আলো আধারের খেলা পর্ব -০৮+৯

#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_০৮
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

জান্নাত আর রুয়েলের বিয়েটা ভালোভাবেই হয়ে গেলো।রুয়েল দেনমোহর হিসেবে জান্নাতকে কিছু স্বর্ণের গহনা দিলো।যা সে বিয়ের আগেই তার বউ এর জন্য তৈরি করে রেখেছিলো।সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে হলেও শুধু বিয়েটা ধুমধামে হলো না এটাই আফসোস থেকে গেলো রুয়েলের।সে চেয়েছিলো অনেক জমকালো আয়োজন করে বিয়ে টা করবে।যেখানে দুইপক্ষেরই আত্নীয়স্বজন উপস্থিত থাকবে।

কিন্তু রুবেল আর ঊর্মি যে এভাবে হঠাৎ করেই তার বিয়েটা ঠিক করবে সে বুঝতেই পারে নি।এর পিছনে অবশ্য একটা কারণ আছে,যা রুয়েল জানে না।
রুবেল আর ঊর্মি ভেবেছিলো রুয়েলের বিয়েতে তারা কন্যাপক্ষের কাছে থেকে মোটা অংকের যৌতুক নিবে।আর সেই টাকা দিয়েই তারা বিয়ের অনুষ্ঠান পার করবে।তারা নিজেদের একাউন্টের টাকা খরচ করবে না।যেহেতু রুয়েলের নিজস্ব কোনো পার্সোনাল একাউন্ট নাই।সব টকা পয়সা সে তার ভাই এর একাউন্টে পাঠাতো।সেজন্য রুয়েল জানে এখনো তাদের একাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকা আছে।
রুয়েল তার ভাইকে এতোটাই বিশ্বাস করে যে কখনো জানতেও চায় নি তাদের একাউন্টে কত টাকা আছে।সে ভেবেছে তার ভাই তো আর অপচয় করছে না,যা করছে সবকিছু দুইভাই এর নামেই করছে।কিন্তু এদিকে যে রুবেল সব টাকা খরচ করে ফেলেছে যা রুয়েল স্বপ্নেও ভাবে নি।ঊর্মি আর তার বাচ্চাদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য রুবেল তাদের সাথে পেরে উঠতে পারছিলো না।সেজন্য রুবেল ব্যাংকের জমানো টাকাই খরচ করে ফেলতো।ওদিকে রুয়েল কষ্ট করে ইনকাম করে দেশে টাকা পাঠাতো আর এদিকে দেশে রুবেল আর তার বউ বাচ্চা আরাম আয়েশে দিন পার করতো।রুবেল আর ঊর্মি সেজন্যই জান্নাতকে চুজ করেছে।কারণ তারা ভেবেছে জান্নাত অনেক সহজ সরল মেয়ে।এজন্য সে রুয়েলের টাকা পয়সার কোনো হিসাব নেবে না।তারা যেভাবে জান্নাতকে চালাবে জান্নাত সেভাবেই চলবে।আর রুয়েল তো তার ভাইকে ছাড়া কিছুই বোঝে না।

বিদায় বেলায় জান্নাতের বাবা আর মা কাঁদতে কাঁদতে একদম শেষ হয়ে গেলেন।তা দেখে জান্নাত নিজেকে আর সামলাতে পারলো না।সে একবার তার মায়ের গলা ধরে আরেকবার তার বাবার গলা ধরে কাঁদতে লাগলো।ওদিকে জাহান ও কাঁদছে।জান্নাত তখন জাহানের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো,তুই কাঁদছিস কেনো?আমি কি সারাজীবনের জন্য চলে যাচ্ছি নাকি?এই বলে দুইজন কিছুক্ষন দুইজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
জান্নাতের দাদীও ভীষণ ভেংগে পড়েছেন।তবে তিনি কান্না থামিয়ে দিলেন।সবাই যদি এভাবে কাঁদতে থাকে তাহলে জান্নাত তো আরো বেশি দূর্বল হয়ে পড়বে।
সেজন্য দাদী জান্নাতের হাত টা রুয়েলের হাতে দিয়ে বললেন,আমাদের মেয়েটাকে তোর হাতে তুলে দিলাম রুয়েল।আজ থেকে জান্নাতের ভালো মন্দ সবকিছু দেখার দায়িত্ব শুধুমাত্র তোর।ওকে সবসময় ভালো রাখিস।আর ও যেভাবে চলাফেরা করে সেভাবেই যেনো চলতে পারে,সেদিকে একটু খেয়াল রাখিস।
রুয়েল তখন দাদীকে শান্ত্বনা দিয়ে বললো,জান্নাতকে নিয়ে তোমাদের আর চিন্তা করতে হবে না দাদী।আপনি নিজের শরীরের যত্ন নিয়েন।আজ থেকে জান্নাতের দেখাশোনা করার দায়িত্ব শুধুই আমার।ওর ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব আমি আমার নিজের কাঁধে তুলে নিলাম।আপনি শুধু দোয়া করেন আমাদের জন্য।আমি যেনো সবসময় জান্নাতের মুখে হাসি ফোটাতে পারি।ওর সুখের জন্য যা যা করা দরকার সব আমি করবো।
দাদী রুয়েলের কথা শুনে বললো, আলহামদুলিল্লাহ।তোর কথা শুনে খুব খুশি হলাম।

রুয়েল জান্নাতের হাতটি এখনো ধরে আছে।জান্নাতকে এভাবে কাঁদা দেখে রুয়েল নিজেও ভীষণ আপসেট হয়ে গেলো।কিন্তু জান্নাতকে শান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা সে খুঁজে পেলো না।

