আলো আঁধার, পর্ব:১৬+১৭

#আলো_আধাঁর
লিখা- জেসিয়া জান্নাত রিম

১৬.
এই শুনছো রিয়াদ বিয়ে করে ফেলেছে।
সবে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো রাজিব। হিয়া কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলো। হঠাৎ ই হিয়া ফোন কানে রেখেই রাজিব কে ওপরের কথাটা বললো। রাজিব তখন চুল আঁচড়াচ্ছিলো। হিয়ার কথায় চিরুনি টা হাত থেকে পরে গেল ওর। এক প্রকার লাফিয়ে হিয়ার পাশে এসে বসে ফোনটা স্পিকারে দিলো ও। ইমি ফোন দিয়েছে। রাজিব বলল,
প্রথম থেকে বলতো কি হয়েছে।
ছোট ভাইয়া আজ সারাদিন বাসায় ছিল না। কাল তো ভাইয়ার তূর্ণা আপুর সাথে এনগেজমেন্ট বাবা তাই অফিস থেকে তারাতাড়ি ফিরেছিল। তার প্রায় আধঘণ্টা পর ছোট ভাইয়া ফিরেছে। ফিরেই বাবাকে বললো সে আজকে বিয়ে করে নিয়েছে কাল কোনো এনগেজমেন্ট হবেনা।
কাকে বিয়ে করেছে? পরিচিত কেউ?
আরে বউ কে গাড়িতে বসিয়ে রেখে এসেছে। ভেতরে আনেনি। বাবা ও এখোনো কিছু বলেনি। বাবা ড্রয়িং রুমে চুপচাপ বসে আছে। রিয়াদ ভাইয়া বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মা বুয়া কে বাইরে পাঠিয়ে ছিল এটা দেখার জন্য যে ভাইয়া সত্যি সত্যি বিয়ে করেছে কিনা। বুয়া দেখে এসেছে গাড়িতে সত্যি সত্যি একটা মেয়ে বসে আছে।
রিয়াদ কে ফোন টা দে তো।
ভাইয়া আমার ভয় করছে ওখানে যেতে।
কিছু হবে না তুই শুধু ওকে ফোন টা দিয়ে চলে আসবি।
ঠিক আছে।
ইমি রিয়াদ কে ফোন দিতেই রিয়াদ বলল,
হ্যা ভাইয়া বল।
তুই বিয়ে করেছিস?
হ্যা।
মেয়েটা কি দিয়া?
কথাটা শুনেই বিষ্ফোরিত চোখে তাকালো হিয়া। কোন দিয়া? প্রশ্নটা করতে যেতেই এক হাত উঠিয়ে ওকে থামিয়ে দিল রাজিব। তারপর আগের প্রশ্নটা আবার ও করে বলল,
কিরে কথা বলছিস না কেন?
হ্যা ওকেই।
জোর করে বিয়ে করেছিস?
না। ও নিজেই বলেছে।
বাবা কিছু বলেছে তোকে?
না।
ভালো এবার এক কাজ কর ওকে নিয়ে এখনি অন্য কোথাও চলে যা বাবা যেন কোনো ভাবেই টের না পায় তুই কাকে বিয়ে করেছিস।
কিন্তু…
কোনো কিন্তু না। যদি দিয়ার সাথে সম্পর্ক টা টিকিয়ে রাখতে চাস তাহলে আমি যেটা বলছি সেটাই কর। তুই যে দিয়াকে বিয়ে করেছিস সেটা ওর ফ্যামিলি জানে?
