আলো আধারের খেলা পর্ব -০৪+৫

#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_০৪
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

জহির(জান্নাতে আব্বু)বাড়ি আসতেই জান্নাতের আম্মু বললো,রুয়েলরা আজও এসেছিলো জান্নাতকে দেখতে।মনে হয় ছেলেটা জান্নাতকে পছন্দ করেছে।ওর ভাই কি বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলেছিলো আপনাকে?

জহির এই কথা টা শোনামাত্র ভীষণ রেগে গেলেন।তিনি চিৎকার করে বললেন,কেনো এসেছিলো এ ছেলে?খবরদার ও ছেলে যেনো আর কোনোদিন বাড়ির মধ্যে ঢুকতে না পারে।
জান্নাতের আম্মু ভীষণ অবাক হলেন।হঠাৎ জান্নাতের আব্বুর কি হলো?তিনি রুয়েলের উপর এতো রেগে আছেন কেনো?তিনি তো রুয়েলের সাথে জান্নাতের বিয়ে দেওয়ার জন্য খুবই আগ্রহী। তাহলে আজ হঠাৎ কি হলো ওনার?
জান্নাতের আব্বুর রাগ দেখে তিনি আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।কারণ জান্নাতের আব্বুর রাগ উঠলে ভয়ে কেউ আর কথা বলে না ওনার সাথে।

এদিকে জান্নাতের দাদীও এগিয়ে আসলেন।আর তিনি এসেই সেম প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন,বাবা?রুবেল(রুয়েলের ভাই) কি তোকে কিছু বলেছে।না মানে রুয়েল কেনো জানি আজও এসেছিলো আমাদের বাড়িতে।
জান্নাতের আব্বু সেই কথা শুনে বললো, তোমরা কি শুরু করেছো বলোতো?বাসায় ঢুকতেই কেনো ওই বেঈমানদের নাম নিচ্ছো?
জান্নাতের দাদী বুঝতে পারলো কিছু তো হয়েছে তা না হলে জহির এতো রেগে আছে কেনো?কেনো রুয়েলদের কথা শুনতেই পারছে না।
হঠাৎ জহির নিজেই জিজ্ঞেস করলেন,জান্নাত আবার ওদের সামনে যায় নি তো?
দাদী তখন বললো না না যায় নি।তোর মেয়ে কেমন তা তো ভালো করেই জানিস।তুই না বললে সে কি কোনো দিন কোনো ছেলের সামনে যাবে?
–ভালো করেছে।
এই বলে জান্নাতের আব্বু জান্নাতের আম্মুকে বললো,তাড়াতাড়ি ভাত দাও আমাকে।দোকানে যেতে হবে।সেই কথা শুনে জান্নাতের আম্মু ভাত বাড়তে গেলেন।
এদিকে জহির বিড়বিড় করে বকতে লাগলো রুয়েলের চাচাকে।
শালা, আমি তোকে বলেছি,না তুই বলেছিস তোর মেয়ে জান্নাতকে আমাদের রুয়েলের জন্য নিতে চাই।খবরদার অন্য কোথাও বিয়ে দিবি না মেয়েকে।আর এখন তুই নিজেই আবার অন্য মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করেছিস?

জান্নাতের দাদী তখন তার ছেলের হাত ধরে বললো, বাবা!কি হয়েছে?এতো রেগে আছিস কেনো?
–সে কথা আর বলো না মা।সেদিন যে ওরা জান্নাতকে দেখতে এলো ভালোমন্দ কিছু বলবে তো?কিছুই বলে নি।আজ শুনি রুয়েলের বিয়ে ঠিক ও হয়েছে।রুয়েলের চাচাই ঠিক করেছে।আর কালকে এনগেজমেন্ট।ওরা যখন অন্য মেয়ের সাথেই বিয়ে দেবে তাহলে আমার মেয়েকে কেনো দেখতে আসলো?
–কি বলিস এসব?বিয়েও ঠিক হয়েছে?তাহলে রুয়েল আজ এসেছিলো কেনো?আমি তো ভেবেছি জান্নাত কে দেখার জন্যই এসেছে।
–বাদ দাও তো ওদের কথা।ও ফ্যামিলিতে গেলে জান্নাত নিজেকে মানিয়ে নিতেও পারতো না।ভাগ্যিস হয় নি বিয়েটা।শুধু টাকা দেখলেই হবে না,ফ্যামিলির সকল সদস্যের আচার আচরণ ও দেখতে হবে।
–সেটাই তো।রুবেলের বউ ঊর্মির সাথে জান্নাতের কখনোই মিলতো না।ঊর্মি যেভাবে চলাফেরা করে তার ছেলে মেয়েগুলোও তেমনি হয়েছে।তবে রুয়েলের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্তে বিয়েটা দেওয়া যায়।রুয়েলের আচার আচরণ আর কথাবার্তা অনেক ভালো লাগে আমার।সেজন্য রাজি ছিলাম আমি।

