এক খোলা অন্তরিক্ষ পর্ব -০৭ ও শেষ

#এক_খোলা_অন্তরিক্ষ
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
নিধি রাহানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। রাহান কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে। নিধি জড়ানো কন্ঠে বলছে,

–প্লিজ আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন না। আমি আপনাকে অন্যকারও সাথে সহ্য করতে পারব না।

রাহান মৌন থাকল। দুই হাত মুঠ করে রেখেছে সে। নিধি আবার বলে,

–আমি আপনাকে সত্যি খুব ভালোবাসি। পরিস্থিতির চাপে আপনার সাথে বিচ্ছেদ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু আপনাকে…..

–ব্যাস নিধি! থামো এবার।

নিধির অসম্পূর্ণ কথাকে থামিয়ে রাহান নিধিকে নিজের থেকে আলাদা করে। রাহান আবার বলে,

–তুমি নিজে আমায় ছেড়েছো। আমি ছাড়িনি। সেদিন তোমায় কারণ জিজ্ঞাসা করাতে যেই লে*ইম যুক্তি দিয়েছ সেটা কখনোই রিলেশন ব্রেকআপের কারণ হতে পারে না। তোমার ভাই দোষ করলেও তুমি তো করোনি। তারপরেও তুমি বিশ্বাস রাখতে পারলে না। এখন আর কিছু করার নেই। আর্শিয়াকে আমি আবারও ধোঁকা দিতে পারব না। তুমি সেদিন যেমন সব পেছোনে ফেলে চলে গেছিলে আজও চলে যাও। আমার পরিবার আশুকে আমার বউ হিসেবে পছন্দ করেছে।

নিধি ব্যাকুল হয়ে রাহানের হাত ধরে বলতে থাকে,
–প্লিজ প্লিজ। এভাবে বলবেন না। আমি আপনাকে ছাড়ার কারণ ছিল যা আপনারা কেউ জানেন না। কারণটা অতি জরুরী ছিল তাই আমি বাধ্য হয়েছিলাম।

রাহান তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
–কী এমন কারণ যে তুমি ব্রেকআপ করতে বাধ্য হয়েছিলে?

–ভাইয়ার ব্রেন টিউমার!

রাহান নিধির মুখ নিঃসৃত বাক্যটা শুনে হাসি ভুলে স্তব্ধ হয়ে গেল।

–হ্যাঁ। ভাইয়ার ব্রেন টিউমার সেকেন্ড স্টেজে আর টিউমারটা অনেক ভিতরে ও আকারে বড়ো। ডাক্তাররা ২০% বাঁচার চান্স দিয়েছে। টিউমারটার সাইজ ছোটো করতে ভাইয়া মেডিসিনও নিচ্ছে তারপর সার্জারি। ভাইয়া আশুকে নিজের ২০% অনিশ্চিত জীবনে রাখতে চায়নি। বিধবা হয়ে আশুর জীবনের রঙ উড়ে যাক চায়নি। আমার ভাই আশুকে অনেক ভালোবাসে। হুরকে যতোটা ভালোবেসেছিল ঠিক তেমনি। হুরের জন্য পা*গল হয়েছিল আর আশুর জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিলো। হয়তো হুরের ভালোবাসার জোরটা প্রখর ছিল! তাই তো! তাই তো ভাইয়া হুরের পথের অনুসারি হলো। হুর যখন মামির হাত ধরে বলেছিল, ‘মা আমার নিহাদকে আশু সামলাতে পারবে। তুমি ফুফিমাকে বলো আশুকে নিহাদের বউ করে আনতে।’ তখন ভাইয়ার কান্না আমাদের কান ভারী করেছিল। ভাইয়া চায়নি আশুও এমন কস্ট পাক।

রাহান স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছে। সে কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না। অন্যদিকে আর্শিয়া এতক্ষণ ওদের সব কথোপকথন শুনছিল। আর্শিয়ার শরীর বরফের মতো জমে গেছে। শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে সাথে শীতল স্বেদধারা। মস্তিষ্কে তার বারবার সিগনাল দিচ্ছে, ‘ভাইয়ার ব্রেন টিউমার!’ নিহাদ তাকে ছাড়ার কারণটা জেনে তার নিজেকে অপার্থিব জগতের মনে হচ্ছে। সবটা কেমন খালি খালি লাগছে তার।

রাহান নিজেকে সামলে বলে,
–তোমাদের জানানো উচিত ছিলো। আমরা সবাই পাশে থাকতাম। এতো বড়ো অসুখ কি লুকানো যায়? আজ নাহয় কাল বাহিরে আসতোই। আর দেখো!