না। এখনো কাউকে জানানো হয়নি।
ঠিক আছে। শোন পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগে ওকে নিয়ে তুই বেরিয়ে যা। সবার আগে নিজের রুমে গিয়ে তোর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নে। তারপর বাবা কিছু বলার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা। যাওয়ার সময় বাবা যদি বাই এনি চান্স জানতে চায় কই যাচ্ছিস বলবি আমি তোকে ফোনে বকাবকি করেছি। এখন তুই দিয়াকে ওর বাসায় রেখে আসতে যাবি। দেন এসে কথা বলবি। যাওয়ার সময় খেয়াল রাখবি কোনো গাড়ি তোকে ফলো করছে কিনা। তারপর আমাকে ফোন দিস।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো রাজিব। হিয়া এখনো আগের মতই বসে আছে। রাজিব কে ফোন রাখতে দেখে সাথে সাথে প্রশ্ন করলো,
কোন দিয়া?
তোমার বোন।
খুব শান্ত গলায় উত্তর দিলো রাজিব। রাজিবের উত্তর হিয়া কে আরো বিচলিত করে দিলো। ও আবারও প্রশ্ন করল,
কি বলছো এসব? কি করে সম্ভব?
সম্ভব না হওয়ায় কি আছে। দুজন এ্যাডাল্ট ছেলে মেয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিয়ে করবে করে নিয়েছে।
তুমি এভাবে কেন কথা বলছো? দিয়া বিয়ে করেছে এই ঘটনাটা এতো সহজে কেন নিচ্ছ?
তাহলে কি করবো বলো। তুমি নিজেই দিয়ার দায়িত্ব রিয়াদ কে দিয়ে এসেছো ও সেটা পারমানেন্ট করে নিয়েছে ভালো না।
তুমি হেয়ালি ভরা কথা বাদ দাও। রিয়াদের কালকে তূর্ণার সাথে এনগেজমেন্ট ছিল। এর মাঝে হুট করে দিয়া কিভাবে এলো?
হুট করে আসেনি। আমাদের বিয়ের দিনই ওকে দেখে ভালো লাগে রিয়াদের। আর এই কদিনে দিয়া আর ওর মধ্যে একটা সম্পর্ক বিল্ড আপ হয়। বাবা যখন রিয়াদ কে না জানিয়ে রিয়াদের বিয়ে ঠিক করে তখন রিয়াদ ও কাউকে না জানিয়ে ওকে বিয়ে করে ফেলেছে। আর দিয়ার সম্মতিতেই বিয়েটা হয়েছে।
সবাইকে জানালে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো? বাবা কি আমার বোন হিসেবে ওকে মেনে নিতো না?
তুমি আমার বাবাকে চিনো না হিয়া। বাবার সাথে ভালো থাকলে বাবা খুব ভালো। কিন্তু বাবার বিরুদ্ধে কিছু করলে সেটার পরিণতি হয় ভয়াবহ। ছেলে মেয়ে হিসেবে আমরা পার পেয়ে তাই। কিন্তু…..
কথাটা বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রাজিব। ও নিজের চোখে দেখেছে রাফিন ভাইয়ের পরিণতি। দিয়ার সাথে এমন কিছুই ও হতে দেবে না। এই ছোট্ট জীবনে মেয়েটা যথেষ্ট কষ্ট সহ্য করেছে। এবার যখন একটু সুখের মুখ দেখার সময় এসেছে তখনই সব শেষ হতে দেওয়া যাবে না।

রাজিবের সাথে কথা বলার পর রিয়াদ সোজা নিজের রুমে গিয়ে সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছে। এরপর রুমের বারান্দা দিয়ে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে এসেছে। এবং কেউ টের পাওয়ার আগেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। এতক্ষণ কেউ ফলো করছে কিনা ভেবে বিভিন্ন রাস্তা ঘুরেছে। এখন আপাতত একটা জ্যামে আটকা পড়ে আছে। এই সুযোগে ও একবার দিয়াকে দেখে নিলো। পাশের সিটে বসে নিশ্চিন্ত মনে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে দিয়া। ওর কোনো টেনশনই নেই। এটা দেখে এর মাঝে ও একটু হেসে ফেললো রিয়াদ। রিয়াদের হাসি শুনে ওর দিকে তাকিয়ে দিয়া বলল,
কি হলো হাসছেন যে?