জান্নাতের বাবা এবার ঊর্মিকে বললো, মা,আমাদের জান্নাতকে নিজের বোন মনে করিও।ওকে ছোট বোনের মতো ভালোবাসিও।ও যদি কোনো ভুল করেও থাকে দয়া করে ক্ষমা করে দিও।
ঊর্মি সেই কথা শুনে বললো,আপনারা জান্নাতকে নিয়ে চিন্তা করেন না কেউ।ও ভালোই থাকবে।জান্নাতের বাবা রুবেলকেও বললো কথাটা।রুবেলও সেম প্রতিশ্রুতি দিলো।তবে ঊর্মি মনে মনে বললো,জান্নাত যদি আমাদের কথামতো চলে তাহলে তো ওর সোনার কপাল হবে।কিন্তু যদি না শোনে তাহলে নিজের কপাল নিজের হাতে শেষ করবে সে।

এদিকে হিয়া আর হৃদয় নতুন চাচী পেয়ে ভীষণ খুশি হলো।তারা দুইজন গাড়ির মধ্যে ঝগড়া শুরু করে দিলো। কে বসবে চাচীর পাশে এই নিয়ে দুই ভাই বোনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেলো।তারা দুইজনই নতুন চাচীর পাশে বসতে চাইছে।রুয়েল তখন বললো একজন আমার পাশে বসো।আর আরেকজন তোমার চাচীর পাশে।হিয়া সেই কথা শোনামাত্র জান্নাতের পাশে গিয়ে বসলো।জান্নাত এখনো কাঁদছে।তার মন টা ভীষণ খারাপ।এই প্রথমবার দাদী আর জাহানকে ছেড়ে সে এতো দূরে যাচ্ছে।জান্নাত যেখানেই যাক না কেনো জাহান আর দাদী সাথে সাথে থাকবেই।তার খুব মনে পড়ছে ওদের।সে বুঝতে পারছে না এভাবে একা একা থাকবে কি করে।এদিকে রুয়েল এখনো জান্নাতের হাতটি শক্ত করে ধরে আছে।জান্নাতকে কাঁদা দেখে তার কিছু বলতে ইচ্ছে করছে,তাকে বোঝাতে মন চাচ্ছে,কিন্তু ভাই আর ভাবীর সামনে কিছু বলতে পারলো না।এদিকে আবার হিয়া আর হৃদয় তাদের মাঝখানে বসে আছে।

হঠাৎ ঊর্মি এসে হিয়া আর হৃদয় কে বললো উঠে এসো ওখান থেকে।আমাদের পাশে এসে বসো।হিয়া তখন বললো,না আমরা এখানেই থাকবো।কিন্তু ঊর্মি কোনো কথা না বলে দুইজনকে টেনে ওঠালো।রুয়েল তা দেখে বললো, ভাবি থাক না এখানে।ওরা যখন আমাদের কাছে বসতে চাইছে তাহলে বসুক।ঊর্মি তখন বললো, না না সমস্যা নাই।আমাদের কাছেই বসুক এরা।
জান্নাত ভাবলো তাকেও কিছু বলা উচিত।সেজন্য সে ঊর্মিকে বললো, ভাবি বাচ্চা মানুষ ওরা।দিন ওদের কে আমার কাছে।এই বলে জান্নাত দুইজনকেই তার পাশে বসালো।আর তাদের সাথে গল্প করতে লাগলো।
জান্নাতকে এরকম গল্প করা দেখে এতোক্ষনে একটু শান্তি পেলো রুয়েল।সে তো ভীষণ টেনশনের মধ্যে ছিলো।সেই থেকে জান্নাত শুধু কেঁদেই চলেছে।জান্নাতকে এমন গল্প করা দেখে রুয়েল অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে জান্নাতের দিকে।যদিও শুধু চোখ দুটি ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না তবুও রুয়েলের ইচ্ছা করছে এভাবেই যদি সারাজীবন দেখতে পেতো জান্নাতকে তার ভীষণ ভালো লাগতো।
এদিকে জান্নাতকে এমন হাসিখুশি দেখে ঊর্মি মনে মনে ভাবলো,জান্নাত দেখি খুব খুশি।এই কিছুক্ষন আগেই না একদম কাঁদতে কাঁদতে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।কান্না শেষও হয়ে গেলো!

রুয়েলরা প্রায় তিনঘন্টা পর তাদের শহরের বাসায় পৌঁছলো।ঊর্মি চাইছিলো কিছুদিন গ্রামের বাড়িতেই থাকতে।কিন্তু রুয়েল রাজি হলো না।সে জান্নাতকে নিয়ে সোজা শহরেই চলে আসলো।কারণ তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা বিয়ের কথা শুনলে ভীষণ রেগে যাবে।এমনিতেই তাদের কে না জানিয়ে বিয়ে করেছে তার উপর যদি সে গ্রামেই থেকে যায় তারা আরো বেশি রাগ করবে।সেজন্য রুয়েল জান্নাতকে নিয়ে শহরের বাসায় আসলো।

