এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ৪২+৪৩+৪৪

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৪২.
#WriterঃMousumi_Akter

আম্মুর ভীষণ গুরুগম্ভীর ভাবে ভাইয়া চিন্তিত।ভাইয়া একটু ভয় ও পাচ্ছে।ভাইয়াকে বললাম ভাইয়া আম্মু সব টা জেনে গিয়েছে তুমি আম্মুকে জানিয়ে দাও সব কিছু।আজ মেজ কাকি এসে বাজে কথা শুনিয়ে গিয়েছে।ভাইয়া কথাটা শুনেই রেগে গেলো।দিয়া ওই মহিলার সমস্যা কি?এমনিতেও সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই উনার।আম্মুকে বাজে কথা বললে আমি কিন্তু এবার খারাপ কিছু বলে ফেলবো।ভাইয়া কে বললাম তুমি আগে যাও আম্মুর কাছে,আম্মুকে শান্ত করো।ভাইয়া টেনশন নিয়ে আম্মুর কাছে গেলো আর অপরাধী মুখ করে বললো,কি হয়েছে আম্মু তোমার।কথা বলছো না কেনো?আম্মু প্লিজ বলো কি হয়েছে।

“আম্মু কিচেনে প্লেট গোছাতে গোছাতে বললো,আচ্ছা আমার তোদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা কি ভুল হয়েছে শুভ।দিয়া খামখেয়ালি ভাবে চলে। মন দিয়ে বই পড়ে না।বই ঠিক ভাবে পড়লে ঠিক ই কোথাও চান্স পেতো।”

“আহা! আম্মু সামনে আবার এক্সাম দিবে। ও ঠিক ই পারবে তুমি প্লিজ ভেঙে পড়ো না।”

“আর তুই? তুই কি কম শুভ।তোর মেজ কাকি আমাকে যা তা ভাবে অপমান করে গিয়েছে।মেহুর সাথে কি রিলেশন তোর।তোর কাকি যা বলেছে তা কি ঠিক।”

“আম্মু তোমাকে আমি মিথ্যা বলবো না।মেহুকে আমার খুব পছন্দ হয়।আর মেজ কাকি বলতে গেলে সব জিনিস খারাপ ভাবে বলে তুমি তো জানোই।উনার কথা কানে নিও না।”

“নিজেদের মাঝে এগুলা কি ঠিক হবে। তোর বাবা এটা কিছুতেই মেনে নিবেন না।নিজেদের মাঝে আত্মীয়তা হলে অনেক ঝামেলা হয়।”

“কিছুই হবে না আম্মু।তুমি ভেবো না আম্মু।আর মেজ কাকিকে কিন্তু আমি আর সম্মান দিতে পারবো না।আমার আম্মুকে কিছু বললে সেটা আমি মেনে নিবো না।”

“ভুলেও ওই মহিলার সাথে কথা বলতে যাস না।ওর মুখে কিছুই আটকায় না।কি থেকে কি বলবে।তুই আমাকে কি চিন্তায় ফেলে দিলি।কি থেকে কি হবে সেই চিন্তা হচ্ছে।”

“আম্মু তোমার ছেলে কি এতটায় খারাপ।। মেহু কেমন মেয়ে তুমি তো জানোই আম্মু।”

“মেহুর মতো মেয়ে আজকাল পাওয়া যায় না।তোদের যখন পছন্দ আমি আর আপত্তি করবো কেনো কিন্তু তোর বাবা।”

ভাইয়া আম্মুকে মানিয়ে নিলো কোনোভাবে।জিনিস টা দেখে খুব ই ভাল লাগলো।


মন টা বড্ড খারাপ।অতিতের স্মৃতি ভবিষ্যত এর চিন্তা সব কিছুর মাঝে পড়ে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে।এই মুহুর্তে আমি বোধহয় সবার কাছে অপ্রয়োজনীয় একজন মানুষ। বিহান ভাই এর মুখোমুখি কিভাবে হবো আমি।উনার অনেক স্বপ্ন ছিলো আমাকে নিয়ে।না জানি কত রেগে আছেন আমার উপর।নাকি এত আনন্দ উল্লাসের মাঝে আমার কথা খেয়াল ই নেই।সন্ধ্যার পরে বিছানায় সুয়ে বেড লাইট অন করছি আর অফ করছি বার বার।

“আননাউন নাম্বার থেকে ফোন এসছে প্রথম কল টা কেটে যেতেই পরের কল টা রিসিভ করলাম।কল টা হোয়াটস এপ্স এ এসছে।কল টা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ হ্যালো বলে উঠলো। মেয়েটা কে জানিনা।নাম্বার টাও আগে দেখিনি।মিহি কন্ঠে বললাম কে বলছেন।ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠলো এই দিনটার জন্য ই অপেক্ষায় করছিলাম মিস দিয়া।”

“আমি আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলাম কোন দিনটার জন্য?আর আপনি কে?”

“আমি প্রেয়সী বাংলাদেশের দশ জন ডাক্তারদের মাঝে আমি একজন।চিনতে পেরেছো।ওকে আরেকটু ক্লিয়ার করি বিহান এর পাশে যাকে ভীষণ সুন্দর মানায় আমি সেই।বিহান এখন যে স্টাটাস এর আমিও সেইম স্টাটাসের।আমি এবার ডাক্তারি পাশ করেছি দিয়া বিহানের সাথেই।দেখেছো নিশ্চয়ই আমাদের এক সাথের অনেক ছবি বেরিয়েছে।”

“ওহ ভালো তো।কনগ্রাচুলেশন আপু।”

“কোন ব্যাপারে কনগ্রাচুলেশন দিচ্ছো দিয়া।আমার আর বিহানের ব্রাইট ফিউচার এর জন্য নাকি আমাদের বিয়ের অগ্রিম শুভেচ্ছা।”

