অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব -০৪

#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#প্রথম_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ4

কাউচের উপর মুখোমুখি হয়ে বসে আছে শান আর রুশা। রুশার মাথার কা*টা অংশ থেকে ব্লাড বের হতে হতে এখন শুকিয়ে সে জায়গায় একটা আস্তরন পড়ে গেছে। ব্লাড পড়াটা বন্ধ হলেও ব‍্যাথার পরিমানটা আগের থেকে আরো বেড়েছে। কিন্তু সামনে বসে থাকা ব‍্যাক্তিটার সেদিকে একটুও খেয়াল নেই। সে খুব মনোযোগ দিয়ে একটা ফাইল উল্টেপাল্টে দেখছে। রুশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কোনো মানুষ এতটাও নির্দয় হতে পারে রুশার জানা ছিল না। ‘ও’ ওর কপালে হাত দিয়ে ব‍্যাথা জায়গাটায় হাত বোলাতে থাকে। আয়াশ ধাক্কা দেওয়ার কারনে যেখান থেকে কপালটা কেটে ছিল সেখান থেকেও ব‍্যান্ডেজ টা উঠে গেছে। এখন কপাল আর মাথার আঘাতের জন‍্যে রুশা ভালো করে চোখ খুলে তাকাতে অবদি পারছে না। ‘ও’ কাউচের সাথে হেলান দিয়ে বসে খানিকটা বিরক্তির স্বরে বলল,

–“কিছু বলার থাকলে বলুন। নাহলে আমাকে যেতে দিন মিঃ রায়জাদা। বসে বসে আপনার চেহারা দেখা ছাড়াও আমার আরো অনেক কাজ আছে।”

রুশার কথা শুনে শান ফাইল থেকে চোখ উঠিয়ে ওর দিকে তাকাল। তারপর ফাইলগুলো টেবিলের উপর রেখে পাঁয়ের উপর পাঁ তুলে আড়াম করে বসে বলল,

–“আপাতত বসে বসে আমার চেহারা দেখা ছাড়া আপনার আর কোনো কাজ নেই ডাক্তার সাহেবা। কারন আমার পারমিশন ছাড়া তো আপনি কোথাও যেতে পারবেন না।”

রুশার বিরক্তির মাত্রাটা বেড়ে গেল। ‘ও’ কণ্ঠে রাগ নিয়ে বলল,
–“আরেহ আশ্চর্য তো! আপনি অযথা আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কোন কারনে? আপনার সাথে তো আমার কোনো শত্রুতা নেই। কখনোও ছিলোও না। তাহলে এসব আজাইরা কাজ করার মানে কি?”

শান শান্ত গলায় বলল,
–“আমার সামনে বসে গলা উচিয়ে কথা বলাটা আমার একদম পছন্দ না মিস রুশা। সো, ভুলেও এই কাজটা করবে না।”

কথাটা বলে শান একটা ফাইল রুশার দিকে এগিয়ে দিল। রুশা ফাইলের দিকে একবার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আরেকবার শানের দিকে তাকাল। শান শান্ত-গম্ভীর গলায় বলল,

–“এখানে কিছু পেপার’স আছে। পেপার’স গুলোর ভিতরের লাল কালি দিয়ে মার্ক করা জায়গা গুলোতে একটা করে সাইন করে দিন।”

রুশা প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে শানের দিকে তাকিয়ে বলল,
–“কিসের ফাইল এটা? আর এতে আমার সাইনের প্রয়োজন পড়ল কোন দুঃখে?”

শান স্থির ধারাল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল রুশার দিকে। তারপর জোড়াল কণ্ঠে বলল,

–“কোনো প্রশ্ন করবেন না। কারন এই মুহূর্তে আপনার কোনো প্রশ্নের উত্তর আপনি পাবেন না। তাই কথা না বাড়িয়ে সাইন করে দিন। একমাত্র এই পেপার’স গুলোতে সাইন করলেই আপনাকে এখান থেকে যেতে দেওয়া হবে। নাহলে সারা জীবন আপনাকে এখানে বসে বসে দেয়ালে মাথা ঠুকে ম*রতে হবে। নাউ চয়েজ ইস ইউর’স।”

এই ঘাড়ত‍্যাড়া লোকটার সাথে রুশার আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে হলো না। ওর মাথার মধ‍্যে বড্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। এই মুহূর্তে ওর মেডিসিন আর রেস্টের প্রয়োজন। যেটা ‘ও’ এখানে থাকলে কোনো ভাবেই পাবে না। তাই কাঁপাকাঁপা হাতে পেপার গুলো উঠিয়ে হাতে নিল। ফাইলের কভারটা উল্টে পড়তে নিলেই চোখের সামনে সব ঘোলা হয়ে আসলো। এর মধ‍্যেই শান নিজের জায়গা থেকে উঠে এসে রুশার পাশে বসে পড়ল। রুশা ঘোলা চোখে শানের দিকে তাকাতেই শান ওর এক হাত পেপারের উপরের লেখা অংশটায় রেখে লেখাটা ঢেকে ফেলল। তারপর রুশাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলল,

