ইঁচড়েপাকা এবং সে❤️ পর্ব ২৫+২৬

#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ-২৫

রুমে পিন পতন নিরবতা ছেয়ে আছে কেউ কোন কথা বলছে না।
টেবিলের কোনায় রাখা একটা চেয়ারে আয়শা বসে আছে৷ অপর টিতে ম্যানেজার স্যার বসে আছেন৷ নাছিম অনেক ক্ষন যাবত কম্পিউটারে কিছু একটা ঘাটা ঘাটি করছে। ম্যানেজার স্যার আয়শার দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করলো, আয়শা নাক, মুখ ফুলে লাল লাল ছোপ দেখা যাচ্ছে। জামায় মাকড়ের আঁশ লেগে আছে।

নাছিমের বিশ্বাস কেউ ইচ্ছা করেই বাইরে থেকে দরজা আটকে দিয়েছে৷ সারা অফিসে ওয়ার্কিং প্লেসে ক্যামেরা থাকলেও স্টোর রুমের দিকে ক্যামেরা নেই, ঠিক সেটার সুযোগ নিয়েছে কেউ।

কে হতে পারে সে? কার আয়শার সাথে দুশমনি। একটা মেয়েকে স্টোর রুমে আটকে রাখবে। নাছিম শব্দ না পেলে হয়তো আয়শা সারা দিন ধূলো ময়লার রুমে পড়ে থাকতো। সকাল এগারো টার ফুটেজ অন করে নাছিম মন দিয়ে দেখছে৷

আয়শা তার ডেক্স থেকে উঠে রিসিপশনে গেলো। এক মিনিট রিসিপশনের দাঁড়িয়ে মিলির সাথে কথা বললো..মিলি হাত ইশারা করে স্টোর রুম দেখিয়ে দিলো। আয়শা স্টোর রুমের দিকে গেলো, আয়শার পিছু পিছু মিলি এবং নিলাও পিছু নিলো। এর পর আর কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। কয়েক সেকেন্ড পর নিলা, মিলি ফিরে এলো নিজের জায়গায় কিন্তু আয়শা এলো না৷

নাছিম ভিডিও টা পজ করে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো। কোন মতেই সে তার নিজের রাগ টাকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। নাছিম ম্যানেজারের উদ্দেশ্য বললো…

” মিস আয়শাকে বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসুন৷ ওনার যা অবস্থা ওনার রেস্ট নেয়া খুবই প্রয়োজন। ”

আয়শা এখনো ঘন ঘন হেচকি তুলছে। ম্যানেজার স্যার উঠে চলে গেলো, আয়শা উঠে দাঁড়ালো, নাছিম কে বললো..

” আসছি স্যার। ”

” হুম। নিজের খেয়াল রাখবেন। ”

আয়শা হ্যা সূচক মাথা দুলিয়ে কেবিন থেকে বাইরে চলে গেলো। নাছিম রিসিপশনের কল দিয়ে, মিলি আর নিলা কে আসতে বললো।

মিলি নিলার ডেক্সের কাছে গিয়ে নিলা কে ডাক দিয়ে বললো..

” স্যার আমাদের যেতে বলেছেন। ”

নিলা কিছুটা অবাক হয়ে বললো..
“কেনো রে?”

” জানি না রে। এই মাত্র দেখলাম আয়শা অফিস থেকে বেড়িয়ে গেলো। ”

নিলা ক্ষানিকটা ভয় পেয়ে গেলো। ভীত কন্ঠে বললো..

” আমরা ধরা পরে গেলাম না তো? ”

মিলির চোখে মুখে চিন্তার ভাজ পডলো। দু’জন নাছিমের কেবিনে গেলো। নাছিম ভেতরে আসার পার্মিশন দিলো। দু’জন কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করলো।

নাছিম কম্পিউটার স্ক্রিনে দিকে তাকিয়ে বললো..

“বসুন আপনারা। ”

দু’জন চেয়ার টেনে বসলো। নাছিম দুজনের উদ্দেশ্য বললো…

” আপনারা আমার অফিসে চাকরি করেন কত বছর হলো?”

নাছিমের অদ্ভুত প্রশ্নে দু’জনই কিছুটা ভরকে গেলো। মিলি ঢোক গিলে বললো..

