন্যাকা হয়ে যাচ্ছিস তুই।নাক সিটকে বলে অহিন।আরিশা বলে,ওয়াও এবার ন্যাকাও হয়ে গেলাম। তা আর কি কি মনে হচ্ছে বলতো?

—কিছুনা বলে না।চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে,আরিশার মেজাজ এবার আরও খারাপ হয়।ভাবে তিন্নি মেয়েটার জন্য এসব করতেছিস তো। দাড়া দেখাচ্ছি আমি।
এই শোন তুই কি আমার কাছে হেরে গিয়ে এমন করছিস?তাচ্ছিল্যের সাথে বলে আরিশা।

—আমি হারিনি বুঝলি,শুধু তোকে জিতিয়ে দিয়েছি।সর তো ঘুমাতে দে এখন।

—আরিশা অহিনের ইগ্নোর করাটা নিতে পারে না।তাই চরম রেগে যায়।আর রেগে গেলে সেই নানা স্টাইলে মার দেয়া শুরু করে।আজকেও তার ব্যাতিক্রম না।তাই সে হুট করে অহিনের পেটের উপর গিয়ে বসে চুল টানতে থাকে,অহিন এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেনো এটা সে বিশ্বাস করতেই পারছে না । মানে এতোদিন নানাভাবে মারতো সব ঠিক ছিলো কিন্তু এটা সে আশা করে নি।অনেক চেষ্টা করে নিজেকে ছাড়াতে কিন্তু এই ভাগিনী থেকে রক্ষা পাওয়া আসলেই কষ্টের, ছাড়াতে গিয়ে হলো আরেক বিপত্তি হাত ধরে টানায় আরিশা অহিনের বুকের উপর পড়ে যায়,আরিশা মুখ অহিনের মুখের কাছে দুজনের গরম নিশ্বাস দুজনের মুখে পড়ছে।অহিন মুগ্ধ চোখে চেয়ে আছে আরিশার দিকে,তার এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে এই সময়টা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সময়। তার মনের ধুকপুকানি বেড়ে গেলো। দুজন দুজনের বুকের বেড়ে যাওয়া শব্দের গতি বুঝতে পারছে।আরিশা একেবারে আহম্মক হয়ে গেছে।তবে অদ্ভুতভাবে খেয়াল করলো একটু আগের দুনিয়া ধবংস করে দেয়া রাগটা যেনো মুহুর্তে উড়ে গেলো। মনের একোন ও কোনের কেমন একটা ভালো লাগা অনুভব করলো। এই অনুভুতিটা ভালো লাগার হলেও, কেমন যেনো অস্বস্তি দেয়।কারণ বুকের ভেতরকার শব্দটা যে হারে বাড়ে এতে অন্তত স্বস্তি পাওয়া যায় না।

কিছু নিরব আর ভয়ংকর মুহুর্ত কেটে গেলো কেউ কোন কথা বলতে পারলো না।আরিশার সামনের ছোট করে কাটা কয়েকটা চুল এসে তার কপাল ছুয়ে অহিনের মুখে ছুয়েছে,অহিনের খুব ইচ্ছে করছে সে সে চুল গুলো কানের পাশে গুজে দিতে কিন্তু দিলো না।যদি আরিশা কিছু মন্র করে।কোনমতেই মনের যে গোপন বাক্সে ভালবাসা তালাবদ্ধ করে রেখেছে এতো বছর, এই কয়েকটা দিনের জন্য তা কোনভাবেই প্রকাশ হতে দেয়া যাবে না।তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য একটা ফন্দি আটলো।হঠাৎ বলে উঠে আজ আমাকে একা ঘরে পেয়ে রেপ করতে চাচ্ছিস, আমি অবলা ছেলে বলে মামালা করলাম না।

অহিনের এমন কথায় আরিশার ধ্যান ভাঙে বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে যায় আরিশা,মানে এটা তুই কি কইলি?আমি তোকে,,,, ছিঃ!
তুই আস্তো একটা জঘন্য লোক অহিন,ওই তিন্নি মেয়েটা এসব শিখাচ্ছে তাই না?আগে তো তুই এমন ছিলি না!