–“সরি ডাক্তার সাহেবা, এই লেখাগুলো তো আপনি পড়তে পারবেন না। এই গুলো পড়ার আপনার কোনো দরকারও নেই। চুপচাপ সাইন টা করে দিন।”

রুশা ঘায়েল হওয়া দৃষ্টিতে শানের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুশতে লাগল। শান একটা হু কেয়ারস ভাব নিয়ে বসে রইল। রুশার কাছে হারানোর মতো কিছুই নেই। টাকা-পয়সা, জায়গা-জমি, বাড়ি, গাড়ি এসব কিচ্ছু হারিয়ে ফেলার ভয় ওর নেই। ‘ও’ খুব সাধারন একটা মেয়ে। সাধারন একটা জব করে, খুব সাধারন ভাবে নিজের লাইফ লিড করে। প্রচুর পরিমানে অর্থ সম্পদ ওর নেই। যতটুকু আছে সেটা দিয়ে হয়ত শান রায়জাদার মতো মানুষের এক মাসের হাত খরচাও হবে না। তাই রুশা আর বেশি কিছু না ভেবেই একে একে সব পেপারে সাইন করে দিল। রুশা জানে না এই পেপার গুলোতে কি আছে। আপাতত এসব কিছু ‘ও’ জানতেও চায় না। ‘ও’ এই মুহূর্তে যেকোনো মূল‍্যে এখান থেকে শুধু বের হতে চায়।

রুশা পেপার গুলোতে সাইন করে দিতেই শান একটানে ফাইলটা নিজের হাতে নিয়ে গেল। তারপর ফাইল টা আবারও খুলে রুশার সাইন গুলো খুটিতে খুটিয়ে দেখতে লাগল। রুশা দেখল শানের ঠোঁটে একটা অদ্ভুত তৃপ্তিময় হাঁসি ফুটে আছে। মনে হচ্ছে ওর খুব কাঙ্খিত জিনিসটা ‘ও’ হাছিল করতে পেরেছে। ফাইলের দিকে দৃষ্টি রেখেই শান গলা ছেড়ে ওর পার্সনাল অ‍্যাসিটেন্টকে ডাকল। একবার ডাকতেই মেইন ডোর খুলে জোভান বাসার ভিতরে ঢুকল। তারপর এগিয়ে এসে শানের সামনে দাড়াল। শান ফাইলটাকে বন্ধ করে জোভানকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলল,

–“রুশা ম‍্যামকে সহি সালামত ওনার বাসার সামনে ড্রপ করে দিয়ে আসো। ম‍্যাডামের এখানের সব কাজ সম্পূর্ন হয়েছে।”

জোভান শানের কথায় সম্মতি জানিয়ে রুশার সামনে গিয়ে দাড়াল। তারপর নম্র হয়ে বলল,

–“চলুন ম‍্যাম।”

রুশা বসা থেকে উঠে দাড়াল। এগিয়ে এসে শানের সামনে দাড়িয়ে কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলল,

–“আশা করি আপনার এই ডিসগাস্টিং চেহারা’টা আমাকে আর কখনো দেখতে হবে না। গুড বাই ফর লাইফ টাইম।”

রুশার কথা শুনে শান ঠোঁট কামড়ে হাসল। রুশা রাগে গজগজ করতে করতে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। ওর পিছনে পিছনে জোভানও গেল। হঠাৎ করেই শান পিছন থেকে জোভানকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলে উঠল,

–“জোভান তোমাকে যেতে হবে না। আজকে বরং মিসের রায়জাদাকে আমিই ওনার বাসায় পৌছে দিয়ে আসি।”

শানের কথা কানে যেতেই রুশার পাঁ জোড়া থমকে গেল। ‘ও’ পিছনে ঘুরে অবাক দৃস্টিতে শানের দিকে তাকাল। শান রুশার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ মারল। রুশা এতে অবাকের চরম সীমান্তে পৌছে গেল।
_________________________

সময় অতিবাহিত হয় তার নিজের গতিতে। দেখতে দেখতে কেটে গেছে পুরো একটা মাস। এর মধ‍্যে আর রুশার সাথে শানের দেখা হয়নি। সেদিন রুশাকে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে শান সেই যে গেছে তারপর আর ওর ছায়াটাও দেখেনি রুশা। কিন্তু শানের রুশাকে মিসেস রায়জাদা বলে সম্মোধন করাটা রুশাকে প্রতিনিয়ত ভাবায়। ‘ও’ শানের ওই কথাটার মানে খুজে বের করতে করতে পাগল প্রায়। কিন্তু ওর এটা ভেবে অদ্ভুত লাগছে, একটা ছেলের সাথে ওর মাত্র আধ ঘন্টা সময় কথা হয়েছিল। ছেলেটা হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা শব্দই ওকে বলেছিল। অথচ সেই কয়েকটা শব্দই ওর এই এক মাসের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। রুশার মনে হচ্ছে শান ওর জীবনে কোনো কালবৈশাখী ঝড়ের মতো এসে খানিকক্ষণের মধ‍্যে ওর জীবনটাকে পুরো উল্টে পাল্টে দিয়ে গেছে। যেভাবে দুই বছর আগে হঠাৎ করেই ঘূর্ণিঝড় হয়ে ওদের শান্তিপূর্ণ জীবনটাকে অশান্তিতে বদলে দিতে শান নামক ব‍্যাক্তির আগমন হয়েছিল ওদের জীবনে।

