এক ফ্রেমে তুমি আমি পর্ব ৬+৭

#এক_ফ্রেমে_তুমি_আমি
#পর্বঃ০৬
#Arshi_Ayat

“এতো রোমান্টিক হয়েও লাভ হলো না।এখন পর্যন্ত একটাও গার্লফ্রেন্ড জুটলো না কপালে।”

রিয়া নিলয়ের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ।এভাবেই কথা বলতে বলতে দুজনে বাসায় আসলো।নিলয় দরজার সামনে দাড়িয়ে রিয়াকে বলল”এবার মাফটা কি পেয়েছি?”

রিয়া হেসে বলল”হুম।”

তারপর নিলয়ও হালকা হেসে ঘরে চলে গেলো আর রিয়াও।

৮.
আজকে তিন বান্ধবী ভার্সিটিতে গেলো না।কাল পিকনিক তাই তিনজনই শপিং এ গেলো।শপিং শেষ করে তিনজনের বাসায় ফিরতে দুপুর হলো তারপর খাওয়া দাওয়া করে তিনজনই ঘুম দিলো।

এদিকে সায়ান্ত,নিরব,নিলয় কেউই ওদের কে ভার্সিটিতে না পেয়ে অবাক হয়ে গেলো।কাহিনি কি?কেউ এলো না কেনো আজকে?ওরা ভার্সিটি থেকে ফিরে নিরবকে পাঠালো জিগ্যেস করতে আজ ভার্সিটিতে যায় নি কেনো এটা জিগ্যেস করতে।নিরব বেচারা এসে কলিং বাজাতেই দরজা খুললো মিম।মিমকে দেখে নিরব একটা হাসি দিয়ে জিগ্যেস করলো”আজ আপনারা ভার্সিটিতে যান নি কেনো?”

“আসলে কাল পিকনিক তো তাই তিন বান্ধবী মিলে শপিং এ গিয়েছিলাম।”

“ওহ!আমি ভেবেছিলাম আপনারা বোধহয় অসুস্থ তাই আসেন নি।”

“না না সেরকম কিছু না।”

“ওহ!প্যাকিং কি শুরু?”

“না এখনও হয় নি।সন্ধ্যা থেকে করবো।আপনারা?”

“আমারাও।”

মিম আর কিছু বলার আগে রিয়া ভেতর থেকে ডাক দিতেই মিম নিরবকে বাই বলে দরজা আটকে দিলো।নিরবও চলে গেলো।
.
.
.
.
.
মেয়েরা সবাই টানটান উত্তেজনা নিয়ে প্যাকিং করছে।আজ মনে হয় সারারাতেও ওদের ঘুম হবে না।যাইহোক মোটামুটি প্যাকিং শেষ করলো।পিকনিক স্পটে তিনদিন থাকতে হবে।

রিয়াকে প্রতিদিন ডেকেও তোলা যায় না কিন্তু আজ সবার আগে ও ই ঘুম থেকে উঠেছে।রিয়া ঘুম থেকে উঠে আয়রা আর মিমকে ডেকে উঠালো।তারপর তিন বান্ধবী রেডি হয়ে ছয়টার সময় বেরিয়ে পড়লো।যাওয়ার আগে মিম অবশ্য নিরবকে ডাকতে চেয়েছিলো কিন্তু আয়রা আর রিয়ার জন্য ডাকে নি।ভার্সিটির সামনে এসে দেখে পাচটা বাস দাড়িয়ে আছে।আর যে যার মতো বসছে।রিয়া আর মিম একসাথে বসলো।আয়রা ওদের থেকে একসিট সামনে বসলো জানালার কাছে।পাশে এসে ধাম করে সায়ান্ত বসে পড়লো।আয়রা সায়ান্তকে দেখে বলল”আপনি এখানে বসেছেন কেনো?”

“কেনো?এখানে কি তোমার নাম লেখা আছে না কি?”

“না কিন্তু আপনি আমার পাশে বসেছেন কেনো?”

