আলো আঁধার, পর্ব:১৪+১৫

#আলো_আধাঁর
লিখা- জেসিয়া জান্নাত রিম

১৪.
হিয়া দের ফ্লাইটের এখনো সময় আছে। ওরা একটু আগেই পৌঁছে গেছে। ভেবেছিল রাস্তায় জ্যাম থাকবে। তাই আগে আগে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু আজ রাস্তায় জ্যাম পরলেও তারাতাড়ি ছেড়ে গেছে। হিয়া ওয়েটিং লাউঞ্জে একা একা বসে আছে। রাজিব ওর জন্য কফি আনতে গিয়েছে। রিয়াদ ওদের সাথেই এসেছিল কিন্তু ওদের নামিয়ে দিয়ে কোথায় যেন চলে গেছে। রাজিব বলেছে ওদের দেশে ফিরতে অনেক সময় লাগবে। কয়েক মাসের মতো। হিয়া চেয়েছিল দিয়ার সাথে একটু দেখা করতে। কিন্তু দিয়া কিছুতেই ও বাড়ি আসতে রাজি হলোনা। এখান থেকে ওর হোস্টেলে যাওয়াও সম্ভব ছিলনা। বাড়ি থেকে দিয়ার হোস্টেলে যেতে মাঝে এয়ারপোর্ট। তাই ডাবল রাস্তা ক্রস করার কোনো মানেই হয়না। যদি সময় মতো পৌঁছতে না পারে। কি অদ্ভুত?
যে দিয়ার জন্য একসময় ভার্সিটিতে ঠিকমতো যেতোনা, দিয়ার পছন্দ না বলে অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোথাও বেড়াতে যেত না সেই আজ দিয়ার সাথে দেখা না করে এতদিনের জন্য বাইরে চলে যাচ্ছে। বিষয়টা মাথায় আসতেই চমকে উঠলো হিয়া। বিয়ের পর মানুষ বদলায়। তাই বলে এতোটা? কি এমন শক্তি আছে এই সম্পর্কে? পূর্ব পরিচিত না হওয়া সত্ত্বেও যে সম্পর্ক দুজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষদের সারাজীবনের জন্য এক সুতোয় গেঁথে ফেলতে পারে, সে সম্পর্ক এত বছরের পরিচিত সম্পর্ক কে এক নিমিষেই পর বানিয়ে দেয়, তখন মাথায় শুধু সদ্য পরিচিত হওয়া মানুষটাই থাকে। এসব কি সেই বিয়ে নামক সম্পর্কের শক্তি নয়? নাহলে কয়েক দিনের পরিচয়ে হিয়া রাজিবের জন্য এতটা উৎসুক যে সন্তানের মতো আদরের বোনের থেকে এই কিছুদিনের পরিচিত মানুষটাকেই বেশি আপন মনে হয়। বসে বসে এমন নানান চিন্তাই মাথায় আসছিল হিয়ার। এমন সময় কফি নিয়ে রাজিব ওর পাশে এসে বসলো। গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকায় হিয়া কিছুই খেয়াল করলো না। রাজিব ওকে হালকা ধাক্কা দিতেই ও কিছুটা চমকে উঠলো। তারপর রাজিবের দিকে তাকিয়ে বলল,
কখন আসলাম?
এই মাত্র। তোমার কি হয়েছিল? চোখ খুলে ঘুমাচ্ছ?
