অবেলায় ভালোবাসি পর্ব ২৫+২৬

#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_২৫

রাতে খাবার খেতে বসলো ওরা। টুকিটাকি কথা বলছে ওরা। হুট করেই বলে উঠলো,

“মামনি আয়ানের বিয়েটাও দিয়ে দেও আমার বিয়ের সাথে! “, ইহরার কথা শুনে আয়ুশীর নাকে খাবার উঠে গেলো। কাশতে লাগলো ও। আয়ান অড়াতাড়ি ওঠে ওর মাথায় মৃদু চাপড় দিয়ে পানি খাইয়ে দিলো।

“খাওয়ার সময় এই জন্যই কথা বলতে নেই,দেখলি তো মেয়েটার কি হলো?”(নাহার)

ইহরা মুচকি হাসলো।

সবাই চুপচাপ খেয়ে উঠলো!

রাতে বিছানা ঠিক করছিল এমন সময় ইহরা এলো।

“আপু তুমি?”

“আজকে তোমার সাথে ঘুমাবো । তাই চলে এলাম।”

হাসলো আয়ুশী। ইহরাও ওর সাথে বিছানা ঠিক করতে লাগলো।

“কি বলবে বলে ফেলো আপু?”

“তুমি কিভাবে বুঝলে ?”

“গোছানো বিছানা আবার ঠিক করার কি মানে ?”

ইহরা জিহ্বায় কামড় দিয়ে হাসলো।
“আয়ানের সাথে সব ঠিক করে নিলেই তো পারো।”
আয়ুশী চমকে তাকালো। ইহরা হেসে বললো,”আমি সবটা জানি শুরু থেকে।”

“কি জানো?”

“এই যে তোমার আর আয়ানের দেখা হওয়া ,ঝগড়া – ঝাটি সব!”

“কিভাবে?”

ইহরা আয়ুশীকে নিয়ে নিজের পাশে বসালো!

“যখন দেশের বাইরে ছিলাম,তখন আয়ান আমাকে সব বলতো!”

“কি বলতো?”

“তখন সেভাবে কিছু না বললেও,তুমি কি কি করেছো সব বলেছে।শুধু প্রপোজের ব্যাপারটা বলেনি!”

“তুমি তার ফিয়নসে,বলাটা স্বাভাবিক!”

“ফিয়নসে হিসেবে নয়,একজন ভালো বন্ধু হিসেবেই বলতো!”

“ওহ!”

“আয়ান আমাদের বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকেই আমার সাথে ফ্রেন্ড এর থেকে বেশি কিছু হয়ে কথা বলতে চেষ্টা করতো!কিন্তু পারতো না।ওর মনে আমার জন্য কখনোই তেমন ফিলিংস আসেই নেই।আমি ব্যাপারটা বুঝতাম,তাই সব সময় অল্প কথা বলে কাজের বাহানা দিয়ে রেখে দিতাম।এতে আয়ান নিজেও স্বস্তি পেতো!”

“এসব হঠাৎ আমাকে কেনো বলছো?”

“আয়ান তোমারও আগে থেকে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। যেটা ও নিজেও জানতো না!”

আয়ুশী জিজ্ঞাশাসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।

“এই যে তোমাদের আলাপ থেকে শুরু করে সবটা যখন ও আমাকে বলতো না?তখন ওকে কেমন খুশি খুশি লাগতো!আমি তখন ওর কথা মন দিয়ে শুনতাম। ও নিজেও তখন জানতো না যে ও তোমাকে ভালোবাসে!”

“জোক মা’রা বন্ধ করো!আলাপের শুরুতেই কেউ প্রেমে পড়ে নাকি?”

“লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলে কথা আছে।এটা তুমি মানো বা না মানো!সেই থেকেই স্টোরি শুরু হয়!”

আয়ুশী চুপ রইলো!

“তুমি যেদিন বাড়ি ফিরতে দেরি করলে সেদিন ও পাগলের মত তোমার খোজ করেছে!এতটাই টেন্সড ছিল যে হিতাহিত জ্ঞান ভুলে রাস্তায় বসে ছিল। ফাহিন ভাইয়া গিয়ে নিয়ে এসেছে! সেদিনই ও ফিল করেছে ও তোমায় ভালোবাসে!”

“এখনও হবু জামাইকে ভাইয়া বলো?”

ইহরা ভরকে গেল।এই মেয়েকে বোঝাচ্ছে কি আর ও বলছে কি!

“তুমি আমার কথাটা এভাবে ইগনোর করছো কেনো?”

“যদি ভালোই বাসতো এনগেজমেন্ট তো করতো না কখনোই!”

