এক চিলতে সিঁদুর পর্ব -১১

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_১১
#অধির_রায়

নিয়তির মামা বলে উঠেন,
“তোমরা নিয়তির খোঁজ করছো কেন? নিয়তি আমার এখানেই আছে৷”
.
নির্বণ নিয়তির মামার কথা শুনে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে৷ মুখে এক ঝিলিক হাসি নিয়ে,
“নিয়তির সাথে আমি একবার দেখা করতে চাই৷ নিয়তি কোন জায়গায় আছে৷”
.
নিয়তির মামী নির্বণের সামনে এসে,
“অনেক সহ্য করেছি৷ আর নয়৷ তোমরা এখনই আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও৷ আমি থাকতে কিছুতেই দেখা করতে পারবে না নিয়তির সাথে৷”
.
নির্বণ নিয়তির মামীর হাত ধরে,
“প্লিজ মামী নিয়তির কাছ থেকে আমাকে আলাদা করবেন না৷ আমি ঢাকা থেকে সিলেটে এসেছি শুধু নিয়তির সাথে দেখা করার জন্য।”
.
নিয়তির মামী কর্কশ কন্ঠে বলে উঠেন,
“তুমিই তো নিয়তির জীবনটা ধ্বংস করেছো৷ এখন কোন মুখে নিয়তির সামনে দাঁড়াবে৷ তোমার মাঝে লজ্জাবোধ বলতে কিছুই নেই৷”
.
মামীর কথা শুনে নির্বণ মাথা নিচু করে ফেলে৷ মামী ভুল কিছু বলেননি৷ তিনি যা বলেছেন সব সত্য কথা বলেছেন৷ নিয়তির মামা তাদের দিকে চকিত হয়ে তাকিয়ে আছেন৷ তিনি বুঝার চেষ্টা করছেন কি হচ্ছে? তিনি কিছু বুঝতে না পেয়ে বলে উঠেন,
“তোমরা নিয়তির সাথে দেখা করতে চাও কেন? তুমি নিয়তির কি হও?”
.
নির্বণ মাথা নিচু করে,
“আমি নিয়তির হাসবেন্ড। নিয়তির আমার উপর রাগ করে চলে এসেছে৷”
.
নিয়তির মামার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে৷ কারণ তিনি নিয়তির সিঁথিতে কোন সিঁদুর দেখেন নি৷ হিন্দু বিবাহিত মেয়েরা শাখা সিঁদুর ছাড়া বের হয়না৷ কিন্তু নিয়তির হাতে সিঁথিতে কিছুই নেই৷
.
নিয়তির মামা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আর কোন কথা নয়৷ আর একটা মিথ্যা কথা বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না৷”
.
ছোঁয়া নিয়তির মামার সামনে হাত জোর করে,
“আপনি ভুল ভাবছেন৷ আমরা কোন মিথ্যা কথা বলিনি৷ নিয়তিকে ডাক দেন৷ সে আসলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে৷”
.
“বেশি কথা বলতে কে বলেছে? বের করে দাও এদের৷ মিথ্যা পরিচয় নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছে৷” (নিয়তির মামী)
.
নিয়তির ঘুম ভেঙে যায় কথার শব্দে ৷ নিয়তি বুঝতে পারে নির্বণ আর ছোঁয়া এসেছে৷ নিয়তি একবার ভাবে সে মামা মামীর রুমে আসবে না৷ মামা নির্বণের সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন৷ নিয়তি আর বসে থাকতে পারল না৷ নিয়তি মামা মামীর রুমে ছুঁড়ে আসে৷
.
নিয়তি নির্বণের দিকে তাকিয়ে,
“মামা নির্বণ যা বলেছেন সব সত্যি। নির্বণের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে৷ ধরতে গেলে সেটা বিয়ে নয়৷ একটা এক্সিডেন ছিল৷ আমি এই বিয়ে মানি না৷”
.