না চিন্তা করছিলাম। কিছুদিন আগে আমরা একে অপরেকে চিনতাম পর্যন্ত না। অথচ আজ একে অপরকে ছাড়া থাকার কথা কল্পনাও করতে পারিনা।
আমাদের জীবনটা এমনই কখন কি ঘটবে বা কে কার জন্য কতটা ইমপটেন্ট হয়ে উঠবে এটা আমরা আগে থেকে কেউই প্রেডিক্ট করতে পারি না।
হুম।
আচ্ছা এসব বাদ দাও। নাও কফি খাও।
এতটা সময় বসে না থেকে দিয়ার সাথে দেখা করে আসতাম। কতদিন দেখা হবেনা।
এখন আর সময় বেশি নেই আধঘন্টা পর ইমিগ্রেশন শুরু হবে।
ওহ।
মন খারাপ করো না পৌঁছে ভিডিও কল দিও।
ভিডিও কল আর সামনাসামনি আকাশ পাতাল পার্থক্য।‌‌
ঠিক বলেছো ভাবী। এইজন্যই তো ম্যাডামকে নিয়ে এলাম।
হুট করেই রিয়াদের কন্ঠে ফিরে তাকালো হিয়া রাজিব দুজনেই। রিয়াদের সাথে দিয়াকে দেখে হিয়ার গোমড়া মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ও এগিয়ে গিয়ে দিয়াকে জড়িয়ে ধরল। অন্যদিকে রাজিব অবাক হলো। রিয়াদ এখান থেকে দিয়াকে আনতে গিয়েছিল? হুট করেই ওর পূর্ব কিছু ঘটনা মনে পড়ায় কিছু একটা সন্দেহ হলো ওর। দিয়া আর হিয়াকে ওদের মতো থাকতে দিয়ে রিয়াদ কে টেনে একটা কোণায় নিয়ে এলো ও।

ভাইয়ের আচরণ ধরতে না পেরে রিয়াদ বলল,
কি হলো ভাইয়া এখানে আনলি কেন?
প্রশ্নটা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে রাজিব সরাসরি বলল,
তোর আর দিয়ার মধ্যে কি চলছে?
মানে?
একদম ঢঙ করবি না। মা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দে।
কিছুনা ভাইয়া। দিয়া শুধু আমার পেশেন্ট। ভাবীর বোন হিসেবে একটু স্পেশাল ট্রিট পাচ্ছে।
শোন রিয়াদ তুই ব্রেন নিয়ে খেলিস ঠিক আছে কিন্তু আমার মধ্যেও কমনসেন্স আছে। তোর কয়েকদিনের বিহেভিয়ার পর্যবেক্ষণ করেই আমি বলছি।
ভাইয়ের কথায় চুপ করে গেল রিয়াদ। ও দিয়াকে কনভিন্স না করে কাউকে কিছু বলতে চায়না। কিন্তু রাজিব অনেকটাই বুঝে ফেলেছে। রাজিব আগের কথার সুর ধরে বলল,
দেখ রিয়াদ এসব তুই ভালো বুঝিস। কিন্তু অনুভূতি অনেক সময় বোধশক্তি কে হারিয়ে দেয়। দিয়া অলরেডি দুটো বড় ধাক্কা খেয়েছে। এরকম অবস্থায় ও তৃতীয় কোনো আঘাত নিতে পারবে না।
আমি ওকে কোনো আঘাত পেতে দেবো না।
সবকিছু কি তোর উপর নির্ভর করবে। ভেবে দেখেছিস এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি? সবকিছু জেনে বাবা মেনে নেবে দিয়া কে?
