এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ৩৯+৪০+৪১

#হিয়ার_মাঝে
৩৯.
#WriterঃMousumi_Aktar
🖤
নানার দেওয়া থাপ্পড় এ মা বাবা উভয় ই আঁতকে উঠলেন।দাদুর পুরা শরীর কাঁপছে রাগে।চোখ থেকে মোটা ফ্রেমের চশমা টা খুলে বললেন,তাহলে তুই।তুই সেই বিশ্বাসঘাতক যে আমার কলিজার টুকরো কে আমার জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছিস বলেই দাদু হুঁ হুঁ করে উঠলেন।একজন বাবার আদরের মেয়ে কে কেউ কেড়ে নিলে সেই বাবার কাছে নিম্ন লেভেলের ঘাতক থাকে সেই ব্যাক্তি।একজন বাবা হিসাবে তার মেয়েকে হারানোর মতো কষ্ট নেই।মৃত্যু যদি স্বাভাবিক ভাবে হয় তাহলে সবাই মেনে নিতে পারে কিন্তু যে মৃত্যুর কারন টাই সবার অজানা রয়ে গিয়েছে সেই মৃত্যু মেনে নেওয়া টা খুব ই কষ্টের।

বাবা কখনো মায়ের ফ্যামিলির কারো সাথে যোগাযোগ করে নি তাই কাউকে তেমন চিনেও না।যোগাযোগ করে নি বলতে বাবা গভীর পানির মাছ তাই ধরা দিতে চান না।বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন নানার দিকে।বাবা খানিক সময় তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করলেন আপনি?

বাবার কথা শুনে নিরব বললো,

“হ্যাঁ উনিই সে হতভাগা বাবা।যার মেয়েকে আপনি আরো অনেক গুলা বছর আগে ঠকিয়ে বিয়ে করেছিলেন।”

“মানে।”

আমি খানিক টা শক্ত পোক্ত কন্ঠে বলে উঠলাম,,মানে এটাই এরাই আমার আপন জন।আমার নানা,মামা,মামি। আপনি কোনদিন তাদের ঠিকানা দেন নি।ইচ্ছা করলেই পারতেন কিন্তু তাদের সাথে যোগাযোগ করতে।ভেবেছিলেন হয়তো আপনার ক্লোজ করা চ্যাপ্টার আজীবন ক্লোজ ই থাকবে।আমি আপনাকে একদিন বলেছিলাম একদিন না একদিন সব খুজে পাবোই। দেখুন আজ আমি সব খুজে পেয়েছি।আপনি এতদিন দূরে রেখেছিলেন আমাকে।আমার মায়ের সেই ডায়রি আমি পড়েছি সেখানে স্পষ্ট লেখা ছিলো আপনার কুকির্তী।কি ভেবেছিলেন সারাজীবন আমি একা থাকবো।আপনি ত্যাজ্য করলে আমি বানের জলে ভেষে যাবো। আবার কেঁদে কেঁদে আপনার দুয়ারে যাবো।এই প্লান ই করেছিলেন তাইনা।

মা দাদুকে বললো, আপনি তাহলে সেই চরিত্রহীনার বাবা।আপনাকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো আমার।এমন মেয়ের জন্ম কিভাবে দিলেন।যে কিনা অন্যর সংসার নষ্ট করে।লজ্জা করে না আপনার সেই মেয়ের হয়ে কথা বলছেন।আমার সাজানো সংসার নষ্ট করেছে আপনার মেয়ে।ওর থেকে পতিতারা ভালো আছে।আমার জীবনের সব সুখ শান্তি নষ্ট করেছে আপনার মেয়ে।

দাদু এগিয়ে এসে মায়ের দু ‘গালে আরো দুটো থাপ্পড় মেরে বললেন আর একটা বাজে কথা বললে কথা বলার অবস্থা রাখবো না।ভেবো না বয়স হয়েছে বলে সব বল পড়ে গিয়েছে।একটা মৃত মানুষের নামে এসব বলতে মুখে বাঁধে না তোমার।তুমি যদি ভাল মেয়ে হতে অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে আমার মেয়ের বিচার আমি করতাম।এমন মেয়েকে আমি জন্ম দেই নি যে অন্যর সংসার ভাঙবে।বাবার দিকে আঙুল উঁচু করে বলেন যা করার ওই কুলাঙ্গার করেছে।আমার মেয়ে চরিত্রহীনা তাহলে তোমার স্বামি কি?তোমরা সবাই মিলে আমার মেয়ের জীবন টা নষ্ট করেছো।একই ভাবে আমার নাতনীর পিছনে লেগেছিলে কিন্তু সফল হতে পারো নি। আমার নাতনির সাথে যে ব্যবহার সারাজীবন করেছো সুখ শান্তি কোনদিন তোমাদের জীবনে আসবে না।আমার মেয়ে মরে গিয়ে ভাল আছে।তোমরা বেঁচে আছো এই সন্তানহারা বাবার চোখের পানিতে কোনদিন ভাল থাকবে না তোমার।

আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, মা সম্পর্কে মা হও বলে আজ কিছুই বলতে পারি না।কুকুর মানুষ কে কামড়ায়।মানুষ কুকুর কে কামড়ায় মা।তাকিয়ে দেখো মা আমি ভাল আছি।আমার আশেপাশে ভালবাসার মানুষের অভাব নেই।তুমি কি ভেবেছিলে মা সারাজীবন তোমার অবহেলা নিয়ে বেঁচে থাকবো।তোমরা আমাকে ভালবাসো নি তাতে কি হয়েছে আল্লাহ আমাকে আজ ভালবাসায় পূর্ণতা দিয়েছেন।আমার মায়ের টাকা আমার মামার পেছনে খরচ করেছি সেটা তোমরা বলার কে?আমার মায়ের সাথে এতকিছু তো টাকার জন্য করেছো তোমরা।এই টাকার জন্য আমার মায়ের জীবন টা নষ্ট করেছো।

