এক চিলতে সিঁদুর পর্ব -১০

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_১০
#অধির_রায়

“আমি নিয়তিকে ঠকিয়ে বিয়ে করি৷ আমাদের বিয়ে হয় ছোটখাটো একটা মন্দিরে৷ যেন তেমন কেউ জানতে না পারে৷ নিয়তিকে প্রথম দেখাই আমার ভালো লেগে যায়৷ আমাদের বিয়েটা ছিল নকল৷ কিন্তু নিয়তিকে সারাজীবন কাছে পাওয়ার জন্য রঙের পরিবর্তনে আমি তার সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দেয়৷ বিশ্বাস করো তার সাথে আমি কোন অন্যায় করিনি৷ তাকে টার্চ করার আমার সম্পুর্ন অধিকার আছে৷”
.
“হুম বুঝতে পারলাম৷ তুমি তার সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দিলে৷ কিন্তু তাকে আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে বানিয়ে কেন নিয়ে আসলে? মা তো তোমার বিয়ের জন্য প্রতিদিন বলে৷”
.
“সবকিছু হয়েছে নিয়তির সৎ মার জন্য৷ নিয়তির সৎমা নিয়তির বাবাকে বিভিন্ন ধরনের ভুল বুঝিয়ে এসব কাজ করতে বাধ্য করেছে৷ আমি উনার কথামতো বিয়ের দুই দিন পর একটা নকল ডিভোর্স পেপার বানায়৷ কিন্তু নিয়তি জানতে পারে কোন আদালত দুই দিনের মাথায় ডিভোর্স পেপার তৈরি করে দেয় না৷ ডিভোর্স নিতে গেলে সর্বনিম্ন তিন মাস সময় দেন৷”
.
“তারপর কি হলো? থেমে গেলে কেন?”
.
নির্বণ চোখের জল মুছে,
“নিয়তির সামনে তার বাবার আসল পরিচয় ফুটে উঠে। যদিও তিনি ছিলেন একটা মাধ্যম। আসল শয়তান ছিল নিয়তির সৎমা৷ আমি তাকে বলে দেয়, ‘আমার কাছ থেকে নিয়তিকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবার বিয়ে দিবে।’ এজন্য বলেছি যেন নিয়তি আমাকে ছেড়ে না যায়৷”
.
ছোঁয়া এক কদম পিছিয়ে,
“ছি দাদা! তুমি এতো নিচ৷ একটা মেয়ের জীবন ধ্বংস করে দিলে। তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথাই ছিল তার সাথে তুমি……! তোমাকে আমি কতো বিশ্বাস করতাম৷ আর তুমি… ”
.
ছোঁয়া আরও কিছু বলার আগেই নির্বণ ছোঁয়ার হাত ধরে টলমল নয়নে,
“আমি যা করেছি নিয়তিকে কাছে পাওয়ার জন্য করেছি৷ আমি এমন না করলে আমার জায়গায় অন্য কোন ছেলে নিয়তির জীবন ধ্বংস করে দিত।”
.
ছোঁয়া নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে,
“শেয়ালের হাতে মুরগী দিতে চাও না৷ কিন্তু তুমি নিজেই শেয়াল সেজে নিয়তিকে ভক্ষণ করলে৷”
.
“তুমি আমাকে যা খুশি তাই বলো। আমার নিয়তিকে আমার কাছে নিয়ে এসে দাও৷”
.
“তুমি কি পারতে না তার বাবা মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে নিয়তির পাশে দাঁড়াতে!”
.
নির্বণ ছোঁয়ার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। নির্বণ বিছানায় বসে ছোট বাচ্চার মতো হাঁটু ভাজ করে কান্না করতে থাকে৷ ছোঁয়া নিজের ভাইয়ের কষ্ট দেখে নির্বণের কাঁধে হাত রাখে৷
.
“যা হবার হয়ে গেছে। এখন আমাদের উচিত নিয়তির খোঁজে বের করা৷ আমাদেরকে নিয়তির বাড়িতে যেতে হবে।”