দেখ ভাইয়া আমি দিয়ার ব্যাপারে প্রচুর সিরিয়াস। তুই ভালো করে জানিস আমি যে ব্যাপারে সিরিয়াস সেটা করেই ছাড়ি। প্রফেশন নিয়ে বাবার সাথে কি পরিমান কথাকাটাকাটি হয়েছিল ভুলে গেছিস। শেষ মেশ কিন্তু আমি জিতেছি।
আমি ভুলিনি। বাবাও ভুলে যায়নি। আমি যতদূর জানি বাবা তোর জন্য মেয়ে দেখছে। সেবার তোকে ছাড় দিয়েছে বলে তুই জিতেছিস। নাহলে বাবার জেদ কতটা তা তুই ভালো করেই জানিস বড় আপার ঘটনা ভুলে গেছিস।
নাহ। কিন্তু বড় আপা মেনে নিয়েছে বলে আমিও যে মেনে নেব সেরকম তো কোন কথা নেই।
বড় আপা মেনে নেয়নি তার ভুল বুঝতে পেরেছে।
আমি তো ভুল কিছু করছি না। দিয়া ও একটা ভালো লাইফ ডিজার্ভ করে।
অবশ্যই করে কিন্তু সেটা যে তোর সাথেই হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই।
আর আমার ফিলিংস। তার কোনো মূল্য নেই। তোরা কেউ আমার ফিলিংস টাই বুঝতে পারছিস না। তুই কি দিয়াকেই বোঝাতে পারছি না। ও মনে করে ভাবীর কথায় আমি এত কিছু করছি। ও যদি একবার হ্যা বলে না ভাইয়া পুরো দুনিয়ার সাথে আমি লড়াই করবো। তুই বললি না অন্য কেউ ও ওকে ভালো রাখতে পারবে। হয়তো কিন্তু আমার মতো কেউ ওকে ভালো রাখতে পারবে না। আর আমিও ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না। ওর যে মেন্টাল কনডিশন সেটা কেউ বুঝতেই পারবে না।
তুই এক্স্যাকলি কি বোঝাতে চাইছিস?
আমি বোঝাতে চাইছি দিয়া নিজেই জানেনা ও কি চায়। আমি ওকে বুঝি। আমার প্রফেশনই এটা। কোনো সাধারণ মানুষ এগুলো ধরতে পারবে না। তাই দিয়াকে আমার সাথেই থাকতে হবে।
দিয়াকে নিয়ে তুই কতটা সুখি হবি রিয়াদ? কখনো না কখনো তোর ও অসহ্য লাগবে।
কখনোই না ভাইয়া। এই পেশায় থাকতে থাকতে বরং স্বাভাবিক মানুষ দেরই আমার অস্বাভাবিক লাগে। মানে বলতে চাইছি সবকিছু চিন্তা ভাবনা করেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাবাকে ও আমিই বোঝাবো। আগে দিয়াকে তো বোঝাই।
দেখ আমি শুধু বলবো এখনো সময় আছে সরে আয়। কারণ ব্যাপারটা এখান শুধু একতরফা। এখন সরে আসলে কষ্টটা শুধু তুই পাবি যেটা সহ্য করার ক্ষমতা তোর আছে। কিন্তু আরেকজনের সেই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা নেই। যাইহোক আমার ফ্লাইটের সময় হয়ে যাচ্ছে। তোকে সতর্ক করার ছিল করলাম। মনে রাখিস যে কাজ করবি তার পরিণতির দায় সম্পূর্ণ তোর সেটা ভালো হোক বা খারাপ। তোর নিজের জীবন যাই হোক অন্যকারো জীবন নষ্ট করার অধিকার তোর নেই।
কথাটা বলেই থামলো রাজিব। ও নিজে যে ভুল গুলো করেছে সেগুলো অন্য কেউ করুক তা ও চায় না। ইস হিয়া কে বিয়ে করার আগেও যদি এমন করে ওকে কেউ বোঝাতো তাহলে হয়তো ওকে এমন পরিস্থিতিতে পরতে হতো না। ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রাজিব। তারপর ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল,
তোর মন এই মুহূর্তে যা চায় সেটাই কর। কিন্তু একবার ঐ পথে গেলে ফিরে আসার পথ কিন্তু বন্ধ।
ফিরতে কে চায় ভাইয়া।
আরো কিছু বলতে চাইছিল রাজিব কিন্তু এয়ারপোর্টের এনাউন্সমেন্টে তা আর সম্ভব হলো না। শুধু একেবারে বিদায়ের সময় রিয়াদ রাজিবের কানে কানে বলল,
ভাবীকে আপাতত কিছু বলিস না ভাইয়া।

“আমাকে বিয়ে করে ফেলুন।”

চলবে……….