রুয়েলদের বাসা টা ছিলো চারতালা বিল্ডিং।যাতে মোট আটটি ফ্লাট আছে।তারমধ্যে রুয়েলরা একটাতে থাকে।আর বাকি সাতটি ফ্লাট ভাড়া দেওয়া আছে।রুয়েলদের আরো একটি তিনিতালা বিল্ডিং আছে।সেটাও পুরাটাই ভাড়া দেওয়া আছে।এসব বিল্ডিং এর ভাড়ার টাকা সব ঊর্মি ওঠায়।রুয়েল কখনোই ভাড়া ওঠায় নি।তার যখন টাকার প্রয়োজন হয় সে সেটা রুবেলের থেকে চেয়ে নেয় বা কখনো ঊর্মির থেকেও নেয়।দেশের এই ছয় মাস এভাবেই কেটে যায় রুয়েলের।

জান্নাতকে নিয়ে রুয়েল প্রথমে তার মায়ের রুমে প্রবেশ করলো।কারণ তার মা বিয়েতে ছিলো না।সেজন্য রুয়েল তার মায়ের সাথে জান্নাতকে পরিচয় করে দিলো।রুয়েলের মা ছেলের বউ কে দেখে ভীষণ খুশি হলেন।তিনি রুয়েলের বউ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন।জান্নাত তার শাশুড়ী কে সালাম দিলো।তখন তার শাশুড়ী সাথে সাথে সালামের উত্তর দিলো আর দুইটা সোনার চুড়ি বের করে জান্নাতের হাতে পড়ে দিলো।

এদিকে ঊর্মি রুয়েলের ঘরটা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সেজে রেখেছে।রুয়েল ভাবতেই পারে নি হঠাৎ করে হওয়া বিয়ের বাসরঘরও সাজানো হবে।রুয়েল তার ঘরে প্রবেশ করলেও ঊর্মি জান্নাতকে আগেই ঢুকতে দিলো না।সে জান্নাতকে নিয়ে তার রুমে চলে গেলো।জান্নাত বুঝতে পারলো না কিছু।অন্যদিকে রুয়েল ও কিছুই বুঝলো না, ভাবি জান্নাত কে নিয়ে কই গেলো?

ঊর্মি জান্নাতকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে তার বোরকা নিকাব সব খুলতে বললো,আর সুন্দর একটা শাড়ি হাতে দিয়ে বললো এটা পড়ে নাও।জান্নাত কখনোই শাড়ি পড়ে নি।সে সেজন্য শাড়িটা হাতে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।ঊর্মি জান্নাত কে এভাবে চুপচাপ থাকা দেখে বললো, শাড়ি কি পড়তে পারো?
জান্নাত মাথা নাড়িয়ে বললো না।তখন ঊর্মি নিজেই পড়ে দিলো শাড়িটা।
আর জান্নাতকে একটু হালকা করে সাজিয়ে দিলো।এই প্রথমবার জান্নাত শাড়ি পড়লো।সে যখন আয়নায় নিজের দিকে তাকালো সত্যি সে চিনতে পারছিলো না নিজেকে।জান্নাতের চুল গুলো অনেক বেশি লম্বা আর ঘন হওয়ায় ঊর্মি চুলগুলো আর বেঁধে দিলো না।মাঝখানে সিথি করে চুলগুলো ছেড়ে দিলো।তারপর ঊর্মি নিজেই জান্নাতকে নিয়ে রুয়েলের রুমে চলে গেলো।জান্নাত ঊর্মির এতো বেশি কেয়ার করা দেখে ভীষণ খুশি হলো।সে ভাবতেই পারে নি ঊর্মি এতো বেশি ভালো হবে।সে ঊর্মিকে একদম বড় বোনের মতো ভাবতে লাগলো।আর মনে মনে ঠিক করলো ঊর্মির সব কথা শুনবে সে।

এদিকে রুয়েল ফ্রেশ হয়ে জান্নাতের জন্য অপেক্ষা করছে।সে বুঝতে পারছে না এতো কেনো দেরী হচ্ছে? জান্নাত আসছে না কেনো?সেজন্য সে এই সুযোগে ফোন করে তার বন্ধুদের বিয়ের খবর দিয়ে দিলো।আর তাদের কে বলে দিলো হঠাৎ করে বিয়ে টা হওয়াই সে কাউকে বলতে পারে নি।রুয়েলের বন্ধুরা তা শুনে ভীষণ রাগ হলো।রুয়েল সেজন্য তাদের রাগ ভাংগানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
এদিকে ঊর্মি জান্নাতকে নিয়ে রুয়েলের রুমে প্রবেশ করলো।রুয়েল জান্নাতকে রুমে আসা দেখে তাড়াতাড়ি করে কলটা কেটে দিলো।
ঊর্মি জান্নাতকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো আমি তাহলে আসি এখন।এই বলে ঊর্মি রুয়েলের দিকে তাকিয়ে বললো দরজা টা লাগিয়ে দাও রুয়েল।রুয়েল কোনো কিছু বলার আগেই ঊর্মি বের হয়ে গেলো রুম থেকে।

জান্নাত একদম আঁটোসাটো হয়ে বসে আছে।তার ভীষণ লজ্জা লাগছে আর একটু ভয়ও লাগছে।সে ভয়ে রুয়েলকে সালাম দেওয়ার কথাই ভুলে গিয়েছিলো।এতোক্ষনে জান্নাত রুয়েল কে বললো,আসসালামু আলাইকুম।
রুবেল সাথে সাথে উত্তর দিলো ওয়ালাইকুম আসসালাম।আর জান্নাতের পাশে এসে বসলো।
রুয়েল কে এভাবে তার পাশে বসা দেখে জান্নাতের পুরো শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো।সে লজ্জায় একটিবারের জন্য তাকালো না রুয়েলের দিকে।
রুয়েল বুঝতে পারলো জান্নাত ভীষণ ভয় পাচ্ছে, সেজন্য তার আগে ভয় দূর করতে হবে।রুয়েল সেজন্য জান্নাতকে বললো,আপনি কি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছেন?
জান্নাত মাথা নাড়িয়ে বললো না।রুয়েল সেই কথা শুনে বললো তাহলে এভাবে নিচ মুখ হয়ে আছেন কেনো?তাকান আমার দিকে।জান্নাত রুয়েলের দিকে তাকানোর সাহস পেলো না।সেজন্য রুয়েল নিজেই জান্নাতের মুখ টা উপরে ওঠালো।