এদিকে জাহান দৌঁড়ে গিয়ে জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে বললো, আপু এ যাত্রায় বেঁচে গেলি রে।বিয়েটা ক্যান্সেল হয়ে গেছে। সত্যি করে বল তো বিয়ে ভাংগার জন্য আল্লাহর কাছে কিভাবে দোয়া করেছিস?
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, সত্যি বিয়ে ভেংগে গেছে?আল্লাহ আমার কথা তাহলে শুনেছে।আমি জানতাম আমার দোয়া কখনোই বিফলে যাবে না।
জাহান সেই কথা শুনে বললো,তাহলে কি তুই কখনোই বিয়ে করবি না?যখনই কোনো বিয়ের ঘর আসে তখনি তুই শুধু না না করিস।তাদের সামনে যেতে চাস না।
–করবো না কেনো?অবশ্যই করবো।তবে ছেলেটাকে তো আমার লেভেলের হতে হবে।আমার মতো আল্লাহ ভক্ত হতে হবে।নামায কালাম পড়তে হবে।আমার কদর বুঝতে হবে।আমি যেভাবে চলাফেরা করি কখনোই তাতে বাঁধা দেওয়া যাবে না।
জাহান সেই কথা শুনে বললো, তবে রুয়েল ভাইয়াকে তোর সাথে কিন্তু হেব্বি মানাতো।যদি শুধু একনজর দেখতি আর না করতিস না।আমার কিন্তু খুব ভালো লেগেছে।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, এসব বিদেশ থাকা ছেলেদের মোটেও আমার পছন্দ না।যখনই শুনেছি ছেলে বিদেশ থাকে তখনি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই ছেলেকে কখনোই বিয়ে করবো না।যাক আল্লাহ এ যাত্রায় আমাকে বেঁচে দিলো।কবে যে রেজাল্ট টা বের হবে।আর কবে যে কলেজে ভর্তি হবো?বাড়িতে যতই বসে থাকবো ততই আব্বু আর আম্মু এভাবে বিয়ের জন্য তাড়া করবে।
জাহান তখন বললো,ধর পরের বার কোনো হুজুর ছেলে আসলো বিয়ে করতে তখন নিশ্চয় রাজি হবি?তখন তো আর না করবি না?
জান্নাত সেই কথা শুনে জাহানের মাথায় একটা চড় দিয়ে বললো, তুই যাবি এখন।আমার বিয়ে নিয়ে তোকে এতো ভাবতে হবে না।জাহান সেই কথা শুনে বললো, ভাবতে হবে না মানে!একশবার ভাবতে হবে।হাজারবার ভাবতে হবে।তোর বিয়ে খাওয়ার জন্য আমি এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি।কত আনন্দ করবো?কিভাবে সাঁজবো সব প্লান করে রেখেছি।কিন্তু বিয়ে টাই আর হচ্ছে না।
জাহানের কথা শুনে জান্নাত হাসতে লাগলো।এই মেয়ে আর কখনোই ভালো হবে না।

গভীর রাতে জান্নাতের ঘুম ভেংগে গেলো।এই সময়ে সে রেগুলার জাগা পায়।কারন সে এই সময়ে প্রতিদিন তাহাজ্জুদের নামায পড়ে।তবে ইদানীং এই সময়ে সে একটা স্বপ্ন প্রতিদিন দেখছে।জান্নাত বুঝতে পারছে না কিছু।সে কেনো দেখছে স্বপ্নটা?
এক সুদর্শন যুবক নামাযের ওযু করছে।আর জান্নাত ঘটি থেকে তাকে পানি ঢেলে দিচ্ছে।ছেলেটির গায়ের রং ধবধবে সাদা। আর পুরো মুখে চাপদাঁড়ি।ছেলেটি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো তাকাও আমার দিকে।জান্নাত যুবকটির দিকে তাকাতেই তার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।সে সাথে সাথে জাগা পায়।