নিধি ভেজা কন্ঠে বলে,
–আমি জানিনা কিছু। আমাকে বলা হয়েছে যাতে আশু ও আপনারা যাতে না জানেন। কিন্তু আজ আমি ভালোবাসার কাছে স্বার্থপর হলাম। আমি আপনাকে সত্যি ভালোবাসি রাহান।

রাহান চোখ বুঝে লম্বাশ্বাস নিয়ে বলে,
–তুমি বাড়ি যাও নিধি। কপালে যা আছে তাই হবে। আশুর দিকটা ভেবে দেখো। আমাকে আর অকুল পাথারে ফেলো না।

নিধি কিছু বলতে শব্দ করলে রাহান শক্ত কন্ঠে বলে,
–আমাকে ভালোবেসে থাকলে যাও!

নিধি স্তব্ধ দৃষ্টিতে অন্ধকারের মধ্যে রাহানের অবয়বের দিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে দৌঁড়ে ছাদ থেকে কাঁদতে কাঁদতে নেমে যায়। রাহান নিজের দুইহাতের দিয়ে মুখমণ্ডল বেষ্টন করে হতাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও নেমে যায়।
অন্ধকারের মাঝে এক মানবী নিজেকে দিশাহীন ভাবছে। বাবা-মা ও প্রিয় বান্ধুবীকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে দেখেছে এখন ভালোবাসার মানুষকেও দেখবে ভেবে নিজেকে এই ধরণীর বুকে জীবন্ত লা*শ মনে হচ্ছে। হুট করে আর্শিয়া পা*গলপ্রায় হয়ে হন্য হয়ে রুমে গিয়ে ঘুমের ঔ*ষুধের পাতাটা যা প্রায় শেষের দিকে তা নিয়ে আসে তারপর অন্ধকারে ছাদের বিপরীত পাশে গিয়ে কল ছেড়ে পানি মুখে দিয়ে একে একে চারটা ঔ*ষুধ গিলে ফেলে তারপর ভাঙা কাঁচের টুকরো দিয়ে নিজের বাম হাতের শিরার উপর টান দেয়। আস্তে আস্তে মাটিতে বসে। শূণ্য দৃষ্টিতে রাতের খোলা অন্তরিক্ষ সে অবলোকন করছে।

এদিকে আর্শিয়া যখন ঘুমের ঔ*ষুধ আনতে গিয়েছিল তখন অরিন আর্শিয়ার হন্য হয়ে ছাদের দিকে যাওয়ার দিকে লক্ষ্য করে কিছু না বুঝে ঠোঁট উলটে তাকিয়েছিল। তারপর সদর দরজা দিয়ে রাহানকে ঢুকতে দেখে রাহানকে জিজ্ঞেস করেছিল আর্শিয়ার এতো হন্য হয়ে ছাদের থেকে এসে আবার ছাদে যাবার কারণ কী?

রাহান তখন বোকার মতো অরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে যখন বুঝতে পারল, নিধির সাথে কথা বলার সময় আর্শিয়া ছাদে ছিল হয়তো! তৎক্ষণাৎ রাহান দৌঁড়ে ছাদে গিয়ে দেখে একটা অবয়ব ছাদের রেলিং ঘেষে বসে আছে। অরিনকে বলে ছাদের বাতি জ্বা*লালে সামনে আর্শিয়াকে দেখতে পায়। অরিন আর্শিয়ার হাতে র*ক্ত দেখে চিৎকার করে জোরে। মৃদুলা, শাহরিফ ও বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা ছাদের দিকে ছুটে আসে। রাহান ইতিমধ্যে আর্শিয়ার বাম হাতটা হার্ট লেভেল থেকে উুঁচুতে ধরেছে। আর্শিয়ার পাণ্ডুর মুখশ্রীর দিকে নজর গেলে সেখানে বিষাদের ছাঁপ স্পষ্ট দেখতে পায়।
শাহরিফ ছাদে এসে আর্শিয়াকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে দৌঁড়ে যায়। মৃদুলা ভয় পেয়ে পিছিয়ে পরে যেতে নিলে ছোটোমামী ওকে ধরে। শাহরিফ আর্শিয়ার সামনে বসে আর্শিয়ার গালে চা*পড় দিয়ে বলছে,

–কী করেছিস তুই এসব? কী করলি? আশু বোন আমার। কী করলি তুই এটা? কেনো করলি?