রুয়েল জান্নাতের চেহারা দেখামাত্র হা করে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো।জান্নাত তার চোখ ফিরিয়ে নিতেই রুয়েল আবার ওঠালো জান্নাতের মুখ টি।ইতোমধ্যে জান্নাতের বুকে কম্পন শুরু হয়ে গেছে।হার্টবিট দ্রুতগতিতে চলতে লাগলো।
এদিকে জান্নাত কে দেখে রুয়েল মনে মনে ভাবতে লাগলো অবশেষে আমার স্বপ্নের রাজকুমারীর দর্শন পেলাম।যাকে এক নজর দেখার জন্য সেই থেকে বসে আছি।সে মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললো,আল্লাহ এই জন্যই মনে হয় আমাকে এতো দিন অপেক্ষা করাচ্ছিলে,আর আমিও ধৈর্য্য ধরে ছিলাম।কিন্তু ধৈর্যের ফল যে এতো ভালো হবে আমি সেটা কল্পনাও করি নি।
লাল শাড়িতে জান্নাতকে একদম লাল পরীর মতো দেখাচ্ছে।রুয়েল তখন জান্নাতের হাত দুটি ধরে বললো,মাশাল্লাহ।আপনি অনেক বেশি সুন্দরী। সেজন্যই কি নিজেকে এভাবে আড়াল করে রাখতেন?
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, সুন্দরী কিনা জানি না,তবে আমি আল্লাহর ভয়েই এভাবে থাকতাম।কারণ যেসব নারী বেপর্দাভাবে চলাফেরা করে আল্লাহ তার জন্য পরকালে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
রুয়েল সেই কথা শুনে হঠাৎ জান্নাতের হাত দুটি তার মুখের কাছে নিয়ে একটা কিস করে বললো,
মনে হচ্ছে আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি।কোনো অজানা রাজ্যের পরী দিক ভুল করে আমার ঘরে চলে এসেছে।আপনাকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়ে সত্যি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
জান্নাত সেই কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবার নীচ মুখ হলো।আর রুয়েলের থেকে তার হাত দুটি সরিয়ে নিলো।
জান্নাতের পুরো শরীর আগের চেয়ে দ্বিগুন গতিতে কাঁপছে।সে আরো বেশি জড়সড় হলো।রুয়েল তখন বললো,আপনি তো বললেন আমাকে দেখে আপনি ভয় পাচ্ছেন না, তাহলে এভাবে আঁটোসাটো হয়ে বসে আছেন কেনো?ভালোভাবে বসুন।জান্নাত সেই কথা শুনে একটু নড়েচড়ে বসলো।আর সাথে সাথে জান্নাতের মাথা থেকে কাপড় টা সরিয়ে গেলো।লম্বা ঘন কালো কেশ দেখে রুয়েল আরো বেশি আশ্চর্য হলো।জান্নাত দেখতে যেমন সুন্দরী তার চুলগুলো আরো বেশি আকর্ষণীয়। যা জান্নাতের সৌন্দর্য কে দ্বিগুন বাড়িয়ে তুলেছে।রুয়েল তখন জান্নাত কে বললো,আমি কি আপনার চুলগুলো একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি?
জান্নাত রুয়েলের এমন কথাবার্তা শুনে সত্যি অবাক হলো।ছেলেটা এতো সুন্দর করে কথা বলছে তার সাথে, আর প্রতিটা কাজে কি সুন্দর তার পারমিশন নিচ্ছে।
–কি হলো জান্নাত।আপনি কিছু বলছেন না কেনো?
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, জ্বি, ধরুন।
রুয়েল সেই কথা শুনে আলতো হাতে জান্নাতের চুল গুলো বোলাতে লাগলো। আর বললো,মাশাল্লাহ, আপনার চুলগুলোও দেখি অনেক বেশি সুন্দর।জান্নাত সেই কথা শুনে আরো একবার মুচকি একটা হাসি দিয়ে নিচ মুখ হলো।সে রুয়েলের মুখে তার এতো বেশি প্রশংসা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।রুয়েলও জান্নাতের মন জয় করার জন্য একের পর এক প্রশংসা করেই যাচ্ছে।আর জান্নাত তা শুনে লজ্জায় আরো বেশি লাল হয়ে যাচ্ছে।
রুয়েল আরো কিছুক্ষন গল্প করলো জান্নাতের সাথে।সে ধীরে ধীরে জান্নাতের মনের ভয় দূর করার চেষ্টা করছিলো।আর জান্নাত ও ধীরে ধীরে রুয়েলের সাথে গল্পে মেতে উঠলো।

এক পর্যায়ে রুয়েল জান্নাতকে বললো,আমরা তো আজ থেকে স্বামী স্ত্রী হলাম,সুখে দুঃখে বিপদে আপদে দুইজন দুইজনার পাশে থাকবো এটাই হবে আমাদের অঙ্গীকার।সেজন্য আমাদের দুইজনের মধ্যে কোনো সংকোচ থাকা চলবে না।আপনি কি সেজন্য প্রস্তুত আছেন?

