এক ফ্রেমে তুমি আমি পর্ব ৮+৯

#এক_ফ্রেমে_তুমি_আমি
#পর্বঃ০৮
#Arshi_Ayat

১০.
রিয়া তার গ্রুপের সাথে হাটছে।পিছন থেকে নিলয় ওকে ডাক দিতেই ও পিছনে ঘুরে দেখলো নিলয় দৌড়ে এদিকেই আসছে।নিলয় আসতেই রিয়া জিগ্যেস করলো”একি!আপনি গ্রুপ ছেড়ে চলে এলেন যে?”

নিলয় হেসে বলল”আমি আসি নি।আসলে সবুজ ওর গার্লফ্রেন্ডের গ্রুপে থাকতে চায়।তাই আমাকে এই গ্রুপে পাঠিয়ে নিজে ওই গ্রুপে চলে গেছে।”

“ও!আচ্ছা আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?”

নিলয় আবার হাসলো।তারপর বলল”আমার প্রেম পিরিতির প্রতি ইন্টারেস্ট নেই।”

রিয়া মনে মনে বলল’তাহলে এবার ইন্টারেস্ট আসবে।’কিন্তু মুখে বলল”ওহ!তাহলে কি এরেন্জ ম্যারেজ করবেন?”

“যদি ওই পর্যন্ত কাউকে ভালো না বাসতে পারি তাহলে এরেন্জ ম্যারেজ ই করবো।তোমার বয়ফ্রেন্ড নেই?”

“আমার তো বাবা মাই নেই।বাবা মা ছাড়া মেয়েকে কে ভালোবাসবে।যাদের বাবা মা আছে তাদেরই মানুষ ভালোবাসে।বাবা মা ছাড়া এতিম কে কে ভালোবাসবে?”

রিয়ার কথা গুলো শুনে নিলয়ের বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।সে জিগ্যাসু কন্ঠে বলল”তোমার কি ভাই বোন নেই?”

“আছে একটা ভাই।তবে তার সাথে মাঝেমধ্যে দেখা হয়।মাস শেষে খরচ দিয়ে তার দায়িত্ব পালন করে।”

এটা বলেই রিয়া বাম হাত দিয়ে চোখ মুছে বলল”এসব বাদ দেন।চলেন হাটি।”

নিলয় রিয়াকে খুশী করার জন্য আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ঝুকে এক খাবলা বালু নিয়ে ওর গালে লাগিয়ে দৌড় দিলো।রিয়া ও পিছন পিছন দৌড়াতে দৌড়াতে বলল”দাড়ান আজকে আপনাকে বালু দিয়ে গোসল করাবো।”

নিলয় দৌড়াতে দৌড়াতে বলল”ধরতে পারলে তো কিছু করবে।”

হঠাৎ রিয়া আহঃ করে উঠলো।নিলয় দৌড় থামিয়ে ওর কাছে দেখতে গেলেই রিয়া ওর পিছন থেকে এক খাবলা বালু বের করে ওর দুইগালে লেপ্টে দিয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।নিলয় রিয়ার এই হাসি দেখে দুনিয়াদারী ভুলে গেলো।এক নজরে তাকিয়েই রইলো।হঠাৎ রিয়া বলল”চলুন, উঠুন।ওরা অনেক দূরে চলে গেছে।ওদের ধরতে হবে।”

রিয়ার কথায় নিলয়ের হুশ আসলো।তারপর দুজনই গ্রুপ ধরার জন্য দৌড়াতে লাগলো।
.
.
.
.
.
নিরব আর মিম হাটছে।দুজনের কারো মুখেই কথা নেই দুজনই মিটিমিটি হাসছে।হঠাৎ নিরব বলল”মিম চলো একটু সমুদ্রের পানিতে পা ডুবিয়ে আসি।”

মিম সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়ালো।তারপর দুজনই ওইদিকে যেতে লাগলো।যেতে যেতে মিম বলল”আচ্ছা সাজিদ ভাইয়া এমন চুপচাপ কেনো?”

“আসলে ও ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছে।তাই এমন।”

“ওহ!আচ্ছা ধরুন আপনাকে কেউ ছ্যাকা দিয়ে ব্যাকা করে ফেললো তাহলে পানি কি করবেন?”

