এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ৩৬+৩৭+৩৮

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৩৬.
#WriterঃMousumi_Akter

বাসায় একটা ছোট সদস্য থাকলে জীবন নাজেহাল করেই ছাড়বে।ছাড়বে মানে ছাড়বেই মান ইজ্জত সব পানিতে ধুয়ে দিবে।এই দিকে আমার বই পড়তে বসা মানে প্রথমে বিশাল মনোযোগ দিয়ে চেয়ার টেবিল এ গিয়ে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া বইয়ের দিকে। এক ঘন্টা বই পড়ার পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বিশাল টাইম স্ট্যাডি করেছি আমি মাত্র ৫ মিনিট হয়েছে।তারপর চেয়ারে এক পা তুলে দিয়ে বই পড়ি ৫ মিনিট পরে দুই পা তুলে এক পা ভাজ করে বসি।তার তিন মিনিট পর বিছানায় বই নিয়ে বসে পড়া শুরু করি।তার তিন মিনিট পরে উপুড় হয়ে সুয়ে পড়া শুরু করি।তারপর উপুড় অবস্থায় দুই পা হাঁটু ভাজ করে উপর দিকে দিয়ে নাচাতে নাচাতে বিশাল ভাবে মনোযোগ দেই পড়াতে।এরপর উপুড় থেকে চিৎ পটাং হয়ে দুই হাতে বই উপরে তুলে পড়তে থাকি।এর মাঝে একাধিক বার ফোন চেক করি।এইভাবে ভয়ংকর মনোযোগ দেওয়ার পর দেখি ২০-৩০ মিনিট ও হয় নি।তারপর মনে হয় যায় একটু রিয়ার সাথে গল্প করে আসি ৫ মিনিট পরেই এসে পড়তে বসবো ২ ঘন্টা অতিক্রম হলেও আর খেয়াল থাকে না।আজ ও সুয়ে সুয়ে বই পড়ছি সাজ সকালে মা জননী খুন্তি হাতে হাজির।বইয়ের ফাঁকে তাকিয়ে দেখি আম্মুর হাতে খুন্তি।দুঃখি দুঃখি মুখ করে বললাম কি হয়েছে আম্মু।আম্মু রেগে মেগে বললো,তোকে আর কতবার বলবো সুয়ে সুয়ে বই পড়লে লেখাপড়া সুয়ে যায়।দুইদিন পর এক্সম একবার চেয়ার ছেড়ে বিছানা বিছানা ছেড়ে রিয়া। শোন দিয়া রাত দিন চব্বিস ঘন্টা যেনো তোর সামনে বই দেখি আমি।রেজাল্ট ভালো না হলে আমার এত ফাউ টাকা নেই হাবিজাবি রেজাল্ট এর পেছনে টাকা নষ্ট করবো।রিক্সাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো সোজা কথা। আম্মুকে বললাম আম্মু মামিকে দেখেছো বিহান ভাই এর সাথে কত সুন্দর ভাবে কথা বলে।জীবনে একটা বকা ঝকা দেয় না।উনার একটা ছেলে তোমার ওতো একটায় মেয়ে তাইনা আম্মু।আম্মু আরো জোরে বাজখাই কন্ঠে বলে উঠলো বিহান এর পা ধোয়া পানি খাওয়ার যোগ্যতাও তোর নেই।বিহান সারাজীবন ঘরে দরজা লাগিয়ে বই পড়ে।বাড়িতে আত্নীয় এলে সবাই আড্ডা দেই আর বিহান কে অনুরোধ করা লাগে একটু বাইরে আসার জন্য।ছেলেটাকে কোনদিন বলা লাগে না বই পড়তে বস।কখনো দেখেছিস তোদের মতো বায়না ধরতে।বিহান ঘরের দরজা লাগিয়ে বই পড়ে পড়ার সময় ফোন অফ করে রাখে তুই বিহানের সাথে নিজের তুলনা করছিস।তুই তো বাড়িতে এক মগ পানিও ঢেলে খাস না আর বিহান ছেলে মানুষ ওর মায়ের হাতে হাতে কাজে সাহায্য করে।এই জেলায় প্রথম হয়েছিলো আমার ভাতিজা তার সাথে নিজের তুলনা করছিস।কানে খাতার কাগজ ছিড়ে ভরে রাখলাম আর চেয়ারে গিয়ে সভ্য মেয়ের মতো পড়তে বসলাম।

