অভিযোগ গুলা কি অযৌক্তিক পর্ব -০৩

গল্প:-#অভিযোগ_গুলা_কি_অযৌক্তিক?
পর্ব:- ০৩
লেখা AL Mohammad Sourav

আম্মা আপনি ভুল বুঝতেছেন। রুপার এখানে কোনো দোষ নাই। বাড়ীর কাছেই আমার একটা মিটিং ছিলো আর মিটিং আরম্ভ হতে কিছু দেরি হবে। আর যেহেতু লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে তাই আমি বাড়ীতে এসছি দুপুরবেলার খাবারটা খেয়ে যাবো বলে। কিন্তু আমি বাড়ীতে আসার জন্য আপনাদের সমস্যা হবে তা আগে বুঝতে পারলে আমি আসতাম না।

আম্মা:- তুই নিজে থেকে এসেছিস? কিন্তু আমার মনে হয় রুপা তোকে ফোন করে আনছে। মহা রানী সকালে খায়নি সেই জন্য তোকে ফোন করে বলেছে আর তুই এসেছিস মহা রানীর রাগ ভাংগাতে।
সৌরভ:- আম্মা আমি তো বলেছি নিজেই এসেছি। আর রুপা যে সকালে খায়নি এই ব্যপারে রুপা আমি কিছুই বলেনি।
আম্মা:- না জানালে কি আর জানালে কি? সৌরভ একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ তোর বউ সবসময় আমার সাথে ঝগড়া করে। আমি কিছু বললে মুখে মুখে তর্ক করে।
সৌরভ:- আম্মা সবকিছুতে রুপাকে দোষ দেওয়াটা এবার বন্ধ করেন। রুপা বিয়ের পরের দিন থেকে আপনার মন জয় করার জন্য কি না করছে? তাও আপনি রুপাকে দোষ দিয়ে থাকেন।
আব্বা:- সৌরভ কি হচ্ছে এসব তুই কি ভুলে গেছিস তোর মা তোদের জন্য কি করেছে?
আম্মা:- এখন বউ পেয়েছে না এখন বউ ওর সব মা কেডা? এখন আমি যা বলি সব কিছু ওর কাছে খারাপ মনে হবে। এই বলে আম্মা কান্না কাটি শুরু করেছে।
সৌরভ:- আম্মা সামন্য একটা বিষয় নিয়ে কেনো এমন করছেন?
আম্মা:- সামান্য বিষয় তোর কাছে এইটা? তুই এখন তোর বউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমার সাথে তর্ক করছিস?
আমি:- রুপাকে বার বার কেনো টানছেন? আমি কখনো রুপার কথা শুনে আপনার সাথে তর্ক করিনি? আর এমন কি রুপা কখনো আমাকে আপনার নামে কোনো অভিযোগ করেনি।
আম্মা:- সৌরভ বউয়ের উকালতি করতে হবে না। আমি ভালো করে জানি কার কথা শুনে তুই আমার সাথে এমন ব্যবহার করছিস। আমি আর থাকবো না এই বাড়ীতে বলেই আম্মা কান্না করতে করতে ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিছে।
আব্বা:- সৌরভ কি দরকার ছিলো তোর আম্মাকে এভাবে বলার জন্য?
সৌরভ:- আব্বা আপনি তো জানেন দেখেন। কিন্তু আম্মা কেনো এমন করে! আমি বাড়ীতে এসেছি কোথায় আম্মা খুশি হবে তানা বরং রুপাকে দোষ দিয়ে যাচ্ছে।
আব্বা:- দেখ সৌরভ বাবা মা কখনো সন্তানের খারাপ চায়না। তোর মা চাই রুপা এর আগে যেমনটা করেছে এবার যেনো সেইটা না করে এই জন্য রুপাকে একটু শাসনে রাখে।
সৌরভ:- রুপা কখনো আমান কোনো ক্ষতি করেনি আর আপনারা সবাই ভুল জানেন আমি নিজে থেকে চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি। আর এই ব্যবসার সব টাকা রুপা তার বাবার কাছ থেকে এনে দিয়েছে আমাকে।
আব্বা:- সেটা আমরা সবাই জানি তোর শ্বশুর তোকে ব্যবসা করতে টাকা দিছে কিন্তু তাই বলে রুপাকে তো আর আমরা মাথায় তুলে রাখতে পারবো না। তাই এই বাড়ীতে তোর মায়ের মুখের উপর কথা বলতে বারন করে দিবি তোর বউকে। কথাটা বলেই আব্বা খাবার রেখেই চলে গেছে।