বিয়ে করেছি তো তাই কেমন সুখ সুখ লাগছে।
ও।
বলেই আবার বাইরের দিকে মনোযোগ দিলো দিয়া। রিয়াদ ও আর কথা বাড়ালো না। এখন দিয়াকে নিয়ে কোথায় যাবে সেটাই সমস্যা। ফাহিম কে একটা ফোন করবে কি? ওর এপার্টমেন্টে তো ও একাই থাকে। ভেবেই ও ফাহিম কে ফোন দিলো। ফোন রিসিভ করেই ফাহিম জানতে চাইলো,
কিরে কি হলো বাসায়?
ওসব ছাড়। আজ তোর বাসায় থাকবো আমি আর দিয়া।
আচ্ছা চলে আয়। সমস্যা নেই। এমনিতেও আমি ধরে নিয়েছিলাম আজ তুই নিজের ঘরে ঘুমাতে পারবি না। এজন্য বুয়াকে দিয়ে আজ সকালে গেস্ট রুম টা পরিস্কার করিয়ে রেখেছিলাম।
ভালো করেছিস। আমি এসে কথা বলছি।
আচ্ছা।
ফোন রেখে রিয়াদ দিয়ার দিকে তাকালো। ও এখোনো বাইরে তাকিয়ে আছে। হোস্টেল থেকে ফাহিমই দিয়াকে কাজি অফিসে নিয়ে এসেছিল। দিয়া এক কাপড়েই বেরিয়ে এসেছে ওখান থেকে। বোধহয় ও ভেবেছে আবার ও হোস্টেলেই ফিরতে হবে ওকে। ব্যাপারটা মাথায় আসতেই দিয়াকে ডাকল রিয়াদ। ও ফিরে তাকাতেই রিয়াদ বলল,
তুমি কি হোস্টেলে ফিরতে চাও?
কেন? আমার তো আপনার সাথে বিয়ে হয়ে গেছে এখন তো আপনার সাথে ই আমার থাকতে হবে তাইনা?
হুম। কিন্তু তুমি তো কোনো জিনিস পত্র আনোনি।
ওগুলো সব ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি। এখন আর ওসবের দরকার নেই। এখন আপনি যেখানে যেভাবে রাখবেন আমি সেভাবেই থাকবো।
সত্যি?
হুম।
ঠিক আছে। আর তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেন? বিয়ে হলে কি কেউ আপনি করে বলে?
বলেনা?
না।
তাহলে কি বলবো?
তুমি করে নাম ধরে ডাকবে।
ঠিক আছে। তোমার নাম কি?
হোয়াট? তুমি আমার নাম জানো না?
আপু বলেছিল। আমার এখন মনে পড়ছে না।
কপালে হাত দিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে রিয়াদ। দিয়া বলে কি? যাকে বিয়ে করেছে তার নাম জানেনা এটাও কি সম্ভব। রিয়াদ কে ওভাবে দেখে দিয়া বললো,
আসলে কখনো খেয়াল করে শুনিনি তো। তুমি এবার বলে দাও আর ভুলবো না।
রিয়াদ। মনে থাকবে?
