#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৯
ওসব আমি জানি না,,আমি পিকনিক এ যাবো মানে যাবো আর আপনিও যাবেন(নিদ্রিতা)
স্পর্শ –সবসময় জেদ করে জিতে যাও তুমি!!!আমার কথা তো জীবনে শোনো না!!!
নিদ্রিতা একটু হেসে বলে–হুমম তাই!!!
স্পর্শ –আচ্ছা,,, রেডি থেকো কাল দুপুরে বাস!!!
নিদ্রিতা–আচ্ছা!! শুনেন!!
স্পর্শ –হুমমম!!!
নিদ্রিতা–আই লাভ ইউ!!!
স্পর্শ হালকা হেসে দেয় তারপর বলে–আই লাভ ইউ মোর দ্যান ইউ!!!আর নো ঝগড়া এটা নিয়ে!!!
নিদ্রিতা–উমমমম!!!!
স্পর্শ –গুড নাইট!!! ঘুমিয়ে পড়,,,রাত জেগো না!!
নিদ্রিতা–ওকে গুড নাইট!!!
তারপর নিদ্রিতা ফোন কেটে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।।
কাল স্পর্শ নিদ্রিতার বিয়ের ১ মাস পূর্ণ হবে!!!কলেজ থেকে পিকনিক যাচ্ছে সবাই তাই স্পর্শের বারণ থাকা শর্তেও নিদ্রিতা তাকে নিয়ে যাবেই অগত্যা স্পর্শ ও রাজি হলো!!!
দুপুরের মধ্যে রেডি হয়ে নিদ্রিতা চলে আসে কলেজে।।
উঠে পড়ে বাসে উদ্দেশ্য টাইগার হিল!!!
ঘন্টা ৩ এর মধ্যেই তারা পৌঁছে যায় টাইগার হিলে।।
টাইগার হিলে তারপর লজের রুম ভাড়া নিয়ে যে যার যার রুমে ফ্রেস হতে চলে যায়!!!টাইগার হিলের কান্তা লজের বারান্দা থেকে অপূর্ব সুন্দর কানচনজঙ্ঘা পাহাড় দেখা যায়।।সবাই ফ্রেস হয়ে চারপাশ ঘোরাঘুরি করে আবার লজে ফিরে আসে। কারণ রাতে পাহাড়ি এলাকায় ঘোরাটা ঠিক নয়!!!
রুমে এসে নিদ্রিতা ফ্রেস হয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রাতের পাহাড় দেখতে লাগল!!!
রাত ৯.৫৮ তে লজের সবাই প্রায় ঘুম!!!কারণ রুমের লাইটস অফ!!!
নিদ্রিতা স্পর্শকে ফোন করল!!
নিদ্রিতা—কই আপনি??
স্পর্শ –মাত্র রুমে আসলাম!!ফ্রেস হচ্ছি!!!
নিদ্রিতা–ওকে!!
তারপর ফোন কেটে নিদ্রিতা ধীর পায়ে নিজের রুম লক করে বেরিয়ে যায়!!
স্পর্শ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে শোনে তার রুমের দরজাতে কেউ নক করছে।।স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে টাওয়ালটা ঘাড়ে নিয়ে দরজা খুলে স্পর্শ তো অবাক!!!নিদ্রিতা মুচকি মুচকি হাসছে।।
স্পর্শ –তুমি এখানে!!!এখন???
নিদ্রিতা উত্তর না দিয়ে ভেতরে এসে দরজা বন্ধ করে স্পর্শকে জড়িয়ে ধরে!!!
তারপর বলে–তো কখন আসবো!!!এখন ছাড়া!!!
স্পর্শ ও জড়িয়ে ধরে বলে–হুমমম!!!তা ভালো করেছ এসে।। চলো বারান্দা দিয়ে রাতের পাহাড় দেখব!!
নিদ্রিতা হেসে বলে–চলুন!!
স্পর্শ –বিয়ে হয়ে গিয়েছে আমাদের!!