“ও হ্যালো আমার ঠেকা পড়ে নি তোমার সাথে বসতে।আমার ফ্রেন্ডরা এই বাসে। সামনের বাসে সিট নেই তাই এই বাসে আসতে হয়েছে।আর এখানেও তোমার পাশের সীট ছাড়া খালি নেই।তাই বলে এটা বুঝো না তোমার মতো শাকচুন্নির সাথে বসার জন্য আমি মরে যাচ্ছি।”

আয়রা মুখ বেকিয়ে বলল”আসছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।”

সায়ান্ত আয়রার কথা শুনতে পায় নি তার আগেই কানে হেডফোন গুজে গেম খেলা শুরু করলো।আর আয়রা বাসের জানালা খুলে দিলো।বাইরে থেকে বাতাস এসে আয়রার চুল সায়ান্তর মুখে বাড়ি খাচ্ছে।সায়ান্ত হেডফোন খুলে আয়রাকে বলল”চুল সামলাতে না পারলে চুল রাখো কেনো?”

আয়রা নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলল”চুলের বাড়ি খেতে না চাইলে মেয়েদের সাথে না বসলেই পারেন।মেয়েদের সাথে বসলে কিছু খান আর না খান চুলের বাড়ি খেতেই হবে।”

সায়ান্ত রেগে বলল”আরেকবার যদি তোমার চুল এসে আমার মুখে লাগে তাহলে কাচি দিয়ে কেটে দেবো।”

“তাহলে আপনার মাথার চুলও থাকবে না।”

সায়ান্ত হেডফোন কানে দিতে দিতে মুখ বাকিয়ে বলল”দেখা যাবে।”

আয়রাও আর কথা না বলে বাইরে তাকালো।একটুপর আয়রার ফোনে ফোন আসতেই ও ফোন রিসিভ করে বলল”হুম শাহি বল।”

“দোস্ত রাহিন আমাকে ধোকা দিছে।”

“আমি এইজন্যই বলছিলাম প্রেম করিস না।শুনলি না তো আমার কথা।”

আয়রাকে কথা বলতে দেখে সায়ান্ত আড়ি পাতলো।আয়রা এটা খেয়াল করলো।সায়ান্ত খোঁচা মারার জন্য আয়রা আবার বলতে শুরু করলো”শোন ছেলেরা ইতড় হয়।সয়তানে হাড্ডি হয়।বদমাইশে বাপ হয়।স্টুপিডের চাচা হয়।রাসকেলের মামা হয়।তুই কিভাবে পারলি এত্তো বড় ভুল করতে।হুম কি আর করবি ব্রেকাপ সং শোন।আর ওই স্টুপিডটারে সব জায়গা থেকে ব্লক কর।আচ্ছা রাখি।”

সায়ান্তর মেজাজ গরম হয়ে গেলো।ফ্রিতে কতো কিছু বলল মেয়েটা। না এগুলো শুনে তো চুপ থাকা যায় না।মোক্ষম জবাব দিতেই হবে।সায়ান্ত একটা প্ল্যান করলো।তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল”কিপ সাইলেন্ট গাইস।”

সবাই কথা বলা বন্ধ করে সায়ান্ত দিকে তাকালো।সায়ান্ত আবার বলা শুরু করলো”আচ্ছা আমরা একটা গান করলে কেমন হয়?ডুয়েট গান।ছেলেরা ও গাইবে মেয়েরাও গাইবে।”

সবাই সায়ান্তর কথায় সম্মতি দিলো।প্রথমে সায়ান্তই শুরু করলো

“লেফটে যদি যেতে বলি
যাবে ওরা রাইট।
আমর যদি সকাল বলি
বলবে ওরা নাইট।(২)

তারপর নিলয় শুরু করলো

“করলে শপিং সারাটা দিন আর কিছু না চাই।
লাইফে এদের চাপটা কিসের জানতে আমি চাই।

নিরব শুরু করলো

” মেয়েদের মন বোঝা নয় রে নয় সোজা।
মেয়েদের মন বোঝা নয় রে নয় সোজা।”

সামনে থেকে অর্ক শুরু করলো

“তারিফ করো তার সারাদিন কি সুখ করে পায় বার্গেনিং।
তারিফ করো তার সারাদিন কি সুখ করে পায় বার্গেনিং।”

পিছন থেকেও একজন গাইলো”একটুতেই শুরু কান্নাকাটি আর ঢং করায় তারা ফাটাফাটি।দোষ নিজেরই,দোষ নিজেরই মানতে জানে না।”