” স্যার দু বছর তিন মাস। ”

” মিস নিলা আপনি? ”

” এক বছর।”

” কালকে থেকে আপনারা দু’জন অফিসে আসবেন না। আপনাদের বাসায় ডেজিগনেশন লেটার পৌঁছে যাবে। ”

মিলি ভয়ার্ত কন্ঠে বললো..
” কি বলছেন স্যার। আমরা কি দোষ করেছি। ”

” কি দোষ করেছেন? যারা ভুল করে, নিজেদের ভুল টাকে স্বীকার করে, তাদের সুযোগ দেওয়া যায়৷ আর যারা ইচ্ছা করে ভুল করে, তাদের কোন মাফ নেই। ”

নিলা কান্না জরানো সুরে বললো…
” স্যার আমরা কি করেছি। ”

” আয়শা কে স্টোর রুমে আটকে রেখেছে কে?”

” আমরা জানি না স্যার। ”

” আমাকে কি ইডিয়ট মনে হয়? আমি প্রমাণ ছাড়া কিছু বলি না। ”

নাছিম কম্পিউটার স্ক্রিনেটা দু’জনের দিকে ঘুড়িয়ে দিলো। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আয়শার পিছু পিছু তার দুজন গিয়েছিলো। তারা দুজন ফিরে আসলেও আয়শা ফিরে আস্তে পারে নি। কারন বাইরের থেকে দরজা লক করে দিয়েছিলো।

” আপনাদের আর কিছু বলার আছে?”

নিলা কান্না করতে করতে বললো..
“প্লিজ আমার চাকরিটা নিবেন না। ”

” সেটা দোষ করার আগেই ভাবা উচিত ছিলো। ”

মিলি অনুরোধ করে বললো..
” আমার মা অসুস্থ একজন মানুষ। চাকরিটা চলে গেলে, মায়ের চিকিৎসা করাবো কি ভাবে? ”

নাছিম রাগে, টেবিলে জোরে বাড়ি মেরে বললো…

” তাহলে এই কাজটা কেনো করেছেন? ”

নিলা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো..

” আয়শা নতুন জয়েন করেও কতো সুবিধা পাচ্ছে, সবার এটেনশন পাচ্ছে। আমাদের দুজনের খুব হিংসে হতো। এই জন্য আমারা কাজ টা করেছি। ”

নাছিম চুপ করে বসে আছে। এরা দুজন ছেলে হলে এতোক্ষনে নাছিম ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতো। হিংসার বশে মানুষ কতো নিচে নামতে পারে, এদের না দেখলে নাছিম নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারতো না। ডাস্টার্ড এলার্জি সমস্যায় ভুগা মেয়েটাকে এভাবে আটকে রেখেছিলো।

আয়শার কিছু হয়ে গেলে সে, কখনো নিজেকে মাফ করতে পারতো না৷ মেয়েটার বড় ধরনের সমস্যা হয়ে গেলে নাছিম আয়শার পরিবারের কাছে কি জবাব দিতো?
নিলা কান্না করতে করতে বললো…

“স্যার প্লিজ আমাদের মাফ করে দিন। ”

” আমার মাফ করালে, বা না করলে। কোন যায় আসে না। মিস, নিলা আই নো আপানার ফ্যামিলিতে কেউ নেই। আপনার একটা ছোট ভাই আছে। সবার কোন না কোন ফ্যামিলি ট্রমা আছে।

আপনাদের কারো চাকরি আমি ছিনিয়ে নিবো না। তবে কালকে থেকে আপনারা, অফিসের কোন দ্বায়িত্ব থাকবেন না। ”

” তাহলে স্যার। ”

” গার্মেন্টস ডিপার্টমেন্টে এক্সিকিউটি করবেন৷ আন্ডার স্টেন্ড। ”

” ওকে স্যার। ”

” আপনারা এখন আসতে পারেন। ”

মিলি নিলা দুজনেই উঠে চলে গেলো। নাছিমের চোখের সামনে মায়ের চেহারা ভাসছে। ছোট বেলায় নাছিমের মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলো..

” কখনো কাউকে শাস্তি দিবি না। কারন মানুষের কর্মের শাস্তি দিবে আল্লাহ। মানুষে কোন কিছুতেই হাত নেই। ‘

মায়ের কথাটা রাখার জন্যই হয়তো নাছিম দুজনের চাকরি নেয় নি।

——————————-

বাসায় পৌঁছে কলিং বেল বাজাতেই আয়শার বাবা আফজাল সাহেব দরজা খুলে দিলেন। আয়শার চেহারা দেখে অবাক হলেন।

” তোর এ অবস্থা হলো কি ভাবে মা? ”

ম্যানেজার স্যার পেছন থেকে বললেন..