আর্শিয়া ধরা কন্ঠে বলে,
–আমি ক্লান্ত। খুব ক্লান্ত। হারানোর মিছিলে আমি নিজেই হারিয়ে গেছি।

শাহরিফ আর এক মূহুর্তও দেরি না করে আর্শিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে দৌঁড়ে ছাদের সিঁড়ে পার করে নেমে যাচ্ছে। এখানে আজ অনেকে আছে। আর্শিয়ার খালাতো ভাই-বোন, ভাতিজারাও আছে যারা আর্শিয়ারও বড়ো। আর্শিয়ার বড়ো ভাতিজা তৎক্ষণাৎ নিজের গাড়ি বের করতে বেরিয়ে পরে। শাহরিফ আর্শিয়াকে গাড়িতে তুলে নিজের কোলে শুইয়ে কা*টা হাতটা উুঁচু করে রাখে। আর্শিয়া চোখ বুঝে ফেলছে আস্তে আস্তে।

বিশ-পঁচিশ মিনিট পর হাসপাতালে পৌঁছালে ডাক্তাররা সু*ই*সা*ই*ড কে*স বলে চিকিৎসা করছিল না তখন আর্শিয়ার বড়ো ভাতিজা জিসান নিজে একজন ইন্টার্ন ডাক্তার হওয়ায় বাকিদের রেখে নিজে রিস্ক নিয়ে আর্শিয়ার চিকিৎসা শুরু করে। বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে জানায় ঘুমের ঔ*ষুধের কথা তাই সেটারও চিকিৎসা করতে থাকে।

………………
প্রায় ২দিন পর আর্শিয়ার জ্ঞান ফিরে। এই দুইদিন সকলের উপর দিয়ে যেনো টর্নেডো বয়ে গেছে। চোখ খোলা মাত্র শাহরিফ আর্শিয়ার গালে থা*প্পর দেয়। আর্শিয়া ভয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। শাহরিফ বোনকে জড়িয়ে কেঁদে দেয়। আর্শিয়া ঠোঁট কা*মড়ে দরজার বাহিরে তাকালে দেখে সকলের বিদ্ধস্থ মুখশ্রী। মৃদুলার ছোটো মুখটা চুপসে যাওয়া দেখে মায়া হলো। এতক্ষণে সকলে নিহাদের সত্যিটা জেনে গেছে। শাহরিফ চোখ মুছে উঠে বলে,

–এবার আমি যা বলব তাই হবে। তোকে আমি দুই সপ্তাহের মধ্যে ইতালি নিয়ে যাবো। এবার আর তোর টালবাহানা শুনব না। তোর অতীত তোকে বাঁচতে দিবে না। অনেক দূরে তোকে নিয়ে যাবো।

আর্শিয়া কিছু বলল না। মৃদুলা ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বলে,
–তুমি এমন করবে আমি ভাবতেও পারিনি।

এটা বলে মৃদুলা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। আর্শিয়া ওকে আস্তে করে ডেকেও পার পেলো না। শাহরিফ চলে যেতে নিলে আর্শিয়া মৃদু কন্ঠে বলে,

–ভাইয়া আমি বিয়ে করতে চাই না। ইতালি যাবো। নিজের ভবিষ্যৎ গড়বো।

শাহরিফ বোনের কপালে স্নেহের স্পর্শ করে বলে,
–হুম। মামা-মামীকে বলে নিধি ও রাহানের বিয়ের কথা ঠিক করছি। রাহান তোকেই বিয়ে করতে চায় কিন্তু মনের বিরুদ্ধে গিয়ে ওরা বা তুই কেউই সুখী হবি না।

আর্শিয়া আলতো হাসে। শাহরিফ বেরিয়ে যায়। জিসান আর্শিয়ার পাশে বসে আর্শিয়ার হাত ধরে বলে,

–মায়ের পর তুমি আমার দ্বিতীয় মা। আমার মা মা*রা যাবার পর ১৫ বছরের তুমি আমাকে বলেছিলে তুমি আমার মা। তখন থেকে তোমাকে আমি মা মানি। আমার পিচ্চি মা। কিন্তু তোমার থেকে এটা আশা করিনি।

আর্শিয়া ধীর কন্ঠে বলে,
–তখন নিজেকে কেমন লাগছিল তা বলে বুঝাতে পারব না। এতোদিনে হওয়া সবকিছু মিথ্যা হয়ে গেছিল। মনের অবস্থা তখন মৃ*ত ছিল।

জিসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–তোমার স্লি*পিংপি*লের অ্যাকশন এখনও কা*টেনি। রেস্ট করো।

_____
আরও একদিন পর আর্শিয়াকে নিয়ে ওরা বাড়ি ফিরে। শাহরিফ আর্শিয়াকে দেখে রাখার জন্য মৃদুলা ও চাচিকে বলে রাখে। সে কাগজপত্র সব ঠিক করছে। নিহাদকে নিধিরা আর্শিয়ার কথা না জানালেও কিছু মাধ্যমে নিহাদ জানতে পেরেছে। নিহাদ আর্শিয়াকে অন্য নাম্বার দিয়ে ফোন করলে আর্শিয়া রিসিভ করেনা। মেসেজ করলেও রিপ্লাই করেনা। শেষে আর্শিয়া বিরক্ত হয়ে লিখে,