“দুঃখিত আপু আপনাদের বিয়ে সে কথা আমি জানিনা।আমার কানে সে খবর পৌছায়নি।বিহান ভাই আমাকে এখনো বলেন নি আপনাদের ব্যাপারে কিছুই।তাই আপাতত আপনাদের না শুধুই আপনার ব্রাইট ফিউচারের জন্য শুভেচ্ছা জানালাম।আর বিহান ভাই আমার জীবনের ব্যাক্তিগত পার্ট উনাকে কিভাবে শুভেচ্ছা জানাবো বা না জানাবো সেটা আমার ব্যাপার।আপনার আমার কাছ থেকে উনার জন্য শুভেচ্ছা চেয়ে নিতে হবে না।”

“এত কিছুর পর ও চ্যাটাং চ্যাটাং কথা কমে নি দেখছি দিয়া।তোমাকে বলেছিলাম না তুমি কখনো ডাক্তারি তে চান্স পাবে না।বিহান আর তোমার তফাত বরাবর ই ছিলো কিন্তু বিহান সেটা বুঝতো না।আই হোপ বিহান এখন সেটা বুঝতে পেরেছে।একজন মেডিকেল টপ করা ডাক্তারের ওয়াইফ জেনারেল এর সাধারণ একটা স্টুডেন্ট এটা বিহানের পক্ষে ভীষণ লজ্জাকর ব্যাপার হবে।তাই বিহান তোমাকে কখনো বিয়ে করবে না।দিয়া নিজের পজিশন বুঝে নিজের মতো কাউকে খুজে নাও তোমার জন্য বেটার হবে।বিহান আমাকে পছন্দ করে কিন্তু তুমি মাঝখানে আসাতে বিহান আমার কাছাকাছি আসতে পারে নি।”

“আপনার সাথে কি আমার কোনো শত্রুতা আছে প্রেয়সী আপু।আমি কি আপনাকে কোনদিন বলেছি বিহান ভাই এর সাথে আমার কিছু আছে।বা বিহান ভাই কে নিয়ে আপনাকে কিছু বলেছি।আমি তো জানি আপনি বিহান ভাই কে ভালবাসেন।বিহান ভাই মাসে হয়তো দুই একদিন নড়াইল আসেন আর বাকি টাইম তো আপনার কাছেই থাকেন।আমি কি কোনদিন আপনার কাছে ফোন দিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেছি বা বিহান ভাই কে নিয়ে কিছু বলেছি।বিহান ভাই যদি সারাবছর নড়াইল থাকতো আর দুই একদিন ঢাকা থাকতো তাহলে আপনি আমাকে আরো কত বাজে কথা শোনাতেন তাই ভাবছি।আপনাকে যখন লাইক করে তাহলে আমাকে ফোন দিয়ে এগুলা বলছেন কেনো?বিহান ভাই কে যা বলার বলুন। আপনারা প্রেম করবেন নাকি বিয়ে করবেন আমি কি জানতে চেয়েছি।আমি মেডিকেল এ চান্স না পাওয়াতে আপনি কতটা খুশি সেটা বোঝা যাচ্ছে।”

“অবশ্যই আমি খুশি। আমি রাত দিন এক করে প্রার্থনা করেছি তুমি যেনো চান্স না পাও।কারণ আমি জানতাম তুমি চান্স না পেলে বিহান তোমার থেকে সরে আসবে একটা সময়।”

“বিহান ভাই এর সাথে আমার কিছু আছে আমি বলেছি আপনাকে কখনো।”

“তুমি বলোনি কিন্তু বিহান বলেছে।আমার জীবনে অনেক গুলো রাত ঘুম হীন ভাবে কাটছে।একটা রাত ও আমি ঘুমোতে পারি না।বিহান আমার পুরো জীবন জুড়ে রয়েছে।তোমার সাথে আমার ব্যাক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই কিন্তু বিহান আমাকে বাধ্য করেছে তোমাকে শত্রু ভাবতে।বিহানের কাছে কেউ প্রশ্ন করলে এক বাক্য বলে দেয় সে সিঙ্গেল না তার জীবনে কেউ আছে যাকে সে ভীষণ ভালবাসে।এতদিন কেউ নাম জানত না লাস্ট ইয়ার বিহান পুরা মেডিকেল কলেজে এর সামনে আমাকে বাজে ভাবে অপমান করে বলেছে দিয়া কে নিয়ে কিছু বললে ও ছাড়বে না।”

“ডাক্তারিতে চান্স না পাওয়ার সাথে ভালবাসার কি কানেকশন জানিনা।ভালবাসা এগুলো দেখে হয় না।বিহান ভাই আর আমার পারসোনাল কোনো ইনফরমেশন আমি আপনাকে দিবো না।কারণ আপনাকে নিয়ে আমি মোটেও চিন্তিত নয়। আর আপনাকে নিয়ে আমি একটুও জেলাস ও নই।আপনি আমাকে আপনার জীবনের প্রতিদ্বন্দি ভাবছেন কিন্তু আমি সেটা ভাবছি না। কারণ বিহান ভাই এর জীবনে আমি ছাড়া দ্বীতীয় কোনো অপশন নেই উনি সেটা রাখেন নি।প্রতিযোগিতা খেলাধুলা, লেখাপড়া সব জায়গাতে চলে ভালবাসার ক্ষেত্রে চলে না।ভালবাসায় প্রতিযোগিতার কোনো জায়গা নেই আর ভালবাসা নিয়ে প্রতিযোগিতা করলে মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায় না।আমি যদি দেখি আমার ভালবাসার মানুষ তার জীবনে অনেক গুলা অপশন রেখেছে আমি নিজেই সরে যাবো কারো সাথে প্রতিযোগিতায় যাবো না।চালাকির দ্বারা ভাল কিছু পাওয়া যায় না আপু।”

“দিয়া জাস্ট সাট আপ।তোমার মুখের এই বুলি চুপসে যাবে বিহানের ইন্টারভিউ টা দেখো একবার। মাত্রই পাবলিশড হয়েছে।সেখানে বিহান ওর ব্যাক্তিগত জীবন শেয়ার করেছে।”

