আলো আধারের খেলা পর্ব -০৬+৭

#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_০৬
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

রুয়েল মনে মনে ভাবতে লাগলো জান্নাত কে তো আর কাছ থেকে দেখতে পারবো না অন্তত তার গ্রামে গিয়ে মনটাকে একটু শান্ত্বনা দেই।জান্নাতের জন্য রুয়েল এতোটাই পাগল হয়ে গেছে যে তার মন সবসময় এখন শুধু জান্নাতের কথাই ভাবছে।
দিনরাত বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা দেওয়া রুয়েল আজ না দেখা সেই মায়াবী রাজকন্যার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।রুয়েল নিজের জন্য সবসময় সেরা জিনিস টা ইউজ করে।সেজন্য জান্নাতকে দেখার পর থেকে তার মনে হয়েছে,এইরকম মেয়েই তার দরকার।যাকে কোনো পুরুষমানুষ দর্শন পর্যন্ত করে নি।তার বউ হবে সবার থেকে আলাদা।যাকে শুধু সেই দেখবে।সেজন্য তার ভাই আর ভাবী জান্নাতকে পছন্দ না করলেও সে ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট হয়েছে তার প্রতি।
অথচ রুয়েল জানেই না জান্নাত আসলে দেখতে কেমন!রুয়েল আসলে জান্নাতের আচার আচরণ আর চরিত্র দেখে বিয়ে করতে চাচ্ছে।যাতে সে বিদেশ চলে গেলেও জান্নাত শুধু তাকেই ভালোবাসে।রুয়েলের ভাই রুবেল ঊর্মিকে রেখে বিদেশ চলে গেলে সে পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে।ঊর্মি তখন ছোট ছিলো আর সে তাদের ফুপাতো বোন বলে সবাই তাকে মাফ করে দিয়েছে।
সেজন্য রুয়েল চায় না তার বউ ঊর্মির মতো এমন চরিত্রহীন হয়ে যাক।সে জান্নাতের মতো এমন নেককার স্ত্রীই চাই।
রুয়েল ঠিক করলো এবার একা একাই যাবে গ্রামে।ওর বন্ধুদের নিয়ে যাবে না।কারণ ওরা গ্রামে গেলে ভীষণ দুষ্টামি করে।গ্রামের মেয়েদের সাথে নিজের থেকে কথা বলতে চায়।কিন্তু গ্রামের মেয়েরা কথা বলা তো দূরের কথা তাদের দেখলেই দূরে সরে যায়।রুয়েল বার বার তার ফ্রেন্ডদের বোঝায় শহরের মেয়েদের থেকে গ্রামের মেয়েরা সম্পূর্ণ আলাদা।তবুও তার ফ্রেন্ডরা কথা শোনে না।

রুয়েল রেডি হতেই হিয়া আর হৃদয় দৌঁড়ে এলো রুয়েলের কাছে আর জিজ্ঞেস করলো, চাচ্চু তুমি কই যাচ্ছো?
রুয়েল তখন হিয়া আর হৃদয় কে কোলের মধ্যে নিয়ে বললো,তোমার চাচীকে দেখতে যাচ্ছি?
হিয়া সেই কথা শুনে ভীষণ আশ্চর্য হলো আর কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করলো,চাচ্চু তুমি আবার কোনদিন বিয়ে করলে?
রুয়েল তখন হাসতে হাসতে বললো, এমনিতেই মজা করলাম আম্মু।আমি বিয়ে করলে তোমরা জানতে না?হৃদয় তখন বললো, তাহলে তুমি কই যাচ্ছো সেটা তো বলো।
–গ্রামে যাচ্ছি।
গ্রামের কথা শোনামাত্র হিয়া আর হৃদয় ঠিক করলো তারাও যাবে গ্রামে।কারণ তাদের গ্রাম খুবই ভালো লাগে।কিন্তু রুবেল আর ঊর্মি যেতে দেয় না গ্রামে।তাদের মতে গ্রামে গেলে নাকি ছেলেমেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে।অথচ তারা একসময় সবাই গ্রামেই ছিলো।শহরে যাওয়ার পর থেকে রুবেল আর ঊর্মি গ্রামকে প্রায় ভুলেই গেছে।তাদের মনের মধ্যে অহংকার জন্ম নিয়েছে।

হিয়া তখন বললো, চাচ্চু,আমাদের কে একটু গ্রামে নিয়া যাবে?আব্বু আর আম্মুকে কত করে বলি কিন্তু ওনারা কেউ নিয়ে যায় না।
হৃদয় ও জিদ ধরে বসলো সেও গ্রামে যাবে।রুয়েল তখন হিয়া আর হৃদয় কে কোলের মধ্যে নিয়ে বললো,ঠিক আছে নিয়ে যাবো।যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো।