নিদ্রিতা–হুমম!!তো??
স্পর্শ –তো মানে!!এখনো আপনি কেন??
নিদ্রিতা–তাহলে কি তুই তোকারি করব??
স্পর্শ –তুমি তোমারই করবে!!!
নিদ্রিতা হালকা হেসে বলে–আচ্ছা!!!
স্পর্শ –হুমম!!চলো।।
স্পর্শ বারান্দাতে রাখা সোফাতে বসে আছে আর নিদ্রিতা স্পর্শের কোলে বসে বুকে মাথা দিয়ে আছে।।
নিদ্রিতা–কি দারুণ প্রকৃতি তাইনা!!!
স্পর্শ –হুমম!!!
নিদ্রিতা এবার মাথা উঠিয়ে স্পর্শের মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে যায়।।নিদ্রিতার গরম নিশ্বাস স্পর্শের মুখে পড়ছে।।স্পর্শ একনজরে নিদ্রিতার দিকে তাকিয়ে আছে।।বাইরে হালকা বৃষ্টি আর বাতাসের ঝাপটা তাদের মুখে এসে বারি খাচ্ছে!!! হঠ্যাৎ স্পর্শের কি হলো তা সে নিজেও জানে না।।হুট করে একহাতে নিদ্রিতার কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আর একহাতে নিদ্রিতার মুখ ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।।আবেশে দুজনেরই চোখ বন্ধ।।তাদের ভালোবাসার আবেশে পাহাড় যেন নিজেও লজ্জা পেল তাই ঝুম বর্ষাতে ঢেকে নিল নিজেদের!!
তারপর স্পর্শ নিদ্রিতার ঠোঁট ছেড়ে নিদ্রিতার গলাতে ঠোঁট ছোঁয়াল!! নিদ্রিতা হালকা হাতে স্পর্শকে জড়িয়ে রেখেছে!!!
স্পর্শ এবার নিদ্রিতাকে কোলে তুলে ভেতরে নিয়ে গেল।।
নিদ্রিতাকে বিছানাতে শুয়ে দিয়ে নিজের ভর তার ওপর ছেড়ে দিল!!আবারও আঁকড় ধরল নিদ্রিতার ঠোঁট!!!স্পর্শ যেন নিজের কোনো এক ঘোরে চলে গিয়েছে!!! হালকা বাতাসের ঠান্ডাতে নিদ্রিতা কেঁপে উঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্পর্শকে।।দুজনের নিশ্বাসের গতির সাথে ছোঁয়ার গভীরতা ও আরও বৃদ্ধি পেল।।পূর্ণতার পবিত্র মিলনে আবদ্ধ হতে ব্যস্ত একজোড়া প্রেমিকযুগল দম্পতি!!!
রাতের মধ্যভাগ,স্পর্শ নিদ্রিতাকে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে নিয়ে চাদরে শরীরটা ঢেকে নিল।স্পর্শের
বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে নিদ্রিতা আর বারান্দার কাঁচের দিকে তাকিয়ে বাইরের বর্ষণ।। স্পর্শ নিদ্রিতার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।।
পিনপত্তন নীরবতা ভেঙে স্পর্শ বলল–আই আম সরি নিদু!!!
নিদ্রিতা মাথা তুলে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বলে—সরি কেন??
স্পর্শ –আমি আসলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি!!
নিদ্রিতা মাথা তুলে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে স্পর্শের ঠোঁটের কোণে চুমু দিয়ে বলে–আমি তোমার স্ত্রী!! আমাকে ছোঁয়া তোমার অধিকার!!!
স্পর্শ এবার নিদ্রিতাকে বিছানার সাথে চেপে ধরে
বলল—আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত ছিল তোমাকে বিয়ে করা!!!
নিদ্রিতা হালকা হাসল।।স্পর্শ বলল–দিলে তো আবার আমাকে কন্ট্রোললেস করে আবার??
নিদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে বলে–কই কখন??!!!