বিহান ভাই আগামিকাল ঢাকা চলে যাবেন।আম্মু তার ভাতিজার জন্য গরুর ভুড়ি আর ছিটা রুটি বানাচ্ছেন।আম্মুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিটা রুটি খাচ্ছি আমি।এমন সময় আয়রা একটা কাগজ এনে রান্নাঘরের ফ্লোরে মেলে অ,আ পড়ছে।হুট করেই আম্মুর নজরে গেলো কাগজ টা।আম্মু কাগজ টা তুলে দেখে বড় অক্ষরে লেখা দিয়া পিচ্চি বউ রাগ করে না।”এটা ছিলো গতকাল বিভোর ভাই এর দেওয়া সেই চিরকুট টা।আম্মু চিরকুটের এক পাশে দিয়া পিচ্চি বউ রাগ করে না দেখেই আম্মু অপরপাশ উলটে ফেললো।গড়গড় করে পুরো চিঠিটা পড়ে নিলো।বিছানায় যে বই পড়ছিলাম সেই বই এর মলাটের মাঝে রাখা ছিলো এটা।এই আয়রা বিচ্চুটা আমার মান সম্মান কিছুই রাখলো না অবশিষ্ট। মনে চাচ্ছে আয়রা কে কড়াই তে দিয়ে ভাজি করি।আম্মুর মুখে কোনো কথা নেই চোখ মুখ রাগে ছুটে যাচ্ছে।আম্মুর হাঁপানি ও শুরু হয়েছে দ্রুত একটা প্রেসারের ওষুধ খেয়ে রিয়ার আম্মুকে ডাকলো ছোটো একটু রান্নাঘর টা দেখ তো।বলেই আমার হাত ধরে হ্যাচটা টানে আমার রুমে নিয়ে গেলো।আম্মুর প্রেসার হাই হয়ে গিয়েছে তার মেয়েকি কাউকে বিয়ে করে ফেলেছে।

আম্মু আমাকে বলছে,এইজন্য এত কষ্ট করে মানুষ করছি তোদের আমি।তোর বাবা জানলে স্টোক করবে দিয়া।এত বড় একটা ব্যাপার তোর বাবা মেনে নিতে পারবে না।তোকে প্রাণের থেকেও বেশী ভালবাসে তোর বাবা।আমি ভাবতেও পারিনি আমার মেয়ে এমন কিছু করবে।তোর কি বিয়ের বয়স হয়েছে দিয়া।কাউকে পছন্দ থাকলে আমাকে বলতে পারতি তো দিয়া।ছেলেটা কে দিয়া।কোনো খারাপ ছেলের পাল্লায় পড়লে বুঝবি।কখন বিয়ে করলি কে কে জানে এই বিয়ের কথা।আমাদের মান সম্মান এভাবে নষ্ট করতে পারলি।আল্লাহ পৃথিবীর দুটো অসভ্য বাচ্চা আল্লাহ আমাকে কেনো দিয়েছে, কি পাপ করেছিলাম।আম্মু অন্য দিন সামান্য কারনে অনেক বকে।আজ অনেক বড় সিরিয়াস ইস্যুতে আম্মু বকছে না।আমি ভেবেছিলাম বটি দিয়ে কেটে ফেলবে আমাকে।কিন্তু এই প্রথম আম্মু বকার পরিবর্তে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলছে।

“আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম এসব কি বলছো আম্মু।আমি এমন কিছুই করি নি।”

“চুপ বেয়াদপ মেয়ে।আমি কি তোকে এই শিক্ষা দিয়েছি। কথায় কথায় মিথ্যা বলা শিখেছো তুমি।ছেলেটার নাম ঠিকানা দাও।মানুষ জন জানার আগে ডিভোর্স করিয়ে আনি।”

“আম্মু জাস্ট একটা চিঠি ই তো।কত কি ভাবছো তুমি।”

“একটা কথা ও বলবে না তুমি দিয়া।ওই আলিপ এর সাথে বিয়ে করিস নিতো আবার।আমি এই জীবনে তোর মেজ কাকির বংশের কাউকে মেনে নিবো না।তোর কাকির থেকে উনার বোন আরো বেশী খারাপ।যদি ওই আলিপের সাথে কিছু হয়ে থাকে আমি ত্যাজ্য করে দিবো তোকে।”

“ছিঃআম্মু কিসব বলো।তুমি এত সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছো ক্যানো?”

“আম্মু চিঠিটা আমার সামনে ধরে বললো সিরিয়াস হবো না। ভাজ্ঞিস দুই এক কলম লেখাপড়া জানি না হলে তো আমাকে ভাঙ্গিয়ে চুরিয়ে খেতিস তুই।এই চিঠিতে ক্লিয়ার লেখা সদ্য বিবাহিত হাজবেন্ড।এই চিঠির মানে কি বোঝায় দিয়া।যেখানে তোর ভাই ছেলে মানুষ এগুলা করবে সেখানে তুই মেয়ে হয়ে এগুলা করছিস।”

“আম্মু ভাইয়া করলে মেনে নিবে।”

“একদম ই চুপ ছেলেটা কে?বল কে?”

“লজ্জায় মারা যাচ্ছি আমি।চিঠিতে যেভাবে লেখা আম্মুকে বোঝানোর মতো কোনো উপায় আমার নেই।কি করবো এখন আমি।আম্মুর তো প্রেসার ই বেড়ে গিয়েছে।”

”এমন সময় গ্রে কালার এর গ্যাবাডিং, কফি কালার এর শার্ট পরা, শার্টের হাতা গোটানো,হাতে ব্লাক ফিতার ঘড়ি,এক হাত প্যান্টের পকেটে গুজে আরেক হাতে ফোন চাপতে চাপতে রুমে প্রবেশ করলেন বিহান ভাই।একবার উনার দিকে তাকিয়েই মুগ্ধ আমি।সৃষ্টিকর্তার আপন হাতে সৃষ্টি উনি।আমাকে বার বার উনার প্রতি উইক করতেই কি নতুন রূপে নতুন সাজে আসেন উনি।এই মুহুর্তে টেনশনে জীবন বের হয়ে যাচ্ছে আমার। এই আয়রা কে আজ যে কি করবো আমি নিজেই জানিনা।আয়রার বাচ্চা আয়রার জন্য আজ এই অশান্তি আমার।”

“বিহান ভাই রুমে প্রবেশ করেই বলেন ফুপ্পি কি হয়েছে তোমাকে এতটা চিন্তিত লাগছে কেনো?”

