আমার আসক্তি যে তুমি পর্ব ১

ঘুমের ঘোরে বুঝতে পারছি যে কেউ আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট গভীরভাবে স্পর্শ করেই চলছে। কিন্তু ঘুমের রেশের জন্য চোখ গুলো চেয়েও খুলতে পারছি না। নিশ্বাস খানিকটা আটকে এসেছে। তাই ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করেই চলেছি কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। হাত পাও নাড়াচাড়া করতে পারছি না। মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার হাত পা শক্ত করে চেপে ধরে আছে৷
বেশ কিছুক্ষণ পরই আমার ঘুম ভেঙে যায় আর আমি ধরফরিয়ে উঠি। মাথায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। চেহারায় আতংকের চাপ ফুটে উঠেছে। পাশের সাইড টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি খেয়ে নিলাম আমি। চারপাশটা ভালো মত দেখে নিলাম। না কেউ নেই। দরজাটাও বন্ধ।

— ” আবার সেই একই ফিলিংস। বার বার কেন এই রকম লাগে আমার! মনে হয় কেউ যেন আমায়.. না এইটা কিভাবে সম্ভব। সব তহ বন্ধ কাউরো আশার চান্স নেই।
আমি কি তাহলে এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিলাম। এইটা কি আদো স্বপ্ন নাকি বাস্তব। কেন মনে হয় যে সত্যি এইগুলা আমার সাথেই হয়েছিল। কেউ ছিল এই রুমে। কিন্তু কে?? ”
.
কোন কুল কিনারা না খুঁজে পেয়ে স্বপ্ন মনে করে কথাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলাম আর পাশের টেবিল ল্যাপ জ্বালিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম।


🍁🍁🍁


আবছা অন্ধকার এক রুমে মধ্যে হাল্কা ফেরিলাইটের আলো দেয়ালে টাংগানো রিয়ানার হাস উজ্জ্বল ছবিটি ফুটে উঠেছে। রিয়ানার সেই ছবিটির উপর একজন ধারালো ছুড়ি দিয়ে স্লাইড করছে। আর বলছে,
.
— “আমি কোন স্বপ্ন নই রিয়ুপাখি। আমি বাস্তব। একটু আগেই আমি ছিলাম তোমার কাছে। শুধু আজ না প্রত্যেক রাতই আমিই আসি তোমার কাছে। কি করব বলো রাতেই তহ তোমায় একা পাই, একটু ছুঁয়ে দেখতে পাই। এই সুযোগটা কি আমি আর হাত ছাড়া করতে পারি!! উহুম! একদম না।
একটা কথা জানো কি!!
আমার আসক্তি যে তুমি। তুমি আমার এমন আসক্তি যা আমি চেয়েও ছাড়তে পারব না। আর না আমি ছাড়তে চাই। ”
.
এই বলে হাতে থাকা ধারালো ছুড়ি দিয়ে নিজের অন্য হাতে একটা কাট দিল। তারপর সেই হাতেই ছুড়ি দিয়ে খুড়াই করে “রিয়ানা” নাম লিখতে লাগলো সেই ব্যক্তিটি আর গুন গুন করতে লাগলো।
.
.
” ❤ হামে তুমসে পেয়ার কিতনা ❤
❤ ইয়ে হাম নেহি জানতে ❤
❤ মাগার জি ভি নেহি সাকতে ❤
❤ তুমহারে বিনা ❤
❤ হামে তুমসে পেয়ার কিতনা ❤ ”
.
.
নাম লিখা শেষে সেই দিকে চেয়ে থাকে সে। মুখে এক প্রশান্তির হাসি।

— ” খুব ভালবাসি তোমায় রিয়ুপাখি। ”


🍁🍁🍁


সকালে উঠেই তারাহুরো করে চলেছি আমি। আজ ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে। নাস্তা শেষ করেই বেড়িয়ে পড়লাম মেডিক্যালের উদ্দেশ্যে। দরজা খুলতেই চোখে পড়ে নিচে থাকা সাদা গোলাপের গুচ্ছোটির দিকে। সেটা হাতে উঠিয়ে দেখতে থাকি। একটা কার্ড চোখে পড়তেই তা হাতে উঠিয়ে নেই আর পড়তে শুরু করি।
.
” দিন শেষে রাত শেষে
আছো শুধুই তুমি প্রিয়তমা❤
মনের গহীনে আসক্তি হয়ে
আছো শুধুই তুমি প্রিয়তমা❤”
.
পড়ার সাথে সাথে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠে। রোজ সকালে দরজার বাইরে একেক ফুলের গুচ্ছো থাকে আর তার সাথে এইরকম আবেগময় কবিতা। কিন্তু কে দিয়েছে তার নাম কখনো উল্লেখ থাকে না।।
প্রথম প্রথম এইসব আমার কাছে বিরক্তিকর লাগলেও এখন ভালোই লাগে। ফুলগুলো রুমে রেখে আবার বেড়িয়ে গেলাম মেডিক্যালের উদ্দেশ্যে