“প্রশ্নই আসে না ছ্যাকা দেওয়ার।আর দিলেও যে ছ্যাকা দিবে আমি তাকে ছাড়বো না।সে ছ্যাকা দিয়ে পার পাবে না।আর আমি ছাড়া অন্য কাউকে বিয়েও করতে পারবে না।যদি বিয়ে করতে নেয় তাহলে বিয়েও ভেঙে দেবো।”

মিম হাসতে হাসতে বলল”যদি ও আপনাকে বিয়ে না করে।”

“না করলে নাই।আমাকে বিয়ে না করলে সে ও বিয়ে করতে পারবে না।আর আমিও বিয়ে করবো না।”

“বাহ!আইডিয়াটা জোস।”

এটা বলে দুজনেই দুজনের দিকে চেয়ে হেসে দিলো।

১১.
সবগ্রুপ একসাথে চলছে।এখন সবাই মিলে হাটছে পৃথিবীর দীর্ঘতম ১২০ কিলোমিটারের সমুদ্র সৈকতে।শুনছে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ফেনিল ঢেউ।সারসারি পাথুরে পাহাড় যেনো এক বিষ্ময় ধরিয়ে দিচ্ছে।সাথে ঝাউবনের সৌন্দর্যে সবাই বিমোহিত হচ্ছে বারবার।সৈকতে অনেক্ক্ষণ হাটার পর।সবাই ডুলা হাজরা সাফারি পার্কে গেলো।কক্সবাজার থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান।এটিই বাংলাদেশের প্রথম সাফারি পার্ক।ছায়াঘেরা পথ, সবুজ বনানী, জানা-অজানা গাছের সারি, পাখি আর বানরের কিচিরমিচির সব কিছু মিলিয়ে যেন এক অসাধারণ অনুভূতি।অস্বচ্ছজলে জলহাতির মুখ উঁচিয়ে থাকা বা বেষ্টনীর ভেতর বাঘের হালুম, হাজার পাখির কিচিরমিচির মুগ্ধ করবে যে কাউকে। কিছুদিন আগে যোগ হওয়া জেব্রার দল, বুনোহাতির বিচরণ ও বানরের দুষ্টুমি প্রাকৃতিক পরিবেশ পাবেন।পার্কে স্বাদু পানির কুমির যেমন আছে, তেমনি আছে লোনা পানির কুমির। এখানে বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে জেব্রা, বাঘ, সিংহ, হাতি, ভালুক, গয়াল, জলহস্তী, মায়া হরিণ, সাম্বা হরিণ, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণসহ পাখ-পাখালির সমাহার।

আয়রা অবাক নয়নে দেখছে পার্কের সৌন্দর্য।হঠাৎ সায়ান্ত পাশে এসে দাড়িয়ে বলল”কুমির দেখবা?”

আয়রা উৎসুক হয়ে বলল”কোথায়?”

“ওইদিকে চলো।”

দুজনেই জলাশয়ের ধারে গেলো।সায়ান্ত খপ করে আয়রার হাত ধরে বলল”আব তুমহে কোন বাচায় গা?শোনো যদি আমার সাথে আর বেয়াদবি করো তাহলে সোজা এখানে ফেলে দেবো।তারপর কুমিররা মিলে তোমাকে দিয়ে পার্টি দিবে।”

আয়রা ঢোক গিলে বলল”ঠিকাছে আর বেয়াদবি করবো না।আমাকে ছেড়ে দিন।”

সায়ান্ত একটা সয়তানি হাসি দিয়ে ছেড়ে দিতেই আয়রা ওর হাতে একটা চিমটি দিয়ে দৌড় দিলো।
.
.
.
.
.
অনেক্ক্ষণ ঘোরাঘুরির পর লাঞ্চের সময় হয়ে যাওয়ায় সবাই হোটেলে ফিরে এসে লাঞ্চ করতে বসলো।লাঞ্চ করতে বসতেই আয়রা খেয়াল করলো ওর একপাশে বসেছে সায়ান্ত আরেক পাশে নির্জন।আয়রা কিছু বলল না।চুপচাপ খেতে লাগলো।হঠাৎ মনে হলো কেউ পা দিয়ে ওর পায়ে খোঁচা মারছে।আয়রা দিলো কষে এক লাথি।কিন্তু লাথি খেয়েও শিক্ষা হয় নি।পা টা আবার ওকে খোঁচাচ্ছে।আয়রা আবার দিলো লাথি।কিন্তু এইবার আবারও পা টা এলো।আয়রা টেবিলের নিচে চোখ দিতেই দেখলো নির্জন এমন করছে।আয়রা না পেরে খাওয়া ছেড়ে উঠে গেলো।সায়ান্ত আর নির্জন দুজনই ব্যাপারটা লক্ষ করলো।কিন্তু কেউ কিছু বলল না।আয়রা রুমে এসে ভাবতে লাগলো কি করা যায়।কারণ আয়রা বুঝে গেছে নির্জন এতো সহজে ওর পিছু ছাড়বে না।কিন্তু কিছুই মাথায় এলো না আয়রার।
.
.
.
.
.
এমনিতে সন্ধ্যার পর সবারই হোটেলে ফিরতে হবে কিন্তু আজ সবাই মিলে স্যার ম্যামকে রাজি করিয়েছে বার্মিজ মার্কেটে যাওয়ার জন্য।তাই ওরা সবাই এখন বার্মিজ মার্কেটে যাবে।সন্ধ্যার পরই নাকি বার্মিজ মার্কেট অনেক জম জমাট হয়।ওরা ওইখানে পৌছাতেই দেখলো অনেক মানুষ বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনছে।অনেক ঘুরেঘুরে দেখছে।