“বিহান আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছে বাবা।এত চোখে চোখে রেখেও আমি কিছুই করতে পারলাম নাহ।তুই যেভাবেই হোক বের কর কোন ছেলের সাথে দিয়া মেলামেশা করছে।আর দেখ আর্মি,পুলিশ কোনো ছেলে পাস কিনা।আমি ওর বিয়ে দিয়ে দিতে চাই।আম্মুর কথা শুনে বিহান ভাই আমার দিকে তাকালেন।আমি মুখ পেচার মতো করে বসে আছি।বিহান ভাই ভাবুক ভাবে প্রশ্ন করলেন ক্যানো ফুপ্পি কি হয়েছে।আম্মু খুব ই আহত কন্ঠে বলে উঠলো হতে আর বাকি নেই কিছুই বাবা।ভাল ভাবে জিজ্ঞেস করে দেখ বিয়ে শাদী করে ফেলছে কিনা তোর বোন।”

“বিহান ভাই অদ্ভুত ভঙ্গিমায় বলে উঠলেন বোন।যেনো বোন কথাটায় এলার্জি উনার প্রচুর।”

আম্মু বললো হ্যাঁ দিয়া।এই দেখ চিঠি পড়ে দেখ তাহলেই সব বুঝবি।বিহান ভাই যে এই চিঠিটা দেখবেন তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না উনি।চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখেই উনার চোখ কপালে।নিজের হাত কপালে দিয়ে কপাল চাপড়াতে লাগলেন।কপাল থেকে কয়েক ফোটা ঘাম মুছে ফেলে বললেন আচ্ছা এই কেস। ফুপ্পি তোমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েই দাও সেটাই ভাল হবে।আর হ্যাঁ আর্মি ছেলে দেখেই দাও ওরা খুব বউ ভক্ত হয়।অন্য জায়গা দিলে এক দিন ও টিকবে না।তোমার মেয়ে যে বলদ এর বলদ স্বামি স্ত্রীর ব্যাক্তিগত কথোপকথন গোপন রাখতে পারবে না।তোমার জামাই যদি একটা পারসোনাল কথা বলে টাউনের সবাই জেনে যাবে।কোনো রাগি ছেলে হলে দিয়ার পিঠে বস্তা বেঁধে পিটাবে।ওর জন্য মার ফরজ হয়ে গিয়েছে।কথা গুলো বলে বিহান ভাই ভয়ংকর রাগি মুডে আমার দিকে তাকালেন।রাগে উনার চোখ মুখ ছুটে যাচ্ছে।এক্ষুণি কি পানি দিয়ে গুলিয়ে খেয়ে ফেলবেন আমাকে।অনেক দিন উনার এমন রাগ দেখিনি আমি।

আম্মু চিন্তিতে হয়ে বিহান ভাই কে বললেন বিহান আগে ওর কাছে শোন বিয়ে কি সত্যি করেছে কিনা।তারপর একটা আর্মি দেখে বিয়ে দিয়ে দে বাবা।

আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম আম্মু দুনিয়ায় কি আর ছেলে নেই এই আর্মি,পুলিশ কেনো জানতে পারি?সবার পছন্দ এই জব কেনো?

আম্মু বললো,তারা বিয়ে করে কিনা সন্দেহ?তোমার মতো অশিক্ষিত মেয়েকে কি একজন বিসিএস ক্যাডার এসে বিয়ে করবে।

এমন সময় বাবার ডাকাডাকিতে আম্মু বেরিয়ে গেলো।বিহান ভাই আম্মুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো এই সুযোগে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ঢুকে জোরে দরজা লাগিয়ে দিলাম।দরজার ঠাস শব্দে বিহান ভাই ঘুরে দাঁড়ালেন।বিহান ভাই রিতীমত অবাক বনে গেলেন।আমি ওয়াশ রুমের দরজার সাথে পিঠ বাঁধিয়ে বুকে ফু দিয়ে বললাম যাক বাবা বাঁচলাম।আজ আর ওয়াশ রুম থেকে বেরোচ্ছি না আমি।প্রয়োজনে আজন্ম কাল এই ওয়াশ রুমে থেকে যাবো তবুও উনার রাগের আগুণে ভস্ম হয়ে মরতে চাই না।

“বিহান ভাই দরজায় টোকা দিয়ে বললেন,বেরিয়ে আয় এক্ষুণি আজ তোর কপালে কষ্ট আছে।ওয়াশ রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়েছিস কেনো?ওয়াশ রুমে এখন কি তোর।”

“ওয়াশ রুমে মানুষ কি করে আপনি জানেন না।”

“জানিনা আমি দেখতে চাই তুই কি করছিস।”

“নাউজুবিল্লাহ বিহান ভাই আপনি দেখবেন।ছিঃবিহান ভাই ছিঃ।আপনার লজ্জা করবে না।”

“দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,, তোর এইসব অভিনয় আমি বুঝিনা তাইনা।ওকে আমি ওয়েট করছি তুই তোর কাজ সেরে বেরিয়ে আয়।”

“ইয়ে বিহান ভাই আপনি আজ চলে যান। আমার অনেক লেট হবে।”