——— ——— ——— ——— ——— ——— ——— ————- ——— ——— ——— ——— ——— ———- আজ রুয়েল আর রাইসার এনগেজমেন্ট।সেজন্য ঊর্মি(রুয়েলের ভাবী) আর হিয়া (ভাতিজি) পার্লার থেকে সেজে এসেছে।তারা এমনভাবে সেজেছে যে তাদের চেনাই যাচ্ছে না।ঊর্মি খুবই স্টাইলিশ মেয়ে।সে কখনোই বোরকা পড়ে না।আর খুবই বেপরোয়া জীবনযাপন করে।ঊর্মির মতো তার মেয়েটাও হয়েছে।এমন সব ড্রেস পড়ে যে খুবই বাজে লাগে দেখতে।রুবেল কখনোই নিষেধ করে না।কারণ সে মনে করে এসব ড্রেস আধুনিক যুগের স্টাইল। তাদের টাকা আছে দেখেই তো এসব ড্রেস কিনতে পারে।
ঊর্মি আর হিয়ার আজ খুশির সীমা নাই।অনেক বেশি আনন্দ হচ্ছে তাদের।
এদিকে রুয়েল সাজগোছ করা বাদ দিয়ে চুপচাপ মোবাইল হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।সে এখন পর্যন্ত কাউকে বলতে পারে নি যে জান্নাতকে সে বিয়ে করতে চায়।
হঠাৎ হৃদয় (ভাতিজা) প্রবেশ করলো রুয়েলের রুমে আর এসেই বললো,চাচ্চু কখন রেডি হবে তুমি?আমরা তো সবাই রেডি হয়ে বসে আছি।
রুয়েল সেই কথা শুনে বিছানায় শুয়ে থেকেই বললো, আমি যাবো না কোথাও।

রুয়েলের এই কথা শোনামাত্র হৃদয় দৌঁড়ে গিয়ে তার বাবাকে বললো,আব্বু!চাচ্চু নাকি যাবে না কোথাও।রেডি না হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
রুবেল সেটা শোনামাত্র সোজা রুয়েলের রুমে চলে গেলো।আর বললো, কি বলছিস পাগলের মতো।যাবি না মানে?
–আসলে ভাইয়া আমি রাইসাকে বিয়ে করতে মোটেও আগ্রহী না।আমার ভালো লাগে নি ওই মেয়েকে।

রুবেল এই কথাটা শোনামাত্র ভীষণ রেগে গেলো।সে চিৎকার করে বললো,তোর কেমন মেয়ে পছন্দ একবার বলবি কি? এ যাবৎ যতগুলো মেয়ে দেখলাম একটা মেয়েও নিন্দা করার মতো ছিলো না।তবুও শুধু না না করছিস।তুই কি তাহলে বিয়ে করতে চাস না।

রুয়েল সেই কথা শুনে সোজা বলে দিলো, জান্নাতকে আমার ভালো লেগেছে।তোমরা ওকে দেখতে পারো।

রুবেল জান্নাতের নাম শোনামাত্র এতো বেশি রেগে গেলো যে ওর চিৎকার শুনে সবাই এসে হাজির হলো রুয়েলের রুমে।রুবেলকে এমন রাগান্বিত দেখে ঊর্মি বললো কি হয়েছে?এতো রেগে আছো কেনো?
রুবেল তখন রাগান্বিত লুকে বললো,ও নাকি জহিরের মেয়েকে বিয়ে করবে।ওটা কোনো মেয়ে হলো নাকি?আমাদের ফ্যামিলির সাথে ওদের ফ্যামিলি মিলবে কখনো?কোন দুঃখে যে নাদিম চাচার কথা শুনে ওই বাড়িতে গিয়েছিলাম!
এই বলে রুবেল রুয়েলের একদম নিকটে চলে গেলো,আর বললো আমরা সবাই মিলে যাকে চুজ করেছি তাকেই বিয়ে করতে হবে। আমাদের পরিবারে কাকে মানাবে সেটা তোর থেকে আমরা ভালো জানি।আর একটা কথাও হবে না।চুপচাপ রেডি হয়ে নে।এই বলে রুবেল রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

