আমার হৃদমাঝারে তুমি প্রিয় পর্ব ১৪

#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ১৫
#Sohana_Akther
নিহানের হাত থেকে ছুটে চলে আসবো ঠিক তখনি নিজের উপর নিহানের অস্তিত্ব পেলাম । সে আমর উপর আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে এমন ভাবে জরিয়ে ধরে আছে যে আমার দম যায় যায় অবস্থা ।

” নিহান করছেনটা কি ছাড়ুন আমায় সকাল অনেক হয়েছে ওঠতে হবে ” ।

” উঁহু থাকো আরেকটু এভাবে আমার ঘুম হয়নি ঠিকভাবে ”

” আপনার ঘুম হয়নি এতে আমার কি দোষ , ছাড়ুন আমাকে ” ।

” উঁহু ছাড়বো না আর আমার ঘুম হয়নি এর জন্য দায়ী তুমিই , তোমার মতো এমন আবেদনময়ী নারী পাশে থাকলে কি ঘুম হয় । ঘুমানো অবস্থায় তোমায় যে কতোটা আবেদনময়ী লাগে তা যদি বলে বুঝাতে পারতাম ” বলে চোখ টিপ মেরে মুচকি হাসতে লাগলো ।

তার কথা শুনে আমি নিজের দিকে তাকালাম সব ঠিকঠাক আছে কি না । যাক বাবা সব ঠিকঠাকই আছে । এবার আর তার কাছে হার না মেনে তাকে ধাক্কা দিয়ে খাট থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে , নিহান এখনো আগের মতোই শুয়ে আছে । ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গেলাম যেয়ে দেখি মা সকালের জন্য নাস্তা বানাচ্ছে ।

” মা আমাকে দেও দেখি আমি নাস্তা বানাচ্ছি তুমি অন্য কাজ করো ”

আমার কথা শুনে মা এমন ভাবে তাকিয়ে রইলো যেনো অদ্ভুত কিছু বলে ফেলেছি আমি, তার চোখে মুখে বিস্ময় ! সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমি নাস্তার জন্য গরুর মাংস রান্না করতে শুরু করে দিলাম । আজ সকালের নাস্তার জন্য মা চালের রুটি আর গরু মাংসের আয়োজন করছে ।

” কি গো নিরার বাবা দেখে যাও তোমার মেয়ে কি বলছে আজ নাকি সে নাস্তা বানাবে , যাকে আজ পর্যন্ত আমি বলে কয়ে রান্না করতে রাজি করাতে পারিনি । আমি কি স্বপ্ন দেখছি না অন্য কিছু ।

” আহহ্ মিনা তুমিও না একটু বেশিই করো , আমাদের নিরা মায়ের বিয়ে হয়েছে এখন তো তার এসব শিখার দরকার । সামনে যেয়ে শ্বশুরবাড়িতে কাজে লাগতে পারলে পারে ঐ বাড়ির একমাত্র ছেলের বউ বলে কথা । অবশ্য ফারানের বউ ও আছে কিন্তু নিহানরা তো ঢাকাতেই থাকে ।

” দেখেছো নিরার বাবা নিরা আমাদের একমাত্র মেয়ে আর ঐবাড়ির একমাত্র বউ , আমাদের নিরা অনেক আদরের থাকবে তাই না ” ।

” তা একদম ঠিক বলেছো তুমি “।

এতোক্ষণ রান্না করতে করতে তাদের কথাগুলো শুনছিলাম । এই বিয়েতে বাবা মা অনেক খুশি, তাদের খুশির জন্য নাহয় বিয়েটা আমি মেনে নিলাম । কিন্তু এতো সহজে কি নিহানকে মেনে নিতে পারবো আমি ! আমার আর নিহানের মধ্যে যাই হোক এর প্রভাব আমি বাবা মায়ের খুশিতে পরতে দিবো না । ছোট থেকে আজ পর্যন্ত ছোট বড়ো সকল খুশি তারা আমাকে দিয়েছে এখন না হয় আমিই তাদের খুশির কারণ হই ক্ষতি কি তাতে ।

