আমার তুমি পর্ব ১+২

দরজার বাইরে এক পা রাখতেই হেচকা টান পরলো কেউ টেনে নিচ্ছে আমাকে রুমে এনে ছুরে মারে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে। তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে যায়। খাটের কোনে লেগে মাথা কেটে যায় সাথে সাথে চিৎকার করে উঠে আরুশি, আহহ। মাথা উচুঁ করে সামনের মানুষটাকে দেখে ভয়ে গুটিয়ে যায় আরুশি। এভাবে ধরা খাবে ভাবতেই পারে নি এখন কি হবে ওকে তো খুব মারবে কিভাবে রক্ষা পাবে এর হাত থেকে। ভাবতেই ভয়ে জরোসরো হয়ে ফাইল আকরে ধরে কিন্তু রক্ষা হয় না সামনের মানুষ টা রেগে সামনে গিয়ে টেনে হাতের মাঝে থেকে ফাইল নিয়ে ছুরে মারে। আরশি তীক্ষ্ণ চোখে ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে ফাইলটা ছিটকে টেবিলের নিচে পরেছে।

—তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয় আমার কথার অবাধ্য হয়ে কলেজের জন্য বের হচ্ছিলি। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন লেখাপড়ার ভূত যদি তোর মাথা থেকে বের না করছি আমার নাম ও মেশমি না।

—মামি তোমার পায়ে পরি আজকে যেতে দাও। আজকেই তো পরিক্ষা শেষ না গেলে আমি সেকেন্ড ইয়ার এ উঠতে পারবো না। ফাইনাল পরিক্ষা না থাকলে আমি যেতাম না তুমি তো জানো দরকার ছাড়া কলেজে আমি যাই না।

—আবার মুখে মুখে কথা বলিছ আপদ একটা মরে ও না। দরকার ফরকার বুঝি না আমি তুই আর কলেজে যাবি না মানে যাবি না। তোরে পরিয়ে ডিপটি করতে পারবো না কলেজের নাম করে কাজের বেলা ফাঁকি তাই না ফাঁকি বাজ একটা।

—আমি কি ফাকিঁ দিছি মামি সব তো করেছি আর কি করবো সব করেই তো কলেজের জন্য যাচ্ছি লাম। যেতে দাও না মামি এসে তোমার যা কাজ আছে সব করে দেব।

–নাহহ তোর কোথায় ও যাওয়া হচ্ছে না। তোকে পরিয়ে আমি টাকা আর নষ্ট করতে পারবো না পা ছার আর কি বললি কি কাজ আছে? দেখাচ্ছি তোকে কাজ।

বলেই উনি এক গাধা কাপড় চোপড় এনে আমার সামনে ছুরে মারলো। দুইদিন হয়েছে সব কাপড় চোপড় ধুয়েদিয়েছি আবার এখন সব এনে দিয়েছে সামনে এগুলো একদিন পরেও নি আবার সব ধুতে বলছে যাতে কলেজে যেতে না পারি তাই জন্য। মামি আমার পড়া লেখাটা কখনো সহ্য করতে পারে না। তবুও মামার অনেক বলে কয়ে পড়ালেখা করাচ্ছে মামা ও মামি কে ভয় পায়। সামনে কিছু বলে না লুকিয়ে চুরিয়ে যা করার করে। এই যে আজ সকালে সমস্ত কাজ করে ভয়ে বসে ছিলাম মামা এসে বলল মামি নাকি ওয়াশরুমে আছে এই সুযোগ বেরিয়ে যা তারাতারি আমি ও কোন রকম ড্রেস চেন্জ করেই ফাইল হাতে বের হচ্ছিলাম। কিন্তু কথায় আছে না অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায় আমার অবস্থা ও তাই হলো বের হবো এমন সময় মামি চলে এলো।

