আমার হৃদমাঝারে তুমি প্রিয় পর্ব ৪

#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ৪
#Sohana_Akther

চোখ মেলে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না কিন্তু গা এখনো ছমছম করছে আমার , কেউ তো ছিল ।
হঠাৎ চোখ পরলো বারান্দার দরজায়, হায় আমি তো দরজাই বন্ধ করেনি জলদি ওঠে বারান্দায় যেয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখি আমাদের বাগানের আম গাছটার নিচে কেউ হয়তো দাড়িয়ে আছে আবছা ভাবে দেখা যাচ্ছে তাকে ।

ভয়ে আমার সারা শরীরে কাটা দিয়ে ওঠলো , আমার বারান্দার গ্রিল নেই এখান দিয়ে যে কেউ
অনাসয়ে আমার রুমে ঢুকতে পারবে , তাই আমি কখনো বারান্দার দরজা খোলে ঘুমাই না আজ যে কিভাবে কি হলো মনেই নেই । বাহিরে এখন অনেক বৃষ্টি হচ্ছে । এইসব ভাবা বাদ দিয়ে রুমে যেয়ে আবার ঘুম দিলাম সকালে কলেজে যেতে হবে দেরি করা যাবে না ।

সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম , বৃষ্টির পর বাহিরের প্রকৃতি কি স্নিগ্ধ ও সতেজ লাগছে । একটা ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজমান । বাগানের ফুল গুলো যেনো নতুন করে বৃষ্টির ছোঁয়ায় নিজেদের প্রাণ ফিরে পেল ।

আজ সকালে টাইম মতো ওঠে নাশতার জন্য টেবিলে যেয়ে হাজির হলাম ,

” মা আমাকে নাস্তা দেও তাড়াতাড়ি নাহলে আজ আবার লেইট হবে ” ।

” আচ্ছা আনছি আজ তোর পছন্দের নাশতা পরোটা উইথ গরু মাংস করেছি ” ।

” ওহহ মা ইউ আর টু গুড , এই এক জিনিস যা আমি সকাল বিকাল সন্ধ্যা তিন বেলায় খেতে পারবো উম্মাহহ ” ।

” আরে থাম থাম পাজি মেয়ে সব আদর কি একদিনেই দিয়ে দিবি , এবার খেতে বস জলদি “।

আমি চটজলদি খাবার শেষ করে মার থেকে বিদায় নিয়ে কলেজে চলে আসলাম । রিয়া ও প্রিয়া আজ কলেজে আসে নি আমি একাই এসেছি । ক্লাস শেষ করার পর যখন আমি ক্যান্টিনে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম তখন পিছন থেকে এই মিস হোয়াইট ড্রেস বলে কেউ ডেকে ওঠলো , আজ আমি সাদা রঙের জামা পরেছি ।
পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম , ছেলেটি আর কেউ না যাকে আমি প্রপোজ ও কিস করেছিলাম সে । ওনি কেনো আমাকে ডাক দিল বকাঝকা করবে নাকি ।

” জ্বী ভাইয়া বলেন কেনো ডেকেছেন ” ।

” হাই আমি রিদান কাল যাকে আপনি প্রপোজ করেছেন আর সাথে একটি চুমু ” বলে মুচকি হাসতে লাগলো ,

এই মুহূর্তে আমি চরম লজ্জা পেলাম সব ঐ নিহান ও তার গ্যাঙের জন্য ।

” চিনতে পেরেছি ভাইয়া , ক্ষমা করে দিবেন আসলে ” কথাটা সম্পূর্ণ করতে যাবো তার আগেই ওনি বললেন ,

” হ্যা জানি রেগ ছিল ঐটা আর যারা তোমাকে এই কাজ করতে বলেছে ওরা আগে অনেকর সাথেই এমন করছে , একদম বাজে একটা গ্রুপ। আমার ক্লাসমেট ওরা ” ।

আমি ওনার কথা শুনে কি বলবো বুঝতে পারলাম না ।

” আচ্ছা অনেক কথাই তো হলো কিন্তু তোমার নামটাই তো জানতে পারলাম না কি নাম তোমার ” ।

” ইনায়াত আহমেদ নিরা , সবাই নিরা বলেই ডাকে ” ।

” বাহহ ! খুব মিষ্টি নাম তো তোমার, আমরা কি বন্ধু হতে পারি ” ।

এই বলে ওনি তার হাত বাড়ালেন , আমি বন্ধুত্ব করবো কিনা ভেবে আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবো তখনি রিদান বললেন,

” এতো ভাবছো কেনো শুধু বন্ধুই তো আর তো কিছু হতে বলিনি ” এই বলে আমার হাতে হাত মিলালো ।

