আলো আঁধার, পর্ব:১৮+১৯

#আলো_আধাঁর
লিখা- জেসিয়া জান্নাত রিম

১৮.
আট মাসের পেটটা দুহাতে ধরে খুব সাবধানে বাগানে হাটাহাটি করছে সারা। ইদানিং খুব অস্থির লাগে ওর। যাকে ধরে রাখার জন্যে এতো প্রচেষ্টা তাকে কি আদৌ বেঁধে রাখতে পারবে নিজের কাছে? এই ভাবনাটা ভিতরে ভিতরে ওকে অস্থির করে তোলে সবসময়। একটা অজানা আতঙ্ক পুরোটা সময় ঘিরে রাখে ওকে। রাজিবের দেশে যাওয়ার পর থেকেই এই আতঙ্ক আরো বেশি বেড়ে গেছে। কেননা তখন থেকেই রাজিব ওর সাথে কথা কমিয়ে দিয়েছে। ও নিজে থেকে ফোন না দিলে ও কথা বলে না। বেশিরভাগ সময় তো ফোনটাও রিসিভ করে না। প্রথম প্রথম ভেবেছিলো ওর পরিবারের কারণে। কিন্তু ইদানিং মনে হয় অন্য কোনো কারণ আছে। রাজিব যদি আর ফিরে না আসে তাহলে? সৃষ্টি কর্তা ওকে রাজিব কে পাওয়ার একটা সুযোগ দিয়েছে। যা ও কাজেও লাগিয়ে ফেলেছে। আর একটা স্টেপ শুধু তারপর সারাজীবনের জন্য রাজিব শুধুমাত্র ওর। ও জানে না রাজিবকে ও এতটা ভালোবাসে কেন? যে রাজিবের পরিবারের কারণে ও ওর ভাইকে হারিয়েছে। যাদের কারণে ওর শেষ আশ্রয় ওর বাবা ও এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। তাদের পরিবারের একজন সদস্য কে ও এত ভালোবাসে? হয়তো সেটা রাজিবের ভালো মানসিকতা ওর পারসোনালিটি এসবের কারণে। হয়তো সবকিছু হারানো অসহায় একা একটি মেয়ের পাশে এসে দাঁড়ানোর কারণে। রাজিব যদিও ওর বাবার অপরাধ একটু কমাতে এগুলো করেছে। কিন্তু ওর এই গুণ গুলোই রাজিবকে ভালোবাসতে ওকে বাধ্য করেছে। ও চায় রাজিব কে নিয়ে এখানেই সেটেল হতে। যাতে করে রাজিব ওর পরিবার থেকে দূরে সরে যায়। এতে করে রাজিব ও ওর কাছে থাকবে আর ওর ভাইকে কেড়ে নেওয়ার শাস্তিও ওর বাবা পেয়ে যাবে।
ম্যাম আপনার ঔষধ এর সময় হয়ে গেছে?
ইংরেজিতে কথা গুলো বলল ওর কেয়ার টেকার চার্লা। রাজিব যাওয়ার আগে চার্লাকে এপয়েন্ট করে গেছে ওর খেয়াল রাখার জন্য। হাত বাড়িয়ে চার্লার থেকে ঔষধ গুলো নিলো ও। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেগুলো খেয়ে নিলো। চার্লা আবারো ইংরেজিতে বলল,
ডাক্তার আপনাকে টেনশন করতে বারণ করে গেছেন। এতে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
টেনশন করবো না তো কি করবো। সকাল থেকে তোমার স্যার ফোন রিসিভ করছে না?
বোধহয় ব্যাস্ত আছে?