প্রেয়সী আপুর কল টা কেটে ইউটিউব এ গেলাম।সেখানে বিহান ভাই এর একটা ইন্টারভিউ পেলাম।বিহান ভাই খুব ই আপত্তি জানাচ্ছেন কারণ তার এসব পছন্দ নয়।প্রেস,মিডিয়া লাইক করেন না উনি।অবশেষে বাধ্য হয়ে ক্যামেরার সামনে আসতে হয়েছে উনাকে।স্টুডেন্ট দের উদ্দেশ্য কিছু কথা বললেন।সাংবাদিক উনাকে প্রশ্ন করলেন আপনার জীবনে কি কেউ আছে।উনি উত্তর দিলেন হ্যাঁ আছে।সাংবাদিক বললেন উনিও নিশ্চয়ই ডাক্তার আপনার পছন্দ তো আর যেমন তেমন হতে পারে না।বিহান ভাই হেসে উত্তর দিলেন সে আমার থেকেও বড় ডাক্তার।

ফোন টা ছুড়ে ফ্লোরে ফেলে দিলাম।ফোনের ডিস্পেলে ভেঙে গুড়িয়ে গেলো।হাউ মাউ করে কাঁদতে মন চাইছে।ভেতর থেকে কাঁন্না সব বাঁধা ভেদ করে বেরিয়ে গেলো।কেনো বিহান ভাই কেনো এমন করলেন?আপনাকে ছাড়া আমি কত অসহায় আপনি জানেন না।আজ আপনার আর আমার সম্পর্ক যোগ্যতায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।আমি ছাড়া ডাক্তারি পড়াই বাদ দিয়েছিলেন আজ সেই আপনি ডাক্তার বিয়ে করছেন।চারদিকের এত অবহেলা অপমান নিয়ে আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না।নিজের অজান্তেই ফ্লোরে হাত পা ছোড়াছুড়ি করে কাঁন্না শুরু করলাম।বুকের ভেতর ভেঙে চুরে গুড়িয়ে যাচ্ছে।আমার কাঁন্না শুনে আম্মু,বাবা, রিয়া ভাইয়া এগিয়ে এলো।ফ্লোরে বসে এভাবে কাঁদতে দেখে আম্মু, বাবা,ভাইয়া,রিয়া সবাই জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে।এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে কাউকে ভীষণ ভাবে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে।আম্মুকে জড়িয়ে ধরে ভেতরের সব আবেগ প্রকাশ করলাম।আম্মু আমি আর বাঁচতে চাই না।নিজেকে ভীষণ অসহ্য লাগছে।চারদিক থেকে সবাই শুধু অপমান করে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।আমার কেউ নেই আম্মু,ভীষণ একা লাগছে নিজেকে।কেনো তোমার কথা শুনে মন দিয়ে পড়লাম না তাহলে ডাক্তারিতে চান্স পেতাম।আজ মনে হচ্ছে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ভাঙার সাথে জীবনের সব স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে।আমি মরে গেলে ক্ষমা করে দিও আম্মু।বাবা,ভাইয়া বলে উঠলো কে অপমান করেছে কার এত সাহস আমার মেয়েকে বাজে কথা বলে।ডাক্তার হতে হবে না দিয়া মা আমার চোখের সামনে দিয়ে এভাবে ঘুরে বেড়াস তাতেই হবে এটা বাবার কথা।আম্মু মাথায় একটা চুমু দিয়ে বললো কি হয়েছে দিয়া।কখনো তো এমন পাগলামো করিস না আজ ই প্রথম। ভুলেও কখনো মরার কথা বলিস না সোনা।কি হয়েছে কে কি বলেছে এখন কিছুই প্রশ্ন করবো না।শুধু বলবো তুই আমার মেয়ে আমাদের জন্য বাঁচতে হবে দিয়া।

এমন সময় আয়রা এসে ফোনটা ধরে বললো দিয়াপু বিহান ভাইয়া কথা বলবে।তাকিয়ে দেখি ভিডিও কলে বিহান ভাই তাকিয়ে আছেন।মানে কি এত সময় উনি কলেই ছিলেন।আমি অশ্রুসিক্ত নয়নে উনার দিকে তাকালাম।আম্মু ফোন টা নিয়ে কথা বলতে বলতে বাইরে গেলো।রিয়ার ফোনেই ফোন দিয়েছেন উনি।আম্মুর সাথে কি কথা হয়েছে জানিনা।এক আকাশ অভিমান আর কষ্ট নিয়ে রাতে একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।পরের দিন সকাল দশ টায় আয়রা এসে আমার নাক ধরে টানছে।কোনোমতে তাকাতেই আয়রা একটা চিরকুট ধরিয়ে দিলো আমার হাতে।চিরকুট খুলেই অবাক আমি।

শ্যামাপাখি,

মন খারাপ তোমার তাইনা?আমায় ভাবছো এই মুহুর্তে। কি কি ভাবছো আমি কিছুটা অনুমান করতে পারছি।মেডিকেল এ চান্স পাও নি বলে মন খারাপ।ভাবছো আমার পাশে বেমানান হয়ে গিয়েছো।সবাই কি একবারেই সব পারে।এমন কি কোনো রুলস আছে একবার না পারলে সেখানেই শেষ সব কিছু।তোমার জন্য সামনে আবার ও সুযোগ আছে।এইবার পারোনি বলে সামনে পারবে না এমনটা নিশ্চিত হলে কিভাবে।জানো নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে নিজের ক্যারিয়ারের দিক ভাবতে গিয়ে তোমার দিকে খেয়াল দিতে পারি নি।আমার খুব ভুল না হলে তোমার এই ভীষণ ক্ষতিটার জন্য আমি ১০০% দায়ী।সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে নেগেটিভ ভাবনা তোমাকে লেখাপড়ায় মন স্হির করতে দেয় নি।আমার ব্যাস্ততায় তোমাকে ঠিকভাবে সময় দিতে পারিনি আমি।আমি ভেবেছি আমি সময় দিলে তুমি ঠিকভাবে পড়বে না।তোমার সময় নষ্ট হবে।কিন্তু আমার ভাবনা উলটা হয়ে গেলো।আজ আমি একটা জিনিস উপলব্ধি করতে পেরেছি ভালবাসার মানুষ পাশে থাকলে মন এমনিতেই ভাল থাকে আর মন ভাল থাকলে সব কাজে মন বসে।আমার পাশে তুমি ছিলে কিন্তু তোমার পাশে আমি থাকতে পারি নি।আমার এই সাফল্য কে সেদিন সেলিব্রেট করবো যেদিন নিজের হাতে তোমাকে তোমার স্বপ্নের সৌপানে পৌছাতে পারবো।আই লাভ ইউ বউ মিসেস বিহান।

