আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে পর্ব -২২

#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(22)

দুইদিন পর অরুনিকা আজ কলেজে গেলো। ক্যাম্পাসে এদিকে ওদিক চোখ বুলিয়ে কাউকে খুঁজে ব্যার্থ হয়ে হাঁটা ধরলো আদাভানের কেবিনের দিকে।

নিজের চেয়ারে বসে ফোনে কিছু একটা দেখে মুচকি মুচকি হাসছে আদাভান। এতটাই মনোযোগে ফোনে কিছু করছে যে দরজা খোলার আওয়াজে বিরক্ত বোধ করলো। বিরক্তির রেশ নিয়ে সামনে তাকাতেই হকচকিয়ে গেলো আদাভান। অরুনিকাকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একটু শুকনো কেশে ভেতরে আসার জন্য বললো।

“আপনি আস্তে না বললেও আমি আসতাম ভেতরে।”

“পারমিশন ছাড়া কারোর কেবিনে প্রবেশ করা উচিত নয়”

“এভয়েড করছেন কেনো?”

“আমি কখন এভয়েড করলাম?”

সামনে পড়ে থাকা কিছু পেপারস চেক করতে করতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো আদাভান। চেয়ার ছেড়ে উঠে আদাভানের একদম সামনে চলে গেলো অরুনিকা। আদাভান আড়চোখে সবটা লক্ষ্য করেও নিজের মতোই কাজ করে যাচ্ছে। রাগটা যেনো এবার তরতর করে বেড়ে গেলো অরুনিকার। আদাভানের চেয়ার ঘুরিয়ে মুখোমুখি আনে অরুনিকা। চেয়ারের দুইপাশে দুই হাতে ভর দিয়ে একদম ঝুঁকে যায় আদাভানের দিকে।

“ভুলে যাবেন না আমি সেই রাগী, জেদি অরুনিকাই আছি। চাইলেই অনেক কিছু করার ক্ষমতা রাখে এই অরুনিকা। মাত্র দুই দিন পেরোতেই উধাও হয়ে গেলো আপনার ভালোবাসা? নতুন কাউকে ভালোলেগে গেলো বুঝি? যেখানে আপনার আমাকে কল দেওয়ার কথা সেখানে আমি কলের উপর কল দিয়ে যাচ্ছি। অথচ নো রেসপন্স। কী ভেবেছেন আপনি নিজেকে? আমাকে এভাবে এভয়েড করবেন আর আমি রাতের ঘুম উধাও করে শুধু আপনার কথা ভাববো? আপনার সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করবো? তবে শুনে রাখুন এসবের কোনোটাই আমি করবোনা। আপনি আমাকে মনে না করলে আমিও করিনা। মনে রাখবেন।”

কথাগুলো বলেই যেভাবে এসেছিলো ঠিক সেভাবেই বেরিয়ে গেলো অরুনিকা। আদাভান এখনও শকের মধ্যে আছে। অরুনিকার এই রূপ আগেও দেখেছে সে তবে এবারে কিছু একটা তো ভিন্ন ছিলো। চোখের ভাষার সাথে মুখের কথার কোনো মিল ছিলোনা। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারো চোখ রাখলো ফোনের উপর, সেখানে ফুটে উঠেছে হলুদ চুড়িদারে এক মেয়ের আবছা অবয়ব। পিছন ফিরে থাকায় চেহারা বোঝা যাচ্ছেনা।

আদাভানের কেবিন থেকে বেরিয়ে এতক্ষনের আঁটকে রাখা শ্বাসটা ছাড়ে অরুনিকা। অরুনিকার জেদ হেরে গেছে আদাভানের প্রতি ভালবাসার কাছে। জেদী অরুনিকা বহু কষ্টে নিজেকে আঁটকে রেখেছে। মন চাইছে ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরতে আদাভানকে। জড়িয়ে ধরে অধিকার খাটিয়ে বলতে আদাভান শুধুই অরুনিকার। ভেঙ্গে ফেলতে সব অভিমানের পাহাড়। পালাক্রমে বাড়তে থাকা অভিমান অরুনিকাকে আদাভানের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। অরুনিকার চিল্লিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে, আমি ভালো নেই আদাভান, তোমাকে ছাড়া আমি ভালো নেই। আমার প্রতিটা নির্ঘুম রাত আমার ভালোবাসার সাক্ষী। আমার প্রতিটা নিউরোনে ছড়িয়ে পড়েছে আপনার নাম। আপনার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো আমাকে প্রতিনিয়ত গলা টি*পে হ*ত্যা করতে আসছে।
________________