আমি আরুশি। ছোট্ট বেলায় মা মারা যায় তার সুখে বাবা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে একদিন আমাকে মামার কাছে রেখে কোথায় জানি গেল। সে যে গেল আজ পযর্ন্ত সে নিখোঁজ তারপর থেকে আমি মামার কাছে থাকি যা আমার মামি মুটেও ভালো চোখে দেখে না। প্রথমে এতো খারাপ ব্যবহার করে নি কিন্তু আস্তে আস্তে তার দিক থেকে অত্যাচার বাড়তেই থাকে। কলেজে আগে সপ্তাহে একদিন যেতে দিত এখন পরিক্ষা ছাড়া যেতে দেয় না। কিন্তু এবার পরিক্ষা ও যেথে দিচ্ছে না সেদিন রাতে মামা মামির কথা শুনেছি মামি মামাকে বলছিলো,,

–এই আপদ টাকে আর আমি খেতে দিতে পারবো না। আবার আসে পরতে কি দরকার পড়া লেখার করার সাফ সাফ বলে দিচ্ছি ওর আর পড়া লেখা হবে না। এতো পড়া লেখা করার ইচ্ছে থাকলে এই বাসার বাইরে গিয়ে করুক আমি আর এই মেয়েকে রাখবো না বাসায়। তোমার বা কি বেতন ঘরে এক মেয়ে ও ছেলে আছে তাদের কথা না ভেবে ওই মেয়ের পেছনে টাকা খরচ আমি আর করতে দিচ্ছি না। খুব হয়েছে এবার একে বিদেয় করো।

মামা উক্তিতে অনেক কিছু বলেছে মামি শুনে নি সে আমাকে আর এই বাসায় রাখতে চায়না। তাদের টাকা আছি আসলেই তো মামি তো ভুল কিছু বলে নি। কথা গুলো সেভাবেই বসে ভাবছি।

—ন্যাকা কান্না দেখলেই শরীল জ্বলে উঠে। বসে আছিস কেন যা কাজ কর আর পড়ালেখা মাথায় থেকে ঝেড়ে ফেলে দে ওটা আর হচ্ছে না। বাপে তো এখানে রেখেই খালাস আর মা তো মরে আমাদের জন্য বোজা রেখে গেছে যদি বাড়িতে থাকতে চাস পরার ভূত মাথা থেকে বাদ দিয়ে কাজ করবি আর কিছু না কাজের লোক তারিয়ে দেব তুই থাকতে টাকা দিয়ে লোক রাখার দরকার কি বল।

বলেই মামি চলে যেতে নেয় আবার এসে কানের দোল খুলে নেয় আমি বুঝতে পারছি না কানের দোল কেন খুলছে,

–এতো দিন খাইয়েছি টাকা তো দিস নি তাই দোল জোরা নিয়ে গেলাম।

বলেই চলে গেল সাথে সাথে মামা এসে আমার পাশে বসে পরলো,
—কিরে বসে আছিস কেন উঠ? ইস মাথাটা কেটে কি হয়েছে চল স্যাভলন লাগায় দেয়।

কিছু বললাম না কিছু বলতে পারছি না চোখ দিয়ে অধরে পানি পরছে মায়ের শেষ সৃতি ছিলো এই দোল জোড়া তাও নিয়ে নিলো আগের সব তো প্রথমেই নিয়েছে আর এখন এগুলো ও। দোলের জন্য কষ্ট না এটা মায়ের শেষ উপহার ছিলো তা কাছ ছাড়া হলো। মামা ব্যান্ডেজ করে দিলো।

—ক্ষমা করিস মা আমি তোর জন্য কিছু করতে পারছি না।

–এভাবে বলো না মামা তোমার এতে কি দোষ মামি তো ঠিকই বলেছে আমি সত্যি তোমাদের বোজা হয়ে গেছি এতো কষ্ট তোমাদের আমার জন্য এতো টাকা খরচ হচ্ছে বিনিময়ে আমি কিছু দিচ্ছি না। আর না মামা এভাবে আর না আমি আর পড়ালেখা করবো না কখনো না। যার কেউ নেই সে পরে কি হবে বলো আমার এমন সপ্ন দেখা উচিত না।

বলেই আরশি আর দাড়ালো না ওয়াশরুমে ঢুকে ড্রেস চেন্জ করে এসে জামা কাপড় নিয়ে যায় ধুয়ার জন্য।

