একজীবনে শুধু তুমি পর্ব ৬

#একজীবনে_শুধু_তুমি
,
৬ষ্ঠ পর্ব
,
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
,
নেহালের প্রতি ঘৃণা জমে গেলো। সমস্ত ভালোবাসা আজকে শেষ হয়ে গেলো। আমার ভালবাসার মানুষটা এতো নিচ আমি ভাবতেও পারছিনা।!
,
রবি- আমি কাজী সাহেব কে ফোন দিয়েছি। সে আসলেই ধর্মীও রীতিতে বিয়েটা সম্পন্ন হবে।
,
মিস্টার নেহাল আপনি বিয়েটা আমাকে জোর করে না করলেও তো পারতেন।
আপনার স্ত্রী বিষয়ক কথা গুলো যে আমি বলেছিলাম। সেগুলো সেই সময়েই তো ক্লিয়ার করে দিতে পারতেন। আপনি কি ভেবেছেন জোর করে বিয়ে করে আমার ভালোবাসা পাবেন?
না তা কখনও সম্ভব না।
আপনার এই অফিসে আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি আপনামে ভালোবাসতাম।
কিন্তু এই মুহুর্তে আমি আপনাকে ঘৃণা করি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি।
,
তুমি ঘৃণা করো আর ভালোবাসো সেটা মেটার করে না, মেটার করে আমি তোমার স্বামী সেটা।
তোমার উপর সব অধিকার এখন থেকে আমার।
,
হুহ। স্বামী। স্বামী শব্দটার মানে যদি আপনি জানতেন তাহলে সেদিন আমাকে ফিরিয়ে দিতেন না।
আর ফিরিয়েই যদি দিলেন তাহলে আজকে এসবের মানে কি?
,
তোমাকে একটা গল্প শুনাই মিস, উপ্স, সরি মিসেস রাত্রি।
,
“তোমার সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীন আমার আরো তিনটা সম্পর্ক ছিলো।
যেটা আমার অজান্তেই তোমার বাবা জেনে যায়। আর আমাকে তোমার জীবন থেকে সরে যেতে বলে।
আমি যেতে চাইনি তাই তিনি আমার পায়েও ধরেছিলো। তবুও রাজি হয়নি। কারণটা তুমি ভালোই জানো। তোমার টাকাই আমার পড়াশোনা। হাহা।

কিন্তু তোমার বাবা যখন দেখলে আমি তোমার সাথে সম্পর্কটা চালিয়েই যাচ্ছি। আবারো আমার সাথে দেখা করে তোমার সাথে সম্পর্ক শেষ করতে বলে। কিন্তু আমি রাজি হইনি।
,
কিছুটা ভেবে প্লান চেঞ্জ করি।
আমি তোমার বাবার কাছে টাকা চাই।
যে আমাকে যদি আমার চাহিদা মোতাবেক টাকা দেয় তাহলে তোমাকে ছেড়ে দুরে চলে যাবো। তোমার বাবাও রাজি হয়ে যায়। যতইহোক কোনো বাবা তো আর চাইনা একটা খারাপ ছেলেকে তার মেয়ে ভালোবেসে যাক। তাই যত টাকা চাই সব দিয়ে দেয়। আমিও সেখান থেকে চলে আসি”
,
মিস্টার নেহাল আপনি বড়ই বোকা আজকে বুঝলাম।
এসব কথা আমাকে না জানালে হয়তো আপনার স্ত্রী হিসেবে কোনো না কোনোদিন আপনাকে মাফ করে আমার ভালোবাসতে শুরু করতাম।
এখন কি হবে ভেবে দেখেছেন?
,
সব ভেবেছি রাত্রি। তুমি শোনো আমার গল্প কিছুটা বাকি আছে।। ”
“তারপর তোমার সাথে ব্রেকাপ করা। অন্যকোথাও চলে যাওয়া। এভাবে একবছর কেটে যায়। একসময় আমি বুঝতে পারি তোমাকে ভালোবাসি। তখন তোমাকে তোমার পরিবারকে বা তোমার বাবার অফিস কিছুই আর খুজে পাইনি।
,
কিন্তু ভাগ্য দ্বারা কি না সম্ভব। আমার অফিসে তুমি জবের ইন্টারভিউ দিলে। আমি জানতাম আমাকে দেখলে তুমি চাকরিটা করতে চাইবেনা।
কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে শুধু আমার আশেপাশে দেখতে চেয়েছিলাম।
তাই এসব কিডন্যাপের প্লান করা। তারপর তোমার মনে সন্দেহ তৈরি করে দেওয়ার জন্য সেই রাতেই তোমাকে বাচাতে যাওয়া।
আমি এটাও জানি রাত্রি কতটা ইন্টেলিজেন্ট তাই এমন এমন কাজ করি যাতে করে আমাকে সন্দেহ করো। তুমি সেগুলোই করলে। আজকে অফিসে না আসতে অনুরোধ করাটাও ছিলো সেই প্লানেরই অংশ। তুমি আমাদের ফাদেই পা দিয়ে দিলে। আর এখন তুমি আমার স্ত্রী। হাহাহা
,
হাসুন খুব ভালো করে হাসুন

