এই রাত তোমার আমার পর্ব ১২

#এই_রাত_তোমার_আমার
#সানজিদা_ইসলাম
#১২তম_পর্ব

সকালের সোনালী রদ্দুর প্রকৃতির মায়া ভরা আদরে ছেয়ে আছে চারপাশ।তারই মাধ্য থেকে এক ফালি রদ্দুর এসে ছেয়ে গেলো ফিমার চোখে মুখে। কিন্তু তার ঘুম পূর্ণ না হওয়ায় বেশ বিরক্ত হলো সে যা তার চোখে মুখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।মাহিয়াত পর্দাটা ছেড়ে দিলো সাথে সাথে আবার ছায়ায় আবৃত্ত হলো তার মুখ, এখন সে কিছুটা স্বস্থি অনুভব করলো কিন্তু তা বেশিক্ষণ টিকলো না।মাহিয়াত আবার পর্দাটা সরিয়ে দিলো ফিমাও পূর্বের ন্যায় আবার বিরক্ত বোধ করলো মাহিয়াত বেশ মজা পেলো এ খেলায় ফিমাকে বিরক্ত করতে তার বেশ লাগছে কিন্তু এই আলো ছায়ার খেলা বেশি দূর এগোয়নি ফিমা অন্যদিকে ঘুরে গেলো।

মাহিয়াত আর বিরক্ত করেনি তাকে নিজে ফ্রেস হয়ে নুহার সাথে কিছুক্ষণ কথা বললো আজ সে অফিসে যাবেনা বলে ঠিক করেছে, ফিমার সাথে সময় কাটাবে তাকে স্বাভাবিক করতে হবে। কিন্তু সমস্যা একটাই মেয়েটার দিকে তাকালেই অদ্ভুত ধরনের মায়া হয় যখনি মনে হয় সে তার সন্তানের মা। তার সন্তান ধীরে ধীরে তার ভেতর বড় হচ্ছে তখনি দুনিয়ার সব সুখ তাকে এনে দিতে ইচ্ছে করে যা কোনো ভালো সংকেত না।সে কোনো ভাবেই তার মায়ায় জড়াতে চায় না কারণ সে নুহাকে কষ্ট দিতে পারবেনা।

আজকে ফিমার জায়গায় নুহা থাকলে তাদের খুশির সীমা থাকতো না। দীর্ঘ অপেক্ষার ফল পেতো। নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবাসতো তাকে। ক্লান্তি, দুঃখে বা দুশ্চিন্তার লেশ মাত্র আসতে দিতনা তার আশেপাশে। কিন্তু আজকে ফিমা বলেই এত অবহেলা অপমান।যা তাদের সন্তানের উপর প্রভাব ফেলছে। মুখের কথা তো বারবার বলে দেয় টাকা দিয়ে সে সন্তান কিনে নিচ্ছে। আসলেই কি তাই টাকা দিয়ে কি মাতৃত্ব কিনে নেয়া যায়। সন্তানের মা হস্তান্তরিত করা যায়।টাকা দিয়েই কি এ সম্পর্ক মুছে ফেলা যায়?জানা নেই তার।ফিমার জায়গায় নুহা থাকলে খুব তো ক্ষতি হতো না?তাকে দোটানায় পড়তে হতো না।একটা মেয়েকে না না দুজন মেয়েকে এমন কষ্ট পেতে হতো না।

সে নিজেও কষ্টে আছে। চাইলেই ভালোবাসার মানুষটিকে জরিয়ে ধরতে পারে না। তার বুকে মাথা রেখে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে পারে না। তার প্রাণ খোলা হাসি দেখে না কত কাল।

আর ফিমা মেয়েটা শুধু কষ্ট পেয়েই এসেছে।প্রথম স্বামী ধোকা দিলো আড়ালে আর এখন সে তাকে ধোকা দিচ্ছে।না জানি দিন শেষে সে এই কষ্টের বোঝা বইতে পারে কিনা।

