এক চিলতে সিঁদুর পর্ব -১৪

#এক_চিলতে_সিঁদুর
#পর্ব_১৪
#অধির_রায়

নিয়তি চা নিয়ে নির্বণের রুমে প্রবেশ করে৷ রুমে ঢুকেই নিয়তির চোখ আকাশ প্রান্তে৷ চোখ দুটো রসে গোল্লার মতো বড় হয়ে যায়। ঘরের সমস্ত জিনিস ভাঙাচোরা। কোন কিছুই ঠিক নেই৷ নির্বণকে কোথায় দেখতে পাইনা৷ নিয়তি ধীর পায়ে সাবধানতার সাথে বেলকনিতে আসে৷ বেলকনিতে এসে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে৷ নির্বণকে দেখে একদম চিনা যাচ্ছে না৷ হঠাৎ করে কেউ নির্বণকে দেখলে পাগল বলে সম্মোধন করবে৷
.
নির্বণের চুলগুলো উসকো খুসকো অগুছানো। চোখ দু’টো লাল বর্ণের হয়ে গেছে৷ কান্না করার জন্য আঁখি ফুলে ফেঁপে রয়েছে৷ নিয়তি নির্বণের কাঁধে হাত রাখতেই নির্বণ গ্রিল দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে,
“দেখতে এসেছো নির্বণ বেঁচে আছে কিনা৷”
.
নিয়তি নির্বণের কথার কোন উত্তর দিল না৷ টুপ করে চোখ থেকে দুই ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল৷
.
নির্বণ নিয়তির দিকে না তাকিয়েই বলে দেয়,
“তুমি কান্না করছো কেন? তুমি তো আমার সাথে থাকতে চাওনা৷ আমার কষ্টে কেন তোমার চোখে জল?”
.
নিয়তি নিস্তব্ধ কোলম স্বরে,
“আপনি সারারাত ঘুম আসেন নি৷ আপনাকে দেখে একদম পাগল লাগছে৷ ফ্রেশ হয়ে নেন৷”
.
“আমায় নিয়ে তোমায় কোন চিন্তা করতে হবে না। আজ পাগল বলেই তো আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি৷”
.
নিয়তি নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয়৷ সে যেন কিছুতেই ভেঙে না পড়ে৷ নির্বণকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে,
“রুমের অবস্থা এমন কেন? যদি আপনার কিছু হয়ে যেত৷”
.
“কি আর হতো? বড়োজোর একটা ভাঙা দর্পন পেটে ভেতর ঢুকে যেতে পারতো৷ ভালোই হতো৷ তাহলে তোমাকে আর আমায় সহ্য করতে হতো না৷”
.
নিয়তি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আপনাকে কতবার বলছি নিজ মুখে মৃত্যু কামণা করবেন না৷”
.
নির্বণ মলিন হাসি দিয়ে,
“ভগবানের পছন্দ হলে এক্সিডেন নিয়ে যেত৷ ভগবান আমায় পছন্দ করে না৷ সেজন্য আজ তোমার সামনে অবহেলার পাত্র হয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷”
.
নির্বণের প্রতিটি কথা নিয়তির বুকে তীরের মতো লাগছে৷ নিয়তি বুঝতে পারছে না কি বলবে? কোন কিছু বলার ভাষা রাখেনি৷ নাম নিয়তি নির্বণের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আপনি ঘরের এমন অবস্থা কেন করেছেন? আপনার ঘর অন্য কেউ পরিষ্কার করে দিবে৷ কেউ পরিষ্কার করে দিবে না৷ নিজের ঘর নিজে পরিষ্কার করবেন৷”
.
মলিন মৃদু হেঁসে,
“বাড়িতে কাজের লোকের অভাব নেই৷ কেউ তো আর বাড়ির বউ হতে চাইনা৷ তাহলে একজন কাজের লোক জানেনা রুমে অপরিষ্কার থাকলে তাকে পরিষ্কার করতে হয়৷”
.