হিয়া আর হৃদয় রুয়েলের কথা শোনামাত্র খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো।সেজন্য তারা তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে আসলো।এদিকে সবাইকে গ্রামে যাওয়া দেখে রুবেল আর ঊর্মি ঠিক করলো তারাও যাবে গ্রামে।রুয়েল যখন নিজের থেকেই গ্রামে যেতে চাচ্ছে তখন এই সুযোগ টা তাদের কাজে লাগানো উচিত।জান্নাতের সাথে রুয়েলের বিয়ে টা তারা সারপ্রাইজ হিসেবে রাখতে চাইলো।রুবেল আর ঊর্মি চাচ্ছে যে করেই হোক রুয়েল তাদের উপর থেকে যেনো তার রাগটা কমিয়ে নেয় এবং আবার আগের মতো তাদের বিশ্বাস করতে শেখে।

——— ——— ——— ——— ——— ——— ———

জান্নাত আর তার দাদী একসাথে বসে আসরের নামায পড়ছে।তাদের বাড়িতে শুধুমাত্র জান্নাত আর তার দাদী নামায পড়ে।জান্নাতের আম্মু এক ওয়াক্ত পড়লে আর পরের ওয়াক্ত পড়ে না।তিনি কাজের অজুহাত দেখিয়ে চলে যায়।জান্নাত এজন্য তার আম্মুকে অনেক বোঝায়।তখন জান্নাতের আম্মু এক গাদা কথা শুনিয়ে দেয়,বসে বসে সারাদিন খাও তো কেমনে বুঝবা আমার কষ্ট।সারাদিন কাজ কাম করেই তো কূল পাই না।কখন এসব নামায কালাম পড়ি?যেটুকু পড়ি এতেই আল্লাহ কবুল করে নেবে।জান্নাত তখন বলে আম্মু আগে নামায পড়তে হবে,তারপর সংসারের কাজ। সেই কথা শুনে জান্নাতের আম্মু বলে,সংসার হোক আগে, তারপর বুঝবা কেমনে দিন যায়।তিনবেলা ভাত তরকারি রান্না করতে করতেই সময় শেষ হয়ে যাবে।তখন মনে হবে আমার কথা।অন্যদিকে জান্নাতের আব্বু শুধু শুক্রবারের জুম্মার নামায টা পড়ে।আর কোনো ওয়াক্তের নামাযই পড়ে না।জান্নাত তার বাবাকে যদি নামাযের কথা বলে তখন তিনিও উলটো বকাঝকা করেন।বলে সারাদিন দোকানে থাকি। কখন নামায পড়তে যাই?

জান্নাত ছোটো থেকে তার দাদী আর দাদুর সাথে থাকে।সেজন্য সে তাদের মতো হয়েছে।জান্নাতের দাদু আবার খুবই আল্লাহ ভক্ত লোক ছিলেন।তিনি এক ওয়াক্ত নামাযও কাযা করতেন না।জান্নাতের দাদু বুড়ো বয়সেও গাদা গাদা ইসলামিক বই কিনতেন আর সেগুলো পড়তেন।জান্নাত সময় পেলেই তার পাঠ্যবই এর পাশাপাশি এই ইসলামিক বই গুলো পড়তো।যার কারনে জান্নাত এতো বেশি আল্লাহভক্ত আর পর্দাশীল হয়েছে।সে যখন বুঝতে পারলো একটা মেয়ে মানুষের সৌন্দর্য তার স্বামী ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষ মানুষ কে দেখানো যাবে না।আর দেখালে মাটির তলে গিয়ে এরজন্য অনেক বড় শাস্তি ভোগ করতে হবে তখন থেকেই জান্নাত এভাবে নিজেকে আড়াল করে রাখে।এ জন্য তাকে অনেক বেশি অপমানও সহ্য করতে হয়।

রাস্তা দিয়ে হাঁটলে গ্রামের কিছু ছেলে তাকে নিয়ে হাসি মস্করা করে।আবার কিছু কিছু মেয়েরা তো হিংসার ঠেলায় বলে,এখন কাজ কাম নাই,তাই সারাক্ষন ঘোমটা দিয়ে থাকতে পারে।কিন্তু যখন বিয়ে হবে তখন কি করবে?ধান সিদ্ধ আর শুকানোর সময় কি করবে?তখনও কি এভাবে থাকতে পারবে?আর কেউ কেউ তো বলে বিয়ের পর আর এই ন্যাকামি থাকবো না।কাজ কাম করার সময় যখন গরম লাগবে তখন এইসব বোরকা ছুঁড়ে ফেলে দিবে।জান্নাত কাউকে কিছু বলে না।সে শুধু মনে মনে আল্লাহ কে বলে,আল্লাহ আমার সহ্য ক্ষমতা বাড়িয়ে দাও।আর আমি যেনো সারাজীবন এভাবেই পর্দার সহিত চলতে পারি সেই তৌফিক দান করো আমাকে।