১৯৬২ সালে এক রাখাইন উদ্যোগী মহিলা নারী, টেকপাড়াস্থ বার্মিজ প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন তার নিজ বাড়ীতে খুবই ছোট পরিসরে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাখাইন হস্তশিল্পের কিছু মালামাল- চাদর, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ, চুরুট, পুরুষদের লুঙ্গি আর টুকিটাকি জিনিস পত্রের পসরা সাজিয়েছিলেন। কক্সবাজার বেড়াতে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকরা রাখাইন নারীর পসরায় কী আছে, তা নেড়েচেড়ে দেখতো। সেখান থেকেই আজকের এই সর্বজন স্বীকৃত বার্মিজ স্টোরের সূচনা হয়।

মিম একটা দোকানে দাড়িয়ে শামুকের কানের দুল দেখছে।হঠাৎ নিরব এসে একজোড়া কানের দুল দেখিয়ে বলল”তোমার কানে এটা পারফেক্ট হবে।”

“কিভাবে বুঝলেন?”

“এমনিতেই।বিশ্বাস নাহলে তুমি পরে দেখতে পারো।”

মিম নিজের কানের দুল গুলো খুলে ওই কানের দুল গুলো পরে নিলো।তারপর আয়নায় দেখলো।আসলেই সুন্দর লাগছে।হঠাৎ দোকানী বলল”আপনার বউয়ের কানে দুল গুলো মানাইছে।”

দোকানীর কথায় মিম আর নিরব দুজনই শকড।মিম ওইখানে আর না দাড়িয়েই দৌড় দিলো।মিমের কান্ড দেখে নিরব হেসে দিলো।
.
.
.
.
.আয়রা নিজের মায়ের জন্য একটা শাল কিনলো।হঠাৎ পাশ ফিরতেই দেখলো নির্জন ওকে একটা মালা দিয়ে বলল”এটা তোমাকে মানাবে।”

আয়রা মালাটা দেখে বলল”আমার চেয়ে বেশি হিয়া কে মানাবে।আপনি বরং তার জন্য নিয়ে যান।”

নির্জন রেগে বলল”সব কথায় তুমি হিয়া হিয়া করো কেনো?”

আয়রাও রাগ দেখিয়ে বলল”কারণ হিয়া আপনার বউ।আর নিজের বউকে রেখে অন্য মেয়েকে গিফট করা থার্ডক্লাস ক্যারেকটারলেস দের কাজ।”

এটা বলেই আয়রা সেখান থেকে চলে গেলো।আর নির্জন দাত কটমট করতে লাগলো।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ।আজকে আরেকপর্ব দিবো।রাত ৮.০০ টায়)
এক_ফ্রেমে_তুমি_আমি
#পর্বঃ০৯
#Arshi_Ayat

১১.
আয়রা রাগে অন্ধ হয়ে হাটছে।মানে কতো ছেছড়া হলে হতে পারে মানুষ নির্জনকে না দেখলে বোঝা যাবে না।এতোবার না করার পরও পিছু ছাড়ছে না।আর কতোবড় ক্যারেক্টারলেস বউ থাকতে প্রাক্তনের পিছনে ঘোরে।আয়রা এগুলো ভাবতে ভাবতে রাগে ফোঁসফোঁস করে হাটছিলো।ওর খেয়ালই ছিলো না সামনে সায়ান্ত আসছে।আবার এদিকে সায়ান্ত ফোন টিপতে টিপতে আসছিলো।তারপর যা হওয়ার তাই হলো।আয়রা আর সায়ান্ত দুজনেই পড়ে গেলো।এমনিতেই আয়রার মাথা গরম হয়ে আছে তার ওপর এখন সায়ান্তর সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলো।আয়রা রেগে চেচিয়ে বলল”সমস্যা কি আপনার?বারবার আমার সাথেই ধাক্কা খান কেনো?”