হুম রিয়াদ।
হাসি ফুটলো রিয়াদের মুখে। জ্যাম ছাড়তে শুরু করে দিয়েছে। আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল রিয়াদ। প্রথমে শপিং মলে গিয়ে দিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস পত্র কিনলো ও। তারপর দিয়াকে নিয়ে ফাহিমের বাসায় আসলো ও। গাড়ি থেকে নেমেই ওর শার্টের এক কোণ ধরে ফেলল দিয়া। রিয়াদের মনে পড়লো ওর ভাবীর বলা কথাটা। এর মানে দিয়া ওর মধ্যে নির্ভরতা খুঁজে পেয়েছে। হাসি মুখে ফাহিমের এপার্টমেন্টে গিয়ে কলিং বেল চাপলো। প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে দিল ফাহিম। মনে হচ্ছে ওদের জন্যই দরজার কাছে অপেক্ষা করছিল ফাহিম। রিয়াদ দিয়া কে নিয়ে ভেতরে এসে বসলো। খুব ক্লান্ত লাগছে ওর। শাওয়ার নিতে পারলে ভালো হতো। তবে রাজিবকে একটা ফোন করা বেশি জরুরি। ফাহিম কিচেনে ওদের জন্য কফি বানাতে গেছে। এখনই একটা ফোন দেয়া যাক। ভেবেই ফোনটা বের করে রাজিবের নাম্বারে ডায়াল করলো ও। সাথে সাথেই ফোন রিসিভ করে রাজিব বলল,
কিরে ভালো ভাবে বেরোতে পেরেছিস?
হুম আমার রুমের বারান্দা দিয়ে বেরিয়ে এসেছি।
ভালো করেছিস। কোথায় এখন?
ফাহিমের বাসায়।
ঠিক আছে আজ রাতটা ওখানেই থাক।
তা ঠিক আছে। তুই এখন বল সেসময় ওভাবে বেরিয়ে আসতে বললি কেন?
তোর রাফিন ভাইয়ের কথা মনে আছে তোর?
কোন রাফিন ভাই?
বড় আপার সাথে যার সম্পর্ক ছিল।
ও হ্যা মনে পড়েছে। কিন্তু এখানে ওনার কথা আসছে কেন?
আমি আনছি তাই আসছে। তোরা অনেক কিছুই জানিস না। এখন যা বলবো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবি। মাঝে কথা বলবি না।
আচ্ছা বলো।

চলবে…….

#আলো_আধাঁর
লেখা- জেসিয়া জান্নাত রিম

১৭.
রাফিন ভাইয়ের সাথে বড় আপার সম্পর্ক অনেক দিনের। কিন্তু একই ভার্সিটিতে পড়া এবং ক্লাসমেট ছিল বলে তাদের সম্পর্কের শুরুতে তারা কিন্তু বন্ধু ছিল। এইজন্য বাবা আগে থেকে বুঝতে পারেনি যে ওদের মধ্যে অন্য কোনো সম্পর্ক আছে। ব্যাপারটা জানাজানি হলো যখন আপার বিয়ে ঠিক করা হলো। প্রথমে আপা তোর মতোই বাবাকে বিষয় টা বোঝাতে চেষ্টা করলো। বাবা যখন কোনো ভাবেই শুনলো না তখন আপা সিদ্ধান্ত নিলো পালিয়ে যাবে। এবং পালিয়ে গেল ও। কিন্তু একদিনের মধ্যেই আপা আবার ফিরে ও এলো এবং এক মাসের মধ্যে আপার বিয়ে দুলাভাইয়ের সাথে হয়েও গেল। আর এর মাঝে আপা রাফিন ভাইয়ের নাম পর্যন্ত নিলো না। ব্যাপারটা তোর কাছে তখন অবাক লাগেনি?
প্রথমে লেগেছিল পরে তো আমরা জানতেই পারলাম বাবা রাফিন ভাই কে জিম্মি করে আপাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিল।
হুম সেটা ঠিক তবে এটা পুরো সত্যিটা না। এখানেও অনেক ঘটনা আছে যা আমি আপা আর বাবা বাদে কেউ জানেনা।
সেটা কি?