দুপুরে হয়ে আসে ধুতে ধুতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঠাস করে খাটে শুয়ে পরে। আর নরার শক্তি টুকু ও নেই আর ওর মামি রান্না করছে দেখে জামা কাপড় শুকা দিতে গেছিলো যখন ডাকে নি বলে আর যায় নি। শুয়ার হাথে সাথে ঘুমে তলিয়ে গলাম।
তীব্র আওয়াজ সাথে মুখের উপর পানি জাতীয় কিছু পরার সাথে সাথে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি মামি জগ ভর্তি পানি মুখের উপর ঢেলে দিয়েছে। আমি ধরফরিয়ে উঠে বসি, আরেক দফা বকা খায় কেন রান্না হেল্প করতে গেলাম না কেন তার জন্য শাস্তি সরুপ দুপুরে খাবার মিলল না। খিদে পেট চো চো করছে কিন্তু আজ আর আমাকে খেতে দেবে না বুঝলাম সব চিন্তা বাদ দিয়ে খিদে জ্বালায় পানি খেয়ে বসে রইলাম। মামি সেজে গুজে শপিং মলে চলে গেল দেখলাম। তার একটু পর মামাতো ভাই [ রিমন ] এসে খেতে চাইলো ও ক্লাস ফাইভে পরে। উঠে এসে খেতে দিলাম এখন আমার ও খেতে মন চাইছে কিন্তু যদি মামি যেনে যায় খবর আছে ভয়ে খেলাম না দাতে দাত চেপে বসে রইলাম।

মামা বাসার নেই সকালের পর আর তার দেখা মিলে নাই। জানি না কোথায় গেছে রুমি আপু [মামাতো বোন ] হোস্টেলে থাকে মাঝে মাঝে আসে এখানে। কিন্তু আমাকে সহ্য করতে পারে না রিমন একটু একটু পারে কিন্তু ওতোটাও না। মামা বাদে কারো সাথেই আমার বনে না। ঘড়িতে পাচঁটা বাজে মামি বাসায় নেই রিমন খেলতে গেছে। বারবার চোখটা ডায়নিং টেবিলে যাচ্ছে সকালে থেকে কিছু খাওয়া হয়নাই। খুব খেতে ইচ্ছে হচ্ছে আচ্ছা একু খাবার খাইনা মামি ওরা কেউ তো নাই আমাকে দেখবে না কেউ। যেই ভাবা সেই কাজ ডায়নিং এ এসে বসে পরলাম মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডাল গুস্ত ডাল। খুব মাছের মাথাটা খেতে চাইছে শেষ কবে মাছের মাথা খেয়েছি মনে নাই। ষবার তো খাওয়া শেষ আর দুইটা আছে নিশ্চয়ই একটা আমার আর একটা মামার এটা ভেবেই একটা টুকরো পাতে নিলাম এক লুকমা মুখে দিয়ে সামনে তাকাতেই ভয়ে আমার কাশ উঠে গেল এতো কাশছি পানি খেতে পারছি না। কেউ পানি ধরেছে সামনে যা গলা দিয়ে নামছে না।
#আমার_তুমি❤️
#লেখিকাঃ-তানজিনা আক্তার মিষ্টি❤️
#পর্ব:- ২
আরুশি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে সামনে লোকটার দিকে এই লোক এখন এখানে কি করছে? ভয়ে আরুশির প্রাণ যায় যায় অবস্থা বাসায় কেউ নেই এই সময় উনি এখানে ভেতরে ঢুকলো কীভাবে দরজা ভাবতেই মনে পরলো রিমন খেলতে যাওয়ার পর আর দরজা লাগাতে মনে নাই। এখন কি হবে?