স্পর্শ –এইযে তোমার হাসি দিয়ে!!!!
তারপর নিদ্রিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিদ্রিতার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল।।
রাত শেষ হয়ে হালকা আলো ফুটতেই,নিদ্রিতা ফ্রেস হয়ে ঘুমন্ত স্পর্শকে ভালো করে চাদর দিয়ে জড়িয়ে লুকিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে!!!
এসে স্পর্শকে একটা ম্যাসেজ করে—ধন্যবাদ,ডিয়ার হাজবেন্ড!!!স্ত্রী হিসেবে আমাকে পূর্ণ করার জন্য।।
ম্যাসেজের টুন আওয়াজে স্পর্শের ঘুম ভেঙে গেল!!!
স্পর্শ ম্যাসেজ চেক করে হালকা হেসে রিপ্লাই দিল—তোমাকেও ধন্যবাদ,, আমার জীবনে আশার জন্য!!! আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রাত আমাকে উপহার দেওয়ার জন্য!!!
আজ মোটামুটি ৮ টায় স্পর্শ, নিদ্রিতা সহ সবাই পাহাড় ঘুরতে গেল।।
অন্যদিকে,,,,
নাশিতা নিজের শিকল ধরে বসে কাঁদছে!!!আর বলছে—-আমি ভুল করেছি!!!!সব ভুল আমার।।।আমার আর অভ্রের সংসার নষ্ট করার পিছনেও দায়ী আমি!!!
আমি যদি ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এই শয়তান সায়ানের সাথে না পালাতাম তাহলে আজ এতো সমস্যা হতো না!!!!আমারই ভুল!!!
স্পর্শ আমার আর অভ্রের সন্তান।।আমার ভুল যে আমি তাকে সায়ানের সন্তান বলে পরিচয় দিয়েছি।।
আমার সন্তানকে কি ভুল বোঝাচ্ছে তা আল্লাহই ভালো জানে!!!!আকাশের কোনো দোষ নেই!!!তারপর আচমকাই সেন্সলেস হয়ে গেল নাশিতা!!!
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সবটাই সায়ান শুনছিল,,,তারপর হালকা হেসে নিজের ঘরের রকিং চেয়ারে বসে বলল–শেষ করে দিবো চৌধুরী পরিবারকে একদম!!!!
তারপর নিজের ষড়যন্ত্রের মূলের ভাবনায় চলে গেল,,,
নিশিতা আর নাশিতার বাবার বাড়িতে আশ্রয়ে থাকত সায়ান!!!নাশিতার ১৮ বছর চলে আর নিশিতার ১৬।।তখন সায়ান ২১ বছরের যুবক!!!সায়ান বিগত ৪ বছর ধরে নিশিতাকে পছন্দ করে।।একদিন বাগানে নিশিতার আপত্তিকর জায়গাতে হাত দেওয়াতে নিশিতা চিৎকার করে বাড়ির লোক জড় করে!!!তারপর নাশিতার বাবা সায়ানকে প্রচুর মারধোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়!!!
সায়ান তখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে বিগত ২ দিন থেকে না খাওয়া!!!ভিক্ষারীদের সাথে বসে থাকতে দেখে একজন বড় গাড়িওয়ালা লোক সায়ানকে দেখে মায়া লাগলো তাই নিজের বাড়ির ফাই ফরমাস খাটতে নিয়ে গেল!!!
ঐ লোকের ২ মেয়ে সান্তানা আর সান্তানী।।
প্রাপ্ত বয়সে সায়ানের সাথে কোনোভাবে সান্তানার বিয়ে হয়!!!সান্তানী সান্তানা কে সবসময়ই হিংসের নজরে দেখত।।
সান্তানার বাবাকে সায়ান নিজের বিয়ের পর থেকেই স্লো পয়জনিং করছে।।
সান্তানার বিয়ের ২ বছরের মাথায় সান্তানার বাবার ব্রেন ট্রোক হয়।।তখনি তড়িঘড়ি করে তিনি সমস্ত সম্পত্তি বড় মেয়ের নামে লিখে দেন!!!কারণ তিনি ছোট মেয়ের হিংসা পরায়ণ স্বভাব সম্পর্কে ভালোই জানতেন।।
সান্তানার বিয়ের ৪ বছরের মাথায় সান্তানার বাবা মারা যায়।।
এরই মধ্যে সায়ান আর সান্তানীর মিলিত ষড়যন্ত্রে শুরু হয় নিরীহ সান্তানাকে স্লো পয়জনিং।।সায়ান শুরু করে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য ভয়াবহ অত্যাচার!!!