মামা এগিয়ে এসে বাবাকে প্রশ্ন করে আমার বোন এর কি অন্যায় ছিলো।কেনো একটা বার আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে দাও নি।আমার বোনের নামের সম্পত্তি কি হয়েছে।

নানা বলেন সম্পত্তি নিয়ে কিছুই বলিস না বাবা।তাহলে ওই নরপিশাচ ভাববে তোর বোনের থেকে সম্পত্তির জন্য বেশী খারাপ লাগছে তোর।

নানা আবার ও এসে বাবাকে প্রশ্ন করেন মানুষ আর অমানুষ দেখতে একই রকম হয় তোকে না দেখলে বুঝতাম না।আমার মেয়েকে তুই মেরে ফেলেছিস আমি জানি।আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী।পুলিশ পুলিশে দিবো আমি তোকে।

বাবা রিতীমত ভয় পেয়ে গেলো,দেখুন আমি আপনার মেয়েকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম।ওর সম্পত্তির কিছুই আমি নেই নি।ও নিজে থেকেই আপনাদের সাথে যোগাযোগ করে নি।আমি বলেছি অনেক বার।আপনার মেয়ের কোনো কিছুই আমি নেই নি।

নিরব বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,আর মিথ্যা বলবেন না আঙ্কেল দয়াকরে।সত্যি টা সবাই জানে এখন।ইন ফিউচার ভুলেও মৃথিলার সাথে এসে বাজে বিহ্যাভ করবেন না।তাহলে আমি আপনাদের মুখ কথা বলার মতো রাখবো না।মৃথিলার মায়ের সাথে কি ঘটেছিলো সেটা এমনিতেই একদিন প্রকাশিত হবে আপনাকে বলতে হবে না।নিজের সন্তান এর সাথে যে ব্যবহার করেছেন আপনাদের মতো জঘন্য মানুষ পৃথিবীতে দেখি নি।এই বৃদ্ধ মানুষ চাইলেই আজ আপনাদের বিরুদ্ধে করা স্টেপ নিতে পারেন।কিন্তু উনার হাতে উপযুক্ত প্রমান নেই।তবে প্রমান কখন পেয়ে যাবে ঠিক নেই তাই সাবধান হয়ে যান।আর নেক্সট এখানে আসলে আপনার নামে কমপ্লেইন দিতে বাধ্য হবো।

নানা, মামা,মামি,মুনতাহা আপু সেদিন ভীষণ কেঁদেছিলো।তাদের পুরনো ক্ষত আবার জেগে উঠেছিলো।আমাকে পেয়েই হয়তো নানা মাকে হারানোর কষ্ট ভুলে থাকতে পারেন।

নিরবের বাবা আমাকে পাসপোর্ট করতে বলেন।নিরব রা ইউ এস সিটিজেন শিপ পেয়েছে।তাই আমার জন্য এপ্লাই করেছেন।কিন্তু নানা কে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব না আমার।আমি যাবো না বলে নিরব ও বিদেশ যাওয়া ক্যান্সেল করে দিলো।নিরবের মা আর বাবা বিদেশ চলে গেলেন।

কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক টা মাস।সব কিছু স্বাভাবিক চলছে।

_________________________________

ল্যাপটপের দিকে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে নিরব।আমি আজকে হঠাত শাড়ি পরেছি। ইচ্ছা করছে নিরব কে চমকে দিতে গিয়ে।ও দেখলে ভীষণ খুশি হবে।হঠাত শাড়ি পরেছি ওর ভীষণ ভাল লাগবে দেখলে।শুধু ওর মুখে একটাই কথা শুনবো বলে সেজেছি “তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে জানপাখি” ওর মুখের প্রশংসা শুনলে পৃথিবীর সব হাসি আনন্দ এসে জড় হয় মনের মাঝে।রুমে প্রবেশ করে বেডের কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম নিরব আমার দিকে তাকাচ্ছেই না।ভেবেছি বিজি আছে তাই ভাবলাম একটু পরেই আসবো এখন বিরক্ত করাটা ঠিক হবে না।আমি রওনা দিতেই আমার শাড়ির আঁচল টেনে ধরে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে কি যেনো টাইপ করছে নিরব।এক হাতে শাড়ির আঁচল ধরে অন্য হাতে টাইপ করছে।এই রে আমায় দেখে ফেলেছে নিরব।ভাবলাম আমায় হয়তো দেখে নি কিন্তু না তাকিয়ে দেখলো কিভাবে।ল্যাপটপ এর সাটার অফ করে আমাকে এক ঝটকায় নিজের কাছে টেনে নিলো।মিনিট খানিক তাকিয়ে থাকার পরে বললো কি ভেবেছিলে আমি তোমায় দেখি নি।

“হ্যাঁ আমি তো তাই ভেবেছিলাম আপনি আমায় দেখেন নি।মন ছিলো ল্যাপটপ এ।”

“তোমার পরীক্ষার রুটিন ডাউনলোড দিচ্ছিলাম।এক মাস পর থেকে না তোমার এক্সাম। ”

“আমার দিকে না তাকিয়ে বুঝলেন কিভাবে আমি এসেছি।”

“আমার বউ এর পায়ে দুখানা নুপুর আছে সেটার রিনিঝিনি সাউন্ড হচ্ছিলো তো।তাছাড়া আমার বউ এর হার্টবিট আমি অনুভব করতে পারি।এই যে তোমার হার্টবিট অলওয়েজ বলছে আই লাভ ইউ নিরব।”

“হঠাত করেই গাল ফুলিয়ে বললাম আপনি কি আমার মাঝে কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন।”

“উম কই নাতো।”

“একটুও দেখতে পাচ্ছেন না।”

“উহু!”