রুপা:- সব দোষ আমার আমি চলে যাবো থাকবো না আপনার সংসারে। আজ আমার জন্য মায়ের সাথে আপনার ঝগড়া হয়ছে।
সৌরভ:- ঠিক বলছো সব সমস্যা তুমি। তোমাকে কতবার বলেছি আম্মা কিছু বললে মুখে মুখে তর্ক করো না। কিন্তু তুমি সবসময় তর্ক করো।
রুপা:-সব সমস্যা আমি ঠিক আছে আমি আজ এখনি চলে যাবো।
সৌরভ:- ঠিক আছে চলে যাও তোমাকে আটকিয়ে রাখছি? কথাটা বলেই আমি বেড়িয়ে যাচ্ছি তখনি রুপা বলে,,,
রুপা:- হ্যা চলে যাবো আর আপনার মুখ জীবনেও দেখবো না কথাটা বলে রুপা উপরের দিকে গেছে আর আমি বাড়ী থেকে বেড়িয়ে এসেছি। আর ঐদিকে রুপা তার ব্যাগ গুচিয়ে বাপের বাড়ীতে চলে গেছে। রুপার মা রুপাকে দেখে বলে।

রুপার মা:- কিরে রুপা তোর এই অবস্থা কেনো?
রুপা:- আম্মু আমি চলে এসেছি আমি আর জীবনেও ঐ বাড়ীতে ফিরে যাবো না। আজ তোমাদের জামাই আমাকে বলে সব সমস্যা নাকী আমি তাই আমি চলে এসেছি।
রুপার মা:- কি এত বড় কথা ঠিক আছে আমি এমনি এমনি ছাড়বো না তোর বাবা আসুক চট্রগ্রাম থেকে। আমি তোর বাবাকে দিয়ে থানায় মামলা করিয়ে পুলিশের ভাত খাওয়াবো।
রুপা:- তোমার যা ইচ্ছে করো। আমি কিন্তু আর ঐ বাড়ীতে যাবো না কথা বলে রুপা তার রুমে গেছে। এদিকে সৌরভের মা দরজা বন্ধ করে রাখছে আর ওর বাবা ডাকতেছে কিন্তু কোনো সারা শব্দ হচ্ছে না। অনেকক্ষণ ডাকার পর দরজা খুলে বলে।

আম্মা:- কি হয়ছে এমন ভাবে ডাকতেছো কেনো?
আব্বা:- রুপা রাগ করে চলে গেছে আর সৌরভ কিছু না খেয়ে চলে গেছে।
আম্মা:- কি রুপা চলে গেছে যাক ভালো হয়ছে এখন আমি এই একটা কারণ দেখিয়ে রুপার সাথে সৌরভের ছাড়া ছাড়ি করিয়ে নিবো। আর সৌরভকে অন্য একটা ভালো মেয়ে বিয়ে করাবো।
আব্বা:- কি বলছো তুমি এসব? সৌরভকে আবার বিয়ে করাবে? সৌরভ একদম রাজি হবে না। তুমি সৌরভকে ভুলেও এসব কিছু বলো না কিন্তু!
আম্মা:- তুমি চুপ থাকো আমি কি করি তা চুপচাপ দেখে যাবে কোনো কথা বলবে না বলেই নিচে এসেছে। খাবার টেবিল দেখে জিজ্ঞেস করে। সৌরভ কি না খেয়ে গেছে?