#আলো_আধাঁর
লিখা- জেসিয়া জান্নাত রিম

১৫.
ভাই ভাবীকে বিদায় জানিয়ে দিয়াকে নিয়ে ওর হোস্টেলের দিকে যাচ্ছিল রিয়াদ। হুট করে দিয়ার কথায় রাস্তার মাঝ বরাবর সজোরে ব্রেক চেপে গাড়ি থামিয়ে দিল ও। তারপর অবাক হয়ে দিয়ার দিকে তাকালো। কিছু বলার আগেই পিছন থেকে অন্য গাড়ির হর্ণ বেজে উঠায় তাড়াতাড়ি নিজের গাড়ি স্টার্ট দিল রিয়াদ। কিছুদূর গিয়ে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে গাড়ি থামিয়ে সাইড করে নিল ও। তারপর দিয়ার দিকে তাকিয়ে উৎসুক কন্ঠে বলল,
কি বললে আরেকবার বলোতো সিগারেট সুন্দরী?
আমাকে বিয়ে করতে বললাম।
সত্যি?
আপনার কি ধারণা আমি মিথ্যাবাদী?
একদমই না। আসলে সেদিন ওভাবে দৌড়ে গাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গেলে আর আজকে আসার পথেও কোনো কথা বলো নি। তাই হুট করে তোমার মুখে কথাটা শুনে নিজের ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে পারিনি।
আমার বাঁচতে ইচ্ছা করে না জানেন। কারণ যতটা সময় আমি নিঃশ্বাস নেই কোনো কারণ ছাড়াই বাঁচি। বর‌ং প্রতিটা সময় অতীতের কালো স্মৃতি গুলো আমাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয়। মনে হয় কষ্ট সহ্য করার জন্যই বেঁচে আছি। কষ্ট সহ্য করার জন্য‌‌‌ কি কেউ বাঁচে। আজ বড়াপু যখন বলল আপনি আমার অতীতের সবটাই জানেন আর শুধু মাত্র আমার ভালো থাকার জন্য এতকিছু করছেন। তখন আমার মনে হলো আপনাকে হারানোটা বোকামি। জীবনে‌ অনেক বোকামি করেছি। আর বোকামি করতে চাই না। আপনি যদি আমাকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে বিয়ে করে ফেলুন। আমি আপনাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা। তবে আপনার সঙ্গ আমায় ইমরান কে ভুলে থাকতে সাহায্য করে। আমি ওকে সারাজীবনের জন্য ভুলতে চাই তাই আপনাকে বিয়ে করতে চাই। বিয়ে মানে তো সারাজীবন একসাথে থাকা। বিয়ে হয়ে গেলে আপনি তো আমাকে আর ছাড়তে পারবেন না তাইনা?