এত কিসের ব্যাস্ততা যে সন্তান, হবু স্ত্রী কারো জন্য একটুও সময় বের করে ফোনটা রিসিভ করতে পারছেনা।
চুপ করে রইলো চার্লা। এসেছে পর্যন্ত দেখছে তার ম্যামের এই অস্থিরতা। মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে ওর। তাইতো কখনো কখনো রাজিব কে গালমন্দ করে বসে ম্যামের সামনে। কিন্তু এর জন্য উল্টো ওকেই কথা শুনতে হয়। একেই হয়তো বলে বাঙালি নারী। ঠিক এমন সময় মেইন গেট খোলার আওয়াজ পাওয়া গেল। এবং সঙ্গে সঙ্গ একটি গাড়ি প্রবেশ করলো। লন থেকেই গাড়িটা দেখতে পেল ওরা। গাড়িটা খুব পরিচিত ওদের। গাড়িটা থামিয়ে সেখান থেকে নামলো রাজিব। মুহুর্তেই সমস্ত আশংকা টেনশন গায়েব হয়ে গেল সারার মধ্যে থেকে। খুশিতে দ্রুত এগোতে গিয়ে উপুড় হয়ে পড়ে যেতে নিলে দৌড়ে এগিয়ে ওকে ধরে ফেলল রাজিব। তারপর ধমকের সুরে বলল,
সাবধানে চলতে পারো না। এখন আর একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো।
এই কথার উত্তর না দিয়ে অভিমানী সুরে সারা বলল,
তোমার আমার কথা মনে পড়লো অবশেষে?
তুমি তো আমার বাবা কে চেনোই। বাবা যদি একবার তোমার কথা জানতে পারে তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছো?
ঠিক আছে। বুঝলাম। চলো ভেতরে যাই অনেক সময় হাঁটাহাঁটি করেছি। পা ব্যাথা করছে আমার।
চলো।
বলেই ওকে নিয়ে ভেতরের উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো রাজিব। সারা কে কিভাবে হিয়ার ব্যাপারে বলবে। সেটাই মনে মনে চিন্তা করছে ও।

এক সপ্তাহ কেটে গেছে দিয়ার সাথে রিয়াদের বিয়ের। এখন পর্যন্ত কোনো রকম সমস্যা হয়নি ওদের। রিয়াদের নির্বিঘ্নে সিলেট ট্রান্সফার হয়ে গেছে। কিছু দিনের মধ্যেই ঢাকা ছাড়বে ওরা। আপাতত ফাহিমের ফ্লাটেই আছে। ফাহিম বাড়িতে চলে গেছে। ওর বিয়ের কথাবার্তা চলছে। ফাহিম অনেক করে বলেছিল দিয়াকে নিয়ে ওদের গ্রামের বাড়িতে যেতে। কিন্তু দিয়ার মানসিক অবস্থা চিন্তা করে রিয়াদ মানা করেছে। এবং এই কারণে ফাহিম ও বেশি জোর করেনি। সব মিলিয়ে সময়টা বেশ ভালই কাটছে রিয়াদ দের। আজ হাসপাতাল থেকে ফিরতে একটু লেট হয়েছে রিয়াদের। দিয়া ওর জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করছে। রান্না বান্না কিছুই পারে না দিয়া। রিয়াদ ও টুকিটাকি জিনিস ছাড়া তেমন রান্না জানেনা। তাই প্রতিদিন বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসে রিয়াদ। এক হাতে খাবারের ব্যাগ নিয়ে অন্য হাত দিয়ে দরজার লক খুলে ভেতরে ঢুকলো রিয়াদ। ড্রয়িং রুমে চুপচাপ বসে আছে দিয়া। প্রায় সারাটা সময় এভাবেই থাকে ও। রিয়াদ খাবার গুলো টেবিলে রেখে ফ্রেস হয়ে নিল। তারপর দিয়াকে নিয়ে খেতে বসল। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে দিয়া বলল,
আজ আসতে দেরি হলো কেন?
পেশেন্ট ছিল অনেক। তুমি কি একা একা ভয় পাও?
না। আমি হোস্টেলে একাই থাকতাম। ভয় পেতে যাবো কেন?
একা একা বোর লাগে নি?
উঁহু। তবে আজকে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছে।
কি?
একা থাকলে আমার সবসময় পুরোনো কথা মনে হয়। কিন্তু আজকে আমার সেসব কিছুই মনে পড়েনি। উল্টো বারবার তোমার কথাই মনে পড়েছে। তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করেছে। এমনটা কেন হয়েছে?