“যান ছাড়ুন আমাকে কোনো কথা বলবো না।”

“দেখি ট্রাই করে দেখি পরিবর্তন বুঝতে হলে একটু উঁচু করতে হবে।বলেই নিরব আমাকে পাজা কোলে তুলে উঁচু করে ধরলো।উঁচু করে বললো ওজন কমেছে মৃথিলা তোমার।মানুষ বিয়ের পরে মোটা হয় আর তুমি চিকন হচ্ছো কেনো বলোতো।”

“আপনি কি আমার মাঝে এখন এই পরিবর্তন পেলেন।”

“আমি আর কোনো পরিবর্তন পায় নি।তুমি এখন পড়তে বসো তো যাও।এক মাস পরেই এক্সাম।পরে রেজাল্ট খারাপ হলে সবাই বলবে মেয়েটাকে তার বর পড়ার কোনো সুযোগ ই দেয় না।বিয়ের পর আর লেখাপড়া কিছুই হবে না।আমি এই অভিযোগ ঘাড়ে নিবো না যাও পড়তে বসো কুইক।”

মনে মনে ভীষণ অভিমান হলো।বিয়ের এক বছর হতে পারে নি এত অরুচি।আমি মনে হয় পুরনো হয়ে গেছি।নিশ্চয়ই বিদেশি কোনো প্রেমিকার কথা মনে পড়েছে।নাকি আমাকে আর ভাল লাগছে না।ভাল লাগবেই বা কি করে ঠিক এ কারনেই বেশী সুন্দর চেহারার ছেলে বিয়ে করতে নেই।এতদিন পরে শাড়ি পরেছি তাও বিশেষ দিন বলে। সে পাত্তাই দিলো না।নিরবের দিকে তাকিয়ে দেখি আবার ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ।নিশ্চয়ই আমার চেয়ে ইমপরটেন্ট কোনো কাজ করছে।আমার থেকেও ইমপরটেন্ট কিছু হয়েছে নিশ্চয়ই। রাগে অভিমানে শাড়ি টা খুলে রাখলাম।রাগে রাগে জোরে চেয়ার টেনে নিয়ে পড়তে বসলাম।

নিরব আমার দিকে তাকিয়ে বললো কি সমস্যা এত জোরে চেয়ার টানছো ক্যানো?পড়তে বসো।

পড়তে বসেছি ঠিক ই কিন্তু পড়ার দিকে মোটেও মন নেই।চোখের পানিতে খাতা ভিজে গেলো।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ভালবাসার মানুষ সামান্য তম পরিবর্তন হলে মনের মাঝে ভীষণ তোলপাড় করে।কত টা কষ্ট হয় সেটা আজকের দিন টা না এলে বুঝতাম ই না।পড়ার দিকে মন নেই।ইউটিউব এ সার্চ দিলাম স্বামি পরিবর্তন হয়ে গেলে কিভাবে আবার তাকে ফিরিয়ে আনবো।একটা মেয়ে ইউটিউবারের চ্যানেলে দেখলাম অনেক গুলা সাবস্ক্রাইবার।সব ভিডিও তে অনেক ভিউ।মনে মনে ট্রাস্টেড ভেবে তার চ্যানেলের একটা ভিডিও প্লে করলাম।উনি পরামর্শ দিলেন ছেলেরা বাচ্চার পাগল।বাচ্চার প্রতি অনেক উইক তারা।স্বামি পরিবর্তন হয়ে গেলে সবার আগে একটা বাচ্চা নিতে হবে।তাহলেই সে আগের মতো কেয়ারিং হয়ে যাবে।চট করেই পড়ার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে আবার বেডের পাশে গিয়ে হাতের মুঠোতে ওড়নার এক মুড়ো ধরে কচলাতে লাগলাম।

নিরব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো কিছু বলবে।

“হ্যাঁ আমি বাচ্চা নিতে চাই।”

“নিরব আমার কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লো।পুরাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।আবার ও ভ্রু কুচকে বললো হোয়াট বাচ্চা।”

“ক্যানো এতে অবাক হওয়ার কি আছে। আমি এই মুহুর্তে বাচ্চা চাই।”

“এই মুহুর্তে বাচ্চা কি গুগল থেকে ডাউনলোড করবো।বলেই নিরব গুগলে সার্চ করে একটা কিউট বেবি পিকচার বের করে বললো এই নাউ বাচ্চা।”

“দেখুন ইয়ার্কি না আমাদের সংসারে আপনার আর আমার বাচ্চা চাই আমি।চাই মানে চাই।আমি বেবি নিতে চাই।”

“নিরব হেসে দিয়ে বললো একটা বাচ্চা এসে যদি আমার কাছে বাচ্চা চায় কেমন একটা লাগে না।”

“দেখুন আমি বাচ্চা থেকে বড় হয়ে গিয়েছি।
ওসব বলে আমাকে ইগনোর করা যাবে না।”

“ঠিক আছে কাঁছে এসো,কাছেই তো আসতে চাও না বাচ্চাটা হবে কিভাবে।”

“এখন থেকে রোজ কাছে আসবো যতদিন না বাচ্চা হচ্ছে।”

“নিরব আমার দিকে তাকিয়ে বললো কি ব্যাপার কাছে আসবে লজ্জা পাবে না”

“ক্যানো লজ্জা পাবো কেনো কাছেই তো আছি”

“এই কাছে সেই কাছে না।এই কাছে এলে বেবির আম্মু হয়ে যাবা।সো ভেবে চিন্তে ডিসিশন নাও।পরে তো বলবে আপনি এত ফাজিল আগে জানতাম না।এসব করতে হবে আগে বলেন নিতো।তাই কাছে আসার প্রস্তুতি ভাল ভাবে নাও।”