নির্বণ তেড়ে নিয়তির কাছে আসে৷ নিয়তি তো নির্বণের আসা দেখে ভয় পেয়ে যায়। নিয়তির হাত ধরে,
“আমাকে একটা সুযোগ দাও৷ আমি কোনদিন তোমার অযত্ন করবো না৷”
.
নিয়তি ঝাঁকি দিয়ে হাত সরিয়ে নেয়৷ ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠে,
“আমি আপনার সাথে থাকতে চাইনা৷ যেহেতু আপনি এখানে এসে পড়েছেন তাই রাতটুকু থেকে সকালে চলে যাবেন৷”
.
নিয়তি নির্বণের দিকে কথাগুলো ছুঁড়ে দিয়ে রুমে চলে আসে৷ রুমে এসে দরজা বন্ধ করতে যাবে তখনই নির্বণ রুমের ভিতরে প্রবেশ করে৷ নির্বণ রুমে প্রবেশ করেই দরজা বন্ধ করে দেয়৷ নিয়তি নির্বণকে দেখতে পেয়ে ভয় পেয়ে যায়। নিয়তি এক কদম করে পিছিয়ে যাচ্ছে নির্বণ এক কদম করে এগিয়ে আসছে৷ এক সময় নিয়তির পীঠ দেয়ালের সাথে আটকে যায়৷ নির্বণ নিয়তির একদম কাছে চলে আসে৷ নির্বণের ভারী শ্বাস নিয়তির মুখের উপর পড়ছে৷ নিয়তি সাইট কেটে চলে যেতে নিলেই নির্বণ দেয়ালের দুইপাশে দুই হাত দিয়ে আটকায়৷ নিয়তির প্রাণ যায় যায় অবস্থা। নিয়তি কিছু বলতে নিবে তখনই নিয়তির মুখে আঙ্গুল দিয়ে নিয়তিকে থামিয়ে দেয়৷ নির্বণ দুই নয়ন ভরে নিয়তিকে দেখে যাচ্ছে৷
______

“এই ছেলে নিয়তির রুমে যাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে দিল কেন?”
.
“মামী চিন্তা করবেন না৷ তাদের সমস্যা তাদের কাঁধে ছেড়ে দেন৷”
.
নিয়তির মামী তেড়ে এসে কর্কশ কণ্ঠে বলেন,
“আমি কিন্তু তোমাদের কাউকে ছাড়বো না৷ তোমার দাদাকে দরজা খুলে বাহিরে আসতে বলো৷”
.
ছোঁয়া নিয়তির মামীকে পরম আদরের সহিত আলাপে বলে,
“মামী চিন্তা করবেন না৷ এক্সিডেনে বিয়ে হলেও তো তাদের বিয়ে হয়েছে৷ জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিনটা আমাদের হাতে নেই৷ সৃষ্টি কর্তা যখন চাইবে তখনই হবে৷”
.
“বড় বড় কথা বলা বন্ধ করো৷ যেখানে নিয়তি থাকতে চাইনা সেখানে আমি তাকে যেতে দিব না৷”
.
“আপনি তো চান নিয়তি সুখী থাকুক৷ নিয়তি সৎমার পাল্লায় পড়ে একটুও সুখের মুখ দেখতে পাইনি৷ এখন যখন তার জীবনে সুখ আসতেছে তখন নিয়তি বুঝতে পারছে না৷ নিয়তিকে বুঝিয়ে বলেন৷”
.
ছোঁয়া নিয়তির মামীকে ইমোশনাল কথা বলতে থাকে৷ যেন তিনি এই বিয়ে নিয়ে খুশি থাকেন৷ তিনি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বিছানার উপর বসে পড়েন৷ নিয়তির মামা বলে উঠেন,
“তোমরা তো অনেক দূর থেকে এসেছো৷ মনে হয় কিছু খাওয়া হয়নি৷ তোমরা ফ্রেশ হয়ে নাও তোমাদের খাবারের ব্যবস্থা করছি৷”
“এভাবে বসে না থেকে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করো৷ তাদের তো না খাইয়ে রাখতে পারি না৷”
.
