আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে পর্ব -১৬

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(16)

একটা ক্যাফেতে সামনাসামনি বসে আছে আদাভান আর কাব্য। কাব্যের মুখে বিরক্তির ছাপ দেখা গেলেও আদাভানের মনের অবস্থা মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই। মেসেজের সাথে এই ক্যাফের ঠিকানাটা পাঠিয়েছিল কাব্য। আদাভান দুটো মেসেজই খুব সন্তর্পনে ডিলেট করে নিজেই এসেছে কাব্যের সাথে দেখা করতে। ঠিক দেখা করতে এসেছে বললে ভুল হবে, কারণ আদাভান কোনো কারণ ছাড়া আসবেনা। তবে ঠিক কি কারণে এখানে এসেছে সেটা কাব্যের বোধগম্য হচ্ছেনা।

পনেরো মিনিট ধরে একইভাবে বসে থাকতে থাকতে আর সহ্য করতে পারলোনা কাব্য। বিরক্তির রেশটা এবার বহিঃপ্রকাশ করেই ফেললো।

“আপনার সমস্যাটা কথায় মিষ্টার আদাভান আহসান। গত পনেরো মিনিট ধরে আপনি আমাকে এভাবেই বসিয়ে রেখেছেন। আপনার সময়ের দাম না থাকলেও আমার আছে। যদি বলার মতো কোনো কথা না থাকে তাহলে আমাকে যেতে দিন।”

বিরক্তির সাথে বেশ কর্কশ মেজাজে কাব্যের কথা শুনে বিনিময়ে মুচকি হাঁসি উপহার দিলো আদাভান। আদাভানের কর্মকাণ্ডে কাব্য এবার অবাক না হয়ে পারছেনা। এমন পরিস্থিতিতে কেউ এতোটা শান্ত কিভাবে থাকতে পারে তার মাথায় আসছেনা। নিতান্তই পাগল না হলে বিরক্তি মিশ্রিত কিছু কথার পরিবর্তে মুচকি হাসি উপহার অন্তত কেউ দেয়না।

পেরিয়েছে আরোও দশটা মিনিট। কাব্য আর অপেক্ষা না করে চেয়ার ছেড়ে উঠতে গেলে একটা শক্তপোক্ত কিছু এসে তার পাতে লাগে। ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে মাত্রই নীচে পড়ে যেতে নিলে আদাভান ঝট করে উঠে এসে ধরে নেয় কাব্যকে। দুইহাতে কাব্যের কলার ঠিক করে হিশহিশিয়ে বলে ওঠে,

“আমার জিনিসের দিকে চোখ দিলে ঠিক এভাবেই মুখ থুবড়ে পড়তে হবে আপনাকে মিষ্টার কাব্য।”

কাউকে কিছু বলার বিন্দুমাত্র সুযোগও দিলোনা আদাভান। বরাবরের মতো গম্ভীর এক লুক নিয়ে বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে। মুখে লেগে থাকা ফিচেল হাসি জানান দিচ্ছে তার কাজের পরিণাম। খুব শান্ত স্বাভাবিকভাবে কাউকে অপমান কিংবা ওয়ার্নিং দিতে আদাভান বেশ দক্ষ।

আদাভানের চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাতের মুঠো শক্ত করে নিলো কাব্য। চোখেমুখে বিরাজমান কঠোর রাগকে দমনের চেষ্টায় চোখ বন্ধ করে বার কয়েক জোরে জোরে শ্বাস নিলো সে। এতো সহজে উত্তেজিত না হাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় মত্ত কাব্য।

“আমার এতো বছরের পরিকল্পনা জলে ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য আরও একবার জন্ম নিতে হবে আপনাকে মিষ্টার আদাভান আহসান। শুধু শুধু আমার পথের কাঁটা হয়ে নিজেকে ভ্যানিশ করার পরিকল্পনা নিজেই করছেন। এতো বছর ধরে খুব ঠাণ্ডা মস্তিষ্কে খেলে আসা গেমের পাশা এত সহজে বদলাতে আমি আপনাকে দেবোনা। তার জন্য যদি আপনাকেও মারতে হয় আমি দুইবার ভাববোনা সে কথা।”

কিছু কঠিন সত্য সাথে কিছু রহস্যের মায়াজালে চাপা পড়ে থাকা কথাগুলো কেউ জানতেই পারলোনা। নিজের মনের সাথে উক্ত কথোপকথন শেষ করে অদ্ভুত এক হাসি হাসলো কাব্য। সাথে আগামী পরিকল্পনার প্রস্তুতি নিতে দুই হাতে জামা ঠিক করে বেরিয়ে পড়লো তার উদ্দেশ্যে। যার সবটাই অজানা আদাভান আর অরুনিকার কাছে।