রুশা নিজের কেবিনের জানালার পাশে দাড়িয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি রেখে ডুব দিল সাত বছর আগের অতীতে। তখন রুশা ক‍্যালিফোর্নিয়ার লস অ‍্যাঞ্জেলস শহর থেকে সবেমাত্র হায়ার সেকেন্ডারি এক্সাম শেষ করে ওখানেরই কয়েকটা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার ট্রাই করছিল। এরমধ‍্যেই বাংলাদেশ থেকে ওর দাদী-মনির মৃত‍্যুর খবর আসে। রুশা সবকিছু ছেড়ে-ছুড়ে দ্রুত রওনা দেয় বাংলাদেশে ফিরে আসার উদ্দ‍্যেশে। আসার সময় ফ্লাইটেই আয়াশের সাথে রুশার প্রথম দেখা হয়। ওর পাশের সিটটাতে আয়াশ বসেছিল। ‘ও’ যখন কাঁদতে ব‍্যস্ত ছিল, তখন আয়াশ ওর দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। পুরোটা জার্নিতে ওদের মধ‍্যে কোনো কথাই হয়নি। শুধু আয়াশ একবার ওর দিকে একটা টিস‍্যু বাড়িয়ে দিয়েছিল। তারপর ফ্লাইট থেকে নামার পর দুজন আলাদা দিশায় নিজেদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েছিল।

তার প্রায় ছয় মাস পর রুশা কিছু কারন বশত ওর সব জিনিস পত্র নিয়ে ওর দাদুর বাসা থেকে বের হয়ে চলে আসে। রাত তখন প্রায় ১ টার কাছাকাছি। একটা নির্জন রাস্তা দিয়ে রুশা হাতে একটা ল‍্যাগেজ নিয়ে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তখনই কিছুটা দূরে রাস্তার এক সাইডে একটা বাইক পড়ে থাকতে দেখে। রুশা কৌতূহল নিয়ে এগিয়ে যেতেই দেখতে পায় একটা ছেলে অ‍্যাক্সিডেন্ট করে বাইকের নিচে চাপা পড়ে আছে। ছেলেটার মাথা ফেটে ব্লিডিং হচ্ছিল। আশেপাশে তেমন কোনো লোকও ছিল না। রুশা কোনো উপায় না পেয়ে সেখানে দাড়িয়ে দাড়িয়েই চিল্লাচিল্লি করতে শুরু করে। ওর চিল্লাচিল্লিতে রাস্তার পাশে অবস্থিত যেই ঘর গুলো ছিল সেখান থেকে কিছু মানুষ জন বের হয়ে আসে। রুশা তাদের সাহায্যে ছেলেটাকে কাছেরই একটা হসপিটালে নিয়ে আসে। সেখানে আসার পর ডাক্তার যখন ছেলেটার মুখে লেগে থাকা ব্লাড গুলো পরিষ্কার করে ওকে ব‍্যান্ডেজ করে দিচ্ছিল, তখন রুশা ছেলেটাকে চিনতে পারে। ছেলেটা আর কেউ না, আয়াশ ছিল। যারা আয়াশকে হসপিটালে নিয়ে আসতে হেল্প করেছিল, তারা ওকে ডাক্তারদের কাছে দিয়েই ওখান থেকে চলে যায়। কিন্তু রুশার এমনিতেও যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না, আর তাছাড়া একজন অসুস্থ মানুষকে ওভাবে একা রেখে যাওয়াটা মোটেও শ্রেয় মনে করল না। তাই ‘ও’ বাইরের ওয়েটিং রুমে বসে বসেই রাত টা কাটিয়ে দিল। খুব সকালে আয়াশের জ্ঞান ফিরে আসতেই ‘ও’ নার্সের থেকে সবটা জানতে পারে। নার্সকে বলে মেয়েটাকে ডেকে ভিতরে নিয়ে আসতে। নার্স গিয়ে রুশাকে ডেকে ভিতরে নিয়ে আসে। রুশাকে দেখে আয়াশ ভিষন অবাক হয়, সাথে খুশীও হয়। কথায় কথায় আয়াশ জানতে পারে রুশা ওর বাসা থেকে বেড়িয়ে এসেছে। আয়াশ ওর থেকে বেড়িয়ে আসার কারনটা জিজ্ঞেস করলে ‘ও’ চুপ হয়ে যায়। আয়াশ বুঝতে পারে মেয়েটা ওকে এই বিষয়ে কিছু বলবে না, তাই ‘ও’ আর রুশাকে বেশি ঘাটায় না। দুপুরের দিকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ হয়ে আয়াশ নিজের বাড়ির উদ্দ‍্যেশে বেড়িয়ে পড়ে। সাথে করে রুশাকেও নিয়ে যায়। রুশা প্রথমে যেতে না চাইলেও আয়াশের অনুরোধে যেতে রাজি হয়ে যায়। আয়াশের বাসায় গিয়ে রুশা জানতে পারে আয়াশ আর কয়েকজন সার্ভেন্ট ছাড়া ওই বাড়িতে আর কেউ থাকে না। বিষয়টা জানতে পেরে রুশা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায়। ওর মনে হয় আয়াশ ওর সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করার জন‍্যে ওকে এখানে নিয়ে এসেছে। কিন্তু ওর ধারনাকে সম্পূর্ন ভুল প্রমানিত করে আয়াশ সন্ধ‍্যার দিকে ওকে একটা লেডিস হোস্টেলের সামনে নিয়ে যায়। তারপর সেখানে রুশার থাকার ব‍্যবস্থা করে ‘ও’ সেখান থেকে চলে আসে।