“দেখুন সব প্রস্তুতি নিয়েছি আই ওয়ান্ট বেবি।”

“নিরব আবার ও অবাক হয়ে বললো ও এমজি।বলে কি পিচ্চি।যাও আগে পড়তে বসো।এসবের সময় নয় এখন।আমি ঘুমোবো যাও চেয়ার টেবিলে।”

এবার আরো কষ্ট পেলাম।এই মানুষ টার মাঝে এত চেঞ্জ কেনো?উনি তো এমন না।শাড়ি পরলাম তাও কিছু বললো না।একবার তাকায় নি।কাহিনী কী?
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৪০.
#WriterঃMousumi_Akter

ভ্যাপসা গরমে ঘেমে মুখশ্রী লাল থেকে কালো রুপ ধারণ করেছে।বেশী ঘামলে মুখ তৈলাক্ত হয়ে কালো হয়ে যায় এই সমস্যার কোনো সমাধান ই পেলাম না আজ ও।রাস্তা থেকে আইসক্রিম কিনে রিয়া আর আমি খেতে খেতে বাসায় আসলাম।বিকালে আবার কোচিং এ ক্লাস আছে।সারারাস্তা প্রতিজ্ঞা করেছি আর জীবনে কথা বলবো না উনার সাথে।রিয়া আমাকে বলছে দিয়া বিহান ভাই কে যে এত গালাগাল করে যাচ্ছিস আমার তো মনে হচ্ছে বিহান ভাই এর এমন করার পিছনে কোনো কারণ আছে।উনি তোকে শাস্তি দেন এটা সত্য তবে রাস্তা ঘাটে তো এমন করেন না কখনো।রিয়াকে একটা ধমক দিয়ে বললাম বিহান ভাই কে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি রিয়া।উনার পক্ষে সব ই সম্ভব।রিয়া ওর হাসি চেপে ধরে বললো দিয়া তোর সাহস ও আছে বলতে হয় বিহান ভাই এর সাথে প্রেম করিস ভাবা যায়।কবে ব্রেকিং নিউজ শুনবো প্রেমিক এক আছাড় দিয়ে তার প্রেমিকাকে মেরে ফেলেছে।আমি মাফ চাই উনাকে আমার ভীষণ ভয় করে,সারাজীবন কুমারী থাকলেও বিহান ভাই অসম্ভব।উনি সামনেই এলেই কি কথা বলবো খুজে পাই না।রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,কিসের প্রেম ফেম আমি কোনো বিহান টিহান কে চিনি না।

বাসায় ঢুকতেই আম্মুর বকা শুরু হলো।এই মেয়ে জীবনে বড় হবে না।এইভাবে টমেটো সস লাগাইলি কিভাবে।তোর কি কোনোদিন আক্কেল হবে না।সাদা ড্রেসের এই রং কি আর উঠবে।আম্মুকে তো আর বলতে পারলাম নাহ তার গুনবান ভাতিজার কাজ এটা।বকাগুলো হজম করে নিলাম।

ড্রেস টা খুলে ওয়াশ রুমে গেলাম ধোঁয়ার জন্য।সস এর দাগের মাঝে ভিন্ন একটা দাগ দেখে চমকে গেলাম আমি।গাড় লাল রক্তের দাগ। দাগ টা ভাল ভাবে খেয়াল করে দেখলাম সত্যি রক্তের দাগ।তার মানে আমার পিরিয়ড হয়েছিলো।জামার পেছনে দাগ লাগাতে উনি ইচ্ছা করে টমেটো সস লাগিয়ে দিয়েছিলেন।উফফ উনি আমার এই সময় টা জেনে গেলেন।বার বার এত লজ্জা পেতে হয় উনার সামনে।ছিঃকি ভাবলেন উনি আমাকে।ওহ মাই গড এত বাজে সিসুয়েশন এ পড়লাম।লজ্জায় কিভাবে উনার সামনে যাবো।শুধু শুধু বিহান ভাই কে ভুল বুঝলাম।উনি আমাকে মানুষের মাঝে লজ্জায় পড়তে দিবেন না বলেই এমন করেছেন।শুধু শুধু ভুল বুঝলাম।আরেকবার ও গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।

ফোন হাতে নিয়ে পায়চারী করছি উনাকে একটা ফোন দিবো ভেবে।উনি কি আমায় বকা দিবেন নাকি।নেট অন করে দেখি উনি অনলাইনেই আছেন।
বিহান ভাই কে ভিডিও কল দিলাম।উনি রিসিভ করে বললেন কি ব্যাপার মিস জরিনা ভানু কেমন আছেন।উনার কথা শুনে খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম।কি জরিনা ভানু আর কত দিন বলবেন তার ইয়ত্তা নেই।

সরি আমি আসলে তখন বুঝতে পারি নি।

আহ কি বুঝতে পারেন নি ম্যাডাম ফুলি

কিছু না ধন্যবাদ আপনাকে

থাক ধন্যবাদ দিতে হবে না জানতাম বাড়িতে গিয়ে এমন করবেন তাই চুপ ই ছিলাম।

খেয়াল করে দেখলাম উনি আমার নিক নেইম জরিনা ভানু দিয়ে সেভ রেখেছেন।নাম টা ক্লিয়ার করে দিলাম ।উনি আসলেও পারেন ও বটে।কি বলবো খুজে না পেয়ে কল কেটে দিলাম।।এক মিনিটের মাঝে উনি আবার ভিডিও কল দিয়েছেন।রিসিভ করে বললাম কিছু বলবেন।উনি বললেন হুম একটস জিনিস দিতে চাই।কি দিতে চান।উনি ভিডিও কলের মাঝে দুই ঠোঁট একজায়গা করে উম্মম্মম্মম্মাহ বলে কিস করে দিলেন।লজ্জায় দ্রুত ফোন উল্টা করে রাখলাম।উনি এগুলাও বোঝেন ভাবা যায়।