জান্নাত যখন ক্লাস সিক্সে উঠলো তখন স্কুলে স্কুল ড্রেস ছাড়া তাকে ঢুকতে দিতো না।স্যার ম্যাডাম রা নানাভাবে তাকে বকুনি দিতো।
তখন জান্নাত বাধ্য হয়ে স্কুল ড্রেসের কাপড় দিয়েই বোরকা হিজাব আর নিকাব বানিয়ে নিয়েছে।প্রথম প্রথম তার ক্লাসের ছেলে মেয়েরা এ জন্য ভীষণ হাসাহাসি করতো।কিন্তু জান্নাত কারো কথায় কান দিতো না।সে তার নিজের মতো করে চলাচল করতো।টিফিন পিরিয়ডে মেয়েদের কমন রুমে বসেই যোহরের নামায আদায় করতো।এইভাবে জান্নাত তার ক্লাস সিক্স লেভেল শেষ করলো।কিন্তু যখন জান্নাত সবাইকে চমকে দিয়ে ক্লাস সেভেনে তিন রোল করলো তখন সবাই অনেক বেশি অবাক হলো।ধীরে ধীরে স্যার ম্যাডামরাও তাকে ভালোবাসতে শুরু করলো।জান্নাতের দুই তিনজন বান্ধুবীও হলো।কারন সবাই বুঝে গেলো জান্নাত শুধু পর্দাশীল মেয়েই নয়,তার আচার আচরণ ভালো হওয়ার পাশাপাশি সে একজন মেধাবী স্টুডেন্ট ও।জান্নাতের দেখাদেখি তার বান্ধুবীরাও বোরকা পড়ে আসতে লাগলো ক্লাসে।তারাও টিফিন পিরিয়ডে জান্নাতের সাথে নামায পড়া শুরু করে দিলো।আস্তে আস্তে ক্লাসের সকল মেয়ে জান্নাতকে ভালোবাসতে লাগলো।শুধু ক্লাসের এক আর দুই রোল ছাড়া।তারা জান্নাতকে হিংসা করতে লাগলো।কারন তারা এক আর দুই রোল করেও জান্নাতের মতো এতো ভালোবাসা পায় না।এইভাবে জান্নাত ক্লাস সেভেন লেভেল শেষ করলো।

তবে জান্নাত মনে মনে ঠিক করলো সে আরো ভালো করে পড়াশোনা করবে। আর একদিন না একদিন সে এক রোল করবেই।ক্লাস এইটে অনেক ভালো পরীক্ষা দিয়েও জান্নাতের রোল তিনই থেকে গেলো।এতে জান্নাতের ভীষণ মন খারাপ হলো।তবুও সে আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলো।শেষমেশ ক্লাস নাইনে এসে জান্নাত এক রোল করতে পারলো।এক রোল করার ফলে জান্নাতের দিকে সকল স্যার ম্যাডাম দের নজর পড়লো।সবাই এক নামে জান্নাতকে চিনলো।আর জান্নাতকে পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি।ক্লাসের সকল মেয়েই এখন জান্নাত জান্নাত করে পাগল।জান্নাত যখন দেখলো সবাই তাকে ভালোবাসছে আর তার কথাই শুনছে তখন সকল স্টুডেন্ট দের সাহায্য নিয়ে জান্নাত স্যারদের রিকুয়েষ্ট করলো যাতে মেয়েদের নামায পড়ার জন্য আলাদা একটা নামাযের ঘর তৈরি করে।স্যার ম্যাডামরা জান্নাতের কথা ফেলতে পারলো না।তারা মেয়েদের জন্য আলাদা একটা নামাযের ঘর তৈরি করে দিলো।জান্নাত ক্লাস টেনেও এক রোল করেছিলো।এইভাবে পর্দার সহিত জান্নাত তার হাইস্কুল লেভেল শেষ করে।সে এখন এস,এস,সি পরীক্ষা দিয়ে বসে আছে।আর সেজন্যই তার বাবা মা বিয়ে দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেছে।তারা গ্রামের বাকি মেয়েদের মতো জান্নাতকেও তাড়াতাড়ি করে বিদায় করতে চায়।তারা ভাবে আর কিছুদিন পরে জান্নাতের বয়স বেশি হয়ে যাবে তখন আর কেউ তাকে বিয়ে করবে না।কিন্তু জান্নাতের বাবা মা বুঝতেই পারছে না জান্নাত অনেক বেশি মেধাবী স্টুডেন্ট।তাকে আরো ভালোভাবে গাইড করলে সে ভালো কিছু করতে পারে।জান্নাতের বাবা মা যাকেই টাকাওয়ালা দেখে তার সাথেই তার বিয়ে ঠিক করতে ধরে।তারা বুঝতেই পারছে না জান্নাতের জন্য এমন এক ছেলে দরকার যে তার মতোই আল্লাহ ভক্ত আর নামাযী হবে।তবে জান্নাতের দাদী এ দিক দিয়ে খুব সচেতন। তিনি যেমন তেমন ছেলের সাথে জান্নাতের বিয়ে কিছুতেই দিতে রাজি নন।তিনি ভালো করে যাচাই করে তবেই জান্নাতের বিয়ে দেবেন।
রুয়েলকে জান্নাতের দাদী সেই ছোটো বেলা থেকেই দেখে আসছে।রুয়েলের আচার আচরণ কথাবার্তা খুবই ভালো লাগে তার।তিনি মনে করেন রুয়েলের সাথে বিয়ে হলে জান্নাত অনেক বেশি হ্যাপি হবে।কারণ তার বিশ্বাস রুয়েল জান্নাতকে অনেক বেশি ভালোবাসবে আর সুখে রাখার চেষ্টা করবে।কারণ রুয়েল বড়দের কে খুব বেশি সম্মান আর শ্রদ্ধা করে।আর ছোটোদের কে খুবই আদর করে।কিন্তু রুয়েলের ভাই আর ভাবী কে ভালো মনে হয় না তার।বিশেষ করে ঊর্মির আচার আচরণ চলাফেরা মোটেও ভালো নয়।এটা ভেবে জান্নাতের দাদী আবার চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন।তিনি তখন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলেন এই বিয়ে টা দেওয়া কি ঠিক হবে?পরে আবার ভাবলেন যে যেমন সে তেমন ভাবে থাকবে।এমনও তো হতে পারে জান্নাতের দেখাদেখি ঊর্মি নিজেকে ঠিক করে নিলো।