বিহান।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৪৩.
#WriterঃMousumi_Akter

বাইরে উত্তপ্ত সূর্য প্রকৃতির পরিবেশ আগুনময় করে তুলেছে।সূর্য নিজ তেজ নিয়ে আস্তে সস্তে আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।এই শরৎকাল টা বড্ড ভালো লাগে আমার অবেলায় হুট করে বৃষ্টি আসে,ভ্যাপসা গরম আবার রাত শেষে একটু ঠান্ডা পড়ে ফ্যান ছেড়ে পাতলা কাঁথার নিচে শেষ রাতে আরামদায়ক একটা ঘুম দিয়েছি।কাল রাতে আম্মু আমার পাশে ঘুমিয়েছিলো।আমাকে অস্বাভাবিক মনে হয়েছিলো আম্মুর কাছে।প্রচন্ড মাথায় পেইন বাড়ার ফলে একটা কম পাওয়ারের ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম।মাথাটা ঝিম ধরে আছে এখনো ঘুম ছাড়ছে না।আয়রা ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে লিপিস্টিক পরছে।চুড়ির আলনা থেকে চুড়ি নিয়ে পড়ছে।চিরকুট টা কতশত বার পড়লাম আমি তার শেষ নেই।প্রতিটা লাইন যেনো এক একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাসের প্রতিটা লাইন জুড়ে ছিলো মনের গভীরের জমে থাকা ডিপ ভালবাসা।নিজের কাছেই বিশ্বাস হচ্ছে না এ চিঠি আমার। কাল সারারাত ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখেছি বিহান ভাই আর প্রেয়সী আপু ঘুরে বেড়াচ্ছেন।বার বার ঘুম ভেঙেছে সারারাত এপাশ ওপাশ করেছি ঘুমের মাঝে।আমার স্বপ্নে বার বার প্রেয়সী আর বিহান ভাই এসছেন।সারারাত মন জ্বলে পুড়ে একাকার হয়েছে।ঘুমোনোর আগে জানালা খুলে জানালার গ্রিলেত ফাঁক দিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম দুইঘন্টা মতো।এই অভ্যাস ছোট বেলা থেকেই।কষ্ট পেলে মন খারাপ হলে চাঁদের দিকে তাকিয়ে কষ্ট উজাড় করে দেই।কাউকে কিছুই বলি না।

বাট ঘুম থেকে উঠেই এমন চিরকুট কিভাবে সম্ভব।বিহান ভাই তো ঢাকাতেই আছেন।আয়রা কে বললাম এটা কে দিয়েছে তোকে। আয়রা বললো বলবো না আমাকে তুমি কিছু দাও না। আয়রা কে বললাম সব সাজুগুজু দিয়ে দিবো আয় আমার কাছে বল কে দিয়েছে।আয়রা বললো কাউকে বলো না বিহান ভাইয়া বলেছে তোর দিয়া আপুকে বিয়ে দিবি আমার সাথে বলেই আয়রা মুখে হাত দিয়ে লজ্জায় লুটিয়ে পড়ে বললো আমার সাথে বিয়ে দিলে রোজ এত্ত এত্ত চকলেট দিবো।এটা বিহান ভাইয়া দিয়েছে তোমাকে আর কাউকে বলতে নিষেধ করেছে তুমিও বলো না কাউকে দিয়াপু।আমাকে এ রুমে পাঠিয়ে ভাইয়া দরজায়া দাঁড়িয়ে ছিলো।আয়রার কথা শুনে এক লাফে বিছানা থেকে নামলাম বাইরে বেরোতেই আম্মু বললো উঠেছিস আয় ভেতরে আয়।আম্মু আমার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে আমার চোখ চাতক পাখির মতো তাকে খুজছে।কোথায় সে কতকাল দেখি না তাকে।প্রায় চার মাস তার মুখ টা দেখি নি।আম্মু আমার হাত ধরে রুমের মাঝে নিয়ে যাচ্ছে আর আমার ঘাড় বাইরের দিকে ঘোরানো আমি তাকে খোজার চেষ্টা করছি।আম্মু চুলে চিরুনি করে দিয়ে চুলে কাকড়া মেরে দিলো।ব্রাশে পেষ্ট মাখিয়ে দিয়ে হাতে ধরিয়ে দিলো।আম্মু বললো দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার আনছি।ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলাম।আম্মু সেদ্ধ ডিম আর খিচুড়ি খাইয়ে দিচ্ছে।খাওয়ার দিকে মন নেই আমার।আমার মন রয়েছে বাইরে উনি কি আছেন নাকি চলে গিয়েছেন।শুধু উঁকিঝুঁকি মারছি আমি।আম্মুকে বললাম আম্মু কেউ এসছিলো সকালে।আম্মু বললো হ্যাঁ বিহান এসছিলো সকালে একটু আগেই চলে গেলো।

আম্মুর কথা শুনে বুকের মাঝে বাড়ি মেরে উঠলো উনি সত্যি এসছিলেন।বিহান ভাই না ঢাকাতে আম্মু।