বিকালে রিয়া আর আমি কোচিং এর উদ্দেশ্য রওনা হলাম।পথে আমাদের পাড়ার দুইটা ছেলের সাথে দেখা।বিহানভাই দের বাসার পাশেই আমাদের কোচিং।বিহান ভাই এর রুম থেকে স্পষ্ট দেখা যায় কোচিং এর রুম।ছেলে দুইটা আমাকে দেখে বললো দিয়া কি কালারের হচ্ছে পিংক নাকি ব্ল্যাক।ওই ছেলেটা বুদ্ধি করে পেছনে সস লাগাই দিছিলো।ইয়ে বেশী না কম হচ্ছে।গতকাল ই দেখেছিলাম কিন্তু আমরা। লজ্জা আর অপমানে কি বলবো বুঝছিলাম না।মাথা নিচু করে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।এমন সময় বিহান ভাই এসে বললেন,দিয়া মন খারাপ কেনো?আমি ছল ছল চোখ নিয়ে উনার দিকে তাকালাম।বিহান ভাই বললেন পায়ের জুতা খোল দিয়া বলেই শার্টের হাতা গোটানো শুরু করলেন।একটা ছেলের চোখ মুখ শুকিয়ে এসছে।আরেক টা ছেলে স্বাভাবিক।বিহান ভাই বললেন কি হলো জুতা খোল বলছি, যতক্ষণ না এলাকায় মানুষ একত্রিত হচ্ছে ততক্ষণ পেটাতে থাক।পরে গনধুলানি দিবো।আমি বললাম থাক গে ঝামেলা করার দরকার নেই।

যে ছেলেটা বাজে কথা বলছিলো সে বললো,কে ভাই আপনি? জুতা দিয়ে পিটাবে মানে।আমি কি খারাপ কিছু বলেছি।ওর সাথের ছেলেটা বললো চুপ কর ভাই। উনি হলেন বিহান ভাই।এলাকার সব ইয়াং জেনারেশন উনার কথায় উঠাবসা করে।তাছাড়া উনাকে সবাই চিনে। এই যে কি সেই বিহান ভাই।হ্যাঁ এই যে সেই বিহান ভাই।

বিহান ভাই একটা ছেলের কলার চেপে ধরে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে থাপ্পড় কষে দিলেন।ছেলেটার গালে সব গুলো আঙুল বসে গেলো।

মেয়েদের পিরিয়ড কি হাসাহাসির কোনো জিনিস।লেখাপড়া তো মনে হয় করিস না। অন্তত দুই চার ক্লাস পড়লে এতটুকু ধারণা হতো।মেয়েদের যদি আল্লাহ এই জিনিস টা না দিতো তাহলে কি তোর আমার জন্ম হতো।এটা কি প্রথম দিয়ার ই দেখলি যে এটা নিয়ে দিয়াকে ছোট করছিস।মেয়েদের মাতৃত্বের সম্মান এটা।আমার এলাকায় এত বড় ফাউল ছেলে কোথা থেকে এলো।বলেই বিহান ভাই আরো কয়েক টা থাপ্পড় মেরে দিলো।অন্য ছেলেটা বলছে ভাই আমি কিছু করিনি আমাকে মাফ করে দিন।

মামাদের পাড়ার একটা ছেলে এসে বললো,কি হয়েছে বিহান ভাইয়া।?

এই যে ছেলে গুলো আমাদের দিয়াকে বিরক্ত করছে।থানায় ফোন দিয়ে ইভটিজিং এর মামলা দিয়ে দে।

বিহান ভাই মারাত্মক আকারের রেগে গিয়েছেন।উনি রাগলে কন্ট্রোল করা যায় না।আমি বললাম বিহান ভাই সামান্য এটুকু ব্যাপারে আবার থানা পুলিশ কেনো?বিহান ভাই বললেন এটা সামান্য।ওরা গতকাল ই তোকে অনেক বাজে কথা বলেছে আমি শুনে এড়িয়ে গিয়েছি কারণ আমি চাই নি তুই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়িস।আজ আবার ওরা তোকে বিরক্ত করছে।ওদের সাহস হয় কিভাবে তোকে বিরক্ত করার।তোকে বিরক্ত করেছে নড়াইল জেলায় এমন সাহস কার আছে।উনাকে দেখে আমার নিজের ই ভয় লাগছে। আমাকে বললেন তোরা কোচিং এ যা আমি দেখছি বাকিটা।আমি আর রিয়া কোচিং এ চলে আসলাম।বিহান ভাই থানায় ফোন দিয়ে একজন এস আই কে নিয়ে এলেন।বিহান ভাই এর কথা মেয়েদের সম্মান করতে হবে রাস্তা ঘাটে মেয়েদের বিরক্ত করা যাবে না।এস আই হয়তো ছেলেটাকে কয়েক টা উত্তম মাধ্যম ভাল ভাবে দিয়ে তাদের মা বাবাকে ফোন করিয়ে এনে উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়লেন।

রিয়া আমাকে বলছে দিয়া বিহান ভাই কে দেখেছিস তোকে কিছু বললে কেমন অন্য জগতে চলে যান।বিহান ভাই কিন্তু একজন লয়াল মানুষ দিয়া।অনেক অনেস্ট উনি।উনার যে যোগ্যতা তাতে উনি চাইলে হাজার হাজার রিলেশন করতে পারেন।কিন্তু উনার জীবনে মেয়ে মানুষের কোনো ছায়া ই নেই তুই ছাড়া।রিয়ার কথা গুলো শুনতে ভীষণ ভাল লাগছে।ভালবাসার মানুষের নামে ভাল কিছু শুনতে কার না ভাল লাগে।

