আজও ভালোবাসি তোমায়❤ পর্ব -১২

#আজও_ভালোবাসি_তোমায়❤
#Writer_মাহিয়া_মিতু
#Part_12
🍁
🍁
নিচে এসে মিতু নামাজ পড়ে মেয়ের পাশে কিছুক্ষণ বসে থাকে তারপর রান্নাঘরের দিকে যায়, রান্না করতে। আজকে আবার আবির আর মালা ও আছে।
মিতু রান্না শুরু করার পরপরই মালা আসে আর বলে
——- আরে তুই একা কাজে লেগে পড়লি, আমাকে ডাকলি না কেন। দে আমি হেল্প করছি।
——- আরে আমি একা পারবো, তুমি…
—— দূর, সর তো উনি কাজ করবে আর আমি নাকি বসে বসে দেখবো।
——- আচ্ছা বাবা, তোমাকে বসে থাকতে হবে না, তুমি কাজ করো🙂
তারপর ওরা দুজনে মিলে রান্না শেষ করে একে একে টেবিলে সাজিয়ে রাখে।
তখনই আবির বেরিয়ে আসে মিমি কে কোলে নিয়ে।
——- আরে তোমাদের রান্না শেষ, দেখ আমরা চলে এসেছি। তাড়াতাড়ি খেতে দাও তো আমাদের কিন্তু খুব খিদে পেয়েছে, তাই না মামনি।
——– হ্যা, আর খাবারের দারুণ গন্ধে খিদে আরো বেড়ে গেছে।
মিমির কথা শুনে সবাই হেসে উঠে।
——- আচ্ছা, মাম্মা। নানুরা কখন আসবে বলো তো, ওরা জানে না যে আমি ওদের খুব মিস করছি। আমার বার্থডে তেও ওরা থাকেনি😒
——- এইতো নানুভাই, আমরা চলে এসেছি।
মিতুর মা বাবা কে দেখে মিমি ছুটে যেয়ে ওদের জড়িয়ে ধরে
——– তোমরা এসে গেছো, আই আম সো হ্যাপি বাট আমি তোমাদের উপর খুব রেগে আছি, তোমরা আমার বার্থডে তে থাকো নি।😶
——— এত্ত গুলো সরি দিদিভাই, আর আমরা জানি তো যে আমার নানুভাই টা খুব রেগে আছে আমাদের উপর তাই তো তার রাগ ভাঙানোর জন্য এত্ত গুলো চকলেট এনেছি, এই দেখো🙂
——– ওয়াও, এগুলো সব আমার ☺ উমমমা তোমরা খুব ভালো।
তারপর ওরা ভিতরে ঢুকে সোফায় বসে আর মিতু বলে
——- মামার শরীর এখন কেমন আছে মা।
——– এখন অনেক টা ভালো, তাই তো চলে এলাম। মিমি টা কে রেখে কোথাও যেয়ে মন দাঁড়াতেই চায় না🙂।
তারপর ওরা সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে।
এদিকে ফারহান দের বাড়িতে সকালে ও নাস্তা করতে বসে সেই সময় ওর মা বলে
——- ফারহান বাবা, একটা কথা বলার ছিলো তোকে শুনবি।
——– বলো কি বলবে।
——– ইয়ে ম মানে
——– আরে আম্মু কি ইয়ে মানে মানে করছো, যা বলবে ক্লিয়ারলি বলে ফেলো তো।
—— আসলে বলছিলাম যে, অনেক তো হলো বাবা, এবার বিয়েতে রাজি হয়ে যা না বাবা। তুই আমাদের একমাত্র ছেলে, আমাদের ও তো ইচ্ছে করে তোর বিয়ে দেবো নাতি নাতনীর মুখ দেখবো।
——- হয়েছে, শেষ তোমার বলা। এবার আমি যায়,
——- রাগ করছিস কেন।
——– তো কি করবো, আসলে ধরে সেই এক টপিক নিয়ে পড়ে আছো। একবার বলেছি না, আমাকে বিয়ের কথা বলবে না।😡
——- ফারহান, তোমার আম্মু তো ঠিক ই বলেছে।
——– আব্বু প্লিজ, এবার তুমি ও আম্মুর মতো শুরু করো না, আসছি আমি।
—— আরে ফারহান, শোন বাবা। খেয়ে যা। না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস, ফার, উফ চলে গেলো।
ফারহান রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে যায়, ও গাড়ি তে করে যেতে যেতে মিমির স্কুলের সামনে মিমি কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামিয়ে ওর কছে যায়।
মিমি তো ফারহান কে দেখে খুব খুশি হয়ে দৌড়ে ওর কাছে আসে।
——- আরে প্রিন্স আংকেল তুমি☺
——- হ্যা মামনি, কিন্তু তুমি এখানে দাড়িয়ে আছো কেন মা।
—— আম্মু স্কুলে দিয়ে গেছে আর বলেছে স্কুল ছুটি হলে এসে নিয়ে যাবে কিন্তু আজকে কি জন্য যানি না তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিয়েছে, তাই এখানে দাড়িয়ে ছিলাম🙂, ভালোই হলো তুমি এসেছো, আম্মু আসবে তো এখনো অনেক পরে ততো সময় আমি তোমার সাথে ঘুরবো☺, আমায় নিয়ে যাবে তো প্রিন্স আংকেল তুমি ঘুরতে 😊।
—– ঠিক আছে মা, তাহলে তুমি বলো কোথায় যাবে আজ আমি তোমাকে সেখানে নিয়ে যাবো🙂।
——– সত্যি আমি যেখানে যেতে চায়বো সেখানে নিয়ে যাবে☺