“ভুল বুঝছো!”

“কিসের ভুল? হ্যাঁ মানছি তোমাদের বিয়ে আগে থেকে ঠিক ছিল,তাই বলে এভাবে সব মেনে নিবে?এটা ভাবলো না আরে যাকে ভালোবাসে তাকে না পাওয়ার আফসোস উনাকে সারাজীবন কাঁদাবে?”

“ওর কাছে ওর থেকেও ইম্পর্ট্যান্ট ওর মা বাবা!”

“মা বাবা সবার কাছেই ইম্পর্ট্যান্ট আপু!কিন্তু উনি আমাকে যেভাবে কষ্ট দিয়েছেন,যেভাবে অপমান করেছেন।সেখানে এসব আমি মানতে নারাজ!”

ইহরা হাসলো!

“তোমার রাগ করাটা স্বাভাবিক!কিন্তু একটা গল্প শুনবে?”

“গল্প?”

“আমি তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট!ক্লাস এইট থেকে ফাহিন ভাইয়াকে আমার ভালো লাগতো!উনিও আমাকে পছন্দ করতেন বেশ বুঝতাম!আমাদের মাঝে যেটা ছিল না সেটা হলো ভালোবাসি বলা!বিনা ভালোবাসি বলে,বিনা কোনো সম্পর্কে আমরা একে অপরের কেয়ার করতাম!কাজে কর্মে সব বুঝাতাম।এভাবেই বড় হাওয়া!আয়ানের থেকে বেশিরভাগ সময় ফাহিনের সাথেই থেকেছি আমি। আস্তে আস্তে ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা হলো।ইন্টারে কিছু দিন ছুটি পেয়েছিলাম!ওর মাঝেই মামনি আর বাবাই এর বিবাহ বার্ষিকী ছিল।তাই তিনজন আসলাম ছুটির নাম দিয়ে ওদের সারপ্রাইজ করতে!বাড়ি আসার পর এটাও ভেবেছিলাম মামনির সাথে ফাহিনের বিষয়টা শেয়ার করবো!কিন্তু তার কয়েকদিন আগেই আয়ানের এডপশন পেপার আয়ানের সামনে এসে পড়ে!”

“এডপশন?”

“হুমম!এটা আমি ছোট থেকেই জানতাম!যখন মা বাবা আকাশের তারা হয়েছিল তখন মামনিকে বলতাম,’ মা বাবা ছাড়া পরকে কেউ আপন করে নেয় না!’ সেই পরিপ্রেক্ষিতে মামনি একটা সত্যি বলেছিল!”

“কি সত্যি?”

“মামনি আর বাবাই এর কিছু কমপ্লিকেশন ছিল।ফলে মামনি মা হতে পারেনি কোনোদিন!বাবাই এর ফ্যামিলি নতি নাতনির জন্য প্রেসার দিচ্ছিল!তাই বাবাই আয়ানকে দত্তক নেয়!কিন্তু বাবাইয়ের ফ্যামিলির কেউ মেনে নেয়নি!মামনিকে নানা রকম কটু কথা শুনাতো!এক পর্যায়ে তারা বলে হয় মামনি আর আয়ান নয় বাবাই এর ফ্যামিলি যেকোনো একটা বেছে নিতে!মামনি ভেবেই নিয়েছিল বাবাই উনার ফ্যামিলিকে বেছে নিবে! হ্যাঁ!বাবাই ফ্যামিলিকেই বেছে নিয়েছে, তবে সেটা নিজের ছেলে আর স্ত্রীকে!বাবাই বাড়ি ছেড়ে শহরে এসে খেটে খুটে আস্তে আস্তে এই পর্যন্ত আসে!এর মাঝে আয়ানকে একবারও বুঝতে দেয়া হয়নি সে যে তাদের আসল ছেলে নয়! এডপশন এর বিষয় জানার পর আয়ান মামনি আর বাবাই এর কাছে সবটা জানতে চায় বলে ওদের কাছে যেতে নেয়!কিন্তু পথ আটকাই আমি!”

__________________________________

“কোথায় যাচ্ছো?”

“সত্যিটা জানতে!কেনো আমার থেকে এই সত্য লুকানো হলো সেটা জানতে!”

“কারণ তারা চায়না তুমি তাদের পর ভাবো!”

“তুমি সব জানো তাহলে?”

“হ্যাঁ জানি!মামনি বলেছে!”

“আমাকে কেনো বলেনি?”

“কারণ ওরা চায় না তুমি ওদের পালিত মা বাবা ভেবে সম্মান করো!”

আয়ান নিরুত্তর!