” স্টোর রুমে ফাইল আনতে গেছিলেন। ডাস্টার্ড এলার্জি বেরে গেছে মনে হয়। ”

আয়াশা ম্যানেজার স্যার কে বিদায় দিয়ে, ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো। লম্বা শাওয়ার নেয়ার পর আয়শা বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো।
বিকাল বেলা আয়শার ঘুম ভাংলো ওরিনের ডাকে। ওরিন খাবারের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার পাশে বাবাও দাঁড়িয়ে আছে।

আয়াশা খুব কষ্টে বসলো। ওরিন আয়শার কপালে হাত দিয়ে, তাপ মাত্রা বুঝার চেষ্টা করলো। ওরিন ভাত আয়শার মুখে পুরে দিয়ে বললো…

” শরীর টা তো বেশ গরম। অনেকক্ষন ধরে নিশ্চয়ই পানিতে ভিজেছো। ”

” হুম। ”

” কি হয়েছে আপু? হঠাত অসুস্থ কেনো হলে?”

আয়শা স্টোর রুমে আটকে থাকার ব্যাপার টা এড়িয়ে গেলো। জানা জানি হলে, আয়শার কাজে অসুবিধা হবে বেশি। তাই আয়শা ব্যাপার টা প্রকাশ করলো না।

হালকা হেসে আয়শা ওরিন কে উত্তর দিলো,
” অসুস্থতা কি বলে কয়ে আসে?”

ওরিন মুখ ভারি করে বললো..
” থাক এখন আর কথা বলতে হবে না। ”

আয়শা চুপ করে রইলো। কোন রকমে খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিলো ওরিন। আয়শা আধো শোয়া হয়ে বসে রইলো। মাথাটা ভার বার লাগছে।
পাশে রাখা ফোন টা বেজে উঠলো। আয়শা ফোন টা রিসিভ করলো। ফোনের ওপাশ থেকে নাছিম বললো..

।#ইঁচড়েপাকা_এবং_সে❤️
#Ruhi_Jahan_Maya

পর্বঃ–২৬

” হঠাৎ করে অসুস্থ হলে, কি ভাবে বলা তো?”

” অসুস্থতা কি বলে কয়ে আসে?”

আয়শা স্টোর রুমের ব্যাপার টা এড়িয়ে গেলো। এখন বাসায় জানালে আয়শার কাজে অসুবিধা হবে। তাই না বলা টাই শ্রেয়।
ওরিন গাল ফুলিয়ে বললো..

” থাক এখন আর কথা বলতে হবে না৷ নাও ঔষধ খাও।”

ওরিন ঔষধ গুলো আয়শার হাতে দিলো। আয়শা ঔষধ খেয়ে, আধো শোয়া হয়ে বসে রইলো। চোখ বন্ধ করে। ফোনের শব্দে আয়শা ফোনটার দিকে তাকালো। ফোনের স্ক্রিনে, ‘ খারুস ‘নাম,টা ভেসে উঠলো।

আয়শা ফোন রিসিভ করে “হ্যালো” বলতেই ওপাশ থেকে নাছিম বললো..

” কেমন আছেন এখন মিস আয়শা। ”

” এখন একটু ভালো। আপনি?”

” আমি কি?”

” আপনি কেমন আছেন? ”

নাছিম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো..

” ভালো আছি। ”

দুজনই চুপ করে রইলো। কেউ কথা বলছেনা। ফ্যানের কৃত্রিম বাতাসের সাথে আয়শার শ্বাস নেওয়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছে৷ সর্দির কারনে আয়শা জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। হঠাৎ করে আয়শা বললো…

” থ্যাংক ইউ। ”

” কেনো?”

“আমাকে বাঁচানোর জন্য। ”

” আমি আপনাকে বাঁচাইনি। আল্লাহ বাঁচিয়েছে। আমি তো মাধ্যম মাত্র। ”

আয়শা কি বলবে বুঝতে পারছে না। অফিসে বসের সাথে ফর্মাল কথা ছাড়া আর কি বা বলা যায়। নিরিবতা ভেঙ্গে নাছিম বললো…

” মেডিসিন নিয়েছেন? ”

” হুম। ”

” আপনার দু দিন অফিসে আসার দরকার নেই। আপনি রেস্টে থাকুন। ”

” আমার স্যালা..”

নাছিম কথা কেড়ে নিয়ে বললো…
” কাম ডাউন। আপনার স্যালারি কাটা হবে না। ”

আয়শা সস্তির নিঃশ্বাস নিলো। ফোনের ওপাশ থেকে নাছিম বললো..