রুবেল রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে ঊর্মি রুয়েলকে বোঝাতে লাগলো।এভাবে জিদ করিস না রুয়েল।তোর চাচা আর ভাই কথা দিয়েছে ওদের।এখন যদি না করিস বিয়েটা তখন কি মানসম্মান থাকবে ওনাদের।তোর ভাই এর তো কখনো অবাধ্য হস নি।তাহলে আজ এরকম করছিস কেনো?রুয়েলের মাও সেম কথা বললো।তোর ভাই কি তোর খারাপ চেয়েছে কখনো?তাহলে আজ এরকম করছিস কেনো?তোর সাথে যাকে মানাবে,আমাদের ফ্যামিলিতে যাকে মানাবে তাকেই ঠিক করেছে সবাই।

রুয়েল আর একটা কথাও বললো না।সে চুপচাপ রেডি হয়ে নিলো।আজ তার বন্ধুরা কেউ আসে নি।কারণ রুয়েল বলেছে সে কিছুতেই আজ এনগেজমেন্ট পার্টিতে যাবে না।সুতরাং তোরাও কেউ আসবি না।

রুয়েল কখনোই তার ভাই এর মুখে মুখে এভাবে কথা বলে নি।তার ভাই যা যা বলে সে সেটাই শোনে।ভাইকে বাবার আসনে বসিয়ে দিয়েছে রুয়েল।ভাইকে সে বাবার মতোই শ্রদ্ধা করে।কারন তার বাবার মৃত্যুর পর ভাই ই বাবার আদর দিয়েছে।

রুয়েলের বাবা হাফিজ সিঙ্গাপুরে ব্যবসা করতেন।তার নিজস্ব একটা গ্লাসের দোকান ছিলো।ব্যবসা অনেক ভালোই চলছিলো।কিন্তু হাফিজ একা একা সামলাতে পারছিলো না।সেজন্য হাফিজ তার বড় ছেলে রুবেলকে নিয়ে যায়।এভাবেই চলছিলো তাদের ব্যবসা।হঠাৎ হাফিজ মারা যায়।সেজন্য ব্যবসা সামলানোর পুরো দায়িত্ব রুবেলের কাঁধে পড়ে।রুবেল একা হাতে ব্যবসা সামলাতে থাকে।আর রুয়েল রা রাজার মতো চলাফেরা করে দেশে।তখন রুয়েল মাত্র ক্লাস এইটে পড়ে।
কিন্তু পাঁচবছর পর রুবেল রুয়েলকেও নিয়ে যায় সিংগাপুরে। রুবেল আর রুয়েল দুই ভাই খুব ভালোভাবে সামলাচ্ছিলো তাদের ব্যবসা।কিছুদিনের মধ্যে তারা অনেক সম্পত্তির মালিক হয়।
কিন্তু রুবেলের বউ ঊর্মি হঠাৎ পরকিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে।সেজন্য রুবেল ভীষণ ভেংগে পড়ে।সে ঊর্মিকে ডিভোর্স দিতে চায়,সেজন্য দেশে চলে আসে।
সম্পর্কে আবার রুবেলের ফুপাতো বোন হয় ঊর্মি।ডিভোর্সের কথা শুনে রুবেলের ফুফু রুবেলের পায়ে পড়ে কাঁদতে থাকে।এবারের মতো যেনো সে ঊর্মিকে ক্ষমা করে দেয়।ও ছোটো মানুষ। বোঝে না কিছু।ঊর্মি তখন মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে।এইভাবে সবাই যখন রুবেল কে বোঝাতে লাগলো রুবেল আর না করতে পারলো না।সে ঊর্মিকে ক্ষমা করে দিলো।আর ওকে নিয়েই সংসার করতে লাগলো।ঊর্মি ছিলো অনেক বেশি সুন্দরী। ওর মতো সুন্দর আশেপাশে একজনও ছিলো না।রুবেল ঊর্মিকে নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেছে।এইজন্য রুবেল দেশেই রয়ে গেলো।সে আর বিদেশ গেলো না।

