একজোড়া পায়রা পর্ব -০৬

#একজোড়া_পায়রা
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
#পার্ট৬

ছেলেটার চোখ দুটো আমার বড্ড চেনা।ছেলেটার চোখ বলছে সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকী মুচকী হাসছে।তার এমন মুচকী মুচকী হাসি দেখে আমার কাঁপা কাঁপি আরও বেড়ে যায়।গলা ঝেড়ে কেশে ছেলেটা বলে,,,

-ভয় লাগছে?

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলি।ছেলেটা শান্ত গলায় বলে,,,

-বেশ।ভয় পাওয়ার কিছু নেই।আগে শান্ত হও।ইমন ওকে একটা চেয়ার এনে দে তো।

ছেলেটার কথায় ইমন নামের ছেলেটা আর দিকে একটা চেয়ার এগিয়ে দেয়।মাস্ক পরা ছেলেটা আমায় চোখের ইশারায় বসতে বলে।আমি শান্ত হয়ে বসি।ছেলেটা আমি মুখোমুখি।মাঝখানে একটা টেবিল।ছেলেটা টেবিলে থাকা পেপার ওয়েটটা হাত দিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে শান্ত গলায় বলে,,,

-নাম?
-নৌরিন আহমেদ মেঘ।
-ঠিকানা?
-ভার্সিটির হল।
-আজব?বুঝতে পারো না?আমি তোমার ঠিকানা জানতে চেয়েছি।মানে তুমি কোথা থেকে এসেছো!

হুংকার দিয়ে ওঠে ছেলেটা।এই নিয়ে তিনবার ধমক খেলাম।আর সহ্য হচ্ছে না আমার।আটকাতে পারছিনা চোখের পানি।ঝাপসা হয়ে আসছে সব।

-এই মেয়ে কাঁদো কেন?আমি তোমায় মেরেছি?
-ধমক দিলেন যে!

কাঁদতে কাঁদতে বলি আমি।ছেলেটা হেসে বলে,,,

-আমার সোজাসাপ্টা প্রশ্নের এমন ত্যাড়াবাঁকা উত্তর দেবে ধমক দেবো না তো কি করবো?ভরা ক্যাম্পাসে আমার ওপর এক বালতি পানি ঢেলে দিয়েছো।তোমার জায়গায় অন্য মেয়ে হলে….

থেমে যায় ছেলেটা।টেবিলে থাকা বোতল থেকে গ্লাসে পানি ভরে আমার দিকে সে এগিয়ে দেয়,,,

-জানি ভয় পাচ্ছো।পানি খাও, ভয় চলে যাবে
-টর্চার করার আগে সবার সাথে আপনারা এমন করেন তাই না?আর আমি নোংরা না।না জানি কত মানুষ ঐগ্লাসে পানি খেয়েছে!ইয়াক ইয়াক।

আমার কথা শুনে সবাই হেসে দেয়।আজব, আমি তো কোনো হাসার কথা বলিনি।তো ওরা হাসছে কেন?আমি কৌতুহল চোখ নিয়ে সবার দিকে তাকাতে লাগলাম।

-So Miss Nowrin Ahmed Megh..! আমি আপনাকে তিনমাস হলো রিকুয়েষ্ট দিয়ে রেখেছি ফেসবুকে।
-অহ এই কথা?এটা তো আপনি মেসেজে বললেও পারতেন।আর আমার মনে হয় না আপনাকে এড করা আমার উচিত হবে।আসলে কোনো অপরিচিত মানুষকে আমি এড দেই না তো!তাই আর কী!
-মেয়ের মুখে কথা ফুটেছে দেখা যায়।তোতাপাখির মতো কথা বলছে।ওলে লে আমার তোতা পাখি!
-ভাইয়া স্বীকার করলাম আমি অপরাধ করেছি।আমি নাবিল ভাইয়ার জায়গার আপনার মাথায় পানি ঢেলেছি।শাস্তি দেওয়ার থাকলে দিন।এভাবে তোতাপাখি বলে অপমান করবেন না।
-আচ্ছা করলাম না অপমান।একটু আগে যেন তুমি লিস্টে এড করা নিয়ে কি বললে?
-অপরিচিতদের এড করি না?

ছেলেটা চেয়ার থেকে এবার উঠে বসে।আমার দিকে ঝুঁকে বলে,,,

-যদি বলি আমি তোমার পরিচিত?