“এত বছর তোমার থেকে এই সত্যি লুকিয়েছে এই ভেবে,তুমি যদি জানো তুমি ওদের ছেলে নও,তখন ওদের পর ভেবে কিছু শেয়ার করবে না।বাবা মায়ের মত ভাববে না!”

আয়ান চুপচাপ বসে রইলো!

“প্লিজ আয়ান!ওদের এত বছরের কষ্ট এভাবে নষ্ট করো না!এগুলো ভুলে যাও!”

আয়ান পেপার গুলো ফেলে দিল! ইহরা মুচকি হাসলো!

“মামনি নিচে ডাকছে চলো!”

আয়ানকে নিয়ে নিচে যেতেই নাহার ওদের দুইজনকে পাশে বসালেন!

“ইহরা মা,তোর কাছে একটা প্রশ্ন করবো উত্তর দিবি?”

“কি মামনি?”

“আমার ছেলের বউ হবে?”

ইহরা ওখানেই থমকে গেলো।এক পলক ফাহিনের দিকে তাকালো! ফাহিন নিজেও বিস্মিত!

“কি হলো বলো?”

ইহরা নাহারের দিকে তাকালো!তার হাসি মুখটা দেখে নিজের সব ইচ্ছা বিসর্জন দিয়ে হ্যাঁ বলে দিলো!

“আয়ান তোমার কোনো আপত্তি আছে?”

আয়ান আর কি বলবে!যারা ওকে নিজের সন্তান না হওয়া সত্বেও নিজের সন্তান হিসেবে বড় করেছে।এমনকি ওকে জানতেও দেয় নি ও পালক সন্তান,সেখানে ওদের ইচ্ছে কেনো অবজ্ঞা করবে?তাই সেও সম্মতি দিলো।দুইজনার সম্মতি পেয়ে ঠিক হলো ওদের পড়াশোনা শেষে বিয়ে হবে!

__________________________________

“আয়ান রাজি হলো ওদের ইচ্ছে পূরণ করতে আর আমি হলাম ওদের হাসি মুখটা হাসিতে ভরিয়ে রাখতে!তারপর ওর জীবনে তুমি এলে আর সব ওলোট পালোট হয়ে গেলো।যদি এটা সেই ঘটনার কয়েকদিন পর হতো তাও আয়ান হয়তো ওর মা বাবাকে বোঝাতো!কিন্তু বিয়ে ঠিক হওয়ার এত বছর পর হুট করে ও কিভাবে বলতো?একদিকে ছিলাম আমি!ওর ধারণা ছিল আমায় এই মুহূর্তে না করলে আমার কি হবে?আরেকদিকে ওর মা বাবা!তাই ওর ইচ্ছে থাকলেও না করতে পারেনি ও!”
আয়ুশী নিরুত্তর।

“সব শোনার পরও যদি মনে হয় আয়ান না আটকিয়ে ভুল করেছে,তাহলে তুমি যা করবে তাই মেনে নিবো!”

“গুড নাইট আমার ঘুম পাচ্ছে!”

বলেই কাঁথা মুরো দিয়ে শুয়ে পড়লো। ইহরা হেসে লাইট অফ করে ওর পাশে শুয়ে পড়লো!

সকাল সকাল রান্নাঘরে এসে দাঁড়িয়েছে আয়ুশী। ও জানে এখন নাহার কফি বানাবে আয়ানের জন্য!যখন আয়ুশীকে দেখবে তখন ওকেই বলবে দিয়ে আসতে!যেই ধারণা সেই কাজ!নাহার আয়ুশীকে বললো কফি দিয়ে আসতে! আয়ুশীও খুশি মনে উপরে গেলো।দরজায় বেশ কয়েকবার নক করার পরেও ভিতর থেকে কোনো রেসপন্স আসলো না!রুমের ভিতরে উকি দিতেই দেখলো রুম ফাঁকা! আয়ান বাথরুমে গেছে ভেবে কফি টেবিলে রেখে ঢেকে রাখলো যাতে ঠাণ্ডা না হয়!একটু ঘুর ঘুর করে অপেক্ষা করলো আয়ানের বের হওয়ার!কিন্তু না ওর কোনো খবর নেই!অবশেষে বেলকনিতে চোখ পড়তেই ,”আল্লাহ গো !” বলে বুকে থু থু দিলো!বুকে হাত গুজে বেলকনির দরজার একটু সাইডে দাড়িয়ে আছে আয়ান!ঠোঁট চেপে হাসি আটকে রেখেছে!আয়ুশী এখানে এসেছে যখন থেকে তখন থেকেই ও ওখানে দাঁড়িয়ে আছে।আয়ুশী কি করে দেখতে!আয়ুশী নিজের ভাবনায় এতটাই বিভোর ছিল যে বাথরুমের দরজা ছাড়া অন্য কোনো দিকে আর তাকায়নি! আয়ান ট্রাউজারের পকেটে হাত গুজে বললো,”মিস ঝামেলা!”