কারণ তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো।
সেটা কিভাবে? মোটেও সেটা না।
কেন না?
ইমরান যখন আমার সাথে দেখা করে চলে যেতো তখন আমার ইমরানকে এরকম মনে পড়তো না। কারণ আমি তো জানতাম ও আমার সাথে দেখা করতে আসবে। সেসময় একা থাকলে আমার মাকে ভিষণ মনে পড়তো কিন্তু ইমরান কে এরকম ভাবে কখনোই মনে পড়েনি যেমনটা তোমাকে পড়েছে।
কারণ ইমরান কে তুমি আসলে ভালোবাসনি। ইমরান কে তোমার ভালো লেগেছিল।
ইমরানকে আমি ভালোবাসিনা?
নাহ। আমি এগুলো ভালো জানি তাই আমি যখন বলছি তখন তুমি ওকে ভালোবাসনা।
হুম বড়াপুও বলেছে তুমি যা বলো সেটাই ঠিক। তাই তুমি যখন বলছো তখন আমি ইমরান কে ভালোবাসি না। তোমাকে ভালোবাসি তাইতো?
উঁহু শুধু আমি বললে তো হবেনা তোমার মন থেকে ব্যাপারটা আসতে হবে। তুমি যেহেতু বললে যে আজ সারাদিন তোমার আমার কথা মনে পড়েছে। আমাকে দেখতে ইচ্ছা করেছে। কারণ তুমি আমাকে ভালোবাসো কিন্তু তুমি সেটা বুঝতে পারছ না।
তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাহলে তোমারও কি আমাকে মনে পড়ে? দেখতে ইচ্ছা করে?
করে তো। ভিষণ দেখতে ইচ্ছা করে। মনে আছে ভাবীর বিয়ের দিন ছাদে তোমাকে দেখেছিলাম। ঐদিন থেকেই আমার তোমার কথা সবসময় মনে পড়ে।
তারমানে তখন থেকেই তুমি আমাকে ভালোবাসো?
হুম।
চুপ করে গেল দিয়া। কিছু একটা চিন্তা করছে ও। ওদের খাওয়া শেষ। রিয়াদ জিনিস পত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। দিয়া হুট করে উঠে রুমে চলে গেল। রিয়াদ সমস্ত কিছু গুছিয়ে রুমে গিয়ে দেখলো দিয়া বিছানায় বসে কি যেনো চিন্তা করছে। রিয়াদ ওর পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রাখলো। তারপর বলল,
কি ভাবছো?
তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাহলে এখনো আমাকে আদর করো নি কেন?
কে বলেছে করিনি? রোজ রাতে কে তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়? বের হওয়ার আগে তোমার কপালে চুমু খায় কে?
ও আদর না তো।
তাহলে?
ইমরান আমাকে যে আদর করতো।
মুহুর্তেই চোখমুখ কালো হয়ে গেল রিয়াদের। দিয়া
কি অবলীলায় বলে দিলো ইমরান ওকে আদর করতো। ও যদি বুঝতো কথাটা শুনে কত কষ্ট হয় রিয়াদের। রিয়াদ কে চুপ থাকতে দেখে দিয়া আবার বলল,
কি হলো বলছো না কেন। ইমরান আমাকে বলেছে ভালোবাসলেই নাকি ঐ আদরটা করা যায়।
ইমরান ভুল বলেছে শুধু ভালোবাসলেই হয়না। বিয়ে ও করতে হয়।
আমাদের তো বিয়ে হয়েছে। তাহলে তুমি আমাকে ঐ আদর করছো না কেন?
আমি তোমাকে আদর করলে তোমার ভালো লাগবে?
সেটা তো বলতে পারছি না। তবে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরলে, আমার কপালে চুমু খেলে আমার খুব ভালো লাগে।
হাসি ফুটলো রিয়াদের মুখে। দুহাতে জড়িয়ে ধরলো ও দিয়াকে। দিয়া তখনও বলছে,
দেবেনা আমাকে ঐ আদর? তার মানে তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না? কি হলো বলছো না কেন?