দেখতে দেখতে আরো তিনটা মাস অতিবাহিত হয়ে যায়। রুশা ওর এক কলেজ ফ্রেন্ডকে বলে ক‍্যালিফোর্নিয়া থেকে নিজের সব সার্টিফিকেট আনিয়ে এখানের একটা মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার ট্রাই করে। সৌভাগ্য বশত ‘ও’ মেডিকেলে চান্সও পেয়ে যায়। এরমধ‍্যেই আয়াশ একদিন রুশাকে দেখতে আসে। কিছুক্ষণ ওরা কথাবার্তা বলে একটা ক‍্যাফে তে চলে যায়। সেখানে বসে দুজন বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে একে অপরের ফোন নম্বর নিয়ে নেয়। তারপর থেকে মাঝে মাঝেই ওরা একে অপরের সাথে কথা বলত, ঘুড়তে বের হত। কখনো কখনো রুশা আয়াশের সাথে ওর চাচা চাচীর বাসায় গিয়েও সারাদিন সেখানে বসে বসে আড্ডা দিয়ে আসতো। এভাবেই আস্তে আস্তে ওরা পরিচিত থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে উঠে। আয়াশ রুশার থেকে ছয় বছরের বড় হওয়া সর্তেও রুশা ওকে ‘তুই’ করে সম্মোধন করত। ‘তুই’ করে না বললে আয়াশ ভিষন রেগে যেত।

এর মধ‍্যেই কেটে যায় আরো তিনটা মাস। রুশা নিজের স্টাডি আর পার্ট টাইম জব নিয়ে বিজি হয়ে পড়ে। আয়াশও অ‍্যাক্টিং জগতে পাঁ রাখে নিজের ফাস্ট মুভি দিয়ে। প্রথম মুভিতেই আয়াশ বেশ জনপ্রিয় হয়ে যায়। তারপর ওর আর পিছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি। পরপর আরো বেশ কয়েকটা সুপার ডুপার হিট মুভি ভক্তদের উপহার দিয়ে খুব অল্প সময়েই আয়াশ হয়ে উঠেছে সবার চোখের মনি। যত সময় যাচ্ছিল তত রুশা আয়াশের প্রায়োরিটি হয়ে উঠছিল। রুশার প্রতি ওর টান এতটা বেড়ে গিয়েছিল যে ‘ও’ একদিন রুশাকে ফোনে না পেলে সাথে সাথে রুশার হোস্টেলের সামনে গিয়ে হাজির হয়ে যেত। কিন্তু যখনই দেখা হত তখনই ওদের মধ‍্যে শুধু ঝগরা আর মারামারি হত। রাগের সময় দুজন রীতিমতো একে অপরের চুল টানাটানি শুরু করে দিত।

