আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে পর্ব -১৮

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(18)

“ঠিক যেমনটা বাবা করে? নাকি ফুফা যেমন তোমাকে দিনরাত উঠতে বসতে কথা শোনাতে ছাড়েনা তেমন?”

“আদিল বাবা চুপ করে যা। ফুফি বয়স্ক মানুষ কোথা থেকে কি বলে দিয়েছে, মনে রাগ রাখিস না বাবা আমার।”

আদিলের বলা কথা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন মহিলাটি। তেজী কণ্ঠে আদিলের দিকে তাকিয়ে বললেন,

“এখন তুই আমাকে খোঁটা দিচ্ছিস? তাও তোর ওই বউয়ের জন্য? রাস্তা থেকে আসা কালকের মেয়ের জন্য তুই ফুফির মুখে মুখে কথা বলছি আদিল? আমি তোর মা কে কতোবার বললাম এসব গরীব ঘরের মেয়েরা সংসার সামলাতে পারেনা, এরা বড়লোক বাড়ীতে গিয়ে গোছালো সংসার ভেঙে দেয়। এদের হারে হাড়ে চেনা আছে আমার।”

“ফুফি তোমার কি মনে হয়না তুমি অনেক বেশিই বলে ফেলছো? ভুলে যেওনা নূর এখন আমার স্ত্রী। আর যেটাকে তোমার আদিখ্যেতা মনে হচ্ছে সেটা হলো দায়িত্ব। পুরুষ হিসেবে আমার দায়িত্ব নিজের স্ত্রীকে রক্ষা করা। আর যাইহোক আমার ফুফা কখনও পুরুষ মানুষ হতে পারেনা, সে একজন কাপুরুষ। কথায় কথায় স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা কোনো পুরুষ মানুষের ধর্ম হতে পারেনা। আর নারী কোনো খেলনা না, যে তাকে মারা যায়, ভাঙ্গা যায়। নারী হলো একখন্ড কাদার তালের মতো। ভালোবেসে যেভাবে রুপ দেবে নিঃশব্দে সেই রূপ গ্রহণ করে ফেলবে।”

ফুফি কটমট চোখে আদিলের দিকে তাকিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে গেলেন। আসলে আমাদের সমাজটাই এমন। নিজে যে কষ্টগুলো সহ্য করেছে অন্যকেও একই কষ্টের ভাগীদার করতে চায়। আদিলের তার স্ত্রীর প্রতি এমন কোমল ব্যাবহার কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ফুফি। প্রতিটা মুহূর্তে মনে পড়ে যাচ্ছে তার সংসার জীবনের কথা।

“এদিক ওদিক না তাকিয়ে চুপচাপ খাওয়াটা শেষ করো।”

এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরও আদিলের স্বাভাবিক ব্যাবহার কেমন যেনো লাগলো নূরের। মানছে যে ফুফু অনেক বাজে কথা বলেছেন। তাও তিনি গুরুজন, এভাবে ওনাকে অপমান করা উচিত হয়নি আদিলের। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু বলার সাহস যুগিয়ে উঠতে না পেরে চুপচাপ খাওয়াটা শেষ করলো।

“আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে রূমে এসো।”

আদিলের কথায় মাথা নাড়িয়ে নূর চলে গেলো কিচেনের দিকে। বেশ খোঁজাখুঁজির পর কাঙ্ক্ষিত জিনিসগুলো পেয়ে গেলো। কফি বানিয়ে রূমে আসতেই আদিলকে সারা বাড়ীতে পায়চারি করতে দেখে ভীষণ অবাক হলো নূর। এইতো একটু আগেই স্বাভাবিক ছিলো, এখন আবার কি হলো। ভাবতে ভাবতেই হাতে টান পড়ায় সেদিকে তাকাতেই চোখে পড়লো আদিলের স্পর্শ। কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি সৃষ্টি হলো সবটা জুড়ে। অনুভূতিটা ভালোলাগার না, বরং বেশ বি*ষাক্ত এক অনুভূতি। পরিচিত হলো এক তিক্তময় অনুভূতির সাথে। এক ঝটকায় নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলো আদিলের হাত থেকে। ব্যাপারটা বেশ স্বাভাবিক ভাবে নিয়েই আদিল বললো,

“আই অ্যাম সরি নূর। এখন থেকে তুমি আমার দায়িত্ত্ব, অথচ প্রথম দিনেই আমি আমার দায়িত্ত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারলাম না। রিয়েলী সরি।”

আদিলের নতজানু চেহারা দেখে ভীষণ বিস্ময়ের সাথে অবাকও হলো। খুব কম পুরুষ মানুষ আছে যারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে। আর এভাবে ক্ষমা কোনো পুরুষ চায় বলে তার মনে হয়না। আদিলকে যত দেখছে ততো অবাকই হচ্ছে নূর।

“কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে। যদি সময় হয় তোমার তাহলে বলতে পারি?”