তারপর সব ছেলেরা একসাথে শুরু করলো

“মেয়েদের মন বোঝা নয় রে নয় সোজা।
মেয়েদের মন বোঝা নয় রে নয় সোজা।”

ছেলেদের কলি শেষ হলে এবার মেয়েরা গাইবে।তাই আয়রা প্রথমে শুরু করলো

“করলে শুরু শেষ হবে না,
ছেলেদের গুণের কাহিনী।”

এবার রিয়া গাইলো

“যখন জড়ো হয় একসাথে মনে হয় যে বানর বাহিনী।”
মুখে কথার ফুল ঝুড়ি
মনের বেলায় কাচকলা।”

তারপর মিম গাইলো

“করবে ক্রিকেটে সেন্চ্ঞুরি
বড় কঠিন আই লাভ ইউ তার বলা।
বড্ড বকা, বড্ড বোকা
মানতে পারে না।”

এবার সব মেয়েরা একসাথে গাইলো

“ছেলেদের মন বোঝা হ্যা রে খুব সোজা,
ছেলেদের মন বোঝা হ্যাঁ রে খুব সোজা।”

এভাবে গান আর আড্ডা দিতে দিতে সবাই কক্সবাজার এসে পৌঁছালো।পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেলো।সবাই বুক করা হোটেলে উঠে যার যার রুমে চলে গেলো।মিম,আয়রা,আর রিয়া একরুমে গেলো।সবার প্রথমেই আয়রা বাইরে বের হতেই একজনের সাথে ধাক্কা লাগলো।আয়রা পড়ে যেতে নিলেই কে যেনো ওকে ধরে ফেললো।আয়রা ওর দিকে তাকিয়ে চোখ বড় করে ফেললো।এটা যে তার অতীত।
#এক_ফ্রেমে_তুমি_আমি
#পর্বঃ০৭
#Arshi_Ayat

আয়রা কখনোই চায় নি তার অতীত তার সামনে এসে দাড়াক।কিন্তু ভাগ্য বলতে একটা কথা আছে।সেই ভাগ্যের ফেরে তার অতীত তার বর্তমানে এসে দাড়িয়েছে।আয়রা সামনের মানুষের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই মানুষটা তার পথ আগলে দাড়ায় তারপর বলে”কেমন আছো আয়রা?”

“আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো।এখন সরুন আমাকে যেতে দিন।”

“আচ্ছা যেও কিন্তু আমার কথাটা তো শুনবে।”

“আরো কি কিছু বলার বাকি আছে?সেদিনই তো আমাদের মধ্যে সব কথা শেষ হয়ে গিয়েছিলো।তাহলে আজ আবার কোন কথা বলবেন?”

“আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে।তাই বলে আমার কথাটা শুনে আমাকে একবার সুযোগ তো দিতে পারো।তুমি জানো সেই ঘটনার পর থেকে আমি তোমাকে দিনরাত এক করে খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাই নি।তোমার বোন বান্ধবী শাহীকে বলেছিলাম কিন্তু সে আমাকে বলে নি তুমি কোথায় আছো।এখন যখন পেয়েছি তখন তোমাকে আমার কথা শুনতেই হবে।”

“আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই।আমার ওপর আপনার এখন কনো অধিকার নেই।সেই অধিকারটা আপনি হারিয়েছেন।তাই নিজের দুরত্ব বজায় রেখে চলুন।”