আর নুহা তার কষ্ট বোঝার ক্ষমতা মনে হয় খুব কম মানুষেরই আছে। নিজের স্বামীর ভাগ কি কেউ দিতে পারে সে দিচ্ছে হাসি খুশি মেনে নিচ্ছে। নিজের সংসারকে বাজি রেখেছে শুধু তার স্বামীর সুখের জন্য সংসারে পূর্ণতা আনার জন্য।সেও তো কম কষ্টে নেই।

মাহিয়াত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে যত এইসব কথা ভাবে ততই তার নিজেকে অপরাধী মনে হয়। সে যদি নুহার ভালো ভাবে খেয়াল রাখতো ব্যাস্ততা কমিয়ে দিয়ে তাকে সময় দিতো তাহলে হয়তো তাদের বাঁচ্চাটা আজ জীবিত থাকতো তাদের একটা হাসি খুশি পরিবার থাকতো।আজ তার গাফিলতির কারণে সবার এই অবস্থা। কিন্তু এবার সে এই রিক্স নেবে না।ফিমার সম্পূর্ণ খেয়াল সে নিজে রাখবে। নিজের করা ব্যবহার বা অবহেলার কারণে সে তার বাচ্চাকে হারাতে পারবে না।




আজ অনেক দিন পর ফিমা তৃপ্তি নিয়ে শান্তিতে অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছে।আরমোড়া ভাঙ্গতেই সে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে কিছুটা অবাক হলো। কিন্তু তার যতটুকু মনে আছে সে রাতে বারান্দায় ছিল আর এমনিতেও এখন প্রায় প্রতিদিনই ঘুম ভাঙ্গলে সে নিজেকে বারান্দায় পায়‌। ভোরে সূর্যের শীতল তাপেই তার ঘুম ভাঙ্গে। কিন্তু আজকে প্রায় সকাল এগারোটা হতে চললো। তারপর গত রাতের কথা মনে পড়লেই মনে খুশির জোয়ার উঠলো। নিশ্চয়ই মাহিয়াত তাকে রাতে কোলে করে ঘরে নিয়ে এসেছে।ইস কেনো যে সে তা বুঝতে পারলো না। ঘুম ভেঙ্গে গেলে কি হতো?মাহিয়াতের কোলে চড়ার শখ তো পূরণ হতো।কেনো যে সে এমন মরার মত ঘুমায়?গত কাল রাতে সে মাহিয়াতের সাথে ভালো সময় পার করছে মাহিয়াত তাকে গান গেয়ে শুনিয়েছে মাথায় বিলি কেটে দিয়েছে তাকে পরম যত্নে ঘুম পাড়িয়েছে, কথা গুলো ভাবতেই একরাশ মুগ্ধতা এসে ভর করলো মাহিয়াতের প্রতি।

আজ অনেক দিন পর শরীর আর মন ঝরঝরে লাগছে ঘুমটাও ঠিক ভাবে হয়েছে। কোনো দুশ্চিন্তা মাথায় ভর করেছে না আর না সে কোনো চিন্তা করছে। ভবিষ্যতে কি হবে তা ভেবে সে আর তার বর্তমানকে নষ্ট করতে চায় না। তার বাচ্চার ক্ষতি করতে চায় না।কি হবে এতো ভেবে আর দুশ্চিন্তা করে? ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। তার থেকে ভালো সময়টাকে উপভোগ করুক।তাহলে হয়তো সে ভালো থাকবে আর মাহিয়াতও তাই বলেছে।তাহলে তাই হোক হাতের কাছে যে সুখ গুলো পাবে তা কুড়িয়ে নিক পরে যেন আফসোস না থাকে।আর কিছু কিছু সুখের মুহূর্ত সারাজীবন মনকে প্রশান্ত করার টনিক হিসেবে কাজ করে যেমন কালকের রাতটা সে আজীবন মনে রাখবে। এমন আরও ছোট ছোট স্মৃতিই বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগায়। তাই এখান থেকেই সে ছোট ছোট জিনিসে খুশি হওয়ার চেষ্টা করবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্মৃতি জমা করবে যা দিয়ে অনায়াসে তার জীবন পার করতে পারবে।