এদিকে রুয়েল একাই থেকে গেলো সিংগাপুরে।আর তার বাবার ব্যবসা টা সামলাতে লাগলো।এইভাবে রুবেল ঊর্মির সাথে ভালোভাবেই সংসার করতে লাগলো।তাদের দুইটা বাচ্চাও হলো।অন্যদিকে রুয়েল কষ্ট করে রোজগার করে দেশে টাকা পাঠাতে লাগলো।রুয়েল কখনোই রুবেল কে এ নিয়ে কিছু বলে নি।সে সবসময় চাইতো তার ভাই আর ভাবি বাচ্চাদের নিয়ে সুখে থাক।রুয়েল হিয়া আর হৃদয় কে নিজেরই সন্তান মনে করতো,তাদের এতোটাই ভালোবাসতো যে, যখন যেটা আবদার করতো রুয়েল সাথে সাথে সেটা পূরন করে দিতো।বলতে গেলে হিয়া আর হৃদয় একদম বিলাসিতার মধ্যে বড় হচ্ছে।এদিকে রুয়েল নিজের কাছে একটা টাকাও জমিয়ে রাখতো না।সব টাকাই তার ভাইকে পাঠিয়ে দিতো।এতোটাই বিশ্বাস করে তার ভাইকে।আর রুবেলও রুয়েলকে খুব ভালোবাসতো।রুয়েলের পাঠানো টাকা জমিয়ে সে বাড়ি গাড়ি জমিজমা সব করেছে।আর প্রতিটা জমি দুইভাই এর নামেই দলিল হয়েছে।বলতে গেলে এই দুই ভাই এর নাম সবার মুখে মুখে।সবাই তাদের বাচ্চদের এটাই শেখায়,যে ভাই হতে হয় রুবেল আর রুয়েলের মতো।কি সুন্দর মিল তাদের।একজন বিদেশ থেকে টাকা পাঠাচ্ছে আর আরেকজন দেশে সেই টাকা দিয়ে জমিজমা কিনে ভরাচ্ছে।#আলো_আধারের_খেলা
#পর্ব_০৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

“এটা হলো আমাদের ১৫ লক্ষ টাকার দুলাভাই।

হবু শালির মুখে এই কথা শুনে ভীষণ অবাক হলো রুয়েল।এদিকে রাইসার আরেক নিকটতম আত্নীয়ও এসে বললো,কই সে ১৫ লক্ষ টাকার জামাই?রুয়েল এবার আর চুপ করে থাকলো না।সে ঊর্মিকে বললো,ভাবী সবাই এভাবে ১৫ লক্ষ টাকার কথা বলছে কেনো?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।ঊর্মি রুয়েলের কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো,দূর!কি শুনেছো না শুনেছো!চুপ করে বসো তো।

এদিকে পাশের রুম থেকে রুবেলের উচ্চ কন্ঠ শোনা গেলো।সে চিৎকার করে বললো, ১০ লক্ষ টাকা দেনমোহরে সে কখনোই তার ভাই এর বিয়ে দেবে না।তখন রাইসার চাচা বললো,আমরা কি কম দিচ্ছি নাকি? ১৫ লক্ষ টাকা নগদ, ৫ লক্ষ টাকার ফার্নিচার আবার সাথে ৫ ভরি স্বর্ণও দিচ্ছি।রুবেল সেই কথা শুনে ভীষণ রেগে গেলো।সে এক কথায় বলে দিলো এ বিয়ে কখনোই হবে না।এই বলে রুবেল রাগ করে রুয়েলের হাত ধরে বের হয়ে যেতে ধরলো।
তখন রাইসার বাবা তার ভাইকে বুঝিয়ে বললো যে ভাই জিদ করো না।ওনারা দেনমোহর যেটা করতে চাচ্ছে ওটাতেই রাজি হয়ে যাও।
বেচারা রুয়েল বোকার মতো হা করে থাকলো। সে কারো কথা কিছুই বুঝতে পারলো না।
কিন্তু রুয়েল এবার আর চুপ করে থাকলো না।সে তার ভাইকে বললো,ভাইয়া হয়েছে টা কি?সবাই এভাবে রেগে আছে কেনো?আর আপনিই বা এরকম রিয়্যাক্ট করছেন কেনো?
রুবেল সেই কথা শুনে রুয়েলকে একটু সরে নিয়ে গিয়ে বললো, রাইসার ফ্যামিলি ১০ লক্ষ টাকা দেনমোহর করতে বলছে।সেটাও আবার নগদ পরিশোধ করতে হবে।কিন্তু আমি বলেছি ৫ লক্ষ টাকার কথা।
রুবেল সেই কথা শুনে নিজেও ভীষণ অবাক হলো।সে জোরে করে বললো,মগের মুল্লুক পাইছে নাকি?ডিমান্ড ছাড়া বিয়ে করছি তার আবার কিসের এতো দেনমোহর?আর আমি এতো বেশি দেনমোহরে কিছুতেই বিয়ে করবো না।যেটা আমি নগদ পরিশোধ করতে পারবো সেটাই হবে আমার বিয়ের দেনমোহর।

