আমার তুমি পর্ব -৩১

#আমার তুমি ২
#পর্বঃ৩১
#তানিশা সুলতানা

এবার সবার নজর পড়ে সায়ানের দিকে। সে আপাতত পায়ের ওপর পা তুলে টিভি দেখছে। টিভিতে ম্যাচ চলছে। তনু চুপচাপ তুলতুলের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আছিয়া দাঁত কটমট করে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে।
পাপন সায়ানের পাশে এসে বসে। তন্ময় সায়ানের ঘাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সায়ান আড়চোখে তাকায় পাপনের দিকে।

“তনু তুলাকে আমার পাশে এনে বসাও। শশুড় মশাইয়ের আমাদের এক সাথে দেখতে মন চাইছে।

রিমোট হাত থেকে নামিয়ে টি-টেবিল থেকে পা নামিয়ে বলে সায়ান। পাপন ভ্রু কুচকে তাকায়। সে এরকম কখন বললো? তন্ময় দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে।
তনু তুলতুলের হাত ধরে টেনে সায়ানের পাশে আনে। তুলতুল মাথা নিচু করে ফেলেছে। ভীষণ লজ্জা লাগছে।

” ভাইয়া বসাবো কোথায়?

তনু জিজ্ঞেস করে। সায়ান একটু সরে জায়গা করে দেয়। তনু তুলতুলকে জোর করে বসিয়ে দেয়।

“তন্ময় আমি তুলতুলকে বিয়ে করেছি। তুলতুলকে তুলে নিয়ে যাওয়া কোনো বেপারই ছিলোনা। সুমু এসবের আগে পেছনে কোথাও নেই। তবুও তুই আমার বোনের গায়ে হাত তুলেছিস। কেনো?

খুব শান্ত গলায় বলে সায়ান।

” তোর বোনের কপাল ভালো ওকে খু*ন করে ফেলি নি।

দাঁতে দাঁত চেপে বলে তন্ময়। সায়ান চোয়াল শক্ত করে ফেলে। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।

“তুই একটা গুন্ডা, বখাটে। তোর মতো একটা মানুষের হাতে আমার ফুটফুটে বোনটাকে তুলে দিতে বুক কাঁপলো না তোর বোনের? মীরজাফর তোরা। আরে ভাই তোকে নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি ভালোবেসেছি। কি করি নি তোর জন্য? তোর মুখের দিকে তাকিয়ে তোর বোনকেও গলায় ঝুলিয়েছি।

সায়ান চুপচাপ শুনে যায়।

” তুই আমার মাথা গরম করাস না। ভাগ্য খারাপ ছিলো তাই এমনটা হয়েছে। তুই চলে যা সায়ান। তুলতুল এখনো ছোট। এইচএসসি শেষ হলে তোর হাতে তুলে দেবো।

তন্ময় গম্ভীর গলায় বলে।

“আসলে কি বল তো? বোনকে ভীষণ ভালোবাসি।
আর তোরা তো ভীষণ বড়লোক। যা ইচ্ছে করতে পারিস। এখন যদি তোকে না মানি তাহলে দেখা যাবে বোনকে নিয়ে চলে গেলি। এক বছর সময় দিবি নিশ্চয়?

তাচ্ছিল্য হেসে বলে তন্ময়। সায়ান উঠে দাঁড়ায়।

” তুলতুল তুই কিছু বলবি?

সায়ান তুলতুলের দিকে তাকিয়ে বলে। তুলতুল নিচু মাথা আরও নিচু করে ফেলে। এখানে ওর বলার মতো কিছু নেই। মন চাইছে সায়ানের সাথে চলে যেতে কিন্তু আবার মনে হচ্ছে ভাইয়া ঠিক বলেছে। এটাই ভালো হবে।
তুলতুল বুঝে গেছে সায়ানের জন্য ওর ছোট্ট মনে এক আকাশ সমান পরিমাণ মায়া জমে গেছে। দুর্বল অনেকটাই।
তুলতুলের নিরবতা দেখে অবাক হয় না সায়ান। কারণ ও জানতো তুলতুল কিছুই বলতে পারবে না।

“বসো

পাপন বলে সায়ানকে। সায়ান বসে না দাঁড়িয়ে থাকে।

” আছিয়া যাও ওদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করো।

পাপন স্ত্রীকে আদেশ দিয়ে বলে। আছিয়া কড়া দৃষ্টিতে পাপনের দিকে তাকিয়ে চলে যায়। নাজমাও আছিয়ার পেছন পেছন যায়।