—তুমি হেসেছিলে আঁচলে বেঁধেছিলেন মোরে
খুব নীরবে তোমার একটি হাঁসির পাশে আমার এই পৃথিবী রবে সকালের
সোনালী রোদ অধরে মেখে তুমি যেদিন প্রথম হেঁসেছিলে সেদিনই প্রথম হেঁসেছিলে আমার পৃথিবী, বিশ্বাস করো তোমার অপরূপ হাঁসিতে
হারিয়ে গেছে আমার অজস্র রাতের জোছনা দেখার স্মৃতি
নড়েচড়ে গেছ এ মনের সব রক্ষণশীল অনুভূতি সেদিনই প্রথম জেনেছি আমি ভালবাসা বলে
এক শব্দ আছে এই পৃথিবীতে,

(শওকত আলী শামীম)

মিহিয়াত ঘরে ঢুকে দেখে ফিমা জেগে গেছে। এমনিতেও সে তাকে ঘুম থেকে তোলার জন্যই এসেছিলো।

প্রায় দুপুরের কড়া রোদ তার মুখে পরছিলো কিন্তু সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই সে মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে। অদ্ভুত এক টান অনুভব করলো মাহিয়াত। তার ফোলা ফোলা মুখে এই হাসিটা যেনো তার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে, এলোমেলো চুল আর শাড়ি যেন শুধু তার জন্যই প্রযোজ্য হঠাৎই তাকে খুব সুন্দর লাগছে মাহিয়াতের কাছে। আগে মেয়েটার এমন হাসি সে দেখেনি।দেখবে কিভাবে সে আগে ফিমাকে এতো খেয়ালই করেনি।মাহিয়াত ফিমার এমন রুপ দেখে নিজের অজান্তেই এই লাইন গুলো বলে ফেললো,

হঠাৎ মাহিয়াতের কন্ঠে আবৃত্তি শুনে ফিমা খুব খুশি হয়ে গেলো,

—আপনি আবৃত্তিও করতে পারেন।

—হ্যা, মাঝে মাঝে করি, অজান্তেই বেড়িয়ে যায় মাঝে মাঝে শখ বা ইচ্ছাকৃত ভাবে করি না।

—এইটা কি আমার জন্য ছিল?

মাহিয়াত কিছুটা বিব্রত বোধ করলো কথা ঘুরাতে সে বললো,

—এসব কথা রাখুন তো।বেলা কত হয়েছে দেখেছেন?নাস্তা করা লাগবেনা নাকি? সারারাত জেগে থাকবেন আর দিনে ঘুমুবেন।আপার ক্ষুধা নাই লাগতে পারে তাই বলে কি আমার বাবাও এত বেলা পর্যন্ত না খেয়ে থাকবে নাকি? জলদি জলদি ফ্রেস হয়ে আসুন আমি ঘরেই খাবার আনছি। আপনার জন্য আমারও খাওয়া হয়নি। উঠুন উঠুন সময় মাত্র দশ মিনিট এর পর যেন আপনাকে ঘরে পাই‌।বলে তারাতাড়ি বেড়িয়ে পড়লো ফিমার আশেপাশে বেশি থাকা যাবে না,মেয়েটা বোকা বোকা চোখে চেয়ে থাকে কেমন জানি লাগে তার কাছে।

কিন্তু এমন হলে তো সে ফিমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাবে। আবার এছাড়া যে আর উপায়ও নেই। কিন্তু সে তো নুহাকে ভালোবাসে তাহলে কেনো অন্য কারো প্রতি দুর্বল হবে। তার ভালোবাসা কি এতই ঠুনকো যে চোখের আড়াল হতেই অনুভূতি গুলো পরিবর্তন হবে? নিজে উপর নিজের ভালোবাসার নুমুনার উপর ধিক্কার দিলো সে।আর নুহার কথা মনে পড়তেই আরো অপরাধবোধ জেগে উঠেলো। মেয়েটা তাকে বিশ্বাস করে ভালোবাসে আর সে কিনা…