এক পর্যায়ে সান্তানা বাধ্য হয় সব সম্পত্তি সান্তানী আর সায়ানের নামে লিখে দেয়।।।
তার ৩ মাসের মধ্যেই সান্তানা ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে!!!
সায়ান এবার অগ্রসর হয় চৌধুরী পরিবারের দিকে!!!
#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১০
চৌধুরী বাড়ি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে সায়ান জানতে পারে নাশিতার বিয়ে হয়েছে অভ্র এর সাথে!!!আর নিশিতার ও বিয়ে হয়েছে আকাশের সাথে যে কিনা নিশিতার চাচাতো ভাই!!!অভ্র আর আকাশ দুই ভাই এর সাথেই দু বোনের বিয়ে হয়েছে!!!
সায়ান নিশিতাকে কাবু করতে না পেরে চেষ্টা চালায়,নাশিতার সংসারের দিকে।।১ম এ নাশিতাকে ছলেবলে প্রেমের জালে ফাঁসয়ে নেয় তারপর ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাশিতাকে নিয়ে পালিয়ে আসে!!!অভ্র পুরোপুরি ভেঙে পড়ে!!!তখন সান্তানী ভালো সেজে সায়ানের ষড়যন্ত্রে চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করে!!!!রীতিমতো বিয়ে ও করে নেয় অভ্র কে!!!!নাশিতা যে অন্তঃসত্ত্বা ছিল তা আজও অভ্রের অজানা!!!
স্পর্শের বয়স যখন ৮ তখন,,,নাশিতা সায়ানের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জেনে যায় তারপর সায়ান যে তার শ্বশুরের আশ্রম থেকে ক্যারেক্টারের সাহায্য নিয়ে মেয়ে পাচার করে তাও জেনে যায়!!!তখন বাঁচার তাগিদে সবটা আকাশকে জানায়!!!
আকাশকে রুমে আসতে বলে,,আকাশ রুমে এসে দেখে মাথায় আঘাত পেয়ে নাশিতা নিচে পড়ে আছে!!!রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে!!!! পাশে একটা রক্তমাখা রড রাখা!!!
আকাশ কেবল রড টা তুলে ফেলতে যাবে তখনই ছোট্ট স্পর্শ চলে আসে,,, মাকে এমন অবস্থায় দেখে থমকে যায়!!!সায়ানের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় আকাশ!!!সেই থেকে সায়ান স্পর্শকে বোঝায় যে জমিসংক্রান্ত ঝামেলার কারণে আকাশ স্পর্শের মাকে খুন করেছে!!!
ঠিক এমনই সময় সায়ান উঠেপড়ে লাগে নিশিতার ছোট্ট বাচ্চাকে পাচার করার জন্য!!! তখনই ৯ দিন বয়সী নিদ্রিতাকে নিয়ে আকাশের মামতো ভাই আয়মানের সাহায্যে পালিয়ে আসে দার্জিলিং।।যোগাযোগ রাখেনি কারো সাথে!!!নাম ও বদলে গা ঢাকা দিয়েছে!!! শুধুই নিদ্রিতাকে বাঁচাতে!!!!
নাশিতা ওই দিনের আঘাতে স্পর্শের নজরে মরে গেলেও সে মরেনি!!!সায়ান তাকে আটকে রেখেছে!!!কষ্ট দিচ্ছে বছরের পর বছর!!!!
