আমি শুধুই তোমার পর্ব -০৩

#আমি_শুধু_তোমার
#লেখনিতেঃ লামিয়া ইসলাম তন্নি
#তৃতীয়_পর্ব

✘কপি করা সম্পূর্ণ নি/ষিদ্ধ✘
রুমে ঢুকেই পুরো রুমে একবার চোখ ঘুরালাম। কিন্তু, আমার আ/সামীটাকে খুজে পেলাম না। আমি পা বাড়িয়ে বারান্দায় উঁকি দিলাম। সেখানেও নেই। আমি ভাবনায় ডুবে থাকা মন নিয়ে ফিরে আসছিলাম।।তখনই, ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ কানে এলো। আমার বুঝতে বাকী নেই যে, সে কোথায়? আমি বুকের উপর হাত ভাঁজ করেই ওয়াশরুমের দরজার পাশের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ বাদেই দরজার খোলার শব্দ পেয়ে হাত ছেড়ে প্রস্তুত হলাম। যেন, বের হলেই ধরতে পারি। হলোও তাই। সে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ঘুরে লাইটের সুইচে হাত দিতেই আমি ক্ষপ করে তার হাত ধরলাম। আচমকা আমাকে দেখে সে একটু চমকালোও বোধহয়। সে ভ্রু কুঁচকে শুধালো,
“তুমি এখানে?”

তার এই ছোট্ট প্রশ্নটা যেন আগুনে ঘিঁ ঢালার মতো কাজে লাগলো। আমার মেজাজ খা/রাপটা তরতর করে বেড়ে গেল। আমি তার হাত ছেড়ে টি-শার্টের কলার টেনে ধরলাম। তারপর, কলার ধরেই তাকে ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলাম। আমার এহেন আচরণে সে বেশ অবাক হলো। যার ছাঁপ তার চেহারায় স্পষ্ট। আমি দাঁতে দাঁত চেপে ধরে মিথ্যা হাসি দিলাম। বললাম,
“আমার জায়গায় কি অন্য কাউকে আশা করছিলেন নাকি, জামাই সাহেব?”

আমার প্রশ্নটা হয়তো উনি বুঝতে পারলেন না। তার কুঁচকানো ভ্রু জোড়া আরও খানেকটা কুঁচকে গেল। সে বলল,
“মানে? কী বলছো? কাকে আশা করব?”

আমি আগের মতোই দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
“কেন? আপনার প্রেমিকা। প্রীতি ফিতি আরেকটা কে যেন, তাদেরকে।”

এতক্ষণে হয়তো উনি আমার কথা ধরতে পারলেন। তার কপালের ভাঁজটাও স্বাভাবিক হলো। আমি বললাম,
“ল/জ্জা করে না, ঘরে বউ রেখে বাহিরে মেয়েদের দিকে তাকাতে?”

আমার কথায় যেন উনি আকাশ থেকে পরলেন এমন ভাব করে বললেন,
“মানেহ্? আমি কার দিকে তাকিয়েছি?”

আমি আরও রেগে গেলাম। বললাম,
“খবরদার! একদম নাটক করবেন না। আপনি ড্রইং-এ যে দুইটা মেয়ে বসেছিল, ওদের দিকে তাকাননি? সেটাও একবার নয়। ২ বার। ছিঃ ছিঃ ছিঃ! বুইড়া খাটাশ একটা। পিচ্চি, পিচ্চি মেয়েগুলোর মাথা নষ্ট করে দিলো।”

আমার একের পর এক কথা শুনে উনি হয়তো চরম অবাক হয়েছেন। তাই, বেশ কিছুক্ষণ ‘হা’ করে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। তারপর বলল,
“আমি ওদের দিকে তাকাইনি।”

“তবে, কার দিকে তাকিয়েছেন?”