নিয়তি বুঝতে পারে তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নির্বণ এসব কিছু করেছে৷ নিয়তি নির্বণের হাতে চা তুলে দেয়৷ ইশারায় খেতে বলে৷ কিন্তু নির্বণ চা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে,
“আমার চা খেতে ইচ্ছা করছে না৷ বেলকনিসহ রুমটা একদম পরিষ্কার যেন দেখতে পাই৷ কোন ময়লা থাকলে ফলাফল ভালো হবে না৷”
.
নির্বণ এক প্রকার থ্র্যাড দিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ চলে যেতে নির্বণ বলে উঠে,
“দেখি নিয়তি তুমি কতদিন আমার থেকে মুখ লুকিয়ে থাকতে পারো৷ তুমি একদিন নিজেই এসে বলবে আমায় ভালোবাসো৷ আমি তোমার মুখ থেকে ভালোবাসার কথা বের করেই ছাড়বো৷”
______

ছোঁয়া আবিরের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়৷ আবির ছোঁয়া হাতে রিং পড়িয়ে আলতো করে ছোঁয়া হাতে একটা কিস করে৷ ছোঁয়া আবিরের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে৷ লজ্জা পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে৷
.
আবির ছোঁয়ার চোখে ফুঁ দেয়৷ ছোঁয়া চোখ মেলে তাকালেই আবির বলে উঠে,
“ছোঁয়া তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না৷ কিন্তু তোমার লজ্জা মাখা মুখ দেখতে অসাধারণ লাগে৷”
.
ছোঁয়া আবিরকে জড়িয়ে ধরে। আবিরও ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে৷ ছোঁয়া বলে উঠে,
“সব কথা মুখে বলতে হয়না৷ কিছু কিছু কথা চোখে পড়ে নিতে হয়৷” [চোখে চোখে কথা হবে, ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দিবে। ]
.
আবির দুষ্টু হাসি দিয়ে,
“কি বুঝে নিবো? আমি তোমার দাদা হয়৷ নাকি অন্য কিছু৷”
.
আবিরের কথা শুনে ছোঁয়া ক্ষেপে যায়৷ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“আপনি আমার দাদা হতে যাবেন কেন? আপনাকে আমি দাদা হিসেবে মানি না৷”
.
“তাহলে আমাকে কোন চোঁখে দেখো?”
.
ছোঁয়া ক্ষেপে বলে উঠে,
“আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। আর কিছু বলতে পারবো না৷ আমি আপনাকে দাদা মানি না৷”
.
ছোঁয়াকে আর পাই কে? ছোঁয়া ভুঁ দৌড় দিয়ে চলে যায় সেখান থেকে৷ আবির আনমনে হেঁসে ফেলে। আজ তার মনের কথা ছোঁয়াকে বলতে পেরেছে৷
__________

নির্বণ ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে নিয়তি অগ্নিমূর্তি ধারণ করে রুম পরিষ্কার করছে৷ নিয়তির এমন অবস্থা দেখে নির্বণের খুব হাসি পাচ্ছে৷ নিয়তি মুখটা দেখে কষ্টের মাঝেও হাসি পাচ্ছে৷ নিয়তি নির্বণের দিকে তাকিয়ে কাঁচের টুকরো তুলে গেলেই হাত কেটে ফেলে৷
নিয়তি “আউচ” বলার সাথে নির্বণ দৌড়ে এসে নিয়তির আঙ্গুলে হাত দেয়। কেটে যাওয়া আঙ্গুল মুখে নিয়ে রক্ত পান করতে থাকে৷ নিয়তি অবাক চোখে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ মনে মনে বলে উঠে,
“আমি আপনাকে কেন কষ্ট দিচ্ছি আপনি একদিন নিজেই বুঝতে পারবেন৷”
.
“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
.
“আপনি আমার ময়লা হাত মুখে নিলেন কেন? হাতে অনেক জীবানু আছে৷”
.
ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে,
“কোন কিছু পরোয়া করিনা৷ আর সামান্য জীবাণু আমার দেহের কিছু করতে পারবে না৷ তোমাকে এসব করতে হবে না৷ অন্য কেউ করে নিবে৷”
.
“নিয়তি নির্বণের কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়৷ নিয়তি চলে যেতে নিলেই,
” মিস নিয়তি আমি তোমাকে এখান থেকে চলে যেতে বলছি৷”
.
নিয়তি মাথা নিচু করে,
“না মানে৷ এখন তো আমার কোন কাজ নেই৷ তাই এখানে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে চাইনা৷”
.
“তুমি এই বাড়ির কাজের লোক। আমি তোমাকে যা বলবো তুমি তাই করবে৷ আমি যখন এখান থেকে তোমাকে চলে যেতে বলবো তখনই তুমি চলে যাবে৷”
.
নিয়তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। নিয়তির এমন স্বভাব দেখে নির্বণের মনে ঢোল বাজাছে৷ বলতে ইচ্ছে করছে ঢাকের তালে খুশিতে মেতেছে মন৷ কিন্তু কি আর করার? নিয়তির সামনে এমন কিছু করতে পারবে না৷
.
নিয়তিকে একবার রাউন্ড করে। মুচকি হেঁসে বলে উঠে,
“দাঁড়িয়ে না থেকে বসে পড়ো৷ তোমাকে দাঁড়াতে বলিনি৷ বসে থাকতে বলেছি৷”
.
নিয়তি বিরক্তি সূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মনে মনে বলে উঠে,
“আপনাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে৷ নাকি আমাকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে৷ আমারও দিন আসবে৷ তখন আমিও দেখে নিব কি করেন আপনি৷ গর্ত খুঁজে পাবেন না৷”
.
নিয়তির কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠে,
“বকাগুলো আর একটু জোরে দিলে ভালো হতো৷ কিছুই শুনতে পাচ্ছিনা৷ আসলে ইদানীং কানে কম শুনি৷”
.
নিয়তি ভেংচি কেটে সোফায় বসে পড়ে৷ নির্বণ উদ্ভট গলায় গান বলতে শুরু করে৷ না আছে গানের অর্থ৷ না আছে গানের সুর৷ এতো জোরে গান বলছে নিয়তির কান ফেঁটে যাওয়ার উপক্রম। নিয়তি কান ধরে নির্বণের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নির্বণ পোষাক পড়ে নিয়তি বলে উঠে,
“নিয়তি এই দিকে শুনে যাও৷”
.
নিয়তির কানে হাত থাকায় নির্বণের কথা ততটা কানে যায়নি৷ গান মনে করেই নিয়তি একই জায়গায় বসে আছে৷ নিয়তির কান থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে,
“তোমাকে ডাকছি৷ কথাগুলো কি কানে যাচ্ছে?”
.
“হ্যাঁ আমাকে কি করতে হবে?”
.
“দেখতে পাচ্ছো না৷ আমার শার্টের সবগুলো বাটন খোলা৷ লাগিয়ে দাও৷”
.
নিয়তি মিহি কন্ঠে,
“আমি পারবো না৷ আমি আপনার শার্টের বাটন লাগিয়ে দিতে পারবো না৷”
.
“কাজের লোকদের মুখে কোন অজুহাত শুনতে চাইনা৷ কাজের লোক কাজ করবে না তা তো নয়৷”
.
নিয়তি এক প্রকার বাধ্য হয়ে নির্বণের শার্টের বাটন লাগিয়ে দিচ্ছে৷ বাটন লাগানোর পর বলে উঠে,
“অফিসে যাওয়া আপনার বারণ৷ কোথায় যাচ্ছেন?”
.
“কেউ ভালোবাসে না৷ তাই নতুন কাউকে খুঁজতে যাচ্ছি৷”
.
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here