“আজব,আমি কই ধাক্কা খেলাম আর বারবার তুমি আমার সামনে পড়ো কেনো?”

আয়রার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তাই কিছু না বলে উঠে হনহন করে চলে গেলো।সায়ান্তও উঠে হাটতে হাটতে ভাবলো কি হলো মেয়েটার এমন রেগে আগুন হয়ে আছে কেনো?কি জানি বোধহয় বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হইছে।এগুলো ভাবতে ভাবতে সায়ান্তও চলে গেলো।

বার্মিজ মার্কেটে রাত ৯.০০ টা পর্যন্ত ছিলো সবাই।তারপর স্যারদের প্যারায় আবার হোটেলে চলে আসতে হলো।হোটেলে এসে আয়রা, মিম আর রিয়া ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে গেলো।খাওয়া টেবিলে এসে আয়রা মিম আর রিয়াকে বলল”দোস্ত শোন তোরা আমার দুইপাশে বস।প্লিজ।”

আয়রার কথা শুনে দুজনই ওর দুইপাশে বসলো।মিমের পাশে বসলো নিরব।আর রিয়ার পাশে বসলো নিলয়।আর আয়রার বিপরীতে বসলো সায়ান্ত।এই টেবিলে জায়গা না থাকায় নির্জনকে অন্য টেবিলে বসতে হলো।নির্জন এই টেবিলে বসতে পারে নি বলে আয়রা হাফ ছেড়ে বাচলো।অন্তত এখন একটু শান্তিমতো খাওয়া যাবে।খাওয়া শেষ করে আয়রা রুমে চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো।সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে দেখলে নির্জনও পিছন পিছন আসছে।আয়রা এটা দেখে দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।কিছুক্ষণ পর কে যেনো দরজায় নক করলো আয়রা প্রচুর ভয় পাচ্ছে।খুলবে নাকি খুলবে না এমন দ্বিধায় পড়ে গেছে।তারপর বুদ্ধি করে রিয়াকে ফোন দিলো।রিয়া ফোন রিসিভ করে বলল”কি রে।দরজা খোল।”

“ও তুই।দাড়া খুলছি।”

আয়রা দরজা খুলতেই মিম আর রিয়া ভেতরে ঢুকে গেলো।তারপর মিম বসতে বসতে বলল”দরজা বন্ধ করেছিলি কেনো?”

“এমনিতেই।”

“ওহ।চল ঘুমিয়ে পড়ি কাল ভোরে উঠে সূর্যোদয় দেখবো।” রিয়া শুতে শুতে বলল।

আয়রা আর মিমও সম্মতি জানিয়ে শুয়ে পড়লো।
.
.
.
.
.
এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙলো রিয়ার তারপর দুই বান্ধবীকে টেনে তুললো সূর্যোদয় দেখার জন্য।তিনজনই ফ্রেশ হয়ে চুপিচুপি বেরিয়ে পড়লো।এখনো ওরা কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি।তিনজনই সাগর পাড়ে গিয়ে দেখলো।তিনটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।পিছন থেকে বোঝা যাচ্ছে ওরা সায়ান্ত,নিরব আর নিলয়।মিমরা ও ওদের সাথে এসে দাড়ালো।তারপর ছয়জন মিলে মনোরম সূর্যোদয় দেখলো।সূর্যোদয় দেখা শেষ হলে ছয়জনই আবার ফিরে এলো হোটেলে।এরপর নাস্তা করে বের হলো হিমছড়ি যাওয়ার জন্য।হিমছড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। হিমছড়ির একপাশে রয়েছে সুবিস্তৃত সমুদ্র সৈকত আর অন্যপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়ের সারি। হিমছড়িতে একটি জলপ্রপাত রয়েছে যা এখানকার প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। যদিও বর্ষার সময় ছাড়া অন্যান্য অনেক সময়ই ঝরণায় পানি থাকে না বা শুষ্ক থাকে। তবুও প্রাকৃতিক পরিবেশ হিসেবে হিমছড়ি, পর্যটকদের অনন্য এক আকর্ষণ।

