একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব -২৩

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
২৩
#WriterঃMousumi_Akter
মারাত্মক লজ্জা পেয়ে দূর্বল শরীর নিয়ে ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ালাম।ওয়াল ধরে দাঁড়িয়ে চোখ বোলালাম বাইরে।কী দারুণ দেখাচ্ছে চারদিক টা!কী স্নিগ্ধ সব কিছু!গাছের পাতাগুলি কেমন সতেজ হয়ে উঠেছে,উঠানে গাছের পাতায় ভরে গিয়েছে, বৃষ্টি যে তার সবটা উজাড় করে প্রকৃতি ভাসিয়ে দিয়ে গিয়েছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে।হঠাৎ মনে হলো তন্ময়ের কথা।তন্ময় কি সুস্থ হয়েছে!ছোঁয়া ঠিক আছে তো।নিশ্চয়ই ছোঁয়া ঠিক নেই।ঠিক তো থাকার কথা ও নয়।পৃথিবীতে সব অত্যাচার সহ্য করা গেলেও মানসিক অত্যাচার সহ্য করা যায় না।কারো কাছ থেকে প্রতারিত হওয়াটা প্রতিটা মানুষের জীবনেই সবথেকে বিষাদময় ক্ষণ।মন ভাঙার যন্ত্রণার মত আর কোনো যন্ত্রণা পৃথিবীতে নেই।যা মানুষের জীবন টাকেই বিষাক্ত করে তোলে।ছোঁয়া এবং তন্ময় দু’জনকেই ফোন করতে হবে।ওদের দু’জনের মিল হলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।আর আমি দায়িত্ব নিয়েই সবটা করব।জীবনে অন্তত এই একটা ভাল কাজ করি।

এরই মাঝে হঠাৎ তরীর চিৎকার আমার কানে ভেসে এলো।খুব করুণ সে চিৎকার! শরীরে ভীষণ আঘাত না পেলে কেউ এভাবে গুঙিয়ে ওঠেনা।মন টা কেঁদে উঠল আমার।ব্যাথা টা বোধহয় আমার গায়েই লাগল।আমার কানে স্পষ্ট ভেসে এলো,

‘আমি টাকা চু**রি করিনি।আমাকে আর মে**রোনা।আমি সহ্য করতে পারছিনা এ যন্ত্রণা।আম্মা আপনি তো আমাকে চেনেন? আমি কী কোনদিন চু**রি করতে পারি বলুন?আপনার ছেলেকে বোঝান না আম্মা!’
শাশুড়ি কঠিন কন্ঠে বললেন, ‘বাঁচতে চাইলে টাকা ফেরত দাও।না হলে আজ ভালো হবে না তরী।টাকা কোথায় পাচার করেছ বোনের বাড়ি?’

ওশান গালি দিয়ে বলছে, ‘ফকিন্নির বা*চ্চার গোষ্ঠিতে বিয়ে করে আমার কোনদিন ভালোই হলো না।’

শুধু দুড়ুম দুড়ুম আওয়াজ হচ্ছে।বোঝা যাচ্ছে তরীর গায়ে উরাধুরা আঘাত করছে।খুব বাজে গালিগালাজ করছে ওশান।শাশুড়ি ও খুব বাজে কথা শোনাচ্ছে,যত প্রকার কটুকথা আছে সব ই শোনাচ্ছে।ক্লান্তিতে আমি পা বাড়াতে পারছিনা।শরীর থরথর করে কাঁপছে।ওয়াল ধরে ধরে কোনরকম ওশানের রুমে গেলাম।ওশানের রুমে যেতেই আমার কী হয়ে গেল জানিনা।আমার ভেতরে কী কোনো অশরীরী শক্তি প্রবেশ করলো!র**ক্ত টগবগ করে উঠল রাগে।চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে আমার।সমস্ত শরীর কাঁপছে।ওশানের হাতে বড় একটা লোহার রড।তরীর মাথায় কেবল ই বাড়ি দিতে যাবে।তরী দুই হাত মুখের সামনে রেখে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।ওর পালানোর ও পথ নেই, শাশুড়ি পথ আটকে রেখেছে।আমি দ্রুত তরীকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলাম।আঘাত টা স্লিপ করে আমার কপালে কিছুটা খোঁচা লাগল।রাগে রাগে শাশুড়ি কে ঠেলে এগিয়ে গিয়ে ওশানের দুই গালে দুইটা থা**প্পা** ড় মা**র**লা**ম।ওশানের বুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বললাম,
‘কী ভাবিস তুই নিজেকে?মানুষ তুই?নাকি অ’মানুষ!