নাস্তা করার জন্য নিহানকে ডাকতে গিয়ে দেখলাম সে কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে। আমি তাকে ডাক না দিয়েই সেখানে দাড়িয়ে রইলাম কখন কথা শেষ হবে। কথা শেষে পিছনে ফিরে আমাকে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেল।

” কি ব্যাপার এভাবে পিছনে দাড়িয়ে আমার কথা শুনছো তুমি , ওহহো তুমি এটা ভাবছো না তো যে তোমার বর কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছে হুহ।

” আমার বয়েই গেছে আপনি কার সাথে কথা বলছেন এই কথা জানতে, আপনাকে নাস্তা করার জন্য ডাকতে এসেছি । এসে দেখি আপনি কথা বলছেন তাই আপনার কথা শেষ হবার অপেক্ষা করছিলাম, এবার দয়া করে নাস্তা করতে চলুন আর আমাকে উদ্ধার করুন ” ।

নাস্তার টেবিলে যেয়ে প্রথমেই নিহান বাবা মাকে সালাম করলো । খেতে বসে বাবা আর নিহানের নানান বিষয় নিয়ে নানান কথা , আমি চুপচাপ কোনো কথা না বলে খেতে লাগলাম । খাওয়ার মাঝখানে আমি বললাম কলেজে যাবো ।

” বাবা আজ আমি কলেজে যাবো ”

” কি বলিস কাল বিয়ে হয়েছে আর আজ কলেজে যাবি তোর শ্বশুর বাড়ির লোকজন জানলে কি মনে করবে ” ।

” বাবা ওনিই আমকে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে আর বলেছে আঙ্কেল- আন্টি কিছু মনে করবে না”। আমার কথা শুনে চোখ রাঙ্গিয়ে নিহান আমার দিকে তাকালো । কারণ নিহান এমন কিছুই আমাকে বলেনি আমিই টোপ হিসেবে তাকে ব্যবহার করছি কলেজে যাওয়ার জন্য ।

” কি নিহান সত্যিই তোমার বাবা মা কিছু মনে করবেননা , তাহলে তো ভালোই ” ।

” হ্যা বাবা ভালোই , আমিই বাবা মাকে বলেছি নিরা বাসায় থেকে কি করবে তারচেয়ে বরং কলেজে যাক , আমার সাথে যাবে আর আমার সাথে আসবে তাই না নিরা ” বলে টেবিলের নিচ দিয়ে আমার পায়ে খোচা দিল ।

মানে আমার বিছানো জালে আমাকেই আটকাতে হলো । কলেজে থেকে আসার সময় একটা সিম কিনে আনতাম এখন নিহানের জন্য এটা কিছুতেই সম্ভব না । এই লোককে আমার হারে হারে চেনা আছে । মোবাইল নাম্বার বদলাতে হবে নাহলে রাত বিরাতে অচেনা ছেলে তার স্ত্রীর ফোনে কল দিবে এটা নিহান কিছুতেই সহ্য করবে না উল্টো আমার অবস্থা খারাপ করে ফেলবে ।

অতঃপর নিহানের সাথে আমার ভার্সিটিতে যেতে হলো। নিহান সাথে করে তার গাড়ি নিয়ে এসেছে, গাড়িতে তার সাথে একটাও কথা হলো না শুধু বাহিরের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম । কিন্তু আড়চোখে দেখতে পেলাম নিহান ড্রাইভ করার সাথে সাথে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে । ভার্সিটি পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে কিছু না বলে সোজা ভিতরে চলে আসলাম । ভার্সিটির মোটামুটি সবাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে , তাকিয়ে থাকারই কথা ভার্সিটির ক্রাশ দি নিহান চৌধুরীর গাড়ি থেকে নেমে এসেছি । কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে ক্লাসে চলে এলাম , ক্লাসে এসে দেখি রিয়া আগের থেকেই উপস্থিত ।

” কিরে নিরা তোকে দেখলাম নিহান ভাইয়ার গাড়ি থেকে নামতে , কাহিনী কি বলতো ” ।

রিয়াকে কালকের ঘটে যাওয়া সবকিছু একে একে বললাম, আমার কথা শুনে রিয়া যেনো আকাশ থেকে পরলো এমন অবস্থা ।

” ওহহ গড নিরা বলিস কি তুই , তুই আর নিহান মানে নিহান আর তুই হাজবেন্ড ওয়াইফ !! আমি তো কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না । নিহান তোর জন্য এতোটা পাগল, প্রিয়া ঐদিন ঠিকি বলেছিল তোর আরেক মাজনু এই নিহান ” !