“আমাকে তো নিঃস্ব করেছেন আবার কী চাই? আপনি আমার থেকে সবটা লুকিয়ে ধোঁ*কা দিয়েছেন। আমি আপনাকে ঘৃণা করি। আমাকে আর বিরক্ত করবেন না।”

আর্শিয়া এই নাম্বারটাও ব্লক করে। দুই সপ্তাহ নিহাদ কয়েকবার আর্শিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেও পারেনা। নিহাদ এখন সিঙ্গাপুরে ট্রিটমেন্ট নিচ্ছে আর আর্শিয়া ইতালি পারি জমাচ্ছে। নতুন ভবিষ্যতের আশায়।

নতুন শহর নতুন মানুষজন। আর্শিয়া ধীরে ধীরে নিজেকে অভ্যস্ত করছে। পাশের ফ্লাটের পাঁচ বছরের জেনিফার ও আর্শিয়ার সমবয়সী এলিনার সাথে ভালোই সখ্যতা গড়ে উঠেছে। ওদের সাথে ও ওদের মায়ের সাথে টাইম স্পেন্ড করেই দিন পার হয়ে যায় সাথে আছে “সাদা বি*ড়াল” খ্যাত এক ব্যাক্তির বোকা বোকা কথাবার্তা। আর্শিয়া বিরক্তও হয় আবার হাসেও।

এখানে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার এক মাসের মধ্যে খবর আসে, নিহাদ মা*রা গেছে। আর্শিয়া সেদিন দরজা বন্ধ করে সারাদিন কেঁদেছে। একবার নিহাদকে সরাসরি দেখতে ইচ্ছে করলেও তা সম্ভব না। আর্শিয়া এখন বাংলাদেশে ফিরতে পারবে না ভিসার কারণে। তখন শাহরিফ ও পাশের বাসার মানুষগুলো আর্শিয়াকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করেছে। শোক কাট্নো তো সহজ না কিন্তু মনের গহীনে চেপে সে সবার সাথে হেসে খেলে চলছে।

______________________________________________

পরিশিষ্টঃ
পাঁচ বছর পর। আর্শিয়া হাতে লিলি ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইতালির ভেনিস শহরে আর্শিয়া নিজের প্রথম বিবাহবার্ষিকী পালনে এসেছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই আর্শিয়া লিলি ফুলের খোঁজে বেরিয়ে পরেছে। তার “সাদা বি*ড়াল” খ্যাত স্বামীর যে শুভ্র রঙের এই ফুলটা অধিক পছন্দের! ভাসমান এই ভেনিস নগরটি মূলত কতগুলো দ্বীপের সমষ্টি। ইতিহাসে আছে, জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভাসমান এই শহরটি গড়ে উঠেছিল। পরে ধীরে ধীরে মানুষের সমাগম বাড়তে বাড়তে সমৃদ্ধ হয়ে উঠে দৃষ্টিনন্দন এই শহরটি। কটেজ থেকে একা বেরোলেও আর্শিয়া জানে তার সে ঠিক এখানে নিজের উপস্থিতি জানান দেবে। হলোও তাই! একগুচ্ছ রজনীগন্ধা হাতে ‘আব্রাহাম আলভেজ’ নিজের মুখমণ্ডল আবৃত করে আর্শিয়ার সামনে এসেছে। তা দেখে চমৎকার হাসে আর্শিয়া। ভীনদেশি পুরুষটি আর্শিয়াকে যেনো চোখে হারায়।

আকাশে শুভ্র মেঘপুঞ্জ ভেসে চলেছে সাথে মুখোমুখি দুজন নর-নারী হাতে শুভ্র ফুলের গুচ্ছ নিয়ে একে অপররের দিকে সম্মোহিতের ন্যায় তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম হাসি মুখে বলে,

–হ্যাপি এনিভার্সিরি মাই কুইন।

–হ্যাপি এনিভার্সিরি মাই কিং!

আর্শিয়ার মিষ্টি প্রতিউত্তরে আব্রাহাম হাসলো। ফুল বিনিময়ের পর দুজনে একত্রে হাঁটতে থাকলো। এক খোলা অন্তরিক্ষে আজ প্রেমের সমীরণ!