আয়ুশী ঢোক গিলে ,একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,”ছোট আম্মু বললো কফি দিয়ে আসতে আরকি!”

“ও আচ্ছা!”

আয়ুশী বের হবার জন্য পা বাড়াতে নিলেই আয়ান বলে উঠলো,”তাহলে তো কফি রেখে চলে যাওয়ার কথা!বাথরুমের দরজায় উকি ঝুঁকি মা’রছিলে কেনো?”

“ও হ্যালো,এত জিজ্ঞাসার কি আছে?দেখছিলাম আপনি কখন বের হন!দেরি হলে তো কফি তো ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তাই না?”

“তাই?”

বলেই আয়ুশীর সামনে আসলো ও!

“হ্যাঁ এছাড়া আর কি হবে?”

আয়ান ওর কানের কাছে ঝুঁকে বললো,”আমার খোজ করছিলেন!দেখতে এসেছিলেন আমাকে! এম আই রাইট,মিস ঝা’মেলা?”

আয়ুশী কিছুটা সরে গিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,”বয়েই গেছে আপনাকে দেখতে আসতে!আপনি কোনো সেলিব্রিটি নাকি?ভাগেন!”

“তাই!”

বলেই আরেক পা এগিয়ে আসতে নিলেই আয়ুশী ‘আম্মু ‘ বলে এক দৌড়ে বাইরে চলে গেলো।সেই দেখে আয়ান জোড়ে হেসে দিল!

#চলবে#অবেলায়_ভালোবাসি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_২৬

সবে ব্রেক টাইম পড়লো আয়ুশীদের।আজকে সীমা বা ইভা কেউ ই আসেনি!ইভা আজকে জুনাইদের বাড়িতে যাবে!ওদের বিয়ে সামনের মাসে! জুনাইদের মা ইভাকে ডেকেছেন,তাই আজকে আর আসবে না ও।আর সীমার জ্বর!আয়ুশী ভেবে রেখেছে ক্লাস শেষে গিয়ে দেখে আসবে! বোরিং ভাবে ব্রেক টাইম পার হলো!নেক্সট ক্লাসের প্রস্তুতি নিবে তখনই চোখ গেলো দরজায়! ইহরা ওকে ডাকছে।আয়ুশী উঠে দরজার কাছে গেলো!

“আপু তুমি?”

“ব্যাগ আনো নি কেনো?ব্যাগ নিয়ে আসো!”

“কেনো?”

“আরে আগে আনো তো, ঐটাতে একটা জিনিস আছে!”

“কি জিনিস?”

“উফফ… আনো তো আগে!”

আয়ুশী কিছু বুঝতে না পেরে ব্যাগ নিয়ে এলো। ইহরার দিকে এগিয়ে দিতেই ইহরা ব্যাগ না ধরে ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো!

“আরে আপু কই নিয়ে যাচ্ছো?”

ইহরা উত্তর না দিয়ে ওকে গাড়ির ব্যাক সিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে পড়লো।

“কি হলো হঠাৎ তোমার?”

“ঘুরতে যাবো এখন আমরা!”

“তো এটা মুখে বললে কি আমি আসতাম না নাকি?”

“নাও আসতে!ঠিক নাই!”

তখনই আয়ুশীর ডান দিকের সিটের দরজা খুলে হুমড়ি খেয়ে পড়লো আয়ান! আয়ানকে দেখে চোখ বড় বড় কর ইহরার দিকে তাকালো ও!

গাড়ির দরজা আটকিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো ফাহিন!মূলত সেও আয়ানকে টেনেই এনেছে।

“এসব কি ?”

ফাহিন উত্তর দিলো না। ইহরা বলে উঠলো,

“সামনে আমাদের বিয়ে আর দুইজন বসে বসে ক্লাস করবে ,এটা তো হচ্ছে না!এখন আমরা শপিং এ যাবো!তারপর ঘুরবো ..”

আয়ান গম্ভীর গলায় বললো,”তো মুখে বললেই তো হতো ,টেনে আনার কি হলো?আমি তো বলেও আসেনি!আমার আরও একটা ক্লাস নেয়া বাকি আছে!”

ফাহিন ততক্ষণে গাড়ি চালানো শুরু করে দিয়েছে!