আমার কঠিন প্রশ্নে উনি শীতল চোখে চাইলেন। আমার চোখে তাকিয়ে বললেন,
“তোমার দিকে। লাল জামদানীতে ঘোমটা দেওয়া অবস্থায় তোমায় খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল।”

উনার দৃষ্টিতে আমি যতটা কেঁপে উঠলাম, তার থেকেও অপ্রস্তুত হলাম মুখের উপর করা উনার প্রশংসায়। আমি দৃষ্টি ফেরালাম। পরক্ষণেই আবার তার দিকে তাকালাম। বললাম,
“সব বাদ! আপনি জানতেন না ওরা আপনাকে পছন্দ করে?”

উনি হালকা মাথা দুলালেন। বললেন,
“জানতাম।”

আমি আবার শুধালাম,
“আজকে ওরা আসবে জানতেন?”

উনি হ্যাঁ’সূচক মাথা নাড়লেন। আমি আবার রেগে গেলাম। বললাম,
“তবে, বাহিরে কী করছিলেন? ওদের সামনে কেন গেলেন?”

উনি তপ্ত শ্বাস ফেলে বললেন,
“তাইয়্যেবাহ্’কে কফি দিতে বলার জন্য গিয়েছিলাম।”

কেন যেন হুট করে মন খা/রাপ হয়ে গেল। আমি উনার কলার ছেড়ে দিয়ে বললাম,
“সেটা রুম থেকেও বলা যেত।”

কথাটা শেষ করে রুম থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই উনি আমার ডান হাত টেনে ধরলো। আমি একইভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম। বললাম,
“ছাড়ুন।”

উনি জবাব দিলেন না। বরং, একটু জোড় দিয়ে আমাকে ওনার দিকে ঘুরিয়ে নিলো। আমি নিচে তাকিয়ে রইলাম। উনি বেশ কিছুক্ষণ আমাকে নীরবে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“রাগ করছো কেন? ওরা আমাকে দেখেছে। ওরা আমাকে পছন্দ করে। আমি তো করি না। ইনফ্যাক্ট, ওরা যেদিন বাসায় আসে, আমি বাসাতেই থাকি না। আজ তো ছুটি ছিল। তাছাড়া, আমি ওদেরকে বলেও দিয়েছি, আমি ওদের দু’জনের একজনকেও পছন্দ করি না। তারপরও যদি ওরা আমার দিকে দেখে, আমাকে পছন্দ করে, আমি কী করব, বলো?”

আমি জবাব দিলাম না। সত্যিই তো তার কোনো দো/ষ নেই। কিন্তু, তারপরও আমার কেন যেন খারাপ লাগছে। মন মানছেই না। উনি এবার আমার হাত ছেড়ে দাঁড়ালেন। তারপর, দু’হাতে কান ধরে ডানদিকে হালকা মাথা হেলিয়ে করে বললেন,
“সরি!”

এতক্ষণে আমি চোখ তুলে তাকালাম। মুখ ভার করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। তারপর, হালকা করে মাথা নাড়লাম। যার অর্থ, ‘ঠিক আছে।’ উনি কান ছেড়ে দাঁড়ালেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন আমার মুখপানে। তারপর, সরু চোখে তাকিয়ে শুধালেন,
“আর ইউ জেলাস?”

মুহূর্তেই আমার মেজাজটা আবার খা/রাপ হয়ে গেল। শা/লা বলে কী? ‘আর ইউ জেলাস?’ তোর জেলাসের গু/ল্লি মা/রি। আমার জামাইর দিকে অন্য মাইয়া তাকাইলে আমি জেলাস হমু না তো কি আনন্দে নাচুম? আমি তার শার্টের কলার আবার টেনে ধরলাম। বললাম,
“নেক্সট টাইম আমার জামাই’র দিকে যে তাকাবে, তার চোখ তুলে নিমু। বাই এনি চান্স, যদি একই কাজ আমার জামাইও করে, তারও খবর আছে । সো, বি কেয়ারফুল মি.মহৎপ্রাণ! আমি যতদিন এখানে আছি, ততদিন আপনি আমার লক্ষি জামাই হয়ে থাকবেন। পরনারীর সাথে কথা বলা তো দূর, তাদের দিকে ভুলেও তাকানো আপনার জন্য নিষিদ্ধ। বুঝেছেন, আমার লক্ষি জামাই।”