এভাবেই ভালোবাসা খুনসুটিতে পেরিয়ে গিয়েছিল আরো দুইটা বছর। এই দুই বছরে আয়াশ নিজের হিরো হওয়ার স্বপ্নটাকে হাতের মুঠোয় আয়ত্ব করে নিয়েছিল। ওর নামের সাথে সুপার স্টার শব্দটা যেন টাইটেলের মতো চিপকে গিয়েছিল। এর মধ‍্যেই আয়াশ একদিন হুট করেই রুশাকে ফোন করে রেষ্টুরেন্টে দেখা করতে বলে। রুশাও আয়াশের বলা সময় আর জায়গা অনুযায়ী ঠিক টাইমে রেষ্টুরেন্টে পৌছে যায়। আয়াশ সেদিনই রুশার সাথে ইতির পরিচয় করিয়ে দেয়। ওকে জানায় কিছুদিন আগেই ওরা দুজন রিলেশনে গেছে। ব‍্যাপারটা জেনে রুশা বেশ খুশী হয়। তবে ওর এই খুশীটা বেশিদিন টিকেনি। সময়ের চাকার ঘোরার সাথে সাথে ওর আর আয়াশের মধ‍্যে অনেকটা দূরত্ব চলে আসে। যেই আয়াশ ওর সাথে কথা না বলে একদিনও থাকতে পারত না, সেই আয়াশ এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ওকে একটা কল দেওয়ার সময় পেত না। রুশা নিজে আয়াশকে কল দিলেও হয় ওয়েটিং পেত, আর নাহলে ব‍্যস্ততার দোহাই আয়াশ দ্রুত ফোন কেটে দিত। এই বিষয়টা রুশাকে বেশ কষ্ট দিত। কিন্তু ‘ও’ নিজেকে সামলে নিয়ে সবটা মানিয়ে নিয়েছিল। সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আয়াশকে আর কখনো কল করবে না। নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থেকে আয়াশকে আর কখনো কল করেওনি। আয়াশের ফোন নম্বরটাও ব্লক করে দিয়েছিল। আয়াশও তারপর আর ওর খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেনি।

জীবনের জটিলতার সাথে একা একা যুদ্ধ করতে করতে রুশা আরো দেড়টি বছর কাটিয়ে দিয়েছিল। আয়াশ নামক চাপ্টার টা যখন ওর জীবন থেকে একেবারে বিলুপ্ত হওয়ার পথে প্রায়, তখনই একটা ঘটনা ওর জীবনের মোড় আবারও সম্পূর্ন ঘুড়িয়ে দিয়েছিল। রুশা নিজের ডিউটি শেষ করে বাসায় আসতেই হঠাৎ আন-নন নম্বর থেকে ওর ফোনে একটা কল আসে। রুশা কলটা রিসিভ করে কথা বলে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যায় হসপিটালের উদ্দ‍্যেশে। সেখানে গিয়েই প্রথমবারের মতো রোহানের সাথে রুশার আলাপ হয়েছিল। রোহান রুশাকে জানিয়েছিল, গতকাল রাতে আয়াশ যখন শুট থেকে বাড়ি ফিরছিল তখন কিছু লোক ওর উপর অ‍্যাটাক করে ওকে মেরে সেন্সলেস বানিয়ে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। নিয়ে গিয়ে ওর উপর টর্চার করতে করতে ওর এক হাত ভে*ঙে দিয়েছে। আর বলেছে যদি ওকে আর ইতির চারপাশেও দেখা যায় তাহলে ওকে একেবারে মা*র্ডার করে ফেলবে।

রোহানের কথা শুনে রুশা অবাকের চরম সীমানায় পৌছে গিয়েছিল। রুশাকে আরো অবাক করে দিয়ে রোহান বলেছিল, “আমি আর আমাদের লোকরা মিলে যখন আয়াশ স‍্যারকে খুজতে ব‍্যস্ত ছিলাম, তখন আমার ফোনে একটা কল আসে। ফোনের অপর পাশের ব‍্যাক্তি আমাকে একটা এড্রেস দিয়ে বলে আয়াশ স‍্যারকে নাকি সেই এড্রেসেই পাওয়া যাবে। তবে আমাকে সেখানে একা যেতে হবে। আমি আর সময় নষ্ট না করে সেখানে চলে যাই। গিয়ে দেখি আয়াশ স‍্যার র*ক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। ওনার সামনে বসে আছে শান রায়জাদা।”

শানের নাম শুনে রুশা চমকে যায়। রোহান বলে, “আমি যেতেই শান রায়জাদা এসে আমাকে শাষিয়ে বলেছিল ওনার গার্লফ্রেন্ডের থেকে আয়াশ স‍্যারকে দূরে রাখতে। আমি অবাক হয়ে ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কে ওনার গার্লফ্রেন্ড? উনি বলেছিলেন ইতি ম‍্যাম নাকি ওনার গার্লফ্রেন্ড। প্রায় চার বছরেরও বেশি সময় ধরে নাকি ওনারা রিলেশনে আছেন। আর ওনাদের ফ‍্যামিলি থেকেও নাকি ওনাদের বিয়ে ঠিক রাখা হয়েছে।”

সব শুনে রুশা মাথায় হাত দিয়ে ধপ করে কড়িডোরে থাকা বেঞ্চের উপরে বসে পড়ল। বিরবির করে বলল,

–“তারমানে ইতিই সেই মেয়ে। যার সাথে শানের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।”

কথাটা বলতে বলতে অজান্তেই রুশার চোখ থেকে দু-ফোটা পানি গড়িয়ে পড়েছিল। রোহান বোকার মতো ড‍্যাবড‍্যাব করে রুশার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।