জান্নাত বুঝতে পারলো রুয়েল তার সঙ্গ চাচ্ছে।কিন্তু তার যে ভয় এখনো কাটে নি।সে রুয়েলের সাথে এখনো ফ্রি হয় নি।মনের মধ্যে অজানা এক ভয়ে বুকটা তার দুরুদুরু করে কাঁপছে।তবে জান্নাতকে দাদী আগেই সব শিখিয়ে দিয়েছে।দাদী বলেছে বিয়ের প্রথম রাতে স্বামী স্ত্রীর অনেক কাছে চলে আসে।তাদের মধ্যে গভীরতম এক ভালোবাসার সৃষ্টি হয়।সে ভালোবাসা থেকে যেনো সে কখনোই মুখ ফিরিয়ে না নেয়।এই ভালোবাসা অনেক পবিত্র এক ভালোবাসা।যা শুধুমাত্র বিয়ের মাধ্যমেই একজন নরনারীর মধ্যে তৈরি হয়।দাদী আরো বলেছে,জান্নাত সবসময় স্বামীর কথা মেনে চলবি।স্বামী যা চাইবে সাথে সাথে তাকে দিয়ে দিবি।স্বামী মেয়েদের জন্য অনেক বড় একটা মূল্যবান সম্পদ।স্বামীর সাথে ভালো আচরণ করলে সে কখনোই তোর সাথে খারাপ আচরণ করতে পারবে না।আর স্বামী যখন আদর সোহাগ করার জন্য কাছে ডাকবে কখনোই না করবি না।
জান্নাত এসব চিন্তা করতেই রুয়েল জান্নাতকে বললো, আপনাকে আমি কি একটু জড়িয়ে ধরতে পারি জান্নাত?
জান্নাত সেই কথা শুনে ভীষণ লজ্জার মধ্যে পড়ে গেলো।তবুও সে লজ্জা এড়িয়ে বললো, আমি জানি আজকের রাত প্রত্যেক স্বামী স্ত্রীর জন্য অনেক মূল্যবান একটা রাত।সেজন্য এই মূল্যবান রাতে আগে চলুন দুই রাকাত নফল নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি।
–হ্যাঁ অবশ্যই।চলুন।এই বলে রুয়েল নিজেই জান্নাতকে বেড থেকে নামিয়ে নিলো।তারপর জান্নাতকে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো।দুইজনই অযু করে দুই রাকাত নফল নামায পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো।
#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_০৯
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

জান্নাত একটু হাসলেই তার গালদুটি একদম হালকা গোলাপি রঙের মতো হয়ে যায়।বলতে গেলে একদম ধবধবে ফর্সা তার গায়ের রঙ। ভ্রু দুটো ছিলো সরু এবং ঘন কালো চুলে পরিবেষ্টিত। যা দেখতে খুবই সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। চোখ দুটোর পাঁপড়ি ছিলো ঘন পল্লবে ভরা। চোখের দৃষ্টি ছিলো গভীরতম,এক পলক তাকাতেই যে কেউ কাবু হয়ে যেতে পারে।রুয়েল জান্নাতের এমন সৌন্দর্য দেখে ভিতরে ভিতরে ছটফট করতে লাগলো। সে কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছিলো না।জান্নাত রুয়েলকে এভাবে তাকানো দেখে তার চোখ ফিরে নিলো।সে অন্য মুখ হতেই রুয়েল হাত বাড়িয়ে দিলো।রুয়েলের হাতের স্পর্শ পেতেই থরথর করে কাঁপছিলো জান্নাতের ঠোঁটদুটি।সে তৎক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে নিলো।এদিকে রুয়েলের ভিতরটা লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে।সে কিছুতেই নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলো না।তবুও জান্নাতের শরীরের এমন কাঁপুনি দেখে নিজেকে সংযত করলো।আর মনে মনে ভাবলো,জান্নাতের ভয় এখনো কাটে নি।ওকে আরো সময় দেওয়া উচিত।এজন্য রুয়েল বললো, জান্নাত অনেক রাত হয়েছে।এখন তো ঘুমানো উচিত আপনার।আমার না হয় রাত জাগার অভ্যাস আছে।কিন্তু আপনার তো নেই।যান তাড়াতাড়ি বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ুন।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, জ্বি।আপনিও শুয়ে পড়ুন।এই বলে সে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু রুয়েল বোকার মতো তাকিয়ে রইলো জান্নাতের দিকে।সে বুঝতেই পারছে না আর কিভাবে জান্নাতকে তার কাছে আসার কথা বলবে।