কথাটা বলে উনার নাকটা টেনে দিয়ে আমি হাই তুলতে তুলতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। বেচারা হয়তো, এখনও শকে আছে। থাকুক না! আমার কী? আমার জামাই, আমারই। আমি ক্যান তার ভাগ মাইনষেরে দিমু? জীবনেও দিমু না। হুহ্!

~~~~~~~~~

দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল ২ সপ্তাহ। ২ সপ্তাহেই এই পরিবারের মানুষগুলো আমার খুব আপন হয়ে গিয়েছে। তাদের সাথে সম্পর্কটা এমন যে৷ মাঝেমধ্যে মনে হয়, তারা সবাই আমার বহুযুগের পরিচিত। কত আদর! কত মায়া! কত ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে আমাকে। বোঝার উপায়-ই নেই যে, এটা আমার শ্বশুড়বাড়ি। জানায় দাঁড়িয়ে সেসব-ই ভাবছিলাম আমি। শীতের শেষ সময়। প্রকৃতিতে বসন্তের আগমনী বার্তা। সেই সাথা মৃদু ঠান্ডা হাওয়া। পড়ন্ত বিকেল! বেশ ভালোই লাগছিল। আমি মুগ্ধ নয়নে বাহিরে তাকিয়ে অনুভব করছিলাম। দেখছিলাম, প্রকৃতির নতুন রূপ। এমন সময় দরজা খোলার শব্দে পেছনে ফিরলাম। আমার আসা/মী থুক্কু স্বামী আসিয়াছেন। আমি দু’হাত পেছনে বেঁধে এগিয়ে গেলাম বিছানার দিকে। বিছানার কোণায় বসে দুষ্টু হেসে শুধালাম,
“আমাকে রেখে কোথায় গিয়েছিলেন, জামাই সাহেব?”

উনি এগিয়ে এসে আমার পাশে বসলেন। হাত থেকে ঘড়ি খুলতে খুলতে মৃদু হাসলেন। বললেন,
“উকিলের সাথে কথা বলতে।”

উনার মুখে উকিল নামটা শুনে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। আমাকে ওভাবে তাকাতে দেখে উনি সরু চোখে তাকালেন। বললেন,
“এভাবে তাকাচ্ছো কেন? ডিভোর্স সম্পর্কে কথা বলতে গিয়েছিলাম। আগামী ১ সপ্তাহের ভিতর ডিভোর্স পেপার রেডি হয়ে যাবে।”

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন উনি। আচমকাই আমি অনুভব করলাম, আমার কেমন যেন লাগছে। একটু আগের দুষ্টু মনটা হঠাৎ করেই কেমন বিষন্ন হয়ে গেল। বুকের ভেতর চিনচিনে ব্য/থা করে উঠলো। মনে হচ্ছে, এই বুঝি বড় ধরণের কোনো অ্যা/টাক হয়ে যাবে। মুহুর্তের মাঝে আমার নিঃশ্বাসের গতিও পাল্টে গেল। গলা শুকিয়ে এলো। হাত-পা মৃদু কাঁপলো বোধহয়? তখনই উনি শুধালেন,
“কী হয়েছে? ঠিক আছো?”

আমি উনার দিকে তাকালাম। মৃদু হেসে ‘হ্যাঁ-সূচক’ মাথা নাড়লাম। বললাম,
“হ্যাঁ। কী হবে? আপনি বসুন। আমি কফি নিয়ে আসছি।”

কথা শেষ করেই বড় বড় পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। ওনাকে কিচ্ছু বলার সুযোগ দিলাম না।

~চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here