আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে পর্ব -১৫

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(15)

আদাভাণের কথায় আনিকা আহসান মুখ টিপে হাসেন। ছেলেটা পুরো তার বাবার মত হয়েছে এ কথা মনে করেই চোখ ভিজে ওঠে ওনার।

“বউজান পায়েসটা একটু এদিকে দাওনা”

আদাভনের কথা শুনে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে অরুণিকা, ইতিমধ্যে বাড়ির সবাই ডাইনিং টেবিল ছেড়েছেন।

“ভাবিজান ভাইয়াজানের সেবা করো একটু। আমি যাই।”

প্রাপ্তির কথা শুনে এতক্ষনের রাগ লজ্জায় পরিণত হয় অরুনিকার। অরুনিকার লজ্জা পাওয়া মুখে আরো খানিকটা লাল আভা ঢেলে দিতে একবার আশেপাশে তাকিয়ে হাত ধরে টান দেয় আদাভান। আকস্মিক এমন আক্রমনে ভেবাচেকা খেয়ে অরুনিকা ঠিক কি রিয়েকশন দেবে ভুলে গেছে। নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে সেখান থেকে ওঠার চেষ্টা করলেই বাম হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে আদাভান।

“হুস। বেশি নড়াচড়া নাহ। চুপচাপ আমার কোলে বসে খাওয়াটা শেষ করো।”

“দেখুন!”

“ইশ! এখন না, রুম গিয়ে দেখবো সব।”

আদাভানের কথার মানে বুঝতে পেরে আরোও এক দফা লজ্জায় পড়ে যায় অরুনিকা। আজ যেনো তার জন্য লজ্জা দিবস চলছে। সকাল থেকেই ছেলেটা কেমন একের পর এক লজ্জাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলেছে তার জন্য।

“কেউ এসে পড়বে, প্লীজ আমাকে ছেড়ে দিন।”

“কেনো তোমার কি এখানে এমন কিছু করতে ইচ্ছে করছে যেটা কেউ দেখে ফেললে সমস্যা?”

এবার আর সহ্য করতে পারলোনা অরুনিকা। দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে আদাভানের মুখ।

“আপনি এমন ছি মার্কা কথা বলছেন কেনো আজ? আমাকে যেতে দিন প্লীজ। অনেক কাজ বাকি আছে। দুপুরের রান্নার জোগাড় করতে হবে এখন।”

“আমি জানি তোমাকে এভাবে ধরে না খাওয়ালে সকালের নাস্তা সেই বেলা বারোটায় করবে তুমি। এখন থেকে কোনোরকম বাহানা চলবেনা। এবার থেকে সবার সাথে বসে নাস্তা করবে, নাহলে আমার বউজানকে এভাবে কোলে বসিয়ে খাওয়াতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে।” চোখ টিপ দিয়ে বলে আদাভান

“হুম করবো। এবার যাই, ছাড়ুন প্লীজ।”

“আজকে এভাবেই ফিনিশ করো চুপচাপ। আর একটু নড়াচড়া করলে আমি খাবো তাও এই মিষ্টি জিনিসটা।” অরুনিকার ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে কথাটা বলে আদাভান। ভয় পেয়ে চুপচাপ আদাভানের হাতেই খেতে থাকে অরুনিকা।

রূমে এসে কিছুতেই মন টিকছেনা আদাভানের। বারবার ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে তার লাল টুকটুকে বউয়ের কাছে। বেডে শুয়ে শুয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই ফোনে মেসেজ টোনের আওয়াজে সেদিকে তাকায় আদাভান। অরুনিকার ফোনের উপরেই জ্বলজ্বল করছে একটা মেসেজ,

“অরু তুই কিভাবে পারলি বিয়ে করতে? একবারও আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলিনা তুই? আমার কি ভুল ছিলো বল? সেই ছোটো থেকে ভালোবাসি তোকে, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি ভালোবাসার মানে শুধু তোকেই ভালোবেসেছি। একবার দেখা কর অরু, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আমার।”

মেসেজটার উপর লেখা কাব্য ভাইয়া নামটা দেখে বেশ বিরক্ত হয় আদাভান। লক না থাকায় খুব সহজেই মেসেজটা ডিলিট করে দেয় অরুনিকার ফোন থেকে। মনে মনে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,

“শালাবাবু তুমিও শেষ পর্যন্ত আমার প্রেমের শত্রু হয়ে গেলে।”
__________________

নতুন বাড়ীতে আজ প্রথম দিন নূরের। কাল রাতেই জেনেছে যে মানুষটার সাথে তার বিয়ে হয়েছে তার নাম আদিল। বাসর ঘরে একরাশ ভয় নিয়ে বসে থাকতে দেখে তাকে অভয় দেখিয়েছিল সেই লোক। তবে সরাসরিই বলেছিলো,