সকালের নাস্তা করার পর মাহিয়াত ফ্রেস হয়ে ঘরে এসে ফিমাকে ডাক দেয়।

—ফিমা

সে নিচে নামছিলো কিন্তু মাহিয়াতের ডাকে আবার উপরে উঠে,

—জি কিছু বলবেন?

মাহিয়াত কয়েকটি শার্ট বের করে বলল,
—দেখুন তো কোনটা পড়বো?বুঝতে পারছিনা কোনটায় বেশি ভালো লাগবে?

ফিমা কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে মাহিয়াতের দিকে তাকিয়ে থাকলো। হয়েছে টা কি তার ?হঠাৎ এমন অদ্ভুত আচরণ করছে কেনো সে?মনে হচ্ছে যেন তাদের কত বছরের সংসার অথচ কিছুদিন আগেও তার কাপড়চোপড় ধরার কারণে নানান কথা শুনিয়েছে। আর এখন বলছে কাপড় কোনটা পড়বো?যেনো সে তার দেয়া শার্ট ছাড়া পরে না যতসব ঢং। ফিমাকে চুপ থাকতে দেখে মাহিয়াত তার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে,

—কি হলো বলছেন না কেনো?কোনটা পড়লে আমাকে বেশি ভালো লাগবে?

—যেমন করে বলছেন মনে হয় প্রথম বার শশুর বাড়ি যাচ্ছেন,তাই কোনটা পড়লে ভালো লাগবে জিজ্ঞেস করছেন।আগে তো কখনো জিজ্ঞেস করেননি। বলে শার্ট বাছাই করতে শুরু করলো

—হ্যা ধরে নিন প্রথম বার শশুর বাড়ি যাচ্ছি তাহলে এখন আমার কি পরা উচিত।

ফিমা ভাবলো মাহিয়াত বোধহয় মজা করছে কারণ নুহাদের বাড়িতে সে তো আর প্রথম যাচ্ছে না প্রায় প্রতিদিনই যায় তাই সেও মজা করে বললো,

—তাহলে তো আপনার পাঞ্জাবি পরা উচিত। শশুর বাড়ি প্রথম যাচ্ছেন একটা জামাই জামাই ভাব ধরতে হবে না।

পাঞ্জাবির কথা শুনতেই মাহিয়াত নাক মুখ কুঁচকে ফেললো,
—না না পাঞ্জাবি পরতে পারবো না, কেমন ঢোলা ঢোলা লাগে আর ইয়া লম্বা আমার ভালো লাগে না তার থেকে বরং কালো শার্টটাই পরি।আর আপনিও রেডি হয়ে আসুন।আজ দুপুরে আপনার ডক্টরের কাছে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট আছে তারপর আপনাকে নিয়ে সেখানে যাবো।

—আপনার শশুর বাড়ি আমি কেনো যাবো?আর নুহা কষ্ট পাবেনা আমাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে গেলে?

ফিমার কথায় মাহিয়াত চোখ বড়বড় করে বললো,
— নুহার কথা এখানে কেনো আসছে?আপনার কি মাথায় সমস্যা আছে? আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনাকে নিয়ে নুহাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো?আমি তো আপনার বাড়ির কথা বলছি।বাই এনি চান্স আপনি কি ভুলে গেছেন আপনার বাড়িও বর্তমানে আমার শশুর বাড়ি।আর সেখানেই আজকে প্রথম যাওয়া।

ফিমার হাসি খুশি মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেলো চোয়াল শক্ত হয়ে মুখে কঠিন ভাব চলে আসলো আর বেশ থমথমে গলায় বললো,