ছিলো রাত তিনটার দিকে বাসায় এসছে।আর সকালে আমাদের বাসায় এসছিলো।তোর কোচিং নিয়ে কথা বলতেই এসছিলো।দেখ দিয়া বিহান কিন্তু ভাই হিসাবে ওর কোনো দায়িত্ব থেকে এড়িয়ে যায় না।কারো কোনো চিন্তা নেই কিন্তু বিহান একমাত্র মানুষ যে তোকে নিয়ে ভীষণ টেনশন করছে।বিহানের কথা শুনে একটু নিশ্চিত হয়েছি আমি।

মনে মনে বললাম আম্মু কত যে বোনের নজরে দেখে সে কি আর বলতে।মনে মনে আরো দুঃখ হচ্ছে আমার জন্য কি একটুও খারাপ লাগে না উনার।এতদিন দেখেন না আমাকে এসছেন আমার সাথে দেখা না করেই চলে গেলেন।কিভাবে পারেন উনি এভাবে থাকতে।এসছিলেন হয়তো আম্মু ডেকেছিলো তাই।আমাকে ভেবে তো আসেন নি।সকাল গড়িয়ে দুপুর কই একটা বার ও তো ফোন দেন নি আমাকে।একটা মেসেজ ও না।তাহলে চিঠি দিয়েছিলেন ক্যানো?বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা তাও কোনো ফোন দিলেন না।কিভাবে পারেন উনি।না দেয় না দিক আমিও দিবো না ফোন।ফোন দিবো বলবে বিজি আছি পরে ফোন দিচ্ছি মানুষের এত অবহেলার পাত্রী হয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই।কষ্ট হয় নিজের ভেতর চেপে রাখবো।নিজের কষ্ট নিজেই ভোগ করবো তবুও কারো কাছে বেহায়া হবো না।মনে মনে অনেক অভিমান সাজিয়ে রইলাম।

কাল বাসার পাশে বান্ধবীর বিয়ে।রিয়ার আম্মু,রিয়া আর আমি গেলাম বিয়েতে।যেহেতু রাত থাকতে হবে তাই কাকিমনি আমাদের সাথেই এসছে।হলুদ সন্ধ্যায় এসে উপস্হিত হলাম আমরা।চারদিকে মানুষ এর ছড়াছড়ি বিভিন্ন আলোর রোশনায়।এই এত এত আলোর মাঝে আমার মন অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে আছে।আমাদের অন্য একটা বান্ধবী বললো একটু গেটের কাছে চল তো দিয়া আমার বয়ফ্রেন্ড এসছে একটু দেখা করে আসি।চারদিকে অনেক মানুষ জন আছে দেখেই ওর সাথে গেলাম।ওর বয়ফ্রেন্ড আগে থেকেই উপস্হিত ছিলো ওখানে।ও রাস্তার ওপাশে গেলো কথা বলার জন্য সেই টাইমে দুইটা মেয়ে এসে একজন আমার মুখ চেপে ধরলো আরেকজন হাত চেপে ধরলো এমন টাইমে একটা অটো আসলো মেয়ে দুইটা জোর করে আমাকে অটোতে তুলে নিলো।বুঝলাম না ঠিক হলো আমার সাথে।এরা কারা।এরা যে মেয়ে সেটা বোঝা যাচ্ছে।ছেলে হলে না হয় বুঝতাম অন্য কাহিনী আছে।কিন্তু এরা কি চায় আমার কাছে।অটো টা সিটি কলেজ এর রাস্তায় গিয়ে বালুর মাঠে গেলো।সেখানে বিশাল কাশবণের মাঝে আমাকে ফেলে দিলো।ফেলে দিয়ে অটো নিয়ে তারা চলে গেলো।ভয়ে আমার স্ট্রোক হওয়ার মতো অবস্থা। এই মধ্যরাতে কাশ বনের মাঝে আমাকে ফেলে গিয়েছে এখান থেকে জান নিয়ে আমি ফিরতে পারবো না।ভয়ে দুই কানে হাত দিয়ে দুই হাঁটুর মাঝে মাথা গুজে বসে আছি।বুকের মাঝে ঢক ঢক সাউন্ড হচ্ছে।