কথা গুলো এক তরফা ভেবে নিয়ে চোখ খুলে সায়ান!!!
বলে—কাউকে ছাড়ব না!!!ভালোবাসতাম নিশিতাকে!!!কি দোষ ছিল আমার যদি ওকে একটু ছুঁয়ে দিতাম তাতে!!!!!চৌধুরী বাড়িতে এতগুলো বছর থেকেছি ওদের সম্পত্তিতে আমারও ভাগ আছে!!!!!
এসব বলে সায়ান নিজের রুম থেকে বেরিয়ে যায়!!!!
আজ ৩ দিনের পিকনিক শেষে,,,
বাড়ি ফিরেছে নিদ্রিতা!!!নিদ্রিতা ঘুমে কাতর!!!সময়টা সন্ধ্যা ৭.০৪!!!
নিদ্রিতার বাবা চাদর মুড়ে হালকা পায়ে নিজেকে ঢেকে বের হয়ে গেল বাড়ি থেকে!!!!
পুরোনো পরিত্যক্ত লেকের পাড়ে এসে ফোন লাগায় কেউ একজনকে।।।
বলে—আমি তো লেকের পাড়ে,,, তুই কই???
তখনই পেছন থেকে একজন তার কাঁধে হাত রাখে!!পেছন ঘুরেই জড়িয়ে ধরে আকাশ তাকে!!!
বলে—আয়মান,,,ভাই আমার!!!
আয়মান–কেমন আছিস দোস্ত???
আকাশ চোখের পানি মুছে বলে–এইতো ভালোই!!!
আয়মান–শোন সময় খুব কম!!তোকে জরুরি খবর দিতে এসেছি!!!
আকাশ–হুমম বল!!!
আয়মান–ছবিটা দেখ!!খবর নিয়ে জেনেছি এটা আমাদের অভ্র ভাইয়ের ছেলে স্পর্শ বাট ও এখনো জানে যে ও সায়ানের ছেলে!!!
আকাশ ভালো করে ছবিটা দেখে বলে–একদম ভাইয়ের কার্বনকপি!!!
আয়মান–হুমম!!!সায়ান ওকে পুরো ব্রেন ওয়াশ করে রেখেছে!!!ও জানে ওর মাকে তুই মেরেছিস!!!তাই ও চায় তোকে মারতে!!!
আকাশ–কিন্তুু আমি তো নাশিতা দি কে মারিনি!!!
আয়মান–এটা আমরা জানি ও জানে না!!আর বড় খবর হলো স্পর্শ দার্জিলিং এ আছে!!!নিদু কে সাবধানে রাখিস!!!এসবের মধ্যে মেয়েটার না কিছু হয়ে যায়!!!
আকাশ–ছবি টা দে!!আমি এখন যাই!!ওরা বাড়ি একা!!!
আয়মান–হুমম!!! আর কোনো খবর এলে আমি জানাবো!!
এরপর আয়মান ধীরপায়ে নিজের মুখ ঢেকে চলে যায়।।আর আকাশ হালকা পায়ে হাঁটতে হাঁটতে স্পর্শের ছবিটার দিকে দেখতে থাকে!!!
বাড়ি এসে নিশিতাকে সবটা জানায়!!!
নিশিতা স্পর্শের ছবিটা দেখে চাপা কান্নায় ভেঙে পড়ে!!
নিশিতা–আমার নাশিতা দি এর ছেলে!!!
আকাশ–হুমম!!!ওদিকার সবাই কেমন আছে তা কি জানি!!!দিনের পর দিন সায়ানের পাচার কাজ বেড়েই যাচ্ছে!!!
নিশিতা–তুমি কিছু কর!!আর কতোদিন এমন গা ঢাকা দিবো!!!আমার নিদু তো নিজের নানু, দাদু কাউকেই দেখল না!!!নিজের বাড়িও দেখল না!!!
আকাশ–ভয় তো নিজের জন্য পাই না গো!!ভয় তো তোমাদের নিয়ে!!!তোমাদের কিছু হলে আমি বাঁচতে পারব না!!!