নেহাল মনে রাখবেন। এই স্ত্রী শুধু একটা শব্দ আপনার আর আমার মাঝে। এখানে না থাকবে কোনো অনুভূতি আর নাহি ভালোবাসা।
,
ভালোবাসবে রাত্রি। আজকে না হোক কালকে ভালোবাসবে। যদি তাও নাহয়, যেদিন আমি দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে সেদিন আমাকে ভালোবাসবে। কথাটা লিখে নিও। ভালো তুমি আবার বাসবে আগে যতটা ভালোবাসতে তার থেকে হাজার গুণ বেশি ভালো বাসবে।
,
আপনি স্বপ্নই দেখতে থাকেন মিস্টার নেহাল। আমি কখনো আপনাকে ভালোবাসবো না। আপনার জন্য থাকবে শুধু একরাশ ঘৃণা। সারাজীবন থাকবে। মরার আগ পর্যন্ত থাকবে।
,
আমি যেমন ১০০% সিওর ছিলাম আজকে তুমি আমার অফিসে আসবে। তেমনি আমি এখন অতটাই সিওর আছি যে তুমি আবার ভালোবাসবে। কতটা সেদিন তুমি নিজেই বুঝে নিও। যেদিন আমি থাকবোনা।
,
এই কথার মাঝখানে কাজী চলে আসলো।
ধর্মীয় রীতিমতো আমাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।
ঘৃণা থাকা সত্তেও বিয়েটা করতে হলো। শুধুমাত্র মাকে হারানোর ভয়ে।
,
বিয়ে শেষ হলে,
,
চলো এবার মায়ের কাছথেকে দোয়া চেয়ে নিয়ে আসি।
,
আপনার মা আছে??
,
তুমি আমার স্ত্রী, তোমার মা মানেই আমার মা।
,
যাকে মেরে ফেলতে চাইছিলেন একটু আগে তাকে মা বলতে আপনার লজ্জা করে না?
,
মেরে ফেলতে চাইছিলাম তো তোমার জেদ ভেঙ্গে ফেলতে। যদি তাকে মারার ভয় না দেখাতাম তাহলে তুমি কখনোই এই বিয়েতে রাজি হতে না।
,
নেহাল তোমাকে আমি মনের কথা কি ভাবে বোঝাই বলতে পারো।
নিজেই তো ঘৃণা তৈরি করে দিয়েছো তোমার প্রতি। সব করেছি, বিয়ের সব নিয়ম মেনেছি একবারো আমার মনকে জিজ্ঞাসা করেছো তার মত আছে কিনা?
না এই মনে শুধু ঘৃণা ঘৃণা ঘৃণা।(মনে মনে)
,
চলো রাত্রি যাওয়া যাক।
,
,
বাসাতে,
,
নেহাল আর আমি মায়ের সামনে দাড়িয়ে আছি। বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন পেপার মায়ের হাতে।
,
নেহালের তো বিয়ে হয়ে গেছে এটা কিভাবে করলি তোরা।
,
আন্টি,সরি মা। আমার কোনো জায়গাই বিয়ে হয়নি রাত্রি নিজের মনে মনেই সব কাহিনী তৈরি করে আমাকে জিজ্ঞাসা করতো আর আমি মজা নেওয়ার জন্য হ্যা হু করতাম।
,
যাক এখন আর আমার কষ্ট নেই।
সারাজীবনই চাইতাম তোমাদের হাত একসাথে হোক। আজকে তা হলো। আর কোনো চিন্তা নেই আমার।
,
জ্বি,মা। আপনি আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
,
সবসময়ই দোয়া করি তোমার জন্য তোমার সৎছেলের হাতে মেয়েকে দিয়ে যে আমি নিশ্চিন্ত।
,
মা তুমি যাকে সৎ বলছো সে একটা পাক্কা ভিলেন। আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কতকিছুই না করেছে।
আবার আমাকে নিজের জীবনে ফিরে পাওয়ার জন্য কত জঘন্য কাজটাই না করেছে। আমাকে কিডন্যাপ করেছে,
তোমাকে পর্যন্ত মেরে ফেলতে চেয়েছে। (মনে মনে)
,
নেহাল- মা আপনি আপনার সমস্ত কিছু গুছিয়ে নেন। আজকে থেকে আপনি আমাদের সাথে থাকবেন।
,
না বাবা। জামাইয়ের বাড়িতে থাকতে আছে নাকি!
,
জামাই বাড়ি না। আপনি ছেলের বাড়ি থাকবেন।
তাড়াতাড়ি সব গুছিয়ে নেন।
আর এই বাসাটাই আমি কেয়ার টেকার রেখে দিব, সমস্যা নাই।
আর মাসে মাসে এই বাড়িতে সবাই একবার করে ঘুরে যাবো।
,
সমস্ত কিছু গুছিয়ে নেহালের বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। আমার ঘৃণার সংসারে।
,
,
,
চলবে…..
,
,
কার কার এখনো কনফিউশান আছে হাত তুলেন।
,
বানান ভুল হলে মাফ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here