পাম গাছ এবং বাঁশঝাড়ে ঘেরা একটি অপূর্ব পিকনিক স্পট হল হিমছড়ি। শীতকালে যখন সূর্য পাহাড়ের উপর উদিত হয় এবং নীল সমুদ্রে অস্ত যায় তখন হিমছড়ি ভিন্ন এক রূপ ধারন করে।

হিমছড়ি পৌঁছে যে যার মতো উপভোগ করছে জায়গাটার মনোরম দৃশ্য।

এদিকে সায়ান্ত আর নিরব মিলে নিলয়কে পানিতে ডুবাচ্ছে।তারপর নিলয়কে ছেড়ে দিয়ে সাজিদকে ডুবানো শুরু।এভাবেই সবাইকে পানিতে চুবানোর পর এখন সবাই এসেছে সায়ান্তকে চুবাতে।সায়ান্ত ওদের আসতে দেখেই দৌড়।ওরাও পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছে।একপর্যায়ে তিনজনে মিলে ধরে ফেললো তারপর চ্যাং-দোলা করে পানিতে এনে ফেললো।তারপর ইচ্ছামতো ডুবাচ্ছে।

এদিকে মিম আয়রা আর রিয়া মিলে মাথরের ওপর বসে পা পানিতে রেখে আড্ডা দিচ্ছে।হঠাৎ তিনজনের মুখেই পানির ঝটকা পড়তেই দেখলে সামনে সায়ান্ত,নিলয় আর নিরব মিলে দাত কেলাচ্ছে।সায়ান্ত হাসতে হাসতে বলল”হিমছড়ি এসেছে আর পানিতে ভিজবে না তা তো হবে না।”

এই বলেই সায়ান্ত নিলয় আর নিরবকে চোখ মারার সাথে সাথেই তিনজনে মিলে ওদের পানি ছোড়া শুরু করলো।মেয়েরা ও কম না ওরা ওদের পিছনে ছুটছে পানি মারার জন্য।

এভাবেই সবাই মিলে মজা করলো।তারপর দুপুরের দুকে ওইখানের হোটেল থেকে খেয়ে নিলো।

এরপর সবাই মিলে ইনানি বিচ চলে গেলো।ইনানী বীচ
হিমছড়ি থেকে আরো ৫ কিলোমিটার গেলেই ইনানী বীচ বা ইনানী সমুদ্র সৈকত। ইনানী বীচে প্রবাল পাথরের ছড়াছড়ি। অনেকটা সেন্টমার্টিনের মতই। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মত এখানে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে না সৈকতের বেলাভূমিতে। অনেকটাই শান্ত প্রকৃতির সৈকত এই ইনানী। জোয়ারের সময় এলে প্রবাল পাথরের দেখা পাওয়া যাবে না। ভাটার সময়েই কেবল মাত্র বিশাল এলাকা জুড়ে ভেসে উঠে এই পাথর। প্রবাল পাথরে লেগে থাকে ধারালো শামুক ঝিনুক। তাই এখানে বেশী লাফালাফি করা বিপদজনক।ইনানী সৈকতের প্রধান আকর্ষণ প্রবাল আর পাথর। প্রায় প্রতিটা পাথরই নানা আকার আর ধরণের। কত বছরের পুরনো সে পাথর! আর তাতে মিশে আছে কত স্মৃতি!

সবাই ধারায় ধারায় হাটছে।আর পড়ন্ত বিকেলের সৌন্দর্য উপভোগ করছে।

আয়রা হাটা থামিয়ে বসে পড়লো।তারপর সাগরের বালুর ওপর শামুক দিয়ে লিখলো”আই লাভ ইউ মা”
আয়রা বুঝতেও পারলো না পিছনে সায়ান্ত দাড়িয়ে আয়রার কান্ড দেখছে।আয়রা এটা লিখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আবার চলতে লাগলো।পাশে সায়ান্তও হাটছে।

কিছুটা দূরে মিম আর নিরব হাটছে।তারও দূরে রিয়া আর নিলয়।সাজিদ আরো দূরে একাএকা হাটছে।মোট কথা কেউই গ্রুপে নেই যে যার মতো মুহুর্তটা উপভোগ করছে।

