ইতি মাধবীলতা পর্ব -১০+১১

ইতি মাধবীলতা – ১০ (খ)
আভা ইসলাম রাত্রি

আর কিছুক্ষণ পর ঝলমলে জমিদার বাড়ি স্তব্ধ হয়ে যাবে। জমিদারের বড় পুত্র বাড়ি ছেড়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। রেখা দেবী আঁচলের তলায় মুখ লুকিয়ে ক্রন্দন করছেন। শত-সহস্র অভিযোগ পুষে রাখছেন মনের অন্তঃস্থলে! পুত্র বিদায়ের শোক এ মাতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলমান। জমিদার বাবুর বেলায় বিষয়টা সম্পূর্ণ উল্টো! মাধবীকে সঙ্গে করে শহরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তার একটুও ভালো লাগেনি। গ্রামে ছেড়ে চলে গেলে, তিনি নিলাংসুর আড়ালে এই বেদের মেয়ের কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারতেন। কিন্তু বড় পুত্রের রাগ এবং মেজাজ সম্পর্কে তিনি অবগত বিধায় এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কথা বলার জো হয়নি তার। তাই মুখটি বুজে শুরু থেকে সব সহ্য করছেন।

নিলাংসু নিজ কক্ষে বসে নতিপত্র ব্যাগে ঢুকাচ্ছে। মাধবী একপাশে ঠাঁট মেরে দাড়িয়ে রয়েছে। শহরে যেতে তার একটুও মন মানছে না। এই পাষাণ লোকের সাথে একা থাকবে ভাবতেই মনটা রুক্ষতায় পূর্ণ হয়ে উঠছে। মাধবী নিলাংসুর সামনে বসল। কোনোরূপ ভণিতা না করে সোজাসাপ্টা বললো,
— আমি যেতে চাইনা আপনার সাথে। আপনি আমায় নিজ বাড়ি রেখে আসুন।

নিলাংসুর ভ্রু কিছুটা কুঞ্চিত হলো। সে মাথা তুলে মাধবীর পানে চোখ রাখলো। সহসা গম্ভীর কণ্ঠে জানালো,
— নিজের পরিবারের ক্ষতি চাইলে এখানে থেকে যেতে পারো। আমার কোনো আপসোস হবে না। বরং আজ থেকে প্রতিটা মুহূর্ত নরক যন্ত্রণায় কাটানোর জন্যে প্রস্তুত হও।

মাধবী স্তব্দ হয়ে পড়ল। নিলাংসুর এহেন জঘন্য কথা তার শিরদাঁড়া অব্দি কম্পিত করে তুললো। মাধবী অবাক কণ্ঠে বললো,
— আমার-আপনার সম্পর্কে আমার পরিবারকে টানছেন কেনো?
— তোমার পরিবারকে আমি না, বরং তুমি টানছো। কোনোরূপ বাক্য ক্ষয় না করে আমার সাথে শহরে চলো, তোমার পরিবারকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার!

মাধবী কথা ভুলতে ভুলে গেলো। মানুষটা বাইরে যতটা সুন্দর ভেতরটা ঠিক ততটাই বিশ্রী! এরূপ প্রাণ কাঁপানো বাক্য বলতে তার কি একটুও দ্বিধাবোধ হলো না? মাধবীর চক্ষু থেকে দুফোঁটা জল বিসর্জন গেলো। মাধবীর গালে অশ্রুর উপস্থিতি লক্ষ্য করতেই শশব্যস্ত হয়ে উঠলো নিলাংসু। মাধবীর সামনে বসে ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
— আরে, আরে! কাঁদছ নাকি?
মাধবী ঘৃণায় মুখ আড়াল করলো। নিলাংসু কিঞ্চিৎ হাসলো। মাধবীর মাখনের মত গাল নিজ হাতের আজলায় নিয়ে নিবিড়ভাবে চুমু খেল তার চোখের ঠিক নিচটায়। ওষ্ঠ দ্বারা শুষে নিল মাধবীর চোখের নোনা জল। মাধবীর রাগ হলো খুব। ধাক্কায় সরিয়ে দিতে চাইলো এ পাষাণ লোককে। তবুও নিজের থেকে এক চুলও সরাতে পারলো না নিলাংসুর ভারী দেহখানা। হার মেনে নখের ধারালো আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত করতে লাগলো নিলাংসুর হস্ত। তবুও পুরুষটা নির্বিকার। নিলাংসুর এমন অনুভূতিপূর্ণ স্পর্শে ঘৃনায় চোখ বুজে এলো মাধবীর। মাধবী বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
— পাষাণ, নিষ্ঠুর লোক! ঘৃনা করি আপনাকে।