রুয়েল ঘরের লাইট টি অফ করে দিলো।
রুম টি অন্ধকার হলেও ডিম লাইটের হালকা নীল আলোয় জান্নাতের মুখখানা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।একদম নীল পরীর মতো লাগছিলো জান্নাতকে।রুয়েল তার জায়গা থেকে দাঁড়িয়েই জান্নাতকে দেখতে লাগলো। অজানা এক সৌন্দর্যের মাঝে তার দৃষ্টি এমনভাবে আটকে পড়েছে যে রুয়েল তার অজান্তেই পা চালিয়ে জান্নাতের পাশে এসে বসলো।জান্নাতের মাথায় কোনো কাপড় ছিলো না।সে চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে।জান্নাতের চুলগুলো লম্বা হওয়ার কারনে চুলের আগা ফ্লোর ছুঁয়ে আছে।রুয়েল হাত দিয়ে চুলগুলো স্পর্শ করতেই জান্নাত তাড়াতাড়ি করে উঠে বসলো আর বললো,আপনি এভাবে বসে আছেন কেনো?ঘুমাবেন না?
রুয়েল জান্নাতের কথা যেনো শুনতেই পারলো না।সে তো জান্নাতের কথা বলার স্টাইল দেখছে।জান্নাত কিভাবে তাকায় কিভাবে কথা বলে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করছিলো।সে জান্নাতকে যতই দেখছে ততোবেশি আকর্ষণ অনুভব করছে।রুয়েল বেহায়ার মতো জান্নাতের দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে।জান্নাত এতোক্ষণে খেয়াল করলো ব্যাপার টা।সে রুয়েলকে এভাবে তাকানো দেখে সাথে সাথে তার চোখ ফিরে নিলো।সে ভাবতেই পারছে না এভাবে খোলামেলা ভাবে কোনো এক পুরুষ মানুষের সামনে সে বসে আছে।না আছে মাথায় কাপড় না আছে মুখে।যে মেয়ে বাবা মা দাদী ছাড়া কারো সামনে যেতে চাইতো না আজ সে একা একটা ঘরে অন্ধকারে অচেনা এক যুবকের সাথে।
দূর কি ভাবছি আমি!ইনি তো আমার স্বামী হন,ইনি কোনো অচেনা যুবক নন।

জান্নাত এখনো ফ্রি হতে পারছে না রুয়েলের সাথে।তার শুধু ভয় হচ্ছে রুয়েল যে কখন তার কাছে আসতে চায়।সে তো বারণও করতে পারবে না।কারণ রুয়েল তো তার স্বামী।কিন্তু ভালোভাবে দুইজন দুইজনকে না জানতেই কিভাবে তারা প্রেম ভালোবাসা আদান প্রদান করবে।না,আরো সময় চায় জান্নাতের।কিন্তু রুয়েল কি তাকে এই সময় টা দেবে।জান্নাত মনে মনে এসব ভাবতেই হঠাৎ রুয়েল জান্নাতকে বললো, জান্নাত উঠলেন কেনো?শুয়ে পড়ুন।এই বলে রুয়েল নিজেও জান্নাতের পাশে গিয়ে শুইলো।
জান্নাত বসেই থাকলো।রুয়েলকে এভাবে শোয়া দেখে তার হার্টবিট আরো দ্রুত চলতে লাগলো।রুয়েল তখন বললো,কি হলো জান্নাত?শুয়ে পড়ুন।
জান্নাত শুয়ে পড়তেই রুয়েল তাকে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলো।জান্নাত তা দেখে একদম ভয় পেয়ে গেলো।সে লজ্জায় আর আতংকে চোখ বন্ধ করে থাকলো।জীবনে প্রথম কোনো পুরুষ মানুষের আলিঙ্গন,সে কিছুতেই এভাবে থাকতে পারলো না।জান্নাত সেজন্য নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করলো।
রুয়েল তখন বললো, জান্নাত ভয় পাবেন না প্লিজ।আমি জানি আপনার অনেক অস্বস্তি হচ্ছে।এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।কিন্তু আপনাকে এই অস্বস্তি কাটাতে হবে।মনের ভিতর থেকে সব ভয় দূর করতে হবে। আপনি আমার বয়সে অনেক ছোট।সেজন্য আমি জোর করে কোনো ভালোবাসা আদায় করতে চাই না।আপনি যেদিন আমাকে নিয়ে কোনো সংকোচ রাখবেন না,আমার ছোঁয়াতে আপনার কোনো অস্বস্তি হবে না,সেদিনই আমি আপনার সাথে ঘনিষ্ঠ হবো।তবে এতোদিন আমাকে দূরে রাখবেন না প্লিজ।আপনাকে বুকের মাঝে নিয়ে ঘুমানোর অধিকারটুকু দিন।

জান্নাত রুয়েলের এমন আবেগঘন কথা শুনে খুবই কষ্ট পেলো।সে বুঝতে পারলো এরকম করা তার ঠিক হচ্ছে না।রুয়েলকে তার সঙ্গ দেওয়া উচিত।সে এ বিষয়ে একটা হাদিস জানে,স্বামী যখন স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে,কিন্তু স্ত্রী যদি স্বামীর ডাকে সাড়া না দেয়,সেজন্য স্বামী যদি অসন্তুষ্টিতে রাত্রি যাপন করে তাহলে ভোর হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতারা লানত করতে থাকে(হাদিসঃ৩৪৩২,সহিহ)