“আচ্ছা! কত লেট হবে তোর।”

“এই ধরেন ৪-৫ ঘন্টা মতো।”

“তাহলে এক কাজ কর বালিশ আর লেপ কাঁথা নিয়ে যা ওখানে ঘুমিয়ে পড়িস।”

“ইয়ে আপনি যান বিহান ভাই আমার ডায়রিয়া হয়েছে হঠাত।তাই আজ আত বেরোনো হবে না।”

“ষ্টুপিড কোথাকার।এগুলা বলে ভাবছিস বেঁচে যাবি।ওকে ডাক্তার কে কল দিচ্ছি তোকে স্যালাইন দিতে হবে।”

স্যালাইন শুনে আবার চিন্তায় পড়ে গেলাম।অযথা ফুটা নিতে হবে।এইগুলা তো মারাত্মক ভয় লাগে আমার।কতক্ষণ ই বা অযথা বসে থাকা যায়।নিরুপায় হয়ে সাওয়ার ছাড়লাম।পানিতে ভিজতে ভিজতে হাত পায়ে টাসকি লেগে গিয়েছে।অনেক্ষণ বাইরে থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।মনে মনে ভাবলাম অধৈর্য হয়ে বিহান ভাই চলে গিয়েছেন।দরজা একটু খুলে উঁকি দিয়ে দেখি বিহান ভাই ভেতরে নেই।ড্রেস খুলে গোলাপি কালারের টাওয়াল পেচিয়ে বাইরে এসেই দরজা লাগিয়ে দিলাম।আহা!শান্তি আপদ টা বিদেয় হয়েছে।সমস্ত শরীরে বৃষ্টির ফোঁটার ন্যায় পানি লেগে আছে আমার।টাওয়াল হাঁটু পর্যন্ত পড়েছে।দরজা লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখি বিহান ভাই বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন।উনাকে দেখে এক্ষুণি বেঁহুশ হবার উপক্রম আমার।বুক থেকে হাঁটু অবধি জাস্ট টাওয়াল পেচানো আমার।এমন খোলা মেলা ভাবে উনার সামনে আমি।জন্মের পর এমন লজ্জা আগে পাই নি আমি।একবার নিজের দিকে তাকাচ্ছি তো আরেকবার উনার দিকে তাকাচ্ছি। উনাকে দেখে চিৎকার মেরে আবার ওয়াশ রুমের দিকে দৌড় দিতেই উনি আমার হাত টেনে ধরে বললেন,,এখন পালিয়ে লাভ কি যা দেখার তো আগেই দেখেছি।প্লাজু,কামিজ এগুলা চেঞ্জ করার আগে তো দরজা খুলেই রাখলি।টাওয়াল প্যাচানো তো নিজ চোখেই দেখলাম।তো এখন লজ্জা পেয়ে লাভ আছে মিসেস বিহান।

এই মুহুর্তে আমার মনে হচ্ছে এর থেকে মরণ ভালো ছিলো আমার।সব সময় কি এগুলা আমার সাথেই হতে হয়।এখন কি হবে আমার।উনি ই বা কি করবেন আমার সাথে।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৩৭.(বোনাস পার্ট)
#WriterঃMousumi_Akter

চোখ মুখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি আমি লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। শুধু মনে হচ্ছে এই মুহুর্ত টা কেনো এলো আমার জীবনে।এই মুহুর্তে এমন অনর্থ না হলেও পারতো।ঠাসস করে টাওয়াল এর গিট টা ও খুলে গেলো। এক হাত দিয়ে দ্রুত টাওয়াল টা ধরলাম। এইভাবে সব সমস্যা কি একসাথেই আসতে হলো।চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে দেখি উনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।উনাকে বললাম ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন কেউ এসে দেখে ফেলবে। এইভাবে দুজন কে দেখলে মান ইজ্জত আর কিছুই থাকবে না।বিহান ভাই শান্ত কন্ঠে বললেন তার আগে উত্তর দে কেনো আমার সাথে কথা বলিস না।

‘আমি কোনো উত্তর দিতে পারবো না।কথা বলি না আর বলবো ও না।’

উনি আমার হাতের কব্জির খানিক টা উপরে চেপে ধরলেন। উনার হাত এর আঙুল ডুবে গেলো মাংশল জায়গা তে।এমনিতেই উনি আমাকে রুটি বলেন মাঝে মাঝে আবার আটার বস্তা বলেন।মানে আমার হাত পা তুলতুলে নরম।ধরলেই সেখানে ডুবে যায় খানিক টা।হাতের উপর চেপে ধরে একটা ঝাঁকি দিয়ে উনার আরো খানিক টা কাছাকাছি নিয়ে এসে বলেন খুব সাহস বেড়েছে তাইনা?কথা বলিস না ইগনোর এর দুঃসাহস হলো কিভাবে?আর এখন বলছিস কথা বলবো না।হাউ ডেয়ার ইউ?

