আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে পর্ব -১৭

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(17)

“তোমার ছোট্ট মাথায় এতো চিন্তা আসে কোথা থেকে বলোতো!”

সেন্টার টেবিলে খাবার রাখতে রাখতে আদাভানের কথায় কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে তাকায় অরুনিকা। কথাটা আসলে তাকে কোন কারণে বলা হচ্ছে বুঝতে বেশ বেগ পেতে হয় তার। দুই ভ্রুর মাঝের অংশ ক্রমশ কুঁচকে স্রোতের ন্যায় আকার ধারণ করেছে। দুই হাত কোমরে গুঁজে এগিয়ে যায় আদাভানের দিকে। বেশ তেজী গলায় কিছু একটা বলার প্রস্তুতি নিতেই এগিয়ে আসে আদাভান।

“আমাকে বোধহয় কিছু বলতে চাইছিলে।”

“নাহ নাহ। একদমই না। দূরে সরে যান না একটু।”

“কেনো কাছে আসলে সমস্যা কি?”

“কেমন কেমন হয় আমার।”

“কেমন হয় জানপাখি?”

আদাভানের কথায় ভড়কে যায় অরুনিকা। এতোক্ষণে যে কি বলে ফেলে খেয়াল আসতেই জিভে কামড় দেয়। এদিকে পিছাতে পিছাতে একদম দেওয়ালের সাথে লেগে গেছে। দুজনের মাঝে পাঁচ ইঞ্চি ফাঁক বিরাজমান। নিঃশ্বাসের গতি ক্রমশ ভারী হয়ে উঠেছে অরুনিকার। সেদিকে দৃষ্টি ফেলে ফিচেল হাসলো আদাভান। ডান হাত অরুনিকার গলা স্পর্শ করে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে গালে স্লাইড করতে শুরু করে। দুজনের মাঝে দূরত্ব ক্রমশ হ্রাস পেতে পেতে শূন্যের খাতায় এখন।

“ভালোবাসো?”

আদাভানের এতো কাছ থেকে বলা মিহি কন্ঠ শ্রবণ হাওয়ার পর বেশ কয়েকটা হৃদস্পন্দন অচিরেই দমে গেছে। লজ্জাবতী লতার মতো নুয়ে পড়েছে এক প্রেমিকা নারী। এই এক শব্দে বুঝি এতো লজ্জা? এতো ভালোলাগা? এতো উত্তেজনা থাকে?

উপর নীচে মাথা নাড়িয়ে মিথ্যে বলার ব্যার্থ চেষ্টা করতেই আদাভানের স্পর্শ আরোও গভীরে পরিনত হলো। দূরত্ব শূন্যের থেকেও কমে গিয়ে ঠেকেছে। ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা প্রেয়সীর ব্যাকুল হৃদয়ে বার কয়েক ঝুঁকে দেখার চেষ্টায় ব্যার্থ প্রেমীক হৃদয় এখনও বেশ শান্তশিষ্ট।

“উহু! মিথ্যে নয়। খোলা আকাশের মতো চিরন্তন সত্য চাই। সদ্য প্রস্ফুটিত পুস্পমুকুলের ন্যায় স্নিগ্ধ শোভন চাই। সে কালিমা মুক্ত উগ্র রক্তজবা হোক, তবুও ছলনাময়ী গোলাপ না হোক।”

একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা চোখের মাঝে হালকা জলের আভাস পরিলক্ষিত হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে শোনা গেলো এক কোমল স্বর। সেই কন্ঠে ছিলো বেদনা নিঃসারক ওষুধ, ছিলো আবেগের ছোঁয়া। মধুর শেষ বিন্দুটুকু ঢেলে দিয়ে যেনো উচ্চারিত হলো এই শব্দগুচ্ছ। উফ্! এতো ভালোলাগা। মন খারাপের শেষটুকুও নিংড়ে নিয়েছে নিমেষে এই শব্দ।

“ভালোবাসি।”