“তোমরা ফ্রেশ হয়ে নাও৷ আমি তোমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছি৷”
.
নিয়তির মামী চাউল নিয়ে রান্না বসান৷ খুব তাড়াতাড়ি গরম গরম ভাত রান্না করেন৷ গরম গরম ভাতের সাথে ডিম ভাজি করে নেন৷ তিনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে মনে বলে উঠেন,
“তাদের আজ রাতের জন্য খাবার হয়ে যাবে৷ আলুর বর্তা, ছোট মাছ, ডিম ভাজি৷”
________

নিয়তি আমতা আমতা করে বলে উঠেন,
“এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে? আমি আপনার সাথে ফিরে যাব না৷”
.
“তোমাকে ফিরে যেতে কে বলেছে? তোমাকে ফিরে যেতে হবে না৷”
.
নিয়তি মনে মনে বলে উঠে,
“কই বলবে আমি আমার কাজের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি৷ তুমি আমার সাথে যাবে৷ আমি তোমাকে নিতে এসেছি৷ সবকিছু ভুলে আমরা নতুনভাবে শুরু করবো৷
.
নির্বণ নিয়তির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠে,
“তুমি না যেতে চাইলে যাবে না৷ কিন্তু আমি তোমাকে তুলে নিয়ে যাব৷ এখানে তোমাকে থাকতে দিব না৷”
.
নিয়তির কানে এতোটাই নেশা ভরা কন্ঠে বলে যে নিয়তি কেঁপে উঠে৷ একদম জড়োসড়ো হয়ে দেয়ালের সাথে লেগে যায়৷ নিয়তি এমন অবস্থায় দেখে নির্বণের মাথায় দুষ্টামির বুদ্ধি কাজ করে৷ নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ না চাওয়া সত্ত্বেও নিয়তির ঠোঁট জোড়া নির্বণের ঠোঁটে লেগে যায়৷ নিয়তি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,
“আপনি মনে হয় আজ কিছু খাননি৷ ফ্রেশ হয়ে নেন আমি খাবার নিয়ে আসছি৷”
.
“আমি কিছু খাবো না৷ আমার জন্য খাবার নিয়ে আসতে হবে না৷”
.
“আপনি এখনো অনেক অসুস্থ। খাবার না খেলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন৷”
.
“আমার কিছু হবে না৷ আমি একদম ঠিক আছি৷ ছোঁয়ার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করো৷ সে একদম ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না৷”
.
“আমি জানি, কে কে ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না? আর হ্যাঁ একটা কথা৷ গ্রামের খাবার শহরের খাবারের থেকে আলাদা৷ মামী যা খেতে দিবেন তাই খেয়ে নিবেন৷ মামী খুব যত্ন করে রান্না করেছেন৷”
.
তাদের কথা বলার মাঝেই দরজায় ঠকঠক শব্দ করে ছোঁয়া। ছোঁয়া দরজার বাহির থেকে বলে উঠে,
“দাদা তোমার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে৷ খেতে চলে আসো৷”
.
ছোঁয়া আর বিরক্ত না করে চলে আসে৷ নির্বণকে জোর করে নিয়তি নিয়ে আসে৷ মামী তাদের থালায় গরম গরম ভাত দেন৷ সাথে ডিম ভাজি, আলুর বর্তা, ছোট মাছ। ছোঁয়া প্রথম ভেবেছিল সে এসব খাবার খাবে না৷ নিয়তি চোখের ইশারায় খেতে বলে। ছোঁয়া এক লোকশা খাবার মুখে দিয়ে খুব তৃপ্তি পায়৷ তারপর কে আটকায় তাকে? একের পর এক লোকমা করে খাবার মুখে দিয়েই চলছে৷ মামী বলে উঠেন,
“আস্তে আস্তে খাও৷ খাবার মুখে আটকে যাবে৷”
.