—আমি ঐ বাড়ি যাবো না।

মাহিয়াত শার্ট দেখতে দেখতে খামখেয়ালি ভাবে বললো,
—-যাবো না বললেই তো হয় না রে।আমি তাদেরকে কথা দিয়ে ফেলেছি। এমনিতেই তারা খুব রিকোয়েস্ট করছিলো। কতগুলো দিন গেছে আপনি বাড়ি যাননি। বিয়ের পরেও একবারের জন্যও না।তারা ফোন দিলে নাকি কথা বলতে চান না। বাড়িতে আসলেও রুম থেকে বের হন না।তারা আপনার আচরণে বেশ কষ্ট পাচ্ছে।তারা একবার আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে। তাই আমি না করতে পারিনি।প্লিজ রেডি হয়ে আসুন কিছু কাপড় গুছিয়ে নিন কিছুদিন তাদের কাছে থেকে আসুন দেখবেন আপনারও মন ভালো হয়ে গেছে আর তারাও কিছুটা খুশি হয়ে যাবে।

—আমার থাকা খাওয়ার পেছনে কি আপনার অনেক বেশি টাকা খরচ হচ্ছে সাহেব?তাহলে এক কাজ করুন আমার ভাগের টাকা থেকে কিছু টাকা কমিয়ে দিয়েন আমার থাকা খাওয়া বাবদ ।আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমাকে ঐ বাড়িতে যেতে বলবেন না। আপনি আমাকে নিয়ে খুব বেশি বিরক্ত বোধ করলে আমাকে অন্য কোথাও রেখে আসুন। এতেও আমার কোনো সমস্যা নেই কিন্তু ঐ বাড়িতে না। সেখানে আমার বাবা মা কেউ নেই। আমার বাবা মা থাকলে কখনোই আমাকে এমন একটা অভিশপ্ত জীবনে ঠেলে দিতে পারতো না।আমি যেদিন আপনাকে বিয়ে করে বের হয়েছি তখনি আমার মৃত্যু হয়েছে।আমি শেষ পর্যন্ত আশা নিয়ে ছিলাম তারা বিয়েটা হতে দিবে না কিন্তু তারা ঘাড় থেকে বোঝা নামানোর জন্য আমার জীবনটাকে শেষ করে দিলো।আমি তখনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম জীবন থাকতে তাদের আর বাবা মা বলে পরিচিয় দিবো না।আর তারপরেও যদি আপনি আমাকে জোর করেন তাহলে আমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাবো কেউ আমাকে খুঁজে পাবে না।

ফিমাকে উত্তেজিত হতে দেখে মাহিয়াত তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলো,

—ঠিক আছে বেগাম আপনাকে যেতে হবে না ঐ বাড়িতে আপনি উত্তেজিত হবেন না আপনি বসুন,বলে বেড সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিল,
—নিন পানিটা শেষ করুন আর চিন্তা করবেন না কোথাও যেতে হবে না আপনাকে আপনি এখান একটু বিশ্রাম নিন তারপর ডাক্তারের কাছে যাবো সেখান থেকে আশেপাশে কোথাও ঘুরে আসবো তাহলে দেখবেন আপনার মুড ঠিক হয়ে গেছে, এমনিতেও এতো দিন ঘরে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেছেন নিশ্চই? ঘুরে আসলে একটু ভালো লাগবে মাইন্ড ফ্রেস হয়ে যাবে।আর প্লিজ কিছুক্ষণ আগের সব কথা ভুলে যান টেনশন নিবেনা।এতে দুজনেরই ক্ষতি হবে।
বলে মাহিয়াত ফিমাকে কিছুক্ষণের জন্য একা রেখে চলে গেলো।যেন সে একান্তে নিজেকে শান্ত করতে পারে আর হলোও তাই ফিমা কিছুক্ষণ কান্না করে মনের মধ্যে লুকোনো কষ্ট মাটি চাপা দিলো।

