আমার হৃদমাঝারে তুমি প্রিয় পর্ব ৩

#আমার_হৃদমাঝারে_তুমি_প্রিয়
#পর্বঃ৩
#Sohana_Akther

” এতোই যখন প্রপোজ ও কিস করার শখ তাহলে আমাকে করো , দেখি কতো রঙ তোমার মনে ”

নিহানের কথা শুনে আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম , তার বন্ধুরার ও এক একটার চোখ কপালে । বলছে কি নিহান!

কিছুক্ষণ আগের কথা…..

নিহান চোখ মুখ শক্ত করে রিজভী কে এসব বন্ধ করে আমাদের যেতে দিতে বললো ।
আমি জিদ দেখিয়ে বললাম ,

” আমি তাকে প্রপোজ আর কিস করতে রাজি আছি ” ।

আমার কথা শুনে নিহানের চোখ রাগে একদম আগুনের গোলার মতো হয়ে গেল । আমি বুঝলাম না তার এমন রিএক্ট করার কারন কি তা অবশ্য কয়েক মাস পর জানতে পেরেছি । আচ্ছা এখনের কথা বলি , নিহান রেগে গিয়ে উপরের ঐ কথাটি বললো ।

তার এই কথায় একটু আশ্চর্য হলেও তাকে পাত্তা না দিয়ে আমি সেই ছেলেটি কে প্রপোজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম । এই নিহান নামের ছেলেটির কাছে আমি কিছুতেই হার মানতে পারবো না । তার কথা উপেক্ষা করে আমি সিদা ঐ ছেলেটির সামনে যেয়ে তাকে ডাক দিলাম ,

” এই যে মি: , তুমি কি আমার মন খারাপের দিনে ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসির কারণ হবে প্রিয় । কারণে-অকারণে হাজারো বারণে ভালোবাসি তোমায় প্রিয় জীবনের প্রতিটি সরণে।

তাকে ডাক দিয়ে মনে যা আসলো তা বলে প্রাপোজ করে ফেললাম ও সাথে তার ডান গালেও আলতো করে চুমু দিয়ে দিলাম । ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে ভূত দেখার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে । মনে হয় তার চোখ গুলা এখনি বের হয়ে যাবে । আশে পাশে তাকিয়ে দেখি ক্যাম্পাসের সবাই তাকিয়ে আছে এই দিকে । নাহ বাবা এখানে আর থাকা যাবে না কেটে পর নিরা জলদি । ছেলেটি যখন কিছু বলতে যাবে তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে আমি বললাম ,

” সরি ভাইয়া , আসলে এটা রেগ হিসেবে ঐ ভাইয়া আমাকে করতে বলেছিল আমি শুধু তাই করেছি কিছু মনে করবেন না প্লিজ । আই এপোলোজাইস টু ইউ ”

কথাটা বলার সময় তাদের দিকে আঙ্গুল তুলে তাদেরকে দেখিয়ে দিয়ে আমি এক ভোঁ দৌড় দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম । আমার পিছু পিছু রিয়া আর প্রিয়া ও চলে আসলো । এক দৌড়ে ক্লাসের সামনে এসে দাড়ালাম । পিছন থেকে প্রিয়া এসে বললো ,

” এই কাজটা কেনো করতি গেলি তুই , তোকে তো নিহান ভাইয়া বারণ করেছিল তাও তুই জিদ দেখিয়ে কিজটি করলি , এখন যদি নিহান ভাইয়া রেগে যেয়ে কিছু করে তখন কি করবি । আর ঐ ছেলেটিও যদি তোর পিছু নেয় তখন ” ।

” ওহহ প্রিয়া ডোন্ট থিংক সো মাচ এভাওট ইট । ইটস আ ওয়ান কাইন্ড অফ ডেয়ার । তারা আমার সাহস দেখার জন্য করতে বলেছে তা করেছি । যদিও একটু অস্বস্তি লেগেছে কিন্তু কিছু করার নেই । আমি ঐ নিহানের সামনে ছোট হতে পারবো না । এহহ কিভাবে বলে প্রপোজ করলে যেনো তাকে করি ” ।

” তাও নিরা তোর একবার ভাবি উচিত ছিল ” ।

” আচ্ছা এসব ভাবা বাদ দিয়ে দয়া করে ক্লাস করতে চলেন আপনারা ” ।

একসাথে হেসে আমরা ক্লাসে এসে বসলাম । একটানা তিনটা ক্লাস করে , ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের বট তলায় এসে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম । ঠিক তখনি ঐ ছোট ছেলেটি এসে প্রতিদিনকার মতো বেলী ফুলের মালাটি আমার হাতে দিয়ে চলে গেল । কিন্তু বেলী ফুলের উপর রক্তের ছিটা দেখতে পেলাম । রক্ত দেখার সাথে সাথে আমার বুক ধক করে ওঠলো । আজ দেখেই ছাড়বো কে এই ছেলে , এতো লুকোচুরি কেনো খেলছে যা বলার সামনে এসে বলুক ।