অপলক তাকানো প্রেমিক পুরুষের চোখের ভাষা বুঝে মুচকি হাসলো অরুনিকা। তার মনের ভালোলাগা বেশ কয়েকগুণ বেড়েছে। কিছুক্ষন আগের মন খারাপের রেশটা একেবারে নেই বললেই চলে। প্রেমীক পুরুষের চোখে চোখ রেখে আবারো কিছু শব্দ গুছিয়ে ওঠার চেষ্টায় বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হলো।

“এসে গেছি আমি আমার প্রেমের অনলে পো*ড়া*তে তোমাকে। নিঃস্ব আমি তোমাকে নিঃশে*ষে পরিপূর্ণতা খুঁজে পাবো।”

“তোমার মনের আঙ্গিনায় ছোট্টো করে কুড়ে ঘর বানিয়েছি বহু পূর্বে, তবে এবার অট্টালিকা বানানোর পালা।”

“তিক্ততাকে মিষ্টটাতে ভরিয়ে তুলতে আমার আমিটা বিলিয়ে দিলাম তোমার মাঝে। সামলে রেখো প্রিয়।”

নির্বাক শ্রোতার মতো অবাক নয়নে চেয়ে চেয়ে প্রতিটা অক্ষর শুনলো আদাভান। শুধু শোনেনি বরং অনুভব করেছে। অনুভবে খুঁজে পেয়েছে কথার গভীরত্ব। প্রেয়সীর নুয়ে যাওয়া থুতনি এক হাতে উঁচু করে মিহি কন্ঠে বলে উঠলো,

“ইশ! এতো বেপরোয়া করে দিলে প্রাণপাখি। আজ সামলাতে পারবে তো?”

ডুবন্ত সূর্যের চেয়েও রক্তিম আভাতে চেয়ে গেছে অরুনিকার চেহারা। হৃৎপিণ্ডের প্রবাহমাত্রা বেগতিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। দ্রিম দ্রিম আওয়াজে বারংবার জানান দিচ্ছে তাদের অবস্থান। এতো লজ্জা এজীবনে আর কখনো পাওয়া হয়নি অরুনিকার। মনে মনে সুধু আওড়ালো,

“অসভ্য”

“রক্তিম হওয়ার সময় বাকি আছে প্রাণপাখি। রক্তিমে রাঙা তোমাকে সূর্যাস্তের পর উপভোগ করবো বেশ সময় ধরে।”

কোমল মুখভঙ্গি মুহুর্তেই কঠোর করে এক হাত টেনে বেডে বসিয়ে দেয় আদাভান। হাত ধুয়ে এসে টেবিল থেকে ভাতের থালা নিয়ে নিজেও বসে অরুনিকার মুখোমুখি। সরে যেতে নিলে একহাতে পাকড়াও করে ধরে আদাভান। প্লেটে ভাত মাখিয়ে অরুনিকার সামনে ধরতেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা প্রেয়সীর দৃষ্টি বুঝতে সক্ষম হয় আদাভান।

“আসার সময় আম্মুর রুম থেকে ঘুরে এসেছিলাম। সেখানেই জানলাম কেউ একজন আমার অপেক্ষায় উপোশ দিন পাড়ি দিচ্ছে।”

বিনাবাক্যে মুখের সামনে ধরা ভাতের লোকমা মুখের মধ্যে নিয়ে নিলো অরুনিকা। নিজেকে ভীষণ সুখী একজন বলে মনে হচ্ছে আজ। নাহলে এমন ভালোবাসার মানুষ কতোজনই বা পায়। কয়েক লোকমা খাওয়ার পর নিজেও হাত ধুয়ে এলো অরুনিকা। বাড়তে থাকা ইচ্ছেকে ধামা চাপা না দিয়ে অন্য প্লেটটা হাতে নিতে গেলে বাধ সাধে আদাভান। নিজের হাতের প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে ইশারায় কিছু একটা বোঝাতেই সেখান থেকে ভাত মাখিয়ে খাওয়ানো শুরু করে অরুনিকা।