তার শার্টের বোতাম একটা আলতো করে লাগানো ছিলো।আমার দিকে ঝুঁকায় তা খুলে যায় পুরোপুরি ভাবে।আর আমার চোখ যায় সেই তার বুকের দিকে।হাল্কা পশমের মধ্যেও তিলটা বুঝা যাচ্ছে।আমি চোখ বন্ধ করে বলি,,,

-ভাইয়া তিল আপনার বউয়ের সম্পদ।আমায় দেখান কেন?ছিহ!

আমার কথায় বাকী ছেলেগুলো হোহো করে হেসে উঠে। সামনে থাকা ছেলেটা হকচকিয়ে যায়।তাড়াহুড়ো করে শার্টের বোতামটা লাগিয়ে বলে,,,

-এই মেয়ে তুমি এত নোংরা কেন?
-নোংরা আমি না আপনি?আমি কি যে চে আপনার বুকের তিল দেখতে চেয়েছি?আপনিই তো দেখালেন আপনার বুকের তিল।

আমার কথা শুনে যে ছেলেটা আমায় এখানে নিয়ে এসেছিলো সে ছেলেটা বলে উঠে,,,

-যখন নিয়ে আসলাম একেবারে ভয়ে চুপষে ছিলো।এখন ভালোই ফটরফটর করছে।ছোটা প্যাকেট বাড়া ধামাকা।
-মুখ আছে ফটরফটর করবো তাতে আপনার কি?
-চুপ!

আবার ধমক।আজ আর আমার ভাত খেতে হবে না।ধমক খেয়েই পেট ভরে যাবে দেখছি।বেশ করেছি ছেলেটার মাথায় পানি ঢেলে।নেক্সট টাইম গোবর,ড্রেনের পানি,পচা ডিম সব একসাথে মিশিয়ে ঢালবো ব্যাটার মাথায়।

-যা বলার মুখে বলবে।বিড়বিড়ানোর কোনো মানে দেখি না।

মানে?এই লোকটা মনের ভেতর ঢুকে আমার কথা পড়ে ফেলে নাকি?জানলো কিভাবে বিড়বিড়াচ্ছি?
আঙুলের মাথা দিয়ে টেবিলে খটখট শব্দ করতে বলে,,

-যেহেতু অপরাধ করেছো তাই শাস্তি পেতে হবে।
-দেন।আমি মাথা পেতে নেবো।
-লিস্টে এড দাও।
-অসম্ভব।

কথাটা বলে আমি লাফ দিয়ে উঠে পড়ি।ছেলেটা শান্ত গলায় বলে,,,

-ভেবে দেখো।এমনিতেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাগিংয়ের জন্য বিখ্যাত।অপরাধ যা করেছো সে হিসাবে শাস্তি খুব কমই দেওয়া হয়েছে।অন্য কেউ থাকলে এতক্ষণে কি হতো তুমি নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছো।

বেশ কিছুটা সময় নিয়ে আমি ভাবি।রুমের এই কণা থেকে ওই কণায় পায়চারি করতে লাগি।তা দেখে ইমন নামের ছেলেটা ভেংচি কেটে বলে,,,

-উহ!না যেন সে কত বড় ডিসিশন নিতে যাচ্ছে।হ্যাঁ বলে দিলেই তো হয়!

কালো টিশার্ট পরা ছেলেটা ইমনকে হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে থামিয়ে দেয়।এতক্ষণে আমার বুঝা হয়েছে এটাই গ্যাংয়ের লিডার।মিনিট বিশেক ভাবার সিদ্ধান্ত নেই আমি তাকে এড করবো!পরে আনফ্রেন্ড করে দেওয়া যাবে। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আমি বলি,,,

-আচ্ছা আমি রাজী। আইডির নাম বলেন।
-শেখ শুভ্র।

আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।আর মানুষ পেলাম না শেষে এর ওপরই আমার পানি ঢালতে হলো?মনটা বলছে নিজের গালে নিজেই ঠাস ঠাস করে দুটো থাপ্পড় মারি।

-কি হলো?