আব্বা:- হ্যা রুপা সৌরভ কেউ খায়নি। তখনি সৌরভের মা টিফিনে খাবার নিয়ে বলে,,,

আম্মা:- আমি সৌরভের কাছে যাচ্ছি ওর খাবার নিয়ে বলেই বেড়িয়ে গেছে। ৩০ মিনিট পড়ে সৌরভের কাছে এসেছে। দেখে সৌরভ নেই তখন সবুজ ওর মাকে দেখে বলে,,,
সবুজ:- মা তুমি এখানে?
আম্মা:- হ্যা। সৌরভ কোথায় ওকে দেখছি না কেনো?
সবুজ:- ভাইয়া সেই কখন গেছে এখনো ফিরে আসেনি কি মিটিং আছে নাকী! তখন সৌরভের মা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সবুজকে বলে,,,
আম্মা:- সবুজ তোর ভাইয়াকে বলিস। আর শোন সৌরভ কি করে কোথায় যায় এসব খবর তুই আমাকে দিবি। আর ব্যবসার দিকে সব নজর রাখবি কত টাকা লাভ হলো এই সব খবর কেমন?
সবুজ:- ঠিক আছে দিবো। তখনি আম্মা বেড়িয়ে গেছে।
সৌরভ আজকে আর আসেনি রাতে একে বারে বাড়ীতে গেছে এর মাঝে আজকে আর রুপার সাথে কোনো রকম কথা হয়নি। আর সৌরভ রুপাকে ফোন করেনি। তখন সৌরভের মা বলে।
আম্মা:- কিরে এসেছিস? যা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোর খাবার দিচ্ছি। সৌরভ কিছু না বলে রুমে গেছে রুমে ঢুকে দেখে রুপা নেই তার কোনো কিছু নেই তখনি সৌরভ দৌড়ে এসে ওর মাকে বলে,,,
সৌরভ:- আম্মা রুপা কোথায়? ওর কোনো জিনিসপত্র দেখছি না রুমে?
আম্মা:- রুপা চলে গেছে। রুপা তোর সাথে আর সংসার করবে না তাই রুপা চলে গেছে। সৌরভ শোন রুপা যেহেতু নিজে একা গেছে তুই আর যাবি না রুপাকে আনতে যদি তুই আমার সন্তান হয়ে থাকিস।
সৌরভ:- আম্মা আপনি কি বলছেন? রুপাকে আমি হার্ট করে কথা বলেছি সেইটা আমার বলে একদম ঠিক হয়নি। আমি এখুনি গিয়ে রুপাকে নিয়ে আসবো।
আম্মা:- থাক তার কোনো দরকার নেয়। আমি তোকে আবার বিয়ে করাবো রুপার থেকে সুন্দরী আর ভালো মেয়ে।
সৌরভ:- আম্মা হাসালেন। আবার আরেকটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চাচ্ছেন? আচ্ছা যদি সেই মেয়েটা আরো বেশী খারাপ হয় তখন কি করবেন? তখন কি আমাকে আবার আরেকটা বিয়ে করাবেন?
আম্মা:- সে খারাপ হবে না আমি নিজে খুঁজে বের করবো।
সৌরভ:- আম্মা আমার জন্য আর আপনার কষ্ট করতে হবে না। আপনি আমার জন্য অনেক করেছেন! এবার আমার জীবনটা আমার মত করে সাজাতে দেন। কথা গুলি বলেই সৌরভ বাড়ী থেকে বেরিয়ে রুপার নাম্বারে ফোন করছে কিন্তু নাম্বার বন্ধ তাই সৌরভ রুপার বাড়ীতে গেছে। সৌরভকে দেখে রুপার মা বলে,,,
রুপার মা:- তুমি কেনো এসেছো আমাদের বাড়ীতে?
সৌরভ:- আম্মা আমি রুপাকে নিতে এসেছি। রুপা কোথায়?
রুপার মা:- রুপা তোমার সাথে যাবে না। রুপা তোমাকে ডির্ভোস পাঠিয়ে দিবে। তুমি এখন এখান থেকে চলে যাও।
সৌরভ:- প্লিজ আম্মা আমাকে একবার রুপার সাথে দেখা করার সুযোগ দেন প্লিজ। রুপার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তখনি রুপার বড় বোন এসে বলে,,,