‘দেখুন ছাড়ুন আমাকে?কেউ এসে যাবে।’

আসুক বউ আমার ধরেছি আমি, যা দেখার আমি দেখছি।কে আসলো না আসলো হু কেয়ারস।কেউ আসলে বলে দিবো বিয়ে করেছি ব্যাস।আমি এত কিছুর তোয়াক্কা করি নাহ।ইউ নো ভেরি ওয়েল মিসেস বিহান।আমার কথার সোজা উত্তর না দিলে এই টাওয়াল খুলে এখানে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করবো।কথাটা শুনে ভয় পেয়ে গেলাম কারণ আমি জানি এই মানুষের পক্ষে সব ই সম্ভব।যেভাবে রেগে আছেন সব ই পারবেন।কি বা করবো এখন।রাগে উনার চোখ মুখ ছুটে যাচ্ছে আর দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন।তোর জন্য রাতে ঘুম হয় নি আমার।কথা বলিস না কোনো কাজে মন বসে নি আমার।জীবনে এত অশান্তি লাগে নি আমার।কোথায় কার চিঠি তার ঠিক নেই তার জন্য আমাকে ইগনোর করছিস ক্যানো?আর চিঠি ফুপ্পির হাতে কিভাবে গেলো।চুপ থাকলে কিন্তু তোর খবর আছে দিয়া। উনি যেভাবে রেগে রেগে প্রশ্ন করছেন এক্ষুণি বাড়ির মানুষ এক জায়গা হয়ে যাবে।কি করি কিভাবে সামলাবো উনাকে।কিছু ভেবে না পেয়ে হুট করে এক দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় চাপলো।উনি যে লম্বা আমি তো এমনি তে উনাকে নাগাল পাবো না।উনার ধবধবে ফর্সা পায়ের উপর আমার ভেজা পা উঠিয়ে উনাকে ভর দিয়ে দাঁড়ালাম।উনার গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম যাতে উনার কথা বলা অফ হয়ে যায়।দুই গালে দুইটা চুমু দিয়ে উনাকে আকস্মিক দুই হাত দিয়ে আষ্ঠে পিষ্টে জড়িয়ে ধরলাম।উনি ভাবতেই পারে নি আমি এমন কিছু করবো।উনি মনে হয় বাকশক্তি হারালেন নিমিষেই ভয়ানক সেই রাগ চোখ থেকে উধাও।ছেলেটা কেমন যানি অন্য জগতে চলে গিয়েছে।আহলাদি কন্ঠে বললাম,সব সময় এত বকেন কেনো আপনি?আমি যে একটা বাচ্চা মেয়ে জানেন না।এত বকলে ভয় লাগে আমার। আই লাভ ইউ রাক্ষস একটা।উনি মিনিট খানিক চোখ অফ করে কিছু একটা উপলব্ধি করলেন।উনার বুকে কান পেতে আরো একটু জড়সড় ভাবে জড়িয়ে ধরলাম।কেমন জানি ভাল লাগছে, ভেতরে ভেতরে এক আলতো পরশের সুন্দর অনুভূতি খেলা করছে।

উনি ঘাড়ে একটা চুমু দিয়ে বললেন আমাকে ভালোই ঠান্ডা করতে শিখেছো তুমি।ইচ্ছা করেও আর রাগ দেখাতে পারছি না আমি।এই পিচ্চি আমার এত সর্বনাশ করেছে ভাবা যায়।পিচ্চিকে তো শাস্তি দিতেই হচ্ছে।

এবার অভিমা নিয়ে বললাম,আপনি স্পর্শ করবেন না আমাকে।যান ওই যে সানজি চিঠি লিখেছে প্রিয় বি। ওকে গিয়ে স্পর্শ করেন।আমার কাছে কি?

হাত ধরে বিছানায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে নিজেও বিছানায় আমার উপর ঝুঁকে গিয়ে বললেন তোর কাছে কি জানতে চাস ওয়েট। বলেই টাওয়াল খোলার চেষ্টা করছেন আর আমি হাত দিয়ে মুঠো করে ধরে রেখেছি।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি দরজা লক।ওহ মাই গড এখন কি করি এইভাবে উনার দখলে চলে গেলাম আমি।গলার নিচে হাত দিয়ে স্লাইট স্লাইট করতে করতে বললেন প্রচন্ড রেগে ছিলাম তোমার প্রতি।আজ ইচ্ছা ছিলো তুলে আছাড় দিবো।ফুপ্পি চিঠি ভাল ভাবে পড়লে বুঝে যেতো তার মেয়ের জামাই আমি।বুঝলেও সমস্যা না আমি এগুলা ভয় পাচ্ছি না কিন্তু আমাদের প্রেমপত্র বার বার অন্যর হাতে কিভাবে যায়।আজ এমন অবস্থা করবো না মনে থাকলে আর জীবনে এমন ভুল হবে না।

উনার এমন আদুরে স্পর্শতে নিমিষেই নিজের ভেতরে অনেক চেঞ্জ হয়ে গেলো আমার।

এক ভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

চোখ ইশারা করে প্রশ্ন করলাম,কি দেখছেন এভাবে।আমার লজ্জা লাগছে ছাড়ুন।।

এই ভেজা তোমাকে দেখছি।ভেজা পরী,ভেজা বউ।ওয়েট তোমার সাথে এখন রোমান্স এর মুহুর্ত টা আরো একটু সুন্দর করে তুলি।তুমি এখন যেভাবে আছো বিলিভ মি নিজেই নিজেকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবা।মনে হচ্ছে মাত্র বৃষ্টি থেকে ভিজে এসছো।বলেই ফোনে গান চালিয়ে দিলেন।