নিলাংসু ঠোঁট টেনে হাসলো। মাধবীর ললাটে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,
— চিন্তা নেই, তোমার ঘৃণায়ও ভালোবাসা খুঁজে নেবো আমি।
__________________________
জমিদার বাড়ির সামনে পালকি বসে আছে। রেখা দেবী বরণ ঢালা হাতে নিয়ে আশীর্বাদ করলেন পুত্র এবং পুত্রবধূকে! মাধবীর মায়াবী চোখ টলমল করছে। এ নারীর দুচোখে কেউ যেনো আস্ত এক সাগর পুষে রেখেছে।

আশীর্বাদ সম্পন্ন হলে রেখা দেবী হাতের ঢালা দাসীর হাতে সোপর্দ করলেন। নিলাংসু মাথা নুইয়ে ফেললো মায়ের সামনে। রেখা দেবী মুচকি হেসে নিলাংসুর ললাটে চুম্বন আঁকলেন। বললেন,
— ভালো থাকিস, বাবু। তোর সকল কর্ম সফল হউক। ভগবান তোর মঙ্গল করুক।

নিলাংসু মৃদু হেসে মাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। মায়ের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বলল,
— ভালো থেকো। আমি খুব জলদি ফিরবো।

নিজ ক্ষোভের কারণে জমিদার বাবু সেসময় নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্য গ্রামে চলে এলেন। নিলাংসু চারপাশে পরখ করে নিজের বাবাকে দেখতে পেলো না। সে মাকে প্রশ্ন করলো,
— মা, বাবা কোথায়?
রেখা দেবী আঁচল দিয়ে ভিজে চোখ মুছলেন। ধরা কণ্ঠে বললেন,
— তোর বাবা পাশের গ্রামে গেছেন, কি একটা কাজে।
নিলাংসু মনেমনে বেশ ক্ষয় হলো। বাবা যে ইচ্ছে করেই তার থেকে দূরে থাকছেন, বিষয়টা নিলাংসুর সূক্ষ্ম মস্তিষ্ক মুহূর্তেই বুঝে ফেলল। তবে সে কোনো দিরুক্তি করলো না। বাবার যা মন চেয়েছে তিনি তাই করেছেন। এখন নিলাংসুর যা মন চাইবে, সে তাই করবে। অতঃপর, নিলাংসু মাধবীর হাতখানা আকড়ে পা বাড়ালো বাড়ীর বাইরে।

পালকিতে মাধবীকে প্রবেশ করিয়ে পালকির পর্দা মেলে দিল নিলাংসু। মাধবীর শাড়ির আঁচল একপাশে বেরিয়ে ছিল। নিলাংসু অতি যত্নে সে আঁচলটুকু পালকির ভেতরে রেখে দরজা আটকে দিলো। যাওয়ার আগে পেছন ফিরে পুনরায় দেখে নিল জমিদার বাড়িকে। পূর্বে যা ঘটেছিল, তা চাপা দিতে মাধবীর এ বাড়ি পরিত্যাগ করা জরুরি ছিল। নিলাংসু ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। মনেমনে কয়েকবার আওরালো, ‘ যা আমি আড়াল করতে চাই, এ সংসারে কেউ তা প্রকাশ করতে পারে না। আপসোস, কি নির্বোধ এ সংসার! ‘

আজ থেকে মাধবী এবং নিলাংসুর জীবন নতুনভাবে শুরু হবে। এই নতুন জীবনে আসবে নানা চড়াই-উৎরাই। বাঁধাদের হারিয়ে জয় হবে ভালোবাসার। এক নতুন গল্পের সূচনা হবে এবার!
ইতি মাধবীলতা – ১১
আভা ইসলাম রাত্রি

