অন্ধপ্রেম পর্ব -২৩

#অন্ধপ্রেম
Writer: Shabnaj Hossain Moon
Part_23
.
(অনেক ঠান্ডা লেগেছে ,,ভিষন জ্বর,নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে ,,তারপরও গল্প লিখতে হচ্ছে সবার জন্য )
.
শীতল বেডে ঘুমিয়ে আছে আর রাজ ফ্লোরে হাটু ঘেরে বসে বসে শীতলের চাদেঁর মতো ফেসটুকু দেখছে …
কি সুন্দর ,সুশ্রি আর ইনোসেন্ট ফেস শীতলের …
এই মেয়ের বিশাল হ্রদয়ের কাছে রাজের হ্রদয় জাস্ট একটা অতি নগন্ন্য বস্তু …
.
.
.
শীতল রাজের সাথে কথা কাটাকাটি করতে করতে এক পর্যায়ে ঘুমিয়র পড়েছে ..
প্রায় সারা রাত শীতল রাজের সাথে তর্ক করছে ..
শেষ রাতে শীতলের চোখ লেগে এসেছিলো তাই অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছে ..
.
.
.
রাজ একটুও ঘুমায়নি ..
সারারাত সেও শীতলকে বুঝিয়েছে সে অনুতপ্ত আর শীতলের ভালোবাসা ফিল করছে সে …
শীতল কে ছাড়া থাকতে পারবেনা রাজ …
রাজ সত্যি সত্যি বুঝতে পেরেছে জিবন একটাই তাই খারাপ কিছু দিয়ে জিবন টা কে নষ্ট করার মানে হয়না …
কাউকে ভালোবেসে সুখে সারা জিবন কাটিয়ে দেওয়ায় জিবনের লক্ষ্য…
এক জিবনে দুঃখের স্থান না দিয়ে সুখের স্থান দেওয়ায় হলো জিবনের মানে …
দেরি হলেও রাজ এগুলো বুঝতে পেরেছে ..
এখন শুধু শীতলকে বোঝাতে পারলেই হলো …
.
.
.
শীতলের ঘুম ভাঙেনি এখনো …
রাজ নিজেকে নিজেই বললো ….
_ইশশশশ …
কি নিষ্পাপ ফুলের মতো মেয়ে শীতল …
এই মেয়েকে কেউ কষ্ট দিতেই পারেনা ..
অথচ ভুল বোঝাবোঝি করে এই মেয়েটার সাথে জঘন্য কি কাজটায় না করেছে সে …
অন্যায়ের উপর অন্যায় করেছে সে …
অথচ এই মেয়েটা এগুলোর প্রতিবাদ করেনি ..
উল্টো রাজের মন জয় করার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে রাজের কাছে ‌..
কটা ছেলের ভাগ্যে এমন মেয়ে জোটে …
রাজ খুব লাকি তাইতো এমন মেয়ে জোটেছে তার মতো ছেলের কপালে …শত শত অপমান ,অন্যায়ের পরেও যেই মেয়েগুলো নিষ্টার সাথে তাদের আপন মানুষদের সাথে থাকে ,তাদের হাত ছাড়েনা এই মেয়ে গুলো আসলেই উপর ওয়ালার বিশেষ এক সৃষ্টি ..
.
.
.
শীতলের ঘুম ভাঙতেই সে রাজ কে তার খুব কাছে দেখলো ….
শীতল বেড থেকে একটা লাফ দিয়ে উঠে পড়ে …
_ডার্লিং কি করছো ??
এতো জোরে কেউ লাফালাফি করে ??
যদি তোমার কিছু হয় ??
ব্যাথা পাবে প্লিজজ নিচে নেমে এসো ।
.
.
.
শীতলের রাজের এমন ভিহেব আর সহ্য হচ্ছেনা ইচ্ছে করছে রাজের ঘারের রক ছিড়ে খেয়ে ফেলতে …
.