Meri kismaton ko
Mile haath tere
Phir se lakeerein
Dikhne lagi

Dekha tumhe to
Aisa laga hai
Jaise ye aankhein
Dhadakne lagi

Rahein umr bhar
Tu meri main tera

Jab main baadal bann jaaun
Tum bhi baarish bann jaana
Jo kam pad jaayein saasein
Tu mera dil ban jana

Rimjhim saawan ki boondein
Tu har mausam barsana
Jo kam pad jaayein saasein
Tu mera dil ban jana

গানের সাথে কোথায় হারিয়ে গেলাম দুজনে জানিনা।
উনি হাতের আঙুলের ভাজে আঙুল রেখে বললেন,,এই পিচ্চি হাত এ রোজ আদর দিবো। অজস্র চুম্বনে ভরিয়ে দিবো রোজ। তোমার রেশমি চুড়ি পরা হাতের রিনিঝিনি আওয়াজে পাগল হয়ে যাবো।রোজ আঙুলের ভাজে আঙুল রেখে এক সমুদ্র ভালবাসার স্বপ্নে ডুব দিবো।বলেই কপালে চুমু দিলেন, কপাল থেকে নাক, নাক থেকে ঠোঁট অতঃপর গলাতে এসে ঠোঁট ডুবিয়ে পাগলামি করছেন।মারাত্মক লজ্জায় উনাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে উঠে গেলাম।ইস কি লজ্জা।যে বিশ্রি ভাবে আজ উনার সামনে আমি আর যা সব হলো।বিহান ভাই উঠে এসে গলার উপর দিয়ে লাল গাউন ঢুকিয়ে দিলেন।গাউনে পা পর্যন্ত ঢেকে গেলো।টাওয়াল টা আমার মাথায় সুন্দর ভাবে পেচিয়ে দিয়ে বললেন আর কিছু পরার থাকলে পরে নে।আলনা থেকে একটা জিন্স নিয়ে গাউনের নিচে পরে নিলাম ওয়াশ রুমে গিয়ে।ধ্যাত উনার দিকে তাকাতেই পারছি না।কি সব হলো আজ।

এমন সময় বাইরে থেকে দরজা খোলার আওয়াজে চমকে উঠলাম আমি।বিহান ভাই দেখছি চিল মুডেই আছেন।রুমের মধ্য বিহান ভাই এর রিয়া প্রবেশ করলো।ওদের দেখে কি বিশ্রি লজ্জা পেয়ে গেলাম।ছিঃকি ভাবলো ওরা আমাকে নিয়ে। আর রিয়া ওকেই বা কি বলবো।বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলেন চিন্তার কিছুই নেই বাসায় কেউ নেই।রিয়া আর বিভোর কে বাইরে সিকিউরিটি হিসাবে রেখেছিলাম।কেউ আসলে যাতে সতর্ক করতে পারে।তোর বাবা কুষ্টিয়া যাচ্ছে ফুপ্পি আর রিয়ার আম্মু তোর বাবাকে এগিয়ে দিতে গিয়েছে।তুই ওয়াশ রুমে ছিলি তখন আমরা সবাই খেয়ে নিয়েছি।রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়েই যাচ্ছে।যা বোঝার রিয়া তো সেটা বুঝেই গিয়েছে। আমাদের মাঝে যে কিছু আছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই উনার।

বিভোর ভাই বললেন দিয়া তুই বিহানের সাথে রাগ করেছিস দেখে ও বাড়িতে নিজের ফেভারিট মগ টা ভেঙে ফেলেছে।

রাগ তো করবোই বিভোর ভাই।উনার নামে চিঠি আসে কি জন্য।আমার সামনে ওই মেয়েকে উনি বকা ঝকা না দিলে আমি বুঝবো উনার ও ইচ্ছা আছে।তাই আর উনার সাথে কোনো কথা নেই আমার।

বিহান ভাই বিভোর ভাই কে বললেন ওই নাম্বারে কল দিয়ে বল আগামিকাল আমরা মিট করতে চাই।দেখা যাক মেয়েটা কি বলতে চায়।আমিও মনে মনে এটাই চাইছিলাম বিহান ভাই উনাকে বকা দিয়ে দিক।এটা হলেই শান্তি আমার।

আম্মুকে বিহান ভাই আর বিভোর ভাই ভাল ভাবে বুঝিয়ে বললে আম্মু শান্ত হলো।
______________________

পরের দিন সকাল দশ টা।মনে মনে যা খুশি আমি তা বলার বাইরে।বিহান ভাই মেয়েটাকে মারাত্মক বকা দিবেন ভাবতেই ভাল লাগছে।

এর ই মাঝে হুট করেই উনার মেজাজ ভীষণ খারাপ।উনি ভিডিও কলে মেডিকেলের এক স্যার এর সাথে কথা বলছিলেন তখন ই নাকি ভয়ানক এক কান্ড ঘটেছে।
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৩৮.
#WriterঃMousumi_Akter

