আকাশ জুড়ে তারার মেলা পর্ব ৭

#আকাশ_জুড়ে_তারার_মেলা
#পর্ব_৭
#লেখিকা_N_K_Orni

— আচ্ছা আমি বলে দেখব। তারপর দেখা যাবে উনি কি করেন?

— তাহলে এখন আমি কি করব?

— তুই এক কাজ কর। তুই এখন বাসায় চলে যা। আমি একটু পরে তোর বাবা সব খুলে বলব।

— কিন্তু আমি চলে গেলে তুমি বাবাকে সবটা বোঝাবে কীভাবে?

— তুই বুঝতে পারছিস না। তুই এখন এখানে থাকলে বিয়ের বিষয় শোনার পর তোর মা বিয়েটা মেনে নেবে না আর তোকে যেতেও দেবে না।

— আর তুই চলে যাওয়ার পর শুনলে তখন তো উনি আর তোকে আটকে রাখতে পারবে না।

— কিন্তু…

— কোনো কিন্তু না। তোর বাবাকে তিহান রুমে দিয়ে এসেছে। উনি মনে হয় ঘুমাচ্ছে। এই সুযোগে যা তুই বাসায় চলে যা।

তানিশা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

— আচ্ছা।

— এইতো ভালো মেয়ের মতো কথা।

তানিশা এরপর তার রুম থেকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বেরিয়ে গেল। তানিশা মা মিসেস তাসনীম তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

— আমি তো প্রথম থেকেই ইফাদের সাথে ওর বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওর বাবার জন্য কিছুতেই পারিনি। পরে অবশ্য রোহানকে ওর জন্য পছন্দ করেছিলাম। আর রোহানকে ওর বাবারও পছন্দ। তাই ইফাদের কথা তো মাথা থেকে ঝেড়েই ফেলেছিলাম। কিন্তু এখন তো দেখছি ওই রোহানের থেকে ইফাদ বেশি কাজের। আর ইফাদের টাকাও বেশি। যাইহোক, আমি দেখি ওর বাবা কি করে?

এসব ভেবে তিনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। তানিশা বাসার বাইরে যেতেই দেখল ফাহিম দাঁড়িয়ে আছে। সে ফাহিম এখন এখানে আশা করেনি। তাই অবাক হয়ে বলে উঠল,

— ভাইয়া আপনি এখানে? কিন্তু আমি তো আপনাকে এখানে আসতে বলিনি।

— আসলে আপনার হসপিটাল থেকে বের হওয়ার একটু পরই আমি এখানে আসি।

— ওহহ।

— স্যার বলেছেন সবসময় আপনার সাথে থাকতে। ভাবি ভেতরে সব ঠিক আছে তো?

ফাহিমের কথার প্রতি উত্তরে তানিশা ছোট করে বলে উঠল,

— হুম।

ফাহিম তানিশা বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেল। তানিশা রুমে গিয়ে ড্রেস বদলে নিল। তারপর বিছানায় এসে বসে পড়ল। তার বিয়ের খবর জানার পর তার বাবা কি করবেন এটাই সে ভেবে পাচ্ছে না। তার খুব চিন্তা হচ্ছে। যতই হোক সে ইফাদের বিয়ে করা বউ। চাপে পড়ে বিয়ে করলেও সে তো আর বিয়েটাকে অস্বীকার করতে পারবে না। তাই এসব নিয়ে সে বেশ চিন্তিত আছে। তার বাবা একেই অসুস্থ। তারপর যদি এমন একটা খবর শোনেন তাহলে তিনি যদি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন এই ভেবে সে বেশ ভয়ও পাচ্ছে। তানিশা একেই ক্লান্ত ছিল তারপর এতো সব চিন্তা করতে করতে সে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে গেল। তানিশা ঘুম ভাঙল সেই মেয়েটার দরজা নক করার শব্দে। তানিশা পিটপিট করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল তিনটা বাজে। সে চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসল আর বলল,

— ভেতরে এসো।

তানিশার অনুমতি পেয়ে মেয়েটা দরজা খুলে ভেতরে এসে বলল,

— ম্যাম লান্স করবেন না? দুপুর তিনটা বেজে গেছে। আমি এর আগেও কয়েকবার এসেছি। কিন্তু আপনি ভেতরে আসার অনুমতি দেননি।

— আসলে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। তুমি যাও। আমি একটু হাত মুখ ধুয়ে আসছি।

মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে বলল,

— আচ্ছা ম্যাম।

এরপর তানিশা উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। তারপর ওখান থেকে ফিরে খেতে চলে গেল। খেয়ে এসে তানিশা আবার শুয়ে পড়ল। তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

— খুব বেশি বাজেনি। যাই আরেকটু ঘুমিয়ে নেই।

বলেই সে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। অফিসে বসে ইফাদ তানিশার এসব কান্ড দেখছিল। তানিশাকে এভাবে ঘুমাতে দেখে ইফাদের খুবই হাসি পেল। তানিশা এরপর বিকালের পরে ঘুম থেকে উঠল। সন্ধ্যায় তানিশা বারান্দায় বসে কফি খাচ্ছিল। কফিটা সে নিজেই বানিয়েছে, অন্য কাউকে বানাতে দেয়নি। তখনই ইফাদ বাসায় ফিরে এলো। সে রুমে এসে সেখানে তানিশাকে দেখতে না পেয়ে বারান্দার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকি দিল। তখন তানিশা ওর দিকে তাকাল। তানিশাকে ভেতরে দেখে ইফাদ ওখানে প্রবেশ করল। তখন তানিশা তার দিকে ভ্রু কুচকে বলে উঠল,

— আচ্ছা আপনি কি আগে চোর ছিলেন? নাকি পাশের বাসায় সিসি আন্টি যে সব কিছুতে শুধু উঁকি মারেন? কালকেও দেখছি আপনাকে উঁকি মারতে।

— আরে তুমি শুধু উদ্ভট চিন্তা করো। তার আগে বলো সিসি আন্টি কি?