নিশিতা–এসব কথা ছাড়ো এখন!!নিদু উঠে যাবে এখনি!!!
রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে যে যার রুমে শুয়ে পড়ে!!!
আকাশের চোখে ঘুম নেই,,শুধু এপাশ ওপাশ করছে!!!
স্পর্শের কথা জানার পরই আরও টেনশন কাজ করছে তার মধ্যে!!! আকাশ উঠে বাড়ির মধ্যে পায়চারি করতে থাকে।।ছাদের দিকে গিয়ে ছাদের দরজাটা হালকা খুলে ছাদের মধ্যখানে হালকা চিকন সোডিয়ামের আলোতে তাকিয়ে হতবাক হয়ে রইল।।
কারণ ছাদের মধ্যেখানে নিদ্রিতা আর স্পর্শ একে অপরের সাথে চুম্বনরত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।।একে অপরের মাঝে এতই ব্যস্ত যে অন্ধকারে দাঁড়ানো আকাশকে তাদের চোখেই পড়েনি!!!
আকাশ দ্রুত পান্জাবির পকেট থেকে ছবিখানা বের করে স্পর্শের মুখের একপাশ দেখে মিলিয়ে নেয়!!তারপর দ্রুত পায়ে নিচে চলে আসে!!!আকাশ ঘামছে খুব টেনশনে!!!
আকাশ আয়মানকে ফোন করে সবটা জানায়!!!আয়মান–তুই চিন্তা করিস না আমি খোঁজ নিয়ে জানাচ্ছি!!
আকাশ ফোন কেটে অন্ধকারে দেখে স্পর্শ নিদ্রিতাকে কোলে নিয়ে নিদ্রিতার ঘরে যাচ্ছে!!! এবার আকাশ আরো ঘাবড়ে যায়!!!
অন্যদিকে,,,
স্পর্শ নিদ্রিতাকে কোলে করে নিদ্রিতার ঘরে নিয়ে এসে বেডে শুয়িয়ে দিলো তারপর নিদ্রিতার ওপর ভর দিয়ে নিদ্রিতার গলাতে নিজের মুখ ডুবিয়ে দিল!!
নিদ্রিতা–কে যেন গতদিন আমায় পুরো বাসে বোঝালো যে যা হয়েছে ঐদিন রাতে ভুল হয়ে গিয়েছে আর কখনো আমরা কিস ও করব না!!!!
স্পর্শ নিজের মুখটা আরও গভীরভাবে নিদ্রিতার গলার সাথে মিশিয়ে বলল–বলেছিলাম আমি!!কিন্তুু আমি থাকতে পারছিলাম নাহ!!!কেমন কেমন লাগছিল!!!তোমার প্রতি কেমন এক নেশা কাজ করছে!!!
নিদ্রিতা–হুমম!!বুঝলাম!!!
স্পর্শ –বুঝলে ভালো কথা এবার আমি আদর করব!!চুপ করে থাকবা!!বিরক্ত করলে খবর আছে!!!
নিদ্রিতাও চুপ করে স্পর্শের ছোঁয়া গুলো অনুভব করতে থাকে!!!ছোয়ার গভীরতার সাথে নিদ্রিতার পরিতৃপ্তকর আওয়াজ শুনে আকাশ দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে চলে আসে!!
পরদিন,,,
আয়মান খোঁজ নিয়ে জানায় নিদ্রিতা আর স্পর্শ বিয়ে করেছে!!যদিও স্পর্শ এখনো জানে না নিদ্রিতার বাবা মা সম্পর্কে!!! কিন্তুু স্পর্শ নিদ্রিতাকে ভিষণ ভালোবাসে!!!
আকাশ সবটা নিশিতাকে জানিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে!!!!
নিশিতা—তুমি ভেঙে পড়ো না!!!তুমি তো বলেছিলে আমাদের নিদুকে তুমি এমন একজনের হাতে তুলে দেবে যে সবটা জেনে আমাদের মুক্তির ব্যবস্হা করবে!!!হতে পারে আমাদের স্পর্শই সেই ব্যক্তি!!!