কোচিং শেষ করতেই বিভোর ভাই এর সাথে দেখা হলো আমাদের।রিয়া বিভোর ভাই কে দেখে আমাদের ক্লাসমেট নিয়াজ কে বলা শুরু করলো নিয়াজ তুই না অনেক দিন ধরে কফি খেতে চাস আমার সাথে আজ যাবি।

নিয়াজ অনেক দিন ধরেই রিয়াকে পছন্দ করে। নিয়াজ এক লাফ দিয়ে বললো সিওর রিয়া।তুই তো রাজি হতেই চাস না।

আমি রাজি ই ছিলাম
শুধু লজ্জায় বলতে পারতাম না এটাই।

বিভোর ভাই চোখ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলেন।উনার ফিলিংস কি স্যাকা স্যাকা ভাব।

আমাদের সামনে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ালেন বিভোর ভাই।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৪১.
#WriterঃMousumi_Akter

বিভোর ভাই কে জ্বলানোর জন্য রিয়া যে এমন করছে সেটা আমি শতভাগ নিশ্চিত। আমি তো ভাবতাম ওরা ফান ই করে কিন্তু বিভোর ভাই এর হাব ভাবে এটা ক্লিয়ার যে উনি রিয়ার প্রতি সিরিয়াস।রিয়ার ভাব দেখেও তাই মনে হচ্ছে।বিভোর ভাই নিয়াজের দিকে তাকিয়ে বললেন নিয়াজ তুমি না রহমান কাকার ছেলে।নিয়াজ মাথা নিচু করে বললো জ্বী ভাইয়া।

“তুমি যে প্রেম করছো সেটা কি তোমার বাবাকে বলবো।না মানে বললে তোমার কি হবে ভেবেছো।”

‘আমার বয়ফ্রেন্ড কে ভয় দেখাচ্ছেন কোন সাহসে শুনি।আপনি কি ওর কেয়ারটেকার নাকি।অন্যর ব্যাপারে নাক গলানো কমিয়ে দিন বলছি।’

“নিয়াজ তোমার ভাবি আমার উপর রাগ করেছে।হয়েছে কি কাজের ব্যাস্ততায় সময় দিতে পারি নি এইজন্য।ও কিন্তু আমার হবু বউ।আমাদের রেজিস্ট্রি হয়ে গিয়েছে শুধু ফুলসজ্জা বাকি আছে।”

‘বাজে কথা মোট বলবেন না।কিসের রেজিস্ট্রি।নিয়াজ ওই বাটপার মিথ্যা বলছে।আমাদের রিলেশন দেখে হিংসা হচ্ছে।’

“নিয়াজ আমি কি তোমার বাবাকে বলবো।”

“নিয়াজ বেচারা ভয় পেয়ে বললো প্লিজ ভাইয়া বাবাকে কিছু বলবেন না।ইয়ে রিয়া বিভোর ভাইয়ার সাথে ঝামেলা টা মিটিয়ে নাও প্লিজ।বিভোর ভাইয়া আমি আসলে জানতাম না রিয়া আপনার ওয়াইফ।সরি ভাইয়া।আমাকে মাফ করেদিন।”

“রিয়া বিভোর ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললো নিয়াজ একটা বাচ্চা ছেলে বলে ভয় দেখাতে পারলেন। আপনার মতো আস্ত একটা বুইড়া হলে ও মোটেও ভয় পেতো না।বুইড়া কাকু বাচ্চা ছেলেদের ভয় দেখান কেনো?”

“কাকু? আমাকে কি অবেলায় এসে কাকু বলে ডাকবে।প্রেমিক কে কেউ কাকু ডাকে সুন্দরী। ”

“আপনিও তো ডাকেন।প্রেমিকাদের খালা ডাকেন।তাই আমি ডাকলে দোষ কি?”

“অহ আচ্ছা এই ব্যাপার।এই বুইড়া কাকুকে জামাই হিসাবে মেনে নাও সেটাই বেটার হবে।আজ না হোক কাল আমার ই বউ হতে হবে।”

“আপনার মতো প্লেবয় কে জীবনে বিয়ে করবো না।ভাবলেন কিভাবে এমন আকাশ কুসুম চিন্তা।আপনাকে বিয়ে করলে মান ইজ্জত কিছুই থাকবে না।চারদিক থেকে মেয়েরা ঘিরে ধরবে বলে জানিস ওই বেটা আমারেও প্রপোজ দিছিলো।আমার প্রেজটিজ বলে কিছুই থাকবে না।”

“রিয়া আমি কান ধরে উঠবস করছি আর জীবনে এমন করবো না।আসলে মজা করেই অমন করি।আমার তোমাকে ভাললাগে।বিলিভ মি রিয়া।তোমাকে ভাল লাগে বলেই তো তুমি যায় করো যায় বলো আমি কিছুই বলি না।অবুঝ বাচ্চাদের মতো কান ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বিভোর ভাই।”

“রিয়াকে ফিস ফিস করে বললাম আমিও জানি তুই ও উনাকে লাইক করিস।বেশী টাইট দিতে যাস না আবার প্যাচ কেটে যাবে।উনি যদি সত্যি সত্যি ভাবেন যে তুই আর পাত্তা দিবি না বাধ্য হয়ে কিছুদিন স্যাকা খাওয়া গান শুনে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করবে।”

“রিয়া বললো, থাক হইছে হইছে আর কান ধরতে হবে না।আমার হাত টা দিন তো।”

“বিভোর ভাই উনার সুন্দর মসৃণ হাত টা মেলে ধরলেন।রিয়া বিভোর ভাই এর হাতের তালুতে সুন্দর ভাবে লিখে দিলো।আই লাভ ইউ প্লেবয়।লিখে হাত মুঠো করে দিলো।আমি আর রিয়া বাসায় আসার জন্য রওনা হলাম।পেছন থেকে বিভোর ভাই ডাকলেন রিয়া,রিয়া পেছন ঘুরতেই বিভোর ভাই উনার হাতে কিস করে রিয়ার দিকে ছুড়ে মারলেন।রিয়া সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বিভোর ভাই সম্মতি জানালো।”