তারপর ফ্রেস হয়ে মাহিতের দেয়া শাড়িটা পরে নিলো আর কি মনে করে যেন মাহিয়াতের একটা পাঞ্জাবি বের করে রাখলো।মাহিয়াত ঘরে এসে দেখে ফিমা শাড়ি পরে রেডি হয়ে বসে আছে চোখ গুলো ফোলা ফোলা নাকের ডগায় লাল হয়ে আছে সে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে দেখতে একদম বাচ্চা বাচ্চা লাগছে। সে বিছানার উপর পাঞ্জাবি দেখে অসহায়ের মত ফিমার দিকে তাকালো কিন্তু ফিমা অন্যদিকে ঘুরে আছে তাই সে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাঞ্জাবি আর পায়জামা হাতে নিয়ে ফিমার সামনে গেলো আর ফিমার নাক চেপে ধরল এতে তার রাগ যেনো আর একটু বেড়ে গেলো কিন্তু মাহিয়াত রিক্স নিলো না তার কিছু বলার আগেই ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।

আর ফিমা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, কিছুক্ষণ আগের ঘটনা গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠল একদম একটা নরমাল হাসব্যান্ড ওয়াইফের মত খুনসুটি করছিলো তারা।সে তো কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছিল তারা স্বামী-স্ত্রী হলেও তাদের মধ্যে ‌চুক্তি নামক একটা বিশাল দেয়াল আছে। কিন্তু ফিমা তো এমনটা চায়নি সে তো নরমাল একটা পরিবার চেয়েছিলো যেখানে টাকা পয়সার অভাব থাকলেও ভালোবাসা আর খুনসুটির অভাব থাকবে না।

ওয়াশরুমের দরজা খোলার আওয়াজে ফিমার ধ্যান ভাঙল।এক রাশ বিরক্তি মিশ্রিত হাসি নিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে ফিমার সামনে একবার হাতা টানছে তো একবার কলার, কিন্তু বেশ লাগছে মাহিয়াতকে কেউ বলবেই না সে আটত্রিশ বছরের একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ। উচ্চতা আর দৈহিক গঠনের করণে তাকে বড় জোর ত্রিশ বত্রিশ বছরের মনে হয়।ফিমার ইচ্ছে করছে মাহিয়াতের কানের পেছনে একটা নজর ফোটা দিয়ে দিতে এত সুন্দর কেনো সে?পুরুষ মানুষ বেশি সুন্দর হওয়া যে পাপ তা কি সে জানে না?এই যে সে বাবু সেজে বাইরে জাবে আর মেয়েরা তার দিকে ডেব ডেব করে তাকিয়ে থাকবে তার হিংসে হবে না বুঝি।

—আমাকে দেখা শেষ হলে নিচে চলুন বেগাম আমাকে দেখলে আপনার পেট ভরতেই পারে কিন্তু আমার বাচ্চাটার পেট ভরবে না।তাই খাওয়া দাওয়া করেই বেড়োবো।

ফিমা লজ্জা পেয়ে চোখ ঘুরিয়ে নিলো তারপর নিচে গিয়ে খাবার খেয়ে দুজনেই বেড়িয়ে পড়লো।প্রথমে ডাক্তার দেখালো ডাক্তারের কথা হলো বাচ্চার কন্ডিশন বেশি ভালো না প্রয়োজনের চেয়ে ওজন খুবই কম এতে করে ভবিষ্যতে বাচ্চার বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে তাই বাচ্চার মায়েরও ভালো ভাবে খেয়াল রাখতে বললো, চিন্তা মুক্ত রাখার পরামর্শ দিলো, খাবার আর ঔষধগুলো ঠিক মত খাওয়াতে বললো।ফিমাকে এসব বিষয়ে কিছুই জানালো না মাহিয়াত।তারা প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র নিয়ে হসপিটাল থেকে বের হতেই সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে দেখে ফিমা চমকে উঠলো…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here