— সুন্দরী তোমার কি হলো আমাকে দেখেই কাশি উঠে গেল নাকি।

বলেই একটা বিচ্ছিরি ভাবে হাসি দিলো। কাশি এখন কমে এলে ও আর খেতে পারছে না আরুশি ভয়ে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। ওর সামনে দাড়িয়ে আছে [ মামির ভাইয়ের ছেলে জন্টু । মদ খেয়ে অধিকাংশ সময় মাতাল হয়ে পরে থাকে। সাথে গুন্ডামি ও করে যার জন্য কিছুদিন আগে জেলে গিয়েছিল দুইমাস কাটিয়ে এসেছে। আর ও থাকতে হতো কিন্তু টাকার জন্য জামিন পেয়েছে। প্রচণ্ড খারাপ একটা লোক আগে খুব একটা আসতো না দেখতাম না জেলে থেকে ছাড়া পেয়েই এখানে এসেছিলো তখন ভালোই ভেবেছিলাম কিন্তু সময় গরাতেই বুঝতে পারি লোকটা কতোটা ভয়ংকর। খালি গা ঘেষতে চায় নজর ও ভালো না দেখলেই আমার ভয় করে কিন্তু সব সময় বাসার সবাই থাকে বলে একটু সস্তির নিশ্বাস নিতে পারি। কিন্তু আজ বাসা একে বারে ফাকা আর আজকেই নার আসতে হলো।]

—আমাকে ও কিছু খেতে দাও। আর এতো কি ভাবছো কে বাসার নেই বলেই তো আসলাম যাতে আমরা একটু একা সময় কাটাতে পারি। তোমাকে দেখার পর থেকে আর আমার চোখে ঘুম নেই। বসলে শুলে খালি তোমাকে ছুয়ার জন্য পাগল পায় হয়ে পরি। কি রুপ তোমার আহহ প্রাণটা জুরিয়ে যায়। এতো সুন্দরী কাউকে আমি আগে দেখি।

বলেই আমার হাত টেনে নেয় যে হাতে খাচ্ছিলাম। হা ধরতেই রাগ আমার সাত আসমানে উঠে যায়।

—এই হাত দিয়ে একটু খাইয়ে দাও না গো কি নরম হাত।

—কি করছেন কি হাত ছারুন??

–কেন গো সুন্দরী আমার ধরা কি তোমার পছন্দ হচ্ছে না বাসায় তো কেউ নেই আসো একটু,,

বলেই হাতে মুখ ঢেকাতে যায় কি করবো ভেবে না পেয়ে বাম হাতে চামুচ দিয়ে ওনার হাতে বারি মারি। সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে হাত ছেড়ে দেয়।

—একদম কাছে আসবেন না যান বেরিয়ে যান বাসা থেকে নাহলে ভালো হবে না কিন্তু।

লোকটার দিকে তাকিয়ে ভয় গেল আরুশি কি ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে আছে। রেগে আছে বুঝা যাচ্ছে এখন কি করবো আরুশি ভাবছে আর পেচাচ্ছে হঠাৎ রুভে যাওয়ার কথা মনে আসতেই দৌড়ে রুমে দিকে যায় বাসার কেউ নেই। এর থেকে বাচতে হলে রুমই তার সম্বল রুমে ঢুকেই যেই দরজা দিবে তার আগেঈ বিপদ এসে হাজির।

—দরজা থেকে সরে দাড়ান একদম ভেতরে আসার চেষ্টা করবেন না তাহলে কিন্তু,,

–চুপ কর ছেমরি। আজ তোর এমন হাল করবো যে তুই এই মুখ কারো সামনে দেখিতে পারবি না। ভালো ভাবে বলেছিলাম বিয়ে করতাম তরে কিন্তু তুমি আমার গায়ে হাত তুরে বড় অপরাধ করেছিস এর জন্য তো শাস্তি তোকে পেতেই হবে।

বলেই এক ধাক্কা মারে দরজা খুলে যায় আর আমি ধাক্কা খেয়ে ভেতরে গিয়ে পরি।

—পালাতে চেয়েছিলি তাই না। এবার দেখি পালা তো আমার নজরে যেহেতু পরেছিস তুই। তোকে কেউ বাচাতে পারবে না।

বলেই আমাকে টেনে দাড় করিয়ে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।