প্রথম কাউকে খাওয়ানোর দরুন বেশ বেগ পোহাতে হয় অরুনিকাকে। মাঝে মধ্যেই আদাভানের গাল ভরে দিচ্ছে ঝোলে, আবার কখনো কিছু ভাত এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক ওদিক থেকে পড়ে যাচ্ছে। নিজের কাজে নিজেই বিরক্তবোধ হলেও আদাভান ভীষণ আয়েশী ভঙ্গিতে খেয়ে চলেছে। মুখে লেগে যাওয়া ঝোলের অংশও মোছার চেষ্টা বিন্দুমাত্র নেই তার মাঝে। বরং ভীষন উপভোগ করছে সবকিছু। সন্তানের প্রথম বাবা ডাক, প্রথম হাতেখড়ি দেখার সৌভাগ্য সব পুরুষের হলেও প্রেয়সীর প্রথম কিছু দেখার সৌভাগ্য আর কারোর হয়েছে কিনা সন্দেহ। সে ক্ষেত্রে দেখতে গেলে আদাভান ভীষণ ভাগ্যবান। প্রেয়সীর প্রথম খাওয়ানোর হাতেখড়ি তার দেখার সাথে উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়েছে। ভেবেই মুচকি হাসলো আদাভান।
_________________

ফুফুশাশুড়ির কথার তোপের মাঝে ফেঁসে কান্নারত নূরের ডানহাতে আরোও একটা হাতের স্পর্শ পেতেই চমকে সে। কান্নাভেজা চোখে পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো সদ্য স্নাত এক যুবককে। যুবকটি আর কেউ নয় তার স্বামী।

ভাবনার মাঝেই হাতে টান পড়ায় সেদিকে বাধ্য হয়েই এগিয়ে যেতে লাগলো নূর। আদিল একটা চেয়ার টেনে নূরকে ইশারায় সেখানে বসতে বললে ভীত নয়নে তাকায় সামনে বসে থাকা সেই মহিলার দিকে। এতক্ষণ তার বলা কুতুক্তিগুলো বেশ গভীরেই আঘাত করেছে নুরের। সাথে সঞ্চার হয়েছে ভয়। ভয়টা নিজেকে নিয়ে নয়, পরিবারকে নিয়ে। তার জন্য যেনো পরিবারকে কোনো কুতুক্তির সম্মুখীন হতে না হয়, মূলত এটারই ভয়।

নূরের করুন দৃষ্টি খেয়াল করে এতক্ষন ঘটে যাওয়া ঘটনা বেশ কিছুটা আঁচ করতে পারলো আদিল। বেশ জোর প্রয়োগ করেই নূরকে বসিয়ে নিজেও পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়লো। নূরের অভ্যাসের বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত হওয়ায় সকালে নাস্তায় ঠিক কি খেতে পছন্দ করে বুঝে উঠতে পারলোনা আদিল।

“আমাদের বাড়ীতে বেশিরভাগ সবাই সকালে ব্রেড টোস্ট, অমলেট নাতো স্যান্ডউইচ খায়। তুমি কি এসবে অভ্যস্ত? না হলে বলো অন্য কিছু বানিয়ে দিতে বলছি।”

অপরিচিত অজ্ঞাত এমন পরিবেশে ভালোবাসাময় কিছু শব্দ শ্রবণ হতেই হু হু করে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করলো নূরের। নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক রেখে কিছু বলার পূর্বেই বাজখাই গলায় কেউ বলে উঠলো,

“একদিনও যায়নি এখনি বউয়ের আঁচলে বাঁধা পড়েছিস আদিল। বলি পুরুষ মানুষ হয়ে বউকে এত আদিখ্যেতা কিসের? পুরুষ মানুষ হুকুম করতে শেখ।”

চলবে?
#Fiza_Siddique

আসলেই আমি দুঃখিত। একটা পর্ব লিখে পোস্ট করার সময় ডিলেট হয়ে গেছে। আজ আর দুই পর্ব দেওয়া হয়ে উঠলোনা। তবে কাল পেয়ে যাবেন বোনাস পর্ব। নিজেদের মতামত জানাবেন অবশ্যই।🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here