কেমন যেনো মনে হলো কেউ একজন আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম।একটা সুন্দর পারফিউম এর ঘ্রাণ নাকে ভেষে আসছে।এই পারফিউম টা একজন মাত্র মানুষ ইউজ করেন।আমি তার রুমে গেলে কতবার এই পারফিউম চুরি করে মেখে কত কটু কথা শুনেছি সে আবার নিজে ফুস ফুসস করে আমার গায়ে লাগিয়ে দিয়েছে।হালকা একটু মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি স্নিগ্ধ চাঁদের আলোতে মানুষটার ছায়া কাশবনে পড়েছে।এবার একটু ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখি পরনে কালো জিন্স, গায়ে কালো এক কালারের শার্ট, শার্টের হাতা গোটানো,হাতে কালো ফিতার ঘড়ি দুই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।উনাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালাম আমি।উনার আর আমার মাঝে কয়েক গোছা কাশবনের দূরত্ব। হাত দশেক এর দূরত্ব। এক ভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। উনাকে দেখেই বুকের মাঝে ধুকপুক সাউন্ড শুরু হলো।হাত পা কাঁপাকাঁপি শুরু হলো।আমার যে উনাকে দেখে ভয়ে এমন হচ্ছে তা নয় হঠাত বুকের মাঝে প্রচন্ড জোরে ধুকপুক শব্দের সাথে সমস্ত শরীর কাঁপা শুরু হলো।সাথে সাথেই চোখে পানি চলে এলো।ঝাপসা হয়ে এলো চারপাশ।এর আগে কখনো উনাকে দেখে এমন হয় নি।দীর্ঘদিন পর উনাকে দেখে প্রচন্ড কাঁন্না পাচ্ছে।চোখ দিয়ে টুপটাপ পানি পড়ছে।বার বার মনে হয়েছিলো উনাকে হারিয়ে ফেলেছি উনাকে বোধহয় এই জীবনে আর দেখা হবে না।উনার ওই মায়াবী চেহারার দিকে তাকালে আরো বেশী কাঁন্না পাচ্ছে।অনেক গুলো অভিমান জড়ো হওয়াতে কোনো কথা বললাম না উনার সাথে।উলটা দিকে ঘিরে রওনা দিলাম। দু’পা বাড়াতেই আমার সামনে গোল একটা লাল আলো এসে পড়লো আর বড় একটা ঢিল এসে পড়লো।এটা যে ভুত পেত্নি হবে সেটাই ভেবে নিয়ে দৌড়ে গিয়ে বিহান ভাইকে জড়িয়ে ধরলাম।বুকের মাঝে যেনো হাতুড়ির বাড়ি দিচ্ছে কেউ।উনার বুকের সাথে কান লেগে যাওয়াতে খেয়াল করি উনার বুকের মাঝেও ধুকপুক শব্দ হচ্ছে।বিহান ভাই দুই হাতে আগলে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে উনার থুতনি আমার মাথায় ঠেকেছে এসে।ঘন ঘন কয়েক টা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলেন বিহান ভাই।উনি উনার সব টা দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন আমাকে।উনার মুখে কোনো কথা নেই কিন্তু উনার স্পর্শ আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে উনার মনের মাঝে জমে থাকা ভীষণ কষ্ট।উনার বুকে মাথা না রাখলে বুঝতেই পারতাম না মানুষ টার মনে আমার জন্য এত কষ্ট। উনার দীর্ঘ নিঃশ্বাস বুঝিয়ে দিচ্ছে উনার ভেতরে ভীষণ অপরাধবোধ, আমার পাওয়া কষ্ট গুলো উনি বুঝতে পেরে আমার থেকে ভীষণ কষ্ট উনি পাচ্ছেন।জীবনে কিছু মুহুর্ত আসে যে মুহূর্তের কাঁন্না শুধু আঘাত থেকেই আসে না ভীষণ ভালবাসা থেকে ও আসে।উনার আর আমার মাঝে ভীষণ এক মিল আছে একজন কষ্ট পেলে অন্যজন সহ্য করতে পারিনা।

কাঁন্নার আওয়াজ টা খুব জোরে বেরিয়ে এলো আমার।ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম আমি।আস্তে আস্তে আরো জোরে কেঁদে দিলাম।বিহান ভাই নিজের সব টা দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,কেঁদো না দিয়া প্লিজ।আমি তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারি না।আপনি ক্যানো আমাকে ভুলে গেছিলেন বিহান ভাই ক্যানো?আমি বার বার নিজেকে প্রশ্ন করেছি ক্যানো আমাকে ছেড়ে গিয়েছে সে।কি অপরাধ ছিলো আমার।আপনি সব সময় বলেছেন বিজি আছি।আপনার ব্যাস্ততা আমাকে ভিতরে ভিতরে মেরে ফেলেছে।আপনি এতটুকু অবহেলা করলে আমি খেতে পারি না ঘুমোতে পারি না।

বিহান ভাই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,আমি তোমাকে ঠকায় নি দিয়া তবুও অপরাধ করেছি তোমাকে ঠকানোর মতো।আমি তোমাকে কষ্ট দেয় নি তবুও আমার ই কারণে কষ্ট পেয়েছো তুমি।সব দোষ আমার দিয়া। আমি বুঝতে পেরেছি আমার ভুল।আমি ভাবতাম আমার দিয়া অনেক স্ট্রং।বুঝবে আমি এক্সাম এর জন্য বিজি।দিয়া এতটা অবুঝ আমার জন্য আমি বুঝিনি।দিয়া পিচ্চি, পাগলি,অবুঝ সব জানতাম কিন্তু এতটা অবুঝ জানতাম না।আমি বিজি থাকলেও আমার মন জানতো আমি আমার দিয়ার।তুমি আমাকে এত ভালবাসো দিয়া আমি বোধ হয় একজনমে এই ভালবাসা শোধ করতে পারবো না।কথা গুলো বলার সময় উনার কন্ঠ ছিলো কাঁন্না ভেজা।কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন হ্যাপি এনিভার্সারী বউ।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৪৪.(এক্সট্রা পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter

জোসনা মাখা চাঁদ সেদিন ও সাক্ষি ছিলো আমাদের ভালবাসার আজ ও সাক্ষী আমাদের ভালবাসার।এইজন্যই বুঝি চাঁদের সাথে আমার এত ভাব।এই সেই দিনটা যেদিন সবার আড়ালে বিহান ভাই এর সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো।এই দিন টা আমার জীবনের সব থেকে দামি একটা দিন।এই দিন টা না এলে বিহান ভাই ভালবাসার পূর্ণতা অনুভব করতে পারতাম নাহ।কেটে গেছে বেশ কিছুক্ষণ সময়।বিহান ভাই কে বললাম আপনার মনে ছিলো আজকের দিনের কথা।

“উনি চোখের পানি হাত দিয়ে মুছিয়ে দিতে দিতে বললেন আমাকে কি মনে হয় আপনার মিসেস বিহান।আমার ব্রেইন কি এতটায় খারাপ।যেদিনে কাগজে কলমে সাক্ষর করে আমি তোমার হয়েছি সেইদিন টা ভুলে গিয়েছি।এই দিন এসছিলো বলে আমার জীবনে এত সফলতা।টেনশন ফ্রি লাইফ লিড করছি।”

“আর আমি ভেবেছি আমাকেই মনে নেই।আর এই দিন টার কথা।”

“একজন হার্টের ডাক্তার মানুষের হার্ট নিয়ে গবেষণা করে তাই বলে কি তাদের হার্ট থাকে না।এই হার্টের ডাক্তারের হার্ট এর দখল অনেক আগে থেকেই অন্য কেউ নিয়ে বসে আছে তাইতো বোঝে না সে বোঝে না।”