এটা বলেই আয়রা সামনের মানুষটার পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলো।এতক্ষণ অনেক শক্ত করে নিজেকে সে ধরে রেখেছিলো।আয়রার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছিলো।সে মনে মনে বলতে লাগলো নির্জন আপনি কেনো এসেছেন আবার?একবার আমাকে ঠকিয়ে কি আপনার শান্তি হয় নি?তাহলে আবার কেনো?আমি তো এখন নিজের জীবন নিয়ে বেশ আছি।তাহলে আবার কেনো এসেছেন।তবে এবার আমি কিছুতেই আগের মতো ভুল করবো না।এখন আপনাকে দেখলেই মনে হয় আমার সামনে একজন প্রতারক দাড়িয়ে আছে।আপনাকে দেখলে এখন আর ভালোবাসা আসে না।ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতেও ইচ্ছে করে না।আয়রা এগুলো ভাবতে ভাবতে নিজের চোখ মুছে নিলো তারপর হোটেলের বাইরে গিয়ে দেখলো অনেকেই দাড়িয়ে গল্প করছে।একটুপর একজন প্রফেসর সবাইকে একসাথে জড়ো করে বললেন।বললেন “আজ সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় ঘুরতে যাওয়া হবে না।কাল সকাল থেকে ঘুরাঘুরি স্টার্ট।আর প্রত্যেক দশজন নিয়ে একটা গ্রুপ হবে।কে কোন গ্রুপে থাকবে এটা আগে থেকেই নির্ধারণ করা যাবে না।এটা চিরকুটের মাধ্যমে নির্ধারণ হবে।প্রথমে যে দশটা চিরকুট উঠবে সে দশজন একগ্রুপ এভাবে গ্রুপ তৈরি হবে।সবাইকে ই গ্রুপের সাথে থাকতে হবে।এবং সন্ধ্যার আগে হোটেলে ফিরতে হবে।সো আমরা আগেই চিরকুট বানিয়ে রেখেছি এখন গ্রুপ করার পালা।”

স্যারের কথা শুনে আয়রা মনে মনে বলল”ওই শয়তানটা যেনো একগ্রুপে না পড়ে।”

আর এদিকে সায়ান্ত বলছে”শাকচুন্নিটা যেনো একগ্রুপেই পড়ে।”

মিম মনে মনে বলছে নিরব আর ও যেনো এক গ্রুপে পড়ে।নিরবও একই দোয়া করছে।রিয়া আর নিলয় এরকম কোনো দোয়াই করছে না।ওরা যে গ্রুপেই পড়ুক ওরা খুশী।

তো নিয়ম অনুযায়ী চিরকুট তোলা হলো।আর কাকতালীয় ভাবে আয়রা,সায়ান্ত আর সাজীদ একগ্রুপে পড়লো।মিম আর রিয়া একসাথে এদিকে নিলয় আর নিরব একসাথে পড়লো।নিরবের এখন প্রচুর কষ্ট হচ্ছে ইশ!কেনো যে মিম আর ও একসাথে পড়লো না!

সায়ান্ত আর আয়রা একসাথে পড়ায় সায়ান্ত শয়তানি হাসি দিচ্ছে এই হাসির অর্থ হচ্ছে তোমাকে জ্বালিয়ে একবারে কয়লা করে ফেলবো।আর আয়রাও বাকা হাসি দিয়ে বোঝালো আমিও কম যাই না।তারপর সন্ধ্যার সময় স্যার ম্যাম মিলে অনেক মজা করলো সবাই।রাতের খাবার খেতে সবাই একসাথে বসলো।আয়রা আর সায়ান্ত মুখোমুখি বসেছে।হুট করে নির্জনকে ওর পাশে বসতে দেখে আয়রা অবাক হয়ে গেলো।আয়রা নির্জনকে উদ্দেশ্য করে আস্তে আস্তে বলল”আপনি এখানে বসেছেন কেনো?”

“জানতে পারবে একটু পর।” নিজর্নও আস্তে আস্তে উত্তর দিলো।

একটুপর স্যাররা ও আসলেন।একজন স্যার নির্জনকে দেখিয়ে বললেন”উনি আমাদের গেস্ট।আমাদের ভাইস প্রিন্সিপালের ভাই।আশাকরি আপনারা ওনাকে সম্মান দিবেন।সো সবাই খাওয়া শুরু করেন।”

স্যারের কথা শুনে আয়রার হুশ উড়ে গেলো।গলা দিয়ে ভাত নামছে না।কিভাবে এই তিনদিন সে নির্জনকে সহ্য করবে।আয়রা কোনোমতে একটু খেয়েই উঠে পড়লো।ব্যাপারটা কেউ লক্ষ না করলেও দুজন ঠিকই লক্ষ করেছে।আয়রা ঘরে এসে ফোনটা নিয়ে ছাদে চলে গেলো।তারপর মা কে ফোন দিলো।

“হ্যালো আম্মু কি করো?”

“এই তো মা বসে আছি।তুই?”

“এইতো খাওয়া দাওয়া করে এসেছি।”

“তোর কি মন খারাপ?”

“না মা।”

“মা রে আমি তোর মা।আমি বুঝি কখন আমার আয়রার মন খারাপ হয়।কি হয়েছে বল তো?”