আয়াশ সুস্থ হয়ে উঠতেই শুরু হলো ওর পাগলামি। ইতির সাথে দেখা করতে যাওয়ার জন‍্যে ‘ও’ উতলা হয়ে পড়ল। রোহার আর রুশা চেষ্টা করেও আয়াশকে থামাতে পারল না। ভাঙা হাত নিয়েই পাগলের মতো ছুটে বেড়িয়ে গেল হসপিটালের বাইরে। সেখান থেকে একটা ট‍্যাক্সি নিয়ে ইতির ফ্লাটের উদ্দ‍্যেশে রওনা দিল। ওর পিছনে পিছনে রুশা আর রোহানও গাড়ি নিয়ে ওকে ফলো করতে শুরু করল। আয়াশ ইতির বিল্ডিংয়ের সামনে এসে ট‍্যাক্সি থেকে নেমে সোজা ভিতরে চলে গিয়েছিল। রোহান আর রুশাও দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে আয়াশের ট‍্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ভিতরে চলে যায়। ভিতরে এসে লিফট উপরের দিকে যাচ্ছে দেখে ওরা লিফটের অপেক্ষা না করেই সিড়ি বেয়ে দৌড়ে উঠতে থাকে। রোহান জানে ইতির ফ্লাট কোনটা। ‘ও’ আগেও কয়েকবার এসেছে এখানে। রুশা রোহানের পিছনে পিছনে ওকে অনুসরন করে উপরে উঠছে। ওরা পাঁচ তলায় আসতেই ওদের মাথায় বাজ পড়ল। কারন শান আর আয়াশ একে অপরকে মারছে। পাশেই ইতি চোরের মতো ভিতু ফেস করে দাড়িয়ে আছে। রোহান আর রুশা দ্রুত গিয়ে ওদেরকে থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পেরে ওঠে না। এক পর্যায়ে রুশা রেগে গিয়ে শানের গালে কষিয়ে একটা চড় মারে। আর চেঁচিয়ে বলে,

–“লজ্জা করে না একটা অসুস্থ মানুষকে এভাবে আঘাত করতে?”

শান অগ্নি দৃষ্টিতে রুশার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

–“ওর মতো একটা অসভ‍্যকে খু!ন করতেও আমার হাত কাঁপবে না। লজ্জা সেটা তো অনেক পরের বিষয়। আমি পারলে ওকে এখনই জানে মেরে ফেলতাম। কতো বড় স্পর্ধা ‘ও’ আমার গার্লফ্রেন্ডকে ডিস্টার্ব করে। আবার আমার হাতে এত মা!র খাওয়ার পরেও নির্লজ্জের মতো এখানে এসে হাজির হয়েছে।”

রুশা ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
–“কিহ? আপনার গার্লফ্রেন্ড কে আয়াশ ডিস্টার্ব করে? এই মেয়ে আয়াশ তোমাকে ডিস্টার্ব করে?”

শেষের প্রশ্নটা ইতিকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে করল রুশা। ইতি ভয় পেয়ে শানের পিছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল। রুশা গিয়ে ইতির হাত ধরে টেনে এনে ওর সামনে দাড় করাল। তারপর ধমকের স্বরে বলল,

–“যেটা প্রশ্ন করব একদম ঠিকঠাক অ‍্যান্সার দিবে, নাহলে তোমার এই সো কল্ড বয়ফ্রেন্ডের সামনে তোমার গালে থা*প্পর মা*রতে মা*রতে আমি তোমার সবগুলো দাঁত ফেলে দিব।”

রুশার কথা শেষ হতেই শান বলল,
–“খবরদার আপনি একদম ইতির সাথে এভাবে কথা বলবেন না। ওর সাথে এভাবে কথা বললে কিন্তু আপনার কপালেও দুঃখ আছে।”

রুশা গলা উচিয়ে চেঁচিয়ে বলল,
–“যাস্ট কিপ ইউর মাউথ শাট মি রায়জাদা। এই মুহূর্তে আমার আর মিস ইতির মধ‍্যে আপনারা কেউ আসবেন না।”

রুশার কথা শুনে শান হা হয়ে গিয়েছিল। ‘ও’ ভাবতেই পারছিল না ওইটুকু একটা পিচ্চি মেয়ে ওকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে। শানকে আরো অবাক করে দিয়ে রুশা ইতির হাত মুচরে ধরে বলল,

–“আয়াশের সাথে তোর কী সম্পর্ক ছিল সব সত‍্যিটা বল। নাহলে তোর এই হাত আমি আজকে ভে*ঙে টুকরো টুকরো করে ফেলব।”

ইতি ব‍্যাথায় কুকিয়ে উঠে বলল,
–“আমার সাথে আয়াশের কোনো সম্পর্ক নেই। ওর সাথে আমার একটা ইভেন্টে আলাপ হয়েছিল। সেখানে বসে কথায় কথায় ‘ও’ জানতে পারে আমার মডেল হওয়ার হবির ব‍্যাপারে। জানার পর ‘ও’ আমাকে প্রমিজ করে ‘ও’ এই কাজে আমাকে হেল্প করবে। প্রমিজ অনুযায়ী ‘ও’ ওর কথাও রেখেছিল। কিন্তু যখন আমি মডেলিংয়ে সাকসেস হয়ে গেলাম, তখন ‘ও’ ওর হেল্পের বিনিময়ে আমার কাছে ফেবার চাইল। আমাকে ওর সাথে রিলেশন করার জন‍্যে বলল। আমি যখন মানা করে দিলাম তখন ‘ও’ আমাকে বিভিন্ন ভাবে বিরক্ত করা শুরু করল।”