.

_একি আপনি এখানে ??
এখনো যান নি আপনি ??
_আমি কোথায় যাবো ডার্লিং ??
তুমি যেখানে আমিও যে সেখানে থাকবো …
_দেখুন ড্রামা বাজি বন্ধ করুন …
আপনি চলে যান এখান থেকে ..
_যাবো তো ..
অন্যের বাসায় বউকে নিয়ে পড়ে থাকবো কেনো খামখা নিজের বাসা থাকতে …
তুমি রেডি হও ..
এখনি আমি চলে যাবো তোমাকে নিয়ে …
_শীতল রেগে বললো …
_আমি যাবোনা আপনার সাথে ..
এই কথা কত বার বলতে হয় ..
আপনি একটা মোহের মধ্যে আছেন ..
মোহ কেটে গেলো আপনি খুশি হবেন বিকোজ শীতল নামের ঝামেলা আপনার থেকে চলে গিয়েছে …
.
.
.
রাজের এখন ভিষন রাগ হচ্ছে …
রাজ রাগ কন্ট্রোল না করতে পেরে দাতে দাত চেপে বললো …
_আমারা কখন যাচ্ছি ডার্লিং ??
_আমি যাবো না ,যাবোনা এন্ড যাবো না ..

রাজ নিজেকে শুধরে নিচ্ছিলো কিছুটা বাট শীতলের এমন কথা শুনে রাজ রাগ কন্ট্রোল না করতে পেরে পাশে থাকা টেবিলে হাত দিয়ে একটা ঘুষি দিলো …
.
.
.
শীতল ভয়ে চমকে গেলো ..
রাজও কিছুটা ইতস্ত বোধ করলো এমন ভিহেব করে ..
_ডার্লিং আই এম সরি ‌..
আসলে আমি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি …
_আপনি কখনো শুধরাবার নন …
বৃথা চেষ্টা করছেন …

শীতল ডোর ওপেন করে রুমের বাহিরে চলে গেলো …
রাজ বেডে একটা লাথি দিয়ে বসে পড়লো সোফায় …
_কন্ট্রোল রাজ কন্ট্রোল …
শীতলের এমন ভিহেবে নিজেকে আরো কন্ট্রোল করতে হবে …
এতো তাড়াতাড়ি রেগে গেলে চলবেনা …
.
.
.
শীতল কিচেনে যেতেই তার খালা বললো …
_কিরে ঘুম কেমন হলো ???
জামাই বাবাজি উঠেছে ঘুম থেকে ??
_আচ্ছা খালামনি তুমি তো শুধু জানতে আমার বিয়ে হয়েছে ,এটা তো জানোনা কার সাথে বিয়ে হয়েছে তাইনা ???
_আগে জানতাম না তবে জামাই বাবাজি নিজে পরিচয় যখন দিয়েছে তখন জানলাম ..
শীতলের মাথায় কিছু ঢুকছেনা ..
রাজ কেমন করে এতো সহজে খোজেহ পেলো কিভাবে এটাই সে বুঝতে পারছেনা …
.
.
.
_শীতল মা সোফায় বস গিয়ে তোদের জন্য কফি আনছি …
.
.
.
শীতল সোফায় বসতে বসতে দেখে রাজ আর তার খালাতো ভাই শাওন সিড়ি দিয়ে নিচে নামছে হাসতে হাসতে …
রাজ এসে শীতলের গায়ে ঘেষে বসে ..
_কি ভাবছো ডার্লিং ??
শীতল কিছু বললোনা ..
রাজ আবার বললো …
_ভাবছো তোমাকে কিভাবে খোজেঁ পেলাম তাইনা??
শীতল এবার রাজের দিকে তাকালো …
রাজ বললো….
_দুদিন আগে টেবিলে চট্রগ্রামের টিকিট দেখে ছিলাম ..