” এখন রেস্ট নিন। বায়। ”

” হুম। ” বলেই আয়শা ফোনটা কেটে দিলো।
সামনে ওরিন হা করে তাকিয়ে আছে। আয়শা ওরিনার চাহুনি দেখে অবাক হয়ে বললো..

” এভাবে ভুত দেখার মতো। তাকিয়ে আছিস কেনো? মুখে মাছি, হাতি, ঘোড়া ঢুকে যাবে।”

” তোমার বস, ফোন দিয়েছিলো তাই না?”

” হ্যাঁ। কেনো?”

“আমার আগেই কেনো জানি মনে হয়েছিলো, এই ভালো খারুস টা তোমার খবর নিবে।”

” নাছিম স্যার ভালো খারুস হয়ে গেলো। ”

” হুম। কারন স্যার ভালো মানুষ। কিন্তু অনেক খারাপ খারুস আছে, যারা মেয়েদের ট্রাপে ফেলে, চলে যায়৷ ওই খারাপ খারুস টাকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। ”

” যেমন?”

” কিছু না আপু। তুমি রেস্ট নাও এখন। ”

ওরিন রুম থেকে চলে গেলো। আয়শা চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। শরীর টা বড্ড খারাপ লাগছে, কিন্তু খারুস টার খোঁজ নিয়েছে তাকে সেইফ করেছে ভাবতেই আয়শার ভালো লাগছে খুব। নাছিমের দেওয়া রুমাল টা আয়শা হাতে নিয়ে দেখছে। খারুস টার কথা তার এতো মনে পড়ছে কেনো?

———————————-

ফরিদ ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে, আছে। লাল পারের সাদা শাড়ি পরা তরুণীর দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। সেই তরুণীর চোখ, ঠোঁট , গাল খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।
লম্বা শ্বাস টেনে ফোন স্ক্রিনের রমণীর দিকে তাকিয়ে বললো..

” তুমি কি ভেবেছো মিস ওরিন তোমাকে আমি চিনতে পারবো না। তোমার হাটা চলার, কথা বলার স্টাইল, কর্ম কান্ড দেখলেই আমি বুঝতে পারি। ”

ফরিদের ঠোঁটের কোনো এক ফালি হাসি ফুঁটে উঠলো। এবার বুঝবে মজা। আমার গাড়ির টায়ারে পিন দিয়ে গুতিয়ে হাওয়ার বের করেছো। এর দাম তো তোমাকে দিতেই হবে।

” ফরিদ কে বোকা বানানো এতো সহজ না। ওরিন৷ ”

” কে কাকে বোকা বানাবে?”

নাছিম পেছন থেকে বললো। ফরিদ জুসের গ্লাসে চুমুক দয়ে বললো..

” কিছু ভাইয়া। ”

” ও তাই না? ”

বলেই নাছিম, ফরিদের ফোন স্ক্রিনে আড় দৃষ্টিতে তাকালো। শাড়ি পড়া একটা মেয়ের ছবি নাছিম চেহারাটা স্পষ্ট দেখতে পারলো না তার আগেই ফোনের স্ক্রিন অফ হয়ে ফেলো।

” কিছু বলবে, ভাইয়া?”

” হ্যাঁ। কালকে তো মারিয়ার বিয়ের আট দিন। ”

” হুম। বুড়িটার শ্বশুর বাড়ি যাবো। তাই না?”

” হ্যাঁ সাবাই যাবো। দাদী প্রথম যাবে। তাই তুষার কে গিফট দেবার জন্য একটা আংটি অর্ডার দিয়েছে। ছবিটা দেখে বল তো কেমন? ”

ফরিদ ফোনটা হাতে নিয়ে আংটি টা দেখে বললো…

” আমাদের স্টাইলিশ দাদীর পছন্দ বেশ ইউনিক৷ ”

ফরিদের কথা শুনে নাছিম হাসলো। ফরিদ ফোনে কোন মেয়ের ছবি দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলো? ব্যাপার টা নাছিম কে বেশ ভাবাচ্ছে। ফরিদ হয়তো মেয়েটা কে পছন্দ করে৷ তার ভাই ও যে কারো প্রেমে পড়েছে, কথাটা চিন্তা করতেই নামের চাপা আনন্দ হচ্ছে।

———————————-

সকাল সারে দশটা…

ক্যাম্পাসের এক পাশে দাঁড়িয়ে তনু ওরিনের জন্য অপেক্ষা করছে। এর মধ্যেই হঠাৎ বাধন সামনে এসে দাঁড়ালো। তনু একটু ভাব নিয়ে বললো.…

” কি চাই?”