——————————————————— কয়েকমাস কেটে গিয়েছে….
বিহান ভাই এর মেডিকেল এর এক টানা ৫ বছর শেষের দিকে।উনার যখন প্রথম ইয়ার শেষ প্রায় বলতে গেলে উনি যখন সেকেন্ড ইয়ারে আমি তখন মাত্র এস এস সি পাশ করে কলেজে পা রেখেছি।ইন্টারে এক ইয়ার গ্যাপ যাওয়াতে তিন বছরের বেশী সময় কাল লেগেছে আমার ইন্টার পড়তে।আমি আর রিয়া ও এইস এস সি পরীক্ষা শেষ করে এডমিশন এর জন্য ভীষণ ভাবে প্রিপারেশণ নিচ্ছি।প্রায় তিন তিন মাস দেখা হয় না আমাদের।এইদিকে বিভিন্ন ভার্সিটিতে এডমিশনের জন্য প্রায় একটা বছর লেগে যাচ্ছে।

কাল আমাদের ঢাকা মেডিকেল এ এডমিশন এক্সাম। শুভ ভাইয়া আর বিভোর ভাইয়ার সাথে ঢাকা রওনা হলাম আমরা।ওখানে গিয়ে বিহান ভাই এর বাসাতেই উঠলাম।বিহান ভাই এখানে বাসা নিয়েই থাকেন।বিহান ভাই এর বাসায় এসে অবাক হয়ে গেলাম আমরা উনার বাসা এত সুন্দর আর পরিপাটি করে সাজানো দেখেই চোখে তাক লেগে গেলো।রুম ভরা কিসব হার্ট এর পিকচার লাগানো।বিহান ভাই আমাদের জন্য খাবার বানাচ্ছেন।এখানে আসার পর আর উনার সাথে কথা বলিনি আমি।মনে হচ্ছে কতকাল পরে উনাকে দেখলাম।উনি কি আগের থেকে শুকিয়ে গেছেন।মনে হয় প্রচুর পড়াশুনা করছেন।রাতে খাওয়া শেষে শুভ ভাইয়া রিয়া আর বিভোর ভাই গল্প করছেন।আমি বিহান ভাই এর রুমে টি টেবিলের এক পাশে টুলে বসে আছি আর বিহান ভাই অপজিট সাইডে বসে আছেন।

“বিহান ভাই আমাকে প্রশ্ন করলেন কি প্রিপারেশন কেমন?”

“বই খাতা খুলে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম খুব ই বাজে।”

“উনি কপাল কুচকে তাকিয়ে বললেন সারা বছর লাফিয়ে বেড়ালে যা হয় আর কি?উনি আমাকে লেখাপড়া নিয়ে প্রশ্ন করছেন আর আমি উনার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলাম আমাকে এত ইগনোর করেন কেনো লাস্ট তিন মাস।”

“উনি পানির মতো উত্তর দিলেন বিজি থাকি তাই।”

“মনের মাঝে খারাপ লেগে উঠলো খুব উত্তর টা শুনে।আবার ও প্রশ্ন করলাম আমাকে কি এখন আর ভাল লাগে না বিহান ভাই।”

“এমন টা কি বলেছি কখনো আমার ভাল লাগে না।।এসব ভাবার কারণ কি শুনি।কাল এক্সাম আর আজ এসব চিন্তা মাথায়।”

“লাস্ট তিন মাস আমাদের দেখা হয় নি।আপনাকে ফোন দিলে বলেন কল ইউ লেটার।দিনে দুই একবার ফোন দেন।অন লাইনে পাওয়া ই যায় না।কেনো ডাক্তার এত অবহেলা কেনো করেন।”

“দিয়া তুই না পুচকি ই থেকে গেলি।জানিস আমার কত চাপ।ভাল রেজাল্ট না করলে তোর বাটপার বাপ আমার হাতে তোকে তুলে দিবে না।তাই আমাকে তোর জন্যই এত পরিশ্রম করা লাগে।কবে বড় হবি আর কবে বুঝবি।”

“আমি উনার দিকে তাকিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিয়ে বললাম,আপনাকে আমি ভীষণ মিস করি।লেখাপড়ায় মন বসে না।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না আপনি।আপনি আমাকে ইগনোর করলে মনে হয় আপনি আমাকে ভুলে যাচ্ছেন।”

বিহান ভাই উঠে এসে আমার মাথা উনার বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন আই লাভ ইউ পিচ্চি।কবে বড় হবি তুই।আমি কি তোকে ইগনোর করতে পারি।সেই সাহস আর ক্ষমতা কোনটায় আমার নেই।খুব শিঘ্রি আমার কাছে নিয়ে আসবো।তুই না আমার বউ, তুই কি আমার প্রেমিকা যে ছেড়ে যাবো।সবাই ছেড়ে যাবার জন্য আসে না পিচ্চি।কিছু মানুষ সারাজীবন পাশে থাকার জন্য আসে।

উনার কথা শুনেই সব মন খারাপ হাওয়া হয়ে গেলো।পরের দিন এক্সাম দিতে গিয়ে প্রেয়সীর সাথে দেখা।আমাকে দেখেই বললো এক্সাম দিতে এসছো। কোনদিন চান্স পাবে না তুমি।বিহান যে ওর লেভেলের চেয়ে নিম্ন কাউকে পছন্দ করে সেটা প্রুভ হয়ে যাবে।বিহানের পাশে আমাকেই মানায় শুধু।উনার কথা শুনে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলাম।কাউকে কিছু বললাম ও না এ ব্যাপারে।এক্সাম দিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম।