“আবার ও গাল ফুলিয়ে রইলাম আমি।”

“বিহান ভাই আমার দুই গালে হাত দিয়ে বললেন পিচ্চি বিয়ে করলে কত মুশকিল।শুধু ভুল বোঝে কথায় কথায় রাগ করে।”

“তা এইবার একটা বুড়ি দেখে বিয়ে করুন।প্রেয়সী আছে না ওই বুড়ি মহিলাকে বিয়ে করুন।আপনার স্টাটাস আর ওর স্টাটাস তো সেইম।দুজনেই নাম করা ডাক্তার।আমার মতো সাধারণ ছাত্রী তো আর আপনার পাশে মানায় না।উনার সাথে আপনাকে ভালোই মানায়।”

“আহ জেলাসি।যাক সিওর হলাম আমার প্রতি ভালবাসা টা আছে।”

উনি আমার হাত ধরে কাশফুলের মাঝে বসিয়ে দিলেন আমার কোলে মাথা রেখে মাঠের মাঝেই সুয়ে পড়লেন।আমার হাত দুটো ধরে উনার মাথায় দিয়ে বললেন একটু হাত বুলিয়ে দাও তো।তোমার এই নরম হাতের ম্যাসাজ পেলে ক্লান্তি দূর হবে।

“আমি অবাক হয়ে বললাম বিহান ভাই আপনি এইখানে এইভাবে সুয়ে পড়লেন ভাবা যায় ব্যাপার টা।”

“বিহান এখন সব পারে বিহান বউ এর জন্য কাশবনে ও আসতে পারে।এই বিহান কে প্রেমের অস্ত্রোপচার করেছে শ্বশুরের একমাত্র মেয়ে।”

“আসলেই অবাক হচ্ছি এতটা চেঞ্জ।”

“জ্বী ম্যাডাম। এখন বলোতো দিয়া তোমার মনে এই বাজে আর জঘন্য চিন্তা ভাবনা টা কে ঢুকিয়েছে তুমি ডাক্তার না হলে আমার পাশে বেমানান।বিহানের পাশে একমাত্র দিয়াকেই মানায়।দিয়া যে পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেনো?বিহান ভালবেসেছিলো সেই মেয়েকে যে পিচ্চি মেয়েটা ছোট বেলা বিহানের সামনে এসে বলতো বিহান ভাইয়া আপনি না অনেক সুন্দর আপনাকে অনেক ভাল লাগে আমার কাছে।আমি না বর বউ খেলছি কিন্তু বর পাচ্ছি না আপনি আমার বর হবেন।যদিও তখন আমিও ছোট প্রেম ভালবাসা বুঝতাম না।ওই বউ বউ খেলার বয়সে দিয়া আমার মনে জায়গা করে নিয়েছিলো।দিয়াটা বেশ গুলুমুলু আর মায়াবী ছিলো ছোট বেলা থেকেই।সারাক্ষাণ নূপূর পায়ে দিয়ে পায়ে আলতা পরে নেচে বেড়াতো।খুব হাসতো হেসে গড়াগড়ি যেতো যেকোনো কারণে।এসে আমাকে বলতো বিহান ভাইয়া আমাকে একটু কোলে নিন হেঁটে পায়ে ব্যাথা করছে।সেই পিচ্চি বয়সে বলতো আমার মাথায় পেইন করছে বই পড়তে গিয়ে।আমার কোমরে পেইন করছে বই পড়বো না।আমি মেরে মেরে বই পড়াতে বসাতাম।পেত্নির মতো ছোট বেলা থেকে আমার সামনে দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে মন কেড়ে নিয়েছে।আমার মনে সেই দিয়ার বসবাস।কোনো ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, কোনো মন্ত্রি, মিনিষ্টার দেখে আমি ভালবাসিনি।দিয়া যেমন তেমন ই পারফেক্ট আমার কাছে।আমি কি ছোট বেলায় জানতাম দিয়া বড় হয়ে দেখতে কেমন হবে ওর হাইট কেমন হবে ও স্টুডেন্ট কেমন হবে এগুলার কিছুই জানতাম না ও যেভাবে বড় হয়েছে সেভাবেই ভাললাগার মাত্রা বেড়েছে।”

“এই যে ও ও করছেন ও টা কে?”

“ও টা আমার একমাত্র বউ মানে তুমি।তুমি আমার ভালবাসা কে অপমান করেছো আর আমাকে ছোট করেছো।এমন তো হতে পারতো আমি ডাক্তার হতে পারলাম না তাহলে কি আমায় ছেড়ে যেতে, আমি জানি যেতে না।কারণ আমি জানি আমার দিয়ে আমায় কতটা ভালবাসে।আয়রা ফোন নিয়ে গেলে আমি তোমার ছটফট করা যন্ত্রণা দেখেছি আমি বুঝেছিলাম এই কাঁন্নার কারণ এক মাত্র আমি।তখন ই ব্যাগ গুছিয়ে চলে এসছি সারারাস্তা চোখ দিয়ে পানি পড়েছে আমার।দিয়া ডাক্তার হলেই যে তুমি পারফেক্ট এটা ভুল ধারণা।একটা রাস্তা বন্ধ তো হাজার টা রাস্তা খোলা।আমার জন্য তোমার ভালো কিছু করতেই হবে এমন টা না দিয়া।তুমি যেমন এভাবেই তোমাকে নিয়ে হ্যাপি আমি।কিন্তু তোমাকে তোমার জন্য সামনে এগোতে হবে।তোমাকে এই পরিচয়ে বাঁচতে হবে না তুমি বিহানের ওয়াইফ আমি চাই তুমি তোমার পরিচয় বাঁচো।আমি যেনো বলতে পারি দিয়া আমার ওয়াইফ।আমি তোমার পরিচয় এ গর্ববোধ করতে চাই।দিয়া এই ডাক্তারি তে চান্স না পাওয়ার জন্য অনেক কেঁদেছো তুমি।তোমার চোখের অনেক পানি ঝরেছে এই চান্স না পাওয়ার জন্য।আমি তোমাকে গাইড করতাম বলে ভেবেছো আমি ডাক্তার ই লাইক করি।না দিয়া আমি চেয়েছি ফুপ্পির স্বপ্ন পূরক হোক তুমি অনেক বড় হও।এর সাথে আমার পাশে তোমাকে মানানো না মানানোর কোনো সম্পর্ক নেই।তুমি আমার মানে শুধু আমার ই।কেনো নিজেকে এতটা সস্তা করবে তুমি আমার সামনে।আমি কেনো পৃথিবীর কারো কাছে সস্তা হবে না তুমি।তোমার মুড টা যদি এমন হতো বিহান ডাক্তার হয়েছে তাতে কি আমি কি কম কিছুতে ও ডাক্তার হয়েছে বলে আমি ওর পাশে বেমানান কিভাবে হলাম।ভালবাসার সাথে মানামানির কি কানেকশন। এই পিচ্চি এর পরেও কি মুখ গোমড়া করে থাকবে।আমি কি বোঝাতে পেরেছি। ”

