এক চিলতে সিঁদুর পর্ব -১৫

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_১৫
#অধির_রায়

“কেউ ভালোবাসে না সেজন্য বাহিরে ভালোবাসার মানুষ খুঁজতে যাচ্ছি৷ আমাকে আজ অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে৷ আমি নিশ্চিত! আজ আমার প্রেমে দশটা মেয়ে হাবুডুবু খাবে।”
.
নির্বণের কথা শুনে নিয়তির খুব রাগ উঠে৷ নিয়তি ঝাড়ু নিয়ে নির্বণের সামনে দাঁড়ায়৷ অগ্নিমূর্তি ধারণ করে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে। সাপের মতো ফুসফুস করছে৷ দেখে মনে হচ্ছে কোন হিংস্র ক্ষুধার্ত প্রাণী৷
.
নির্বণ ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“আমার দিকে এভাবে ঝাড়ু তাক করে রেখেছো কেন? আমি এখন কিছু করিনি৷ আমার পথ থেকে সরে যাও৷”
.
নিয়তি ক্ষোভ নিয়ে বলে উঠে,
“আপনি এক পা বাহিরে রেখে দেখান৷ তারপর আমার নাম পাল্টে রাখবো৷”
.
শুকনো ঢুক গিলে,
“আমি বাহিরে পা রাখলে তুমি কি করবে? এভাবে আমায় থ্যাড দিচ্ছো কেন?”
.
“বাহিরে পা রাখলে আপনার পা পায়ের জায়গায় থাকবে না৷ কেটে হাতে ধরিয়ে দিব৷”
.
আটকে আটকে বলে উঠে,
“তুমি তো আমায় ভালোবাসো না৷ তাহলে আমার উপর কেন অধিকার দেখাচ্ছো? ভালোবাসার মানুষ খুঁজতে দিবে না৷”
.
নির্বণের মুখ চেপে ধরে,
“আপনার মুখে এই খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর দেখবে না। আপনাকে দেখতে একদম হনুমান লাগবে৷ আমার কথার ছাড়া এক পা বাহিরে রেখে দেখান৷”
.
নির্বণ নিয়তির কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। আচমকা নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত রাখাতে নিয়তি ভয় পেয়ে কেঁপে উঠে৷ নিয়তি পরক্ষণেই বুঝতে পারে। নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে,
“আমাকে টার্চ করার চেষ্টা করবেন না৷ আপনার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷ তাই আমাকে টার্চ করলে হাত ভেঙে রেখে দিব৷”
.
নিয়তি নির্বণকে হুমকি দিয়ে রুম থেকে চলে যায়৷ নির্বণ আনমনেই নিয়তির কথা ভেবে হেঁসে ফেলে৷ মিসেস নিয়তি তুমি নিজেও ভালোবাসবে না৷ আমাকেও ভালোবাসতে দিবে না৷ তবে আমি আমার ভালোবাসা আদায় করেই নিব৷ আমি জানি তুমি আমাকে আমার অন্যায়ের শাস্তি দিচ্ছো৷ আমি তোমার সব শাস্তি মাথা পেতে নিব৷
________