রিয়াদ কোনো কথা না বলে দিয়ার মুখটা তুলে ধরলো। তারপর দিয়ার ঠোঁট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিলো। দিয়া তো ওর বিবাহিতা স্ত্রী। এই আদর দিতে তো ওর কোনো আপত্তি থাকার কথা না। আর আজকে যখন দিয়া নিজেই চাইছে তখন কিসের আপত্তি।

চলবে…….

#আলো_আধাঁর
লিখা- জেসিয়া জান্নাত রিম

১৯.
এই ভিন দেশে হিয়ার সময়টা কাটতেই চায় না। রাজিব বেশির ভাগ সময় কাজে ব্যস্ত থাকে। সকালে বেরিয়ে যায় আর ফেরে অনেক রাতে। এই সময়টা হিয়া কখনো দিয়ার সাথে ফোনে কথা বলে নাহলে বাড়িতে ফোন দেয় অথবা অন্য কিছুতে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে। এদিকে দিয়াকে নিয়ে বাড়িতে সবাই খুব চিন্তিত হয়ে ছিল। ওকে হোস্টেলে না পেয়ে দিদার চৌধুরী হিয়া কে ফোন করে ছিল। হিয়া বলেছে দিয়াকে ও নিজের কাছে নিয়ে এসেছে। এতে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু সত্যি টা কতদিন লুকিয়ে রাখা যাবে সেটা নিয়ে একটু টেনশনে আছে হিয়া। আর ওর শ্বশুরবাড়িতে যদি কোনো ভাবে এটা জানাজানি হয় তাহলেই বা কি হবে। একা থাকলে এসব চিন্তা ও মাথায় আসে ওর। তাই আজ রাজিব বের হওয়ার সময় ওকে বলেছে আস পাশটা একটু ঘুরে দেখতে। ড্রাইভার আছে সব কিছু ঘুরিয়ে দেখাবে। অনেকটা সময় বাসায় থেকে ওর ভালো লাগছিল না। তাই সবকিছু চিন্তা করে একটু ঘুরে আসার উদ্দেশ্যে বাইরে বেরোলো ও। বাইরে বেরিয়ে ও সারাক্ষণ রাজিবের চিন্তায় বিভোর রইলো। এখানে আসার পর থেকে রাজিব কেমন যেন উদাসীন হয়ে থাকে। সবসময় হিয়া কে এড়িয়ে চলতে চায়। হিয়া এ ব্যাপারে কিছু জানতে চাইলে কাজের অজুহাতে এড়িয়ে যায়। হিয়া নিজেকে এটা বলে বোঝায় রাজিব হয়তো কাজে অনেক ব্যস্ত কিন্তু তবুও কোথাও একটা আশংকা থেকেই যায়। এসব নানান জিনিস ভাবতে ভাবতে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো ও। হুট করেই সামনের দৃশ্যে ওর চোখ আটকে গেল। তাড়াতাড়ি ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে নেমে দাঁড়ালো হিয়া। সামনে একটা হসপিটাল। কিন্তু সেটা দেখে গাড়ি থামাতে বলেনি হিয়া। এইমাত্র ও একটা লোক কে দেখলো একজন প্রেগন্যান্ট মহিলা কে নিয়ে হসপিটালের ভিতরে ঢুকতে। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে লোকটাকে রাজিবের মতো দেখতে। লোকটা কি রাজিব? কিন্তু এটা কি করে সম্ভব। এইতো বের হওয়ার আগেই তো ফোন করেছিল ও রাজিব কে। রাজিব বলেছে এত কাজ পড়ে আছে যে এক সেকেন্ড এর জন্য ও বেরোনোর ক্ষমতা নেই ওর। তাহলে এখানে আসবে কি ভাবে? ও তো আর ডাক্তার না। এভাবে দোটানা মূলক চিন্তা ভাবনা করতে করতে হসপিটালে এসে ঢুকলো হিয়া। ওয়েটিং রুমের সামনে এসে থমকে গেল ও। নিঃসন্দেহে এটা রাজিব। হিয়া সেখান থেকে সরে এসে কল দিলো রাজিব কে। রাজিব ফোন রিসিভ করেই বললো সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং এ আছে পরে কল ব্যাক করবে। তারপর হিয়ার কোনো কথা না শুনেই ফোনটা কেটে দিলো। হিয়া সাথে সাথে ওয়েটিং রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রাজিব ফোনটা পকেটে রাখতেই ওর পাশে থাকা মহিলাটি বলল,
তুমি মিথ্যা কাকে বললে?