দুপুরে খাওয়ার টেবিলে বেশ দেরিতেই পৌঁছেছিলো আদাভান। বেশ কিছুক্ষন যাবত অপেক্ষা করার পরও আদাভানের কোনো খোঁজ না পেয়ে বাকিরা খাওয়া শুরু করলেও অরুনিকা অভুক্ত। বাড়ীর সবার অনেক জোরাজুরিতেও তাকে খাওয়ানো যায়নি। তবে এতে আনিকা আহসান বেশ খুশীই হয়েছেন। অরুনিকা আর আদাভান নিজেদেরকে গুছিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাক এটাই চান তিনি সবসময়।

রুমে ঢুকে অরুনিকাকে না পেয়ে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলো আদাভান। প্রশান্তি ছেয়ে এলো তার মনে প্রাণে। প্রেয়সীকে অগোছালো ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে বুকে তীব্র কম্পন সৃষ্টি হয়েছে তার। সোফায় মাথা এলিয়ে সাথে গালে লেপ্টে আছে অগোছালো কিছু অবাধ্য চুল। বাতাসের গতির সাথে সমান তালে উড়ে গিয়ে বেশ বিরক্ত করছে অরুনীকাকে। ঘুমের মাঝে অসাবধানতায় মাথা হেলে পড়ে যেতে নিলেই ঝট করে নিজের বুক সেদিকে এগিয়ে দেয় আদাভান। অরুনিকার ঘুম ভাঙ্গাতে না চাইলেও আচমকা ঘটনায় ঘুমটা হালকা হয়ে যায় অরুনিকার। দুই চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে নিজের অবস্থান বুঝতে চেষ্টায় মত্ত অরুনিকাকে দেখে নিঃশব্দে হাসে আদাভান। অরুনিকার ডান হাত ঘুমের মাঝেই আদাভানের ঠোঁট স্পর্শ করলে বার কয়েক চুমু এঁকে দেয় আদাভান। চট করে ঘুম ভেঙে যায় অরুনিকার। নিজেকে আদাভানের বুকের সাথে লেপ্টে থাকতে দেখে লজ্জার সাথে নতুন এক অনুভূতি ছেয়ে যায় সর্বাঙ্গে। কিছু একটা মনে পড়তেই তড়িৎ গতিতে ডান হাত সরিয়ে ফেলে আদাভানের ওষ্ঠ থেকে। অরুনিকা বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যায় এমন পরিস্থিতিতে। আদাভানের বুকে নিজেকে এভাবে আবিষ্কার করে এতোটাই হতবাক হয়ে পড়েছিলো যে হাতের অবস্থানের কথা ভুলেই বসেছিলো।

মিটিমিটি হেসে বারবার অরুনিকার দিকে তাকাচ্ছে আদাভান। প্রেয়সীর লজ্জা রাঙ্গা মুখশ্রী আরোও রক্তিম রাঙা করতে তর এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা সফল হয়েছে। লজ্জায় প্রায় নুয়েই পড়েছে অরুনিকা। দুই হাত বেশ কিছুক্ষন কচলাকচলি করে সোফা থেকে উঠে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার পূর্বেই এক শক্তপোক্ত হাত টেনে ধরে তার বাম হাতের কব্জি। বেশ আলগোছেই ধরা সেই হাতের স্পর্শে আরো কম্পিত হয়ে উঠেছে অরুনিকার সর্বাঙ্গ। বাহ্যিক অংশের সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ সমস্ত অঙ্গও সমান তালে কম্পন বৃদ্ধির জানান দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। বুকের মাঝে অবস্থিত ছোট্টো সেই কম্পায়মান যন্ত্রটা বেশ দ্বিগুণ হারে কম্পিত হয়ে চলেছে। নাকের ডগা থেকে শুরু করে দুই ঠোঁট সমান হারে কম্পিত হচ্ছে। প্রেমীক পুরুষের স্পর্শ এতোটা স্পর্শকাতর হয় জানা ছিলোনা অরুনিকার।

“দুজনের জন্য খাবার নিয়ে এসো, যাও।”

বলেই পাকড়াও করা হাতটা ছেড়ে দেয় আদাভান। অরুনিকা ভ্রু কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে পিছনে ঘুরে একপলক তাকায় আদাভানের দিকে। মাথায় বেশ কিছু প্রশ্ন নিয়েই বেরিয়ে পড়ে কিচেনের উদ্দেশ্যে।

চলবে?
#Fiza_Siddique

সরি। সত্যি আমি অনেকটা ব্যাস্ত ছিলাম। ব্যাস্ততার সবচেয়ে চরম পর্যায় ছিলো আজ। তাও ছোটো করে গল্প দিলাম। প্লীজ ছোটো বলে কেউ লজ্জা দেবেন না। কাল আমি একটা বোনাস পর্ব দিয়ে পুষিয়ে দেবো আপনাদের ইন শা আল্লাহ। আর গল্পটা এই পর্যন্ত কেমন লেগেছে জানাবেন অবশ্যই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here