ছোঁয়া জল খেয়ে,
“খাবারগুলো খুব টেস্ট। আমার খুব ভালো লেগেছে৷ আমাকে আরও ভাত দেন। আমি এসব খাবার কোনদিন খায়নি৷ এসব খাবারে এতো টেস্ট আগে জানতাম না৷”
.
নিয়তির মামী খুশি মনে ছোঁয়ার থালায় আরও কিছু পরিমাণ ভাত দেন। ছোঁয়া তো পাগলের মতো খেয়েই যাচ্ছে৷ ছোঁয়া খাওয়া দেখে নির্বণ মনে মনে বলে উঠে,
“রাক্ষস একটা। যেন কোনদিন খায়নি। কিভাবে পাগলের মতো খাচ্ছে? ভুলেই গেছে সে অন্য বাড়িতে আছে।”
.
নিয়তির মামী বলে উঠেন,
“তোমাকেও অল্প পরিমাণ ভাত দেয়৷”
.
“না মামী আমি আর খেতে পারবো না৷ খাবারগুলো খুব স্বাদ হয়েছে৷ আমার কাছে তো ছোট মাছটা বেস্ট হয়েছে৷”
.
“আর একটু ছোট মাছ নিয়ে নাও৷ আরও অনেকটুকু আছে৷”
.
“আমার পেটে আর কোন জায়গা নেই৷ আমি আর কিছু খেতে পারবো না৷ আপনি এতো রাতে আমাদের জন্য রান্না করতে গেলেন কেন?”
.
“তোমরা এতো দূর থেকে এসেছো। তোমাদের না খাইয়ে রাখতে পারি৷ আর অতিথি দেবঃভব।”

খাবার খাওয়ার পর নির্বণ নিয়তির সাথে ঘুমাতে যায়৷ ছোঁয়াকে একটা ছোট বিছানায় ঘুমাতে দেন৷ তারা মানুষ মাত্র দুইজন। তাই বিলাসিতার জন্য এতো কিছু করেননি৷ দুইটা বড় বড় বিছানা করেছেন৷ একটাতে তারা থাকেন৷ অন্যটায় কেউ আসলে তাদের জন্য৷ আগের ছোট একটা বিছানা আছে৷ সেটাও অনেক ভালো৷ একজন মানুষ অনায়াসে ঘুমাতে পারবে৷
.
ছোঁয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“ছোট বিছানায় ঘুমাতে অসুবিধা হবে না তো৷”
.
ছোঁয়া হাসিমুখে বলে উঠে,
“একদমই না৷ আমার কোন অসুবিধা হবে না৷ আমি মানিয়ে নিতে পারবো৷”
.
“কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাও৷ শীত লাগবে৷”
.
“অনেক রাত হয়ে গেছে। আপনারা ঘুম আসেন৷ আমিও ঘুমিয়ে পড়বো৷”
________

“আপনি বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েন৷ আমি মাদুর বিছিয়ে নিচে শুয়ে পড়ছি৷”
.
নির্বণ বিছানায় বসে আছে৷ নিয়তির কথার কোন জবাব দিল না৷ নিয়তি মাদুর বিছিয়ে কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে৷ নির্বণ নিয়তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মাদুরের উপর শুয়ে পড়ে৷
.
“আপনি বিছানায় ঘুমাতে যান৷ আপনার ঠান্ডা লেগে যাবে।”
.
নির্বণ নিয়তির চুলে মুখ লুকিয়ে,
“আমি ফ্লোরে ঘুম আসলে আমার ঠান্ডা লেগে যাবে৷ কিন্তু তোমার ঠান্ডা লাগবে না৷”
.
“আমি মাটিতে শুয়ে অভ্যস্ত৷ আপনি তো মাটিতে ঘুম আসেননি কোনদিন।”
.
নিয়তির কথার কোন জবাব না দিয়ে নিয়তিকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে আসে। নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে৷ নিয়তি নির্বণের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে নিলে নির্বণ আরও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে। নিয়তি বাধ্য হয়ে সেভাবে ঘুমিয়ে পড়ে৷
.
সকাল বেলা ঢাকা ফিরার সময়….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here