ওশান কে দেখে মনে হচ্ছে নেশা করেছে।চোখ দু’টো লাল হয়ে টলমল করছে।ওর হাব ভাব ও ভাল নয়।আজেবাজে কিছু খেয়ে বাসায় এসেছে।আজ ছোঁয়া ব্লক করেছে, নিশ্চয়ই ছোঁয়া আরো গা**লি গালাজ করেছে।এইজন্যই মাথা ঠিক নেই।

ওশান তীব্র রাগে কটমট করতে করতে বলল,

‘আমাদের স্বামী- স্ত্রীর মাঝে তুমি কেনো এসেছো?আমার বউ আমি মা**র**ব তুমি বলার কে?’

‘কে তোর স্ত্রী? তুই তো তালাক দিয়ে দিয়েছিস।ইসলামি শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী তিনবার তালাক দিলেই তো তালাক হয়ে যায়।তুই তো মুখে মুখে অজস্রবার তালাক দিয়েছিস।তাহলে কীভাবে ও তোর বউ হয়?’

‘তালাক মেনে নিয়ে দূর হয়ে যায় না কেনো?ওর জন্য আমার জীবনের সব সুখ শান্তি শেষ হয়ে গিয়েছে।আজ যদি ওই আপদ আমার সাথে না থাকত ;লাক্সারিয়াস একটা লাইফ লিড করতে পারতাম।শুধুমাত্র ও জড়িয়ে আছে বলেই সমস্ত সুখ পেয়েও আমি হারালাম।আমি আজ ওর ব্যবস্থা করেই ছাড়ব।’

‘আমার তো মনে হয় তুই তরীর জীবনের আপদ।তোর মতো বেয়াদব এর সাথে তরীর বিয়ে না হলে একটা লাক্সারিয়াস জীবনযাপন ও নিজে করতে পারত।’

‘ওহ রিয়েলি!আমি ওকে তালাক দিচ্ছি এখনি।এক তালাক,দুই তালাক, তিন তালাক,কাবিনের সমস্ত টাকা এখনি পরিশোধ করে দিচ্ছি।এখনি যেন দূর হয়ে যায়।যেখানে গেলে লাক্সারিয়াস জীবন পায় সেখানে যাক।শুধু আমাকে মুক্তি দিক।’

তিন তালাক একটা মেয়ের জন্য যে কী তা শুধু একটা মেয়েই জানে!ডিভোর্সি মেয়েগুলোকে সমাজ অভিশপ্ত ভাবে।এক কথায় বলবে ভাল হলে কি তালাক দিতো!।শ্বশুর বাড়ি একটু আধটু যন্ত্রণা কে না ভোগ করে,স্বামীর ঘর করা অত সোজা নয়।মানে সব দোষ ই একটা মেয়ের।তাকে যে কেনো ডিভোর্স দেওয়া হল কেউ জানতেও চাইবে না।পাশে ও দাঁড়াবেনা।শুধু দূর থেকে কটু কথা ই শোনাবে।তরী ও আজ বুঝে গিয়েছে,এই সংসার থেকে সে ছুটি পেয়ে গিয়েছে।

তরী ছলছল নেত্রে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ভাবি ছোঁয়ার নাম্বারে বারবার ফোন দিচ্ছে।কল যাচ্ছেনা বলে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে।আমার কী দোষ বলুন?’

‘তুমি এখনো এই অমানুষটার সাথে থাকতে চাও তরী?এখনো?জুতা খোলো।এরে পি**টা**ও।কী হলো চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?’

‘ভাবি এ আর ছোঁয়া দুজন’কেই যদি পি**টা**তে পারতাম! আসলে আমি দূর্বল বলেই পেয়ে বসেছে।’

ওশান তরীর দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,

‘তুই আবার ছোঁয়ার নাম মুখে আনছিস?আজ তোকে মে**রেই ফেলব।তোর জন্য আজ এত অশান্তি।’

আমি র*ক্ত চক্ষু নিয়ে ওশানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ওশান!আজ আমার হাতে তুই খু**ন হবি।কেউ আটকাতে পারবেনা।আমি আজ তোকে মে**রে জেলে যাব।আমার জীবনের সব থেকে প্রিয় মানুষটার জীবন তুই নষ্ট করেছিস।’

শাশুড়ি আমার কাঁধে হাত রেখে বলল,

‘বউমা তুমি অসুস্থ মানুষ। ওদের ব্যাপার ওদের বুঝতে দাও।তুমি যাওতো মা রেস্ট নাও। ওই ফকিন্নির বাচ্চা টাকা চু**রি করেছে।’