সকাল দশ টা বাজে সূর্যমামা তার পূর্ণ উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছে পৃথিবীতে।ক্রমশ প্রকৃতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।আরো এক ঘন্টা আগে গোসল করে চুল ফ্যানের নিচে দিয়ে সুয়ে আছি।চুলের পানি ঝরলে চুল বেঁধে রেডি হয়ে নিলাম।এই গরমে কি পোশাক পরবো সেটা ভেবে দিশেহারা।আবার খারাপ পোশাক পরেও যাওয়া যাবে না।কাল সারারাত উত্তেজনাতে ঘুম হয় নি।আমার রাগ হয় ভয়ানক রাগ হয় যখন দেখি কোনো সুন্দর মেয়ে বা ভালো হাইট এর মেয়ে বিহান ভাই এর সাথে ভাব করার চেষ্টা করছে।এমনিতেই মাত্র ৫ ফিট ২ হাইট আমার সাদা ফকফকে চেহারা না যার ফলে অতিরিক্ত মেকাপ করলে আরো বাজে দেখায় আমাকে।মেকাপ করলে বাজে দেখায় এটা আমি বা মেকাপ কারোর দোষ না আসলে আমি মেকাপ করতেই পারি না।ঠিক ঠাক মেকাপ পারলে আমাকেও গরজিয়াস লাগতো সিওর।ন্যাচারাল লুকে না থাকলে আসলেই পেত্নি লাগে আমাকে। এই পেত্নিকে যে অত সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলে গ্রহন করেছে সেটাই ভাগ্যর ব্যাপার।কাজিন দের মাঝে সব থেকে পিচ্চি আর নাদুস নুদুস আমি।বুঝি না এই পেত্নি মেয়েকে কিউট ওভারলোড উপাধি কিভাবে দেয় ছেলেরা।আসলেই কি তারা আমাকে পাম দেয় বুঝি না।ইদানিং বেশীরভাগ সময় আমার ডিপ্রেশন এ কাটছে।তার একটাই কারণ সুন্দর কোনো মেয়ে বিহান ভাই এর আশে পাশে দেখলেই জেলাস হয় আমার।বাই এনি চান্স যদি উনার মন অন্য দিকে ঘুরে যায়। মনে মনে আফসোস করি হে আল্লাহ সবাই কে তুমি এত পারফেক্ট হাইট এত সুন্দরী বানিয়েছো ওদের অত সুন্দর না দিয়ে আমাকেও একটু দিতে।আমাকে যদি অনেক সুন্দরী বানাতে তাহলে আজ এত ডিপ্রেশন এ ভোগা লাগতো না আমার।সারাক্ষণ নিজেই নিজের সাথে কথা বলে চলেছি।যাক বাবা বিহান ভাই মেয়েটাকে বকে দিলে বুঝে যাবে আর চান্স পাওয়া যাবে না।আহা শান্তি শুধু শান্তি।

রিয়া ও রেডি হয়ে গিয়েছে।আমরা চারজন সুলতান এর বাড়ি যাবো সানজি নামের মেয়েটা ওখানেই আসবে।আমরা দুজন রেডি হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি অথচ বিহান ভাই আর বিভোর ভাই এর খোজ নেই।শুনেছি উনার নাকি ভীষণ রাগ হয়েছে কিন্তু কি নিয়ে সেটা জানিনা।

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দেখি রাগিমশাই হাজির।মুখে কোনো কথা নেই প্যাচার মতো করে আছে।

আমি ইচ্ছা করেই বললাম,কি ব্যাপার বিহান ভাই হবু প্রেমিকার সাথে ব্রেকাপ করতে যাচ্ছেন বলে মুড অফ।

কথাটা শুনে উনি রাগি দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন বাজে কথা বললে একটা থাপ্পড় মারবো।মেজাজ অনেক খারাপ আজ।আমার বয়সে এত রাগ হয় নি আমার।

রিয়া বললো কেনো বিহান ভাই আপনি এত রাগ করেছেন।

আর বলো না রিয়া আমার এই টুকু বয়সে এত লজ্জা আমি পাই নি।সিরিয়াসলি এত লজ্জা পেয়েছি আমার মান সম্মান যা ছিলো সব শেষ।আমার ইজ্জত মানের কিছু অবশিষ্ট নেই।আমার সাথেই এটা হওয়ার ছিলো।এত সচেতন থাকার পরেও যে লজ্জা টা পেয়েছি বলার মতো নয়।

রিয়া আবার বললো কেনো বিহান ভাই কিছু হয়েছে?