সেদিন আপা রাফিন ভাইকে বিয়ে করেছিলো আমি আর বাবা পৌঁছানোর আগেই। বিয়েটা হয়ে ছিল কোর্টে গিয়ে। আপারা ভেবেছিল কোর্টে গিয়ে একবার বিয়ে করে ফেললে সমস্ত সমস্যা শেষ। কিন্তু কোর্ট ম্যারেজ টা তো বৈধ না। না আইনি ভাবে আর না শরিয়ত মোতাবেক। সেজন্য আপাকে আনতে সহজ হয়েছিল। আর রাফিন ভাইকে বাবা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছিল। আর সেখান থেকে রাফিন ভাইকে ছাড়ানোর জন্যই আপা বিয়েতে রাজি হয়েছিল। আপা জানে রাফিন ভাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাবা সেটা করে নি। শুধু শুধু রিমান্ডে পাঠিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয় রাফিন ভাইয়ের ওপর। শেষে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। একবছর আগে খবর পেয়েছি পাগলা গারদেই রাফিন ভাই মারা গেছেন।
এটুকু বলে থামলো রাজিব। রিয়াদ ও কিছু বললো না। বাবার এই অজানা কথাগুলো যথেষ্ট অবাক করেছে ওকে। আজিজ সাহেব একটা শিক্ষা দেওয়ার জন্যই সেইদিন গুলোতে সবখানেই সাথে রেখেছিলেন রাজিব কে। তাই এসমস্ত ঘটনা ওর জানা। কিন্তু বাবার মতো এতটা অমানবিক হতে পারে নি ও। তাই বাবার অগোচরে রাফিনের পরিবার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে ছিল ও। তিন সদস্যের একটি ছোট সুন্দর পরিবার ছিল রাফিনের। রাফিনের মা ছিল না। ওর মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবাও বেশি দিন বাঁচেন নি। তাই ওর বোন সারাকে হেল্প করতে নিজের সাথে বিদেশে নিয়ে গিয়েছিল রাজিব। তখন থেকেই ওদের মাঝে বন্ধুত্ব। এসব স্মৃতি মনে পড়তেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রাজিব। তারপর রিয়াদ কে বললো,
আমি যতদূর জানি সাদমান আংকেল কে বাবা কথা দিয়ে ফেলেছেন তূর্ণা কেই তোর বউ করে আনবেন। আর বাবা নিজের কথা রাখার জন্য যা কিছু করা দরকার সবকিছু করবেন। দিয়াকে যেহেতু তুই বিয়ে করেছিস ও এখন তোর দায়িত্ব। ওর কোনো ক্ষতি হলে এর সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র তোর। এই জন্যই আমি তোকে সতর্ক করে ছিলাম। এখন কোনো ভাবেই দিয়াকে বাবার সামনে আনা যাবে না। সবথেকে ভালো হয় ট্রান্সফার নিয়ে অন্যকোনো শহরে চলে যা। মনে রাখিস তোর একচুল পরিমাণ ক্ষতিও হবে না কিন্তু দিয়ার অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারে। যতদিন এর কোনো পারমানেন্ট স্যলুশন না বের করতে পারি ততদিন তোদের পালিয়ে থাকতে হবে।
কিন্তু ভাইয়া দিয়ার পরিবারের লোকজন জানতে পারলে….……
ওনাদের থেকেও লুকাতে হবে।
কি করে? দিয়া মে হোস্টেলে নাই এটা তো জেনেই যাবে।
হুম। আচ্ছা দেখি কি করা যায়। তুই ওদিকটা সামলা। আমি দিয়ার বাড়ির ব্যাপারটা দেখছি।
ওকে। আর ভাইয়া ভাবী কি আসে পাশে আছে?
হুম সামনেই বসা। কথা বলবি?
বলেই ফোনটা হিয়ার হাতে ধরিয়ে দিলো রাজিব। ওপাশ থেকে রিয়াদ বলল,
সরি ভাবী। আসলে সিচুয়েশনটাই এমন ছিল যে হুট…..
যা করার তা তো করেই ফেলেছো এখন ক্ষমা চাচ্ছো কেন?