‘ আজ আপনি কোনো কথা ই বলবেন না আম্মা। আপনি তো মা হবার ই যোগ্য নন।আপনার নিজের মেয়ে নেই তো এইজন্য অন্য কারো মেয়ের দরদ আপনি বুঝতে পারেন না।আপনি যে আপনার ছেলেকে প্রশ্রয় দিলেন,এতে কী হতো?তরীর মাথায় ওই আঘাত টা লাগলে তরী মা**রা যেত।আপনার ছেলে জেলে যেত ওর ফাঁসি হতো।আপনি ছেলে হারাতেন,রোহান মা-বাবা হারাতো।কী হতো এতে?ভালোর ভালো কি কিছু হতো বলুন?আপনি তো আপনার ফ্যামিলি ই ম্যানেজ করতে পারেন না।আপনার ছেলের সাথে নিকৃষ্ট কাজের ভাগীদার আপনি হচ্ছেন।আপনি বিবেকের কাছে কী উত্তর দিবেন বলুন?আজ যদি আপনি প্রশ্রয় না দিতেন আপনার ছেলে এত বাড়ত না। বুঝেছেন? ‘

‘তুমি এসব কী বলছো সারাহ!আমি মেয়ের মর্ম বুঝিনা!কখনো দেখেছ আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি?আর আমি কীভাবে থামাব ওদের ঝামেলা?তরী টা**কা চুরি করতে না গেলে কি এত ঝামেলা হতো?’

‘কী করেছে টাকা দিয়ে?আপনি দেখেছেন চু**রি করতে?’

‘ওশানের অনেক টাকা হারিয়ে গিয়েছে।তাছাড়া ও ফোন কিনেছে টাকা চু**রি করে।বাকি টাকা ওর বোনদের কাছে পাচার করেছে।’

‘ফোন আমি তরীকে কিনে দিয়েছি,আপনাদের টাকা চু**রি করে ও কেনেনি।অহেতুক অত্যাচার করা বন্ধ করুন।এত নিকৃষ্ট ফ্যামিলি আমি আগে দেখিনি।যেমন মা, তেমন ছেলে।’

‘তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ কেনো মা।আর তুমি এত দামি ফোন তরীকে কিনে দিয়েছ কেনো?ওর হাতে ফোন মানায়?’

‘কেনো মানায় না ফোন!আপনি ফোন ইউজ করতে পারলে তরী কেনো পারবেনা?আপনিও এ বাড়ির বউ তরী ও এ বাড়ির বউ।আপনি পারলে তরী কেনো পারবেনা?কী কম আছে তরীর?’

‘ফোন তুমি কিনে দিয়েছ সেটা তো বলল না।সকালে রোশান বাইরে যাবার আগে ওর হাতে ফোন দেখে বলল, সারাহ ফোন রেখে গিয়েছে। ও বলল হুম।
কিন্তু ওশান আমাকে বলল,’ আম্মা সারাহ’র ফোন ওই মডেল না।ও টাকা চু**রি করে ফোন কিনেছে।’

‘বউ কে ফোন কিনে না দিলে সে তো চু**রি করবেই।’

ওশান রাগী চোখে বলল,

‘আমি ওরে ফোন কিনে দিব?ও কি ফোন রিসিভ করতে পারে?আমার ঘর থেকে জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে যা।’

ওশান তরীর সমস্ত জিনিস ছুঁড়ে ফেলে দিল। আরো গালি গালাজ করে বলল,

‘তোর জন্য ছোঁয়া আর আমার জীবনে আসতে চাইছে না। যতদিন তুই থাকবি ছোঁয়াকে পাব না।’

‘ওশান তুই ছোঁয়ার আশেপাশে ঘেষার চেষ্টা ও করিস না।’

‘সারাহ বেশি বাড়াবাড়ি করোনা।’

‘বাড়াবাড়ি তো শুরুই করিনি। ছোঁয়া তোর জীবনে আসবেনা, আমি বেঁচে থাকতে তো না।’

‘আমি তোমাকেও ছাড়ব না সারাহ।সব তোমার জন্য।ছোঁয়াকে না পেলে আমি তোমাকেও বাঁচতে দিব না।’

বলেই ওশান আমাকে ধাক্কা দিল।আমি পড়ে যেতেই কেউ আমাকে ধরে ফেলল।পেছনে তাকিয়ে দেখি রোশান স্যার দুই হাতে আমাকে আগলে ধরেছেন আর অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন ওশানের দিকে।
চলবে?

বিঃদ্র(ফেসবুক আপডেটের জন্য গল্প পোস্ট দিতে অসুবিধা হচ্ছে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here