তখন বিষয়টা এতো খেয়াল করিনি …
তুমি চলে আসার পর বুঝতে পারলাম তুমি চট্রগ্রামে এসেছো …
তোমার খালা মনির বাড়িতে অনেক আগে আমার সালা বাবুর সাথে এসেছিলাম ..
রোদ বলেছিলো চট্রগ্রামে তোমাদের একমাত্র খালা মনি থাকে আর কেউ না ..
তো ব্যাস দুই আর দুই চার মিলিয়ে দিলাম আর তোমার পাশে চলে এলাম ..
.
.
.
শীতলের বেশ রাগ উঠছে নিজের উপর ..
কেনো যে সে টেবিলে টিকিট রেখেছিলো …
নিজের চুল নিজেই ছিড়তে ইচ্ছে করছে …
_ডার্লিং রেগে নিজের চুল ছেড়ার কথা ভেবোনা যেনো বিকোজ তোমার চুলের সুভাস আমি তিন মাইল দূরে থেকেও চিনতে পারি ..
তোমার চুল আর চুলের সুভাস আমাকে বলে দিয়েছে তুমি কোথায় …
রাজ কথাটা শীতলের কোমর ধরে চুলে নিজের নাক ডুবিয়ে বললো …
শীতল রেগে রাজ কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে চলে গেলো …
.
.
.
সকালে শীতল কিছু খেলোনা রাগে দুঃখে ..
সে তো সবকিছু ভুলে যেতে চায় তাহলে আবার কেনো সবকিছু তার সামনে আসছে …
রাজ কেনো এরকম করছে ..
রাজ এখন কি চায় তার কাছে …
খালা মনি ভেবেছে শীতল অভিমান করে রাজকে ছেড়ে চলে এসেছে ..
খালাতো জানেনা রাজ করেছে তাদের আদরের শীতলের সাথে ….
.
.
.
শীতল বেডে বসে কাদঁছে …
আশ্বচর্যের বিষয় হলো এতক্ষনে শীতলের চোখের পানিতে শাড়ি ভিজে যাওয়ার কথা অথচ শাড়িটা ভেজা না একটুও ..
শীতল আড় চোখে তাকিয়ে রাজকে দেখতে পেলো ..
রাজ তার দই হাত দিয়ে শীতলের চোখের সামনে ধরে রেখেছে ..
এক ফোটা পানিও রাজ মাটিতে পড়তে দিচ্ছেনা …
.
.
.
_ডার্লিং নিজেকে আর কষ্ট দিয়ো না ..
একবার আমাকে সুযোগ দাও ..
দেখবে তোমার মুখে খুশিতে ভরিয়ে দেবো আজ পর্যন্ত তোমাকে যত কষ্ট দিয়েছি তার বদলে …
তোমার সকল কষ্টে আমার ভালোবাসার মলম লাগাবো …
.
.
.
শীতল হালকা গলায় বললো …
_এক বছরের নরক যন্ত্রনা এক রাতের মধ্যে ভুলে যাবো ???
শীতল বেড থেকে উঠে বসে ওয়াস রুমে চলে গেলো …
রাজ হাটু ঘেরে ফ্লোরে বসে বসে বসে ভাবলো …
শীতল ঠিক বলেছে ..
এতো দিনের কষ্ট এক রাতে ভোলা সম্ভব নয় …
.
.
.
বাট রাজ এতো সহজে হার মানার পাত্র নয় ..
সে শীতলের মান ভাঙিয়ে নিজের করে নেবেই ..
.
.
.
দুপুরে রাজ খালা মনির আদেশে টেবিলে খেতে বসেছে …
রাজ খাবার এখনো মুখে দেয়নি …
শীতলের জন্য ওয়েট করছে ….

শীতল সিড়ি দিয়ে রেডি হয়ে নামছে ….
রাজ শীতলকে দেখে অবাক হলো ….