ছোঁয়া আবিরের মা বাবার সামনে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বসে আছে৷ আবিরের দিকে তাকালেই আবির ছোঁয়াকে চোখ টিপল দেয়৷ এতে ছোঁয়া আরও লজ্জা পেয়ে যায়৷ ছোঁয়া আবিরের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মনে মনে,
“আজই প্রপোজ করলো৷ আর আজই আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে৷ কেন আমার প্রেম করতে ইচ্ছা করে না বুঝি? আমি বানের জলে ভেসে আসছি৷”
.
সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও নিয়তির চোখ ফাঁকি দিয়ে পারেনি আবির৷ আবিরের চোখ টিপল দেখে ফেলে নিয়তি৷ নিয়তি ধীরে ধীরে আবিরের কাছে আসে৷ সুযোগ বুঝে আবিরের পেটে বসিয়ে দেয় বিলাই চিমটি৷
.
আবির চিমটি সহ্য করতে না পেরে “আউচ” বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। নিয়তি মুচকি হেঁসে,
“ছোঁয়া আবিরকে মেবি পিঁপড়া কামড় দিয়েছে৷ তাকে মেডিসিন লাগিয়ে দাও৷
আবিরের দিকে শয়তানি দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
” প্রেম করার রাস্তা বানিয়ে দিলাম৷ যাও মন খোলে প্রেম করো৷”
.
আবির ইনোসেন্ট মুখ করে ছোঁয়ার সাথে ছোঁয়ার রুমে চলে আসে৷ আবির কিছু বলতে নিবে তার আগেই ছোঁয়া আবিরের মুখ ধরে,
“আপনি এতো আন রোমান্টিক কেন? আমরা আগে কিছু বছর প্রেম করবো৷ তারপর বিয়ে করবো৷ সকালে প্রপোজ করেই বিকেলেই বিয়ের প্রস্তাব।”
.
আবির চোখের ইশারায় মুখ থেকে হাত সরাতে বলে৷ কিন্তু ছোঁয়ার সেদিকে খেয়াল নেই৷ ছোঁয়া নিজের মতো করে বকবক করেই যাচ্ছে৷ আবির কোন উপায় না পেয়ে ছোঁয়ার কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ আবিরের স্পর্শ পেয়ে ছোঁয়া কেঁপে উঠে। ছোঁয়া মুখে আর কোন কথা নেই৷ ছোঁয়া চোখ বড় বড় করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
.
আবির দুষ্টু হাসি দিয়ে,
“আমি রোমান্টিক হলে আমায় সহ্য করতে পারবে তো৷”
.
আবিরকে ধাক্কা দিয়ে,
“আপনি দূরে সরে দাঁড়ান৷ রোমান্টিক হতে হবে না৷”
________