বিকালের দিকে নূর মাত্র রেডী হয়ে বসে অপেক্ষা করছে আদিলের জন্য। আজ অনেকদিন পর বাইরে বেরোচ্ছে তাও নিজের ইচ্ছেতে। হটাত রুমে ফুফিকে ঢুকতে দেখে ঘাবড়ে যায় নূর। এই মানুষটার সামনে আসলেই গুছালো সবকিছু অগোছালো হয়ে যায়। বেডে ওনার বসার জন্য জায়গা করে দিয়ে দাড়িয়ে পড়ে নূর।

“কোথায় যাওয়া হচ্ছে এই বিকাল বেলা?”

“একটু বাইরে যাবো ফুফি”

“তোমার শাশুড়ি জানে?”

“নাহ, আসলে…..”

“নিজেকে কি বাড়ীর কর্তৃ মনে করতে শুরু করেছো? বাইরে যাবে ভালো কথা কাউকে বলারও প্রয়োজন মনে করোনা দেখছি। আমার কথা নাহয় বাদ দিলাম, তোমার শাশুড়িকে তো বলতে পারতে?”

“ফুফি আসলে….”

“থাক থাক আমাকে আর এত সম্মান দিতে হবেনা।”

“হটাত করেই উনি ফোন করে বললেন রেডি হয়ে থাকতে, তাই সময় পাইনি কাউকে বলার।”

“বাবাহ! বউকে নিয়ে দেখি ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে। কই মা, ফুফুকে নিয়ে তো যেতে দেখিনি কোনো সময়। বউ এসে মাথা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছে একেবারে দেখি। কি একেবারে বউ তাকে নিয়ে আবার ঢং, যত্তসব।”

দরজা চাপিয়ে দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে নূর। প্রতিনিয়ত এসব কথায় দিনে দিনে শেষ হয়ে পড়ছে। এতো দুঃখ কেনো তার কপালে। আদিলের সাথে খুব একটা কোথাও যেতে চাইতোনা নূর। পাশে আদিলের উপস্থিতি বারবার তাকে মনে করিয়ে দেয় আদিত্যের কথা। অনেক চেষ্টা করেও আদিত্যের আর কোনো খোঁজ পায়নি নূর। কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে গলায় আঁটকে গেছে। কান্নার এক পর্যায়ে পিঠে কারোর স্পর্শে চমকে ওঠে নূর। পিছন ঘুরে আদিলকে দেখে বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে নূর। আদিলও পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে নূরকে। নূরের কান্না কিছুতেই সহ্য হয়না আদিলের। বুকের মধ্যে ভীষণ জ্বালাপোড়া করে। তবে আজ অদ্ভুত এক শান্তির আভাস পাচ্ছে আদিল নূরের ছোঁয়ায়।

“নূর তুমি ঠিক আছো?”

“হুম”

“এই আমার দিকে তাকাও দেখি।”

“উহু”

“তাকাতে বলছি কিন্তু”

“কি হয়েছে, আমাকে বলো। একটুও মিথ্যে বলার চেষ্টা করবেনা। তোমার মিথ্যে কিন্তু আমি ধরে ফেলতে পারি।”

“তেমন কিছু নাহ”

“বলতে বলছি আমি”

“সত্যি…”

“ওকে, আমি নিজেই ফুফিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করছি। ফুফি…..”

আদিলের ডাক দেওয়া দেখে নূর উঠে এসে আদিলের মুখ চেপে ধরে। অসহায় চোখে তাকায় আদিলের দিকে।

চলবে?
#Fiza_Siddique

গল্পটা কি বোরিং লাগছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here