“আমি বলে দিয়েছি,তুই একটু জরুরি কাজে আমাদের সাথে যাচ্ছিস!তোর ক্লাস অন্য কেউ নিয়ে নিবে!আর আঙ্কেলের ছেলে বলে কিছু বলেও নি তেমন!”(ফাহিন)

আয়ুশী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে!এক দিকে ভালোই হলো,একা একা ক্লাস পুরাই বিরক্তকর!ওরা তিনজন গল্প করছে এর মাঝেই ফাহিন বলে উঠলো,”কি ব্যাপার আয়ুশী?এত চুপচাপ যে?”

আয়ুশী মুখ ভার করে বললো,”আমাকে তো কেউ পাত্তাই দিচ্ছেন না!মাঝখানে এই মিষ্টার খারুশ কে আমার পাশে বসাইছেন!আপু বসলেও তো পারতে!”

“ওয়েট, কি বললে?”

“কি বললাম?”

“আমাকে কি বললে?”

“আপনাকে আবার কি বললাম?”

“একটু আগেই তো বললে!”

“একটু আগেই কি বললাম?”

আয়ান ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে রইলো!আয়ুশী নির্লিপ্ত হয়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ঘাটতে লাগলো!

“তুমি আমাকে খারুশ বললে?”

আয়ুশী ফোনের দিকে তাকিয়েই বললো,”শুনতেই তো পাইছেন!আবার জিগান কেনো?”

“খারুশ মানে কি?”

ইহরা বলে উঠলো,”যারা কথায় কথায় গরম তেলে পানি পড়ার মত ছ্যাত করে উঠে!”

ইহরার বর্ণনা শুনে হেসে দিলো ফাহিন আর আয়ুশী! আয়ান বেশ রেগেই বললো,

“তো আমি ছ্যাত করে কখন উঠলাম?”

সাথে সাথেই ইহরা আর আয়ুশী ওর দিকে তাকালো!এতে আয়ান ভরকে গেলো!

“এইযে এখন যেভাবে ছ্যাত করে উঠলেন!সেভাবেই!”

“এক দিবো ধরে গালে যে দুই দিন ভাত খেতে পারবে না!”

“হ্যাঁ!আমার গাল তো আপনার প্রাইভেট সম্পত্তি কিনা!যে যখন-তখন,যেখানে-সেখানে, একটা-দুইটা করে ঠাস করে দিয়ে দিবেন!”(আয়ুশী)

আয়ান হতভম্ভ হয়ে রইলো।ওদের কাহিনী দেখে ইহরা আর ফাহিন ঠোঁট চেপে হাসছে! আয়ান বির বির করে বললো,”পা’গল!”

“সরি টু সে!আপনার বির বির করার লেভেল অনেক ঢিলা!বির বির করে বললেও আমার কানে,এমনকি সামনে থাকা ইহরা আপুর কানেও যাচ্ছে!”

আয়ান কপালে হাত দিলো। ফাহিন জোড়ে হেসে বললো,”ব্রো,তোকে আগেই বলেছি!আর যাই কর মেয়েদের সাথে তর্ক করিস না!জীবনেও জিততে পারবি না!”

“পা’গলের সাথে তর্ক করলে নিজেকে মূ’র্খই প্রমাণ করা হবে!চুপ থাকাই বেটার!”

“এটা ঠিক না আয়ান!তুমি কিন্তু কথাটা আমাকেও মিন করেই বললে!”

“কে জানে!”(আয়ান)

আয়ুশী কিছু বলবে তার আগেই ফাহিন বলে উঠলো,”নামো,চলে এসেছি!”

তাই আর কেউ কিছু না বলেই নেমে গেলো।ঘুরে ঘুরে শপিং করতে লাগলো ওরা!প্রথমে একটা শাড়ির দোকানে ঢুকলো!আয়ুশী আর ইহরা মিলে দেখছে!নাহার নিজেই আসতো!কিন্তু ইদানিং তার শরীর খুব একটা ভালো না বলে ওরাই এসেছে!হুট করেই একটা বেবি পিংক রঙের একটা শাড়িতে চোখ গেলো আয়ুশীর!দোকানদার কে বলে ওই শাড়িটা দিতে বললো। শাড়ির পাড়ে নেভি ব্লু রঙের কম্বিনেশনটা অস্থির!হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতেই পাশ থেকে কেউ একজন বললো,”নিয়ে নেও!দারুন লাগবে মিস ঝামেলা!”

আয়ুশী আয়ানের দিকে তাকালো!ওর আড়ালে মুচকি হেসে ইহরাকে বললো,”আপু এটা তোমাকে না দারুন মানাবে!”

আয়ান হতভম্ভ হয়ে রইলো! ফাহিন ও সহমত দিলো!