আরেক মাজনুর কথা শুনে ঐ অচেনা কেউ একজনের কথা মনে পরলো গত কয়েক দিন কোনো বেলী ফুলের মালা পাঠায় নি । এখন তো বেলী ফুলের মালা কিছুতেই নেয়া যাবে না নিহানের নজর সারাক্ষণ আমার দিকেই থাকবে ।
মোবাইল সিম কার্ড না কিনে রিয়ার থেকে এক্সট্রা একটি নতুন সিম নিয়ে নিলাম । সবগুলো ক্লাস শেষে যখন মাঠে এলাম তখন নিহানকে দেখতে পেলাম তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে ।

আমাকে দেখে তাদের কাছে যেতে ইশারা করলো আমি ও তার ইশারা অনুযায়ী সেখানে গেলাম ।
তার বন্ধুরা সবাই আমাকে ভাবি বলে সম্বোধন করতে শুরু করলো , সবাইর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখতে পেলাম একমাত্র রিনি ছাড়া । না দেখতে পাওয়ারই কথা বেচারি যে নিহানের প্রতি পাগল ছিল । কিন্তু নিহান বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু কখনো তাকে ভাবেনি , পুরো ভার্সিটি এই ব্যাপারে জানে ।

” ভাবি বসেন দাড়িয়ে আছেন কেনো, এই রিজভী একটা দুটো চেয়ার এনে দে ভাবি ও বেয়াইনের জন্য ” ।

” না থাক ভাইয়া সমস্যা নেই আমরা এভাবেই ঠিক আছি ” ।

” কি জিজু না মানে নিহান ভাইয়া কেমন আছেন , বিয়ে উপলক্ষে ট্রিট চাই কিন্তু ” ।

রিয়ার কথা শুনে হালকা হেসে বললো ,

” তুমি আমায় জিজু বলেই ডাকতে পারো সমস্যা নেই শালিকা বলে কথা , আর রইলো ট্রিট তা একদিন সময় করে পেয়ে যাবা ” ।

” ওহহ ধন্যবাদ ভাইয়া ” ।

” তা নিহান কাজটা কিন্তু তুই একদম ঠিক করিসনি , এভাবে তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করার কি দরকার ছিল আমাদের ভাবিতো কোথাও হারিয়ে যাচ্ছিল না ”

আকাশ ভাইয়ার কথা শুনে ওনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে তার উদ্দেশ্য বললেন ,

” কখন কি হয় সেটা তো বলা যায়না তাই হারিয়ে যাওয়ার আগেই নিজের করে ফেললাম ” ।

” হুহহ তাও আমাদেরকে বাদ দিয়ে শালা তুই বন্ধু না হারামী ” ।

” চিন্তা করিস না এখন তো শুধু আকদ হয়েছে অনুষ্ঠানের সময় ইনজয় করে নিস ” ।

” যাই বলিস বিয়ে তো বিয়েই তাই না আর বন্ধুর কবুল বলাই যদি না দেখতে পারি তো আর কি ” ।

একে একে তার সকল বন্ধুদের অভিযোগ শুনছিলাম । অসাধারণ বন্ধুত্ব তাদের, আকাশ ভাইয়া নিহানের বন্ধুত্ব একটু বেশিই । অবশেষে বন্ধুদের বায় বলে ওনি আমাকে বাড়িতে দিয়ে চলে গেলেন । যাওয়ার আগে শুধু এইটুকু বলে গেলেন রাতে যেনো আমার রুমের বারান্দার দরজা খোলা থাকে এই বলে গাড়ি স্টার্ট করে একটানে চলে গেলেন ।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here