শীতল শাড়ি ছেড়ে থ্রিপিজ পড়েছে …
শুধু তাই নয় গায়ের গয়না গাটিও সব খুলে ফেলেছে ..
নাকে রাজের দেওয়া নাকফুল খুলে ছোট মুক্তোর একটা নাকফুল পড়েছে …
খালা বললো …
_শীতল মা খেয়ে নে ..
সকালে খাসনি বলে জামাই বাবাজিও খায়নি …
_
শীতল রাজের পাশে বসলো …
রাজ টেবিলের নিচে তাকিয়ে আছে …
শীতলের এমন পরিবর্তন দেখে রাজের বুক ভেঙে যাচ্ছে …
.
.
.
শীতল চুপচাপ খাচ্ছে …
রাজও হালকা করে খাচ্ছে …
হঠাৎ শীতল অনুভব করলো …
তার হাটুতে কেউ হাত রেখেছে ..
এটা যে রাজের হাত তা ভাবতে একটুও সময় লাগলোনা …
.
.
.
শীতল খাওয়া ছেড়ে রাজের দিকে তাকালো আর রাগে ফুসতে থাকলো …
.
.
রাজ কানে কানে বললো…
তোমার এতো বড় সাহস হলো কি করে শাড়ি ছেড়ে সেলুয়ার কামিজ পড়ার ..
আর গয়না গুলো খুললে কেনো .??
এগুলো কি দোষ করেছে ??
শীতল ও ফিস ফিস করে বললো …
_এগুলো থাকলে আমার আপনার থেকে দূরে থাকতে সুবিধা হবে ..
এগুলো থাকলে আপনার কথা মনে পড়বে ..
আমি আপনাকে ভুলে যেতে ‌চায় …
.
.
.
রাজ কাটা চামিচ দিয়ে মাংস টা কে কুচি কুচি করছে রাগে …
এমন রাগ উঠছে তার জাস্ট বলার বাহিরে …
শীতল কে একা পেলে রাজ মজা বোঝাবে …
.
.
.
শীতল একটা কাজের জন্য একটা জায়গায় যাবে তাই বিকালে খালার বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে …
খালা তার অফিসে গেছেন দুপুরে একটা কাজে ..
গাড়ি নিয়ে গিয়েছেন ..
সেজন্য শীতল রোদের মধ্যেই টেক্সির জন্য ওয়েট করছে …
রাজের অসুস্থ থাকা কালিন শীতল তার বান্ধবিকে দিয়ে ভার্সিটি থেকে সব প্রয়োজনিয় পেপার সমূহ তুলে এনেছে …
রাজের কাছ থেকে চলে আসার পর তো তাকে কিছু একটা করতে হবে ..
বাবার বাসায় যাওয়া তো সম্ভব না …
.
.
.
হঠাৎ রাজ একটা কার নিয়ে শীতলের সামনে এলো ..
দরজা খুলে দিয়ে বললো …
_ডার্লিং এই কারে বসে কার টাকে ধন্য করো…
_No thanks ..
আমার দরকার নেই ..
শীতল রাস্তা দিয়ে হেটে হেটেই যেতে শুরু করলো রোদের মধ্যে …
.
.
.
রাজও স্লো করে ড্রাইভ করছে শীতলের পাশে পাশে ..
রাজ গান গাইছে শীতলকে শুনিয়ে শুনিয়ে …
_চুমকি চলেছে একা পথে ..
সঙ্গি হলে দোষ কি তাতে …
.
.
.
হঠাৎ একটা ছেলে এসে শীতলকে লিফ্ট দিলো আর শীতল কিছু না বলেই উঠে বসে চলে গেলো …
.
.
রাজের সামনে কেউ শীতলকে নিয়ে চলে গেলো ..এটা দেখে রাগের মাথায় আগুন জ্বলছে …
সে লোকটাকে খুন করবে …..❤❤❤
.
.
চলবে…..❤❤❤❤❤❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here