আকাশ ভ্রু কুঁচকে বলে–হুমম!!হতেই পারে!!
নিশিতা–তাহলে তো সমস্যা শেষ!!!স্পর্শ সত্যি টা জানলেই সব ঠিক হয়ে যাবে!!
আকাশ খুশি হয়ে চোখের পানি মুছে বলে–তুমি ঠিক বলেছো!!!আমি আজই আয়মানকে দিয়ে সবটা খোঁজ নেয়াবো!!!
যথারীতি আয়মান খোঁজ নিয়ে জানায় স্পর্শ সম্পর্কে!!!
কিন্তুু নিদ্রিতা এখনো জানেই না যে তার বাবা মা সবটা জানে!!!আকাশ নিশিতাও প্রকাশ করেনি!!!আকাশ আয়মানকে কিছু প্রমাণ জোগাড় করতে বলে যা দিয়ে তারা স্পর্শকে সব সত্যি জানাবে!!!রীতিমতো আয়মান কাজে লেগে যায়!!!!
স্পর্শ আর নিদ্রিতার সম্পর্কে দিনেদিনে গভীরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে!!!!
স্পর্শ আকাশকে এখনো খুঁজে যাচ্ছে!!! তবে আকাশকে সে কিছুতেই নাগালে পাচ্ছে না!!!কারণ আকাশ তো বারবার গা ঢাকা দিচ্ছে!!!
এসবের মাঝে কাটে ১১ মাস,,,,
নিদ্রিতা ওয়াশরুমে বসে আছে হাতে প্রেগনেন্সি কিট!!!
এই নিয়ে ১৮ বার চেক করেছে!!!প্রতিবারই পজিটিভ!!!
নিদ্রিতার মতে তার বাবা-মা এখনো জানে না!!আর তারতো এখনো ১৮ বছর বয়সই হয়নি!!!এসব সাত-পাঁচ ভেবে ফোন করে স্পর্শকে!!১ম কল হতেই ফোন ধরে স্পর্শ!!!
স্পর্শ –হুমম,, সোনাই বলো!!!
নিদ্রিতা স্পর্শের গলা শুনেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠল!!
স্পর্শ ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল–কি হয়েছে!!! কাঁদছ কেন??চোট পেয়েছো???
নিদ্রিতা ফুপিয়ে বলল–আমার সাথে এখুনি দেখা করবে ফ্লোটাউনের লেকে!!!
স্পর্শ –৫ মিনিটে আসছি!!
নিদ্রিতা দ্রুত কিট গুলো ব্যাগে নিয়ে চুপিসারে বেরিয়ে গেল!!
লেকের কাছে স্পর্শ অপেক্ষা করছে!!নিদ্রিতা এসে স্পর্শকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে!!স্পর্শ ও হালকা হাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে–কি হয়েছে??
নিদ্রিতার সাড়া না পেয়ে এবার নিদ্রিতার মুখটা উঁচু করে দেখে কান্নার কারণে মুখ লাল হয়ে গিয়েছে!!!
স্পর্শ আবারো কয়েকবার জিজ্ঞেস করল!!কিন্তুু নিদ্রিতাকে ফুপাতে দেখে এবার এক ধমক দিল!!
নিদ্রিতা ভয় পেয়ে স্পর্শের থেকে সরে এল!!তারপর স্পর্শের হাতে কাপড়ের একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল–এটাই আমার কান্নার কারণ!!!
স্পর্শ ভ্রু কুঁচক ব্যাগটা নিয়ে খুলে দেখল ভেতরে প্রায় ১৮/১৯ টা প্রেগনেন্সি টেস্টিং কিট!!তার মধ্যে প্রায় সবগুলোতেই পজেটিভ সাইন আছে!!স্পর্শ ব্যাগ রেখে ভ্রু কুঁচকে নিদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলল—
#চলবে