আমার হৃদমাঝারে তুমি প্রিয় পর্ব ১৪

#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ১৪
#Sohana_Akther
অবশেষে বিয়ে যেহেতু হয়েছে তাহলে আসল কাজটা সারা যাক কি বলেন মিসেস: নিহান চৌধুরী ? নিহানের এই কথা শুনে আমি নড়েচড়ে বসলাম , আসল কাজ বলতে কি বুঝাতে চাইছে নিহান! তার সামনে এগিয়ে আসা দেখে আমি খাটে একদম গুটিশুটি হয়ে বসলাম ।

” দেখুন আপনি একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না তাহলে পরিণাম কিন্তু খুব খারাপ হবে ” ভয়ে আরষ্ট হয়ে গলায় একটু জোর দিয়ে কথাটা বললাম । কিন্তু আমার কথা শুনে নিহানের কোনো হেলদোল হলো বলে মনে হলো না বরং আরো এগিয়ে এসে খাটে একদম আমার গা ঘেঁষে বসলো ।

” কি খারাপ হবে শুনি , তোমার মতো পিচ্চি মেয়ে কি করতে পারবে আমার ” ? বলে হেচকা টান দিয়ে আমায় একদম তার বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললেন । ওনার হাত থেকে ছুটার জন্য অনেক জোরাজুরি করেও লাভ হলো না বরং আরো জোরে হাত ধরে রাখলেন ।

” এই ছোট্ট মাথায় খালি আজেবাজে জিনিস ঘুরে তাই না , নাকি তুমিই আমার কাছে আসতে চাইছো আর তা মুখে বলতে পারছো না কি ব্যাপার হুহহ । আরে বোকা আমি দুই রাকাত নফল নামাজের কথা বলেছি । যাও জলদি ওযু করে আসো একসাথে নামাজ পড়বো , আমি বাহির থেকে ওযু করে এসেছি ” ।

কাপড় চোপড় চেইঞ্জ করে একবারে ওযু করে বের হয়ে দেখি নিহান জায়নামাজ বিছিয়েছে , আমার জন্য জায়নামাজ ঠিক তার পিছনে ।
নামাজ শেষে নিহান বললো তার কফি নিয়ে আসতে । তর প্রতি জমে থাকা রাগ সামলাতে না পেরে বলে ওঠলাম,

” পারবো না আমি আপনার জন্য কফি আনতে , বিয়ে করেছেন দেখে কি আমাকে আপনার চাকরানী পেয়েছেন নাকি ” ।

আমার কথা শুনে আমার দিকে তেড়ে আসলেন ওনি , আমার বাহু চেপে ধরে বললেন ,

” বেশি কথা বলে না নিরাপাখি তাহলে পরিণাম কিন্তু খুব ভয়াবহ হবে ” ।

” কি হবে হা কি হবে, কি করবেন আপনি মারবেন আমায় তো মারেন ” ?

” দেখতে চাও কি করবো আমি “। বলে মুচকি হেসে আমার ডান গালে একটি চুমু দিলেন।

আমি একদম স্তব্ধ হয়ে গেলাম । আমার সারা শরীর জুড়ে এক অদ্ভুত শিহরণ জেগে ওঠলো । কই ঐদিন তো এমনটা অনুভব হয়নি আজ যেমন হচ্ছে ।

” আজ তোমার এমন অনুভূতি হচ্ছে কারণ এটা তোমার শরীরে দেওয়া আমার পবিত্র ছোঁয়া ” ।

অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম , সে কি করে আমার মনের কথা বুঝলো না আমিই জোরে বলে ফেলেছি । আমি অবাক চোখে নিহানের দিকে তাকিয়ে রইলাম । আমার তাকানো দেখে সে বললো,

” অবাক হচ্ছো এই ভেবে যে আমি কি করে তোমার মনের কথা বুঝলাম, আসলে কি জানো তোমার আমার বন্ধনটাই এই হৃদয়ের ” । এখন চটজলদি আমার জন্য কফি নিয়ে আসো নাকি আরো চুমু চাই , তুমি চাইলে অবশ্য আমার দিতে কোনো আপত্তি নেই ” বলেই শয়তানি হাসি দিতে লাগলো ।

এই মুহূর্তে এখানে থাকা খুব বিপজ্জনক আমার জন্য, এই লোকের একদম ভরসা নেই কখন কি করে বসে তারচেয়ে বরং তার জন্য কফি নিয়ে এসে জানে বাচি । নিহানের জন্য কফি নিয়ে এসে দেখলাম সে ঘুমিয়ে পরেছে । আমাকে কষ্ট দিয়ে কফি বানিয়ে মহারাজ এখন ঘুমোচ্ছে বাহহ । এখন এই কফি কি করি, কি করি ভাবতেই মাথায় আসলো কফি নষ্ট না করে আমিই খেয়ে ফেলি । যেই ভাবা সেই কাজ গরম গরম কফি খেয়ে ফেললাম , আহহ নিরা তুই যে কি কফি বানাস…নিজেই নিজের তারিফ করতে লাগলাম।