বাবা কে।
তোমার বাবাকে আমার কথা বলে দিলেই তো হয়। তোমার সন্তান আমার পেটে এটা শুনলে উনার কাছে আমাদের মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো অপশান ই তো থাকবে না তাইনা।
উত্তরে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রাজিব। কিন্তু মহিলাটির কথা শুনে হিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ও সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে রাজিবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
আমাকে কেন এভাবে ধোঁকা দিলে?
হুট করে হিয়াকে দেখে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো রাজিব। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কোন মতে বলল,
তুমি এখানে?
এক্সপেক্ট করোনি তাইনা? আজ আল্লাহই আমাকে এখানে টেনে এনেছে। কেন রাজিব? কি দোষ করেছিলাম আমি? মনে যদি অন্য কেউ ছিল তাহলে কেন বিয়ে করলে আমায়?
এর কোনো জবাব দিতে পারলো না রাজিব। সারা এখনো কিছুই বুঝতে পারছে না। কে এই মহিলা? রাজিবের সাথে ওর কি সম্পর্ক? মহিলা বললো রাজিব ওকে বিয়ে করেছে। সেটা কি সত্যি? নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে ও রাজিব কে বলল,
উনি কি বলছে রাজিব, তুমি ওনাকে বিয়ে করেছো?
এ কথার ও কোনো উত্তর দিলো না রাজিব। এবার হিয়া রেগে গিয়ে বলল,
অন্যায় করেছো যখন স্বীকার করো। ওকে বলো কত বড় বেইমান তুমি। নাকি ওর সামনে আমাকে অস্বীকার করবে?
দেখো তোমরা দুজনেই প্লিজ শান্ত হয়। আমরা বসে কথা বলি….
এমন সময় নার্স এসে সারা কে ভেতরে যেতে বলল। রাজিব সারা কে আগে চেক আপের জন্য পাঠিয়ে হিয়া কে বলল,
দেখো হিয়া আমি তোমাকে সবটা বলবো কিন্তু এখন না। সারাকে চেকআপ শেষে বাসায় পৌছে দিয়েই আমি তোমাকে সব কিছু বলবো। প্লিজ হিয়া আমাকে এক্সপ্লেইন করার একটা সুযোগ অন্তত দাও।
বাচ্চাটা তোমার?
হিয়া বললাম তো……..
হ্যাঁ কিংবা না তে উত্তর দাও। বাচ্চাটা কি তোমার?
হুম।
আর একটা সেকেন্ড এর জন্য ও দাঁড়ালো না হিয়া। দৌড়ে বেড়িয়ে গেল সেখান থেকে। রাজিব হিয়ার পিছনে যেতে গেলে নার্সের ডাকে আর পারলো না। এখন সারা বোধহয় বেশি ইমপটেন্ট। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নার্সের পিছু পিছু এগিয়ে গেল ও। ভেতরে ডাক্তার সারার রিপোর্ট নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল। রাজিব কে দেখে তাকে বসতে বললেন তিনি। তারপর ইংরেজি ভাষার বললেন,
ওনার সমস্ত রিপোর্ট ভালো। তবে টেনশন বোধহয় বেশি করেন। যেহেতু এটা শেষ মাস সেহেতু আরেকটু সাবধান থাকবেন। আমরা নরমাল ডেলিভারি আশা করছি।
থ্যাংক ইউ।
ঠিক আছে। কোনো রকম সমস্যা হলে নিয়ে আসবেন।
সমস্ত ফর্মালিটিজ শেষ করে সারাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো রাজিব। মনটা ভিষণ অস্থির ওর। গাড়িতে বসে কেউ কোনো কথাই বললো না। সারা কে বাসার সামনে নামিয়ে দিতেই সারা বলল,
এখনই যেও না। আমার কথার জবাব দিয়ে তারপর যেও।
কিছুক্ষণ চিন্তা করে রাজিব ও গাড়ি থেকে নামলো। সারাকে নিয়ে ভিতরে না গিয়ে লনে এসে বসলো। তারপর বলল,
মনে আছে বাবা আমাকে আর্জেন্ট ফোন করে দেশে যেতে বলেছিল?