—প্লিজ এমন করবেন না ছেরে দিন আমাকে। আপনার কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চাচ্ছি আমার এতো বড় সবনার্শ করবেন না প্লিজ। আমি তো আপনার বোনের মতো তাই না বোনের সাথে এমন কইরেন না।

বলেই আরুশি কান্না করে দেয়। কিন্তু সামনের লোক কোন কথায় কানে নিল না। সে নিজের শার্ট বোতাম খুলতে শুরু করেছে।
মামিকে দেখে ও অনেক ভয় পেয়েছি। কিন্তু এমন ভয় আমার আগে কখনো হয় নি লোকটা খারাপ জানতাম এতটা খারাপ তা আমার জানা ছিলো না। ভয়ে আমি মরে যাচ্ছি হাত পা ঠান্ডা বরফ হয়ে উঠেছে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কিন্তু করবো আমি নিজেকে রক্ষা করার কোন আশা খুজে পাচ্ছি না শেষে কিনা এসব ছিলো আমার জন্য । আজকে খুব মার কথা মনে পরছে এতোটা স্বার্থপর কি করে হতে পারো তুমি এভাবে কেন রেখে গেছিলে এসবের জন্য। এই জন্য কি বেচে আমি কেন বেচে আছি আমি কেন? একটু সুখ কি আমার কপালে লেখা নেই কেউ কি নেই যে আমার এই আযাব থেকে রক্ষা করবে কেউ নেই। মা তুমি চলে গেলে কেন সাথে আমাকে ও নিয়ে যেতে তাহলে এই দিন আমার জন্য আসতো না।
বাবা তো থেকে ও নেই। সেই যে গেলো আজ অবধি আর দেখা মিললো না তার কি তার মেয়ের কথা একবার ও মনে পরে না। কি ভাবে আছি আমি ভরে ও তো যেতে পারতাম একটু ও মনে পরে না। একটা বার কি মেয়েকে দেখতে আসতে পারে না। অঝোর ধারা চোখের পানি পরে যাচ্ছে বাধ মানছে না হঠাৎ কিছু পরায় চিন্তা জগতে থেকে ফিরলো অসভ্য লোকটা আমার উপরে ভাবতেই ঘৃণা লাগছে।

অসভ্য লোকটা নিজের মুখ আমার মুখের দিকে আনতে থাকে আমি থামাতে পারছিনা দুই হাত আটকে আছে। চোখ বন্ধ করে আল্লাহ কে ডাকছে। তিনি ছাড়া রক্ষা করার কেউ নেই একমাত্র তিনি এই খারাপ লোকের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। আল্লাহ আমার কথা কানে নিলেন মনে হয় হঠাৎ মামির কর্কশ কণ্ঠ কানে ভেসে এলো চিৎকার করে কিছু বলছে সাথে সাথে চোখ মেলে আমি অবাক জন্টু নাই। রুমে ও নাই আমি হাফ সেরে বাচলাম আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছে। কিন্তু এতো দ্রুত অসভ্য লোকটা গেল কোথায় আর ভাবতে পারলাম না। মামুনির জন্য সে আমার চুলের মুঠি ধরে আছি পাশে দাঁড়িয়ে আছে রুমি আপু আমি তাকাতেই বিরক্তি নিয়ে বেরিয়ে গেল।

—তোর সাহস তো কম না আমার কথা অমান্য করে খেতে বসেছিস তুমি আজ তোর এমন অবস্থা করবো আমার কথা অমান্য করার কথা ভাবতে ও পারবিনা।

বলেই টেনে নিতে লাগলো,

—মামি লাগছে চুল ছার প্লিজ সহ্য করতে পারছি না আমি।

—লাগছেনা লাগুক আমার কথা অমান্য করা তাই না। যেই দেখেছিস বাসায় কেউ নেই সেই চুরি করা শুরু করে দিয়েছিস। আমি বলায সক্তে ও তুই খেতে বসেছিলি তাও মাথা নিয়ে ওইটা আমার মেয়ের জন্য ছিলো সেটা খেয়ে নিলি রাক্ষুসী।