তবে রুয়েলের মা ভীষণ ভালো একজন মানুষ। তিনিও নামায কালাম পড়েন।একসময় তার সাথে খুব ভাব ছিলো জান্নাতের দাদীর।কিন্তু শহরে চলে যাওয়ার পর থেকে আর দেখা হই নি তার সাথে।
অন্যদিকে রুয়েল যখন তার মাকে জান্নাতের কথা বলেছিলো,রুয়েলের মা জান্নাতের পরিচয় শোনামাত্র সাথে সাথে হ্যাঁ করে দেয়।কারণ তিনিও জান্নাতের দাদী আর দাদু সম্পর্কে ভালো করেই জানেন।রুয়েল সেজন্যই আরো বেশি আগ্রহী হয় জান্নাতের প্রতি।কারণ রুয়েল তার মাকে অসম্ভব ভালোবাসে।সে জানে তার মা সবসময় তার ভালোই চায়।আর এবার রুয়েল দেশে এসেছে শুধুমাত্র তার মায়ের জন্যই।তার মা তাকে এজন্যই দেশে আসতে বলেছে,যাতে রুয়েল এবার বিয়েটা করে।বয়স তো অনেক হলো।কিন্তু রুবেল আর ঊর্মি রাজি ছিলো না।তাদের ইচ্ছা ছিলো রুয়েল আরো কিছু বছর পর বিয়েটা করলে ভালো হতো।

আসরের নামায পড়া শেষ করে জান্নাত আর তার দাদী শুয়ে থেকে গল্প করছে।আর তখনি জাহান এসে খবর দিলো রুয়েলের পুরো পরিবার তাদের বাড়ির দিকেই আসছে।জাহান বাড়ির বাহিরে আম পারছিলো, সে সবাইকে দেখামাত্র তাড়াতাড়ি করে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে।
জান্নাতের দাদী রুয়েলদের কথা শুনে ভীষণ অবাক হয়ে গেলেন।কারণ ওদের তো আজকে আসার কথা ছিলো না।জহির তো ওদের আসার ব্যাপারে কিছুই বলে নি।তাহলে হঠাৎ আজকেই কেনো এসেছে সবাই?
#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_০৭
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

আমি এই ছেলেকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না।তোমরা বুঝতে কেনো পারছো না।কেনো বার বার ঘুরেফিরে এই ছেলেকেই আনছো?এই ছেলে নামায কালাম কিছুই পড়ে না।তাছাড়া মুখে কোনো দাঁড়িও নাই।তোমরা পড়ে আছো তার আচার আচরণ নিয়ে?সে যেমনই হোক এই ছেলেকে আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না?এই ছেলের সাথে আমার বিয়ে তোমরা ভাবলে কি করে?আমার বাবা মা না হয় বোঝে না আমাকে,কিন্তু তুমি তো বোঝো দাদী?
কথাগুলো বলছে আর কাঁদছে জান্নাত।সে ভাবতেই পারে নি আজকেই তার বিয়ে হবে।সেটাও আবার সেই ছেলের সাথে যে ছেলে তার থেকে ২০ বছরের বড়।

জান্নাতের দাদী নিজেও বুঝে উঠে পারছেন না কি করবেন তিনি?রুবেল আর ঊর্মি খবর না দিয়েই এসেছে,আর এসেই বলছে আজকেই বিয়ে হবে।জান্নাতের আব্বু তো বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়াও শুরু করে দিয়েছে।আর জান্নাতের দাদীকে বলেছে যেভাবেই হোক জান্নাতকে রাজি করাতে।জান্নাতের দাদী সেজন্য জান্নাতকে বোঝাতে লাগলো।কিন্তু জান্নাত বুঝতেই চাচ্ছে না।সে শুধু কান্নাকাটি করছে।