কথাটা বলে ইতি কেঁদে উঠল। রুশা ইতির হাতটা ছেড়ে দিল। আয়াশ হতবাক হয়ে ইতির দিকে তাকিয়ে রইল। কারন ইতি সবটা সত‍্যি বলেছে ঠিকই কিন্তু লাস্টের কথাগুলো একেবারে মিথ‍্যা বলেছে। কারন ‘ও’ মডেল হওয়ার পর ‘ও’ নিজেই আয়াশকে প্রোপোজ করেছিল। আর বলেছিল আয়াশের পরের মুভিতে ওকে হিরোইন হিসেবে কাস্ট করতে। অথচ এখন কি সুন্দর ভাবে ওর মুখের উপর একদম মিথ‍্যা কথা বলে দিল। আয়াশের এসব ভাবনার মধ‍্যেই রুশা এসে আয়াশের গালে একটা চ*ড় মারে। আয়াশ চোখ বন্ধ করে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে থাকে। ওর মনে হয় রুশাও ইতির কথা বিশ্বাস করে নিয়েছে। তাই ‘ও’ মনে মনে নিজেকে তৈরি করে রুশার তিক্ত কথা গুলো শোনার জন‍্যে। রুশা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,

–“চোখ বন্ধ করে আছিস কেন? দেখ, ভালো করে দেখ। এটা সেই মেয়ে যার জন‍্যে তুই আমাকে ভুলে গিয়েছিলি। যার ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে দেড় বছরে তুই তোর বেস্ট ফ্রেন্ডের একটা খোঁজ অবদি নিস নি। এটা তোর সেই ভালোবাসা যে তোকে আজকে সবার সামনে একটা ক‍্যারেক্টারলেস আর ছ‍্যাচরার জায়গায় নামিয়ে এসেছে। দেখ, ভালো করে দেখ নিজের ভালোবাসাকে।”

আয়াশ আর সহ‍্য করতে পারল না। কাউকে কিছু না বলেই দ্রুত পায়ে ওখান থেকে বের হয়ে গেল। রুশা রাগে ফুশতে ফুশতে শানের সামনে গিয়ে দাড়াল। তারপর এক আঙুল উচিয়ে শানকে কঠিন গলায় বলল,

–“আমি আপনাকে প্রমিস করে গেলাম মি রায়জাদা। আমি এই মেয়ের সমস্ত নোংরামোর প্রুফ এনে একদিন আপনাকে দিব। আর সেদিন আপনার সামনে এই মেয়ের আমি সেই অবস্থা করব, যে অবস্থা আপনি আয়াশের করেছেন। যদি ক্ষমতা থাকে তো আমাকে সেদিন ঠেকিয়ে দেখাবেন।”

কথাটা বলে রুশা সেদিন ওখান থেকে বের হয়ে এসেছিল। ওর সাথে রোহানও বের হয়ে এসেছিল। কিন্তু শান শুধু অবাক হয়ে রুশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল।

তার প্রায় এক মাস পর রুশা আর রোহান মিলে ইতির সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে সবকিছু খুজে বের করে। ওরা জানতে পারে ইতি মডেলিং জগতে আসার পর আরো অনেকের সাথে ডেটে গিয়েছে, ফিজিক‍্যালি অ‍্যাফেয়ার করেছে। রোহান আর রুশা মিলে একটা-একটা করে প্রমান জোগাড় করে সব এক জায়গায় করে। কিন্তু সেগুলো শানকে না দিয়ে ওরা সরাসরি জার্নালিস্টদের হাতে তুলে দেয়। ব‍্যাপারটা নিয়ে বেশ জলঘোলা হয়। সবকিছু জানতে পেরে শান হতবাক হয়ে যায়। ‘ও’ রেগে ইতিকে খুজতে ইতির ফ্লাটে যায়। কিন্তু ইতি সেখান থেকে অলরেডি পালিয়ে গিয়েছিল। মিডিয়ার লোকেরা জেনে যায় শান আয়াশকে মারার চেষ্টা করেছিল। অবশ‍্য এটা রুশাই রোহানকে দিয়ে ওদেরকে জানিয়ে ছিল শানকে সবার সামনে হেনস্তা করার জন‍্যে। ব‍্যাপারটা পাবলিক হওয়ার পর শান সবার চোখে ভিলেন হয়ে যায়। ওকে নিয়ে সবাই নানান কথা বলতে শুরু করে। শানের বিজনেস পার্টনার সবাই ওকে ফোন করে এই ঘটনার ব‍্যাপারে বারবার জিজ্ঞেস করতে থাকে। একে তো নিজের ভালোবাসার মানুষের থেকে প্রতারনা, তার উপর সবার এমন প্রশ্নে শান একেবারে পাগল হয়ে যায়। ওর সব ক্ষোপ গিয়ে জমা হয় আয়াশের উপরে। ওর মনে হয় এই সবকিছু আয়াশ করেছে। শান ওইদিন রাতেই ইচ্ছে মতো ড্রিংকস করে ড্রাংক অবস্থায় আয়াশের বাংলোতে গিয়ে হাজির হয়। দারোয়ান গেট খুলতে বারন করে দেওয়ায় শান রিভলবার বের করে ওনার মাথায় চেপে ধরে। ভয়ে উনি গেট টা দ্রুত খুলে দেয়। শান রিভলবার হাতে বাংলোর দরজার দিকে এগিয়ে আসে। দরজাটা হালকা করে লাগানো ছিল। শান একটা লাথি মেরে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়ল। রুশা ড্রইংরুমে বসে বসে চিপস খাচ্ছিল আর টিভিতে আজকের সব ব্রেকিং নিউজ গুলো দেখতে দেখতে বাঁকা হাসছিল। হঠাৎ এত জোরে দরজা খোলার শ‍ব্দে ‘ও’ চমকে উঠে দরজার দিকে তাকায়। শানকে রিভলবার হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ওর ভ্রু কুচকে আসে।