বলেই টেনে রান্না ঘরে নিয়ে যেতে লাগলো সামনে রুমি আপু আছে। হঠাৎ আপুর কথায় আমি ছলছল চখে তার দিকে তাকালাম।

—উফফ আম্মু ছারু তো ওকে। এই জন্য আসতে মন চাইনা এতো চিৎকার চেচামেচি আমার পছন্দ না তুমি জানো আমার প্রচুর খিদে পেয়েছে খেতে দাও।

—মেশমি মেয়ের খিদের কথা শুনেই আরুশিকে ছেড়ে দেয়। ইশারায় বলে, তোকে পরে দেখে নেব?
বলেই মেয়ের কাছে গিয়ে আহ্লাদ করতে থাকে আরুশি কানা মাখা চোখে তাকিয়ে আছে সেই দিকে। আজ তাল মা থাকলে ও নিশ্চয়ই এমন ভাবে ভালোবাসতো তাকে।

দুই দিন পর

রুমি আপু একদিন থেকেই চলে গেছে এর মাঝে আর মামি আমাকে তেমন কিছু বলেনি। মেয়ে চেচামেচি পছন্দ করে না বলেছে তাই চুপচাপ ই ছিলো।
সকাল থেকে মামির হাবভাব বুঝছি না আমাকে কাজ করতে দিচ্ছে না আবার সকালে নিজেই খেতে ডাকলো। ভাল খাবার ও দিলো অনেক দিন পর এতো ভালো করে খেয়েছি বলা যায়। আবার আগে বাগেই গোছল করতে পাঠিয়েছে রান্না ঘরে তো ঢুকতে ও দিচ্ছে না। আমি শুধু অবাক এর পর অবাক হচ্ছি। গোসল করে এসে দেখলাম বারোটা বাছে এতো আগে আমি কখনো গোসল করিনা আজ করতে হলো মামির জন্য তার মতিগতি আমার ভালো ডেকছে না। এর মামা কেও পাচ্ছি না কিছু জিগ্গেস করবো হঠাৎ মামি এলো রুমে আর আমার দিকে একটা শাড়ি বাড়িয়ে দিলো।
—শাড়ি দিচ্ছো কেন মামি শাড়ি দিয়ে কি করবো আমি?

–এই শাড়ি টা পরে সুন্দর করে সেজে রেডি হয়ে নে তো।

–কেন মামি?

–যা বলছি তাই কর এতো কথা বলছ কেন?

বলেই বেরিয়ে গেল আমার মাথায় কিছু ঢুকছ না কি হচ্ছে এসব?
সব কিছু ক্লিয়ার হলো এখন মামি জোর করে শাড়ি পরিয়ে নিয়ে এসেছে তার ভাই ভাবির সামনে সাথে ওই জন্টু ও বসে আছে। কেমন বাজে ভাবে তাকিয়ে আছে ঘৃণা লাগছে মন চাইছে জুতার বারি মারতে। তার আমাকে নানা কথা জিগ্যেস করলো ইন্টাভিউ নিচ্ছে বুঝতে পারছি না এসব কেন করছে মামি। তারপর যা শুনলাম তাতে আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেল। এই জন্টুর সাথে বিয়ের কথা বলতে এসেছে এবং আজকেই নাকি বিয়ে পরাবে।

আমার পৃথিবী ঘুরছে মাথা খারাপ হচ্ছে প্রচণ্ড জ্বন্তনা হচ্ছে তারা পাকা কথা বলে নিলো সন্ধ্যায় বিয়ে পরাবে। লোকটার দিকে ঘৃণা নিয়ে তাকালাম সে শয়তানি হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেল। এই লোকটাকে কিছু তেই বিয়ে করবো না কিছুতেই না।

বিকেলের দিকে মামা আমার রুমে এলো। আমার মাআর পা জরিয়ে ধরলাম আর কান্না করতে লাগলাম এই বিয়ে যেন না দেয়। মামা ও কাদতে আমাকে উঠিয়ে বলল,
–কাদিস না এই বিয়ে কিছুতেই হতে দেব না আমি তোর মামা এখন ও বেচে আছে। কি করে হয় আমি ও দেখবো।