আমার সামনে তুড়ি মেরে বলেন শুভ্র।আমার ধ্যান ভাঙে।আমি তোতলাতে তোতলাতে বলি,,,

-আ…আ..আপনি?
-বলছিলাম না?আগে থেকেই আমরা পরিচিত।এখন এড করো আমায়।
-জোরজোবরদস্তি হয়ে গেলো না?
-যে চে এসেছিলে।কি আর করার?নাও এড মি।

আমি ফেসবুকে ঢুকে ওনাকে এড করি।যখন ফেসবুকে ঢুকি তখন উনি একপ্রকার আমার ঘাড়ের ওপরই বসে ছিলেন বলা যায়।কোনো রকম উনিশ-বিশ করার সুযোগ দেন নি আমায়।উপস্থিত বাকী ছেলেদের উদ্দেশ্য করে বলে,,,

-ও তোদের ভাবী।কেউ যদি ডিস্টার্ব করে তাহলে তাকে মেরে হাড়গোড় ভেঙ্গে দিবি।

ওয়াও!জাতীয় ভাবী হয়ে গেলাম।দেবরের অভাব নেই দেখছি।একে একে সব ছেলেগুলো সালাম দিয়ে নিজেদের নাম বলে।তারপর শুভ্র আমায় ক্লাসে নিয়ে যায়।যাওয়ার আগে বলে,,,

-আনফ্রেন্ড বা ব্লক করার চিন্তা কল্পনাও করো না যেন!

মুচকী হেসে চলে যায়।আমি গিয়ে ক্লাসে বসতেই ফুল একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে মারে আমার দিকে।সেটা বড় কথা নয়।বড় কথা হচ্ছে বুশরার পিন মারা কথা।মেয়েটা কি কখনো ভালো হবে না?মুড নেই জবাবদিহি করার।সব প্রশ্নের একটাই উত্তর দিলাম,,

-পরে বলবো।


হলে গিয়ে এ টু যেড সব খুলে বলি এশাকে।আমার এই রকম পরস্থিতিতে মেয়েটা আমায় স্বান্তনা না দিয়ে হাসছে!

-ভাই আমি শিউর তুই মিঙ্গেল হবি।
-এএ মিঙ্গেল হবো!এখনকার সস্তা রাজনীতি আমার একদম পছন্দ না।আর নেতার সাথে প্রেমের তো প্রশ্নই আসে না। একে তো শান্তর জ্বালায় বাঁচি না তার মধ্যে এই তালগাছের উদয়!

ভেংচি কেটে বলি আমি। এশা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,,,

-ওয়াইফাই অন করে দেখ না!কিছু মেসেজ দেয় নাকি ভাইয়া?
-তোর এত ইন্টারেস্ট কেন?
-ওমা!থাকবে না?এত সুন্দর ছেলে!নাবিল না থাকলে আমি…

চোখ মারে এশা।আমি বিরক্ত নিয়ে বলি,,

-দাঁড়া বলতেছি নাবিল ভাইয়াকে।
-এই না না।সোনা আমার বলিস না কিছু ওকে।

আমি ভেঙচি কাটি।ওয়াইফাই অন করতেই দেখি শুভ্র মেসেঞ্জারে থিম নিকনেইম সব চেঞ্জ করে দিয়েছে।এগুলো দেখলে যে কেউ বলে দিবে আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড।ছেলেরা এত এডভান্স বুঝে কেন বুঝিনা।চ্যাটহ্যাডের পাশে সবুজ বাতি জ্বলছে।এই মেসেজ দিলো বলে,,,

-আজকে শিশিরকে পড়াতে আসো নাই?
-নাহ।খারাপ লাগলো তাই যাই নাই।
-কি হয়েছে আমার বাবুতার।
-কিছু না।
-বাবু খাইছো?
-হ্যাঁ চাচ্চু খাইছি।

আমার ঘাড়ের ওপর বসে এশা আমাদের চ্যাট দেখছে।আমার এমন রিপ্লাইয়ে মেয়ে হতভম্ব হয়ে যায়।মাথায় এক থাপ্পড় মেরে বলে,,,

-শা* আনরোমান্টিক।কত সুন্দর করে জিজ্ঞাস করলো বাবু খাইছো!আর কি রিপ্লাই দিলি।ধুর ধুর!

এশা চলে যায়।শুভ্র বেশ কিছুক্ষণ পরে নারাজের ইমুজি দিয়ে রিপ্লাই দেয়,,

-শুনছিলাম খাটো মেয়েরা প্রচুর রোমান্টিক হয়।কিন্তু তুমি যে এমন তা আমি ভাবি নি।চাচ্চু বলে অপমান না করলেও পারতে।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here