আমার হৃদমাঝারে তুমি প্রিয় পর্ব ১৩

#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ১৩
#Sohana_Akther
আমার ভয়ার্ত চেহারা দেখে নিহান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, ” কি ব্যাপার এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো , মনে হয় কোনো ভুত দেখে ফেলেছো বা আমায় আগে কখনো দেখোনি ” ।

তার কথা শুনে আমতা আমতা করে বললাম,

” না কই কিছু না তো এমনিতেই তাকিয়েছি আপনার দিকে “।

” আচ্ছা যাই হোক আজ থেকে তোমাকে যেনো ক্যাম্পাসের পিছনে পুকুর পাড়ে না দেখি , ঐদিকটাতে আর কখনো যাবে না মনে থাকে যেনো ” । একদম গলা শক্ত করে কথাটা বলে চলে গেল । আমার উত্তরের অপেক্ষাও করলেন না হুহহ আমি যেনো তার কেনা গোলাম যে তার সব কথা শুনবো । মনে মনে এই কথা বললেও আমি আর কখনো ঐদিকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । রিয়া আর প্রিয়া তো মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে তার এমন ব্যবহার দেখে ।

” নিরা দেখলি নিহান ভাইয়া তোর জন্য কতোটা পজেসিভ ” ।

” হে রিয়া তাই তো দেখলাম, এক মাজনু নিরাকে বেলী ফুলের মালা পাঠায় তো আরেক মাজনু তার জন্য মারামারি করে । আমার তো কখনো মনে হয় নিরার ঐ মাজনু টা নিহানই কিনা ! ”

” এই তোদের মাথার তার কয়টা ছিড়া বলতে পারবি সেই কখন থেকে কি শুরু করেছিস বলতো । তোরা আর মানুষ পেলি না এই রাগচটা নিহান কিভাবে এতো রোমান্টিক হতে পারে । তাকে এখন দেখলেই ভয়ে আমার হাত পা কাঁপা শুরু করে ।

” আচ্ছা এখন এসব বাদ , চল নিরা প্রিয়া ক্লাসে চল অলরেডি লেইট হয়ে যাচ্ছি ” ।

ক্লাসে যেতে না যেতে শুরু হলো আবার ইনকোআইরি কি হয়েছিল ঐদিন , নিহান কিভাবে পৌঁছালো ঐখানে, কেমন আজগুবি প্রশ্ন করা শুরু করে দিয়েছে । একজন তো বলেই ওঠলো ” এই প্রথম আমাদের সকলের ক্রাশ নিহান চৌধুরীকে এমন মারাত্মক ভাবে কাউকে মারতে দেখিছি ” । এরমধ্যে আরেক জন বলে ওঠলো ” আরে এই আর কি নিহান তো নাকি ভার্সিটির পিছনে পুকুর পাড়ে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সবার জন্য ” ।

তাদের এসব কথাবার্তা একদম ভালো লাগছিল না তাই রিয়া ও প্রিয়াকে ক্লাস করতে বলে আমি ক্লাসের বাহিরে চলে আসলাম । উফফ কেমন শ্বাসরোধক অবস্থা । নিজেকে আমি কিছুতেই স্থির করতে পারছি না । গলা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে আছে, পানি পান করার জন্য ক্যান্টিনে রওনা দিলাম ।

ক্যান্টিনের পরিবেশ আজ কিছুটা অন্যরকম । সবাই কেমন আর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেউ কেউ তো ফিসফিস করে কিছু বলছে। এসব কিছু আর নিতে পারছি না, নিজেকে কেমন জোকার মনে হচ্ছে যে সবাই ঢেপঢেপ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । কর্নারের একটি টেবিলে যেয়ে বসলাম , ক্যান্টিনের পিচ্চি ছেলেকে একটা বার্গার আর একটা পানির বোতল দিতে বললাম । এগুলো আসতে আসতে এফবিতে একটু ঢু মেরে দেখি গত দুইদিন ঢুকা হয় না । বসে বসে নিউজ ফিড স্ক্রোল করছি হঠাৎ মনে হলো কেউ একজন দৃঢ় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখলাম নিহান আমার সামনাসামনি বসে আছে । এক গালে হাত দিয়ে একনাগাড়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । তার তাকানো দেখে একটু নড়েচড়ে বসলাম ।

” আপনি এখানে কেনো এটা আমার টেবিল ” ।

” আচ্ছা এটা তোমার টেবিল তা টেবিলটাকি তুমি কাধে করে বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছো ” বলে মুচকি হাসতে লাগলো ।

তাকে কিছু বলতে যাবো তখনি আমার কলেজ ফ্রেন্ড রুশান করেছে, তার সাথে কথা বলে সামনে তাকিয়ে আমি কয়েকটা হার্টবিট মিস করলাম । নিহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । খুব শান্ত ও শীতল কন্ঠে বললেন কে ছিল ফোনের অপর পাশে । আমিও একটু মজা করে বললাম আমার বয়ফ্রেন্ড ।

নিহান কিছু না বলে চুপচাপ ওঠে চলে গেল এই যেনো তুফানের আগের শান্ত পরিবেশ ।
কিন্তু এই এক মিথ্যা কথা বলার পরিণাম যে এতোটা খারাপ হবে তা কল্পনার বাইরে । বাকি ক্লাস গুলো শেষ করে বাড়িতে চলে আসলাম ।

কয়েকদিন পর রাতে খাওয়া দাওয়ার পর বাবা আমার রুমে আসলেন কফি নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে । বাবা সাধারণত এতো বেশি একটা আমার রুমে আসে না ,

” মামনি আসতে পারি ভিতরে ” ?