রাইসার ভাই রাহাত রুয়েলের সব কথা শুনে ফেলেছে।সে রুয়েলের কথা শুনে একদম অবাক হয়ে গেলো।রুয়েল তো ১৫ লক্ষ টাকা ডিমান্ডের কথা জানেই না।তাহলে এটা রুয়েলের ভাই রুবেলের চক্রান্ত।রাহাত মনে মনে ঠিক করলো ডিমান্ডের কথাটা রুয়েলকে সে বলে দিবে।তাহলে হয়তো রুয়েল তার বোনকে কোনো ডিমান্ড ছাড়াই বিয়ে করবে।কারণ রুয়েল তো এই মাত্র বললো,সে বিনা ডিমান্ডে বিয়ে করবে।আর যে দেনমোহর দেবে সেটা একদম নগদ পরিশোধ করবে।

এদিকে রাইসার বাবা রুবেলের কাছে তার ভাই এর হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিলো।আর বললো আপনারা দেনমোহর যেটা করতে যান ওটাই হবে।রুবেল রাইসার বাবার কথা শুনে কিছুটা শান্ত হলো।সেজন্য রুবেল এনগেজমেন্ট পার্টি শুরু করতে বললো।এদিকে রাহাত চুপচাপ রুয়েলের পাশে এসে বসলো, আর বললো,দুলাভাই আপনি কি জানেন আপনার ভাই ১৫ লক্ষ টাকা নগদ নিচ্ছে।
রুয়েল রাহাতের কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। রাহাত তখন বললো, শুধু তাই না,৫ লক্ষ টাকার ফার্নিচার সাথে আবার ৫ লক্ষ টাকার সোনার গহনা।
রুয়েল রাহাতের কথা শুনে মনে হয় আকাশ থেকে পড়ে গেলো।সে আর এক সেকেন্ড দেরি না করে তার ভাই এর কাছে চলে গেলো।আর সবার সামনেই বললো,ভাইয়া এসব কি শুনছি?আপনি নাকি যৌতুক হিসেবে ১৫ লক্ষ টাকা নিচ্ছেন?সাথে আবার ১০ লক্ষ টাকার ফার্নিচার আর গহনা?
রুবেল রুয়েলের কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে তার কাছে চলে এলো।আর বললো,কি বলছিস এসব?কার থেকে শুনেছিস?
রুয়েল রাগান্বিত হয়ে বললো,যার থেকেই শুনি না কেনো কথা টা সত্য না মিথ্যা।
রুবেল সাথে সাথে বলে দিলো একদম মিথ্যা কথা।তুই চুপচাপ বসে থাক।কিছুক্ষনের মধ্যেই তোদের রেজিস্ট্রি হবে।
রুয়েল তখন রাহাত কে টেনে এনে বললো,রাহাত তুমি তখন আমাকে যা যা বলেছো সেটা সবার সামনে বলো দেখি?
রাহাত বাচ্চা মানুষ। এতো কিছু বোঝে না।বড়দের গোপনীয় কথা সে ফাঁস করে দিলো।রুবেল রাহাতের মুখে যৌতুকের কথা শোনার সাথে সাথে একদম স্তব্ধ হয়ে গেলো।সে ভেবেছে রুয়েল কখনো জানতেই পারবে না। আর বিয়ের পর জানলে কিছু একটা অজুহাত দেখিয়ে কেটে দিবে।

রুয়েল কে চুপ থাকা দেখে রুবেল বললো, আমার কি দোষ? ওনারা নিজেরাই এসব দিতে চেয়েছে।আমি সেজন্য কিছুই বলি নি।
রুয়েল তখন বললো, ভাইয়া এইভাবে আমাকে ছোট করতে পারলেন?
ওনারা দিতে চাইলো আর আপনি সেটা নিতে রাজি হলেন?ছিঃ ভাইয়া।আমি কখনোই ভাবি নি আপনি এমন করবেন।অন্ধের মতো বিশ্বাস করতাম আপনাকে।আর তার প্রতিদান এইভাবে দিলেন?আমাদের মানসম্মান এইভাবে কেনো নষ্ট করলেন?
রুবেল একদম নিচ মুখ হয়ে থাকলো।এইভাবে ধরা পড়ে যাবে সে সেটা স্বপ্নেও ভাবে নি।এদিকে ঊর্মি রুয়েলকে এসে বোঝাতে লাগলো।যা হবার হয়ে গেছে।তোর ভাই বুঝতে পারে নি।রুয়েল একটা কথাও বললো না।সে সবাইকে রেখে চলে আসলো।