আরুশি মামার কথায় একটু ভরসা পেল। মাগরিবের আযান পরছে আরুশি ওযু করে এসে নামাজ পরে সেখানে বসে কাদতে লাগলো বিয়েটা যেন আটকানো যায় এই খারাপ লোকটাকে কিছু তেই স্বামী বলে মানতে পারবে না ও।
—পালিয়ে যা মা পালিয়ে যা এ ধর এইখানে কিছু টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে যেদিকে খুশি পালিয়ে যা ওরা নাহলে এই বিয়ে দিয়েই ছারবে আমি অনেক বুঝাতে চাইলাম তোর মামিকে।সে কিছু তেই আমার কথা শুনল না শুনবে ও না সবাই চলে আসছে এখন বাসায় তোর মামি রান্না করছে এই সুযোগ পালা তুই।আমাকে ক্ষমা করিস তোকে আগলে রাখতে পারলাম না। নিজেই নিজেকে রক্ষা করিস আর এই আমার ফোনটা নিয়ে যা তোর তো ফোন ও নাই।

–মামা কি সব বলছো আমি কোথায় যাবো? আমাকে তারিয়ে দিয় না প্লিজ কোথায় কার কাছে যাব বলো কে আছে আমার তুমি ছাড়া তুমি ও তারিয়ে দিলো কাল কাছে যাবো।

–এখানে থাকলে ওরা তোর জীবন টা নষ্ট করে দেব ওই গুন্ডার সাথে বিয়ে দিয়ে। তার থেকে পালিয়ে যা কোথায় না কোথায় ঠিক থায় পেয়ে যাবি আমি তোর জন্য কিছু করতে পারলাম না আমাকে ক্ষমা করিস পারলে।

–মামা এভাবে বলো না তুমি আছো বলে আমি বেচে আছি তুমি নিজেকে এভাবে দোষারোপ করো না। আমাকে তারিয়ুনা একা রাতে কোথায় যাবো।

–আল্লাহ ঠিক কাউকে না কাউকে তোর জন্য পাঠাবে তুমি আমর কথা বাড়াস না চলে যা।

বলেই আরুশির মামা [ ইসমাইল হোসেন ] আরুশির কয়েক টা জামা ব্যাগে ভরে ওর হাত ধরে বেরিয়ে আনে।

–আমাকে ভুল বুঝিস না মা তোর ভালোর জন্য এটা করতেই হবে। এই নে ফোন।

–ফোন লাগবে না মামা এটা তোমার থাক না হলে তোমার সাথে যোগাযোগ করবো কি করে? আমি কারো ফোন থেকে তোমায় ফোন দেব নি।

–সাবধানে থাকিস মা।

আরুশি আর কথা বলল না। আরুশি একাধারে কেদে যাচ্ছি কষ্ট বুকটা ফেটে যাচ্ছে ওর কোথায় যাবে। মামি ওকে দেখথে না পারলে ও প্রচণ্ড ভালোবাসে মামিকে রিমন কে রুমি আপুকে তাদের রেখে কোথায় যাবো।
কিন্তু মামা তো ঠিকই বলেছে এখানে থাকলে বিয়ে দিয়েই ছারবে। নিজেকে বাচাতে পালাতেই হবে গেট খুলে বের হতেই দেখে অটো আসছে যা দেখে আরুশি দৌড় দিয়ে লুকায় সবাই ভেতরে যেতেই আরুশির প্রাণ ফিরে। কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না। আটটার মতো বাজে দেখেছে। সামনে দিকে কদম ফেলছে হালকা অন্ধকার আবার একটু একটু বাসার লাইটের আলো পরছৈ রাস্তায়। ভয়ে ভয়ে সামনে হাটছে কোথায় যাবো এখন, শেষ স্থান টাও হারালাম।

হাটতে হাটতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে সামনে একটা পার্ক দেখা যাচ্ছে। আরুশি কিনা ভেবেই সেটার ভেতরে ঢুকে পরে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here