হঠাৎ হিয়া আর হৃদয় প্রবেশ করলো জান্নাতের রুমে।তারা তাদের নতুন চাচীকে দেখতে এসেছে।এদিকে তো জান্নাত কেঁদেই চলেছে।দাদী তা দেখে জাহান কে বললো পিচ্চি দুইটিকে নিয়ে আপাতত বাহিরে যা।আমি জান্নাতকে রেডি করছি।জাহান দাদীর কথা শুনে পিচ্চি দুইটিকে নিয়ে বাহিরে চলে গেলো। এদিকে দাদী জান্নাতের জন্য নতুন একটা বোরকা বের করলো আর জান্নাতকে বললো,তাড়াতাড়ি পড়ে নে বোরকাটা।তোর যেভাবে মন চায় সেভাবেই সাঁজ আজকে।বোরকা নিকাব যা পড়তে মন চায় সেটাই পড়।তবুও আজ তোকে ওদের সামনে যেতেই হবে।কান্দাকাটি করে কোনো লাভ নাই।তোর বাবা বিয়ের আয়োজন শুরু করে দিয়েছে।ভাগ্যকে মেনে নে জান্নাত।রুয়েলের সাথেই হয়তো তোর লেখিত আছে সেজন্য ওরা এভাবে হঠাৎ এসেই আজকেই বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে।

জান্নাত তখন বললো,আমি মানি না এসব।তুমি গিয়ে বলে দাও মেয়ে রাজি নয় বিয়েতে।আমি ওই বুড়ো ছেলেকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।
দাদী সেই কথা শুনে বললো, কে বললো বুড়ো?মাত্র ৩৫ বছর।আর ছেলেদের ওরকম একটু বয়স হয়।ছেলেরা তো আর ২০ বছরেই বিয়ে করতে পারে না।তাদের তো বউ বাচ্চা কে খাওয়ানোর জন্য আয় রোজকার করতে হয়।

জান্নাত তখন বললো, ৩৫ বছর তোমার কাছে মাত্র মনে হচ্ছে।দুই যুগ পার করে এসেছে।আর আমার বয়স মাত্র ১৫.তোমরা কি করে এটা মেনে নিচ্ছো?না আমি মানি না এই বিয়ে।

দাদী তখন বললো, বিয়ের পর বউ যাতে আরাম আয়াশে থাকতে পারে,ভালোমন্দ খেতে পারে,রুয়েল সেজন্য সবকিছু করেই বিয়ে করছে।বাড়ি গাড়ি করা তো আর মুখের কথা নয়।এসব করতে তো সময় লাগে।এজন্য ওর বয়স একটু বেশি হয়েছে।তুই আর এরকম পাগলামি করিস না।অনেক সুখে থাকবি দেখিস।তাছাড়া বেশি বয়সের ছেলেরা বউদের অনেক বেশি ভালোবাসে।তোকে অনেক বেশি ভালোবাসবে সে।এই তুই একদিন আমাকে বলবি, দাদী তুমি যা যা বলেছো সব সত্যি বলেছো।আজ রুয়েলকে বিয়ে করে ধন্য আমি।

জান্নাত তখন চিৎকার করে বললো, জীবনেও বলবো না।তোমরা যদি জোর করে এভাবে আমাকে ওই ছেলের সাথেই বিয়ে দাও তাহলে কিন্তু আর জীবনেও আসবো না তোমাদের বাড়িতে।তোমাদের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিবো।

দাদী সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো, আচ্ছা আচ্ছা দিস।আর আসবিই বা কেনো?স্বামীকে রেখে তুই নিজেই আসতে চাইবি না।যখন বিয়ে হবে তখন বুঝবি স্বামীর গুরুত্ব।বিয়ে হলে তুই তো সারাক্ষণ স্বামীর সেবা করা নিয়েই ব্যস্ত থাকবি।তখন কি আর আমাদের বাড়ি আসতে মন চাইবে!