“না,এমনেই গায়ে হলুদে হলুদ শাড়ি নিয়েছি!আর বিয়ের একটা!আর বৌ ভাতেরও!আর আমার তো ওই শাড়িটা নিতে মন চাইছে!দেখো কি সুন্দর!”

হালকা বেগুনি আর গাঢ় বেগুনির কম্বিনেশনে কাজ করা একটা শাড়ি নিলো ইহরা! আয়ান বিরক্তিতে ফোন স্ক্রল করছে!মানছে ওর ভুল অনেক!তাই বলে এমন করবে আয়ুশী?
আয়ুশী নিজের জন্য দুইটা শাড়ি নিলো।

“আয়ু,তুমি দুইটা কেনো নিয়েছো?অনুষ্ঠান অনুযায়ী তো তিনটা নেয়ার কথা!”

আয়ুশী আড়চোখে আয়ানের দিকে তাকালো।

“আরেকটা পেয়ে যাবো সময় মত!”

ইহরা ঠিক বুঝতে পারলো না!এরপর ওরা গেলো কসমেটিক এর দোকানে! ইহরা নিজের বিয়ের গহনা কিনছে!ভিডিও কলে নাহারকে দেখাচ্ছে ,কোনটা ভালো লাগে দেখতে!আয়ুশী দোকানে ঘুর ঘুর করতেই দেখলো দোকানের সামনে বস্তা বিছিয়ে এক ছেলে ঝুড়িতে করে কাচের চুড়ি নিয়ে বসেছে!আয়ুশী ইহরাকে বলে বাইরে এলো।এক হাঁটু গেরে বসে চুড়ি দেখতে লাগলো!

“চুড়ি নিবে?”

আয়ানের আওয়াজ শুনে উঠে যেতে নিলেই আয়ান বলে উঠলো,”এক পাও নড়লে তুলে আছার মা’রবো!”

আয়ুশী ভ্রু কুঁচকে তাকালো!
আয়ান ওর পাশে ওর মত করেই বসলো!

“চয়েস করো!আমি নিয়ে দিবো!”

“হুহ!আপনি চুড়ি কিনে দিবেন আর সেই চুড়ি আমি পড়বো? হাউ ফানি!”

“আমার দেয়া ব্রেসলেট তো ঠিকই পড়ে আছো!”

আয়ুশী হাত লুকাতে নিলেই আয়ান আবার বললো,”লুকিয়ে লাভ কি,দেখেই ফেলেছি!”

“লুকাচ্ছি কই?আর ভালো লেগেছে তাই পড়েছি!তাই বলে যে সব নিবো এমন কোনো কথা নেই!”

“তোমার সমস্যাটা কোথায়?মানছি ভুল করেছি!তাই বলে শুধরানোর সুযোগ দিবে না?”

“বারে আমি কে দেয়ার?”

“উফফ..

আয়ুশী ঠোঁট চেপে হাসলো!

“কিছু কিছু ক্ষেত্রে অধিকারবোধ দেখানো যায় মিষ্টার!”

আয়ান কিছুক্ষণ তাকিয়ে কথার মানে বুঝতে চাইলো।অতঃপর বুঝতে পেরে চুড়ির ঝুড়িতে চোখ বুলালো!আয়ুশীর ড্রেসের সাথে মিলিয়ে এক মুঠো চুড়ি দিতে বললো ছেলেটিকে!ছেলেটি খুঁজে আয়ুশীর হাতের মাপের চুড়ি বের করলো।চেক করে নিতে আয়ুশীকে বললো,”আফা হাত দেন!”

আয়ুশী হাত দিতে নিলেই আয়ান ছেলেটির হাত থেকে চুড়ি নিয়ে নিজে পড়িয়ে দিতে দিতে বললো,”এই হাতে চুড়ি পড়ানোর অধিকার আজ থেকে আমি নিলাম!”

আয়ুশী মুচকি হেসে চুড়ির দিকে তাকালো!

“চুড়ি নিয়েছি বলে আমার রাগ কমে গেছে ভাবার কারণ নেই মিষ্টার!এত সহজে গলছি না আমি!”

বলেই উঠে আবার দোকানে গেলো! আয়ান মুচকি হেসে ওখান থেকে চার মুঠো নীল চুড়ি নিলো!টাকা দিয়ে নিজের অন্য কাজে গেলো!

কেনাকাটা শেষে ফিরবে বলে বেরিয়ে আসতেই ইহরা বলে উঠলো,”আয়ান কই?”