—অহিন দুষ্টুমির চলে বলে,হুম তিন্নি শিখাচ্ছে,আর শিখালেই বা তোর কি? আমিতো ভাবছি আমি তিন্নিকে বিয়ে করে নিবো।আর কত বিয়ে না থাকিবো বল?খুব আপসোসের সাথে বলে অহিন।

—-আরিশা রেগে বলে,এক বউ থাকতে আবার অন্যবউয়ের কথা বলছিস?তোর তো সাহস কম না!

—তুই নিজেকে আবার কবে থেকে আমার বউ ভাবতে শুরু করলি আরু?অহিন স্নিগ্ধ গলায় আরিশার দিকে সম্পুর্ণ দৃষ্টি দিয়ে বলে।

—-এই কথাটায় থমকায় আরিশা,বুঝতে পার না,কি বলবে!আসলেই তার নিজের আচরণ আজকাল নিজের কাছে অস্বাভাবিক লাগছে।কেনো এমন করছে সে?কি হয়েছে তার?

দুজনে চুপচাপ হয়ে যায়,অহিন বলে ঘুমিয়ে যা আরু।এমন সময় আরিশার ফোন বেজে উঠে, অহিনের হাতের কাছে থাকায় অহিন ফোন এগিয়ে দেয় আরিশাকে,রাফিন কল দিয়েছে।আরিশা ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।অহিনের বুকের ভেতরকার চাপা কষ্টটা যেনো আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আরিশা কথাটা আর রাফিনের কল সবমিলিয়ে অহিনের বুকেত ভেতরটায় ভেঙেছুড়ে যেনো শেষ হয়ে যাচ্ছে।যখন আরিশা বলেছিলো এক বউ থাকতে অন্যকাউকে বিয়ে করার কথা বলছিস।তখন মনে হচ্ছিলো আরিশাকে বুকের সাথে পিষে ফেলতে।বলতে আমার একমাত্র বউ শুধু তুই আর তুই।আর কেউ কখনও অহিনেত বউ হবে না।সারাজীবন তুই অহিনের মনের ঘরে বউ হয়ে থাকবি।খুব আদরে যত্নে সেখানে রেখে দিয়েছি তোকে রে আরু!তুই আমার প্রথম আর শেষ ভালবাসা।

আরিশার কেনো যেনো রাফিনের সাথে এখন কথা বলতে ইচ্ছে করলো না।রাফিন বলে সরি আরিশা আমি আসলে অফিসের কাজে অনেক বেশী ব্যস্ত হয়ে গেছি তাই খুব একটা কল দিতে পারছিনা রাগ করছিস নাতো?
প্লিজ রাগ করিস নারে,অনুনয়ের গলায় বলে রাফিন।আরিশা বলে আরে সমস্যা নেই। তুই মন দিয়ে কাজ শেষ করে আয়।আমি রাগ করছি না।আজ একটু অবাক হলো রাফিন আরিশা সত্যি অনেক বদলে গেছে,হয়তো এখন অনেকটা ম্যাচিউরড তাই।আগে কত গাল ফুলাতো কল দিতে দেরি হলে।এখন সব বুঝে দেখছি।আনমনে হাসে রাফিন।আরিশার এখন কোন কথাই বলতে ইচ্ছে করছে না।কোন এক অজানা কারণে মন ভার হয়ে আছে।নিজেকে অস্থির মনে হচ্ছে।কিন্তু রাফিন বলে তুই কোন রঙের লেহেঙ্গা পরবি বিয়েতে।আরিশা বলে, সব শপিং এখানে এসে করিস।ওখান থেকে কেনো আনতে হবে।আমাদের দেশে এখন অনেক বড় বড় সোরুম খুলেছে।দেখে নিয়ে নিবো।রাফিন কি যেনো চিন্তা করে বলে যেমন তোর ইচ্ছে।রাফিন আরও কি যেনো বলতে গেলে আরিশা বলে,রাফিন খুব মাথা ধরে আছে কাল কথা বলি?
রাফিন নিভে যাওয়া গলায় এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,আচ্ছা যেমন ম্যাডামের ইচ্ছে।মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে যা অনেক রাত হয়েছে।