শহরে আসার কদিনের মাথায়ই মাধবী অসুস্থ হয়ে গেলো। সারা গায়ে গুটিগুটি বসন্ত! সে কি জ্বালা তাদের। চুলকায় খুব, কিন্তু চুলকানোর অবকাশ না থাকায় মাধবী খুব কান্না পায়। দাত খিচিয়ে বসে রয় অবিচল! এ কদিন নিলাংসু একটিবারও ঘর ছাড়া হয়নি। রাজনীতির দায়িত্ত্ব বিশ্বস্ত একজনকে সপে দিয়ে সারাক্ষণ মাধবীর পাশটায় বসে ছিল ঠায়।
ওই তো সেদিনের কথা!
রাত প্রায় দুটো। শহরটা ঢেকে আছে ঘোর অন্ধকারে। ঘুমের ঘোরে মাধবী পুনরায় যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠলো। ছটফট করতে লাগলো অবিরত। সে কি কষ্ট মেয়ের! মাধবীর এমন কষ্ট দেখে শক্ত প্রাণের অধিকারী নিলাংসুর চোখ অব্দি ভিজে এলো। বসন্তরোগে আক্রান্ত প্রিয়তমাকে চেপে ধরলো নিজের বুকের সাথে। প্রিয়তমার নরম দেহখানা বুকের সাথে পিষে ফেলতে চাইলো। যন্ত্রনায় কাতর মাধবীও বিড়াল ছানার ন্যায় গুটিয়ে গেল নিলাংসুর বুকের আড়ালে। মাধবী ক্লান্ত কণ্ঠে বললো,
— আমাকে ছুবেন না। আমি নোংরা হয়ে গেছি।

নিলাংসু কথা বললো না। নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো মাধবীর ললাটে। বিড়বিড় করে বললো,
— তুমি আমার কাছে পবিত্রতার প্রতীক, মাধবীলতা! তোমার একটুখানি ছোঁয়ায় আমার মত পাপীরাও পবিত্র হতে বাধ্য।

নিলাংসুর কণ্ঠে ‘পাপী’ শব্দটার অর্থ মাধবীর একটুও বোধগম্য হলো না। সে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে ঘুমিয়ে পড়ল নিলাংসুর বুকের মধ্যিখানে। সেদিন সারা রাত নিলাংসুর চোখে ঘুম ধরা দিল না। সারাটা রাত মাধবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো সে। ভগবানের কাছে অসংখ্যবার প্রিয়তমার সুস্থতার প্রার্থনা করলো।

প্রায় পনেরো দিন পর সুস্থ হলো মাধবী। এ কদিন নিলাংসুর মাধবীর প্রতি যত্ন মাধবীকে ক্রমশ অবাক হতে বাধ্য করেছে। মন বলে, নিলাংসুর প্রেম নিখুঁত বটে! অথচ, স্বার্থপর মস্তিষ্ক তা যেনো মানতেই নারাজ। মন-মস্তিষ্কের এই দ্বন্ধ যুদ্ধে মাধবী ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত!

দরজায় কড়া নাড়ানোর শব্দে মাধবীর ধ্যান ভঙ্গ হলো। শাড়ির আঁচলটুকু ঠিকঠাক করে সরদর দরজা খুললো। ব্যগ্র মুখে নিলাংসুকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আপনা আপনি ভ্রুযুগল কুঞ্চিত হলো মাধবীর। নিলাংসু পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে কপালের ঘামটুকু মুছে নিয়ে বললো,
— জলদি তৈরি হয়ে নাও, মাধবীলতা। আমরা হাসপাতাল যাবো।

মাধবী বেশ অবাক হলো বটে। চোখ তার কপাল স্পর্শ করলো। ব্যস্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— হাসপাতালে? কেনো, কার ব্যামু হয়েছে?

নিলাংসু নিম্নস্বরে উত্তর দিলো,
— তোমার বাবার!
______________________
হাসপাতালের কেবিনের পড়ে আছে মাধবীর বাবা রামানাথ। হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ। হাতের উল্টোপিঠে সেলাইনের নল। সে কি বিদঘুটে দৃশ্য! মাধবী বাবার এহেন করুন অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো। নিলাংসু পাশে দাঁড়িয়ে মাধবীর মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করতে চাইলো তাকে। তবে লাভ বিশেষ হলো না। মাধবী বাবার হাতখানা আকড়ে বিলাপ করতে লাগলো,
— এটা কেমন করে হলো, বাবা? তুমি এতটা ব্যামার কি করে হয়ে পড়লে? সেদিনই তো ঠিকঠাক ছিলে। আজ এসব কি হয়ে গেল?