ছোঁয়া নির্বণ দু’জনে মিলে নিয়তিদের বাড়িতে যায়৷ নির্বণ কলিং বেল বাজাতেই নিয়তির বাবা দ্বার খোলেন৷ নির্বণকে দেখেই নিয়তির বাবা দরজা লাগাতে নিলেই নির্বণ জোর করে রুমের ভিতরে ঢুকে পড়ে৷
.
নিয়তি বাবা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“তোর এতো বড় সাহস তুই আমার বাড়িতে এসেছিস৷ আমার বাড়ি থেকে এখনই বেরিয়ে যা।”
.
ছোঁয়া নিয়তির বাবার সামনে এসে,
“আমরা একটা দরকারে আপনাদের বাড়িতে এসেছি। আমি ছোঁয়া। নির্বণের ছোট বোন৷”
.
ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠেন,
“আমি তোমাদের সাথে কোন কথা বলতে চাইনা৷ তাই তোমরা ভালোই ভালোই চলে যাও৷”
.
“আমরা এখান থেকে চলে গেলে আপনার মেয়েকে খুঁজে এনে দিবে কে?”
.
নিয়তির বাবা চকিত হয়ে,
“নিয়তিকে খুঁজে যাওয়া পাচ্ছে না মানে৷ সে তো তোমাদের বাড়িতে ছিল৷”
.
“হুম আমাদের বাড়িতেই ছিল। কিন্তু আজ রাতে চিঠি লিখে চলে গেছে৷ কোথায় যেতে পারে কিছুই জানি না?”
.
নিয়তির বাবা রুমের মাঝে কোন কিছু না বলে নির্বণ আর ছোঁয়ার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসেন৷ নির্বণ কিছু বলতে নিলেই চোখের ইশারায় কথা বলতে মানা করেন৷ নিয়তির বাবা তাদের একটা নির্জন জায়গা নিয়ে আসেন৷ তিনি বলতে শুরু করেন,
“নিয়তির ভালো কোন বান্ধবী নেই৷ নিয়তি কোথাও গেলে একমাত্র যেতে পারে তার মামার বাড়ি৷ নিয়তি অভিমান করে তার মামার বাড়িতেই যায়৷”
.
নির্বণ মুচকি হেঁসে,
“নিয়তির মামার বাড়ি কোথায়? আমরা এখনই সেখানে যাত্রা শুরু করবো৷”.
.
নিয়তির বাবা চুপি চুপি তাদের ঠিকানা দিয়ে দেন। তিনি কথা না বাড়িতে তাড়াতাড়ি করে সেখান থেকে বাড়ির দিকে পা বাড়ান৷ একটু দূরে গিয়ে,
“তোমরা এখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে যাও৷ এখানে থাকলে তোমাদের বিপদ হতে পারে৷”
.
নির্বণ ছোঁয়া নিয়তির বাবার কথা মতো চলে আসে৷ বাড়িতে এসে কিছু পরিমাণ খাবার খেয়ে সিলেটের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে৷
_____