আরিশা এসে অহিনের পাশে শুয়ে পড়ে অহিনকে দেখে মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে গেছে।আসলে অহিন ঘুমায়নি আর কোন কথা এখন বলতে চায় না তাই ঘুমের ভান ধরে আছে।দুজন মানুষ পাশাপাশি শুয়ে এক নির্ঘুম রাত পার করে অথচ কেউ জানেনা যে তার একের অন্যের জন্য বুকের ভেতরে কি বিষন কষ্ট হচ্ছে,কেমন ফাঁকা হয়ে আছে ভেতরটা।কেমন দগ্ধ হচ্ছে অন্তরের অন্তর।

——————————————————————————–

সকালে আরিশা ঘুম ভেঙে দেখে অহিন পাশে নেই।ভোর রাত্র চোখ লেগে এসেছিলো। তাই টের পায়নি সে।ঘড়ি দেখে ১০টা বাজে।আরিশা ভয় পেয়ে যায় গ্রামের মানুষ এতো দেরিতে ঘুম থেকে উঠাকে স্বাভাবিকভাবে নেয় না।আরিশা ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসে।রাহি বলে ভাবী চল নাস্তা করবে,আরিশা বলে কেউ ডাকেনি আমায়?
না ভাবী সবাই আপসোস করছে, তুমি সারারাত মাথা যন্ত্রনার জন্য ঘুমাতে পারোনি।কে বললো?
তোমার বর বলেছে,আরিশা যেনো স্বস্তি পেলো।

আর রাহির মুখে তোমার বর কথাটা শুনে মনে অনেক খুশী হয়ে যায় আরিশা।আর সেই ছোট সুক্ষ্ণ এক অনুভূতি আজকাল টের পায় সে।মনের কোন এক কোনে যে এই বৈধ সম্পর্কের টান আছে সেটা একটু হলেও বুজতে পারে আরিশা।সবার সাথে নাস্তা করে অহিনকে খুজতে থাকে। কিন্তু পায় না।রাহিকে জিজ্ঞেস করলে রাহি বলে তিন্নির সাথে বেড়িয়েছে সে।এটা শুনে রাগ হয় আরিশার।তার রাগ হওয়ার কি কথা ছিলো?কেনো সে রাগ হচ্ছে?

কেনো এমন হচ্ছে? এমনটা কি হওয়ার কথা ছিলো? কি জানি হয়তো হ্যাঁ! নয়তো না!

জীবনে এমন অনেক কিছু হয়ে যায় যা আমরা কখনও ভাবিনি। কিন্তু হয়ে তো যায়।ভালবাসা হয়ত এমনি।কেনো হয়,কিভাবে হয় আমরা জানিনা, ব্যস হয়ে যায়।
ভালবাসার এই একটা দিক কারো হাতে থাকে না।
আরিশা আজ রাগের সাথে সাথে অস্থিরতা অনুভব করছে।সে যে অহিনকে নিয়ে দ্বিধায় আছে তা স্পষ্ট না হলেও কিছুটা বুঝতে পারে।
এর মাঝে তার কল আসে।অনেকদিন আগে চাকরির জন্য যে এপোয়েন্টমেন্ট দিয়ে এসেছিলো সেটা সে টিকে গেছে।সোমবার থেকে জয়েন করতে বলেছে।এই খুশীতে তার মনের রাগটা কিছুটা প্রশমিত হলো।সাজেদা বেগমকে জড়িয়ে ধরে খুশীতে সবটা শুনে নানুমনি সাজেদা বেগম খুব খুশী হন।তারা বলেন,একজন মেয়ের স্বামীর বা বাবার যত টাকাই থাকুক নিজের একটা পরিচয় নিশ্চয়ই বানানো উচিত।
প্রতিটা মেয়ের উচিত ছোট হলেও কিছু একটা করা।জীবন কখন কাকে কোথায় নিয়ে যায় কেউ জানেনা। তাই নারীদের নিজের উপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত।

অহিনকে কল দিলে সে চলে আসে তাড়াতাড়ি। অহিনও খুব খুশী হয়।রাফিনকে আরিশা টেক্সট করে জানিয়ে দেয় খবরটা।শুধু মন খারাপ হয় এইভেবে যে বাবা মা কত চেয়েছেন মেয়ে চাকরি করুক।আজকে যতদুর এসেছে মা বাবার জন্য।অথচ আজ সে মা বাবাই কাছে নেই।মনে হতেই কান্না চলে আসে আরিশার। অহিন বুঝতে পেরে আরিশাকে বুঝানোর চেষ্টা করে।কিন্তু আরিশা ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না করতে থাকে অহিন মাথায় হাত দিলে যেনো সে কান্না আরও আস্কারা পায়।