“দেখো আমি বুঝতে পারছি আমরা দুজন দুজনকে চিনিনা, জানিনা তাই তোমার আনকম্ফর্টেবল ফিল হচ্ছে। সময় নেওয়া উচিত আমাদের একে অপরকে জানার জন্য।”

আদিলের এই কথাতেই ভীষণ স্বচ্ছন্দ বোধ করেছিলো নূর। মানুষটাকে যতোটা খারাপ ভেবেছিলো ততটাও নাহ সে। অন্তত কা*পুরু*ষের মতো দৈ*হি*ক চাহিদার প্রতি ঝাঁ*পি*য়ে তো পড়েনি। ভাবনার মাঝেই আবারো রাশভারী কণ্ঠ শুনে সেদিকে তাকাতেই আদিল বললো,

“তবে তুমি যদি মনে করো সিনেমার মতো আমি সোফাতে ঘুমাবো বা তোমাকে ঘুমাতে দেবো এটা কিন্তু একদমই ভুল। আমার বেডটা যথেষ্ট বড়ো। বেড থেকে পড়ে না যাওয়া পর্যন্ত দূরত্ব নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারো তুমি। যেদিন নিজের থেকে দূরত্ব একটু কমাবে সেদিন একেবারে বুকে টেনে নেবো আমি। ঘুচিয়ে দেবো সব দূরত্ব।”

বেশ ভয় নিয়েই সারারাত নির্ঘুম কাটানোর পর ভোরের দিকে চোখ লাগে নূরের। ফলস্বরূপ ঘুম থেকে উঠতে বেশ বেলা হয় যায় তার। নাস্তার টেবিলে এসে সবাইকে সালাম করতেই সামনে বসা মাঝবয়সী একজন বলে ওঠেন,

“কি গো নতুন বউ, এতো বেলা করে ঘুম থেকে উঠতে হয় নাকি বউদের? বাপ মা দেখি কিছুই শেখায়নি। বিয়ের প্রথম দিনই এমন চালচলন হলে পরে কি করবে কে জানে।”

“আপা বাদ দিন না। বাচ্চা মানুষ, ভুল হয়ে গেছে। আমি সব শিখিয়ে দেবো নূরকে।”

“তুমি কেনো শেখাবে, আমি যতদিন আছি এই মেয়েকে একেবারে টাইট দিয়ে রাখবো। বউ মানুষরে বেশি ছাড় দিওনা। তাইলে ছেলেরে আর খুঁজে পাইবানা। বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরবে।”

ওনাদের কথা শুনে নূরের বেশ খারাপ লাগলো। বিয়ের প্রথম দিনই যদি কোনো মেয়েকে এমন কিছু শুনতে হয় তাহলে তো খারাপ লাগা স্বাভাবিক। আমাদের সমাজ সব স্যাক্রিফাইস মেয়েদের থেকেই চায়। নিজের বাড়ী ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন এক পরিবেশে মানিয়ে নিতে গেলে যে সাপোর্টটা পাওয়া উচিত অধিকাংশ মেয়েই সেটা পায়না। নূরও সেই না পাওয়া দলেরই অন্তর্ভুক্ত। জীবনের অধিকাংশ জিনিসই তার জন্য না পাওয়ার খাতায় জমা হয় দিনশেষে।

চেয়ার টেনে বসতে যাবে এমন সময়ে কারোর কথায় আবারো কেঁপে ওঠে নূর।

“এই মেয়ে! তোমার মধ্যে কোনো ভদ্রতা নেই? এতো অভদ্র কেনো তুমি? কোথ থেকা যে তুলে আনছিল তোমারে। এতো শব্দ করে চেয়ার টানেনা জানোনা তুমি? আর বাড়ীর বউ মানুষ খাইতে বসবে কেনো আগেভাগে? বউ মানুষ খায় সবার শেষে। কিছুই জানোনা দেহি।”

ওনার আবারো এমন কথায় আর নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলোনা নূর। ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো ওনার কথার উপর একটা কথাও কেউ বলেছেনা। ভিতরটা হু হু করে কেঁদে উঠলো নূরের।

“আব্বু আমরা মধ্যবিত্তই ভালো ছিলাম। আমাকে সুখে রাখতে গিয়ে আমাকেই শেষ করে দিলে।”

চলবে?
#Fiza_Siddique

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here