ছেলেটিকে ফলো করতে করতে গেইটের বাহিরে যেয়ে দেখলাম ছেলেটি একটি ব্ল্যাক কালারের গাড়ির সাথে দাড়িয়ে কার সাথে যেনো কথা বলছে । মুখ দেখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম । ছেলেটি সরার সাথে সাথেই গাড়িটি তার গ্লাস ওঠিয়ে চলে গেলো। হাত মেলে মালাটির দিকে তাকালাম রক্তগুলো এখনো তাজা । তারপরও কেনো যেনো মালাটি ফেলতে ইচ্ছে করলো না । রক্তে ভরা এই মালাটি ব্যাগে নিয়ে রাখলাম । আজ আর ক্লাস নেই তাই বাড়িতে চলে আসলাম ।

রিয়া অনেক কল দিয়েছে জানার জন্য কেনো এভাবে না বলে চলে আসলাম , তাকে একটু বুঝিয়ে কল রেখে দিলাম ভালো লাগছে না আজ কেনো যেনো । মাথা ব্যাথা করছে । বারবার রক্তরাঙা ঐ বেলী ফুলের কথা মনে পরছে ।

রাতে মায়ের ডাকে খেতে গেলাম ডাইনিং এ যেয়ে দেখি আজ সবকিছু আমার পছন্দের রান্না হয়েছে ,টেবিলে বাবা আগের থেকেই বসে আছে ,

” বাবা আজ কি কোনো স্পেশাল ডে নাকি যে মা আজ এতোগুলো আইটেম রান্না করছে তাও সব আমার পছন্দের , কাহিনী কি বলো হ্যা ” ।

” আজ কি স্পেশাল এটা তো শুধু তোর মাই জানে মামনি , আমাকে তো কিছু বলেনি ”

বাবার কথা শেষ হতে না হতে মা রান্নাঘরথেকে টেবিলের কাছে এসে তার হাত থেকে আমার প্রিয় চিকেন মাশালা টা রাখলো ,

” কি কথা হচ্ছে বাপ বেটি মিলে শুনি একটু ” ?

” এটা আমার আর আমার মামনির সিক্রেট , তোমার ওসব শুনতে হবে না মিনা ” ।

এই বলে বাবা হাসতে লাগলো সাথে আমিও যোগ দিলাম । বাবা সবসময় এভাবেই মাকে রাগিয়ে দেয় , তাদের এই খুনসুটি দেখতে আমার ভিষন ভালো লাগে ।

” হ্যা আমি এই ঘরের কে যে আমাকে এতকিছু বলতে হবে আমি তো এই ঘরের অঘোষিত কাজের মহিলা , বিনা বেতনে তোমাদের পিছনে খেটে মরি ” ।

শুরু হয়ে গেল মায়ের রোজকার ডায়লগ , আমি আর বাবা আর কিছু না বলে খাওয়া শুরুকরে দিলাম । মা ও বসলো সাথে , খেতে খেতে মা হঠাৎ বলে ওঠলো ,

” শোন নিরু তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার”।

” হ্যা মা বলো কি বলবে ” ।

” শোন তোর জন্য একটি বিয়ের সমন্ধ এসেছে তোমার ছোট খালা নিয়ে এসেছে । তার ননদের ছেলের জন্য তোকে চায় সে । ছেলে আমেরিকাতে থাকে পরিবার সহ । ঐখানেই তাদের ফ্যামিলি বিজনেস , ছেলে দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর ” ।

মায়ের কথা শুনে খাবার আমার গলায় আটকে নাকে মুখে ওঠে গেল , দ্রুত এক গ্লাস পানি নিয়ে খেলাম ।

” মা দেখো আমি সবে মাত্র ইন্টার মিডিয়েট পাস করছি , আমাকে অন্তততো অনার্স টা কমপ্লিট করতে দেও তারপর বিয়ে কথা ভাবা যাবে । আর এটাই আমার শেষ কথা মা এই বিষয়ে আমি আর কথা শুনতে চাই না ” ।

এই বলে আমি খাবার রেখে হাত ধুয়ে আমার রুমে চলে আসলাম , রাগে আমার গা কাপছে ।
মোবাইল টা হাতে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম। বাহিরে বজ্রপাত ও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে , কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি হাতে জমিয়ে মুখে ছুড়লাম । বৃষ্টির পানিতে হাত ভিজানো মজাই আলাদা । হঠাৎ মোবাইল টা নিয়ে দেখলাম আজ আর ঐ নাম্বার থেকে কল আসেনি এখনো । সেদিকে খেয়াল না দিয়ে কলেজের কথা ভাবতে লাগলাম । আজ নিহান হঠাৎ করে এতো রেগে গেল কেনো , কি এমন করেছি আমি যে এতো রাগতে হবে । আর ঐ লোকটি বা কে যে রোজ নিয়ম করে বেলী ফুলের মালা দিয়ে পাঠায় আমায় , উফফফ অতো সতো আর ভাবতে পারছি না ।

রুমে এসে শুয়ে আজকের ঘটে যাওয়া কাহিনী ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে আসলো বুঝতেই পারি নি । মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল মুখের উপর কারো উষ্ণ নিঃশ্বাসে , চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম ….

চলবে..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here