“আচ্ছা মা প্রতারক কে কি কখনো দ্বিতীয়বার বিশ্বাস করা যায়?”

“শোন একটা কাগজ যখন পানিতে পড়ে ভিজে যায় সেটা শুকানোর পর কিন্তু আগের মতো থাকে না।কুঁচকে যায়।তেমনি একবার কেউ প্রতারণা করলে তাকে যদিও বিশ্বাস করিস তবুও তোর বিশ্বাসটা আগের মতো হবে না।কোথাও না কোথাও খামতি থাকবেই।কে জানে তোর বিশ্বাসটা দ্বিতীয় বারের মতো আবার ভেঙে দিলো।”

“তুমি ঠিক বলেছো মা।আই লাভ ইউ।তোমার সাথে কথা বললে মা সব কষ্ট শেষ হয়ে যায়।”

ইরা চৌধুরী হেসে বললেন”পাগলি একটা।এখন যা রেস্ট নে।আমি ফোন রাখছি।”

“আচ্ছা মা।”আয়রা ফোনটা রেখে দিলো।

এখন হালকা লাগছে অনেক।আসলেই যার মা নেই বিশাল অন্তরীক্ষের নিচে সে ভিষণ একা।সেই দিকে থেকে আয়রা লাকি।তবে বাবাকে সে আজও মিস করে।হঠাৎ কারো ডাকে আয়রা পিছনে ফিরে দেখলো নির্জন দাড়িয়ে আছে।আয়রা চলে যেতে চাইলে নির্জন ওর পথ আটকে ফেলে তারপর বলে” আয়রা প্লিজ কথাটা শুনে যাও।”

“ঠিকাছে বলুন কি বলবেন।তবে কখনোই আমার জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করবেন না।”আয়রা অন্যদিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল।

“আয়রা আমি আমার মায়ের জন্য বিয়েটা করেছি।সে কোনোভাবেই তোমাকে মেনে নিতে চায় নি।তার মতে তোমার বাবা নেই তাই সে তোমার বিয়েটা আমার সাথে দিতে চায় নি।বিশ্বাস করো আয়রা আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু মায়ের জেদের কাছে হেরে হিয়াকে বিয়ে করেছি আমি।”

“তাহলে আবার আমাকে খুজছেন কেনো?”

“তোমাকে আবার ফিরিয়ে নিতে এসেছি।আমি হিয়াকে ডিবোর্স দিয়ে দিবো।আমাকে ক্ষমা করো আয়রা।”

“না আপনি হিয়াকে ডিবোর্স দিয়েন না।তাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করেন।আমি মেয়ে হয়ে আরেক মেয়ের সংসারে আগুন দিতে পারবো না।এমন করলে হয়তো আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না, কখনো সুখীও হবো না।আর ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমন কোনো কথা নেই।ভালোবাসা অমর।দয়াকরে আর আমার সামনে আসবেন না।আমি এমনিতেই ভালো আছি।”

“কিন্তু আয়রা আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”

আয়রা মুচকি হেসে বলল”হিয়াও তো আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।সে আপনার বউ আমি আপনার প্রক্তন।আপনার ওপর তার অধীকারটাই বেশি।তাই তার কাছে যাওয়াই আপনার জন্য শ্রেয়।”

আয়রা থেমে আবার বলল”আচ্ছা হিয়া ভাবী কোথায়?”

“আয়রা প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো।”

“আমার আর কিছুই বোঝার নেই।”

নির্জন কিছু বলবার আগেই ওর ফোন কল এলো।ও রিসিভ করে নিচে চলে গেলো।আয়রা সেখানেই দাড়িয়ে একমনে আকাশ দেখতে লাগলো।হঠাৎ কারো আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো আয়রার।পাশে দাড়িয়ে দেখে সায়ান্ত দাড়িয়ে আছে।সায়ান্ত বলল”তোমার নাম আয়রা না হয়ে বয়রা হওয়ার দরকার ছিলো।এতক্ষণ ধরে ডাকছি কোনো হুশই নেই তোমার।”

“কিহ!তাহলে আপনার নাম সায়ান্ত নাহয়ে বায়ান্ত হওয়ার দরকার ছিলো।”

“থাক তবুও বয়রা নামের চেয়ে ভালো আছে।আচ্ছা মিস বয়রা তুমি তোমার কি মন খারাপ?”