সমাপ্ত
পরিশিষ্ট এর আগ পর্যন্ত সবটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে তাই রাইটারের নামে অভিযোগ থাকলে ঝেড়ে ফেলুন। পাঠক সমাজ রাইটারকে অনেক কিছু বলে সাথে গল্প কিভাবে আগাবো তাও বলে! যা ঠিক না। আমি নিশ্চয়ই কিছু একটা ভেবেছি। আমি নাকি ইচ্ছে করে আর্শিয়াকে কস্ট দিয়েই চলেছি। কিন্তু বাস্তবে আর্শিয়া রূপায়িত চরিত্রটি এমনটাই কস্ট পেয়েছে। বাস্তবের সে গল্পের পরিশিষ্টঃ অংশে আসবে কিনা জানিনা তবে দোয়া করবেন যেনো ও নিজের জীবনে এমন কাউকে পায়। একটা মেয়ের বাবার মৃত্যুর দিকটা ভেবে দেখবেন সাথে ডিভোর্স!
ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। কপি নিষিদ্ধ।#এক_খোলা_অন্তরিক্ষ
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
নিধি রাহানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। রাহান কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে। নিধি জড়ানো কন্ঠে বলছে,

–প্লিজ আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন না। আমি আপনাকে অন্যকারও সাথে সহ্য করতে পারব না।

রাহান মৌন থাকল। দুই হাত মুঠ করে রেখেছে সে। নিধি আবার বলে,

–আমি আপনাকে সত্যি খুব ভালোবাসি। পরিস্থিতির চাপে আপনার সাথে বিচ্ছেদ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু আপনাকে…..

–ব্যাস নিধি! থামো এবার।

নিধির অসম্পূর্ণ কথাকে থামিয়ে রাহান নিধিকে নিজের থেকে আলাদা করে। রাহান আবার বলে,

–তুমি নিজে আমায় ছেড়েছো। আমি ছাড়িনি। সেদিন তোমায় কারণ জিজ্ঞাসা করাতে যেই লে*ইম যুক্তি দিয়েছ সেটা কখনোই রিলেশন ব্রেকআপের কারণ হতে পারে না। তোমার ভাই দোষ করলেও তুমি তো করোনি। তারপরেও তুমি বিশ্বাস রাখতে পারলে না। এখন আর কিছু করার নেই। আর্শিয়াকে আমি আবারও ধোঁকা দিতে পারব না। তুমি সেদিন যেমন সব পেছোনে ফেলে চলে গেছিলে আজও চলে যাও। আমার পরিবার আশুকে আমার বউ হিসেবে পছন্দ করেছে।

নিধি ব্যাকুল হয়ে রাহানের হাত ধরে বলতে থাকে,
–প্লিজ প্লিজ। এভাবে বলবেন না। আমি আপনাকে ছাড়ার কারণ ছিল যা আপনারা কেউ জানেন না। কারণটা অতি জরুরী ছিল তাই আমি বাধ্য হয়েছিলাম।

রাহান তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
–কী এমন কারণ যে তুমি ব্রেকআপ করতে বাধ্য হয়েছিলে?

–ভাইয়ার ব্রেন টিউমার!

রাহান নিধির মুখ নিঃসৃত বাক্যটা শুনে হাসি ভুলে স্তব্ধ হয়ে গেল।

–হ্যাঁ। ভাইয়ার ব্রেন টিউমার সেকেন্ড স্টেজে আর টিউমারটা অনেক ভিতরে ও আকারে বড়ো। ডাক্তাররা ২০% বাঁচার চান্স দিয়েছে। টিউমারটার সাইজ ছোটো করতে ভাইয়া মেডিসিনও নিচ্ছে তারপর সার্জারি। ভাইয়া আশুকে নিজের ২০% অনিশ্চিত জীবনে রাখতে চায়নি। বিধবা হয়ে আশুর জীবনের রঙ উড়ে যাক চায়নি। আমার ভাই আশুকে অনেক ভালোবাসে। হুরকে যতোটা ভালোবেসেছিল ঠিক তেমনি। হুরের জন্য পা*গল হয়েছিল আর আশুর জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিলো। হয়তো হুরের ভালোবাসার জোরটা প্রখর ছিল! তাই তো! তাই তো ভাইয়া হুরের পথের অনুসারি হলো। হুর যখন মামির হাত ধরে বলেছিল, ‘মা আমার নিহাদকে আশু সামলাতে পারবে। তুমি ফুফিমাকে বলো আশুকে নিহাদের বউ করে আনতে।’ তখন ভাইয়ার কান্না আমাদের কান ভারী করেছিল। ভাইয়া চায়নি আশুও এমন কস্ট পাক।

রাহান স্তব্ধ হয়ে চেয়ে আছে। সে কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না। অন্যদিকে আর্শিয়া এতক্ষণ ওদের সব কথোপকথন শুনছিল। আর্শিয়ার শরীর বরফের মতো জমে গেছে। শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে সাথে শীতল স্বেদধারা। মস্তিষ্কে তার বারবার সিগনাল দিচ্ছে, ‘ভাইয়ার ব্রেন টিউমার!’ নিহাদ তাকে ছাড়ার কারণটা জেনে তার নিজেকে অপার্থিব জগতের মনে হচ্ছে। সবটা কেমন খালি খালি লাগছে তার।

রাহান নিজেকে সামলে বলে,
–তোমাদের জানানো উচিত ছিলো। আমরা সবাই পাশে থাকতাম। এতো বড়ো অসুখ কি লুকানো যায়? আজ নাহয় কাল বাহিরে আসতোই। আর দেখো!