অনেক বুঝিয়ে অহিন আরিশার কান্না থামায়।তারপর নানুমনিকে বলে ঢাকা যাওয়ার ব্যাবস্থা করে।যেহেতু খুব তাড়াতাড়ি জয়েন করতে হবে তাই হাতে বেশী সময় নেই।

এর মধ্যে তারা ঢাকা যাওয়ার জন্য বের হতে বিদায় নিতে আসে সবার কাছে।অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে নানুমনির মত শক্ত মনের অধিকারী কেউ কাঁদছে আরিশার জন্য তা দেখে সবাই অবাক। কেউ কেউ হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।আবার কেউ খুশী হয়েছে।আরিশার ও খুব কষ্ট হলো, নানুমনিকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না।এই কয়েকটা দিনে সবাই এতো আপন হয়ে যাবে বুঝেনি।সবাই কত ভালো কত ভালবাসে তাকে।আপসোস হচ্ছে এমন পরিবারের সাথে আর কোনদিন দেখা হবে না।আর লজ্জা হচ্ছে এই ভেবে যে নানুমনি যেদিন জানবে সে আর অহিন স্বামী স্ত্রীর অভিনয় করেছে মাত্র।সে অন্য কাউকে বিয়ে করবে।সেদিন কতটা আঘাত পাবেন তিনি।কতটা খারাপ ভাববেন আরিশাকে।এসবের জন্য আরও বেশী কান্না পেয়ে গেলো আরিশার।জীবনের এই খেলাটা আরিশা আর নিতে পারছে না।কেমন যেনো অসহ্য লাগছে সব কিছু।

অহিনরা ঢাকায় চলে এসেছে,রাফিন কল দিয়ে আরিশাকে বলেছে তারা বিয়ের পর থাকার জন্য আলাদা একটা প্লট নিবে তাই সে চায় আরিশা গিয়ে সেটা পছন্দ করে আসুক অহিনের সাথে। অহিনকে ও জানায় রাফিন।আবার এটা ও বলে আরিশা যেনো সেখানে থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস আস্তে আস্তে নিজের পছন্দ মত কিনে বাসা সাজিয়ে ফেলে।আর আরিশাকে সাহায্য করার দ্বায়িত্ব দেয় অহিনকে।
যেহেতু রাফিন এসেই বিয়ে করে নিবে তাই আগে থেকে সব গুছিয়ে রাখতে চায় সে।তাই এই ব্যবস্থা।
আরিশা এ বাসা থেকে সে বাসায় গিয়ে থাকবে বিয়ে পর্যন্ত। রাফিন অবশ্যই বিয়ের পর উঠবে সে বাসায়।এসব শুনে সাজেদা বেগম রেগে যান।তার এক কথা ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত তার ছেলের বউ অন্য কোথাও যাবে না।

এদিকে অহিন কয়েকটা দিন সুখের ছোঁয়া পেয়ে এখন আবার সে তা পুরোপুরি হারাতে চলেছে।আরিশাকে অহিনের কাছ থেকে আলাদা করতে চায় হয়তো রাফিন।তাই এই ব্যবস্থা। সবকিছু মিলিয়ে বড় এক দুর্যোগের সামনে পড়তে চলেছে অহিন।আস্তে আস্তে দিন ঘনিয়ে আসছে আরিশাকে হারাবে চিরদিনের জন্য অহিন।এটা ভাবতেই পৃথিবী উলোটপালোট হয়ে যায়।অন্যদিকে আরিশার মন চাইছে না এ বাসা থেকে যেতে। কোন এক অজানা টান অনুভব করছে সে।অন্য বাসায় থাকতে হবে ভেবে খুব কষ্ট হচ্ছে তার।সবমিলিয়ে অহিন আরিশার সামনে কঠিন সময়। কঠিন সময় রাফিনের ও।কে জানে, কে কোথায় যাবে”!জীবন কাকে কোথায় নিয়ে যাবে?

চলবে,,,
চলবে,,,,,,
চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here