রুপার বোন:- রুপার সাথে তোমার কোনো কথা বলতে হবে না। তুমি চলে যাও আমাদের বাড়ী থেকে। আর হ্যা তুমি এখন তোমার মায়ের আচলের নিচে থাকো তোমাকে এখন কেউ কোনো অভিযোগ দিবে না।
সৌরভ:- আপা আপনি এসব কি বলছেন?
রুপার বোন:- কি বলেছি তোমাকে? তোমার মত ছেলে আমার জীবনেও দেখিনি। আমার স্বামী আমাকে বাঘের মত ভয় পায়। আমি যা বলি তা শুনে আর তুমি কি না মায়ের কথা উঠ বস করো? তুমি যাও আমার বোন তোমার সাথে সংসার করবে না।
সৌরভ:- আমি আপনাদের কারো সাথে কোনো কথা বলতে চায়না। আমি শুধু রুপার সাথে কথা বলতে চাই। বলেই সৌরভ জোর করে ভিতরের রুমের দিকে যাচ্ছে তখনি রুপা এসেছে।
রুপা:- কি হয়ছে এমন করছেন কেনো?(তখনি রুপা হাতটা সৌরভ ধরে বলে)
সৌরভ:- রুপা আমার ভূল হয়ছে। তোমাকে এবাবে কথা গুলি বলা আমার ঠিক হয়নি। প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে। আমি কথা দিচ্ছি আম্মা তোমাকে কিছু বললে আমি সেইটার প্রতিবাদ করবো।
রুপা:- দেখুন আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আর এখন থেকে আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি আর কোনো দিন আপনার সাথে সংসার করবো না। আমি কিছুদিনের মধ্যে আপনাকে ডির্ভোসের কাগজ পাঠিয়ে দিবো। দয়া করে এখানে আর কোনো চেঁচামিচি করবেন না। কোনো রকম খারাপ আচরোন না করে বাসা থেকে বেড়িয়ে যান।
সৌরভ:- রুপা কি বলছো এসব?
রুপা:- কিছুই বলিনি বলেছি আপনি বেরিয়ে যেতে। আপনি কোন মুখ নিয়ে এখানে এসেছেন?
সৌরভ:- তুমি কি বলো এসব? আমি তোমার স্বামী আমি তোমার কাছে আসবো না তো কে আসবে?
রুপা:- আপনি কি সেই স্বামীর অধীকার রাখছেন?
সৌরভ:- রুপা প্লিজ আমার এইটুকু ব্যবহারে তুমি এমনটা করতে পারো না।
রুপা:- এখনো তো কিছু করিনি আরো অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু নাহ থাক যেখানে আমি কোনো সম্পর্কে আর থাকবো না সেখানে কোনো ক্ষতি করে লাভ নেই।
সৌরভ:- রুপা কি বলো তুমি? আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
রুপার বোন:- কেনো থাকতে পারবে না? তোমার মা বাবা ভাই বোন সবাই আছে। সবাইকে নিয়ে থাকো।
রুপাররুপার মা:- সৌরভ তুমি এখুনি আমার চোখের সামনে থেকে যাও। তোমার মা আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিছে। আমি আর কখনো ঐ বাড়ীতে আমার মেয়ে দিবো না।
সৌরভ:- রুপা আমি শেষ বার বলছি তুমি কি সত্যি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে?
রুপা:- হ্যা পারবো আর না পারলেও নিজেকে বুঝিয়ে মানিয়ে নিবো যে যাদের স্বামী মারা যায় তারা কি স্বামী ছাড়া থাকতে পারে না? আমিও মনে করবো আমার স্বামী মরে গেছে,,, ঠিক তখনি সৌরভ রুপার হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে,,
সৌরভ:- ঠিক আছে ভালো থেকো তবে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। যদি কখনো আমাকে তোমার প্রয়োজন মনে হয় তখন একটা বার বলিও আমি চলে আসবো তোমাকে নিতে।
রুপা:- আপনার কথা আমার ভূল করেও মনে পড়বে না। আপনি এবার দয়া করে জান।
রুপার মা:- কি হলো রুপা তোমাকে কি বলেছে তুমি শোনতে পাওনি? নাকি আমি দারোয়ানকে ডাকবো।
সৌরভ:- থাক দারোয়ানকে ডাকতে হবে না। আর ধন্যবাদ রুপা। ভালো থেকো আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো কথাটা বলেই সৌরভ বেরিয়ে আসছে আর রুপা মন খারাপ করে রুমে চলে গেছে।
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here