নিধি ভেজা কন্ঠে বলে,
–আমি জানিনা কিছু। আমাকে বলা হয়েছে যাতে আশু ও আপনারা যাতে না জানেন। কিন্তু আজ আমি ভালোবাসার কাছে স্বার্থপর হলাম। আমি আপনাকে সত্যি ভালোবাসি রাহান।

রাহান চোখ বুঝে লম্বাশ্বাস নিয়ে বলে,
–তুমি বাড়ি যাও নিধি। কপালে যা আছে তাই হবে। আশুর দিকটা ভেবে দেখো। আমাকে আর অকুল পাথারে ফেলো না।

নিধি কিছু বলতে শব্দ করলে রাহান শক্ত কন্ঠে বলে,
–আমাকে ভালোবেসে থাকলে যাও!

নিধি স্তব্ধ দৃষ্টিতে অন্ধকারের মধ্যে রাহানের অবয়বের দিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে দৌঁড়ে ছাদ থেকে কাঁদতে কাঁদতে নেমে যায়। রাহান নিজের দুইহাতের দিয়ে মুখমণ্ডল বেষ্টন করে হতাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও নেমে যায়।
অন্ধকারের মাঝে এক মানবী নিজেকে দিশাহীন ভাবছে। বাবা-মা ও প্রিয় বান্ধুবীকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে দেখেছে এখন ভালোবাসার মানুষকেও দেখবে ভেবে নিজেকে এই ধরণীর বুকে জীবন্ত লা*শ মনে হচ্ছে। হুট করে আর্শিয়া পা*গলপ্রায় হয়ে হন্য হয়ে রুমে গিয়ে ঘুমের ঔ*ষুধের পাতাটা যা প্রায় শেষের দিকে তা নিয়ে আসে তারপর অন্ধকারে ছাদের বিপরীত পাশে গিয়ে কল ছেড়ে পানি মুখে দিয়ে একে একে চারটা ঔ*ষুধ গিলে ফেলে তারপর ভাঙা কাঁচের টুকরো দিয়ে নিজের বাম হাতের শিরার উপর টান দেয়। আস্তে আস্তে মাটিতে বসে। শূণ্য দৃষ্টিতে রাতের খোলা অন্তরিক্ষ সে অবলোকন করছে।

এদিকে আর্শিয়া যখন ঘুমের ঔ*ষুধ আনতে গিয়েছিল তখন অরিন আর্শিয়ার হন্য হয়ে ছাদের দিকে যাওয়ার দিকে লক্ষ্য করে কিছু না বুঝে ঠোঁট উলটে তাকিয়েছিল। তারপর সদর দরজা দিয়ে রাহানকে ঢুকতে দেখে রাহানকে জিজ্ঞেস করেছিল আর্শিয়ার এতো হন্য হয়ে ছাদের থেকে এসে আবার ছাদে যাবার কারণ কী?

রাহান তখন বোকার মতো অরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে যখন বুঝতে পারল, নিধির সাথে কথা বলার সময় আর্শিয়া ছাদে ছিল হয়তো! তৎক্ষণাৎ রাহান দৌঁড়ে ছাদে গিয়ে দেখে একটা অবয়ব ছাদের রেলিং ঘেষে বসে আছে। অরিনকে বলে ছাদের বাতি জ্বা*লালে সামনে আর্শিয়াকে দেখতে পায়। অরিন আর্শিয়ার হাতে র*ক্ত দেখে চিৎকার করে জোরে। মৃদুলা, শাহরিফ ও বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা ছাদের দিকে ছুটে আসে। রাহান ইতিমধ্যে আর্শিয়ার বাম হাতটা হার্ট লেভেল থেকে উুঁচুতে ধরেছে। আর্শিয়ার পাণ্ডুর মুখশ্রীর দিকে নজর গেলে সেখানে বিষাদের ছাঁপ স্পষ্ট দেখতে পায়।
শাহরিফ ছাদে এসে আর্শিয়াকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে দৌঁড়ে যায়। মৃদুলা ভয় পেয়ে পিছিয়ে পরে যেতে নিলে ছোটোমামী ওকে ধরে। শাহরিফ আর্শিয়ার সামনে বসে আর্শিয়ার গালে চা*পড় দিয়ে বলছে,

–কী করেছিস তুই এসব? কী করলি? আশু বোন আমার। কী করলি তুই এটা? কেনো করলি?