কিছু হয়েছে বললে ভুল।যা হয়েছে সেটা ভুলতে পারছিনা।আজ আমার মেডিকেল কলেজের স্যার ভিডিও কল দিছিলেন।একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্য।মেডিকেল এর টিচার দের সাথে কথা বলতে গেলেও ভেবে চিন্তে বলতে হয়।অত্যান্ত ভদ্রতার সাথে তাদের সাথে কথা বলতে হয়।স্যার আমাকে আগেই বলে নিয়েছিলেন কোলাহলহীন একটা পরিবেশ এ গিয়ে যেনো উনাকে কল করি।স্যার কল দিছেন আমি রুমের মাঝে গিয়ে কল রিসিভ করে কথা বলছি।পাশের বাসায় বিয়ে বক্সের মাইক আমাদের বাসার দিকে দিয়েছে এত জোরে পানি পানি সং প্লে করেছে মানে কি বলবো মেজাজ টা এত খারাপ হচ্ছিলো।এমনিতেই স্যার আগেই বলে রেখেছিলেন যেনো কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ এ গিয়ে কল দেয়।বক্স বাজাতে মিউট করে বাড়ির পেছনে নদীর পাড়ে গিয়ে কল করেছি।স্যার আমাকে বলছেন কি প্রব্লেম বিহান এইভাবে ছোটাছুটি করছো কেনো তাছাড়া তুমি গাছের নিচে কেনো?আর এসব গানের সাউন্ড আসছে কেনো?স্যার কে বললাম স্যার আমি তো বাড়িতে এসছি। পাশে একটা কাজিনের বিয়ে তাই সাউন্ড আসছে তাছাড়া নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না স্যার রুমে তাই গাছের নিচে এসছি।স্যার খানিক টা বিরক্ত হয়ে বললেন ওকে আলোচনায় আসি।এমন সময় পাশ দিয়ে পাশের বাসার দুজন যাচ্ছিলেন হঠাত তাদের মাঝে ঝগড়া লেগেছে।আমার কাছাকাছি এসেই এমন গালি গালাজ শুরু করেছে বলার বাইরে।এর বাচ্চা তার বাচ্চা আরো যত বাজে লেভেল এর গালি আছে সব শুরু করেছে।স্যার দেখি একদম চুপ হয়ে গিয়েছেন।স্যার এর জীবনে হয়তো এমন গালি শোনেন নি।আমি কি করবো মাথায় ঢুকছিলো না ফোন নিয়ে শরীরে যত বল ছিলো তাই নিয়ে দৌড় মেরেছি।এক দৌড়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছি যাতে গালি গুলা আর স্যার শুনতে না পান।অনেক খানি দূরে গিয়ে হাঁপাচ্ছি।তাকিয়ে দেখি স্যার কপালের চামড়া ভাজ করে বসে আছেন।আমাকে বলছেন কিহ পাশে কারা তোমার নড়াইল এর ফ্রেন্ড নাকি।মানে লজ্জায় আমি মরে যাচ্ছিলাম।স্যার কে বললাম সরি স্যার প্লিজ সরি।সাডেন তারা ঝগড়া লাগিয়ে এগুলা শুরু করেছে আমাকে মাফ করে দিন।স্যার বললেন নো প্রব্লেম চিল,দৌড় দিয়ে ক্লান্ত তুমি এখন বাসায় যাও পরে কথা হবে।

বুঝতে পারছো রিয়া কি বিশ্রি কাহিনী হয়েছে।

বিহান ভাই এর দৌড় দেওয়ার কথা শুনে আমার হাসি থামছেই না।আমি হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছি।আমার জীবনে এর থেকে মজার ঘটনা আর একটাও শুনি নি।

রিয়া বললো হাইরে কপাল তারা আর গালি দেওয়ার সময় পেলো না।

বিভোর ভাই বললেন বিহান তোর সাথে এটাও হতে পারে ভাবা যায়।স্যার না জানি কত কি ভেবেছে দেখ।

শুধু কি ভেবেছে অন্য টিচার দের ও বলবে।মানে ইজ্জত এর কিছুই বাকি নেই আমার।

অটো করে সুলতান এর বাড়ি পৌছে গেলাম।বিভোর ভাই বাদাম কিনেছেন বসে বসে খাচ্ছি।বিহান ভাই বলছেন বিভোর কল দে তো কত লেট হবে সে মেয়ের আসতে।তার জন্য ঝামেলা একটা রেখে একটা যাচ্ছেই না।বিভোর ভাই বললেন,, এইতো চলেই এসছে ৫ মিনিট লাগবে।

৫ মিনিট অপেক্ষার পর দেখি সেই মেয়ের প্রবেশ হলো।আরে এইটা তো পিকনিকের সেই মেয়েটা।সাইমন এর সাথে এসছিলো।মেয়েটা মৃদু হাসি দিতে দিতে প্রবেশ করলো।মেয়েটা এসেই হাই হ্যালো করলো।

মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কোমরে দুই হাত বেঁধে বললাম আপনার হাই হ্যালো দেখার সময় নেই আমার।আগে বলুন কোন সাহসে অন্যর জামাই কে চিঠি পাঠান।আপনার নামে মামলা দিবো।

মেয়েটি হেসে উত্তর দিলো উনি অন্যর জামাই না এটা জানি আমি।উনাকে জামাই বানাবো বলেই চিঠি দিয়েছি।।।

লজ্জা করে না পরকিয়া করতে।আমি আপনার নামে ডিপ্রেশন এর মামলা দিব।দেখতে তো খারাপ না তাহলে জামাই কেনো?আমি কিন্তু ছাড়বো না আপনাকে।

বুঝলাম না দিয়া আপনার সমস্যা কোথায়?

সমস্যা মাই ফুট উনি আমার এটা বুঝতে পারছেন না।

আপনার জামাই তো বিহান ভাইয়া।বাট আমার হবু জামাই তো উনি বিভোর।আমি উনাকে ভালবাসি।

বিহান ভাই কয়েক টা দীর্ঘঃনিশ্বাস ছেড়ে বললেন,এই আপু নেক্সট চিঠিতে কোথাও এসব বি টি লিখবেন না।পুরা নাম লিখবেন।আপনি জানেন কি পরিমান হেনস্হা হতে হয়েছে।বউ কথা বলা অফ করেছে।

বিভোর ভাই এর দিকে আমি আর রিয়া অবাক করা নয়নে তাকিয়ে রইলাম।রিয়ার মুখের যা অবস্থা দেখার মতো না।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here