তারপর সন্ধ্যা হতেই সবাই হোটেলে ফিরলো।সবাই মিলে নাস্তা খেয়ে।স্যার ম্যামকে রাজি করালো বারবিকিউ পার্টি করার জন্য।তো স্যার ম্যাম রাজি হলো।তারপর সবাই মিলে সাগর পাড়ে চলে গেলো।ওইখানে আগুন জ্বেলে গোল হয়ে বসে পড়লো।অনেকে আবার রাতের সাগর দেখতে লাগলো।

সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো।হঠাৎ বোটানি ডিপার্টমেন্টের আশরাফ স্যার বলল”পিকনিক করতে এসে চুপচাপ কেনো?সবাই গান ধরো।”

স্যারের কথায় সবাই চিল্লিয়ে স্যারকে সমর্থন করলো।তারপর সবাই মিলে গান ধরলো।

“আরে টিকাটুলির মোড়ে
একটা অভিসার সিনেমা হল রয়েছে,
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে !
আরে টিকাটুলির মোড়ে
একটা হল রয়েছে,
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে।।

এবার স্যাররা সবাইকে থামিয়ে দিয়ে তার গাইতে শুরু করলো

অ অ ও ভাই !
একদিন গেলাম সিনেমা দেখতে,
আর রিক্সা থেকে নেমে দেখি
হলে একটি সুন্দরী মেয়ে
দাড়িয়ে আছে হঠাৎ দেখি
সেই মেয়েটির চোখে
আমার চোখ পড়েছে
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে !
আরে টিকাটুলির মোড়ে
একটা হল রয়েছে,
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে !

ও ও ওরে ভাই !
হাউজফুল কোন টিকেট নাই
ব্লাকে দশ টাকার টিকেট
বিশ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে
কোন রকম ভিতরে গিয়ে বসলাম।
হঠাৎ দেখি পাশের চেয়ারে
সেই মেয়েটি আমার পাশেই বসেছে
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে !
আরে টিকাটুলির মোড়ে
একটা হল রয়েছে,
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে !

অ ও ওরে ভাই !
সিনেমা আরম্ভ হয়ে গেল।
রাজ্জাক শাবানা যখন
প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল
তখন আমার বুকের ভিতর
ধুপ ধাপ শুরু হয়ে গেল;
আমি যদি প্রেম করতে পারতাম !
তখন দেখি পাশের সিটে বসা
সেই মেয়েটি আমাকে চিমটি মেরেছে
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে !
আরে টিকাটুলির মোড়ে
একটা হল রয়েছে,
হলে নাকি এয়ার কন্ডিশন রয়েছে !

অনেক মজা করে স্যাররা সহ সবাই গান শেষ করলো।তারপর খাওয়া দাওয়া করে আরো অনেক্ষণ আড্ডা চলল।রাত দশটার দিকে সবাই হোটেলে ফিরলো।

আয়রা রুমে ঢুকতে নিলেই কে যেনো ওর চুল ধরে টান দিলো।আয়রা পিছনে ঘুরতেই দেখলো সায়ান্ত হাসতে হাসতে দৌড়াচ্ছে।আয়রা রুমে ঢুকে মনে মনে বলল” কাল সকালে এর বদলা নেবো।”

১২.
সকালে সবাই নাস্তা শেষ করে বেরিয়ে পড়লো ঘুরতে।আজ শেষ দিন।আজ বিকেলে সবাই আবার রওনা দিবে ঢাকার উদ্দেশ্যে।তাই স্যার ম্যাম রা সবাইকে বারণ করলো দূরে কোথাও যেতে।স্যারদের কথা মতোই সবাই বিচের আশেপাশেই হাঁটছে।

আয়রা একা একা হাটছিলো।হঠাৎ কারো ডাকে পাশ ফিরতেই দেখলো সায়ান্ত দাত কেলিয়ে বলছে”হাই মিস বয়রা।কেমন আছো?”

আয়রা কিছুই বলল না।শুধু আস্তে করে সায়ান্তর পায়ের ভেতর পা ঢুকিয়ে ল্যাং মারলো।সায়ান্ত ও কম না যেই দেখলো ও পড়ে যাচ্ছে সাথে সাথে আয়রাকেও ফেলে দিলো।আয়রা দুম করে সায়ান্তর ওপর পড়ে গেলো।আয়রার ঠোঁট সায়ান্তর গালে লাগলো।কি থেকে কি হলো আয়রা এখনো বুঝতে পারছে না।

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here