” আরে বাবা তোমার কি অনুমতি নিয়ে ঘরে ঢুকতে হবে নাকি ” ।

” যে ঘরে বিয়ের বয়সী মেয়ে আছে ঐ ঘরে অনুমতি নিয়েই ঢুকতে হয় ” ।

” আহহ বাবা আবার কি শুরু করেছো ” ।

” নে তোর জন্য কফি নিয়ে এসেছি খেয়ে দেখ কেমন হয়েছে আর চল বস তোর সাথে একটু কথা আছে ” ।

বাবার হাতে কফি মগ দেখেই বুঝেছি বাবা কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে এসেছে । যখনি বাবা কোনো জরুরী কথা বলবে আমাকে তখনি কফি নিয়ে আসে আমার জন্য, কফি খেতে খেতে তার কথা বলে ।

” নিরা তোমাকে কালকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে, ছেলে এবং ছেলের পরিবার খুব ভালো । ছেলের এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি কিন্তু কয়েক মাস পরেই হয়ে যাবে ” ।

বাবার কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লাম আমি তো এখন বিয়ে করতে চাই না সেটা তো আগেই সবাই কে বলেছি ।

” কিন্তু বাবা আমি এখন বিয়ে করতে চাই না পড়াশোনা শেষ করে তারপর ” ।

” আমি এসব নিয়ে কথা বলেছি তারা তোমাকে বিয়ের পরও পড়াবে , আর আরেকি জরুরী বিষয় হলো ছেলে তোমার ভার্সিটিরই ছাত্র সে তোমাকে ঐখানে দেখেই পছন্দ করেছে ” ।

” কিন্তু বাবা তারপরও ”

” দেখো নিরা আমি তাদেরকে কথা দিয়ে ফেলেছি আর আমার বিশ্বাস আমার মেয়ে কখনো আমার অসম্মান করবে না । কালকেই ওরা আসবে তোমাকে দেখতে ” । এই বলে বাবা চলে গেলেন ।
আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে শুরু করলাম কে হতে পারে এই ছেলে, বেলী ফুলের মালা পাঠানো ছেলেটা নাতো ! এসব ভাবতে ভাবতেই এক সময়ে ঘুমিয়ে পরলাম ।

এরপরের সারাটা দিন আমার অস্থিরতায় কেটে গেল । সন্ধ্যার পর পাত্রপক্ষ দেখতে আসলো , আমি আমার রুম থেকেই তাদের কথা বলার শব্দ শুনা যাচ্ছে । কিছু সময়ের পর মা আমাকে তাদের সামনে নিয়ে যেতে আসলো । অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাবার সম্মানের জন্য তাদের সামনে চায়ের কাপ নিয়ে হাজির হলাম ।

পাত্রপক্ষকে দেখেই আমার চোখ কপালে উঠে গেল, পাত্রপক্ষ আর কেউ না নিহানের পরিবার আর পাত্র নিহান ! মা আমাকে নিয়ে তাদের সামনে বসালেন । নিহানের বাবা মা আমাকে আগের থেকেই চিনেন তাই কিছু কথা বলেই তারা বললেন মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে । আর তারা নাকি আজকেই আকদ করিয়ে রাখতে চান , নিহান সাথে করে কাজী নিয়ে এসেছে ।

” দেখো বাবা নিহান এতো তাড়াহুড়ো করার কি আছে কয়েক দিন পর না হয় ধুমধাম করে তোমাদের বিয়ে ঠিক করবো ” ।

” আঙ্কেল আপনি যাই বলেন কিন্তু আমি আজ নিরাকে বিয়ে না করা ছাড়া এখান থেকে এক পা ও নরবো না ”

নিহান তার বাবা মা, আমার বাবা মা কারো কথাই শুনতে নারাজ । অতঃপর তার কথাই শুনতে হলো সবার । তার সাথে আজ আমার বিয়ে হয়েই গেল । কথা ঠিক হলো নিহানের ফাইনাল পরীক্ষার পর আমাকে ওঠিয়ে নিবে । আমি নিরব দর্শকের মতো সবকিছু চুপচাপ দেখেই গেলাম । আমার হাতে কিছু করার ছিল না । অবশেষে এই বদরাগী নিহানই কিনা হলো আমার স্বামী!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here