রামনাথের হাত প্রায় অবশ হয়ে আছে। তবুও তিনি বেশ কষ্টে হাত উঁচু করে মাধবীর মাথায় রাখলেন। বললেন,
— শান্ত হ, মেরি বাচ্চা! মে বিলকুল ঠিক আছি। ইয়ে এক ছোটাসা চুট হে, বাচ্চা। ঠিক হয়ে যাবে! যদি তেরা পতি আমারে হাসপাতাল নেহি লেকে আতা, তো হাম রাস্তায়ই মার যাতা।

মাধবী বেশ অবাক হলো। ক্রন্দন থামলো নিমিষেই। স্থির চোখে চেয়ে রইলো বাবার পানে। মানুষটা এত ভালো কেনো? মাধবী এই মানুষকে মনে প্রাণে ঘৃনা করতে চায়, তবে বারবার ব্যর্থ হয়ে সে। মানুষটা তার উপকারের ঝুলি এত ভারী করছে কেনো? সে কি করে এই উপকারের শোধবোধ করবে?
সেদিন সম্পূর্ণ রাত বাবার পাশটায় ঠাট মেরে রইলো মাধবী। নিলাংসুকে সাফসাফ বলে দিলো,বাবাকে এই অবস্থায় রেখে আজ সে বাড়ি যাবে না। কিছুতেই না।
মাধবীর জেদ দেখে না চাওয়া সত্ত্বেও নিলাংসু রাজি হলো। অসুস্থ বাবার পাশে মাধবীর থাকাটা দরকার এই মুহূর্তে!
________________________
— আপা, আপনি কি জানেন আপনার স্বামী একজন অপরাধী?
এলাকার এক মহিলার কথা শুনে মাধবী স্তব্দ হয়ে পড়ল। পরক্ষণেই মহিলার স্পর্ধা দেখে মাধবী রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো মহিলাটার পানে। কি স্পর্ধা! আমার বাড়ি বয়ে এসে আমার স্বামী নিয়ে কুকথা? মাধবী বেশ তেজ নিয়ে বললো,
— আমার স্বামী নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না, আপা। উনাকে নিয়ে চিন্তা করার জন্যে আমি এখনো মরে যাইনি।

মহিলাটা তবুও দমে গেলো না। গলা উচিয়ে বললো,
— আপনি তো বলবেনই। স্বামীর উপর অন্ধ বিশ্বাস মোটেও ভালো না, বুঝলেন? সেদিন আমার স্বামী আপনার বিশ্বস্ত স্বামীকে একটা নির্জন রাস্তায় খুন করতে দেখেছে, খুন!

আচমকা ‘খুন’ শব্দটা শুনে মাধবী হতবাক হয়ে গেলো। শিরদাঁড়া অব্দি কেপে উঠলো তার। অতি বিস্ময়ে সে হতবিহ্বল হয়ে পড়ল। মাথা যেনো হুট করে দুবার চক্কর দিয়ে উঠলো। চোখে মুখে অন্ধকার পরিলক্ষিত হতেই মাধবী বললো,
— দয়া করে মুখ সামলে কথা বলুন, আপা। আমি আর সইতে পারছি না এসব।
মহিলার বোধহয় এবার খানিকটা দয়া হলো। সে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মাথায় কাপড় তুলে মাধবীর দিকে চেয়ে বললো,
— চোখ কান একটু খোলা রাখুন, আপা। কে কখন কি হয়ে বের হয় তার কোনো ইয়াত্তা নেই। ভগবান কার মতিগতি কখন পাল্টে দেয়, কেউ বলতে পারে না।

সেদিন সম্পূর্ণ সময় মাধবীর ছটফট করেই কাটলো। ঘুমুতে পারলো না, দাড়াতে পারলো না, রান্নায় মন বসলো না। বারবার একটা কথাই ঘুরছে, নিলাংসু কি সত্যিই এতটা জঘন্য? তার মন মানছে না এ কথা! একটুও না।