আর্শিয়া ধরা কন্ঠে বলে,
–আমি ক্লান্ত। খুব ক্লান্ত। হারানোর মিছিলে আমি নিজেই হারিয়ে গেছি।

শাহরিফ আর এক মূহুর্তও দেরি না করে আর্শিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে দৌঁড়ে ছাদের সিঁড়ে পার করে নেমে যাচ্ছে। এখানে আজ অনেকে আছে। আর্শিয়ার খালাতো ভাই-বোন, ভাতিজারাও আছে যারা আর্শিয়ারও বড়ো। আর্শিয়ার বড়ো ভাতিজা তৎক্ষণাৎ নিজের গাড়ি বের করতে বেরিয়ে পরে। শাহরিফ আর্শিয়াকে গাড়িতে তুলে নিজের কোলে শুইয়ে কা*টা হাতটা উুঁচু করে রাখে। আর্শিয়া চোখ বুঝে ফেলছে আস্তে আস্তে।

বিশ-পঁচিশ মিনিট পর হাসপাতালে পৌঁছালে ডাক্তাররা সু*ই*সা*ই*ড কে*স বলে চিকিৎসা করছিল না তখন আর্শিয়ার বড়ো ভাতিজা জিসান নিজে একজন ইন্টার্ন ডাক্তার হওয়ায় বাকিদের রেখে নিজে রিস্ক নিয়ে আর্শিয়ার চিকিৎসা শুরু করে। বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে জানায় ঘুমের ঔ*ষুধের কথা তাই সেটারও চিকিৎসা করতে থাকে।

………………
প্রায় ২দিন পর আর্শিয়ার জ্ঞান ফিরে। এই দুইদিন সকলের উপর দিয়ে যেনো টর্নেডো বয়ে গেছে। চোখ খোলা মাত্র শাহরিফ আর্শিয়ার গালে থা*প্পর দেয়। আর্শিয়া ভয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। শাহরিফ বোনকে জড়িয়ে কেঁদে দেয়। আর্শিয়া ঠোঁট কা*মড়ে দরজার বাহিরে তাকালে দেখে সকলের বিদ্ধস্থ মুখশ্রী। মৃদুলার ছোটো মুখটা চুপসে যাওয়া দেখে মায়া হলো। এতক্ষণে সকলে নিহাদের সত্যিটা জেনে গেছে। শাহরিফ চোখ মুছে উঠে বলে,

–এবার আমি যা বলব তাই হবে। তোকে আমি দুই সপ্তাহের মধ্যে ইতালি নিয়ে যাবো। এবার আর তোর টালবাহানা শুনব না। তোর অতীত তোকে বাঁচতে দিবে না। অনেক দূরে তোকে নিয়ে যাবো।

আর্শিয়া কিছু বলল না। মৃদুলা ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বলে,
–তুমি এমন করবে আমি ভাবতেও পারিনি।

এটা বলে মৃদুলা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। আর্শিয়া ওকে আস্তে করে ডেকেও পার পেলো না। শাহরিফ চলে যেতে নিলে আর্শিয়া মৃদু কন্ঠে বলে,

–ভাইয়া আমি বিয়ে করতে চাই না। ইতালি যাবো। নিজের ভবিষ্যৎ গড়বো।

শাহরিফ বোনের কপালে স্নেহের স্পর্শ করে বলে,
–হুম। মামা-মামীকে বলে নিধি ও রাহানের বিয়ের কথা ঠিক করছি। রাহান তোকেই বিয়ে করতে চায় কিন্তু মনের বিরুদ্ধে গিয়ে ওরা বা তুই কেউই সুখী হবি না।

আর্শিয়া আলতো হাসে। শাহরিফ বেরিয়ে যায়। জিসান আর্শিয়ার পাশে বসে আর্শিয়ার হাত ধরে বলে,

–মায়ের পর তুমি আমার দ্বিতীয় মা। আমার মা মা*রা যাবার পর ১৫ বছরের তুমি আমাকে বলেছিলে তুমি আমার মা। তখন থেকে তোমাকে আমি মা মানি। আমার পিচ্চি মা। কিন্তু তোমার থেকে এটা আশা করিনি।

আর্শিয়া ধীর কন্ঠে বলে,
–তখন নিজেকে কেমন লাগছিল তা বলে বুঝাতে পারব না। এতোদিনে হওয়া সবকিছু মিথ্যা হয়ে গেছিল। মনের অবস্থা তখন মৃ*ত ছিল।

জিসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–তোমার স্লি*পিংপি*লের অ্যাকশন এখনও কা*টেনি। রেস্ট করো।