হ্যা। আর তুমিও আমাকে ছাড়তে পারবে না।
তাহলে আমাকে বিয়ে করলেই আপনি আমার সাথে দেখা করতে পারবেন কথা বলতে পারবেন আমার সাথে থাকতে পারবেন। নাহলে আমার সাথে দেখা করার কোনো প্রয়োজন নেই। বাকি পথটুকু আমি একাই চলতে পারবো। জীবনের ও আর হোস্টেলের ও।
বলেই গাড়ি থেকে নেমে গেল দিয়া। তারপর একটা রিকশা নিয়ে উঠে পড়লো তাতে। রিয়াদ ওকে আটকালো না। নিরবে দিয়ার রিকশার পিছু পিছু ওর হোস্টেল পর্যন্ত গেল। দিয়া নিরাপদে পৌঁছানোর পরও ওখান থেকে গেল না রিয়াদ। গাড়ি একসাইডে পার্ক করে গাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলো ও। বিয়ে অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত। এটা নিয়ে হুটহাট ডিসিশন নেয়া যায় না। ভাইয়ের বলা কথা গুলোও ভুলে যায়নি ও। এ বিয়েতে সবথেকে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে ওর বাবা। বড়আপার বিয়ের সময় ও তিনি বড় আপার কোনো কথাই শোনেননি। শেষ মেশ বড় আপার প্রেমিককে জিম্মি করে আপার বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যদিও আপার জন্য বাবার নেয়া এ সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল এটা আপা নিজেই বলে। কিন্তু প্রতিবারই মে তার বাবা সঠিক হবে তার তো কোনো গ্যারান্টি নেই। তাছাড়া ওর বাবা নিশ্চয়ই ওর জন্য ভাবীর মতোই একজন কাউকে পছন্দ করেছে। ভাবীর মতো মেয়েরা ভালো তবে জীবনসঙ্গী হিসেবে এমন কাউকে মোটেও চায় না ও। ওর তো শুধু দিয়াকেই চাই। একথা কি বাবা বুঝবে। এখন কারো সাথে এব্যাপারে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু কার সাথে? ভাইয়া কে কি ফোন দিবে? কিন্তু ভাইয়া তো ফ্লাইটে। এসব ভাবতে ভাবতেই ওর ফোন বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ করতে গিয়ে ওর ঠোঁটের কোণের হাসিটা প্রসস্ত হলো। যেন এই ব্যাক্তি টিকেই এই মুহূর্তে এক্সপেক্ট করছিলো ও।

বাবার সামনে থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে রিয়াদ। আজিজ সাহেব কিছু একটা ফাইল হাতে বসে আছেন। রাতের খাবার শেষে রিয়াদ কে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে এসেছেন আজিজ সাহেব। দরকারি একটি ফাইল সামনে পড়তেই সেটা আগে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তাই ছেলেকে বসিয়ে রেখে সেই কাজটিই খুব মনোযোগ দিয়ে করছেন তিনি। কিছুক্ষণ পর ফাইল টি সরিয়ে রেখে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন,
ফাইলটা জরুরী ছিল। আজকাল অনেক কিছুই ভুলে যাই বয়স হচ্ছে তো। তাই তোমাকে একটু অপেক্ষা করালাম।
সমস্যা নেই। কি বলবে বলো।
বিজনেস জয়েন্ট করার ব্যাপারে তোমার কি মত?
আমি আমার প্রফেশন টাকে ভালোবাসি বাবা। আর আমি যা ভালোবাসি সেটাই নিজের লাইফে পছন্দ করি।
ঠিক আছে কাজের ক্ষেত্রে যখন তুমি এটাই পছন্দ করছো আমি আর এটা নিয়ে কথা বলবো না। যতদিন ইচ্ছা কাজটি করো। তবে যখন মন ভরে যাবে বিজনেসে ঢুকে যেও।
তুমি কি এটা বলতেই ডেকে ছিলে?