জান্নাত এজন্য রুয়েলের পাশ ফিরলো।সে তার জড়তা আর ভয় কাটিয়ে, লজ্জা শরম ত্যাগ করে রুয়েলের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,আপনি আমার স্বামী হন।আপনি যাতে অসন্তুষ্ট হন এমন কোনো কাজ আমি কখনোই করবো না।
রুয়েল সেই কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিয়ে জান্নাতের কপালে একটা কিস করে বললো, আপনার কথা শুনে খুব খুশি হলাম জান্নাত।অনেক কপাল গুনে আপনার মতো একজন বউ পেয়েছি আমি।আপনাকে কষ্ট দিয়ে কখনোই কোনো কাজ করতে চাই না।আপনি আগে আমাকে বুঝতে শিখুন।আমাকে যেদিন মন থেকে ভালোবাসবেন সেদিন ই আমি আপনার অনেক কাছে আসবো।গভীরতম এক ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করবো সেদিন।এই বলে রুয়েল জান্নাত কে তার বুকের সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিলো।জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।তার হঠাৎ দাদীর কথা মনে পড়লো।দাদী মনে হয় এজন্যই তাকে বলেছিলো,রুয়েলের মতো ভদ্র আর নিষ্ঠাবান ছেলে তিনি দেখেন নি।জান্নাত নিজেও বুঝে গেলো আসলেই রুয়েল একজন অনেক বড় মনের মানুষ।রুয়েল কে সে যত দেখছে,তার কথা যত শুনছে ততোবেশি সে অবাক হয়ে যাচ্ছে।রুয়েল বাসর রাতে বউ কে এতো কাছে পেয়েও জোর করে তার সাথে মিলনে সঙ্গম হলো না।কারণ সে জানে জান্নাত অনেক ছোটো।এখনো সে স্বামী স্ত্রীর প্রেম ভালোবাসা বিষয়ে ভালোভাবে জানে না।তাছাড়া বাবা মা দাদীকে ছেড়ে অন্য এক অচেনা মানুষের বাসায় এসেছে।এমনিতেই সে ভীষণ আপসেট আজ।তাকে কিছুদিন তার মতো করে সময় কাটাতে দিতে হবে।তার যত কষ্টই হোক জান্নাতের সাথে জোর করে সে কিছুই করবে না।

আজ রাত তিনটা পার হয়ে গেলো,তবুও জান্নাত ঘুম থেকে জেগে উঠলো না।এতোদিন তিনটা বাজার সাথে সাথে সে জেগে উঠতো।রুয়েলের বুকের উপর শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে সে।কিন্তু রুয়েল সেই থেকে জেগেই আছে।সে জান্নাতের চুলগুলো বুলিয়ে দিচ্ছে আর জান্নাত আরামে ঘুমাচ্ছে।হঠাৎ জান্নাত তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়লো।সে চোখ ঘষতে ঘষতে ঘড়ির দিকে তাকালো। এদিকে রুয়েল একদম ভয় পেয়ে গেলো।জান্নাত হঠাৎ এভাবে চমকে উঠলো কেনো?সেজন্য রুয়েল জান্নাতের হাত ধরে বললো, জান্নাত,জান্নাত!কি হয়েছে আপনার?খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখেছেন?
জান্নাত ঘুম ঘুম চোখে বললো,না। কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখি নি।আমি আসলে এখন তাহাজ্জুদের নামায পড়বো।এই সময় আমি প্রতিদিন জাগা পাই।
রুয়েল জান্নাতের কথা শুনে বললো,সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ।চলুন অযু করে আসি।

জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে বললো,আপনিও তাহাজ্জুদের নামায পড়েন?আপনি তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাযই ঠিক ভাবে আদায় করেন না।
রুয়েল সেই কথা শুনে বললো,আপনি আল্লাহ তা”য়ালার সন্তুষ্টির জন্য যেসব ইবাদত করেন,আমিও আজ থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সেসব ইবাদতই করবো।আমি আমার বউ কে রেখে একা একা জাহান্নামে গিয়ে কি করবো?আমি আপনার সাথে একসাথে বেহেশতে থাকতে চাই জান্নাত।আমি আপনাকে হারাতে চাই না কখনো।ইহকাল পরকাল সবখানে শুধু আপনাকেই চাই।আমি আপনাকে অনেক অনেক ভালোবাসতে চাই।
জান্নাত রুয়েলের মুখে এসব কথা শুনে নিজের অজান্তেই রুয়েল কে জড়িয়ে ধরলো। তার চোখে জল চলে এলো।
রুয়েল তখন নিজেও জান্নাতকে ভালোভাবে জড়িয়ে ধরলো আর বললো,দেখছেন জান্নাত!আপনি নিজের থেকে কিভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন!এই কাজটি আপনি আপনার মন থেকেই করেছেন।একদিন এইভাবে আপনি নিজেই আপনাকে ভালোবাসার জন্য আবদার করবেন।

জান্নাত সেই কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে রুয়েলকে ছেড়ে দিলো।আর ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো।জান্নাত আগে ওযু করতে ধরলো।কিন্তু তার তখন মনে হলো রুয়েল তো নিজের মুখে বললো সেও নামায পড়বে।তাহলে ওনাকেই আগে অযু করতে বলি।এজন্য জান্নাত আবার রুয়েলের কাছে ফিরে এলো।
রুয়েল জান্নাতকে দেখে বললো, এতো তাড়াতাড়ি অযু করা হয়ে গেলো?
জান্নাত তখন বললো,আপনিও তো নামায পড়বেন।তাহলে আপনিই আগে অযু করে নিন।আপনার হয়ে গেলে তারপর আমি করবো।রুয়েল সেই কথা শুনে অযু করতে গেলো।
আর জান্নাত ওয়াশরুমের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলো।

হঠাৎ জান্নাতের সেই স্বপ্নের কথা মনে হলো।সে ঘটি থেকে পানি ঢালছে আর এক সুদর্শন যুবক সেই পানি দিয়ে অযু করছে।জান্নাত সেজন্য রুয়েলের কাছে গিয়ে বললো, আপনি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি?
–জ্বি বলুন।
–আপনি যে যে ওয়াক্ত বাসায় নামায পড়বেন আমি কি সেই সেই ওয়াক্তের অযুর জন্য পানি নিজের হাতে ঢালতে পারি আপনার শরীরে?
–হ্যাঁ অবশ্যই।কেনো নয়?আমি তো আজ থেকে আপনার সাথে সাথে তাহাজ্জুদ আর ফজরের নামায বাসাতেই পড়বো।এই দুই ওয়াক্তে আপনি আমাকে ওযুর সময় হেল্প করলে আমি অনেক খুশি হবো।আমার অনেক কিছু শেখার আছে আপনার থেকে।
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে ভীষণ খুশি হলো।সে আজ কেই রুয়েলকে অযু করতে হেল্প করলো।এইভাবে জান্নাত আর রুয়েল তাহাজ্জুদের নামায পড়লো।আবার কিছুক্ষন গল্প করে ফজরের নামায পড়ে শুয়ে পড়লো।