_____
আরও একদিন পর আর্শিয়াকে নিয়ে ওরা বাড়ি ফিরে। শাহরিফ আর্শিয়াকে দেখে রাখার জন্য মৃদুলা ও চাচিকে বলে রাখে। সে কাগজপত্র সব ঠিক করছে। নিহাদকে নিধিরা আর্শিয়ার কথা না জানালেও কিছু মাধ্যমে নিহাদ জানতে পেরেছে। নিহাদ আর্শিয়াকে অন্য নাম্বার দিয়ে ফোন করলে আর্শিয়া রিসিভ করেনা। মেসেজ করলেও রিপ্লাই করেনা। শেষে আর্শিয়া বিরক্ত হয়ে লিখে,

“আমাকে তো নিঃস্ব করেছেন আবার কী চাই? আপনি আমার থেকে সবটা লুকিয়ে ধোঁ*কা দিয়েছেন। আমি আপনাকে ঘৃণা করি। আমাকে আর বিরক্ত করবেন না।”

আর্শিয়া এই নাম্বারটাও ব্লক করে। দুই সপ্তাহ নিহাদ কয়েকবার আর্শিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেও পারেনা। নিহাদ এখন সিঙ্গাপুরে ট্রিটমেন্ট নিচ্ছে আর আর্শিয়া ইতালি পারি জমাচ্ছে। নতুন ভবিষ্যতের আশায়।

নতুন শহর নতুন মানুষজন। আর্শিয়া ধীরে ধীরে নিজেকে অভ্যস্ত করছে। পাশের ফ্লাটের পাঁচ বছরের জেনিফার ও আর্শিয়ার সমবয়সী এলিনার সাথে ভালোই সখ্যতা গড়ে উঠেছে। ওদের সাথে ও ওদের মায়ের সাথে টাইম স্পেন্ড করেই দিন পার হয়ে যায় সাথে আছে “সাদা বি*ড়াল” খ্যাত এক ব্যাক্তির বোকা বোকা কথাবার্তা। আর্শিয়া বিরক্তও হয় আবার হাসেও।

এখানে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার এক মাসের মধ্যে খবর আসে, নিহাদ মা*রা গেছে। আর্শিয়া সেদিন দরজা বন্ধ করে সারাদিন কেঁদেছে। একবার নিহাদকে সরাসরি দেখতে ইচ্ছে করলেও তা সম্ভব না। আর্শিয়া এখন বাংলাদেশে ফিরতে পারবে না ভিসার কারণে। তখন শাহরিফ ও পাশের বাসার মানুষগুলো আর্শিয়াকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করেছে। শোক কাট্নো তো সহজ না কিন্তু মনের গহীনে চেপে সে সবার সাথে হেসে খেলে চলছে।

______________________________________________

পরিশিষ্টঃ
পাঁচ বছর পর। আর্শিয়া হাতে লিলি ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইতালির ভেনিস শহরে আর্শিয়া নিজের প্রথম বিবাহবার্ষিকী পালনে এসেছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই আর্শিয়া লিলি ফুলের খোঁজে বেরিয়ে পরেছে। তার “সাদা বি*ড়াল” খ্যাত স্বামীর যে শুভ্র রঙের এই ফুলটা অধিক পছন্দের! ভাসমান এই ভেনিস নগরটি মূলত কতগুলো দ্বীপের সমষ্টি। ইতিহাসে আছে, জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভাসমান এই শহরটি গড়ে উঠেছিল। পরে ধীরে ধীরে মানুষের সমাগম বাড়তে বাড়তে সমৃদ্ধ হয়ে উঠে দৃষ্টিনন্দন এই শহরটি। কটেজ থেকে একা বেরোলেও আর্শিয়া জানে তার সে ঠিক এখানে নিজের উপস্থিতি জানান দেবে। হলোও তাই! একগুচ্ছ রজনীগন্ধা হাতে ‘আব্রাহাম আলভেজ’ নিজের মুখমণ্ডল আবৃত করে আর্শিয়ার সামনে এসেছে। তা দেখে চমৎকার হাসে আর্শিয়া। ভীনদেশি পুরুষটি আর্শিয়াকে যেনো চোখে হারায়।

আকাশে শুভ্র মেঘপুঞ্জ ভেসে চলেছে সাথে মুখোমুখি দুজন নর-নারী হাতে শুভ্র ফুলের গুচ্ছ নিয়ে একে অপররের দিকে সম্মোহিতের ন্যায় তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম হাসি মুখে বলে,

–হ্যাপি এনিভার্সিরি মাই কুইন।

–হ্যাপি এনিভার্সিরি মাই কিং!

আর্শিয়ার মিষ্টি প্রতিউত্তরে আব্রাহাম হাসলো। ফুল বিনিময়ের পর দুজনে একত্রে হাঁটতে থাকলো। এক খোলা অন্তরিক্ষে আজ প্রেমের সমীরণ!

সমাপ্ত
এক খোলা অন্তরিক্ষ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here