এদিকে রাইসার ফ্যামিলির সবাই রুয়েলের পিছু নিলো।তাকে যেতে বারণ করলো।মেয়েটার কি হবে এখন? এই মেয়েকে কে বিয়ে করবে নানা রকম কথা বলতে লাগলো।রুয়েল কারো কথাই শুনলো না।তার মন টা এতো টাই ভেংগে গেলো যে তার কানে আজ কারো কথাই ঢুকলো না।তার শুধু বার বার এটাই মনে হলো যে তার ভাই কেনো তাকে না জানিয়ে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলো?তাদের কি টাকা পয়সার অভাব নাকি যে মেয়েপক্ষদের কাছ থেকে টাকা নিতে হবে।
রুয়েল রাগ করে সোজা তার এক বন্ধুর বাসায় চলে গেলো।সে আর তাদের বাসায় আসলো না।

এদিকে রুবেল আর ঊর্মি রুয়েলকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেলো।তবুও তার খোঁজ পেলো না।অবশেষে রুবেল নিজেও জিদ ধরলো আর খুঁজবে না সে রুয়েলকে।যেখানে মন চায় চলে যাক।সে কি এমন অপরাধ করেছে?ওর ভালোর জন্যই তো টাকাগুলো নিয়েছিলো।১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে এই ছয় মাস দিব্যি কেটে যেতো তার।এই ছয় মাস তো রুয়েল দেশেই থাকবে।

যৌতুক নেওয়ার আউডিয়া টা ঊর্মির ছিলো।সে রুবেল কে বলেছে এমন ছেলের সাথে যে কেউ বিয়ে দিতে চাইবে, আর আমরা যেটা দাবি করবো সেটাই দিবে কনেপক্ষ।তাছাড়া রুয়েল যে ছয়মাস দেশে থাকবে সেই ছয়মাস তো আর বিদেশ থেকে কোনো টাকা আসবে না।সেজন্য রুয়েল যেখানেই বিয়ে করুক নগদ টাকা দিলেই আমরা রাজি হবো বিয়েতে।সেজন্য তারা জহিরের মেয়ে জান্নাতের কথা শুনতেই পারতো না।কারণ জহির এতো বেশি বড়লোক না।সামান্য একটা মুদির দোকান আছে তার।তার উপর জান্নাত যেভাবে চলাফেরা করে যেটা তাদের পরিবারের কেউই চলে না।সেজন্য ঊর্মির জন্য জান্নাতের সাথে রুয়েলের বিয়ে টা হয় নি।

এক সপ্তাহ পর রুবেল আর ঊর্মি খোঁজ পেলো রুয়েলের।রুয়েল তার কোনো এক ফ্রেন্ডের বাসায় আছে।তখন ঊর্মি আবার রুবেল কে বুদ্ধি দিলো যে রুয়েল যদি রাগ করে আর বিদেশ না যায় তখন আমরা মাসে মাসে টাকা পাবো কোথায়?বা এমনো তো হতে পারে সে বিদেশ গিয়ে আর আমাদের টাকা পাঠালো না।সেজন্য তুমি রুবেলের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নাও।আর বলো তোমার এটা ভুল হয়ে গেছে।আর কখনোই এই ভুল হবে না তোমার।
রুবেল ঊর্মির কথা শুনে রুয়েলের বন্ধুর বাসায় চলে গেলো।সাথে তাদের মাকেও নিলো।আর যাই করুক মাকে দেখলে রুয়েল আর রাগ করে থাকতে পারবে না।