জান্নাত তার দাদীকে বোঝাতেই পারছে না।সে যতই না না করছে তার দাদী ততই এক গাদা কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে চলছে ব্যাপারটা।জান্নাত বলছে সে রুয়েলকে বিয়ে করবে না আর দাদী তাকে স্বামীর গুরুত্ব বোঝাচ্ছে।সে তো এসব জানেই,
একজন নারী যখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায ঠিকভাবে আদায় করবে,রমজানের রোজা রাখবে,আপন লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে,পর্দার সহিত চলবে এবং স্বামীর আনুগত্য থাকবে,স্বামীর সেবায় সর্বদা নিয়োজিত থাকবে তখন সেই নারী জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে(সহিহ ইবনে হিব্বান,হাদিস ৪১৬৩)
সেই জন্য জান্নাত এমন এক জীবন সঙ্গীকে চায় যে তার একদম মনের মতো হবে।রুয়েল তো কোনো দিক দিয়েই তার মনের মতো নয়।জান্নাত নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো,রুয়েলের সাথেই যখন তার বিয়ে হবে তাহলে কেনো সে রোজ রোজ সুদর্শন চাপ দাঁড়িওয়ালা যুবক কে স্বপ্নে দেখে।যে তার মনের মধ্যে একদম গেঁথে আছে।সেই যুবকের রেশ জান্নাত কাটিয়ে উঠতেই পারছে না।সে ভেবেছিলো এমন সুদর্শন যুবকই হয়তো তার স্বামী হবে।আর জান্নাত তার জীবনের চেয়েও তাকে অনেক বেশি ভালোবাসবে আর শ্রদ্ধা করবে।

এদিকে রুয়েল নিজেও ভীষণ অবাক হলো।তার ভাই আর ভাবি যে এভাবে তাকে সারপ্রাইজ দিবে সত্যি সে ভাবতে পারছে না।রুয়েল ভাবতেও পারছে আজ জান্নাতের সাথে তার বিয়ে।যে জান্নাতকে এক নজর দেখার জন্য সে ছটফট করছে দিনরাত।কিন্তু রুয়েলের এরকম লুকোচুরি বিয়ে মোটেও পছন্দ না।সে ধুমধামে বিয়ে করতে চায়।তাছাড়া তার বন্ধুদের কে না জানিয়ে সে আজকেই কিভাবে বিয়ে করবে।
হঠাৎ রুয়েলের মনে আরেকটা প্রশ্ন জাগলো।সে তো জান্নাতকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছে।কিন্তু জান্নাত কি তাকে বিয়ে করতে চায়?জান্নাতের মনে কি চলছে তা জানা দরকার।এজন্য রুয়েল ঠিক করলো বিয়ের আগে জান্নাতের সাথে সে কথা বলতে চায়।জান্নাতের মুখেই সে শুনতে চায় সে এই বিয়ে তে রাজি আছে কিনা?

রুয়েলের এমন প্রস্তাব শুনে জান্নাতের আব্বু বললো,আচ্ছা ঠিক আছে।আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি জান্নাতকে।এই বলে জহির জান্নাতের রুমে চলে গেলো।জান্নাত এখনো কাঁদছে।আর তার দাদী তাকে শান্ত্বনা দিচ্ছে।জহির তখন তার মাকে বললো,মা আপনি কিছুক্ষনের জন্য একটু রুম থেকে চলে যান।আমি জান্নাতের সাথে একাকী ভাবে কিছু কথা বলতে চাই।জহিরের কথা শুনে জান্নাতের দাদী রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
জান্নাতের আব্বু তখন জান্নাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,মা জান্নাত কাঁদছিস কেনো এতো?কাঁদার কি হয়েছে?আমরা তো সবসময় তোর ভালোই চাই।আমরা কি তোর খারাপ চাইবো কখনো?তোর সুখের জন্যই আমি রুয়েলের সাথে বিয়েটা ঠিক করেছি।

জান্নাত তার আব্বুর এমন শান্ত কন্ঠ শুনে তাজ্জব লেগে গেলো।যে মানুষ সবসময় কর্কশ ভাষায় কথা বলতো তার কন্ঠ হঠাৎ করে এতো শান্ত হয়ে গেলো কেমনে?
জান্নাত তার বাবার ছলছল চোখ দুটির দিকে তাকিয়ে আছে।তার বাবা কাঁদছে!যতই হোক নিজের মেয়ে তো?মেয়ের বিয়ের কথা শুনে কোনো বাবাই ঠিক থাকতে পারে না।
হঠাৎ জহির সাহেব নিজের চোখের পানি মুছিয়ে বললো,রুয়েল যথেষ্ট ভালো ছেলে।সেই ছোটোকাল থেকে দেখে আসছি ছেলেটাকে।এরকম ভালো আর ভদ্র ছেলে একটাও নাই।এজন্যই তো ওর চাচা বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সাথে সাথে আমি রাজি হয়ে যাই।ওরা যে আমাদের ঘরে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে সেটা অনেক বড় এক সৌভাগ্য আমাদের।রুয়েলের দাদারা একসময় এই গ্রামে রাজত্ব করেছে।খুবই নামি-দামি বংশ ওদের।তুই আর না করিস না মা।বিয়েতে রাজি হয়ে যা।রুয়েল তোর সাথে কথা বলতে চায়,দয়া করে কোনো উল্টোপাল্টা কথা বলবি না।এই বলে জান্নাতের আব্বু চোখ মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