শুতে যেয়ে বাধলো আরেক বিপত্তি নিহান খাটে ঘুমিয়ে আছে তাহলে আমি কোথায় শুবো ? একখাটে নিহানের সাথে থাকা কিছুতেই সম্ভব না আমার পক্ষে , নিচে শুয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । তাই আলমারির পাশ থেকে মাদুর বিছিয়ে যখন খাট থেকে বালিশ নিতে যাবো তখন খপ করে নিহান আমার হাত ধরে টেনে আমায় খাটে শুইয়ে আমার উপর চড়ে ওঠলো । রাগে দাতঁ কটমট করে বললেন ,

” তোমার সাহস তো কম না যে নিচে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিলে , এর জন্য তোমাকে তো শাস্তি পেতে হবে নিরাপাখি ” ।

নিহানের কোনো কথাই কানে তুললাম না, তার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু কিছুতেই পেড়ে ওঠতে পারলাম না । নিহান আরো জোরে চেপে বসলো । এই মুহূর্তে আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে এমন অবস্থা । কেনো যেনো আমার এতোটা কাছে নিহানকে আমি নিতে পারছি না তার গরম নিশ্বাস
এসে আমার মুখের উপর পরছে । এক ধাক্কায় নিহানক আমার উপর থেকে সরিয়ে ওঠে বসলাম। রেগে গিয়ে তাকে বললাম ,

” দেখুন নিহান আমি শুধুমাত্র বাবার জন্য আপনাকে বিয়ে করছি , আমি মন থেকে আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না ”

আমার কথা শুনে প্রথমে মুখ শক্ত করে তাকিয়ে থাকলেও পরে খুব শান্ত স্বরে বললেন,

” তুমি না মানলে কিছু আসে যাবে না নিরাপাখি এক এই আমি তোমাকে স্ত্রী মানলেই যথেষ্ট ” । আর আমাকে তোমার স্বামী একদিন না একদিন ঠিকি মানবে , আর আমি ঐদিনের অপেক্ষায় থাকবো আর তখনি আমি আমার স্বামীর অধিকার নিয়ে তোমার সামনে ধারাবো ।

তার কথাগুলো চুপচাপ শুনছিলাম। আচ্ছা সত্যিই কি আমি কখনো নিহানকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবো হয়তো বা হয়তো না ।

” কিন্তু এখন তোমাকে নিচে ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য শাস্তি পেতে হবে । এখন শাস্তি স্বরূপ তুমি আমাকে জরিয়ে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবে , যদি না করো তো আরো কঠিন শাস্তি পেতে হবে এবার তুমিই ভাবো এর চেয়ে কঠিন কিছু কি হতে পারে ” । বলে মুচকি হাসতে লাগলো । আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে নিহান কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে ।

অগ্যতা নিহানের কথা অনুযায়ী তার বুকে মাথা রেখে শুতে হলো । তার বুকের ঢিপঢিপ শব্দ স্পষ্ট শুনতে পারছি আমি । এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে আমার তার বুকে শুয়ে । মনে হচ্ছে এর চেয়ে শান্তির জায়গা আর দ্বিতীয়টি নেই ।

কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম নিহানের হাত আমার পেটের উপরে , তার থেকে সরে যেতে নিলে পেটে তার হাতের অস্তিত্ব আরো গভীর ভাবে অনুভব করলাম । আমার সারা শরীর কেমন যেনো কাপঁতে লাগলো । তার থেকে সরে এসে অনেক কষ্টে মুখ খুলে বললাম,

” দেখুন একটু সরে ঘুমান আপনি, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে আপনার ছোঁয়ায় ” ।

আমার কথা শুনে নিহান আমাকে আরো তার কাছে টেনে নিলেন । আমার গলায় মুখ রেখে বললেন ,

” অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছি এখন তুমি যদি এতো নড়াচড়া করো তাহলে তো আমি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাবো । এতে অবশ্য আমার কোনো সমস্যা নেই সমস্যা তোমারই হবে কি চাও তুমি আমি আমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি”।

তার কথা শুনে চুপচাপ তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরলাম । নিহান যে কি করতে পারবে এই এতটুকু সময়ে তার আন্দাজ হয়ে গেছে । নিহানও চুপচাপ আমায় জরিয়ে ঘুমিয়ে পরলো । সকালে সূর্যের মিষ্টি রোদে ঘুম ভেঙে গেলো । ওঠে বসতে নিলেই নিজেকে নিহানের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ পেলাম । সকালের এই মিষ্টি রোদে নিহানকে কি অপূর্ব সুন্দর দেখাচ্ছে । অনেক কষ্টে নিহান থেকে সরে আসতে নিবো ঠিক তখনি ….

চলবে …

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here