আমি ও হাসি মুখে হাত মিলালাম , হঠাৎ করে এক ঝরো হাওয়ায় আমার চুলগুলো সামনে চলে আসলো আর তখনি রিদান তার হাত দিয়ে চুলগুলো সরিয়ে দিল । তার এই অদ্ভুত কান্ডে আমি একটু বিচলিত হয়ে গেলাম , তখনি রিদান বললো ,

” সরি সরি আমার হাত অটোমেটিকই চলে গেল তোমার চুল ঠিক করার জন্য সরি ”

এই বলে সে দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করলো , এতক্ষণ যে কেউ একজন আমাদের কয়েক হাত দূরত্বে দাড়িয়ে এসব দেখছিল তা আমরা কেউই খেয়াল করি নি । যখন আবার ক্যান্টিনে যেতে লাগলাম তখনি হঠাৎ করে কেউ আমার মুখ বন্ধ করে আমায় এক বন্ধ রুমে টেনে নিয়ে গেল । কে আপনি এটা বলে পিছনে তাকিয়ে দেখি নিহান দাড়িয়ে আছে । তার মানে ওনি এভাবে আমাকে সকলের সামনে থেকে টেনে নিয়ে এসেছে । রাগটা আর সামলাতে পারলাম না চিৎকার করে ওঠলাম ,

” সমস্যা কি আপনার এই ভাবে সকলের সামনে থেকে আমাকে এখানে টেনে নিয়ে এসেছেন কেনো ” ।

আমার কথা শুনে ওনি ঠিক আমার এক আঙ্গুলের দূরত্ব রেখে আমার সামনে দাড়ালেন , তার জোরে জোরে নেওয়া নিঃশ্বাসে শব্দ শুনতে পারছি আমি । তার চোখ দুটি আগুনের গোলার মতো লাল হয়ে ছিল , এতো রেগে গেলেন কেনো ওনি । কাপা কাপা কন্ঠে বললাম ,

” দেখুন সরে দাড়ান আপনি এইভাবে আপনাকে আর আমাকে বন্ধ একটি রুমে দেখলে লোকে কি ভাবতে পারে তার নূন্যতম ধারণা আছে আপনার”। এই বলে ওনাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে নিলে ওনি আমার হাতধরে টেনে একদম তার বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললেন । একহাত আমার কমোরে আরেক হাত দিয়ে আমার চুলগুলো পিছনে গুজে দিলেন । হাত তার প্রচন্ড গরম চোখ দুটি ও লাল জ্বর নাকি ওনার । এমনভাবে চুলগুলো টেনে নিলেন খুব ব্যথা পেলাম তাতে , ব্যথায় আহহ করে ওঠলাম ঠিক তখনি ওনি মুখ খুললেন ,

” রিদান যখন তোমার হাত আর চুল ধরলো তখন কেউ কিছু মনে করবে না ” ? আমি ধরলেই দুনিয়ার মানুষ নানান কিছু ভাববে তাই না ।

খুব শান্ত স্বরে কথাটি বললেন ওনি , তার কথা শুনে আমি চমকে গেলাম । দেখতে বুঝা যাচ্ছে ওনি রেগে আছেন কিন্তু এতো ঠান্ডা স্বরে কথা বলছেন কিভাবে ।

” আর কখনো তুমি ঐ রিদানের সাথে কথা বলবে না , আর কোন হাত ছুঁয়েছে ও তোমার এই ডান হাত তাই না”।

এই বলে ওনি আমার ডান প্রচন্ড জোরে ঢলতে লাগলেন মনে হয় হাতের চামড়াই ছুলে যাবে । প্রচুর জ্বালাপোড়া করছে , ব্যথায় আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো । হঠাৎ অনুভব করলাম হাত কেমন ভিজা ভিজা লাগছে তাকিয়ে দেখি তার হাতে ব্যান্ডেজ আর আমার হাত ঢলার কারণে ওনার কাটা হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে । রক্ত দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম । কাপা স্বরে ওনাকে বললাম ,

” দেখুন আপনার হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে ” ।

নিহানের ঐদিকে কোনো খেয়াল নেই সে তার কাজ করেই যাচ্ছে । হঠাৎ থেমে যেয়ে আমার চোখের দিকে তাকালেন , আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন আর যেনো এমন না হয় ।
যাওয়ার আগে ওনি আমার হাত থেকে তার রক্ত মুছে হাতে একটি চুমু দিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন । আমি তার যাওয়ার পথে অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম । হঠাৎ কেউ একজন রুমে ঢুকে..

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here