জান্নাত অবাক নয়নে তার বাবার চলে যাওয়া দেখতে লাগলো।সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো এই বিয়ে নিয়ে আর কিছু বলবে না সে।তার বাবা এতো বেশি তাকে ইমোশনাল করে দিলো যে সে আর কিছুই বললো না বিয়ের ব্যাপারে।
জান্নাতের দাদী আবার আসলো জান্নাতের রুমে।আর বললো জান্নাত রুয়েল তোর সাথে কথা বলার জন্য আসছে।জান্নাত সেই কথা শুনে বোরকার উপরে হিজাব আর নিকাব টা পড়ে নিলো।জান্নাতের দাদী এ নিয়ে আর কোনো কথা বললো না।জান্নাত সেজন্য নিচ মুখ হয়ে বসে থাকলো।

কিছুক্ষন পরে রুয়েল প্রবেশ করলো জান্নাতের রুমে।জান্নাত রুয়েলকে আসা দেখে দাঁড়িয়ে গেলো আর নিচ মুখ হয়েই সালাম দিতে ধরলো কিন্তু তার আগেই রুয়েল বললো, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনি?
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে নিচ মুখ হয়েই বললো ওয়ালাইকুম আসসালাম,আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
জান্নাত ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।একা একটা ঘরে অচেনা ছেলের সাথে সে।জান্নাত এদিক ওদিক না তাকিয়ে পাথরের মত চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।রুয়েল তখন বললো,আমাকে জিজ্ঞেস করলেন না আমি কেমন আছি?
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে নিচ মুখ হয়েই বললো, আপনি কেমন আছেন?
রুয়েল শান্তভাবে উত্তর দিলো,জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, আমিও ভালো আছি।এই বলে রুয়েল জান্নাত কে বললো,আমরা কি এভাবে দাঁড়িয়েই কথা বলবো?

জান্নাত তখন কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,বসুন প্লিজ।রুয়েল জান্নাতের কথা শুনে বিছানায় বসলো।কিন্তু জান্নাত এখনো দাঁড়িয়েই আছে।সেজন্য রুয়েল চেয়ারটা এগিয়ে দিয়ে বললো, আপনিও বসুন।জান্নাত রুয়েলের কথা শুনেও বসলো না।সে আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলো।রুয়েল তা দেখে নিজেও দাঁড়িয়ে গেলো।আর বললো,ওকে ঠিক আছে।তাহলে দাঁড়িয়েই কথা বলি।জান্নাত তখন তাড়াতাড়ি করে চেয়ারটাতে বসলো।রুয়েল নিজেও আর সময় নষ্ট না করে চুপচাপ বসে পড়লো।
রুয়েল লক্ষ্য করলো জান্নাতের হাত ঠকঠক করে কাঁপছে।আর সে একটিবার তার দিকে তাকাচ্ছেও না।সেজন্য রুয়েল বললো,আপনি কি আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছেন?ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।আপনার চেহারা আমি দেখতে চাইবো না।আমি জানি আপনি কোনো ছেলের সামনে নিজের চেহারা কখনোই উন্মুক্ত করেন না।আমি জাস্ট কয়েকটা প্রশ্ন করবো।আপনি নিশ্চয় জানেন আপনার সাথে আমার আজ বিয়ে।আপনি কি এই বিয়ে তে রাজি আছেন?

জান্নাত কোনো কথা না বলে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো যে সে রাজি আছে।রুয়েল তা দেখে বললো,না,না এভাবে বললে হবে না।আমার দিকে তাকিয়ে নিজের মুখে বলতে হবে।

জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে বললো,জ্বি রাজি আছি।

রুয়েল তখন বললো,আলহামদুলিল্লাহ খুশি হলাম।তবে আরো বেশি ভালো লাগতো যদি আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলতেন।আপনার উত্তর দেওয়া দেখে মনে হচ্ছে আপনি কারো চাপে পড়ে বলছেন কথাটা।আপনি আমার সাথে ফ্রি মাইন্ডে কথা বলতে পারেন।আমি কিছু মনে করবো না।