“খবরদার বয়রা বলবেন না।”

“একশোবার বলবো কি করবা?”

“আপনার মুখ সেলাই করে দিবো।”

“পারলে দিও।”

আয়রা রেগে সেখানে থেকে চলে যেতে নিলেই সায়ান্ত পিছন থেকে বলে উঠলো “আরে ওই বয়রা শোনো।আরে ওই বয়রা শোনো তো।”

আয়রা দাড়ালো না চলে গেলো।এদিকে সায়ান্ত হাসতে হাসতে শেষ।

৯.
সকাল ৮.০০ টা সবাই নাস্ত করে গ্রুপের সাথে বেরিয়ে পড়লো।সায়ান্ত একটুপর পর আয়রা চুল টান দিচ্ছে।আয়রা পেছনে তাকলে এমন ভাব ধরছে যেনো সে কিছুই জানে না।আয়রার প্রচুর রাগ হচ্ছে।সে কৌশলে সায়ান্তর পিছনে গিয়ে ওর পিঠে ধুম করে একটা কিল বসিয়ে কিছু জানে না ভাব করে হাটতে শুরু করলো।সায়ান্ত এবার অন্য বুদ্ধি ভাবছে কিভাবে আয়রাকে জ্বালাবো যায়।

এদিকে নিরব কৌশলে ওদের মিমদের গ্রুপে ঢুকে গেলো।আর মিমদের গ্রুপ থেকে একজনকে ওদের গ্রুপে দিয়ে দিলো।মিম হাটতে হাটতে ওর পাশে নিরবকে খেয়াল করে চমকে উঠে বলল”আরে নিরব ভাইয়া আপনি এখানে?আপনি তো এই গ্রুপে না।”

নিরব দাত কেলিয়ে বলল”তোমাদের গ্রুপের একজনকে ওই গ্রুপে পাঠিয়ে দিয়েছি আর আমি এই গ্রুপে চলে আসছি।”

“ওহ!আচ্ছা আপনার পাহাড় ভালো লাগে নাকি সাগর ভালো লাগে?”

“দুটোই।তবে সাগরের পাড়ে দাড়ালে মন ভালো হয়ে যায়।”

“হুম এটা ঠিক বলেছেন।আমারও সাগরই ভালো লাগে।”

“বাহ!”

মিম মুচকি হেসে বলল”আচ্ছা ভাইয়া আপনারা ফ্রেন্ডরা কি একসাথে ট্যুরে যান না?”

“হুম যাই তো।আর কাইন্ডলি আমাকে ভাইয়া বইলো না।”

মিমের পেট ফেটে হাসি আসছে।তবুও নিজেকে সংযত রেখে বলল”তাহলে কি বলবো?আপনি তো আমার বড়ো।”

“তবুও ভাইয়া না।”

“আচ্ছা তাহলে আঙ্কেল অথবা মামা চলবে?”

নিরব চোখ বড়বড় করে মিমের দিকে তাকিয়ে বলল”কোন দিক থেকে আমাকে আঙ্কেল বা মামা লাগে?”

“আপনিই তো বললেন ভাইয়া বলতে না এইজন্য এগুলো বললাম।আচ্ছা তাহলে আপনিই বলে দিন কি বলবো।”

“নাম ধরে ডাকবে।”

মিম মুখে হাত দিয়ে বলল”ওমা এটা হয় না।আপনি আমার থেকে কতো বড় আমি কিভাবে আপনাকে নাম ধরে ডাকবো?”

নিরব মুখ বাকিয়ে বলল”মাত্র তিন বছরের বড়।এমন ভাব করছো মনে হয় তিনশো বছরের বড়ো।”

মিম নিরবের কথায় হেসে বলল”তাও বড়ো তো।আর নাম ধরে তো মানুষ বফ অথবা হাবি কে ডাকে।”

নিরব হেসে বলল”দুটো হতেই রাজি আছি।”এটা বলেই সামনে এগিয়ে গেলো।

আর মিম অবাক হয়ে মনে মনে বলল”ইন্ডিরেক্টলি প্রপোজ করলো।সেয়ানা মাল।আমিও কম না।”

এই বলে নিজেও হাটা শুরু করলো।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here