না। শুক্রবার তোমার এনগেজমেন্ট।
কথাটা শুনে আকাশ ভেঙ্গে পড়লো রিয়াদের মাথায়। এ কথার প্রেক্ষিতে ওর কি বলা উচিৎ। সে সময় ফাহিমের সাথে কথা বলে মনে অনেকটা জোর পেয়েছিল ও। ভেবেছিল বাবাকে দিয়ার ব্যাপারে ভালোভাবে বোঝাবে। এবং দুই পরিবারের সম্মতিতে দিয়াকে বিয়ে করে এবাড়িতে নিয়ে আসবে। কিন্তু এখানে তো ওর বাবা ওর এনগেজমেন্ট ঠিক করে বসে আছে। আর ওর বাবা একবার যখন ঠিক করেছে পৃথিবী এলোমেলো হয়ে গেলেও সেটাই করবে। এখন কি করবে দিয়ার ব্যাপারে কি বলবে ও বাবাকে? একটা চেষ্টা তো করাই উচিত। ওর প্রফেশনাল চয়েজেও তো আপত্তি করেছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত ওর জিদের কাছে হেরে ও তো গিয়েছিলেন। আর এবার তো বিষয়টা ওর ব্যাক্তিজীবনে ভালো থাকার। এখনই হাল ছেড়ে দিলে হবেনা। তাই সবদিক বিবেচনা করে ও সিদ্ধান্ত নিলো ও দিয়ার ব্যাপারে এখনই বাবার সাথে কথা বলবে। প্রথমে জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চয় করে নিলো রিয়াদ। তারপর বেশ শান্ত গলায় বলল,
আমি একটি মেয়েকে পছন্দ করি বাবা।
ছেলের কথায় এতটুকু বিচলিত না হয়ে আজিজ সাহেব ও শান্ত গলায় বললেন,
পছন্দ করো ভালো কথা কিন্তু ঐ পছন্দ পর্যন্তই সিমাবদ্ধ রেখো।
আমি সেটা পারবোনা বাবা। বিয়ে যদি করতেই হয় তো ওকেই করবো।
এর অনুমতি আমি তোমাকে দিবো না।
আমিও ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না।
তোমার জিদ একবার রেখেছি বলে বারবার রাখবো এমনটা আশা করো না।
তুমি আমার জিদ দেখছো ভালোটা দেখছো না।
তোমার ভালো ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তোমার বড় ভাই বোনদের বেলায় ও আমি ভুল ছিলাম না। তোমার বেলায় ও নই। আর তোমার ছোট বোনের বেলায় ও কোনো ভুল সিদ্ধান্ত আমি নেবো না।
ওদের বেলায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছো মানছি কিন্তু আমার বেলায় ও যে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। আমি জানি আমার কাকে প্রয়োজন। তোমার সিদ্ধান্ত মেনে সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা মেয়েকে বিয়ে করে আমি সুখি হতে চাই না। আমি একবার যখন ঠিক করেছি আমার পছন্দের মেয়েটিকে বিয়ে করবো তখন ওকেই করবো।
কথাটা বলেই বেরিয়ে এলো রিয়াদ। রাগে ওর সারা শরীর কাঁপছে। রুমে ঢুকে সজোরে দরজা বন্ধ করে দিল ও। তারপর ফোন উঠিয়ে ফাহিম কে কল দিয়ে পুরো ঘটনাটা খুলে বলল ও। সব শুনে ফাহিম বলল,
এভাবে হার মেনে নিস না। এখনো তিন দিন হাতে আছে আংকেল কে বোঝানোর ট্রাই কর।
এখন আর বোঝানোর সময় নাই। বাবা বুঝবে ও না।
দিয়া তো তোর ভাবীর বোন সে সূত্রে মেনেও নিতে পারে।
তুই আমার বাবাকে চিনিস না। তোকে আমি যা বলবো সেটা কর। দিয়ার বিষয়টা বাবার সামনে আসতে দেওয়া চলবে না। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে বিয়ে করব। তুই কিছু সাক্ষীর ব্যাবস্থা কর। বিয়ের আগে কিছুতেই দিয়ার কথা বাবাকে বলা যাবে না।
তুই আরেকবার ভেবে দেখ।
ভাবাভাবি শেষ। ওকে ছাড়া থাকা সম্ভব না। আর বাবা আমাকে কিছুতেই ওর সাথে থাকতে দেবে না। আমি আমার বাবাকে চিনিস। তোর ওপর আমি ভরসা করছি। আমি জানি বাবা আমার সব বন্ধুকে ফোন দিয়ে দিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইবে। একমাত্র তুই ই জানিস এ ব্যাপারে। তোকেই সব ব্যাবস্থা করতে হবে। আমার ওপর ও নজর রাখবে বাবা।
ঠিক আছে। আমি সব ব্যাবস্থা করছি।
ফাহিম কে সব বুঝিয়ে দিয়ে ফোন রেখে দিল রিয়াদ। এখন কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে ও।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here