[[ যেতে নিজের পরিচয় দিয়ে দেই। আমি রিয়ানা রহমান।
বাবা একজন আর্মি অফিসার ছিলেন।আমার ১২ বছর বয়সেই বাবা বোডারে শহিদ হন। মা এই শোক সহ্য না করতে পেরে সেও পারি জমায় বাবার সাথে।
এর পর থেকে আমেনা আন্টি ( কাজের লোক) আমায় বড় করে। আমেনা আন্টি আমাদের সাথেই থাকতেন তাই বাবা মা যাওয়ার পর আমার দ্বায়িত্ব তিনি নেন।
বাবার একটা ফ্যাল্ট কিনে রেখে গিয়েছিল সেখাই এখন থাকি। বাবা যেহেতু আর্মিতে ছিলেন তাই তার মৃত্যুর পর সরকার আমাকে কিছু নির্দিষ্ট পরিমান টাকা প্রদান করেছিল। আর বাবার যে জমানো টাকা ছিল তা আমার নামে তাই তার মৃত্যুর পর টাকাগুলো আমিই পাই। আর সেগুলা দিয়েই নিজের পড়া লেখা চালিয়ে যাই। এখন আপাতত দুটো টিউশনি করে নিজের পড়া চালিয়ে যাচ্ছি। ]]

মেডিক্যালে পৌঁছে দেখি আরিশা আর রিংকি দাড়িয়ে কথা বলছে। আমিও গিয়ে তাদের সাথে জয়েন হলাম।

রিয়ানাঃ কিরে আমার ছাড়া কি এত কথা হচ্ছে শুনি!! ভ্রু নাচিয়ে

রিংকিঃ ওই আরু, এই মাইয়াটা কেরে?? তুই চিনিস ওকে?

আরিশাঃ উহু। আমি তহ চিনি না। কে এই উগান্ডা মাইয়া??
.
সাথে সাথে দুইজনের পিঠে পড়লো দুটো বারি। দুইজনই “আহ” বলে উঠলো। আরিশার কান মলে ধরে বলি।
.
— ” আমারে তহ চিন না তাই না। আমি উগান্ডা মাইয়া তাই নায়ায়ায়া।”
.
— ” আয়ায়া!! রিয়ানু ছাড়। মজা করছিলাম রে। এখন ছাড় ব্যথা পাচ্ছি তহ।”
.
— ” আমাকে এইসব বলার আগে মনে ছিল না!! হারামি”
.
— “সরি নায়ায়ায়া। আর মজা করবো না।”
.
— ” হুহ ” আরুকে ছেড়ে দিয়ে।
.
— ” এখন চল টাকলা স্যার এর ক্লাস। দেরি হলে এক পায়ে দাড়া করাইয়া রাখবো খচ্চর বেটা টা।” (রিংকি)
আমি আর আরিশাও মাথা দুলিয়ে ক্লাসের দিকে চলে গেলাম।
.
.
🍁
.
ক্যান্টিনে বসে আছি আমরা। একেক বিষয় নিয়ে মজা করেই চলেছি। আজ একটা ক্লাস পোস্টপোন হয়ে গিয়েছে তাই আরকি আড্ডা দেওয়া হচ্ছে। এমন সময় পিছন থেকে কেউ আমাদের ডেকে উঠে। পিছে ফিরে তাকাতেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায় আমার। ভ্রু কুচকিয়ে মুখে বিরক্তকর একটা ভাব নিয়ে কিছু একটা বলতে যাব তার আগেই…….


#চলবে


#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_1
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
.
[ গল্পটি কেমন লাগলো তা অবশ্যই জানাবেন। সকলের মতামতের বিত্তিতেই পরবর্তী পর্বটি দেওয়া হবে। ভুল- ত্রুটিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here