আবিরের বাবা বলে উঠেন,
“যেখানে ছেলেমেয়ে দুই জনই রাজি আছে৷ তাই আমরা আর দেরি করতে চাইনা৷”
.
নির্বণের মা নির্বণের দিকে তাকিয়ে,
“আসলে আমি কোন কথা দিতে পাচ্ছি না৷ আমি ছোঁয়ার মা হলেও আমার থেকে ছোঁয়ার উপর বেশি অধিকার নির্বণের৷ তার সাথে এসব নিয়ে কথা বলেন৷”
.
আবিরের মা নির্বণের পাশে বসে,
“কি বলো নির্বণ? তোমার বোনকে আমার বাড়ির বউ হতে দিবে না৷ ছোঁয়াকে তোমার মতো ভালোবাসতে পারবো না৷ কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।”
.
নির্বণ টলমল নয়নে,
“আঙ্কেল যে সিদ্ধান্ত নিবে আমি তাতেই রাজি৷”
.
“আগামী মাসের এক তারিখে তাদের বিয়ে৷ মাত্র পনেরো দিন পর বিবাহের কাজটা সম্পুর্ন করতে চাই৷”
.
নির্বণ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়৷ আবিরের মা বাবা আরও অনেক বিষয়ে কথা বলতে থাকেন৷ নির্বণ মন ভার করে নিজের রুমে চলে আসেন৷ খুব কষ্ট হচ্ছে ছোঁয়ার জন্য৷ আর মাত্র পনেরো দিন তার বাড়িতে থাকবে৷ তারপর তাকে আর নিজের চোখে দেখতে পাবে না৷ ভাবতেই চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল বেরিয়ে আসে৷
.
নিয়তি নির্বণের পিছন পিছন অনুসরণ করে চলে আসে৷ নির্বণের কাঁধে হাত রাখতেই নির্বণ ভয় পেয়ে যায়৷ চকিত হয়ে বলে উঠে,
“কে!”
.
মিয়তি চোখ ছোট করে,
“এভাবে চমকে উঠলেন কেন? কি হয়েছে আপনার? আপনার চোখে জল কেন?”
.
চোখের জল মুছে,
“কই চোখে জল৷ আমার চোখে কোন জল নেই৷”
.
“কান্না করছিলেন কেন?”
.
মলিন হাসি দিয়ে,
“কান্না করবো কেন? মনে হয় চোখে কোন কিছু পড়ে ছিল৷ তাই চোখে জল এসে পড়েছে৷”
.
“নির্বণকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে,
“কোনটা চোখের জল আর কোনটা নিজ থেকে বেরিয়ে আসা জল আমি ভালো করেই জানি৷ কার কথা ভেবে খারাপ লাগছে৷”
.
নির্বণ নরম স্বরে ভেজা কন্ঠে,
“আমি কি আর ছোঁয়াকে দেখতে পাবো না৷ সে কি আমাদের ছেঁড়ে একেবারে চলে যাবে?”
.
নিয়তি বুঝতে পারে ছোঁয়া হলো নির্বণের একমাত্র দুর্বলতা। খুব বেশি ভালোবাসে ছোঁয়াকে৷ ছোঁয়াকে যেন চোখে হারায়৷ নিয়তি আভয় বানী দিয়ে,
“মন খারাপ করছেন কেন? যখন ইচ্ছা তখন ছোঁয়ার সাথে দেখা করবেন৷ আবির তো আপনার বন্ধু৷ ছোঁয়াকে খুব ভালো রাখবে। ছোঁয়াকে খুব ভালোবাসে।”
.
“তুমি সত্যি বলছো তো, ছোঁয়া আবিরের সাথে ভালো থাকবে! ছোঁয়ার কোন কষ্ট হবে না।”
.
“ছোঁয়ার কোন কষ্ট হবে না৷ অনেক রাত হয়েছে৷ আপনি ঘুমিয়ে পড়েন৷ কাল তো সারারাত ঘুম আসেননি৷”
.
“তুমি ঘুম আসবে না৷ তুমি কখন ঘুমের দেশে পাড়ি জমাবে?”
.
নিয়তি চোখ অন্যদিকে সরিয়ে,
“আমায় নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ আমি সময় মতো ঘুমিয়ে যাবো৷”
.
নিয়তি কথা না বাড়িয়ে নির্বণের রুম থেকে চলে আসে৷ নির্বণ বিছানা থেকে উঠে বেলকনিতে আসে৷ নির্বণের মনের মতো আজ প্রকৃতিও রুপ ধারণ করেছে৷ প্রকৃতিতে বুকে আজ অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে৷ আকাশ ভরা তারা থাকলেও রাতের সৌন্দর্য চাঁদ নেই৷ চাঁদও অভিমান করে মুখ লুকিয়ে আছে৷ নির্বণ অন্ধকার বেলকনিতে কিছুক্ষণ বসে থেকে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে৷ গতকাল রাতে ঘুম না আসার জন্য খুব তাড়াতাড়ি ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।
_________

নির্বণ প্রতিদিন নিয়তির কাছ থেকে অপমান হয়ে ফিরে আসে৷ নিয়তি কিছুতেই নির্বণকে ক্ষমা করছে না৷ নির্বণ না পারছে নিয়তির ভালোবাসার বন্ধন থেকে বেরিয়ে৷ না পারছে অবহেলা সহ্য করতে৷ কিছুই বুঝতে পারছে না৷
.
নির্বণ যখনই নিয়তির সামনে আসে তখনই ভেসে উঠে নির্বণের সেই জানোয়ার রুপজনিত চেহারা৷ না পারছে দূরে ঠেলো দিতে না পারছে কাছে টেনে নিতে৷ দূরে সরে গেলেই কষ্টে বুক ফেটে যায়৷ কাছে আসলে ভয়ংকর রুপ ফুটে উঠে৷ মান অভিমানের উপর ভিত্তি করে চলে যাচ্ছে নির্বণ নিয়তির দিনগুলো৷
.
দেখতে দেখতে এগিয়ে আসছে আবির ছোঁয়ার বিয়ে। বিয়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নির্বণ নিয়তি।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here