“আপনি নিজেই তো বলেছেন আপনি আপনার থেকে বড় ডাক্তার বিয়ে করবেন।”

“ঠিক ই বলেছি কারণ দিয়া একদিন ডাক্তার হবে।আমি নিজ হাতে দিয়াকে মেডিকেল এ ভর্তি করাবো।আমি জানি দিয়ার মাঝে ট্যালেন্ট আছে।মানুষ চেষ্টা করলে সব পারে দিয়া।ব্রেইন বলে কিছু নেই সব ই চেষ্টা।”

বিহান ভাই আমার দিকে চোখ উলটে তাকিয়ে বললেন মুখ এখনো গোমড়া কেনো।

বিহান ভাই কে আবার ও কেঁদে দিয়ে বললাম সরি বিহান ভাই। আমি ভুল বুঝেছি আপনাকে।আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ।আপনার ওই প্রেয়সি আমাকে কাল কল দিয়ে বলেছে আপনার আর উনার বিয়ে।আপনার পাশে আমাকে যায় না।আমাকে অনেক অপমান করেছে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।প্রেয়সীর বলা সব কথা খুলে বললাম বিহান ভাইকে।

বিহান ভাই পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন দিলেন প্রেয়সীকে।ফোন টা লাউডে দিলেন।প্রেয়সী ফোনটা রিসিভ করলে বিহান ভাই বললেন তোকে কিছু বলতে হবে না আমি যা বলছি সেটা মন দিয়ে শোন।তোর মতো বাজে মাইন্ডের মেয়ে দিয়া না তাই তোকে তোর যোগ্য জবাব দিতে পারে নি।মানুষ কুকুর কে কামড় দিলেও কুকুর মানুষ কে কামড় দেয় না।দিয়া ডাক্তারিতে চান্স পাবে প্রেয়সী সেদিন তোকে বাকি জবাব দিবো । আর শোন ভুলেও যেনো আমাকে তোর সাথে জড়িয়ে কিছু বলিসনা আমার একটা সম্মান আছে মাইন্ড ইট।

কল টা কেটে দিয়ে বললেন,ঢাকায় যায় প্রেয়সীর বাকি ব্যাবস্থা করতেছি।উফফ আমার অজান্তে কত কি হয়ে যায় আর আমি কিছুই জানিনা।

বিহান ভাই কে বললাম আমাকে এইখানে কিডন্যাপ করে এনেছেন ক্যানো?কারা ছিলো তারা।

বিহান ভাই হেসে দিয়ে বললেন,রিয়া,মেহু আর বিভোর ছিলো।

আমি অবাক হয়ে গেলাম ওরা এত মুখোশ পরে আমাকে এখনে নিয়ে এসছে আর আমি বুঝতেই পারলাম না।

বিহান ভাই বললেন তুমি না ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলে তোমার সাথে কাশফুল দেখা হলো না।সেদিন ই ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দিবো।সারপ্রাইজ টা কিডন্যাপ করে হলে মন্দ কি শ্বশুরের মেয়ে।

আমি জাস্ট অবাক হয়ে গেলাম উনি কি ম্যাজিক জানেন আমার মন ভাল করার।বিহান ভাই এবার সোয়া থেকে উঠলেন আর আমাকেও উঠালেন।পকেট থেকে কিছু একটা বের করলেন চিক চিক করছে সাদা পাথরের কিছু একটা।আমার নাকে একটা চুমু দিয়ে উনার হাতে থাকা সাদা পাথরের নাকফুল টা পরিয়ে দিলেন।আমি জাস্ট অবাক হয়ে গেলাম।উনি আমার জন্য ভেবে কিনেছেন।নাকফুল টা পরিয়ে দিয়ে বললেন এবার বউ বউ লাগছে।

এই স্নিগ্ধ চাঁদের আলোতে উনার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছি সাদা কাশবনে।আচ্ছা এই উনি টা এত সুন্দর হতে গেলো ক্যানো?আর এতটা ম্যাজিশিয়ান ক্যানো?

বিহান ভাই কয়েক টা কাশফুল ছিড়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন আমার সামনে।ফুল গুলো আমার সামনে ধরে বললেন দিয়া আরো কয়েক টা যুগ এমন ভালবাসা নিয়েই এই দিন টা তোমার সাথে কাটাতে চাই।তোমাকে আমি ভালবাসি শ্যামাপাখি।আমাকে কি এইভাবেই আগলে রাখবে সারাজীবন।ফুল গুলো উনার হাত থেকে নিয়ে উনার কপালে একটা চুমু দিলাম আমি।প্রকৃতি মৃদু হাওয়া দিচ্ছিলো মাঝে মাঝে দুই একটা পাখির কিচির মিচির আর চাঁদ ও হেসে বললো হ্যাপি এনিভার্সারী বিহান দিয়া।

চলবে,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here