আয়ুশী ও বেশ অনেকক্ষণ ওকে দেখেনি! ফাহিন ফোন দিতেই আয়ান ওদের গাড়ির কাছে আসতে বলে!সবাই ওর কথা মত গাড়ির কাছে আসে!বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়! ফিরেই সবাই ফ্রেশ হতে চলে যায়!

__________________________________

বিছানায় কাঁথা মুড়ো দিয়ে শুয়ে আছে সীমা!জ্বর আগের তুলনায় কমেছে!কিন্তু তাও উঠতে মন চাইছে না ওর!দুপুরে বাবা অনেকবার খেয়ে নিতে বলেছে।কিন্তু ওর কোনো হেলদোল ও নেই!ওর মামা আর নাহিম কাজে গেছে! রাতেও না খেয়েই শুয়ে আছে!তাই শেষ মেষ বাধ্য হয়েই নাহিমকে ফোন দিলেন!নিজে তো আর একা একা বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেন না!উনার দেখা শোনা করার জন্য যেই লোক রেখেছে সেই লোকের সাহায্যে কয়বার গিয়ে ডেকেও এসেছে।কিন্তু ও সেভাবেই শুয়ে আছে!সবটা শুনার পর নাহিম আসছে বলে রেখে দেয়!কিছুক্ষণের মাঝে চলেও আসে।খাবার হাতে নিয়ে সীমার রুমে যেতেই দেখে সীমা এখনও শুয়ে আছে!

“সীমা!”

“বাবা প্লিজ! পরে খাবো!”

“পরে পরে করতে করতে রাত করে ফেলেছিস!আর আমি তোর বাবা না…”

সীমা কাঁথা সরিয়ে নাহিমকে দেখে বললো,”আমি খাবো না ভাইয়া,যান তো!”

নাহিম কথা না শুনে ওকে টেনে উঠিয়ে খাইয়ে দিলো!ওষুধ খাইয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,”এখন ঘুমা!রাতে বেশি খারাপ লাগলে ডাক দিবি নাইলে খবর আছে!”

বলেই বেরিয়ে গেলো।সীমা মুচকি হেসে আবার শুয়ে পড়লো।এমন কেয়ারিং কে না পেতে চায়?

__________________________________

খাওয়া দাওয়ার পর্যায় শেষে নিজের রুমে গেলো সবাই!আয়ুশী নিজের রুমে গিয়ে বিছানা ঝাড়তে গেলেই একটা শপিং ব্যাগ দেখলো!দোকানের পছন্দ করা সেই শাড়ি আর নীল চুড়ি।সাথে কিছু সেফটিপিন আর এক জোড়া সিলভার ঝুমকা যেটা কিছুটা রঙিন পাথর দিয়ে তৈরি!শাড়ির সাথে মানানসই করেই যে সব কিনা বোঝাই যাচ্ছে!সাথে একটা চিরকুট!

“এত রাগ স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো না মিস ঝামেলা!মাঝে মাঝে একটু না রেগে দয়া মায়া করবেন!দেখবেন শান্তি পাবেন!”

মৃদু হেসে আরেকবার জিনিসগুলোতে চোখ বুলালো!হুট করেই মন বিষিয়ে উঠলো ওর!কেমন একটা মনে হচ্ছে!এই বুঝি খা’রাপ কিছু হবে!লম্বা শ্বাস নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ও।

__________________________________

হাসি-মজা,খুনসুটিতে কেঁ’টে গেলো এক সপ্তাহ!এখন শুরু ইহরার বিয়ের আয়োজন! সকাল থেকে ব্যাস্ত আয়ুশী!কখনো এদিকে যাচ্ছে ,তো কখনো ওদিকে! আয়ানও সেই সাথে ব্যাস্ত।হাজার হোক বিয়ে বলে কথা!
কাজের জন্য আয়ানের কাছে আসছিলো আয়ুশী!হলুদের জন্য স্টেজ কি এখানে করবে নাকি ছাদে,সেটাই জিজ্ঞেস করতে আসলো।কিছু বলবে তার আগেই কেউ একজন আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।এদিকে আয়ুশীর সামনে এমন হওয়ায় হকচকিয়ে গেলো আয়ান!আয়ুশীর অবাক হওয়া চেহারাটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো।দুর থেকে এমন পরিস্থিতি দেখে ছুটে এলো ইহরা।মেয়েটিকে আয়ানের থেকে ছাড়িয়ে নিজে জড়িয়ে ধরে বললো,”ডেইজি আপু!কেমন আছো?”

“ভালো তুমি?”

নাম শুনেই আয়ুশী বুঝলো এটাই আয়ান আর ফাহিনের বিদেশী বন্ধুটা!