—— হ্যা, মা। নিয়ে যাবো🙂
—— প্রমিস
—— প্রমিস🙂
——- ওকে, তাহলে আজ আমাকে তোমার বাড়িতে নিয়ে চলো। তুমি তো আমাকে বলেছিলে আমাকে একদিন তোমাদের বাড়ি তে নিয়ে যাবে, ওখানে আমার আরো একটা দাদু দিদা আছে, তাদের সাথে দেখা করাতে, তাহলে আজ নিয়ে চলো না, প্লিজ☺
——- ওকে মা, চলো।
তারপর ফারহান স্কুলের দারোয়ান কে বলে মিমিকে সাথে নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসে।
ফারহান মিমি কে কোলে করে নিয়ে বাড়ি তে ঢোকে। তখন ওর বাবা মা ড্রয়িং রুমে বসে ছিলো।
ফারহান মিমি কে ওদের সামনে নিয়ে গিয়ে বলে
—— মামনি এই দেখো তোমার আর একটা দাদু আর দিদা, আর আব্বু আম্মু এ হলো মিমি, তোমাদের কে যার কথা বলেছিলাম।
ফারহানের মা ওর কথা শুনে মিমির দিকল তাকায়, তাকানোর সাথে সাথে উনি দাড়িয়ে যান আর অবাক চোখে মিমির দিকে তাকিয়ে থাকে।
——- কি হলো আম্মু, তুমি ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
——- আরে এ তো
——- কি আম্মু
——- আরে ফারহান একে দেখে আমার মনে হচ্ছে আমি যেন বিশ বছর আগের তুই সেই ছোট্ট ফারহান কে দেখছি। যেন একদম তোর কার্বন কপি।হবুহু তোর মতই🙂, আর দেখ ওর চোখ, ঠোঁট একদম তোর মতো। ছোট্ট বেলায় তুই একদম এরকম ছিলি। আমার যেন মনে হচ্ছে যে আজ আমার সেই ছোট্ট ফারহান আর বড় ফারহান একসাথে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে 🙂
—— আরে সত্যি ই তো তাই, ওই দেখো ফারহান তোমার ছোট্ট বেলার ছবি, ছবিটা নিয়ে তুমি নিজেই মিলিয়ে দেখো, তাহলে তুমি বলবে, যে ও একদম তোমার মতো।
ওর বাবা মার কথা শুনে ফারহান ওর ছবি নিয়ে দেখে, এবার ওর মনে খুব বড়ো সড় একটা ধাক্কা লাগে, কারণ সত্যি ই মিমিকে একদম ওর মতোই মনে হচ্ছে।
কিন্তু এটা তো তখনই সম্ভব যদি…, তাহলে কি মিমি
ও আর ভাবতে পারছে না।
তারপর মিমি ওদের বাড়ি তে অনেক সময় থাকে, ওর বাবা মার ও মিমি কে খুব ভালো লাগে, যেতেই দিতে ইচ্ছা করছিলো না। মিমি ও ওদের সাথে খুব মজা করে।
ওকে এদের সাথে এভাবে মিশতে দেখে মনে হচ্ছে কতোদিনের চেনা, আসলে রক্তের সম্পর্ক মনে হয় এরকমই হয়।বাইরের চোখে যতই অচেনা মন হোক না কেন, মনের চোখ চিনতে ভুল করে না।
তারপর ফারহান মিমি কে নিয়ে বেরিয়ে যায় ওকে দিতে কারণ মিতু হয়তো এতো সময় চলে এসেছে, ও চিন্তা করবে।
ওর বাবা মার ও ইচ্ছে করছে না মিমি কে যেতে দিতে কিন্তু কি করবে।
ফারহান মিমি কে নিয়ে আবার ওর স্কুলের সামনে আসে, এসে দেখে মিতু দাঁড়িয়ে আছে। তারপর ও গাড়ি থেকে নেমে মিমি কে নিয়ে মিতুর কাছে য়ায়।
মিমি কে দেখে মিতু দৌড়ে আসে
——- কোথায় গিয়েছিলে মা তুমি আমাকে না বলে, মাম্মা র টেনশন হয় তো।
——- সরি মাম্মা, আসলে আমি ভাবলাম তোমার আসতে দেরি হবে তাই আমি প্রিন্স আংকেলের বাড়িতে গিয়েছিলাম।জানো মাম্মা ওখানে আমার আরো একজন দাদু আর দিদা আাছে, ওরা আমাকে কত্ত আদর করেছে৷ ☺
মিমির কথা শুনে মিতু খুব অবাক হয় সাথে মিমি কে হারানোর একটা ভয় ওর মনে তাড়া দেয়। শত হলেও ফারহান ওর বাবা। মিমির উপর ওর ও যতোটা অধিকার আছে ফারহানের ও ততোটাই আছে।
ফারহান যদি এটা জেনে যায় যে মিমি ওর মেয়ে তাহলে যদি ওকে মিতুর কাছ থেকে কেড়ে নেয়।
নাহহহহ! মিতু এটা কিছু তেই হতে দেবে না।
ফারহান এভাবে মিতুকে কিছু একটা ভাবতে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায় কিন্তু কিছু বলে না।কারণ ওর সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই ওর।
তাই ও মিমি কে বলে
—— মামনি আজ তাহলে আমি আসি, তুমি তোমার মায়ের সাথে বাড়ি চলে যাও, কেমন🙂
——- ওকে।
তারপর ফারহান চলে যায় আর মিতু ও মিমি কে নিয়ে বাড়ি চলে আসে।
.
.
.
.
চলবে…….
….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here