নিয়তি সন্ধ্যার দিকে তার মামার বাড়িতে আসে৷ নিয়তিকে দেখে নিয়তির মামী রান্না ঘর থেকে বাহিরে আসে৷ তিনি হাসিমুখে বলে উঠেন,
“তুমি আসবে আমাকে একটা ফোন করবে না৷ তোমার জন্য পছন্দের কচু শাখ দিয়ে শুটকি মাছের চটচটি রান্না করতাম৷”
.
নিয়তি মলিন হাসি দিয়ে,
“মামী আমি তোমাদের সারপ্রাইজ দিতেই এসেছি৷ ফোন করে আসলে তোমরা সারপ্রাইজ হতে!”
.
নিয়তির মামী নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে,
“আমারও যদি তোমার মতো একটা মেয়ে থাকতো৷ তাহলে সেও তোমার মতো আমাকে ভালেবাসতো৷ কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস? আজ আমি নিঃসন্তান।”
.
মামীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে,
“আমি তোমাদের অভাব পূরণ করতে পারবো না৷ কিন্তু আমি এবার তোমাদের এখানে অনেককক দিন থাকবো৷”
.
নিয়তির মামী চোখের জল মুছে,
“কই গো! দেখো কে এসেছে? আমাদের নিয়তি এসেছে৷ দেখে যাও৷”
.
নিয়তির মামা তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে আসেন৷ নিয়তির তার মামাকে প্রণাম করে। হাসি মুখে বলে উঠেন,
“আমার ছোট মা’টা একদম শুকিয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি তাকে কিছু খেতে দাও৷”
.
নিয়তি হাসি মুখে,
“আমি একটুও শুকায় নি৷ বরং আগের তুলনায় আমি অনেক মোটু হয়েছি৷”
.
নিয়তি তার মামা মামীর সাথে রুমে আসে৷ তার মামার অবস্থান হলো মধ্যবিত্ত৷ নিয়তিকে পেয়ে তারা নিঃসন্তানের কথা ভুলে যায়৷ নিয়তির মা মারা যাওয়ার পর নিয়তিকে নিজেদের কাছে রেখে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়তির বাবা উনার মেয়েকে কিছুতেই অন্যের বাড়িতে রাখতে চাননি৷
.
নিয়তি গরম গরম ভাতের সাথে আলু ভর্তা, ছোট মাছ দিয়ে খেয়ে নেয়৷ অনেক তৃপ্তি করে খায়৷ এখান কার বিল থেকে তার মামা কিনে এনেছেন৷ নিয়তি খাওয়ার পর বলে উঠে ,
“মামী আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে৷ কাল তোমাদের সাথে অনেক গল্প করবো৷”
.
“ওকে সোনা। অনেক দূর থেকে এসেছো একটু ঘুমিয়ে নাও৷ ঘুমিয়ে নিলে ভালো লাগবে৷”
.
নিয়তির মামী নিয়তির জন্য বিছানা করে দেন৷ নিয়তি তার মামীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
“মামী তুমি আমাকে একটা কাজও করতে দিচ্ছো না৷”
.
“তোমাকে আমি পেটে ধরিনি৷ কিন্তু তুমি আমার কাছে আমার মেয়ের থেকে কোন অংশে কম নয়৷ তোমার জন্য করবো না তো কার জন্য করবো৷ তুমি শুয়ে পড়ো৷ আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি৷”
.
নিয়তি মামীর কথা শুনে কান্না করে দেয়৷ অশ্রু চোখে বলে উঠে,
“আজ যদি আমার মা বেঁচে থাকতেন তাহলে আমার সাথে এমনই করতো৷ তুমি আমাকে মায়ের অভাব বুঝতে দাওনি।”
.
নিয়তির চোখের জল মুছে দিয়ে,
“কান্না করে না৷ আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”
.
নিয়তি শুয়ে পড়ে। নিয়তির মামী নিয়তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন৷ ক্লান্ত নিয়তি কখন ঘুমিয়ে পড়েছে মনে নেই৷ নিয়তির মাথা থেকে চুল সরে যায়৷ নিয়তির মামী নিয়তির মাথায় সিঁদুর দেখে অবাক হয়ে যান। নিয়তিকে ডাক দিতে নিয়েও ডাক দেন না৷ নিয়তির মামী খুব সুন্দর করে আগের মতোন চুল বেঁধে দেয়। যেন নিয়তি কিছুই বুঝতে না পারে৷
_______

রাত ১১ টার দিকে করিম চাচার ডাক শুনে নিয়তির মামা মামী জেগে উঠেন৷ গ্রামের দিকে রাত ১১ টা মানে অনেক রাত৷ গ্রামের মানুষদের রাত দশটার পর খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
.
নিয়তির মামা ঘুম ঘুম চোখে বলে উঠেন,
“করিম চাচা আপনি! কোন কিছু হয়েছে কি?”
.
করিম চাচা ভাঙা গলায় বলে উঠেন,
“তোমাদের মেহমান এসেছে ঢাকা থেকে৷ তারা তোমার বাড়ি চিনতে পারছিল না৷ আমি গঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম৷ ফিরার পথে সাথে তাদের দেখা হয় আমার। তারা তোমার সাথে কথা বলতে চায়। চলি আমি, প্রচুর ঘুম আসতেছে।”
.
করিম চাচা আর কিছু না বলে সাইকেলে চড়ে ভাঙা গলায় গান বলতে বলতে চলে যান৷ নিয়তি মামা, মামী নির্বণ ছোঁয়াকে রুমে ভিতরে নিয়ে আসেন৷ নির্বণ দেখতে পাই নিয়তির মামা মামী ছাড়া আর কেউ নেই৷ নিয়তি দেখতে না পেয়ে নির্বণ এদিক ওদিক উঁকি মারছে৷
.
নিয়তির মামী বলে উঠেন,
“এভাকে তুমি কাকে খুঁজতেছো? তুমি আমাদের বাড়িতে চুরি করতে এসেছো৷”
.
ছোঁয়া বলে উঠে,
“না মামী৷ দাদা তো নিয়তিকে খুঁজতেছিল৷”
.
নিয়তির মামী বুঝতে পারে নির্বণ নিয়তির হাসবেন্ড। তিনি মামী বলে উঠেন,
“নিয়তি আমাদের এখানে আসেনি৷ তোমরা এখন যেতে পারো৷”
.
নিয়তির মামা বলে উঠেন,
“আহ! তারা কিসের জন্য এসেছে তা জানতে দাও? আর এতো রাতে তারা কোথায় যাবে? বলো তোমরা এখানে কিসের জন্য এসেছো?”
.
নির্বণ যা বলে উঠে নিয়তির মামা তার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলেন না৷

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here