বাঁধন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো…

” কিছু না। ”

” তাহলে হনুমানের মতো চেহারা নিয়ে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো। সরুন। ”

” কিহ আমার চেহারা হনুমানের মতো? সিনিয়রের সাথে এভাবে কথা বলছো?”

” তো কি করবো। মাথায় উঠিয়ে নাচবো?”

” মাই গড! মেয়েরা এতো ঝগড়া কি ভাবে করে?”

তনু চটে গিয়ে বললো..
” আমার গলায় ওল কচু আছে তাই ঝগড়া করার জন্য গলা চুলকায়। বুঝেছেন? ”

” না, বুঝিনি। ওল কচু দেখতে কেমন।”

” হনুমানের মতো। ”

বলেই তনু গেটের দিকে হাটা দিলো। ওরিন তনুকে হাটতে দেখে দূর থেকে ডাক দিলো। তনু ওরিনের ডাক শুনে ওরিনের দিকে তাকালো। ওরিন দ্রুত পায়ে হেটে, তনুর কাছে এলো।

” কিরে তুই এমন রেগে আছিস কেনো?”

” আর বলিস না। ওই হনুমান টা মুড খারাপ করে দিলো। ”

” কে এই মানুষ রূপি হনুমান? ”

তনু হাত ইশারা করে দেখিয়ে দিয়ে বললো..
” ওই যে দেখ।”

ওরিন হো হো করে হেসে বললো।
” ওটাতো বাধন ভাই৷ উনি আবার কি করলো? ”

” তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হনুমান টা আমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। আজাইরা প্যাঁচাল শুরু করেদিছে।”

” সবই তো বুঝলাম। তা ওর বন্ধু কথায়?”

” জানি না রে। মনে হয় গাড়ির টায়ারের শোকে এখনো কাতর হয়ে আছে। ”

” একদম ঠিক বলেছিস তনু। ”

দুজনেই হো হো করে হাসলো, ক্লাসের উদ্দেশ্য চলে গেলো। ক্লাস শেষে ওরিন, এদিক সেদিক তাকিয়ে, কোথাও ফরিদ কে দেখতে পেলো না৷ মনে মনে ক্ষানিকটা নিরাশ হয়ে, চির চেনা সেই কৃষ্ণ চূড়া ফুল গাছ টার নিচে বসে রইলো। ওরিন কে চুপ চাপ দেখে তনু কিছু বলতে গিয়েও বললো না।

” মানুষের কখনো কখনো কয়েক মূহুর্তের জন্য একা থাকা উচিত।
একাকিত্ব মন কে শক্তি যোগায়।”

~ রুহি জাহান (মায়া)

——————————————-

গত কালকের তুলনায় আজ আয়শা বেশ সুস্থ হয়েছে। বাবা বারণ করা সত্বেও, দুপুরের রান্না টা সে নিজেই করেছে। প্রতিদিনের কাজ গুলো অভ্যাসে পরিনত হয়েছে, যে অভ্যাস টা চাইলেও ছাড়া যায় না। আয়শাকে রান্না ঘরে দেখে বাবা তাড়া দিয়ে বললেন..

” মা তুই এখনো রান্না ঘরে পরে আছিস। তোর শরীর টা তো খারাপ। ”

আয়শা চামুচ-বাটি গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললো..

” এখন ভালো আছিতো বাবা।”

” গত কাল, অফিসে কি হয়েছিলো সত্যি করে বল তো?”

আয়শা হঠাৎ থমকে গেলো। বাবার দিকে তাকিয়ে বললো..

” স্টোর রুমে ফাইল আনতে গেছিলাম। বুঝতে পারিনি এতো ধুলা হবে। তাই হঠাৎ এলার্জিটা বেরে গেলো। ”

” সত্যি বলছিস তো?”

” হুম। ”

আয়শা নিজেও খুব ভালো করেই জানে এটা কেউ ইচ্ছা করে করেছে। হয়তো কেউ আয়শা অপছন্দ করে এজন্যও হতে পারে। সঠিক না জেনে আয়শা কাউকে ব্লেইম করতে চায় না।

সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে আয়শা রুমে শুয়ে, আছে। ওরিন কলেজ থেকে এসে রেস্ট নিচ্ছিলো। হঠাৎ বেল বাজার শব্দে ওরিন চমকালো৷ বাবা তো ছাদের দরজা তো খোলাই তাহলে আবার কে বেল বাজালো? আরো একবার দরজায় শব্দ হলো। ওরিন দরজাটা সম্পূর্ণ খুলে দিয়ে চমকে গেলো। কারন…
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here