রুবেল রুয়েলকে দেখামাত্র তার পায়ে পড়তে ধরলো।রুয়েল তা দেখে বললো,ভাইয়া কি করছেন এসব?আপনি আমার গুরুজন।এভাবে পায়ে পড়ছেন কেনো?
রুবেল তখন বললো,আমার ভুল হয়ে গেছে ভাই।আমি বুঝতে পারি নি।আর কখনোই এই ভুল হবে না।
রুয়েল একটা কথাও বললো না।কারণ তার মন টা এখনো ঠিক হয় নাই।তখন রুয়েলের মা রুয়েলকে জড়িয়ে ধরে বললো,বাবা মায়ের কথা একবারো ভাবলি না।এইভাবে রাগ করে থাকতে পারলি?আমি কি করেছি?
–না মা কেউ কিছুই করে নি।আর আমি কারো উপর রেগেও নেই।
রুবেল তখন রুয়েলের হাত ধরে বললো ভাই বাসায় চল।তোকে না দেখতে পেয়ে সবাই ভীষণ টেনশনের মধ্যে আছে। হিয়া আর হৃদয় তোকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে।
রুয়েলের মাও রুয়েলের হাত ধরে সেম কথা বললো,
রুবেল তোর বড় ভাই হয়।তোর বাবা মারা যাওয়ার পর এই ভাই ই সবার দেখাশোনা করেছে।সেই বাবার মতো ভাই না বুঝে একটা ভুল করে ফেলেছে।সে তো ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছেই।
রুয়েল আর রাগ করে থাকতে পারলো না।সে সবার সাথে বাড়ি চলে এলো।তবে রুয়েল আর আগের মতো হাসিখুশি থাকতে পারলো না।তার শুধু বার বার ঐ টাকার কথায় মনে হতে লাগলো।তার ভাই কেনো করলো এই কাজ?

এদিকে রাইসার বাবা বার বার রুবেলকে ফোন দিতে লাগলো।আর বলতে লাগলো,
কি হলো আপনাদের?কোনো খবরই তো দিচ্ছেন না।রুবেল আর কি বলবে?সে রুয়েলকে বিয়ে ব্যাপারে সাহস করে আর কিছু বলতে পারলো না।

রুয়েল আগের মতো আর তার ভাই এর সাথে ঠিক করে কথা বলে না।তখন ঊর্মি রুবেলকে বললো,আমরা যে ভুল করেছি রুয়েল সেটা ক্ষমা করতেই পারছে না।ওর মন টা ভীষণ ভেংগে গেছে।রুয়েল আমাদের ভুল বুঝছে।সেজন্য আমার মনে হয় কি জান্নাতের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করলে ও মনে হয় ঠিক হয়ে যাবে।আর আমাদের প্রতি ভুলটাও ওর দূর হবে।
রুবেল ঊর্মির কথা শুনে নাক ছিটকালো।আর বললো,পাগল হইছো তুমি?না এটা সম্ভব না।মেয়েটাকে তো ভালো লাগেই নি, তার উপর জহিরের সাথে আমাদের আত্নীয়তা করা মানানসই হবে না।
ঊর্মি সেই কথা শুনে বললো, ভালো করে বোঝো একবার।যেখানেই রুয়েল বিয়ে করুক না কেনো ও কিন্তু যৌতুক নিবে না।সেজন্য টাকার আশা ছেড়ে দাও।এখন শুধু চিন্তা করো বিয়ের পরও যেনো রুয়েল চেঞ্জ না হয়?
–মানে কি বলছো?
ঊর্মি তখন বললো, আধুনিক স্টাইলিশ মেয়ে ঘরে আনলে রুয়েলের সব টাকা পয়সা সে নিজের আয়ত্তে নেবে।তখন আর আমাদের দেবে না।কিন্তু জান্নাতের মতো বোকাসোকা কোনো মেয়েকে ঘরে আনলে রুয়েল বিয়ের পরও আমাদেরকেই টাকা পাঠাবে।
রুবেল সেই কথা শুনে বললো, তুমি তো ঠিক বলেছো।এভাবে তো ভেবে দেখি নি কখনো।জান্নাতকে আমরা যেভাবে চলতে বলবো সে সেভাবেই চলবে।আর রুয়েল তো আমাদের ছাড়া কিছুই বোঝে না।

জান্নাতকে বোকাসোকা আর সহজ সরল মেয়ে ভেবে ঊর্মি আর রুবেল ঠিক করলো জান্নাতকেই তারা রুয়েলের বউ করে ঘরে তুলে আনবে।সেজন্য রুয়েলের গ্রামে থাকা সেই চাচার হাতে আবার প্রস্তাব দিলো বিয়ের।
কিন্তু এবার জহির আর রাজি হলো না।সে উলটো রাগ দেখালো।তারও একটা ইমেজ আছে।বার বার এভাবে তারা ফাজলামি করতে পারে না।
রুয়েলের চাচা তখন বললো,এবার এক্কেবারে পাক্কা কথা দিলাম জহির।শুধু আমি না রুবেল আর ঊর্মি নিজে আসবে তোর কাছে।

#চলবে,

#চলবে,কেমন লাগলো আজকের পর্ব?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here