সেদিন প্রায় মধ্যরাতে বাড়ি ফিরলো নিলাংসু। মাধবীকে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকতে দেখে নীরবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। পায়ের রক্তে মাখা জুতোটা নিয়ে আড়ালে স্নানাগারে চলে এলো। নিলাংসু চলে যেতেই মাধবী চট করে উঠে বসলো। নিলাংসুর পিছু পিছু স্নানাগার অব্দি এলো সে।
সেসময় যা তার চোখ দেখলো, তার তার নরম মন বিশ্বাস করতে চাইলো না। মাধবী মুখে দুহাত চেপে ধরলো। মাথাটা ভনভন করে উঠতেই পাশে থাকা পিলার চেপে ধরলো সে। নিলাংসুর জুতোয় তাজা তাজা রক্ত! নিলাংসু একটা গামছা দিয়ে সে রক্ত পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। তার গায়ের পাঞ্জাবির বুকের দিকটায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। মাধবী ভয়ের চোটে যেনো জ্ঞান হারাবে! মনে মনে চিৎকার করে বলতে লাগলো এ নারী, হ্যাঁ ভগবান, এ দৃশ্য যেনো মিথ্যে হয়। তার এতদিন পর জন্মানো বিশ্বাস যেনো এভাবে চূর্ণ বিচূর্ণ না হয়ে যায়। তবে আপসোস, মাধবীর প্রার্থনা ভগবান শুনলেন না। নিলাংসুর আসল রূপ শেষ পর্যন্ত মাধবীর সামনে চলেই এলো। তবে না! বিষয়টা আরো যাচাই করতে হকবে। তবেই মাধবী এ দৃশ্য বিচার করবে। কখনো কখনো চোখের দেখায়ও ভুল থাকতে পারে। কারণ যে মানুষটা সম্পূর্ণ ধরনীর কাছে ভগবানতুল্য, সেই মানুষটা এরূপ জঘন্য কাজ করতে পারে না! কিছুতেই না।
____________________________
নিলাংসু ঠোঁট চেপে ধরলো মাধবীর ললাটে। ক্ষুদ্র চুমু খেয়ে কিঞ্চিৎ হেসে বলল,
— আজ তো যুথিও বাড়ি নেই । তাই বলছি, সাবধানে থেকো। আজ আমার ফিরতে বেশ দেরি হবে।

এ কদিন নিলাংসুর ছোট বোন মাধবীদের সাথে ছিল। তার পড়শোনা শেষ হয়ে যাওয়ায় সে গ্রামে চলে গেছে। যুথির জন্যে নাকি পাত্র দেখা হচ্ছে। সুযোগ্য পাত্র পেলে তারা বিবাহ সম্পন্ন করতেই বিলম্ব করবেন না। এ কদিন যুথি বাসায় থাকায় মাধবী নিলাংসুর সেই রাতের বিষয়টা যাচাই করতে পারেনি। আজ সুযোগ এসেছে! আর মাধবী জানে সুযোগের সদ্ব্যবহার কেমন করে করতে হয়?

নিলাংসু বাড়ি ছেড়ে চলে যেতেই মাধবী ব্যস্ত হয়ে উঠলো। কদিন আগে আনা মুসলিম সেলাই ঘর থেকে একটা বোরকা এনেছিল মাধবী। দ্রুত সেই বোরকা দ্বারা নিজের আপদমস্তক ঢেকে নিল সে। নিলাংসুর পিছু পিছু একটা রিকশা নিয়ে তাকে অনুসরণ করতে লাগলো মাধবী।

তবে বিপত্তি ঘটলো একটু পরেই। নিলাংসুর নিজস্ব রিকশা কোনো গলির পথে যায়নি। বরং একটা বিশাল দালানের সামনে এসে তার রিকশা থেমে গেলো। মাধবী কিছুটা অবাক হয়ে রিকশা ছেড়ে নেমে দাড়ালো। এ বাড়িতে নিলাংসুর কিসের কাজ?

অতঃপর খুব সন্তর্পনে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো নিলাংসু। মাধবী তার পিছু পিছু বাড়িতে প্রবেশ করলে হুট করে সদর দরজা আটকে যায়! মাধবী চকিতে পেছন ফেরে।

— মাধবীলতা! আমার মাধবীলতা!
পেছন থেকে নিলাংসুর কণ্ঠ শুনে আত্মারাম কেপে উঠলো মাধবীর। বুকের ধরফরানি বেড়ে গেলো মুহূর্তেই। মাধবী স্থির পায়ে দাঁড়িয়ে রইলো নিজ স্থানে! নিলাংসু মাধবীর কানের কাছে মুখ রাখল। মাধবী যেনো জমে গেলো সে স্পর্শে! নিলাংসু বিড়বিড় করে বললো,
— আমি যাকে ধরা দেইনা সে আমায় ছুঁতে পারে না, মাধবীলতা! এমনকি তুমিও না! আমা অব্দি পৌঁছানো এ ভুবনের কারো সাধ্য নেই।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here