হুম।
আমি ভেবেছিলাম বিজনেসের কোনো ব্যাপার। কিন্তু দেশে যাওয়ার পর সেরকম কিছুই ছিল না। বাড়িতে গিয়ে দেখি আত্মীয় স্বজন সবাই এসেছে। রাতে বাবা আমার রুমে এসে বলল আমার নাকি বিয়ে। তুমি তো বাবাকে চিনোই। তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস আমার ছিল না। প্রথমে ভাবলাম মেয়েটির সাথে কথা বলে তাকে সব কিছু জানিয়ে দেই। কিন্তু এতে তোমার ব্যাপারে সবার জেনে ফেলার সম্ভাবনা ছিল। আমি চলেও আসতে পারছিলাম না কারণ আমি আসার পর পর ই বাবা আমার পার্সপোর্ট নিয়ে নিয়েছিল। পরে ভাবলাম বিয়ের ঝামেলা মিটে গেলে সবার ফোকাস যখন মেয়েটির দিকে থাকবে আমি কোনো একটা বাহানা বানিয়ে এখানে চলে আসবো। কিন্তু যেদিন আমি হিয়া কে দেখলাম বিশ্বাস করো এমন অনুভূতি আমার আর কাউকে দেখে কোনোদিন হয়নি। যত ওকে চিনতে লাগলাম ততই ওর মাঝে হারাতে লাগলাম। এখন কি মনে হয় জানো? ওকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব। কিন্তু যখন আমাদের বাচ্চার কথা ভাবি… আমি নিজেই বুঝতে পারছি না আমি কি‌ করবো।
আমরা দুজনে কিন্তু অনেক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
দেখো সারা আমি আমার সন্তানকে কখনোই অস্বীকার করবো না।
আর আমি?
………………
কি হলো উত্তর নেই তাইতো? আচ্ছা রাজিব ভালোবাসা টা তো আমাদের কাছে ইমপটেন্ট ছিল না তাইনা। সবকিছু জেনে বুঝে তারপরই তো আমরা একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বাচ্চাটা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন তো আমাদের হাতে আর কিছু নেই।
……………………
তোমার কিছুই বলতে হবে না। আমি এখন একটু একা থাকবো। নিজেকে একটু শান্ত করতে চাই। তুমি সামনে থাকলে সেটা সম্ভব না। তুমি প্লিজ এখন এখান থেকে যাও।
চুপচাপ উঠে দাঁড়ালো রাজীব। এ কেমন সিচ্যুয়েশনে ফেঁসে গেছে ও। এখন ওকে হিয়ার কাছে যেতে হবে। হিয়া কে ও সবটা বলবে তারপর হিয়া যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই করবে ও।

কয়েক বার কলিং বেল চেপেও ওপাশ থেকে হিয়ার কোনো সারা শব্দ পেলনা রাজিব। টেনশন এ ওর পুরো শরীর ঘেমে গেছে। স্পেয়ার কি দিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো রাজিব। পুরো ঘর অন্ধকার। ও হিয়া কে কয়েক বার ডাকলো। হিয়া তখন ও কোনো উত্তর দিলো না। ড্রাইভার বলেছিল হিয়া সরাসরি বাসায় এসেছে এবং এখনো বের হয়নি। তাহলে হিয়া এখানেই আছে। ও দ্রুত বেড রুমের দিকে গেল। বেড রুমের লাইট ও অফ। ও সুইচ খুঁজে জলদি লাইট অন করলো। ওর ভিষণ ভয় করছে হিয়া উল্টো পাল্টা কিছু করে বসেনি তো।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here