রুশা এগিয়ে গিয়ে শানের সামনে দাড়িয়ে ওকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলে,

–“একি মিঃ রায়জাদা আপনি এখানে? আপনার কালনাগিনী গার্লফ্রেন্ডের সত‍্যিটা সবার সামনে এনে দিলাম বলে আমাকে থ‍্যাংক ইউ বলতে এসেছেন?”

রুশার কথা শুনে শান বুঝল এসব আয়াশ করেনি, রুশা করেছে। শান রুশার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুশতে লাগল। রুশা আবারও পিঞ্চ করে বলল,

–“আরেহ থ‍্যাংক ইউ বলার দরকার নেই। নির্বোধ মানুষদের ভুল ধরিয়ে দেওয়াটা আমার ছোট বেলাকার অভ‍্যাস।”

রুশা কথাটা বলার সাথে শান ওর গলা জোরে টিপে ধরল। রুশা চেঁচিয়ে উঠল। ওর চেচানো শুনে আয়াশ নিজের রুম থেকে দ্রুত বের হয়ে নিচে আসলো। এসেই শানকে রুশার গলা টিপে ধরতে দেখে আয়াশের মনের নিভে যাওয়া আগুনটা দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। রাগের বশবর্তী হয়ে আয়াশ একটা ফ্লোয়ার ভাস হাতে নিয়ে সর্ব শক্তি দিয়ে শানের মাথায় আঘাত করল। আকষ্মিক আক্রমনে শান ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ল। ওর মাথা ফেটে র*ক্ত বের হয়ে ফ্লোরে পড়তে লাগল। রুশা গলায় হাত দিয়ে কাশতে কাশতে মাটিতে বসে পড়ল। আয়াশ একটা হকিস্টিক নিয়ে এসে শানকে এলোপাথাড়ি একের পর এক আঘাত করতে লাগল। শান ড্রাঙ্ক থাকায় পাল্টা আঘাত করতে পারল না। আয়াশের হাতে মার খেতে খেতে একটা সময় নিস্তেজ হয়ে গেল। রুশা কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে দৌড়ে গেল আয়াশের কাছে। অনেক কষ্টে আয়াশকে টানতে টানতে উপরে নিয়ে গেল। যাওয়ার আগে আয়াশ দারোয়ান লোকটাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে চেচিয়ে বলে গেল, শানের বডিটা রাস্তার মাঝখানে ফেলে আসতে। আয়াশের কথা মতো লোকটা সেটাই করেছিল।

সেদিনই সবাই শেষ বারের মতো শানকে দেখেছিল। তারপর আর শানের ছায়াটাও কেউ দেখতে পায়নি। সকাল বেলা উঠে আয়াশ যখন রাস্তায় এসেছিল তখন ওখানে শানের বডি ছিল না। আয়াশ লোক লাগিয়েও শানের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ওরা কোনো খোঁজ পায়নি। শান শামক ব‍্যাক্তিটা সব জায়গা থেকে একদম লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিল। এই দুই বছরে রুশারাও সবাই ভুলে গিয়েছিল শান নামক ব‍্যাক্তিটাকে। কিন্তু সে আবারও সুনামির মতো ফিরে এসে সবকিছু ওলট পালট করে দিয়েছে।

দরজায় নক পড়ার শব্দে রুশা ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে। একজন নার্স ভিতরে ঢুকে টেবিলে একটা ফাইল রেখে মুচকি হেঁসে আবারও বাইরে চলে যায়। রুশা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফাইলটা হাতে নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দ‍্যেশে বের হয়ে পড়ে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here