— আপনি সিসি আন্টি চেনেন না? সিসি আন্টি মানে হলো ক্লোজ সার্কিট আন্টি। যেমন সিসি টিভি আছে, সিসি ক্যামেরা আছে ওই রকম সিসি আন্টিও আছে। ওদের দুর্বীনের মতো চোখ, অনেক দূরের খরব শোনার মতো কান আছে। তাদের বৈশিষ্ট্য কিছুটা সিসি ক্যামেরার মতো। তারা সবসময় আশেপাশের সবার দিকে সিসি ক্যামেরার মতো নজর রাখে।

তানিশার কথা শুনে ইফাদ থতমত খেয়ে গেল। এসব শুনে তার মাথা ঘুরছে। সে মাথায় হাত দিয়ে বলল,

— এতো সব কীভাবে মাথায় রাখো?

— তার জন্য সুন্দর চিন্তাভাবনার দরকার হয় না। যা আপনার নেই।

ইফাদ আর কিছু বলল না। তানিশার দিকে একবার তাকিয়ে রুমে চলে গেল। সে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় বদলে আবার ফিরে এলো। সে তানিশার সামনে বসতে বসতে বলল,

— কখন থেকে বসে আছো?

— এইতো একটু আগে কফি বানিয়ে নিয়ে এসে এখানে বসলাম।

তানিশার কথা শুনে ইফাদ অবাক হয়ে বলে উঠল,

— কিই! তুমি নিজে নিজে কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছ?

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সে বলল,

— আর এখানে বসে একা একা খাচ্ছ। আমাকে একবারও তোমার হাতের কফি খাওয়ার জন্য বললে না?

ইফাদের এমন কথায় তানিশা কিছুটা অবাক হলো। সে ভেবেছিল ইফাদ অন্য কিছু বলবে।

— কিন্তু আমি তো শুধু এইটুকু কফিই বানিয়েছি। আপনাকে দিতাম কীভাবে?

— তাহলে বানিয়ে নিয়ে এসো যাও। তুমি বানাবে কিন্তু।

— আচ্ছা। কফি শেষ করে যাচ্ছি।

তানিশা কফি শেষ করে উঠে চলে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর সে আবার ফিরে এলো। হাতে দুই কাপ কফি। দুটো কাপ দেখে ইফাদ ভ্রু কুচকে বলে উঠল,

— দুই কাপ কেন?

— একটা আপনার একটা আমার।

তানিশার কথা শুনে ইফাদ চোখ বড়ো বড়ো করে বলে উঠল,

— তুমি আবার খাবে।

তানিশা একটা কাপ তার দিয়ে এগিয়ে দিয়ে বলল,

— হুম খাব। এই সব ঝামেলার চক্করে পড়ে আমি অনেকদিন কফি খাইনা।

— ওহ আচ্ছা।

ইফাদ কফিতে চুমুক দিয়ে বলে উঠল,

— ওদিকের দিকে কি অবস্থা? তোমার বাবা হসপিটাল থেকে বাসায় চলে গেছেন?

— হ্যাঁ। বাবা এখন মোটামুটি সুস্থ।

— তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। তোমার বাবাকে আমাদের বিয়ের কথা বলেছ?

ইফাদের কথা শুনে তানিশা বলে উঠল,

— না।

তারপর সে তার মায়ের সাথে বলা কথাগুলো ইফাদকে বলল। সব কথা শুনে ইফাদ মুচকি হেসে বলে উঠল,

— যাক তোমার মা কাজটা ভালোই করেছেন। ওনার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। তুমি ফিরে এসে ভালোই করেছ।

ইফাদের কথায় তানিশা একটা শুকনো হাসি দিল। কিছুক্ষণ পর তানিশা ইফাদকে জিজ্ঞাসা করল,

— কফি কেমন হয়েছে বললেন না তো?

ইফাদ বাইরের দিকে তাকানো অবস্থাতেই বলে উঠল,

— একদম জঘন্য। তুমি একটা কফিও বানাতে পারো না।

ইফাদের কথা শুনে তানিশা ভ্রু কুচকে বলে উঠল,

— তাহলে খাচ্ছেন কেন আমার বানানো কফি? ফেলে দিন। কেউ আপনাকে খাওয়ার জন্য জোর করেনি।

তানিশার কথা শুনে ইফাদ মুচকি হেসে বলল,

— আমার বউয়ের বানানো তাই আমি খাচ্ছি।

তানিশা কিছু বলতে যাবে তখন ওখানে ফাহিম এলো। সে ইফাদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,

— স্যার প্লিজ আমার সাথে একটু বাইরে আসেন।

চলবে,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here