“ভোর হয়ে এসেছে প্রায়। রেস্ট নাও। সকালে ব্রেকফাস্ট করে তবেই যাবে।
তুলতুল ওকে তোমার রুম দেখিয়ে দিয়ে তুমি তনুর সাথে গিয়ে শুয়ে পড়বে।

বলেই পাপন উঠে দাঁড়ায়। অনেক রাগারাগি করার ইচ্ছে ছিলো। সায়ানের দুই গালে কষিয়ে থা*প্প*ড় দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু রাগারাগি করে তো আর সবটা ঠিক হয়ে যাবে না। হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। দেখা গেলো মেয়েটাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে গেলো।

” আমি ওর সাথে থাকবো।

সায়ান শক্ত গলায় বলে। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলে তুলতুল। পাপান না দাঁড়িয়ে চলে যায়। তনু মুচকি হাসে।

“জীবনেও মানুষ হবি না।

বিরবির করতে করতে চলে যায় তন্ময়।
সায়ান তুলতুলের হাত ধরে রুমে চলে যায়। তুলতুল কটমট চোখে তাকায় সায়ানের দিকে।

🥀
আজকে রুমটা বুড্ডা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তন্ময়ের। বিছানার বা পাশটায় ফাঁকা পড়ে আছে। মেয়েটাকে এভাবে না বললেও পারতো।

দুটো বালিশ এক সাথে করে খাটে আধশোয়া হয়ে ফোনটা হাতে নেয় তন্ময়। সুমুকে কল করে সরি বলতে হবে। মেয়েটার সাথে কথা বলা পর্যন্ত অস্বস্তি হচ্ছে। কি করে দিলো মেয়েটা? বিয়ের দিন পর্যন্ত একটুও দুর্বলতা ছিলো না। কিন্তু ইদানীং ভীষণ ভাবায় মেয়েটা
মস্তিষ্ক জুড়ে বসল আছে। রীতিমতো মাথায় উঠে নাচছে।

তন্ময় জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে সুমুর নাম্বারে কল করে।
বাজতে বাজতে কেটে যায় কল। তন্ময়ের বুক কেঁপে ওঠে। মেয়েটা ঠিক আছে তো? খুব বেশি রেগে গেছে?
আবারও কল করে। একবার দুই বার পরপর পনেরোবার কল করে। কিন্তু রিসিভ হয় না। চিন্তা হতে থাকে তন্ময়ের। সাথে সাথে হাসিবের নাম্বারে কল করে।

” ভাইয়া বলেন।

হাসিব ফোন রিসিভ করে বলে।

“সুমু কোথায়? কল কেনো রিসিভ করছে না?

“ঘুমচ্ছে। ভীষণ ফেভার শরীরে। এতোখন ডাক্তার ছিলো বাসায়। একটু আগে চলে গেলো। আর ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে।

তন্ময় ফোন কেটে দেয়। তারাহুরো করে বিছানা থেকে নেমে যা গায়ে ছিলো সেভাবেই বেরিয়ে যায় সুমুর বাড়ির উদ্দেশ্য।

🥀

” আপনার কি মিনিমাম লজ্জা টুকু নেই? ইসসসস কি লজ্জায় ফেললেন আমাকে। এভাবে কেউ বলে? আব্বু দাভাই কি ভাবলো?

সায়ান ঠাসস করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে খাটে বসে পড়ে। তুলতুল কোমরে হাত দিয়ে সায়ানের পাশে দাঁড়িয়ে বলে।

“পকপক কম।

জুতো খুলে টানটান হয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে বলে সায়ান।

“আমি পকপক বেশিই করি। জানতেন না আপনি? জেনে কেনো বিয়ে করলেন? আমি কি বলেছিলাম বিয়ে করতে? নেহাত আপনি আমাকে চুমু দিয়েছেন। নাহলে জীবনেও আপনাকে বিয়ে করতাম না। আপনি একটা নিলজ্জ, বজ্জাত, বদের হাড্ডি, শয়তানের নানা, টিকটিকির কাকা। জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে দিয়েছেন আমার।