জান্নাত এই কথা শোনামাত্র সাথে সাথে তার মাথাটা উপরে তুললো।আর রুয়েলের দিকে তাকালো।কিন্তু রুয়েলের দিকে তাকাতেই জান্নাত সাথে সাথে তার চোখ ফিরে নিলো।সে কিছুতেই রুয়েলের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছিলো না।সেজন্য সে আবার নিচ মুখ হয়ে থাকলো।
তবে জান্নাত একদম আশ্চর্য হয়ে গেলো রুয়েলকে দেখে।সে তো ভেবেছিলো ৩৫ বছরের রুয়েলের মাথায় মনে হয় একটাও চুল নাই,পেটটা মনে হয় ফুটবলের মতো গোল।আর দেখতে একদম গোলগাল আর মোটাসোটা হবে।কিন্তু এ ছেলে তো দেখি পুরাই উলটো।রুয়েলের মাথার চুল একদম কুঁচকুচে কালো আর ঘন।পেটে কোনো মেদ নাই।হাইট প্রায় ৫”৯ এর মতো হবে।তবে বয়স একটু বেশি হওয়াই চোখের নিচে একটু কুঁচকে গেছে।তবুও একদম হ্যান্ডসাম লাগছিলো রুয়েলকে।গায়ের কালার একদম ধবধবে সাদা।জান্নাত মনে মনে রুয়েলকে দাঁড়িসহ কল্পনা করলো।আর ভাবতে লাগলো এই রুয়েলই সেই যুবক টি নয় তো,যাকে সে স্বপ্নে দেখতো।
জান্নাত বুঝতে পারলো রুয়েল ইয়ং কালে অনেক বেশি সুন্দর ছিলো।কিন্তু আফসোস রুয়েল যখন তরুন ছিলো তখন জান্নাতের জন্মই হয় নি।
জান্নাত রুয়েলের এমন সৌন্দর্য দেখে একদম চুপ হয়ে থাকলো।কারন রুয়েল তো তার থেকেও অনেক বেশি সুন্দর।
হঠাৎ রুয়েল জিজ্ঞেস করলো,আপনি এভাবে চুপচাপ হয়ে আছেন কেনো?কিছু তো বলেন।

জান্নাত তখন নিচ মুখ হয়েই জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি নামায পড়েন?
–নিয়মিত পড়ি না।
–কেনো পড়েন না?
রুয়েল তখন বললো,হ্যাঁ অবশ্যই পড়বো।নিজেকে চেঞ্জ করার চেষ্টা করবো।তবে কেউ একজন নিয়মিত নামায পড়ার জন্য বললে হয়তো রেগুলারই পড়তাম।কিন্তু আফসোস! কেউ বলে না। কেউ বলে না রুয়েল নামাযের টাইম হয়ে গেছে। সেজন্য মাঝে মাঝে পড়ি আবার মাঝে মাঝে ভুলে যাই।
জান্নাত এই কথা শোনামাত্র রুয়েলের দিকে আরেকবার তাকালো।সে ভাবতেই পারে নি রুয়েল এতো সুন্দর করে কথাও বলে।রুয়েলও তাকিয়ে আছে জান্নাতের দিকে।জান্নাত সেজন্য সাথে সাথে তার চোখ ফিরিয়ে নিলো।
রুয়েল তখন জিজ্ঞেস করলো আর কিছু জানার আছে?
–হ্যাঁ আছে।আপনার মুখে কোনো দাঁড়ি নাই কেনো?

রুয়েল তখন নির্দিধায় বললো,খুব খুশি হলাম প্রশ্ন টা শুনে।আপনি তাহলে আমাকে ভালোভাবেই পর্যবেক্ষণ করেছেন।
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে ভীষণ লজ্জা পেলো।

রুয়েল তখন বললো,আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন কথা টা শুনে।মজা করে বলেছি কিন্তু।আপনি তো আমার দিকে ঠিক করে তাকানি নি।
তবে দাঁড়ির কথা যখন বললেন ই তখন আমি বলবো বিয়ের পর রাখবো ইনশাআল্লাহ।

রুয়েলের কথাবার্তা শুনে জান্নাত একদম তাজ্জব লেগে গেলো।সে কখনোই ভাবে নি রুয়েল তার সাথে এতো সুন্দর করে গুছিয়ে গুছিয়ে কথা বলবে।জান্নাত তো রুয়েলের কথাবার্তা শুনে আরো বেশি পাগল হয়ে গেলো।কোনো ছেলেমানুষ যে এতো সুন্দর করে কথা বলতে পারে তার এটা জানা ছিলো না।

হঠাৎ দাদী প্রবেশ করলো রুমে আর জান্নাত কে এখনো নিকাব পড়া দেখে বললো, তুই এখনো নিকাব খুলিস নি?আজ তোদের বিয়ে। আর তুই এখনো মুখ চোখ ঢেকে আছিস?
জান্নাত তার দাদীর কথা শুনে মনে মনে ভাবলো এখন নিকাব টা তার খোলা উচিত। যেহেতু আজ তাদের বিয়ে সেহেতু রুয়েলের তো তার বউ এর মুখ দেখার অধিকার আছে।তারও তো পছন্দ অপছন্দের একটা ব্যাপার আছে।রুয়েলের তো তাকে ভালো না ও লাগতে পারে।

কিন্তু হঠাৎ রুয়েল জান্নাতকে অবাক করে দিয়ে বললো, খুলতে হবে না নিকাব।বিয়ে তো এখনো হয় নি।আমি এখনো পরপুরুষ ই আছি।
তাছাড়া যখন বিয়ে হবে তখন তো রোজ রোজই দেখবো।বউ টা তো আমারই হবে!তাহলে না হয় বিয়ের পরই রাজকুমারীর মুখখানা দেখি।এই বলে রুয়েল মুচকি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।

রুয়েলের এমন কথা শুনে জান্নাত একদম লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।ওদিকে দাদী শুধু হাসছে।

#চলবে,
#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here