সকাল আটটা বেজে গেলো।জান্নাত আর রুয়েল এখনো ঘুমে আছে।তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।ফজরের নামায পড়ে পাঁচটার সময় ঘুমিয়ে পড়েছে সেজন্য এখন একটু ভালোভাবেই চোখ টা লাগিয়ে এসেছে।রুয়েল তো এমনিতেই ১২ টার আগে ওঠেই না।আজ আবার বউকে কাছে পেয়েছে।আজ তো উঠবেই না।জান্নাত অনেকবার ওঠার চেষ্টা করেছে।সে রুয়েলকে বলেছে তার এখন ওঠা উচিত।নাস্তা বানাতে ভাবীকে হেল্প করা উচিত।কিন্তু রুয়েল উঠতে দেই নি জান্নাতকে।এজন্য জান্নাতও রুয়েলের সাথে ঘুমিয়ে আছে।

এদিকে রুয়েলদের বাসার কাজের মেয়ে হেনা আর ঊর্মি সবার জন্য নাস্তা রেডি করছে।ঊর্মি তার কাজকর্ম শেষ করে বাকি কাজ হেনাকে করতে বললো।
ঊর্মি সেজন্য দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে হেনার কাজ দেখছে আর বার বার রুয়েলদের ঘরের দরজার দিকে তাকাচ্ছে।ঊর্মি মনে মনে ভীষণ জ্বলে যাচ্ছে।সকাল আটটা বেজে গেলো এখনো ওঠার নামগন্ধ নেই।এইভাবে ঘুমালে সংসার করবে কিভাবে?

হঠাৎ রুয়েলদের পাশের ফ্ল্যাট থেকে অনেকেই বউ দেখার জন্য এসেছে।ঊর্মি তখন তার শাশুড়ী কে গিয়ে বললো,মা, মা আপনার ছেলের বউ কে উঠতে বলেন।পাশের ফ্ল্যাট এর ভাবীরা এসেছে নতুন বউকে দেখতে।
রুয়েলের মা সেই কথা শুনে বললো, কি বলছো এসব?আমি কিভাবে ছেলেকে ডাক দিবো?তুমি হলে ওর ভাবী।তুমি গিয়ে ডাক দাও।
ঊর্মি সেই কথা শুনে বললো, না আমি পারবো না ডাকতে।আমি যদি ডাক দেই তখন আবার জান্নাত ভাববে, ভাবী হিংসা করছে।ওদিকে রুয়েলও হয় তো বিরক্ত হবে।
এদিকে ভাবীরা দেরি করতেও চাইছেন না।কি বলবো তাদের কে?
ঊর্মি এতো জোরে জোরে এসব কথা বলছে যে ভাবীরা সব শুনতে পেলো।তারা যখন দেখলো নতুন বউ এখনো ওঠেই নি সেজন্য তারা চলে গেলো।

রুবেল বাহিরে গিয়েছিলো।সে এলো নাস্তা খাওয়ার জন্য।অন্যদিকে হিয়া আর হৃদয় নাস্তা খাওয়ার জন্য আগেই টেবিলে বসে পড়েছে।ঊর্মি সবাইকে নাস্তা দিলো।হঠাৎ রুবেল বললো,বাকি সবাই কোথায়?

ঊর্মি মুখ ভেংচিয়ে বললো ওঠেই নি।

রুবেল সেই কথা শুনে কিছু আর বললো না।সে তার খাওয়া শেষ করলো।
এদিকে রুয়েলের মা নতুন বউ কে রেখে একা একা খেতে বসতেও পারছেন না।সেজন্য তিনি জান্নাতের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।

কিছুক্ষন পরেই জান্নাত বের হয়ে আসলো রুম থেকে।পরনে সুন্নাতি জামা।তার উপরে বড় একটা ওড়না দিয়ে পুরো শরীর আর মুখ ঢেকে রেখেছে।সে রুম থেকে বের হয়েই তার শাশুড়ীর রুমে গেলো।সে তার শাশুড়ী কে দেখামাত্র সালাম দিলো।

জান্নাতের শাশুড়ী সালামের জবাব দিয়ে জান্নাতের কাছে এগিয়ে আসলেন,আর বললেন,মা জান্নাত!কাল থেকে একটু তাড়াতাড়ি উঠিও।তুমি যেহেতু এ বাড়ির বউ,তোমার তো উচিত তোমার বড় ভাবীকে কাজে হেল্প করা।
–জ্বি মা।আজ একটু উঠতে দেরি হয়েছে।কাল থেকে আর হবে না।এই বলে জান্নাত নিচ মুখ হলো।সে ভাবতেই পারে নি তার শাশুড়ী এইভাবে তাকে বলবে।জান্নাত মনে মনে ভাবতে লাগলো সে তো উঠতেই চাইছিলো,ওনার ছেলেই তো বললো উঠতে হবে না।ওনার কথা শুনে তার এভাবে শুয়ে থাকা উচিত হয় নি।

#চলবে,
#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here