ভাবী প্লিজ রাগ করো না। তোমার বোনকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিল। তাছাড়া ওকে আমি একটা সুন্দর জীবন দিতে চাই।
দেখো রিয়াদ আমার এখন কিভাবে রিয়্যাক্ট করা উচিত আমি নিজেও জানি না। তবে এটুকু বলবো এতে যদি তোমরা দুজনেই খুশি থাকো তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার দিয়া অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। এবার আর কষ্ট নিতে পারবেনা। আজ থেকে ওর সমস্ত দায়িত্ব যখন তোমার আমি আশা করি তখন সেটা ঠিক ভাবেই তুমি পালন করবে।
অবশ্যই ভাবী।
একটু দিয়াকে দেবে?
দিচ্ছি।
বলে দিয়ার দিকে তাকালো রিয়াদ। কফির মগ হাতে চুপচাপ বসে আছে ও। কি ঘটছে বা ঘটবে এটা নিয়ে ওর কোনো হেলদোল নেই। রিয়াদ ওকে ফোনটা দিয়ে বললো,
ভাবী কথা বলবে।
নির্লিপ্ত ভাবে ফোনটা হাতে নিল দিয়া। রিয়াদ এবার ফাহিমের দিকে তাকালো। ফাহিম এতক্ষণ চুপচাপ বসে বন্ধুর সিচ্যুয়েশন বোঝার চেষ্টা করছিলো। রিয়াদ কে ওর দিকে তাকাতে দেখে বলল,
কিছুই তো বললি না। বাড়িতে কি হলো? ভাইয়া ইবা কি বলল?
একে একে সমস্ত কিছু খুলে বলল রিয়াদ ফাহিম কে। সব শুনে ফাহিম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
তামিম সাহেবের নতুন বিয়ে হয়েছে জানিস?
বিরক্তিতে ভ্রু জোড়া কুচকে গেল রিয়াদের। এত সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে, আর ফাহিম কি না পরে আছে তামিম সাহেবের বিয়ে নিয়ে। বেশ ঝাঁঝালো গলায় রিয়াদ বলল,
শালা আমি এইখানে আমার বিয়ে নিয়ে চিন্তিত আর তুই আছিস তামিম সাহেবের বিয়ে নিয়ে?
ভাবীর সামনে নো গালি। আর চিন্তা কিসের? তোর ট্রান্সফারের দায়িত্ব আমার। আজকে তোদের বিয়ের রাত। কোথায় দুজনে একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করবি তা না টেনশনে টেনশন বাড়াচ্ছে। শোন আপাতত সব বাদ দে। ফুড পান্ডা থেকে খাবার অর্ডার করে দিয়েছি। তোরা খেয়ে নিস। আমি আজ বাইরে থাকবো কিছু লাগলে ফোন করিস।
বাইরে থাকবি মানে? কোথায়?
তোর না জানলেও চলবে। আপাতত ফোকাসটা ভাবীর দিকে দে।
আরো নানান জিনিস বুঝিয়ে বেড়িয়ে গেল ফাহিম। ওকে বিদায় দিয়ে দিয়ার পাশে এসে বসলো রিয়াদ। এক দৃষ্টিতে দিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ও। আর মনে মনে ভাবলো, সময়টা যদি এভাবেই থেমে থাকত তাহলে মন্দ হতো না।

আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক আছেন আজিজ সাহেব। যেন রিয়াদের হঠাৎ বিয়ে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বাড়ির সবাইকে রেডি হতে বলে তিনি নিজে রেডি হতে রুমে এলেন। রিয়াদের বিষয় টা নিয়ে তিনি অতটা ভাবছেন না। এখনো তার কাছে অনেক সময় আছে সমস্যাটা সমাধান করার। আর আজ রিয়াদের উপস্থিতি এতটাও জরুরি না। কিছু একটা বলে বাহানা বানিয়ে দেওয়া যাবে। আপাতত বন্ধুর কন্যাকে আংটি পরানোর ঝামেলা টা শেষ করা যাক।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here