তুলতুল গাল ফুলিয়ে বলে। সায়ান তুলতুলের হাত ধরে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। চমকে চোখ বড়বড় করে তুলতুল। কোথায় আছে এখন? মাথার ওপরে সিলিং ফ্যান দেখা যাচ্ছে। তার মানে সায়ানের পাশে শুয়ে পড়েছে।
সায়ান হাত বাড়িয়ে লাইট অফ করে তুলতুলের গায়ে হাত পা তুলে দেয়। তুলতুল কাঁদো কাঁদো মুখ করে সায়ানের দিকে তাকায়।

” আপনার হাতির মতো হাত। মহিষের মতো পা আমার এই চুনোপুঁটির গায়ে তুলে দিতে বিবেক বাঁধছে না আপনার? আমার হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে একবারও ভাবলেন না। সরান হাত পা। আমি ভেঙে চটপটির ফুসকা হয়ে গেলাম।

সায়ানের হাত সরানোর চেষ্টা করতে করতে বলে তুলতুল। সায়ান ফোঁস করে শ্বাস টানে। তারপর দুই হাতে তুলতুলকে জাপ্টে ধরে গলায় মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ করে। তুলতুল চমকে ওঠে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। শ্বাস আটকে আসছে। সায়ানের নিশ্বাস পড়ছে তুলতুলের গলায়। কাঁপিয়ে তুলছে তুলতুলকে।

“সসরুন প্লিজ

কাঁপা কাঁপা গলায় বলে তুলতুল।

” আর একটা কথা বললে আজকেই বাসর সেরে ফেলবো।

গলায় ঠোঁট ছুঁয়িয়ে বলে সায়ান। তুলতুল চুপ হয়ে যায়। একটুও নরা চরা করে না।

“তুলতুল খাবার খেয়ে যা। ওকে নিয়ে চলে আয়।

নাজমা দরজায় টোকা দিয়ে ডাকে ওদের। তুলতুল অসহায় চোখে তাকায় সায়ানের দিকে। সায়ান বিরক্ত হয়।

” সকাল খেয়ে নেবো। এখন খাবো না।

তুলতুলের গলায় মুখ রেখেই উওর দেয় সায়ান।
নাজমা লজ্জা পায়। চুপচাপ কেটে পড়ে ওখান থেকে।

__
সকালে একটু দেরিতে ঘুম ভাঙে তুলতুলের। নরে চরে বুঝতে পারে সায়ান আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। পিটপিট করে চোখ খুলে সায়ানের হাত সরিয়ে উঠে পড়ে তুলতুল। বালিশের কাশ থেকে ফোন নিয়ে সময় দেখে নেয়। নয়টা বেজে গেছে। তারাহুরো করে বিছানা ছেড়ে নেমে পড়ে। শাড়ির অবস্থা বাজে। ভাগ্যিস সায়ানের থেকে আগে ঘুম ভেঙেছে। এই অবস্থায় সায়ান দেখলে মানসম্মান যেতো।

গহনা খুলে রেখে শাড়ি খুলে বিছানায় রেখে থ্রি পিছ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
জলদি ফ্রেশ হয়ে রুমে আসে। সায়ান উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমচ্ছে। তুলতুল দরজা খুলে। আছিয়া আর নাজমা দাঁড়িয়ে আছে তুলতুলের রুমের দরজার সামনে। তারা এসেছিলো ওদের ডাকতে। কিন্তু ডাকার সাহস পাচ্ছে না।

“তোমরা

তুলতুল বলে। আছিয়া তুলতুলের দিকে তাকায়।

” এভাবে কেনো বের হয়েছিস? গোছল করে নে।

“আমি তো দুপুরে গোছল করি আম্মু।

” গাঁধা এক সাথে থাকলে ফরজ গোছল করতে হয়।
তুলতুল মাথা নিচু করে ভাবতে থাকে। এতো সকালে গোছল কি করে করবে? যে ঠান্ডা।

“জলদি গোছল সেরে বের হ।

আছিয়া বলে যেতে নেয়।

” আমরা শুধু ঘুমিয়েছিলাম শাশুড়ী আম্মু। গোছল করার মতো কিছু হয় নি।

সায়ান আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতে বসতে বলে। তুলতুল বুঝতে পারে না। আছিয়া আর নাজমা লজ্জা পেয়ে যায়। এসেছিলো তো ভালো করতেই। কে জানতো এমনটা?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here