“তুই হঠাৎ এলি যে?”(আয়ান)

“তুই আমাকে ইভাইট নাই করতে পারিস!কিন্তু ফাহিন ঠিকই করেছে!ভাবলাম তোকে সারপ্রাইজ দেই!”

আয়ান মেকি হেসে বললো,”আসলেই সারপ্রাইজড আমি!”

“ও কে?”

আয়ুশী কে দেখে বললো ডেইজি! আয়ান কিছু বলবে তার আগেই ইহরা বললো,”আমার বোন!”

“ওহ!হেই আমি ডেইজি,আয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড!তুমি?”

হাত এগিয়ে দিয়ে বললো!

“আমি আয়ুশী! নাইস টু মিট ইউ!”

বলেই এক পলক আয়ানের দিকে তাকিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো!

“ইহরা তোমার বোন আছে আগে জানতাম না তো!”

“কখনো টপিক উঠেনি তাই জানো না আপু!তবে ওর আরেকটা পরিচয় আছে!”

“কি?”

ইহরা আয়ানের দিকে তাকাতেই আয়ান বললো,”আমার হবু বউ!”

“হোয়াট?”

“ইয়েস!”

ডেইজি মনে হয় ঠিক বিশ্বাস করতে পারলো না!তাও হাসি মুখে বললো,”ওয়াও অভিনন্দন!”

“থ্যাংকস,আমি একটু আসছি!”,বলেই আয়ুশীর খোঁজে গেলো ও!

নিজের রুমে এদিক ওদিক পায়চারি করছে আয়ুশী।ভীষণ রাগ হচ্ছে ওর!আরে বেস্ট ফ্রেন্ড ঠিক আছে তাই বলে এভাবে জড়িয়ে ধরে কেউ?

“শান্ত হ আয়ু,ওটা উনার ফ্রেন্ড!বাট ফ্রেন্ড হলেই কি জড়িয়ে ধরবে নাকি আজব?না,ধরতেই পারে!বিদেশে থাকে..এগুলো নরমাল!কিন্তু এটা তো বাংলাদেশ!মিনিমাম কমনসেন্স নেই নাকি?আজব!উফফ…আয়ু এই খারুশের চক্করে তুই পা’গ’ল হয়ে যাবি রে!”

এমন হাজার বিলাপ করে নিজেকে সামলিয়ে রুমের বাইরে বের হতেই আয়ানের সামনে পড়লো ও!রাগী চোখে তাকিয়ে ওর পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে আয়ান ওর পথ আটকে দাড়ালো!অন্য পাশ দিয়ে যেতে নিলে আবার পথ আটকিয়ে দাড়ালো!বুকে হাত গুজে আয়ুশী জিজ্ঞেস করলো,”সমস্যা কি?”

“কিছু কথা ছিল!”

“কিন্তু আমার কোনো কথা নেই!”

“আরে শুনো তো!”

“আমার অনেক কাজ আছে!”

“পাঁচ মিনিট!”

আয়ুশী দাড়িয়ে গেলো।আয়ানের পিছন দিয়ে নাহারকে যেতে দেখে ডাক দিল ,”ছোট আম্মু!”

মায়ের কথা শুনে আয়ান সাইড হয়ে গেলো!সেই ফাঁকেই আয়ুশী চলে গেলো! ও জানে এই মুহুর্তে আয়ান ওকে এক্সপ্লেইনেশন দিবে! যা শুনার ইচ্ছে এক ফোঁটাও নেই ওর!

“হেই আতুশি!”

নিজের নাম এমন অবস্থা দেখে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম!কই আয়ুশী আর কই আতুশি!পুরো নাম টাই পাল্টে ফেললো ওই ডেইজি!

“কি হলো আতুশি?”
বিদেশেই জন্ম,ওখানেই থেকেছে বলে বাংলা খুব একটা রপ্ত করতে পারেনি বেশ বুঝা যাচ্ছে।তবে অতটাও খারাপ বলা যায় না এটাকে!আয়ুশী একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,”আতুশি না আয়ুশী!”

“ওহ হায়ুশী রাইট?”

চোখ বন্ধ করে দম নিলো ও!না না,কুল থাকতে হবে!

“হা না আ..আয়ুশী!”

“ওহ আয়ুশী!”

“হ্যাঁ এটাই!”

“ওহ, তা শুনলাম তুমি নাকি আয়ানের উড বি!”

ভ্রু কুঁচকে তাকালো ।

“এটা আপনাকে কে বললো?”

“আয়ান!”

আয়ুশী এক পলক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আয়ানের দিকে তাকালো! সে তো কাজে বিজি! দাত কেলিয়ে ডেইজি কে উত্তর দিলো,”জি!”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here