নূর মাথা নেড়ে হ্যাবোধক সম্মতি দিতেই আদিল একটু গলা ঝেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। তারপর ইশারায় নূরকে বেডে বসতে বলে নিজেও বসে পড়লো।

“কাউকে ভালোবাসো?”

এমন সোজাসাপ্টা কথার পিছনে আসলে যে কি উত্তর দেওয়া যায় নূরের জানা নেই। সত্যটা প্রকাশ করবে কিনা করবেনা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে পাড়ি দিতেই আদিলের কথা শুনে অবাক চকিত নয়নে দৃষ্টিপাত করে সেদিকে।

“ভালোবাসলেও প্রকাশ কোরোনা কখনও। আমি যতোই আমার আম্মুর দেওয়া শিক্ষা মতো চলার চেষ্টা করিনা কেনো, দিন শেষে আমিও একজন মানুষ। মানুষ নামের মনুষ্যত্বহীন প্রাণীর অন্তর্ভূক্ত আমিও।”

বেশ কিছুক্ষন নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেল চারিপাশ, শোনা গেলো কিছু গভীর দীর্ঘশ্বাস।

“বিয়ের পর সব স্বামীরা হয়তো অতীত জানতে চায়। কিন্তু আমি অতীত চাপা দিতে চাই। অতীতের ক্ষ*ত নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করলে শু*কি*য়ে যাওয়া জ্বা*লা*পো*ড়া আরোও দ্বিগুণ হারে জ্ব*লে ওঠে। আজ যে বিশ্বাস নিয়ে আমাকে তোমার অতিতের শরিক করবে সময় বিশেষে আমিই হয়তো সেই শু*কনো ঘা তা*জা করে ফেলতে পারি। তাই সেই অতীত অজানা হিসেবে পিছনে ফেলে রাখা উত্তম।”

আদিলের সাথে পরিচয় হওয়ায় পর থেকেই তার প্রতিটা কাজে, কথায় বরাবরই মুগ্ধ হচ্ছে নূর। মুগ্ধতার আসতো এক উদাহরণ যেনো আদিল।

_____________________

ছাদের রেলিং ধরে আনমনে দাড়িয়ে আছে অরুনিকা। মাথায় চলছে হাজারো চিন্তার ভীড়। বাড়ীর সবার কথা খুব করে মনে পড়ছে, মনে পড়ছে তাদের চার বন্ধুমহলের কথা। কতো সহজে সব ছিন্নভিন্ন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলো। আদিত্যর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি, নূরের বিয়ে হয়ে গেছে। আজও নূরের বলা কথাগুলো আঘাত করে অরুনিকাকে। কথার থেকে বড়ো হা*তি*য়ার হয়তো কিছু নেই, কিছু শব্দচয়ন যেমন দ*গ্ধ ক্ষ*তে ম*ল*মের মতো কাজ করে তেমনি সুন্দর সম্পর্ক ভে*ঙ্গে বি*ষি*য়ে দিতে পারে সবকিছুই। কিছুদিনের ব্যাবধানে সবকিছু কেমন। যেনো ওলটপালট হয়ে গেছে।

পিছন থেকে পুরুষালি হাতের ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে অরুনিকা। দুপুরের পর থেকে আদাভানের সামনে যেতে কেমন যেনো লজ্জায় ঘিরে ধরছে। মূলত সেকারণেই রাতে খাওয়ার পর আর রুমে যেতে পারেনি। সোজা ছাদে এসেছে। আদাভান ঘুমানোর পরেই রূমে যাবে বলে মনস্থির করেছিলো। কিন্তু হয়! যেখান থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আস্ত সেই মানুষটাই তার সান্নিধ্য পেতে উতলা হয়ে পড়েছে।

চলবে?
#Fiza Siddique

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here