বিহান ভাই ইদানিং ভীষণ বিজি থাকেন।উনাকে ফোনেও তেমন একটা পাওয়া যায় না।কি জানি কি করেন উনি এখন।উনাকে সন্দেহ করা ভুল হবে কেননা উনি একজন লয়াল মানুষ।উনি যে আমার জন্য ই এত কষ্ট করছেন সেটা জানি আমি।এডমিশন এর রেজাল্ট এসছে ঢাকা মেডিকেল এ চান্স হলো না এমন কি কোথাও চান্স হলো না।এমন টা হবে ভাবতেও পারিনি আমি।রিয়া এবং আমি দুজনের সেইম অবস্থা। ওই দিকে বিহান ভাই এর ফাইনাল এক্সাম শেষ উনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ এ টপার করেছেন।বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে উনাকে দেখাচ্ছে বিভিন্ন পত্রিকায় উনার ছবিতে ছড়াছড়ি।আর এইদিকে আমি কোথাও চান্স পাই নি।আমি চান্স পাই নি এ নিয়ে আমার মন খারাপ হলেও উনি যে টপ ওয়ান হয়েছেন বাংলাদেশের মধ্য এটাই আমার কাছে অনেক বড় আনন্দের ব্যাপার।এমনিতেও ঢাকা মেডিকেল কলেজে উনার অনেক প্রশংসা ছড়িয়ে আছে।বিহান ভাই এর ছবির পাশে উনার সেই বান্ধবী প্রেয়সীর ছবি ও ছাপা হয়েছে।দেখে কেমন যেনো মনের মাঝে খারাপ লাগছে।অজানা ভয়ে বুক টা কেঁপে উঠলো উনি কি এখন আমায় মেনে নিবেন।উনার আর আমার মাঝে যোগ্যতায় আকাশ পাতালের ডিফারেন্স। কোথায় আমি আর কোথায় বিহান ভাই।আমাদের এলাকায় শহর জুড়ে বিহান ভাই এর নাম সবার মুখে মুখে।কিন্তু বিহান ভাই এর মাঝে কোনো আনন্দ উল্লাস কিচ্ছুই নেই।উনার ব্যবহৃত সিম টাও অফ রেখেছেন সবাই ফোন দিচ্ছেন মেসেজ দিচ্ছেন জিনিস টা উনার ভাল লাগছে না।এত বড় সাফল্য পাবার পর ও উনার এমন হলো কেনো?কি কারণে উনার মন খারাপ কেউ জানেনা।মামি আমাকে ফোন দিয়ে বললো দিয়া বিহানের কি হয়েছে জানিস।ওর মন মেজাজ সব ই খারাপ।কারো ফোন ই তুলছে না।তুই একটু ফোন দিস তো।আমার ফোন দেওয়ার ইচ্ছা নেই কারণ আমি কোথাও চান্স পাই নি কি বলবো উনাকে আমি।

আমাকে নিয়ে আমার আম্মুর ভীষণ মন খারাপ।আম্মুর স্বপ্ন আমি সত্যি করতে পারলাম না।এমনিতেই আম্মুর মন খারাপ তার মাঝে মেঝ কাকি এসে আম্মুর মেজাজ আরো খারাপ করে দিলো।

“তোমার ছেলে শুভ যে মেহুর পিছে ঘুর ঘুর করছে তুমি কি সে খেয়াল রাখো।কোথায় বোন হয় আগলে রাখবে সেখানে নিজেই ভক্ষক।মানুষ কি বলবে যে ফুফাতো বোনের সাথে প্রেম করে বেড়াচ্ছে।অন্য কারো ছেলে মেয়ে হলে ভালোই বলতে পারে।”

“তুই কখনো দেখেছিস কারো ছেলে মেয়েকে বাজে কথা শোনাতে।শুভ তো তোর ও ছেলে হয় তাইনা।তাহলে এভাবে খোচা দিয়ে কথা না বলে ভাল ভাবেও তো বলতে পারতিস।আসলে কি জানিস তোদের ছেলে মেয়ে আমি নিজের মনে করি কিন্তু তোরা আমার ছেলে মেয়েকে কখনো নিজের ই ভাবিস না।”

“কোথায় খোচা দিলাম বড় আপা।যা সত্য তাই ই বলেছি।শুভ এমন জঘন্য কাজ কিভাবে করতে পারলো।এত মানুষ রেখে মেহুকে বিরক্ত করছে।কোথায় নিজের ছেলেকে শাসন করবা তা নয় আমাকেই কথা শোনাচ্ছো।এইজন্য মানুষ কে ভাল কথা বলতে নেই।”

“তোর কাছে কি মেহু বা ওর মা বাবা কেউ নালিশ করেছে।নাকি তুই খারাপ কিছু দেখেছিস।”

“নালিশ করেছে ছাড়া কি?মেহুর মা আমাকে বলেছে শুভ এমন কাজ কিভাবে করতে পারলো শুনে দেখো মেঝ ভাবি।আমার ছেলে হলে আমি বাড়ি থেকে বের করে দিতাম।”

“আমি রুমে সুয়ে সুয়ে মেঝ কাকির জঘন্য বাজে কথা গুলো শুনছিলাম।কাকি চলে গেলে আম্মুর মুড ভীষণ খারাপ।সন্ধ্যার পর ভাইয়া বাসায় আসলে আম্মুর ভাব সাব দেখে আমাকে বললো এই দিয়া কি হয়েছে রে।
ভাইয়াকে বললা চুপ করো আম্মুর আজ ভীষণ মুড অফ।”

চলবে,,
(
চলবে,,,
চলবে,,

(পাঠক মহল মৃথিলা কে এত ভালবাসেন কেনো। জানতে চাই আমি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here